বিঃদ্রঃ গতকাল গল্প পোস্ট করতে পারিনি, কারণ আমার বাসায় ওয়াই-ফাইতে একটু প্রবলেম হচ্ছিলো।তাই আজ রাতে নাহয় কাল সকালে আরেকটা পর্ব দিবো😇
#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
২১
.
.
.
.
.
দুপুরের লাঞ্চ করতে বসেছে সবাই, আরহাম আর আরশি তো চলে যেতে চাচ্ছিলো।
কিন্ত রিয়ার আম্মুর জোরাজোরিতে শেষমেশ রাজি হল।
আরহাম মুখে যাবে বললেও মনেমনে থাকতে চাচ্ছিলো।
রিয়া আরহামের থেকে বেশ দূরত্ব রেখে বসেছে, তাও আরহাম পিছু ছাড়ছেনা তার।
ফাইয়ায বসেছে রিয়ার পাশে, রিয়ার অপজিটের চেয়ারে বসেছে আরহাম।
ডাইনিং টেবিলের নিচ দিয়ে রিয়ার পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে বারবার।
রিয়া আর যাই সহ্য করুক সুড়সুড়ি সহ্য করতে পারেনা।
বারবার পা সরিয়েও কাজ হচ্ছেনা, ভিষণ আকারে হাসি পাচ্ছে তার।
বাম হাতে মুখ চেপে ধরল রিয়া, হাসির চোটে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে তার!!
আরহাম বেশ মজা পাচ্ছে রিয়ার অবস্থা দেখে, ফাইয়ায ক্রুর চোখে তাকিয়ে আছে আরহাম আর রিয়ার দিকে। কিন্ত দুজনেই চুপচাপ খাচ্ছে! কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছেও না!! ব্যাপারটায় বেশ খটকা লাগলো ফাইয়াযের!!!
কিন্ত রিয়া মুখে হাত দিয়ে আছে কেন বুঝতে পারছেনা ফাইয়ায।
খেয়াল করল আরহাম মিটমিট করে হাসছে, হচ্ছেটা কি!!?
রিয়া আর পারছেনা, আরহাম আবার পা দিয়ে সুড়সুড়ি দিতে গেলে রিয়া তার পায়ের নখ দিয়ে খামছে দিল আরহামের পায়ে !
মৃদু চেচিয়ে উঠলো আরহাম, খেতে খেতে সবাই জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালো আরহামের দিকে।
আরহাম জোর করে হেসে বলল, ” পেট ভরে গেছে! আর খেতে পারবো না!!
বলে উঠতে গেলেই মিসেস ইরা বাধা দিয়ে বলল, ” কিছুই তো খেলে না! বাবা আরহাম!!
মেয়েকে ডেকে বলল, ” এই রিয়া! আরহামকে সরষে ইলিশটা দে!!
রিয়া না চাইতেও হেসে বলল, ” হুম দিচ্ছি।
আরহাম বাধা দিয়ে বলল, ” নাহ থাক না! অন্য একদিন খাবো!!
বলেই চেয়ার ছেড়ে হাত ধুতে বেসিনে গেল আরহাম, রিয়া একটা শয়তানি হাসি দিয়ে খাওয়ায় মন দিল।
মিসেস ফাতেমা আরশির পাশে বসেছে, সে খাচ্ছে কম আরশির সাথে গল্প করছে বেশি।
আরশিও বেশ গল্পে মেতেছে তার সাথে। কথার ফাকে ফাকে আড়চোখে ফাইয়াযকে দেখছে সে।
.
.
.
বেসিনে হাত ধুয়ে হালকা নিচু হয়ে পা দেখছে আরহাম। ফর্সা পায়ে দুটো নখের আঁচড় একেবারে ফুটে উঠেছে! মনেমনে বলল, ” আল্লাহ গো! কি সাংঘাতিক মেয়ে রে!! আরেকটু হলে তো মাংস উঠে আসতো!!!
রিয়া তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে রুমে গেল, একটা মলম নিয়ে বেসিনে গিয়ে দেখল আরহাম বেসিনের আয়নায় তাকিয়ে দু’হাতে চুল গুলো ওল্টাচ্ছে!
মুগ্ধ হয়ে আরহামকে দেখছে রিয়া, একটা মানুষ এতটা সুন্দর হয় কিভাবে!!? আরহামের তাকানোর স্টাইল, ঠোঁটের ঐ বাকা হাসি, ওর এটিটিউড রিয়াকে এমনিতেই মাতাল করে দেয়!!!
