চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-৪

0
1571

#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam


.
.
.
.
.
কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুলে দিল আফসানার মা।
রিয়াকে দেখে স্মিত হেসে বলল, ” আরে! রিয়া!! কেমন আছো!?
রিয়া ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,” আলহামদুলিল্লাহ, আন্টি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন!?
.
.
.
আফসানা আর রিয়া ব্যালকনিতে মুখোমুখি বসে আছে।
রিয়া সব শুনে বলল,” আংকেল আন্টির মেইন কথা তোকে হোস্টেলে থাকতে দিবেনা, তাই তো!!?

আফসা মাথা নাড়িয়ে সায় দিল, রিয়া কিছু একটা ভেবে বলল, ” আচ্ছা শোন, সুমু ওর ফুপুর বাসায় থাকে। ওর ফুপুর ফ্যামিলি সুইডেনে সেটেল, বছরে দুয়েকবার দেশে এলে ওখানে থাকে। একতলা বাসাটা দুই ইউনিটের, একটাতে ভাড়া দেওয়া। আরেকটাতে সুমু থাকে। সুমুর সাথে তুইও তো থাকতে পারিস।

আফসা মুখ গোমড়া করে বলল, ” আমার তো থাকতে প্রবলেম নেই, কিন্ত আব্বু আম্মু!!

রিয়া মুচকি হেসে বলল, “ওটা তুই আমার ওপর ছেড়ে দে।
.
.
.
আফসানার আম্মু সব শুনে বলল, ” সুমাইয়া না কি যেন নাম বললে!

রিয়া হেসে বলল, ” জ্বি আন্টি, সুমাইয়া। আমার কাজিন।

আফসানার আম্মু মাথা নাড়িয়ে বলল, ” হুম, তো সুমাইয়া। দুই ইউনিটের একটায় থাকে! তাই তো!! আর পাশের ইউনিটে কারা থাকে!?

আফসা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” কারা থাকে মানে!? তুমি এসব কি জিজ্ঞেস করছো আম্মু!?

আফসানার আম্মু গলা খাকারি দিয়ে বলল, ” মানে বলতে চাচ্ছি যে, ফ্যামিলি থাকে নাকি ব্যাচেলর!?

রিয়া সাথেসাথেই বলল,” ফ্যামিলি! ফ্যামিলি থাকে আন্টি।

আফসানার আম্মু মাথা নাড়িয়ে বলল, ” বেশ, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।

আফসানা খুশিতে জড়িয়ে ধরল রিয়াকে, আফসানার আম্মু হেসে বলল, ” আচ্ছা এবার আমাদের বের হতে হবে, ট্রেনের সময় হয়ে গেছে।

যাওয়ার কথা মনে পড়তেই হকচকিয়ে উঠল রিয়া, তাকে তো বাসায় ফিরতে হবে! তাড়াতাড়ি ফোন বের করে দেখল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বাজে!! আম্মুর সাতটা মিসডকল!!!

রিয়া ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিল, আজ তাকে আস্তো রাখবেনা তার মা।
আফসানার আম্মু রিয়াকে শান্ত করে বলল,” আচ্ছা আচ্ছা, এই ভরসন্ধ্যা বেলা কান্না জুড়িও না। ভাবিকে আমি কল দিয়ে বলে দিচ্ছি।

রিয়া তাতেও শান্ত হল না, রিয়ার আম্মুর সাথে কথা বলে ফোনটা রিয়াকে দিল আফসানার আম্মু।

রিয়া ফোন ধরেই ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিল, মিসেস ইরা মেয়েকে ধমক দিয়ে বলল, ” এখন আবার মরা কান্না করছিস কেন!? যাইহোক, কাল ভোরে উঠেই আফসানাকে নিয়ে বাসায় চলে আসবি।

রিয়ার সাথে টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে দিল মিসেস ইরা।
রিয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে আফসানাকে বলল, ” রাতে কি খাবো!?

আফসানা হেসে বলল, ” ফুড পান্ডায় অর্ডার দিতে হবে।
.
.
.
.
.
ভোরে উঠে ফ্রেশ হয়ে আফসানাকে নিয়ে বাসায় ফিরে গেল রিয়া।
ব্রেকফাস্ট করে আফসানাকে আগে সুমুর বাসায় রেখে তারপর অফিসে গেল।

নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজে ডুব দিল রিয়া। কোত্থেকে চিত্রা এসে কিছু ফাইল রিয়ার সামনে রেখে বলল, ” আরহাম স্যার আজ অফিসে আসেননি, এই ফাইল গুলোতে স্যারের সাইন লাগবে।

রিয়া ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” তো আমি কি করতে পারি মিস চিত্রা ম্যাম!?

