বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-১৪

0
3169

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ১৪

“আপনার কি মনে হয়?এইসব গুছানো মিথ্যে কাহিনী আমাকে শুনাবেন আর আমি বিশ্বাস করে ফেলবো, এটা যদি আরো চারবছর আগে বলতেন হয়তো তখনকার ইমোশনাল রুশি আপনার কথা মেনে নিতো কিন্তু এই বাস্তবতা চিনে সাথে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষের আসল সত্য। আপনি কি বাংলা সিনেমা পেয়েছেন যে হিরোর পেছনে পুরো দুনিয়া পড়ে আছে।বোকা পেয়েছেন আমাকে যে আপনি বলবেন চার বছর ধরে খুঁজছেন আমাকে আর আমি মেনে নিবো!! আপনার সস্তা ভালোবাসা অন্যকারো সামনে দেখাবেন”
তাচ্ছিল্যের সাথে রুশি বললো কথাগুলো,সায়ান হাত মুঠো করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করছে, এইমুহুর্তে রাগের বশে কিছু করা যাবে না বরং ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে হবে।

” আমার ফিলিংসকে তোমার যাই মনে হোক না কেন তা দিয়ে তুমি সত্যিটা ঢেকে ফেলতে পারবে না, আমি তোমাকে কতটা চাই তা শুধু আমি জানি ”

“হুহ, আসলে আপনি এই ভালোবাসার মিথ্যে নাটক কেন করছেন জানেন? কারণ আপনি জানতে পেরেছেন আপনার একটা ছেলে আছে। ছেলেরা যতই খারাপ আর মেয়েবাজ হোকনা কেন নিজের বংশধরকে নিজের কাছে নেয়ার জন্য তারা সবকিছু করতে পারে যা আপনি করছেন। অনেক দেখেছি আপনার মতো বড়োলোকের বিগড়ে যাওয়া সন্তানকে, আসলে আপনাদের মা বাবা টাকাতো ধরিয়ে দিয়েছে আপনাদের হাতে কিন্তু ভদ্রতা শিখায় নি। আর আপনি কতোটা অসভ্য তাতো আমি ওইদিনই বুঝে গিয়েছিলাম আপনার মা কি করে বাসায়? ”

কোন সান্তানই নিজের বাবা মা নিয়ে কথা শুনতে পারেনা সে যত ঠান্ডা মেজাজেরি হোকনা কেন আর সেখানে সায়ানের বাবা মা তো বেচেই নেই। ও কখনওই এতটা এগ্রেসিভ হতো না যদি ওর মা বাবা বেচে থাকতো। তাই ও এই কথাটা সহ্য করতে না পেরে এগ্রেসিভ হয়ে হাত দিয়ে রুশির চুল মুঠো করে ধরে কাছে এনে বললো

” আমার বাবা মাকে নিয়ে আর একটা কথা বললে আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা ”

রুশি মাথায় খুব ব্যথা পাচ্ছে তবুও রাগ দেখিয়ে বললো ” দেখিয়ে দিলেন তো আপনার ঠুনকো ভালোবাসার নমুনা! আপনাকে আমার থেকে ভালো কে চিনবে বলেন?যে নিজের রাগ মিটাতে মেয়েদের আঘাত করতে পারে সে একটা কাপুরুষ ছাড়া আর কিছুই না। আপনারা কোন দায়িত্বই পালন করতে পারেন না শুধু জানেন পালাতে। আমি আমার ছেলেকে আপনার ছায়াতলে কোনদিন বড় হতে দিবো না ”

” চুপ, একদম চুপ তখন থেকে বলে যাচ্ছ আর আমি শুনে যাচ্ছি আর একটা কথা বললে খবর আছে তোমার ”

” কি করবেন আপনি আমাকে? মারবেন!ওইটাই তো বাকি রেখেছেন। মারুন না মারুন এই শখও পুরণ করুন ”

” ছিহ! এসব কি বলছো মারতে যাবো কেন আমি তো আদর করবো আদর ( বাকা হেসে) ট্রাই করে দেখো আর একটা কথা বলে ”

” আপনি ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে?মনে করেন আপনি বলবেন আর আমি ভয়ে চুপ করে আপনার অত্যাচার সহ্য করবো?চে…”

রুশি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে, ও ভাবতেই পারেনি এই লোক যা বলেছে তাই করে দেখাবে। কি সাংঘাতিক ঘটনা। কিন্তু এই ছোঁয়া খুব পরিচিত মনে হলো

“ইউউউউউ, তারমানে ওইদিন গলিতে আপনি ছিলেন?”

