চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-২

0
1866

#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam


.
.
.
.
.
আরহাম অফিস শেষে বাসায় ফিরে দেখল আরশির সাথে ড্রয়িং এ বসে গল্প করছে ইকরা।
তার এক বিজনেস পার্টনারের একমাত্র মেয়ে ইকরা।
নিউ পার্টনারশীপ উপলক্ষে একটা পার্টিতে দেখা হয়েছিল ইকরার সাথে।
সেই থেকে এই মেয়ে যেন হাত ধুয়ে পড়েছে আরহামের পেছনে।
এই তিন মাসে ইকরা প্রায় ত্রিশবারের মতো প্রোপোজ করেছে আরহামকে।
বরাবরের মতো ভদ্রতার সাথেই রিজেক্ট করে চলেছে আরহাম।

আরহামকে দেখে ইকরা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, ” তোমার জন্যই ওয়েট করছিলাম।

আরহাম স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করল , “কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কাজে এসেছো নিশ্চয়ই!?

ইকরা বিড়বিড় করে বলল,” তোমাকে দেখতে পাওয়াটাই তো আমার জন্য বেশি ইম্পর্ট্যান্ট।

আরশি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” ইকরাপু! বিড়বিড় করে কি বলছো!? ভাইয়া শুনতে পাচ্ছে তো!?

আরশির কথা শুনে হেসে ফেলল আরহাম।

ইকরা ঢং করে বলল, ” বলছি যে, তোমার ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছি।

আরহাম গলা খাকারি দিয়ে বলল, “তা, দেখা করতে বাসায় কেন!! অফিসে যেতে।

ইকরার মাঝে কোনো ভাবান্তর ঘটল না, সে নিজের মতই বকবক করে চলল,” অফিসে তো অলটাইম বিজি থাকো, একসাথে টাইম স্পেন্ড করতে পারিনা। এজন্য বাসায় চলে এলাম, বাসায় তো আর কাজে ডুবে থাকবেনা!!

আরহাম নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলল,” মাত্র অফিস থেকে এসেছি, ফ্রেশ হয়ে লম্বা শাওয়ার নিয়ে ফুল ঘুম দিব। ঘুম থেকে উঠে কথা হবে, সে পর্যন্ত ওয়েট করতে চাইলে করতে পারো।

ইকরাকে আর কিছু বলার সময় না দিয়ে দ্রুত পায়ে উপরে উঠে গেল আরহাম।
ইকরা বলদের মতো দাঁড়িয়ে আছে, আরশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

আরহাম দরজা লক করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে শাওয়ার নিতে গেছে।
.
.
.
.
.
.
ডেস্কের ওপর দু’হাতে মাথা ধরে বসে আছে রিয়া।
গতরাতে টার্কিশ হরর মুভি দেখতে দেখতে ঘুমাতে লেট হয়ে গেছিলো তার।
এখন ঘুমে ঢুলছে সে!

চিত্রা এসে বিশাল বিশাল ফাইলের ঝাপ এনে ফেলল রিয়ার সামনে।
ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল রিয়া, জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে চিত্রার দিকে তাকালো রিয়া।

চিত্রা ফাইল গুলোকে দেখিয়ে বলল, ” এগুলো নিয়ে থার্ড ফ্লোরে সোজা স্টোর রুমে গিয়ে রেখে এসো।

রিয়া কয়েকবার চোখের পলক ফেলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “এখনই!?

চিত্রা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, ” ইয়েস ম্যাম, এখনই! গো ফাস্ট!!

রিয়া তড়িঘড়ি করে উঠে ফাইল গুলোকে নিয়ে ছুটল লিফটের দিকে।
সেখানে গিয়েও পড়ল বিপাকে, দু’হাত ভর্তি ফাইলের ঝাপ! লিফটের বাটন চাপবে কিভাবে!!

এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল আশেপাশে তেমন কেউ নেই।
বাম পা তুলে যেই না বাটন চাপবে, ফাইলের ভারে উলটে পড়তে লাগল রিয়া!!!

হাত থেকে ফাইল গুলোও পড়ে গেছে, রিয়া পড়ে যাচ্ছে দেখে ভয়ে চোখমুখ কুচকালো। হটাৎ মনে হল শূন্যে ভাসছে সে!

চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখল, অসম্ভব হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে! ছেলেটার ঘন কালো ঝাকড়া চুল গুলো স্টাইল করে একসাইডে দেওয়া!! চিন্তিত চাহনি দুচোখে!! হালকা গোলাপি ঠোঁট দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু বলছে!!!
রিয়া খেয়াল করল সে জিজ্ঞেস করছে,” এক্সকিউজ মি! আর ইউ ওকে!? হ্যালো! মিস, কথা বলছেন না কেন!? আর ইউ ওকে!?

রিয়া চোখ বড়বড় করে বলল,” বস!!!
একঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাড়ালো রিয়া।
আরহাম ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল, ” আর ইউ ওকে!?

রিয়া থতমত খেয়ে বলল, ” ইয়াহ, আ’ম ওকে।
বলেই নিচে পড়ে থাকা ফাইল গুলো গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

আরহাম লিফটের বাটন চেপে ভেতরে ঢুকল, সাথেসাথে রিয়াও গিয়ে ঢুকল ভেতরে।
আরহাম ভ্রু কুচকে তাকালো রিয়ার দিকে, লিফটের দরজা অফ হওয়ার আগে অফিসের কিছু স্টাফকে অদ্ভুত ভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হল রিয়া।

আরহামকে জিজ্ঞেস করল, ” লোকগুলো ওভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো কেন!?

আরহাম কিছু না বলে হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো, উত্তর না পাওয়ায় বেশ অপমানিত বোধ হচ্ছে রিয়ার।
মুখ ভেংচি কেটে মনেমনে বলল, ” খাটাশ একটা! এতো দেমাক কিসের তোর!? অফিসের বস তাই!!? হুহ!!!

তিনতলায় এসে লিফটের দরজা খুলে গেল, আরহাম আগে বের হতে গিয়ে রিয়ার দিকে ঝুকে বলল, ” তখন লোকগুলো ওভাবে তাকিয়ে ছিলো কজ, অফিসের এই লিফট বসের প্রাইভেট লিফট। এতে বস ছাড়া আর কেউ ওঠেনা।

বলেই লিফট থেকে বেরিয়ে গেল আরহাম, রিয়ার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল! ধীর পায়ে সে বেরিয়ে এল লিফট থেকে।
বসের প্রাইভেট লিফটে বসের সাথেই উঠেছে রিয়া!
কি একটা অস্বস্তিকর ব্যাপার!! রাগে ক্ষোভে দেয়ালে ঠুং খেতে মন চাচ্ছে তার।
.
.
.
.
.
.
স্টোর রুমে ঢুকে ফাইল গুলোকে এক এক করে সাজিয়ে রাখলো রিয়া।
এখন কিভাবে নিজের ডেস্কে যাবে তাই ভাবছে সে, না জানি অফিসের লোকজন তাকে নিয়ে কি না কি ভাবছে!! উফফফ!!!

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে লিফটের সামনে এসে দাড়ালো রিয়া।
পাশাপাশি তিনটা লিফট! কোন লিফট দিয়ে এসেছিলো সেটাও ভুলে গেছে সে!! এখন কি হবে!!??

দাতে দাত চেপে মনেমনে আরহামের গুষ্টি উদ্ধার করছে রিয়া।
স্টাফদের জন্য আলাদা লিফট, বসের জন্য আলাদা লিফট! কেন ভাই! সবাই মিলে এক অফিসে কাজ করতে পারলে, লিফটে উঠতে পারবেনা কেন!!?

মনেমনে হাজারটা গালি দিতে দিতে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগল রিয়া।
সবার সাথে ছাড়া লিফটে আর একা উঠবেনা সে। তাহলেই তো হল!!!
.
.
.
.
.
.
.
আরশি বসেবসে ল্যাপটপে তার বিয়ের ছবি গুলো দেখছে।
প্রেম করে বিয়ে করেছিলো আয়ানকে, বেশ ভালই চলছিলো তাদের বৈবাহিক জীবন।

