#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ১২
“হ্যান্ডসাম আংকেল, মাম্মা এখনো আসছেনা কেন? ”
” শুনো, তুমি আমাকে আংকেল বলবেনা, বা..মানে শুধু হ্যান্ডসাম বলবে ওকে??”
” কেন? মাম্মা বলে একটু বড়দের ভাইয়া, আরেকটু বড়দের আংকেল আর আরো বড়দের দাদু বলতে হয়। তো আপনি তো একটু বড়না আরেকটু বড় তাই না তাইতো আংকেলই বলতে হবে ”
” ওহ গড ছেলেকে কি কি যে শেখায় এই মেয়ে! ” বিড়বিড় করে বলে উঠলো লোকটি
” দেখো তোমাকে যেমন কেউ ইংরেজের বাচ্চা বললে ভালো লাগে না তেমনি আমাকেও কেউ আংকেল বললে ভালো লাগেনা”
“কেন প্রেস্টিজে লাগে? ” বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো রুহান।
“মানে?”
” আরে সুজি মাসিকে কারো সামনে মাসি বললে তার নাকি প্রেস্টিজে লাগে তেমন আপনাকেও আংকেল বললে প্রেস্টিজে লাগে তাই না?”
” হুম ঠিক তাই, তুমি বরং আমাকে এসকে বলে ডাকো ওকে?”
“ওকে মি. এসকে”
“তো চকলেট খাবে? ”
” নো, মাম্মা বলে চকলেট খেলে কেভিটি হয় আর পরে ডাক্তার এর কাছে গেলে সব দাত ফেলে দিবে আর আমি কিছু খেতে পারবো না”
“ওহ গড তাইতো! তাহলে কি খাবে তুমি ”
“উমম পিজা খাবো তবে মাম্মাকে বলোনা আমি খেয়েছি নাহয় খুনচুন দিয়ে পিটাবে তোমাকেও আমাকেও ”
রুহানের কথা শুনে চোখ বড়বড় করে আছে লোকটি
“খুনচুন কি?”ভ্রু কুচকে বললো
” আরে এটাও জানোনা বুদ্ধু, যেটা দিয়ে রান্না করে ”
“ওহ, রান্নার কাঠি, ভালো কি ভয়ংকর নাম খুনচুন, মনে হচ্ছে চুন খাইয়ে খুন করে দিবে” লোকটি বিড়বিড় করে বলে উঠলো
” পিজা অর্ডার করো ওর জন্য আর হ্যা হেলদি রেস্টুরেন্ট থেকে অর্ডার করবে”
” ওকে স্যার ”
বাচ্চাটিকে সোফা থেকে নিজের কোলে তুলে নিলো লোকটি তারপর দুজনে মিলে ফোনে গেমস খেলতে শুরু করলো। “লর্ড মোবাইল” খেলছে দুজনে, শত্রুপক্ষকে হারিয়ে দুজনেই একসাথে ইয়েস বলে উঠছে, দুজনের চোখে বিশ্বজয়ের হাসি।
–
–
–
–
–
–
রাস্তার একপাশের বেঞ্চে বসে আছে রুশি, ঠেলে কান্না আসছে ওর কিন্তু ও জানে এই মুহুর্তে কান্না করে কোনকিছুর সমাধান পাওয়া যাবে না তারচেয়ে বরং উপায় খুঁজতে হবে। এতোটা হেল্পলেস কখনো ফিল হয়নি এর আগে, যখন ওই লোকটি ফেলে গিয়েছিলো তখন আর না যখন বাড়িছাড়া হয়ে এই অচেনা শহরে পা রেখেছিল তখন কিন্তু এখন তার কলিজার টুকরোকে হারিয়ে ফেলেছে, কোথায় খুঁজবে ও। কাউকেই ঠিকমতো চিনে না তারউপর পুলিশ ও হেল্প করতে না করে দিয়েছে, চব্বিশ ঘন্টার পুর্বে নাকি নিখোজের এফআইআর লিখা যায় না। ঘড়ির কাটা নয়টার কোটায় অলরেডি পৌছে গেছে, এখন মধ্যরাত্রি বলা চলে, রাস্তার পাশের সোডিয়াম লাইটটা ঠিক জলছে। তখনি ফোনটা আওয়াজ করে কেপে উঠলো যা ধরার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা রুশির নেই। ধরবে না ধরবে করেও কি মনে করে ধরলো ফোনটা।অপরপাশ থেকে নিঃশ্বাসের আওয়াজ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না, ফোনটা রাখতে গিয়েও আবার কানের সাথে লাগালো রুশি, অপরপাশ থেকে বাচ্চার হাসির শব্দ আসছে। রুশি থমকে গেলো, এটা রুহানের আওয়াজ যা খুব চিনা ওর। কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন বলে উঠলো
” একটু পর একটা গাড়ি এসে থামবে তার মধ্যে উঠে পড়বে, যদি ছেলেকে দেখতে চাও তাহলে চলে এসো তাড়াতাড়ি ”
“কে আপনি, আর আমার ছে..”বুঝতে পারলো অপরপাশ থেকে ফোনটা খট করে কেটে গিয়েছে,রুশি থম মেরে বসে রইলো, কে হতে পারে এই লোক?কিছুক্ষণ বাদে একটি বিশাল গাড়ি এসে ওর সামনে থামলো, শো শো করে কয়েকজন কালো পোশাক পরিহিত লোক বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে। তার মাঝে একজন বলে উঠলো “মেম, দিস ওয়ে প্লিজ ”