রিয়া খেয়াল করল, হাতে লেদারের ব্রেসলেট পরেছে আরহাম! উফফ!! এই ছেলেটা তো আমাকে পাগল করে দেবে দেখছি!!! এতো স্টাইল দিয়ে আসার কি দরকার ছিলো!!!
আরহাম চুল গুলো ঠিক পাশে তাকিয়ে দেখল, রিয়া তাকিয়ে আছে তার দিকে!
আরহাম জিজ্ঞেস করল, ” কি! আবার খামছাতে এসেছো নাকি!!?
আরহামের কন্ঠঃ শুনে রিয়া সচকিত হয়ে বলল, ” এহ! আমি কি সাধে খামচি দিছি!? আর আপনি যে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলেন তখন!!!?
আরহাম বাকা হেসে বলল, ” কি করবো বলো! তোমাকে দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা!
রিয়া খেয়াল করল আরহামের চোখেমুখে দুষ্টুমি খেলা করছে!
রিয়া মলমটা আরহামের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দাতে দাত পিষে বলল, ” এখন থেকে কন্ট্রোল করতে শিখুন, নাহলে এরকম অনেক খামচি খেতে হবে!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ফোনের রিংটোন পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল সুমুর, ঢুলুঢুলু চোখে তাকিয়ে দেখল তার মা কল দিয়েছে!
রিসিভ করতেই মিসেস সালেহা বলল,” কিরে! কোথায় থাকিস!? সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি!!
সুমু আড়মোড়া ভেঙে উঠে বলল, ” ঘুমোচ্ছিলাম! কি বলবে বলো।
মিসেস সালেহা অবাক হয়ে বলল, ” এতো তাড়াতাড়ি!? রাতে খেয়েছিস!? নাকি না খেয়েই ঘুমোচ্ছিস!?
সুমু চোখ ডলে ফোনস্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল রাত আটটা দশ বাজে!!
সকালে রিয়ার বাসা থেকে বেরিয়ে কলেজে গেছিলো সে, দুপুরে বাসায় ফিরে সেই যে ঘুম দিয়েছে আর এখন উঠল!!!
মিসেস সালেহা হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে, সুমু বেড থেকে নামতে নামতে বলল,” না খাইনি। খাবো।
মিসেস সালেহা জিজ্ঞেস করল ,” আচ্ছা শোন, তোর না আজ বাড়ি আসার কথা ছিলো! এলি না যে!!
সুমু লাউডস্পিকার অন করে চুল বাধতে বাধতে বলল,” খুব বিজি ছিলাম আম্মু, বাদ দাও। কাল সকালেই রওনা দেবো। আমার পছন্দের রান্নাবান্না করবে বুঝলে, কতদিন তোমার হাতের রান্না খাইনা!
মিসেস সালেহা হেসে বলল, ” ঠিকাছে ঠিকাছে, সব রান্না করবো। তুই তাহলে বেরিয়ে ফোন দিস।
সুমু আচ্ছা বলে কল কেটে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কিচেনে দাঁড়িয়ে ফল কাটছে কেয়া, আর কিছুক্ষণ পরপর আরশির দিকে তাকাচ্ছে।
সেই সন্ধ্যেবেলা একবাটি পাস্তা নিয়ে বসেছে আরশি। কিন্ত সে খাচ্ছে কম ফোন ঘাটছে বেশি, কার সাথে চ্যাট করছে আল্লাহ মালুম!
টিভিতে কোন দেশের নিউজ চলছে কে জানে, টিভি অন করে ফোনে মগ্ন আরশি।
ঘন্টা খানেক আগে বলল, তার নাকি স্যুপ খেতে মন চাচ্ছে উইথ চিকেন ফ্লেভার!
কেয়া স্যুপ নিয়ে যেই আরশির কাছে নিয়ে গেল, আরশি নিজের দিকে ভালো করে দেখে জিজ্ঞেস করল, ” আচ্ছা কেয়া! আমি কি মোটা হয়ে গেছি!!? আমার কি ফিগার নষ্ট হয়ে গেছে!!?
কেয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা, আরশি ছোট থেকেই একটু গলুমলু টাইপের।
কখনোই স্লিম ছিলোনা, বরং যেমন ছিলো তেমনই আছে এখনও।
কেয়া স্মিত হেসে বলল, ” আপনি একদম ঠিক আছেন ম্যাম, একেবারে পার্ফেক্ট!