চিত্রা ফাইল গুলো রিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ” তুমি এখন স্যারের বাসায় গিয়ে ফাইল গুলোতে সাইন করে আনবে।

রিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই চিত্রা বলল,” ওয়েট, স্যারের বাসার অ্যাড্রেস তোমাকে টেক্সট করে দিচ্ছি।
বলেই চলে গেল চিত্রা! রিয়া একবার ফাইলের দিকে তাকাচ্ছে একবার চিত্রার দিকে।
.
.
.
.
.
আরহামের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে রিয়া। বাসার গেটটা বেশ সুন্দর, গেট দিয়ে ঢুকে ডান সাইডে বিদেশি অর্কিডে ভরা বাগান! তার মধ্যে একটা বেতের দোলনা!!

বাম সাইডে সুইমিংপুল, সামনে বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ি। রিয়া ভেতরে ঢুকে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দাড়ালো, সোফায় বসে টিভি দেখছে লম্বাচওড়া ফর্সা একটা মেয়ে।
রিয়াকে দেখে জিজ্ঞেস করল, ” জ্বি, কাকে চাই!?

রিয়া স্মিত হেসে বলল, ” আমি আরহাম স্যারের অফিস থেকে এসেছি। এগুলোতে স্যারের সাইন লাগবে তাই, সাইন নিতে এসেছি।

মেয়েটা হেসে বলল, ” ও আচ্ছা, তুমি এখানে বসো। আমি ভাইয়াকে ডেকে দিচ্ছি। বাই দ্যা ওয়ে তোমার নাম কি!?

রিয়া বসতে বসতে বলল, ” রিয়া।
মেয়েটা কেয়াকে বলল, ” ভাইয়াকে বলো অফিস থেকে রিয়া এসেছে।

রিয়া মুচকি হেসে বলল, ” আপনি মেবি আরহাম স্যারের বোন!?
মেয়েটা হেসে বলল, ” হুম, আমি ওর বোন আরশি।

আরহাম বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। আজ অফিসে যায়নি সে, ল্যাপটপে অফিসের কিছু কাজ করছে।

কেয়া এসে নক করল আরহামের দরজায়, আরহাম ভেতরে আসতে বলল।
কেয়া ভেতরে ঢুকে বলল,” স্যার অফিস থেকে রিয়া নামের একটা মেয়ে এসেছে।

রিয়া এসেছে শুনে উঠে বসল আরহাম, কেয়াকে বলল, ” আচ্ছা, ওকে এখানে পাঠিয়ে দাও।

কেয়া অবাক হলেও মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বেরিয়ে এল রুম থেকে।
নিচে নেমে কেয়া বলল,” স্যার আপনাকে তার রুমে যেতে বলেছে।

রিয়া উঠে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করল, ” ওনার রুমটা কোনদিকে!?

কেয়া হাতের ইশারা করে বলল, ” উপরে উঠে ডান হাতের প্রথম রুমটা।

রিয়া উপরে উঠে গেল, আরশি অবাক হয়ে তাকালো কেয়ার দিকে।
কেয়া আস্তে আস্তে আরশির পাশে গিয়ে বসল, আরশি বলল, ” ভাইয়া তো আমাকে আর তোমাকে ছাড়া কখনও অন্য কাউকে নিজের রুমে ঢুকতেই দেয়না!

কেয়াও সেই কথায় সায় দিয়ে বলল, ” আমিও তো তাই ভাবছি ম্যাম। স্যারকে যখন বললাম, রিয়া এসেছে। সাথেসাথেই বলল ওকে এখানে পাঠিয়ে দাও!!