কোম্পানিতে আরশির যে শেয়ার ছিলো তা আয়ান নিয়ে আরহামের সাথে কাজ করতে থাকে।
কিন্ত হটাৎ করেই পালটে যায় আয়ান, লেট করে বাসায় আসা, কখনও কখনও বাসায় না ফেরা!
আরহামের সাথেও আয়ানের সম্পর্ক খারাপ হতে লাগল।
আরহাম অবশ্য আয়ানের নামে কখনও বিচার দেয়নি আরশির কাছে, কিন্ত আয়ানের বিহেভিয়ার আর ফোনালাপই যথেষ্ট ছিলো এসব বোঝার জন্য।

সেই অবস্থায় আরশি কি করবে ভেবে পাচ্ছিলোনা।
আরহাম আর আয়ানের মাঝে সমঝোতা দরকার ভেবে আরহামের সাথে দেখা করতে গেছিলো আরশি।
কিন্ত সেদিন যে কি হল, কিছু মনে নেই আরশির।

প্রায় দেড়মাস পর কোমা থেকে বের হয় আরশি। চোখ মেলে ভাইকে পেয়েছিলো পাশে, আয়ানের কথা জিজ্ঞেস করতেই জানল, আয়ান তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে!!!

সেদিন আরশির মনে হচ্ছিলো, সে যদি আজীবনের জন্য কোমায় চলে যেত তাহলে বেশি ভালো হত।
অন্তত এতবড় কঠিন সত্য জানতে হত না।

এরপর কেটে গেছে প্রায় ছয় মাস, আয়ানকে নিয়ে কোনও কথা বলেনি আরশি।
আরহামও কিছু বলেনি।

মেইড কেয়ার ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল আরশির।
ল্যাপটপ অফ করে জিজ্ঞেস করল,” কিছু বলবে!?

কেয়া রুমে ঢুকে বলল,” মিস ইকরা এসেছে।
আরশি বিরক্ত হয়ে বলল, ” এ আর নতুন কি। কেয়া তুমি বরং সিডিউলে এটাও অ্যাড করে দাও, সপ্তাহে কমপক্ষে দশবার ইকরাকে এ বাসায় দেখা যাবে।

মেইড কেয়া হেসে বলল, ” ম্যাম, ইকরা ম্যাম তো দেখতে খারাপ না। বিজনেসম্যানের মেয়ে, সুন্দরী, আমাদের আরহাম স্যারকেও খুব ভালবাসে।

আরশি বেড থেকে নেমে চুল গুলো আচড়াতে আচড়াতে মুচকি হেসে বলল,” পছন্দ আর ভালবাসা এক না কেয়া। ইকরা আরহামকে পছন্দ করে, অবশ্যও আমার ভাইকে অপছন্দ করার কিছুই নেই। কিন্ত আমার ভাইকে তো এসব মেয়েদের পাল্লায় পড়তে দেবোনা। যে মেয়ে আমার ভাইকে ভালো বাসবে তাকেই ভাবি করে আনবো।

রুম থেকে বেরিয়ে সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে কেয়া বলল,” শুধু ভালবাসলেই হবে ম্যাম! সংসারী, গোছালো স্বভাবের হতে হবে না!!?

আরশি স্মিত হেসে বলল, ” অবশ্যই আমার একমাত্র ভাবি সংসারী আর গোছালো স্বভাবের হবে।
.
.
.
.
.
.
এদিকে অফিস থেকে ফিরেই রুমে গিয়ে ধপাস করে বেডে শুয়ে পড়েছে রিয়া।
মিসেস ইরা বিরক্ত হয়ে বলল,” আল্লাহ গো! এ মেয়ে কবে বড় হবে!? ড্রেসটা পর্যন্ত চেঞ্জ করেনি!! রুমের কি বেহাল অবস্থা করে রেখেছে!!! না জানি এ মেয়ে অফিসে কি করে!!!

রিয়া হাত পা ছড়িয়ে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিল, কাদতে কাদতে বলল, ” অফিসে সারাদিনে একটুও ঘুমাতে পারিনি! আমি ঘুমাবো!!

মিসেস ইরা দু’হাতে কান চেপে বলল,” আম্মুরে! তুই ঘুমা!! তাই বলে এই ভরসন্ধ্যা বেলা ন্যাকা কান্না করিস না!!!

