বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-১৬

0
3006

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ১৬

রুহানকে বুকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সায়ান, নিজের সন্তানকে সন্তানের পরিচয়ে বুকে জড়িয়ে ধরায় এক অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করছে। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলুক তাকে তবে কারো আচড় লাগতে দিবে না। বাহির থেকে এই মোহনীয় দৃশ্য দেখছে রুশি, কিছুক্ষণ আগেও ভেবেছিল রুহানকে বলবেনা যে এই লোকটি ওর বাবা কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বলে ঠিকই করেছে। রুহানের সত্যিই বাবার প্রয়োজন ছিলো, যাক অন্তত ওর ছেলেটিতো খুশি নিজের বাবাকে পেয়ে।

কিছুক্ষণ আগে~~

আজকে সানডে তাই অফিস নেই রেস্টুরেন্টে যেতে হবে তিনটায়। রুশি রান্নাঘরে রান্না বসাচ্ছিল, হাজবেন্ড না মানুক এটলিস্ট গেস্ট এসেছে বাসায় ভালোমন্দ কিছু তো রাঁধতেই হবে, চুলোয় গরুর মাংস কশাতেই সুজি ঢুকলো রান্নাঘরে। কতক্ষণ যাবৎ উসকো খুসকো করছে মনে হচ্ছে কিছু বলবে, কড়াইয়ে পানি দিয়ে চুলোর আচ কমিয়ে ঘুরে তাকালো সুজির দিকে তাকালো

“যা গলায় আটকে রেখেছ তা বের করে ফেলো ”

” না মানে ওই লোকটিকি সত্যিই তোর বর?”না জানার ভান করে বললো সুজি

“নাহ রুহানের বাবা আগেই তো বললাম, আমি এই বিয়ে মানিনা তাছাড়া আমাদের লিগালি বিয়ে হয়নি ”

” তোমার না মানা না মানাতে সত্য কি বদলে যাবে এন?”

রুশিকে মুখ শক্ত করতে দেখে সুজি প্রসঙ্গ পাল্টালো

“তাহলে রুহানকে তার বাবার কথা বলছো না কেন? তুমি মানো আর না মানো সেটা তোমার ব্যাপার কিন্তু রুহান তো তার বাবাকে ডিজার্ভ করে ”

” সুজি আমি.. ”
রু্শিকে কিছু না বলতে দিয়ে ওর হাত চেপে ধরে বললো

“স্টিভ ম্যারাবোলির একটা উক্তি আছে ~~
যতক্ষণ না তুমি অতীতকে ভুলে যাচ্ছ, যতক্ষণ না তুমি
ক্ষমা করতে পারছো, যতক্ষণ না তুমি মেনে নিচ্ছো অতীত চলে গেছে —ততক্ষণ তুমি নিজের এগিয়ে যাওয়ায় ক্ষমতাকে কাজে লাগাচ্ছো না

তাই অতীত ধরে রেখে লাভ নেই এটা কষ্ট ছাড়া কিছুই দেয়না, মুভ অন করতে জানতে হয়।তুই নাহয় ক্ষমা করতে পারবি না কিন্তু রুহানকে তো তার বাবা থেকে আলাদা করিস না। বাই দ্যা ওয়ে জো মাফ কার দেতা হেয় উসকা দিল বহত বাড়া হোতা হ্যায়”

“ওকে ওকে আর ডায়লগ দিতে হবে না, আমি ভেবে দেখবো ”

“ইটস নট মাই ডায়লগ, এটা এসআরকে এর ডায়লগ ”

বলেই না দাঁড়িয়ে চলে গেলো বিড়বিড় করতে করতে
“জিজ আই ট্রাইড মাই বেস্ট, বাকিটা তোমার হাতে ”

রুশি রান্না শেষ করে সুজির রুমে ফিরে আসলো, রুহানকে খেলতে দেখে কাছে ডাকলো

“বেবি, আমি যদি বলি তোমার বাবা আমাদের সাথে দেখা করতে আসছে তাহলে তুমি কি করবে? ”

” আমি দেখা করবো না, আমি বাবাই এর উপর রাগ করেছি ”

“বাচ্চাটা শুনো, বাবাই তো ইচ্ছে করে এমন করে নি, তুমি জানো বাবাই এর যে বস সে বাবাকে একটা ইম্পর্টেন্ট মিশনে পাঠিয়েছে, তুমি সুপার কপ্স দেখো না? ওই সুপার কপ্স এর মতো তোমার বাবাই ও সুপার কপ্স, তাইতো এতদিন ছিলো না এইখানে। এখন চলে আসছে”

” তাহলে আবার চলে যাবে?”গাল ফুলিয়ে বললো।

“নাহ আর যাবে না, এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে, মিশন শেষ হয়ে গিয়েছে না?”

“তাহলে এখনো আসেনি কেন?”

” এসেছে তো আমাদের সাথে, দেখোনি তুমি?”

” এসকে আমার বাবাই! ইয়ে আমার বাবাই সবার থেকে হ্যান্ডসাম, কিন্তু তাহলে বলেনি কেন সে আমার বাবাই ”

“রুহান রাগ করেছে না তাই আগে রাগ ভাংগিয়ে তারপর বলতো কিন্তু মাম্মা সিক্রেট বলে দিয়েছে ”

” না রুহান আর রাগ করে নেই আমি কথা বলে আসছি বাবাই এর সাথে ”

“গো এন্ড বাবাইকে গিয়েই হাগ করবে ওকে?”

