#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
.
.
.
.
.
ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ, মনে হয় বৃষ্টি নামবে। আরহামের ডুপ্লেক্স বাড়িটায় নানানরকম ফুল আর লাইটিং করা হয়েছে!
এসব দেখে রিয়ার বুঝতে বাকি নেই, সবকিছুই প্রিপ্ল্যানড!!
নাহলে এই অল্প সময়ের মধ্যে কি কেউ এতোকিছু ডেকোরেট করতে পারে!!!
আরহামের রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে আজ!!
ফুলের ছোয়ায় আরও সুন্দর লাগছে দেখতে, সুগন্ধি ছড়িয়ে আছে পুরো ঘরজুড়ে!!!
.
.
.
রিয়াকে আরহামের রুমে ঢুকিয়ে ভেতর থেকে দরজা লক করে দিল আফসা আর সুমু।
রিয়া বিয়ের সাজ খুলে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে ঢুকল।
সন্ধ্যার দিকে শ্বশুরবাড়িতে এসে পৌছেছে, সেই থেকে দেড় ঘন্টা ধরে আরশির রুমে বসে ছিলো সে!
ভিষণ মাথাব্যথা করছে তার, লম্বা শাওয়ার না নেওয়া পর্যন্ত মাথাব্যথা যাবেনা।
আরহাম ফ্রেশ হতে নিজের রুমের সামনে এসে দেখল, দরজা ভেতর থেকে লক!
নিশ্চয়ই রিয়া লক করেছে। এই ভেবে দরজায় নক করতেই দরজা খুলে সামনে জড়ো হয়ে দাড়ালো আরশি, সুমু আর আফসা।
আরহাম ভ্রু কুচকে বলল, ” আমার ঘরে তোমরা কি করছো!?
আফসা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, ” সেই সন্ধ্যা থেকে আমরা তিনজনে মিলে আপনার রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছি জিজু!
সুমু আরহামের দিকে হাত বাড়িয়ে ঢং করে বলল, ” বুক চিনচিন করছে হায়, আমাদের মন শুধু টাকা চায়!
আরহাম বুঝেও না বোঝার ভান করে বলল, ” আমার রুম এমনেই অনেক সুন্দর, তোমাদের সাজাতে বলেছে কে!? আমি!? নাতো, এবার যাও ভাগো!!
আরশি গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” নো টিয়া, নো পিয়া! আফসা, সুমু দরজাটা লক করে দাও। আজ সারারাত আমরা রিয়ার সাথে আড্ডা দিবো!
আরহাম অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল, ” আপু তুইও এদের দলে!
আরশি শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, ” জ্বি ভ্রাতা!
দরজা লক করতে গেলে আরহাম দরজা আটকে ধরে বলল, ” আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি, কতো লাগবে বলো।
.
.
.
.
.
রিয়া একটা গাঢ় পিয়াজ কালারের শাড়ি পরে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।
আরহাম তো রিয়াকে দেখে আরেক দফা ক্রাশ খেয়েছে!
আরশি, আফসা আর সুমু টাকা নিয়ে নাচতে নাচতে বেরিয়ে যেতে গেলে রিয়া তাদের ডেকে বলল,” সাথে তোদের জিজুকেও নিয়ে যা!
রিয়ার কথা শুনে আরহামের মাথায় এবার আকাশ ভেঙে পড়ল, রিয়া সেদিকে না তাকিয়েই বলল, ” আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, যাও যাও দরজাটা লক করে একটা ঘুম দেবো।
বলে ঘুমের হাই তুলতে লাগল রিয়া, আরহাম দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে বেডে সটান হয়ে শুয়ে পড়ল।
আফসা হেসে বলল,” বেচারা জিজু! ওনাকে আর কষ্ট দিসনা দোস্ত!!
আফসার সাথে আরশি আর সুমুও হেসে ফেলল, রিয়া দাতে দাত পিষে আরহামকে বলল, ” আরহাম! ওঠো বলছি! আগে সব ক্লিয়ারলি বলো নয়তো চুপচাপ কেটে পড়ো।
আরশিও রিয়ার সাথে সায় দিয়ে বলল, ” হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও জানতে চাই। পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে এখনও ঘোলাটে, ভেবেছিলাম এই বিয়ের প্রোগ্রাম শেষ হলে ফাইয়াযকে জিজ্ঞেস করবো। কিন্ত এখন যখন কথা উঠেছেই, আমিও জানতে চাই!
আরহাম বুঝল, এরা সত্যিই তাকে এই রুমে ঘুমাতে দেবে না।
সে যদি জোর করে রুমে থেকেও যায়, রিয়া সারারাত তার ঘুম হারাম করে দেবে শিওর!