আরশি মাথা নাড়িয়ে না করে বলল, ” নাহ, তুমি বুঝতে পারছো না। আমি মোটা হয়ে গেছি, আমার ফিগার নষ্ট হয়ে গেছে!! আমাকে ডায়েট করতে হবে বুঝলে, যাও এসব রেখে আমার জন্য ফল নিয়ে এসো!!
কেয়ার এখন মন চাচ্ছে নিজের মাথাটা এই গরম স্যুপের বাটিতে ডুবিয়ে দিতে!
স্যুপ খাবিনা তো বানাতে বললি ক্যান আরশোলা কোথাকার!?
কেয়া চলে আসতে গেলে আরশি ডেকে বলল, ” এই পাস্তাটাও নিয়ে যাও, আমি খাবোনা! এতে প্রচুর ফ্যাট!!
বলে আবারও সোফায় হাতপা ছড়িয়ে বসে ফোন ঘাটতে লাগল আরশি।
কেয়ার এখন মন চাচ্ছে পাস্তা আর স্যুপ একসাথে মিশিয়ে নিজেই খেয়ে ডাইরিয়া বাধিয়ে বসতে!
তখন আরশির আর কি কি খেতে মন চায় দেখবে সে! কিন্ত পেট খারাপ করলে সে নিজেই তো দুদন্ড দাড়াতে পারবেনা!
টয়লেট থেকে বের হতে আর ঢুকতেই জীবন ত্যানাত্যানা হয়ে যাবে তার!!
অগত্যা ফ্রিজ খুলে ফল বের করে কাটতে লাগল কেয়া।
.
.
.
.
.
আরহাম ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল রাত সাড়ে নয়টা বাজে! ল্যাপটপ রেখে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে গেল সে।
রিয়ার বাসা থেকে ফিরে সেই সন্ধ্যা থেকে অফিসের ফাইল নিয়ে বসেছিলো আরহাম।
আজ অফিস না গিয়ে চিত্রাকে বলেছিলো ফাইল গুলো তার বাসায় পাঠিয়ে দিতে।
ড্রয়িং রুমে এসে দেখল আরশি কাটা চামচ দিয়ে ফল খাচ্ছে আর ফোন ঘাটছে!
আরহাম ডেকে জিজ্ঞেস করল, ” আপু! খালি পেটে এখন ফল খাচ্ছিস কেন!!?
আরশি খেতে খেতে বলল, ” আমি এবার থেকে শুধু ফল খাবো। ডায়েটকন্ট্রোল করতে হবে!
ডায়েটের কথা শুনে আরহাম বেশ অবাক হয়ে গেছে! হটাৎ ডায়েট করার কি হয়েছে!!?
আরহাম বোনের কপালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” আপু তুই ঠিক আছিস তো!? শরীর খারাপ করল নাকি তোর!!? ডক্টরের কাছে যাবি!!!?
আরশি ভাইয়ের হাত সরিয়ে আস্বস্ত করে বলল, ” ভাইয়া! আমি ঠিক আছি, বরং আগের থেকেও বেশি ঠিক আছি!!
আরশির কথা শেষ না হতেই কিচেন থেকে কেয়া একরকম চেচিয়ে উঠলো, ” কিন্ত আমি ঠিক নেই! সেই সন্ধ্যে থেকে নাস্তা বানাতে বানাতে আমি শেষ!! ডাইনিং এ খাবার রেখেছি, কেউ খেলে খাও না খেলে যাও!!!
বলেই হনহন করে নিজের রুমে চলে গেল কেয়া! আরহাম আরেক দফা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!! কেয়ার আবার কি হয়েছে!!!?
আরশি সেদিকে মুখ ভেংচি কেটে বলল, ” এই কেয়াটা না একদম কাজের না! খুব ফাকিবাজ হয়েছে!!
আরহাম ডাইনিং এ একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল, ” এ বাসায় সবার হয়েছে টা কি!!!?
আরশির সেদিকে খেয়াল নেই, সেই সন্ধ্যে থেকে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে শুধু ফাইয়াযকে খুজে চলেছে সে! কিন্ত খুজে পেলে তো!!
