#মনের_মানুষ ❤️
#ঊনবিংশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸
কানের পাশে আলতো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো আহেলি…..সামনে তাকাতে দেখলো প্রান্তিক ওরদিকে তাকিয়ে।কয়েকটা ছোট্ট অবাধ্য চুল এসে বারবার আহেলির কপালের ওপর পড়ছিলো আর সেটাই খুব যত্নের সাথে কানের পাশে সরিয়ে দিলো প্রান্তিক…..আহেলি দৃষ্টি নামিয়ে নিতেই প্রান্তিক ধীর গলায় বললো,,,,
“খুব ভালোবাসেন তাই না?”
প্রান্তিকের প্রশ্নে আহেলি অবাক হয়ে বললো,,,
“কাকে?”
“আপনার ঋষিদাকে…..খুব ভালোবাসেন?আর এখন ঋষভ এরসাথে কোনোরকম যোগাযোগ নেই বলে আমার সাথে বন্ধুর মতো মিশছেন তাই না?”
“আপনি কি বলতে চাইছেন?”
“আজ যদি আপনার সাথে ঋষভ এর যোগাযোগ থাকতো তাহলে আপনি আমার সাথে এভাবে একটা ফাঁকা জায়গায় বসে গল্প করতে পারতেন?নাকি আপনার সাথে আমার যোগাযোগ থাকতো?আজ ঋষভ এরসাথে আপনার সম্পর্ক নেই বলেই তো আমি এখানে,তাই না?”
প্রান্তিকের কথায় আহেলি স্মিত হেসে বললো,,,,
“ঋষিদার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলে কি আমি সুইসাইড করতাম নাকি আবার দেখা হতো আমাদের?এই পৃথিবীতে যা ঘটে তার পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে।তাই হয়তো আপনার সাথে আবার দেখা হলো…..তবে এখন যদি আপনি ভাবেন,ঋষিদা আমার জীবনে নেই বলে আমি আপনার সাথে কথা বলছি সেটা আপনার ভুল ধারনা।কারোর বদলে কারোর সাথে কথা বলাটা আমার ধর্ম নয়…..আমি আপনার সাথে কথা বলি,সময় কাটাই কারণ আমার ভালোলাগে।আপনার মতো মানুষের সংস্পর্শে থাকা ভাগ্যের ব্যাপার……কিন্তু তার ব্যাখ্যা যদি আপনি অন্যকিছু ভাবেন তাহলে আজই আমাদের শেষ দেখা।”
কথাটা বলেই আহেলি উঠে দাঁড়ালো…কাঁধের ব্যাগটা ঠিক করে সামনে এগোবে তার আগেই ওর হাতে টান পরলো।আহেলি পাশে তাকিয়ে দেখলো প্রান্তিক ওর একটা হাত ধরে আছে….আহেলি হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই প্রান্তিক আরো শক্ত করে ধরলো হাতটা।একটু এগিয়ে এসে বললো,,,,
“রাগ করছেন কেনো?আসলে আমার মনে হচ্ছিলো আপনি….”
“আমি কি প্রান্তিক?আমি আপনাকে রিপ্লেসমেন্ট হিসাবে ইউস করছি?আমি এতটাই নিচ মানসিকতার নয় প্রান্তিক……আমি আপনাকে বন্ধু ভাবি না বরং নিজের আইডল মনে করি আর সাথে ভীষণ শ্রদ্ধা করি।”
প্রান্তিক অবাক হয়ে তাকাতেই আহেলি বললো,,,
“হ্যাঁ এটা ঠিক যে এখন আমার সাথে ঋষিদার সম্পর্ক নেই কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র আগের চেয়ে পরিস্থিতি বদল হয়নি।গোটা একটা সপ্তাহে কোনোদিন ভালো করে ঋষিদার সাথে কথা হয়নি আমার….দেখা করার কথা বললেও বলতো সময় নেই যা বলার বাড়িতে গিয়ে বলে আসতে,কোথাও নিয়ে যেতে বললে গাড়ি সমেত ড্রাইভার পাঠিয়ে দিতো।আসলে ঋষিদা নিজের পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার ছাড়া আর কাউকেই তেমন গুরুত্ব দেয় নি।এখন তো এই শ্রেয়ার কথা জানলাম….কিন্তু আমাদের মাঝে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি না থাকলেও অনেক দূরত্ব ছিলো।আমি বারবার সম্পর্কটা ঠিক রাখার প্রানপন চেষ্টা করেছি আর ততবার ঋষিদা কোনো না কোনো ভুল করেছে।আমি কক্ষনো কিছু বলিনি….আর এবারে তো!!সত্যি বলতে কি ঋষিদার ওপর আমার করুনা হয়…..শ্রেয়ার সাথেও ওর সম্পর্ক কখনো টিকবে না কারন ঋষিদা কাউকেই ভালোবাসতে পারে না,একমাত্র নিজেকে ছাড়া।আর ওর সাথে আপনি নিজের তুলনা করছেন?বাহঃ…..”