আরশি গলা খাকারি দিয়ে বলল, ” আচ্ছা যাও কাজে মন দাও, ভাইয়া আজ বাসায় আছে। ওর পছন্দের সব রান্না করবো।
.
.
.
.
.
আরহামের রুমের দরজায় নক করল রিয়া, আরহাম ভেতরে আসতে বলে বেডে শুয়ে পড়ল।
রিয়া ভেতরে ঢুকে দেখল আরহাম বেডে শুয়ে আছে।

রিয়া বেডের পাশের সিংগেল সোফায় গিয়ে বসল, ফাইল গুলোকে বের করে বলল, ” স্যার, এই ফাইল গুলোতে আপনার সাইন লাগবে।
আরহাম অসুস্থতার ভান ধরে বলল, ” আমার মাথাটা খুব ধরেছে।

রিয়া কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা, ফাইল গুলোকে গোছাতে গোছাতে বলল,” আচ্ছা স্যার, তাহলে কাল অফিসে গিয়ে সাইন কইরেন।

আরহাম তাড়াতাড়ি বলল,” আবার কালকে কেন!? চিত্রা তোমাকে আমার বাসায় পাঠিয়েছে মানে নিশ্চয়ই ইম্পর্ট্যান্ট কাজ।

রিয়া চিন্তিত গলায় বলল, ” বাট আপনি তো অসুস্থ মনে হচ্ছে।

আরহাম শোয়া থেকে উঠে বসতে গেল, রিয়া ফাইল রেখে বেডে গিয়ে আরহামকে ধরে বসালো।
হটাৎ করে রিয়া এতো কাছে আসায় থমকে গেল আরহাম, অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার ভেতর।
রিয়ার খোলা চুলের ঘ্রাণে নেশা ধরে যাচ্ছে। আরহামকে বসিয়ে দিয়ে বেড থেকে নামতে গেলে আরহাম রিয়ার হাত ধরল।
রিয়া ভ্রু কুচকে তাকালো আরহামের দিকে, আরহাম ধীরে ধীরে রিয়ার মুখের সামনে গিয়ে বলল,” ফাইল গুলো এখানে নিয়ে এসো।

এদিকে রিয়ার তো আত্না শুকিয়ে যাচ্ছে, কখনও কোনও ছেলের এতটা কাছে আসেনি সে। আরহামের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে রিয়ার মুখে।
হাতেও গরম লাগছে, আরহামের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আপনার হাত এতো গরম কেন!?

আরহাম তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে দু’হাতে নিজের চুল ওল্টাতে লাগল।
রিয়া বেডে বসেই ফাইল গুলো নিয়ে দেখালো আরহামকে।
আরহাম ফাইল গুলোতে সাইন করতে ব্যস্ত, এদিকে রিয়া ব্যস্ত আরহামকে দেখতে।
ঘন কালো চুল গুলোর কিছুটা আরহামের কপালে এসে পড়েছে! ফর্সা গালে খোচাখোচা দাড়ি!! টিশার্টের গলা দিয়ে আরহামের বুকের কিছুটা পশম দেখা যাচ্ছে!!!

আরহাম ফাইল গুলোতে সাইন করে বলল,” নাও, হয়ে গেছে।
বলে রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখল রিয়া গভীর দৃষ্টিতে তাকে দেখছে।
আরহাম বাকা হেসে রিয়ার গোলাপি ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলল,” নাকি আরও কোনও কাজ বাকি আছে!?

রিয়া আরহামের কথায় থতমত খেয়ে বলল,” না, মানে।
আমতাআমতা করতে করতে আরহামের কপালে গলায় হাত দিয়ে বলল, ” আরে! আপনার তো জ্বর এসেছে! মেডিসিন নিয়েছেন!?

আরহাম বুঝল রিয়া লজ্জায় পড়ে গেছে, রিয়াকে আরও লজ্জা দেওয়ার জন্য বলল, ” আমার তো মেডিসিন লাগবেনা।

রিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” তাহলে কি লাগবে!?
আরহাম রিয়ার পাশে হাত রেখে বলল, ” আমার তোমাকে লাগবে।

রিয়া চোখ দুটো বড় বড় করে বলল, “মমমানে!!??

আরহাম একবার রিয়ার চোখের দিকে আরেকবার ঠোঁটের দিকে তাকাচ্ছে।
রিয়া দু’হাতে আরহামকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বেড ছেড়ে নেমে দাড়ালো।

আরহাম স্মিত হেসে ফাইল গুলোকে দেখিয়ে বলল, ” নাও, সাইন করা হয়ে গেছে।
.
.
.
.
.
রিয়া আর একমুহূর্ত দেরি না করে ফাইল গুলোকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রুম থেকে। রিয়াকে নামতে দেখে আরশি বলল, ” আরে রিয়া কোথায় যাচ্ছো!? দুপুরে লাঞ্চ করে যাও।

রিয়া জোর করে হেসে বলল, ” আজ না অন্য কোনোদিন আপু।
বলেই বেরিয়ে গেল রিয়া, আরশি অবাক হয়ে বলল, ” রিয়া এভাবে ছুটে বেরিয়ে গেল কেন!? কেমন যেন লজ্জা পাচ্ছে মনে হল!!!