অগত্যা বেড থেকে নেমে আরহাম বলল, ” আচ্ছা বলছি, ফাইয়াযকেও ডাকো।
আরশি আচ্ছা বলে দ্রুত পায়ে ফাইয়াযকে ডাকতে গেল, কিছুক্ষণ পরই ফাইয়াযকে নিয়ে আরহামের রুমে এলো আরশি।
রিয়া দরজা লক করে আরহাম আর ফাইয়াযকে বলল,” নাও এবার শুরু করো।
আরহাম ফাইয়াযের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আগে তুমি বলো।
ফাইয়ায কাচুমাচু করে বলল, ” আসলে রিয়া! সেদিন আরশি আমার সাথে কথা না বলায় ভেবেছিলাম আরহাম ইচ্ছে করেই আগে থেকে সব বলে দিয়েছে আরশিকে। এদিকে ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম হোয়াটসঅ্যাপ সব জায়গা থেকে আরশি আমাকে ব্লক করে রেখেছিলো। তাই উপায় না পেয়ে ভাবলাম আরহামকে
আরহাম মাথা নাড়িয়ে বলল,” উপায় না পেয়ে ভেবেছিলে আমাকে থ্রেট দিলে আমার বোনের সাথে তোমার দেখা করিয়ে দেবো তাই তো!
আরশি আর রিয়া অবাক হয়ে তাকালো ফাইয়াযের দিকে।
আরহাম বলা শুরু করল,” সেদিন ফাইয়ায আমার সাথে দেখা করে বলল, আমি যদি আরশির সাথে ওর দেখা করার ব্যবস্থা না করি তাহলে সে নাকি বাধ্য হবে রিয়াকে বিয়ে করতে।
রিয়া মাঝখানে বাধা দিয়ে বলল, ” ওয়েট ওয়েট! আগে বলো তোমরা দুজন কেন আমার কল রিসিভ করোনি।
ফাইয়ায ইতস্ততভাবে বলল, ” আমি ভেবেছিলাম আরহাম হয়তো এ ব্যাপারে তোমাকে বলেছে তাই!
রিয়া আরহামকে জিজ্ঞেস করল, ” আর তুমি!? তুমি কেন কল রিসিভ করোনি!!?
আরহাম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,” সেদিন তুমি আর ফাইয়ায চলে যাওয়ার পর আপু আমাকে ডেকে বলল, সে সুইডেন চলে যাবে বলে ডিসিশন নিয়েছে। আপুকে অনেক বলেও আটকাতে পারিনি, একদিকে তোমার বিয়ের প্যারা অন্যদিকে আপুর চলে যাওয়া! সব মিলিয়ে দোটানায় পড়ে গেছিলাম।
রিয়া ধৈর্য্য হারিয়ে বলল, ” তারপর!!?
আরহাম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ” হলুদের দিন আপু বাসা থেকে বের হওয়ার সাথেসাথেই ফাইয়াযকে কল দিয়ে জানাই যে আপু চলে যাচ্ছে। ফাইয়ায নিজের হলুদের প্রোগ্রাম ছেড়ে আপুকে আনতে যায় এয়ারপোর্টে। আপুরা প্লেনে ওঠার আগেই আমি মিসেস আয়েশাকে কল করে ফাইয়ায আর রিয়ার বিয়ের ব্যাপারে জানাই। ওদিকে ফাইয়াযের হটাৎ করে প্রোগ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ায় মিসেস ফাতেমাসহ বিয়ে বাড়ির সবাই খুব অবাক হয়ে যায়। তখনই আমি সেখানে গিয়ে মিসেস ফাতেমাকে আপু আর ফাইয়াযের রিলেশনের ব্যাপারে জানাই। প্রথমে তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, পরে ফাইয়ায বাসায় ফেরার পর সবার সামনে সেই সব স্বীকার করে নেয়।
আরহাম আর কিছু বলার আগেই আরশি কাদোকাদো হয়ে ফাইয়াযকে জিজ্ঞেস করল, ” আমি চলে যাচ্ছি শুনে তাই এসেছিলে! আর আমি যদি না যেতাম!? তুমি তো দিব্যি গায়ে হলুদ মাখছিলে!! বিয়েটাও করার ইচ্ছে ছিলো বুঝি!?
ফাইয়ায মাথা নাড়িয়ে না করে বলল, ” আরে না! আমি তো প্ল্যান করেছিলাম বিয়ের দিন ভোরেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবো!! ফ্রেন্ডদের বলে সব ম্যানেজ করে রেখেছিলাম!!!
রিয়া চমকে উঠে বলল, ” বাহ ফাইয়ায! তোমার আর আমার প্ল্যান তো সেম ছিলো তাহলে!!