“আম সো সরি আহেলি…..প্লিস রাগ করবেন না।তাহলে কেনো সবসময় এরকম উদাস থাকেন কেনো?হাসলে আপনাকে বড্ড ভালোলাগে দেখতে…..এরকম গোমরামুখটা একদম ভালো লাগে না।”
“এমন একটা ব্যবস্থা করুন যাতে আমি হাসি…..”
আহেলির কথায় প্রান্তিক চারদিকে তাকালো….একটা দোকানে চোখ যেতেই মৃদু হাসক প্রান্তিক তারপর আহেলির হাতটা ধরে সেদিকেই এগিয়ে গেলো।আহেলি আর প্রান্তিক দুজনই একটা অক্সিডাইস এর গয়নার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো…..বেশিরভাগ কানের দুল ঝোলানো আর প্রান্তিক তার মধ্যে থেকে একটা দুল খুঁজে বের করলো তারপর সেটা আহেলির কানের সামনে ধরলো।ভ্রূ কুঁচকে কিছুক্ষন আহেলির দিকে তাকিয়ে থাকার পর দুদিকে ঘাড় নেড়ে দুলটা রেখে দিলো।আরো একবার খোঁজাখুঁজি চালিয়ে একটা ব্ল্যাক পলিশ এর ইয়াররিং বের করলো…..আহেলির হাতে দুলটা দিয়ে বললো,,,,
“এটাতে ভালোলাগবে।এটাই নিন…”
প্রান্তিকের কথায় আহেলি অবাক হয়ে তাকাতেই দুলের দাম মিটিয়ে আহেলির হাতটা ধরেই দোকান থেকে বেরোলো প্রান্তিক…..যেখানে বাইক দাঁড় করিয়ে রাখা সেদিকে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যেতে লাগলো দুজনে।আহেলি কে বাঁদিকে রেখে প্রান্তিক এগিয়ে যেতে লাগলো……হঠাৎই এক জায়গায় থেমে যাওয়ায় আহেলি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো আবারো মৃদু হাসলো প্রান্তিক।রাস্তার ধার থেকে একটা হাওয়াই মিঠাই কিনে এনে ধরিয়ে দিলো আহেলির হাতে…..।
বড়ো রাস্তার সামনে প্রান্তিক বাইক থামাতে আহেলি নেমে দাঁড়ালো ওর সামনে…..মাথা থেকে হেলমেট খুলে প্রান্তিক কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহেলি হাসলো।হাতে ধরে থাকা হাওয়াই মিঠাই এর বেঁচে যাওয়া কিছুটা অংশ প্রান্তিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,,,
“এতো সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য থ্যাংক ইউ বলবো না।তবে তার বদলে রিটার্ন একটা থ্যাংক ইউ থাকবে।”
হাওয়াই মিঠাইয়ের অংশটা আহেলির হাত থেকে নিয়ে প্রান্তিক খেয়ে ধীর গলায় বললো,,,,
“আপনার থেকে যেকোনো কিছু পেতে রাজি আমি….সে উপহার হোক বা শাস্তি।”
আহেলি হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাতে প্রান্তিক মুচকি হাসলো তারপর বাইকে স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে এলো গন্তব্যের দিকে।
🌸🌸🌸🌸
নিজের ঘরের রকিং চেয়ারে বসে ঋষভ….মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।ছেলেটা কে আহেলির সাথে?দুজনে মধ্যে যে সাধারণ সম্পর্ক নয় তা দূর থেকে দেখলেই বোঝা যায়।তাহলে কি সম্পর্ক ওদের মধ্যে?
চেয়ার ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো ঋষভ…..একবার আহেলির সাথে দেখা করে সবটা খুলে বলতে হবে।
🌸🌸🌸🌸
বিছানায় শুয়ে থাকার সত্বেও কিছুতেই আহেলির চোখে ঘুম আসছিলো না…..বাধ্য হয়ে উঠে জানলার পাশে এসে দাঁড়ালো।জানলা খুলতেই শীতল হাওয়া এসে ঝাপটা মারলো আহেলির মুখে…..গরাদে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করলো আহেলি আর সাথে সাথে ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটা হাস্যোজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।পড়ার টেবিলে থাকা বইয়ের মধ্যে থেকে নিজের ডায়েরীটা বের করলো আহেলি….বইয়ের পাতার মাঝে রাখা শুকনো একটা কৃষ্ণচূড়া বের করে সেটার ঘ্রাণ নিলো আর তার সাথে আহেলির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।আহেলির ফোনে তখন স্লো ভলিউমে বাজছে,,,,
ও যে মানে না মানা।
আঁখি ফিরাইলে বলে, ‘না, না, না।’
যত বলি ‘নাই রাতি– মলিন হয়েছে বাতি’
মুখপানে চেয়ে বলে, ‘না, না, না।’
বিধুর বিকল হয়ে খেপা পবনে
ফাগুন করিছে হাহা ফুলের বনে।
আমি যত বলি ‘তবে এবার যে যেতে হবে’
দুয়ারে দাঁড়ায়ে বলে, ‘না, না, না।’
- চলবে………