আরশি দ্রুত পায়ে ভাইয়ের রুমে গিয়ে দেখল, আরহাম ল্যাপটপে কাজ করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে!
আরশি গলা খাকারি দিয়ে বলল, ” মেয়েটা কে রে!?

আরহাম না তাকিয়েই বলল, ” অফিসের এমপ্লয়ি।
আরশি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ” শুধু এমপ্লয়ি!?

আরহাম ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বলল, ” তো তুই কি ভেবেছিলি!?

আরশি একটু ভাব নিয়ে বলল, ” যা ভাবা উচিৎ তাই ভেবেছি।

আরহাম হেসে বলল, ” বাহ! তুই তো দেখি মনোবিজ্ঞানী হয়ে গেছিস!!

আরশি ভ্রু নাচিয়ে বলল, ” তার মানে আমার ধারণা ঠিক!!
আরহাম সলজ্জ হেসে মাথা নাড়ালো, আরশি খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, ” তাই তো বলি, সামান্য এমপ্লয়িকে নিজের রুমে ঢুকতে দেবে তাও আবার আরহাম রহমান!!!

আরহাম গলা খাকারি দিয়ে বলল, ” যাইহোক, ও কিন্ত এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা।

আরশি হেসে বলল, ” তো জানিয়ে দে, আমার মনে হয় রিয়াও তোকে নিয়ে কিছু ফিল করে। কিন্ত বেচারি হয়তো তোর ভয়ে কিছু বলতে পারেনা।

আরহাম গাল ফুলিয়ে বলল, ” আজব! আমাকে ভয় পাওয়ার কি আছে!? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক!?

আরশি এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, ” তার থেকেও ভয়ংকর কিছু!

আরহাম চোখ পাকিয়ে আরশি কিছু বলতে যাবে, আরশি হাসতে হাসতে ছুটে পালালো। আরশি রুম থেকে বেরিয়ে গেলে আরহাম স্মিত হেসে বলল,” খুব শীঘ্রই জানিয়ে দেবো রিয়া, তোমার থেকে দূরে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না।

পরক্ষণেই নিজের মাথায় চাটি মারল আরহাম। নিজেকে ধমক দিয়ে বলল, ” হোয়াটস রং উইথ ইউ আরহাম!? প্রেমে পড়ে পাগল হয়ে গেলি নাকি!? রিয়াকে পছন্দ করিস ভালো কথা। কিন্ত ওর প্রেমে পাগল হওয়া চলবেনা, সো বি কেয়ারফুল আরহাম!! বি কেয়ারফুল!!!
.
.
.
.
.
রিয়া অফিসে ঢুকে নিজের ডেস্কে এসে হাপাতে লাগল।
অফিসের প্রাইভেটে গিয়ে আবার তাতেই ফিরে এসেছে সে।
কিন্ত মনে হচ্ছে যেন সে কতযুগ ধরে ছুটে ছুটে এসেছে!!!

রিয়া তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি খেয়ে বসে পড়ল, আরহামের বলা,” আমার তোমাকে লাগবে “! কথাটা মাথার ভেতর বারবার বেজেই চলেছে।

মনে হচ্ছে আরহাম তার পাশে বসেই বলছে! রিয়া দু’হাতে নিজের কান চেপে ধরল!! বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে!!!
.
.
.
অফিস শেষে বাসায় ঢুকে সোজা নিজের রুমে চলে গেল রিয়া।
ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল।
রিয়ার বাবা সিরাজ খেতে খেতে বলল, ” কি ব্যাপার মামনি!? খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে!?

রিয়া হেসে বলল, ” তুমি তো করো সরকারি চাকরি, নো প্যারা। আর আমার কোম্পানির চাকরি! সারাদিন কাজ আর কাজ!! তাহলে বুঝো!