ফাইয়ায ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” কেন! তুমিও পালাবে ভাবছিলে নাকি!?
রিয়া দাতে দাত পিষে বলল, ” হুম! পালিয়ে গিয়ে আরহাম আর তোমাকে কিডন্যাপ করতাম!! তারপর চলতো তোমাদের ওপর আমাদের ধোলাই থেরাপি!!!
রিয়ার ধমক শুনে ফাইয়ায কাচুমাচু করতে লাগল, আরহাম বাকা হেসে বলল, ” ধোলাই থেরাপি চলতো নাকি তোমাদের ওপর আমাদের রোম্যান্স থেরাপি চলতো!!?
রিয়া রেগেমেগে আরহামকে মারতে আসতেই আরশি, সুমু আর আফসা রিয়াকে ধরে ফেলল।
প্রসঙ্গ পাল্টাতে আরহাম গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” তো আমি কোথায় ছিলাম!?
ফাইয়ায একটু মনে করার চেষ্টা করে বলল, ” মনে পড়েছে, আমার হলুদে ছিলে!
আরহাম মাথা দুলিয়ে বলল, ” হুম, তো তারপর দিন মানে আজ সকাল বেলা। আমি আরশি আর ফাইয়ায যখন বিয়েতে যাওয়া নিয়ে প্ল্যান করছিলাম, তখনই আমার বর্তমান শ্বশুর শ্বাশুড়ি আমার বাসায় আসে।
আরহামের শেষের কথাটা শুনে হতবাক হয়ে গেল রিয়া, তার আব্বু আম্মু এখানে এসেছিলো!
সেজন্যই সকাল থেকে আব্বু আম্মুকে খুজে পায়নি সে!!
আরহাম একটু থেমে আবার বলল, ” ওনারা এসে আমাকে একরকম জেরা করা শুরু করে দিল! কেন আগেই বাসায় প্রোপোজাল পাঠাইনি, আদৌ রিয়াকে ভালবাসি নাকি টাইম পাস করছি!! আরও না জানি কতকিছু!!!
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরহাম বলতে লাগল,” তারপর তাদেরকেও সংক্ষেপে এই সারাংশ পড়ে শোনালাম। অতঃপর তারা আমার ভালবাসাকে সহধর্মিণী করে আনার অনুমতি দিলেন।
এপর্যন্ত বলে থামল আরহাম, সবাই চুপচাপ একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।
সুমু গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” তো সব ঝামেলার অবসান ঘটেছে, এবার আমাদের যাওয়া উচিৎ!
আফসা রিয়ার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ” তাই চল সুমু, নাহলে আজকের রাতের জন্য রিয়া আমাদের সারাজীবন জ্বালিয়ে মারবে!!
রিয়ার তো লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়ার মতো অবস্থা, তাও সাহস করে ধমক দিয়ে বলল, ” চুপ কর বান্দরের দল!
আফসা মুখ ভেংচি কেটে আরশি আর সুমুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
.
.
.
ফাইয়াযকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরহাম বলল,” ভাই তোমাকে কি যাওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো লাগবে !?
ফাইয়ায সলজ্জ হেসে বলল, ” না না, যাচ্ছি তো।
বলেই দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ফাইয়ায, আরহাম দরজা লক করে ওয়াশরুমে ঢুকল।
.
.
.
.
.
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখল রিয়া দুহাত কোমরে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আরহামকে বের হতে দেখে বলল,” দরজা লক করলা কেন!? যাও তুমি গিয়ে ফাইয়াযদের সাথে ঘুমাও!!! আমি একা ঘুমাবো!!!
আরহাম চোখ ছোট ছোট করে রিয়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে লাগল।
রিয়া নিজের শাড়ি ঠিক করতে করতে বলল,” ওভাবে ড্যাবড্যাব করে কি দেখছো হ্যাঁ!?
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে! আরহাম সেদিকে তাকিয়ে বলল, ” চলো ভিজি বৃষ্টিতে!
রিয়া মুচকি হেসে আরহামের হাত ধরে সোজা ছাদে চলে গেল। ঝমঝম বৃষ্টিতে দুহাত মেলে ভিজছে আরহাম আর রিয়া।
ভিজতে ভিজতে রিয়া জিজ্ঞেস করল, ” তুমিও বৃষ্টি পছন্দ করো!?
আরহাম হেসে বলল, ” আগে করতাম না। তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম বৃষ্টিতে ভিজতে! সেদিন থেকে বৃষ্টিও এসে গেছে আমার পছন্দের খাতায়!!
রিয়া জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,” কবে!?
আরহাম রিয়ার হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বলল,” আজ নয়, বলবো একদিন!
.
.
.
.
.
||সমাপ্ত||