মনেমনে বলল, “দূর এ ব্যাটা কি ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম ইউজ করেনা নাকি!!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রিয়া দরজায় আড়ি পেতে আছে, ড্রইংরুমে বসে রিয়ার বিয়ের ব্যাপারে ডিসকাস করছে তার আব্বু আম্মু।
সিরাজ সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,” ফাতেমা আপাও তাই বলছিলো, সামনের মাসেই বিয়ের প্রোগ্রাম সেরে ফেলতে।
মিসেস ইরা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলল, ” হুম সেটাই তো বলছি। এই মাস তো শেষ প্রায়! সামনের মাসে প্রোগ্রাম করলে আগে তো কেনাকাটা কমপ্লিট করতে হবে!!
সিরাজ সাহেব বলল, ” কেনাকাটার দিকটা তুমি আর রিয়ামা দেখো, আমাকে ডেকোরেশনের জন্য আবার সেন্টার দেখতে হবে।
মিসেস ইরা একটু ভেবে বলল, ” শপিংয়ে আমি আর রিয়া কি দেখবো!? ফাতেমা আপা কি বলেছেন শোনো নি!? ফাইয়াযকে নিয়ে আমরা শপিং করবো আর সে যাবে রিয়াকে নিয়ে!
সিরাজ সাহেব বলল, ” বেশ, তাহলে তাই হবে। এখন তাহলে রিয়ার সাথে কথা বলো নাকি!?
মিসেস ইরা না করে বলল, ” মেয়েটা আজই হসপিটাল থেকে ফিরেছে। আজ আর এসব নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিনা। এই মাস টা যাক, ও পুরোপুরি সুস্থ হোক তারপর এসব নিয়ে কথা বলবো।
রিয়া দরজা থেকে সরে এসে বেডে হেলান দিয়ে বসল। ফাইয়াযকে বিয়ে করবে বলে মনেমনে ঠিক করলেও মন থেকে ঠিক মেনে নিতে পারছেনা রিয়া!
আরহামকে অসম্ভব ভালোবাসে রিয়া তাতে কোনো সন্দেহ নেই!
কিন্ত সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে আরহামকে দুচোখে দেখতে ইচ্ছে করে না তার।
কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা রিয়া!! একজনকে ভালবেসে অন্যজনকে কিভাবে বিয়ে করবে সে!!?
ফোনের রিংটোন পেয়ে ভাবনায় ছেদ পড়ল রিয়ার, ফোন হাতে নিয়ে দেখল সুমু কল দিয়েছে! রিসিভ করতেই সুমু বলল, ” কি করছিস রে!?
রিয়া স্মিত হেসে বলল, ” এই তো বসে আছি, তুই কি করছিস!?
সুমু লাউডস্পিকার অন করে ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল, ” ব্যাগ গোছাচ্ছি, কাল বাড়ি যাবো। আচ্ছা শোন না, আফসা বাসায় একা থাকছে। আমি না আসা পর্যন্ত আফসার সাথে থাকতে পারবি!?
রিয়া একটু ভেবে বলল, ” এখনই শিওর বলতে পারছিনা রে, আম্মুকে বলে দেখি! কয়দিন থাকবি বাড়িতে!!?
সুমু ব্যাগ গুছিয়ে বেড থেকে নেমে জানালার পাশে গিয়ে বলল,” আরে বেশি না, মাত্র দুদিন থেকেই চলে আসবো। তুই খালামনিকে বলে দ্যাখ কি বলে!
রিয়া আচ্ছা বলে কল কেটে দিল, টেবিলের ড্রয়ার থেকে রেজিগনেশন লেটারটা বের করে একবার দেখে নিল।
কাল অফিসে গিয়ে রিজাইন দেবে সে, তাকে যেভাবেই হোক ভুলতে হবে আরহামকে।
আর তো মাত্র কয়দিন, ফাইয়াযের সাথে বিয়ের পরপরই কানাডা চলে যাবে সে।
.
.
.
ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে ফাইয়ায, কিন্ত মন তার অন্য কোথাও।
আরশির সেই খিলখিল করে হাসা! বাচ্চাবাচ্চা ফেস করে তাকানো!!
মনে পড়তেই ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটে উঠল ফাইয়াযের!!!
পরক্ষণেই নিজেকে মনেমনে ঝাড়ি দিল ফাইয়ায,” এসব তুই কি করছিস ফাইয়ায! তুই শুধু রিয়াকে ভালবাসিস!! রিয়া তোর বাগদত্তা, শুধু তাকে নিয়েই ভাববি তুই!!!
.
.
.
.
.
(চলবে)