সিরাজ সাহেব হেসে বলল, ” দেখো, কাজ করতে করতে পড়াশোনায় ঢিল দিওনা আবার।

পড়ার কথা মনে পড়তেই গলায় খাবার আটকে গেল রিয়ার।
খাবারের চেয়ে পানি খেতে লাগল বেশি।
মিসেস ইরা মেয়েকে তরকারি দিতে দিতে বলল, ” যত কাজই থাকুক, পড়াশোনায় গাফিলতি চলবেনা আম্মু।

রিয়া জোর করে হেসে বলল, ” আচ্ছা আচ্ছা, পড়বো।
.
.
.
.
.
অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল আরহামের, ফ্রেশ হয়ে সোজা অফিসে গেল সে।
আজ একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে।

অফিসে ঢুকে দেখল রিয়া বেশ মনোযোগ দিয়ে কিছু পেপার্স দেখছে।
আরহাম রিয়ার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” চিত্রা কোথায়!?

আরহামের গলা পেয়ে চমকে উঠল রিয়া, নিজেকে সংযত করে বলল,” চিত্রা ম্যাম আপনার জন্য কফি বানাচ্ছেন।

আরহাম মাথা নাড়িয়ে বলল, ” এক কাজ করো, চিত্রাকে এখনই মিটিং রুমে পাঠাও। আর কফিটা তুমি নিয়ে এসো।
বলেই গটগট করে চলে গেল আরহাম, রিয়া দাতে দাত চেপে আরহামের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে কিচেনে গেল।
.
.
.
কফি নিয়ে মিটিং রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে রিয়া।
কাচের গ্লাসের ওপাশে বসে থাকা আরহামকে দেখছে সে।
আরহামকে দেখলেই নিজেকে কেমন যেন লাগে, আরহামের চাহনি, কথা বলার ভাবভঙ্গি! যেন প্রতিনিয়ত রিয়াকে তার কাছে টানে!!

রিয়া তাড়াতাড়ি নিজেকে সংযত করে বলল, ” উফফ রিয়া! কিসব ভাবছিস তুই!! পাগল ছাগল হয়ে গেলি নাকি!!? আরহামের মতো খাটাশকে ভালবাসবি তুই!? ইম্পসিবল!!?

আরহামকে মনেমনে গালি দিতে দিতে দরজায় নক করল রিয়া।
আরহাম না তাকিয়েই কাম ইন বলে মিটিং এ মনোযোগ দিল।

রিয়া কফির মগটা আরহামের সামনে রেখে বেরিয়ে আসতে গেলে আরহাম বলে উঠল, ” বাকিদের কফি কে দেবে!?

রিয়া পেছনে তাকিয়ে মনেমনে আরহামকে অশ্রাব্য গালি দিল, আরহাম থমথমে গলায় বলল, ” যাও কফি নিয়ে আসো।

রিয়া আর কিছু না বলে গটগট করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
সবার জন্য কফি বানিয়ে রুমে ঢুকে দেখল কেউ নেই।
শুধু আরহাম বসে আছে রিয়ার দিকে তাকিয়ে। কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল, ” এতো লেট!! কেয়ামত হয়ে গেলেও তো তুমি কফিই বানাতে থাকবা দেখি!!!

রিয়ার মেজাজ এবার পুরো বিগড়ে যাচ্ছে, বেটা খাটাশ, বান্দর, ধলা বিলাই! অফিসে আসার পর থেকে নানানভাবে আমাকে জ্বালিয়েই যাচ্ছে!! আজ তো এই সবকটা কফির মগ তোর মাথায় ভাংবো!!!

রিয়া গটগট করে কফির ট্রে টেবিলে রেখে কিছু বলতে যাবে।
আরহাম উঠে একহাতে রিয়ার ঠোঁট চেপে ধরে বলল, ” তুমি ভাবলে কি করে!? তোমার হাতের কফি আমি অন্য কাউকে খেতে দেবো!?

রিয়া হতবাক হয়ে গেল, আরহাম রিয়ার আরও কাছে এসে বলল, ” কাল সন্ধ্যায় অফিসে পার্টি আছে, সময়মত চলে এসো।

বলে রিয়ার কপালে চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরহাম।
রিয়া স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! কি বলে গেল আরহাম!? আর কপালে!!?

কপালে হাত দিয়ে মৃদু চিৎকার করে উঠল রিয়া। ঠোঁট উল্টিয়ে ফোপাতে ফোপাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে।
.
.
.
.
.
(চলবে)
বিঃদ্রঃ কাজিনের ডেলিভারি ছিলো গতকাল, এজন্য গল্প দিতে পারিনি🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here