মায়ের কথা শুনে নিমিষেই কান্না অফ করে বেডে পড়ে ঘুমিয়ে পড়ল রিয়া।
মিসেস ইরা রুম গুছিয়ে, মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
.
.
.
.
.
.
ইকরা সেই কখন থেকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে গেটের দিকে।
আরহাম এখনও আসেনি! আরশি ড্রয়িংরুমে এসে বলল, ” আরে ইকরা যে! কখন এলে!!?

ইকরা মুখ গোমড়া করে বলল, ” এই আধঘন্টা হল।

আরশি মেইড কেয়াকে বলল,” আমাদের জন্য দুকাপ কফি নিয়ে এসো।

কেয়া কিচেনে ঢুকে কফি বানাতে লাগল, ইকরাকে চাতকের মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে আরশির কেন জানি খুব খারাপ লাগছে। ইকরাকে ডাকতে যাবে, তখনই গেট দিয়ে ঢুকল আরহামের প্রাইভেট কার।
আরহামের ড্রাইভার করিম এগিয়ে দরজা খুলে দিল।

আরহাম গাড়ি থেকে বেরিয়ে এক হাতে টাই খুলতে খুলতে ভেতরে ঢুকল।
আরহামকে আসতে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে উঠল ইকরা।
আরহাম সেদিকে খেয়াল না করে গটগট করে উপরে নিজের রুমে চলে গেল।

ইকরাও ছুটল পিছুপিছু, আরহাম রুমে ঢুকে দরজা লক করার আগেই ইকরা ঢুকে পড়ল। আরহাম রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইকরা কাদোকাদো হয়ে বলল, ” আজ অন্তত এমন করোনা আরহাম, কাল ভোরের ফ্লাইটে আমি রাশিয়ায় চলে যাচ্ছি।

আরহাম মনেমনে বেশ খুশি হল ইকরা চলে যাবে ভেবে।
তাই আর খারাপ বিহেভ না করে বলল, ” ও আচ্ছা। ড্রয়িং এ গিয়ে বসো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

বলেই ওয়াশরুমে ঢুকল আরহাম। ইকরা সেই যে আরহামের সাথে উপরে গেছে, এখনও নামেনি দেখে বেশ অবাক হল আরশি।
নিজের রুমে যেতে যেতে কেয়াকে বলল, ” কেয়া কফিটা গরম করে খেয়ে নাও, আমি রুমে গেলাম।

উপরে উঠে নিজের রুমে যেতে গিয়ে ভাইয়ের রুমের দরজায় কান পাতল আরশি।
কিন্ত ভেতর থেকে কোনো শব্দ আসছেনা! আরশি নিজের কানে হালকা বাড়ি মেরে বলল, ” কানে আবার কি হল! কানে কম শুনছি নাকি!!?

আরেক কান পাতল দরজায়, এবার ওয়াসরুমের দরজা খোলার শব্দে চমকে উঠল আরশি! ওরা দুজনে তাহলে একসাথে!! ওয়াশরুমে!!!

দাতে দাত চেপে মনেমনে বলল, ” তলেতলে এসব চলে! প্রেম করবি কর, আমাকে বললে কি হত!! হয়তো একটা ট্রিট চাইতাম, সেটাই বেশি হয়ে গেল!!!

দরজা থেকে কান সরিয়ে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে নিজের রুমে গেল আরশি।
দরজা লক করে বলল, ” কিপটা ভাই কোথাকার! বিয়ের আগেই এতো কিপটামি!! না জানি বিয়ের পর কি করবে!!!

পরক্ষণেই মনে পড়ল ইকরার কথা! ভাইয়ের সাথে মিলে ইকরাকে নিয়ে কত হাসাহাসিই না করেছে সে!! এখন আরহামকে বিয়ে করে ইকরা নিশ্চয়ই আরশিকে আর পাত্তা দেবেনা!!!

চোখ বড়বড় করে ধপাস করে বেডে বসে পড়ল আরশি।
হাতে হাত ডলতে ডলতে বলল,” নাহ, এভাবে বসে থাকলে চলবেনা। যেভাবেই হোক এই বিয়ে হতে দেওয়া যাবেনা। ইকরাকে আমি কোনোমতেই ভাবি করে আনবোনা!!!