ও আর দেরি না করে গাড়িতে উঠে বসলো, গাড়িটি একটি বিশাল হোটেলেরএর সামনে থামলো, গাড়ি থেকে নেমেই ও বডিগার্ডদের সাথে লিফটে ঢুকলো, বডিগার্ড সর্বোচ্চ নাম্বার ফ্লোরে যাওয়ার জন্য ক্লিক করলো, লিফট এসে থামলো সেই ফ্লোরে তারপর একটা রুমের দিকে নিয়ে গেল তাকে, বডিগার্ড দুজন বাইরে থেকেই ওকে ভেতরে যেতে বললো। ও ভিতরে ঢুকতেই ডাস্টবিনে কয়েকটি পিজার এর খালি পেকেট দেখলো, সামনে তাকিয়ে দেখে একটা লোকের কোলে রুহান বসে গেমস খেলছে আর দুজনের ঠোঁটেই সস লেগে আছে । এমনভাবে বসে আছে যে হঠাত এক দেখায় যে কেউ বাবা ছেলে বলবে এত মিল দুজনের মধ্যে আর সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে দুজনের চোখই বাদামি রংয়ের। আর রুহানতো কারো সাথে সহজে মিশে না অথচ কি সুন্দর মিশে গেছে লোকটির সাথে। লোকটিকে খুব পরিচিত মনে হলো ওর, কোথায় যেন দেখেছে! হ্যা এটাতো কালকের পার্কের সেই লোকটি, এখানে কি করছে তাও রুহানের সাথে?
” মাম্মা, তুমি আসতে এতো লেট করলে কেন? জানো কখন থেকে ওয়েট করছি তোমার জন্য? ”
রুহানের কথায় দুজনেরি চোখাচোখি হলো, রুশি চোখ পড়তেই দৃষ্টি অবনত করে ফেললো, কিছুক্ষণ পর আবার তাকালো দেখে লোকটি এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে। ওর দিকে তাকিয়েই হাতের ইশারা করলো কাউকে আর প্রায় সাথে সাথেই রুহানকে নিয়ে একজন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রুশি কিছু বলবে তার আগেই লোকটি উঠে দাঁড়াল, ওর দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বললো
” রুশানি আনাম, দ্যা ফেমাস আরজে আনাম অফ কলকাতা”বলে কিছুটা ঝুকে গেলো ওর দিকে, ও পিছিয়ে যেতেই পারলো না তার আগেই খপ করে হাত ধরে ফেললো লোকটি “ছেলেকে কয়েক ঘন্টা খুজে না পেয়ে কেমন লাগালো তোমার ”
“মানে?” রুশি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো, কিন্তু ওইপক্ষ থেকে উত্তর না আসায় নিজেই বললো ” আপনি আমার ছেলেকে এখানে নিয়ে কেন এসেছেন? আমার যতটুকু মনে পড়ে আমি আপনাকে চিনিনা তাহলে আমাকে রাতবিরাতে এভাবে হেনস্থা করার মানে কি?”
” এই টুকু সময়েই এই অবস্থা? তাহলে চারটি বছর আমার কি অবস্থা হয়েছে সেটা ভেবেছ? তুমি তো তোমার সন্তান নিয়ে বেচে ছিলে আমি কি নিয়ে বেচে ছিলাম সেটা বলবে? আমিতো জানতামই না আমার একটা ছেলে আছে ”
রুশি দুইকদম পিছিয়ে গেলো,”মানে?”
পকেট থেকে কিছু একটা বের করলো সায়ান, তারপর রুশির হাত টেনে সেটা ওর হাতে দিলো, রুশি হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে এটা সেই চেইন আর আংটি যেটা ও বাংলাদেশে হারিয়ে ফেলেছিলো। ওতো ভাবতেই পারেনি এটা আবার ফিরে পাবে।
“এটা আমার মায়ের দেয়া আংটি, নেক্সট টাইম সাবধানে রাখবে যাতে হারিয়ে না যায় ”
রুশি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এটা কি করে হতে পারে, এই আংটিটি ওর স্বামীর দিয়ে যাওয়া স্মৃতি যেটা মনের অজান্তেই আগলে রেখেছিল আর হঠাত করে হারিয়ে যাওয়াতে দুঃখ ও পেয়েছিলো কিন্তু হঠাত একটা লোক সামনে এসে নিজেকে এই আংটির মালিক দাবি করবে ভাবতে পারেনি। এই সামনে থাকা লোকটি আসলেই ওর স্বামী মানে রুহানের বায়োলজিক্যাল ফাদার!! যাকে দেখার জন্য এতোগুলা বছর অপেক্ষায় ছিলো সে আজ ওর সামনে!!
#চলবে
( নেক্সট না লিখে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে ভালো হতো, হয়তো ভালো করে লিখতে পারতাম, তাই গঠনমূলক কমেন্ট করলে খুশি হতাম, হ্যাপি রিডিং)