#ফেরা
২৫.
আমরা প্রত্যেকেই অতীত থেকে বের হয়ে আসতে চাই। ভুল বললাম। অনেকে অতীতে আটকে থাকতে পছন্দ করে। আবার কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবেই অতীতে আটকে যায়। জীবন কখনো আমাদের বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়। কখনো আবার সামনে আঁকাবাঁকা রাস্তা ছাড়া কোনো উপায় রাখে না। জীবন এমন একটা পথ যার পেছনে কখনো যাওয়া যায়না। ভালো হোক বা খারাপ, ইচ্ছা হোক বা অনিচ্ছা যাইই হোক না কেন। আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতেই হয়। এটাই জীবন। উভমুখী বিক্রিয়াতে যেমন পেছনে যাওয়ার সুযোগ থাকে। জীবনে থাকে না। শাজু হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো দেখছে। সে কী বলবে, কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। সঞ্চয়ের ফুপু তাকে বেশ জোরেশোরে চড়ও মেরেছে। অনেকদিন যাবত এমন চড় সে খায়নি। ডান পাশের কানটা মনে হয় তার গেছে। কানের মধ্যে ভোঁভোঁ শব্দ হচ্ছে। তার ভুল কী ছিল? অসুন্দর হওয়া? মা বাবার ডিভোর্স? নাকি সঞ্চয়কে ভালোবাসা? অসুন্দর তো সে ইচ্ছাকৃতভাবে হয়নি। মা বাবার ডিভোর্সেও তো তার হাত নেই। আর সঞ্চয়কে ভালোবাসা? সে তো একা একা ভালোবাসেনি! সঞ্চয় নিজ থেকেই এগিয়ে এসেছিল। তাহলে সবাই তাকে কেন দোষারোপ করছে? সঞ্চয়ের বড় ফুপু মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছেন। আজহারুল চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। কিছু একটা বুঝে উঠার আগেই মনো বললেন, ” যেই ছেলে থেকে দূরে রাখতে চাইছিলা তার সাথেই তো বিয়ে হইছে। তাহিরা আসলেই কপালপোড়া রে! ”
আজহারুল এতো চেঁচামেচির মধ্যে স্ত্রী’র কথা ভালোভাবে বুঝানো পারলেন না। লিমা একাই এসেছিলেন বউকে দেখতে আর প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেড়ে নিতে। কিন্তু সেটা তো হলো না উল্টো সবকিছু নষ্ট হওয়ার পথে৷
*****
” আমরা এই মেয়ে আপনাদের দিব না৷ এই ছেলের সাথে তো মরে গেলোও না। ” আজহারুলের কথা শুনে লিমা আরো রেগে গেলেন। মনো চালাকি করে শাজুকে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই মেয়ে সামনে থাকলে ঝামেলা আরো বাড়বে।
” আমরা এইরকম চরিত্রহীনা মেয়ে নিব না। বংশের একটাই ছেলে আমাদের। একটা ছেলের জন্য রাজকন্যা আনবো ঘরে। ” আজহারুল চাপা স্বরে বললেন, ” আপনাদের ছেলে কি খুব চরিত্রবান? যে নাকি একসাথে দুটো সম্পর্ক চালিয়েছে, সে কীভাবে ভালো হয়?”