“হাহাহা এতদিন পরে বুঝতে পারলে, তোমার কি মনে আমার সম্পদে আমি ছাড়া অন্য কারো হাত দেয়ার সাহস আছে? ”

” সেই আমি কি করে ভুলে গেলাম যে আপনার মতো অসভ্য অন্য কেউ কি করে হতে পারে?আমি কারো প্রোপার্টি নই যে আপনি নিজের বলে দাবি করবেন
ছাড়ুন বলছি আমাকে ছাড়ুন ”

” আমি প্রোপার্টি বলিনি ট্রেজার বলেছি মানে সম্পদ যেটা শুধু আমার আর কারো না, আর নিজের বউয়ের কাছে অসভ্য হবো না তো কার কাছে হবো হুম ” আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, এই লোকের থেকে যত ছুটতে চাচ্ছে তত আরো জড়িয়ে ধরছে।

” শুনো এতো কথা বলে লাভ নেই তাড়াতাড়ি এই পেপার সাইন করে দাও, আম ওয়েটিং ”

” আমি মরে গেলেও এই পেপার সাইন করবো না, আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন না কেন ”

” কেউ আসলে ঠিকি বলেছে তুমি প্রচণ্ড জেদি মেয়ে, সোজা কথা শুনবে না।কিন্তু সোজা কথায় ঘি না উঠলে আংগুল কি করে বাকাতে হয় তা আমার জানা আছে। তুমি যদি এই পেপারে সাইন না করো তাহলে ছেলেকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দাও”

” এই কথার মানে কি?”চোয়াল শক্ত করে বললো

“বাংলায় বলেছি আমি চাইনিজে বলিনি যে বুঝবে না ”

এবার অনেকটা রেগে গেছে রুশি, মন চাচ্ছে ধরে কতক্ষণ পিটাতে

“আমার ছেলেকে আপনি নিজের কাছে রাখার কে?”

” কখন থেকে নিজের ছেলে নিজের ছেলে বলে যাচ্ছো ভুলে যেওনা আমি ওর বাবা ”

” বাবা! বাবা হওয়ার একটা দায়িত্ব আজ পর্যন্ত পালন করেছেন?আমার সন্তানকে আমি একা জন্ম দিয়ে আর একাই মানুষ করতে পারবো। ওর জন্য নিজের দেশ পর্যন্ত ছেড়েছি আমি আর এতটাদিন একা মেয়ে হয়ে লড়াই করে গেছি। এই কলকাতা শহরে একা মেয়ে হয়ে বেচে থাকাটা কত টাফ সেটা আপনি কি জানবেন। কাউকে চিনতাম না আমি তবুও নিজের সন্তানের জন্য এতটুকু এসেছি আর আপনি হুট করে এসে বলছেন আপনি ওর বাবা আর অধিকার জামচ্ছেন?কান খুলে শুনে রাখুন আপনি আমার সন্তানের জন্মদাতা কিন্তু বাবা নন”

সায়ান কিছু বলতে চেয়েও পারলো না, রুশির রাগটা সম্পুর্ণ জায়েজ, একা একা কত ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়েছে তবেঁ ওরও কোন দোষ ছিলো না। ও তো কিছুই জানতো না বরং ও খুজে বেড়িয়েছে ওকে। কিন্তু যাকে এত কষ্টে খুজে পেয়েছে তাকে আর কখনো হারাতে দিবে না। ওর রাগ -অভিমানগুলো ও ভাংগাবে কিন্তু তারজন্য পাশে থাকতে হবে ওকে

“তুমি বললেই সত্য, মিথ্যে হয়ে যাবে না।হয়তো কাছে জন্মদাতা ছিলাম কিন্তু এখন বাবা হয়ে দেখাবো। আমার পাওয়ার সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই। তুমি যদি এই পেপার সাইন না করো তাহলে কালকের মধ্যে আমার ছেলেকে নিয়ে আমি দেশে ফিরে যাবো আর তুমি কিছুই করতে পারবে না। তাই ভেবে নাও কোনটা বেছে নিবে নিজের জেদ নাকি ছেলে। চয়েজ ইজ ইউরস এন্ড আই মিন ইট। ইউ হ্যাভ অনলি টু মিনিটস ”

“আপনার মতো জঘন্য মানুষ আমি দেখিনি, নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কি না করতে পারেন ”