“ওকে”

রুশি সেখান থেকে চলে আসলো, ছোট থেকেই কোন বাবার সাথে সন্তানের খুনসুটি দেখলে ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে, কারণ ওর বাবার সাথে এই খুনসুটি করার সৌভাগ্য ছিলো না ওর, মাঝেমাঝে মাকে বড্ড মিস করে ও। হয়তো সে থাকলে বাবার ভালোবাসাও কপালে জুটতো।

“বাবাই, তুমি আবার আমাকে ছেড়ে ইম্পর্টেন্ট মিশনে চলে যাবে?”

“ইম্পর্টেন্ট মিশন!”

“হুম মাম্মা বললো তো, ইম্পর্টেন্ট মিশনে থাকার কারণে এতদিন আমার কাছে আসতে পারো নি ”

” মাম্মা বলেছে?”

“হুম, আবার যাবে?”

“নাহ যাবোনা, কক্ষনো না ”

” দেন রুহান লাভস বাবাই এত্তোগুলা”

“বাবাই অলসো লাভস রুহান, দাঁড়াও আমি ফোনটা ধরি হ্যা?”

“ওকে, আমি বাইরে থেকে খেলে আসছি ”

ফোন ধরেই দেখে সামু ফোন করেছে, কতদিন কথা হয়না ওর সাথে।

“কিরে কেমন আছিস? ”

“ভালোই ভাইয়া, তুমি কেমন আছো?জানো তোমাকে কত মিস করেছি? কোথায় তুমি এখন? দেখা করতে কবে আসছো,দাদাজি তোমাকে দেখতে চাচ্ছে”

“তোর একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করার অভ্যাস গেলো তাইনা!আমি একটু দেশের বাইরে আছি দেশে ফিরলে যাবো ওইখানে ”

“কবে বিয়ে করবি তুই? ”

“এত বউ বউ করছিস তো তাই এবার বউ নিয়েই ফিরবো যা”

” মজা করছিস তাই না! ”

” মজা কেন করবো? সিরিয়াসলি বলছি ”

“হাহা রাখি, মনে করে নিয়ে আশিস ভাবিকে, আবার এয়ারপোর্ট এ ফেলে আশিস না”

বলেই ফোন কেটে দিলো, “যাহ বাবা, সত্য বললাম বিশ্বাসই করলো না?”

সায়ান রুহানকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে, রুশি রেস্টুরেন্টে গিয়েছে। রুহান হাটতে হাটতে এক জায়াগায় দাঁড়িয়ে পড়ে, সায়ান লক্ষ্য করে বলে

” গাড়িটি পছন্দ? ”

“এখানে অন্য কালারেরটা ছিলো, কিন্তু এখন চেঞ্জ হয়ে গেছে। আমি ওইটা কিনতে চেয়েছিলাম ”

“তাহলে কিনোনি কেন?”

“মাম্মার কাছেতো এত টাকা নেই, তাই বলিনি ”

সায়ান তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে, এত ছোট বয়সে এত কিছু বুঝে যে মায়ের কাছে এত টাকা নেই। সায়ান গাড়িটি কিনে দিলো ওকে লাকিলি যেই কালার চেয়েছিলো সেটা শোরুমে ছিলো। রুহানতো গাড়িটি পেয়ে খুব খুশি।

এভাবেই কিছুদিন চলে গেছে, সায়ান আর রুহানের সম্পর্ক যতটা গভীর, রুশি আর সায়ানের সম্পর্কে ঠিক ততটাই দূরত্ব। সায়ান রুশিকে স্পেস দিচ্ছে, কোন প্রেশার দিতে চাচ্ছে না এই সম্পর্ক নিয়ে। এমনিতে ভালোই আছে ও কারণ তার বউটাতো তার কাছেই আছে। একদিন এই দূরত্বও শেষ হয়ে যাবে।

“আপনি প্যাকিং করেছেন কেন? কোথাও চলে যাচ্ছেন আবার ”

“হুম যাচ্ছি তবে আমি একা না তোমরাও যাচ্ছ ”

“মানে কি, আমরা যাচ্ছি মানে?আপনার মনে হয় আপনি বলবেন আর আমি ঢ্যং ঢ্যং করে চলে যাবো ”

” দেখো এটা আরগু করার মুমেন্ট না, আমরা কেউ এখানে সেফ না তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে, সব প্যাকিং করে নাও আমরা আজই বাংলাদেশে ফিরছি, আর তুমি যদি ফিরতে না চাও তাহলে আমি রুহানকে নিয়ে চলে যাবো”

“আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন! ”

“যদি মনে করো তাহলে তাই, আই হ্যাভ নো আদার অপশন, তাছাড়া চুক্তির কাগজ এখনো আছে আমার কাছে ”

#চলবে

(একজন সাড়ে ১০টার মধ্যে দিতে বলেছেন, কালকে থেকে ট্রাই করবো, আজকে দিতে পারলাম না স্যরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here