আরহাম ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ইকরাকে নিজের রুমে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠল।
ইকরা তো বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে আরহামের তোয়ালে দিয়ে পেচানো বডির দিকে!
আরহাম রাগে ক্ষোভে চেচিয়ে উঠল, ” তুমি এখনও এখানে!!? গেট আউট! আই সে গেট আউট ইকরা!!

ইকরা থতমত খেয়ে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আরহামের রাগে মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে, কত্তবড় সাহস! একে তো তার বলা সত্ত্বেও ইকরা রুম থেকে যায়নি, আবার হা করে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে!! বেহায়া মেয়ে কোথাকার!!!
.
.
.
.
.
.
ফোনের রিংটোন পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল রিয়ার। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল সে, ফাইয়ায কল দিয়েছে! বিরক্ত হয়েও রিসিভ করল রিয়া, নাহলে তার মাকে কল দিয়ে নালিশ করবে ফাইয়ায।

কল রিসিভ করতেই ফাইয়ায বলল, ” কি ব্যাপার মিসেস! এখনও ঘুম থেকে ওঠোনই!?

রিয়া চমকে উঠল, একহাতে চোখ ডলে বলল,” তুমি কিভাবে জানলে আমি ঘুমাচ্ছিলাম!?

ফাইয়ায হেসে বলল, ” তুমি আমার ফিয়ন্সি! তুমি কখন কি করছ, আমি জানবো নাতো কে জানবে!?

রিয়া ক্যাবলার মতো হেসে বলল, ” ও আচ্ছা।

ফাইয়ায কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,” আই মিস ইউ রিয়া!

রিয়া ভিষম খেলো ফাইয়াযের কথা শুনে, ফাইয়ায উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” রিয়া, আর ইউ ওকে!? রিয়া!

“আর ইউ ওকে ” কথাটা শোনা মাত্রই থমকে গেল রিয়া।
কথাটা আহামরি কিছু না, তবু শোনামাত্রই কেমন যেন লাগল রিয়ার।

ফাইয়ায ফোনে হ্যালো হ্যালো করেই চলেছে, রিয়া বলল, ” চিন্তা করোনা, ঠিক আছি।

ফাইয়ায স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ” ওহ।
ফাইয়াযকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রিয়া বলল, ” আচ্ছা, আমি একটু পরে কল দিচ্ছি। অফিস থেকে এসে এখনও ফ্রেশ হইনি।

ফাইয়ায আচ্ছা বলে কল কেটে দিল, রিয়া বেড থেকে নেমে একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল। ঝর্না ছেড়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে ভিজতে লাগল রিয়া, হটাৎ সকালে ফাইল পড়ে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়ল তার।
দ্রুত চোখ মেলে তাকালো সে, আরহাম তখন জিজ্ঞেস করছিলো,” আর ইউ ওকে!

কিন্ত এই সিম্পল কথাটা কেন বারবার মনে পড়ছে ভেবে পাচ্ছেনা সে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ালো রিয়া। পাশে রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল সাতটা মিসডকল! নিশ্চয়ই ফাইয়ায দিয়েছে!! এই ছেলেটা কেন বোঝেনা, রিয়া তার সাথে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে!!!

বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে খেয়াল করে দেখল, ফাইয়ায না আফসানার কল! কি এমন হয়েছে যে কিপ্টারানী সাতবার কল দিয়েছে!!

কল ব্যাক করল রিয়া, ওপাশ থেকে আফসানা কাদোকাদো হয়ে বলল,” দোস্ত!! আমি চলে যাচ্ছি!!

রিয়া আকাশ থেকে পড়ার ভান ধরে বলল, ” মানে! কখন! কোথায়!?

আফসানা মন খারাপ করে বলল, ” কাল একবার আমার বাসায় আয় না দোস্ত।

রিয়া বুঝল, সিরিয়াস কিছু একটা হয়েছে। নাহলে আফসা তো এতো মন খারাপ করেনা। যদিও কিছু থেকে কিছু হলেই কেদেকেটে একাকার করে দেয়।

কল কেটে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং এ গেল রিয়া, বাবা সোফায় বসে টিভি দেখছে, মা কিচেনে রান্নায় ব্যস্ত।
রিয়া ফ্রিজ খুলে ডালিমের শরবত নিয়ে খেতে খেতে কিচেনে গেল।
.
.
.
.
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here