” মোটেও না। আপনাদের মেয়েই আমাদের ছেলের গলায় জোর করে ঝুলে পড়েছিল। আসলে সত্য হচ্ছে, সঞ্চয় একমাত্র রিদ্দিকেই পছন্দ করে। ” মনো এবার চুপ থাকতে পারলেন না। তিনি গলা চড়িয়ে বললেন, ” আপনি যেমন একজন ডাইনি তেমনি আপনার ভাইস্তা একটা ডাইনি খুঁজে বের করেছে। ভালোই হবে ফুপু আর ভাইস্তা বউ মিলে গাব গাছের মাথায় বসে থাকবেন। যত্তসব ছোট লোক জুটেছে। বিয়ের আগে আপনি কি গুল খেলেছেন সেটা কি জানি না? ” লিমা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন, ” কী করেছি শুনি তো! ”
” বিয়ের আগেই তো পেট বাজিয়ে ছিলেন। শ্বাশুড়ির পাতে তো জীবনে ভাত বাড়েননি। উল্টো শ্বাশুড়ির চুল ছিড়েখুঁড়ে খেয়েছেন। শ্বশুড়বাড়িতে তো একদিনও টিকতে পারেননি। রিদ্দি আপনারই কপি। ” লিমা এবার মনোর চুলের মুঠি টেনে বললেন, ” আর একটা কথা বললে জিহবা টেনে ছিড়ে দিব। ”
” কেনো সত্যি কথা গায়ে লাগে বুঝি? ”
তারপর দুজনের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে গেল। রিনা বহুকষ্টে তার মা’কে ছাড়িয়ে ঘরে আটকে রাখল। আর লিমাকে বাসা থেকে বের করল।
*****
” আগে আমাকে আপনি বলেন, তাহিরার যে ঘটনা ঘটেছিল ওখানে কি আমার ছেলেই ছিল?” লায়লার বিশ্বাস হচ্ছে না৷ তার ছেলে এই ধরনের কাজ করতে পারে৷ একইসাথে দুটো মেয়ের সাথে… ছিঃ ছিঃ ছিঃ
আজহারুল ভাবতেও পারেননি এতো ঝামেলা হতে পারে৷ এতো শখ করে ভাতিজী বিয়ে দিলেন কিন্তু সব নষ্ট হয়ে গেল৷ এলাকায় বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেছে। বাড়ির মধ্যে চিল্লাচিল্লির শব্দে আশেপাশের মানুষ জড়ো হয়েছিল। আর সেই সুযোগে লিমা সত্য মিথ্যা যা মনে এসেছে তাই বলে দিয়ে গেছে। এলাকায় মুখ দেখানোর অবস্থা নেই।
” হ্যাঁ, লায়লা। ”
” আমি ভাবতেও পারিনা আমার ছেলে এই কাজ করতে পারে। ”
” ওই ঘটনার কারণে আমার ভাই স্ট্রোক করেছিল। তারপর তো আর সুস্থ হলো না। এই কারণে আমার ভাতিজীর শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেছে ধরা যায়। যেখানে ওর বাংলাদেশের ভালো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা৷ সেখানে ও এখানকার কলেজে নিজের মাথা ঠুকিয়ে মরছে। ”
” আমার ছেলে হয়ে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ”
” ক্ষমা টমা দিয়ে তো আর সবকিছু ফিরে আসবে না। আজকে যা হয়েছে আর অতীতের সবকিছু ভেবে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি৷ ”
” আর যাই করুন ওদের সেপারেশনের সিদ্ধান্ত নিবেন না৷ ”
” দেখো লায়লা, এটা ছাড়া আর কোনো ভালো উপায় আমার জানা নেই। ”
” তাহিরা কী বলে? আপনি ওর মতামত তো নিয়ে দেখুন। বিয়েটা তো ওদেরই হয়েছে। ”
” আমি যা বলবো তাহিরাও তাই বলবে। আর ওর সাথে আমি কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার চেনা উকিল আছে৷ খুব দ্রুত ডিভোর্স এর কাগজপত্র পাঠিয়ে দিব। ”
” আপনি এটা করবেন না৷ আমার ছেলে পাগল হয়ে যাবে। ওর অলরেডি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ”
” আমাদের কিছু করার নেই লায়লা। পারলে আমি ওকে আজীবন ঘরে বসিয়ে রাখবো তাও তোমার ছেলের সাথে দিব না। ”
” আমরা সামনা-সামনি কথা বলি? আমার কথা ভেবে ওদেরকে আলাদা করবেন না। ”
” আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। ”
চলবে…
~ Maria Kabir