” ইউ হ্যাভ অনলি ফাইভ মিনিটস, তাড়াতাড়ি ডিসিশন নাও নাহয় কাল থেকে ছেলেকে দেখার কথা ভুলে যাও”

রুশি বুঝতে পারলো এর সাথে লড়াই করে লাভ নেই কারণ এ হচ্ছে নাছোড় বান্দা। তারউপর বডিগার্ড অনেক আছে তারমানে রুহানকে নিয়ে যেতে পারে। অগত্যা উপায়ন্তর না দেখে সাইন করে দিলো। রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে।

” এইতো ভালো মায়ের মত সিদ্ধান্ত নিয়েছ, আমি এটাই আশা করছিলাম। যাইহোক আজ রাত এখানে থাকো রুহানকে নিয়ে। অনেকরাত হয়ে গেছে অলরেডি ”

” জোর করে সবকিছু হাসিল করা গেলেও মন হাসিল করা যায়না, আপনি আমার নজরে আরো নিচে নেমে গেলেন ”

সায়ান কিছু বললো না শুধু তাকিয়ে রইলো, একজন বডিগার্ড রুহানকে এসে শুইয়ে দিয়ে গেলো কারণ ও অনেকক্ষন আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। গার্ডরা চলে গেলে রুশিও পাশে শুয়ে পড়লো। অনেকক্ষণ চিল্লাচিল্লিতে মাথা ব্যাথা করছে।সায়ান সেটা দেখে বারান্দায় গেলো

জানে আজকের কাজটি ঠিক হয়নি, এতে রুশির রাগ আরো বেড়ে গিয়েছে কিন্তু কিছু করার নেই ওকে কাছে রাখার এইটাই একটা উপায় ছিলো। সিগারেট টানতে টানতে ভাবছে ” ওর বউটাকি জানে তার বিহনে কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে ও, শুধু ভেবেছে এখন কেমন দেখতে লাগছে তাকে?সেকি আমার কথা ভাবছে এখন?”
মেসেজের আওয়াজে ফোনের দিকে তাকালো, সুজি মেসেজ দিয়েছে যে রুশির ফ্রেন্ড।

” জিজ ওইদিকে সব ঠিকঠাক? মানাতে পেরেছেন ওকে?”

” না বরং আরো রেগে বম্ব হয়ে গেছে তোমার ফ্রেন্ড। যতটা বলেছো তার থেকে বেশি ঘৃণা করে তোমার ফ্রেন্ড ”
” এতদিনের অভিমান এত সহজে গলবে না জিজু, অনেক এফোর্ট দিতে হবে। শি ইজ আ টাফ গার্ল ”

“তাতো বটেই যাইহোক সাবধানে থেক তুমি”

” ওকে বায় জিজ”

সুজিই সেদিন রুহানকে কিডন্যাপ করার আইডিয়া দিয়েছিলো। ও ওইদিন রুশিদের ফ্লাটে গিয়েছিলো রুশির সাথে দেখা করতে কিন্তু ওকে পায়নি, পেয়েছে সুজাতা আর রুহানকে। ও সুজাতাকে সব খুলে বলে সব শুনে প্রথমে কতক্ষণ বকলেও পরে হেল্প করতে রাজি হয় ও বলে রুশি কখনওই রুহানের বাবার নাম মেনশন করে না আর রুহান বললেও চুপ থাকে। কিন্তু চোখমুখ দেখলে বুঝা যায় অনেক ঘৃণা করে তাকে। তাই ওকে সরাসরি স্যরি বললে কিংবা অনুনয় করলেও ও মানবে না। তাই অন্যভাবে ট্রাই করতে হবে। রুশির উইক পয়েন্ট রুহান তাই রুহানের জন্য রুশি তার সাথে থাকতে বাধ্য হবে। আর তারপর ধীরি ধীরে রাগ ভাংগাতে হবে। তাই প্ল্যান অনুযায়ী এসব করা।

সিগারেট ফেলে ঘরে প্রবেশ করলো সায়ান, রুশি আর রুহান একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। কি মায়াবী চেহারা তার শ্রেয়সীর, রাজ্যের সব মায়া যেন তার মুখে ছেয়ে আছে। আস্তে করে রুহানের পাশে সুয়ে পড়লো সায়ান। চুক্তি হোক আর যেভাবেই হোক ওর বউ আজ ওর পাশে। আর আজীবন পাশে রাখার জন্য যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত সায়ান।

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here