#মনের_মানুষ❤️
#অন্তিম_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি🌸
কথায় বলে পৃথিবীটা গোল…একদিন তুমি যেখান থেকে যাত্রা শুরু করবে সেখানে আরেকবার এসে থামতে হবে।আসলে আমরা যখন সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাই তখন আমরা আমাদের অতীতের সমস্ত কাহিনী ভুলে যাই….সাফল্যের আনন্দ নিতে গিয়ে অতীতের কষ্ট ভুলে যাওয়ার মতো ভুল আর দুটো হয় না।অতীতের প্রত্যেকটা কথা মাথায় রাখলেই জীবনে আরো সফলতা অর্জন করা যায়।কিন্তু ঋষভ ভুলেই গেছিলো ওর সাংসদ হওয়ার পেছনে কি কি কাহিনী আছে….সেই কলেজ জীবন থেকে ইউনিয়নে নাম লিখিয়ে রাখা,সিনিয়র দাদাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবকাজে এগিয়ে যাওয়া।কলেজের ভোটের সময় সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নিয়ে ইউনিয়নের সেক্রেটারি হওয়া….ধীরে ধীরে একদিন ইউনিয়নের মুখ হয়ে কলেজ মাঠের স্টেজে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিয়ে সকলের মন কেড়ে নেওয়া।এভাবেই তো ধীরে ধীরে রাজনীতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছিলো ঋষভ…..তারপর কলেজ শেষ করে ঢুকলো ছাত্র-রাজিনীতি তে।পড়াশোনা ভুলে দলের জন্য কত মিছিলের প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে লাঠির আঘাত সহ্য করেছে….যুবনেতা হওয়ার পর থেকে মন্ত্রী-মশাইয়ের প্রিয় পাত্র ছিলো ঋষভ।আর ক্ষমতার জন্য মন্ত্রী-মশাইয়ের সমস্ত কথা অক্ষরে পালন করে গেছে সে শ্রেয়ার সাথে নাটক করে রাত কাটাতে যাওয়াই হোক কিংবা সারাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত।তবে এখন ঋষভ নিঃস্ব…..একেবারে নিঃস্ব।
ওর জীবনে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।খবরের চ্যানেলে মন্ত্রী-মশাইয়ের ইন্টারভিউ শোনার পর ঋষভ নিজেই পদত্যাগ পত্র পাঠায়।অন্যান্য দল ওকে স্বাদরে গ্রহণ করতে এগিয়ে এলেও ঋষভ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।ছাত্র জীবন থেকে যে দলের হয়ে গোলামী করলো তারাই যদি ওর বুকে ছুরি বসায় তো আর কাকে ভরসা করবে?তোলা আদায়ের দায়ে কয়েকদিন লকআপে থাকতে হয় ঋষভ কে…..যদিও মন্ত্রী-মশাই ওকে বের করে এবং জানায় কটামাস বাড়িতে কাটিয়ে দিতে কোনোভাবে তারপর সুযোগ বুঝে ওকে আবার সসম্মানে দলে ফিরিয়ে আনা হবে।মন্ত্রী-মশাইয়ের কথা শুনে ঋষভ হালকা হেসে বলেছিলো সে শুধু দল থেকে নয় বরং রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করেছে।
এরমাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা মাস।ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটেছে….পাতাঝরার মরসুম শেষে সবুজের আগমনে প্রকৃতি প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে ক্রমশ।ঋষভ প্রথমদিকে একেবারে ঘরে থাকতো….বাইরে বেরোলেই মনেহতো সকলে ওকে বিদ্রুপ করছে।আজকাল ঋষভ এর বাবার ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে।ওর মাও কেমন যেনো চুপচাপ হয়ে গেছে….এইসময় ঋষভ এর একটা চাকরির খুব দরকার।আহেলির সাথে পরামর্শ করে ঋষভ এর মা ঋষভ কে দিয়ে জোর করে মাস্টার্স পড়িয়েছিলো।যদিও রেসাল্ট তেমন ভালো নয়….তবুও আজ এটাই ওর বেঁচে থাকার সম্বল।
আজ একটা কোম্পানি তে ইন্টারভিউ দিতে যাবে ঋষভ…সে জন্য তৈরি হয়ে নিচে নামলো।মায়ের ডাকে খাওয়ার টেবিলে বসতে ভাত এর থালা এগিয়ে ওর মা বললো,,,,
“ঠান্ডা মাথায় ইন্টারভিউ দিস…..আর কদিন বাড়িতে বসে থাকবি?তোর বাবার ওপর খুব চাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।”
“আমার সমস্ত ব্যংকের ডিটেলস তোমার কাছে….একাউন্টে যা টাকা আছে তাতে একটা ব্যবসা করলে হয় না?”
“তোর একাউন্টে তেমন টাকা নেই….”
“মানে?মা আমি প্রায় প্রতিমাসে একটা মোটা অংকের টাকা তোমার একাউন্টে ট্রান্সফার করেছি।সেগুলো কি হলো?”
“ওই সারার কথায় আমি…..”
বাকিটা বলার আগেই ঋষভ হাত দেখিয়ে ওনাকে থামতে বললেন।খাওয়া থামিয়ে ঋষভ উঠে দাঁড়ালো…..ভাতের থালায় জল ঢেলে বললো,,,,
“বাকিটা না বললেও জানি।বাদ দাও এসব….আমি ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি।আমার যা যোগ্যতা তাতে আজ অব্দি একটা পিয়নের চাকরি হয়নি…আজ যদি কিছু না জোটাতে পারি তবে আর ফিরবোই না।”
ঋষভ বাড়ি থেকে বেরোবে এমন সময় অমিও বাবু এসে দাঁড়ালেন ড্রয়িং রুমে….ঋষভ এর মা আর ঋষভ দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে।অমিও বাবু মৃদু হেসে বললেন,,,
“আজ আর বাইরে কোনো গার্ড দেখলাম না….তাই অনুমতি না নিয়েই এসে পড়েছি।সে যাইহোক আজ আমি এসেছি আমার মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে….সবকিছুর আগে আমি আর তুই ভালো বন্ধু।মাঝে যা হয়েছে সে ভুলে যাওয়া ভালো…আমার আহু মা বলেছে তিক্ত অতীত মনে রাখার চেয়ে মিষ্টি বর্তমান করে তোলাটা বেশি জরুরি।সকলকে যখন বলছি তোরাই বা বাদ থাকবি কেনো?এইইই যে ঋষভ…আমি আর পুরোনো কথা মনে রাখিনি তোমরাও নিশ্চই রাখো নি?এমাসের পনেরো তারিখে আমার আহু মার বিয়ে….তোমাদের সক্কলের নিমন্ত্রণ রইলো।আসতে হবে কিন্তু সবাইকে….হয়তো আহু মা নিজেই আসতো বলতে কিন্তু সে অফিস সামলে বিয়ের ঝামেলায় ব্যস্ত।তাই আমি একা এলাম….বিয়ের দিন সকাল থেকে চলে যেও ঋষভ।”
আহেলির বাবার শ্লেষ মাখানো কথাগুলো এখনো কানে বাজছে ঋষভ এর।একটা মাত্র গাড়ি বাড়িতে থাকলেও আজকাল ঋষভ সেটা ব্যবহার করে না….যার নিজের থেকে টাকা রোজগার করার ক্ষমতা নেই তার আবার বিলাসিতা কিসের?আহেলির বিয়ে শব্দটা কানে প্রতিধ্বনিত হতেই ঋষভ ম্লান হাসলো।কর্মফল সবাইকে ভোগ করতে হয় আর সেটা এই জন্মেই।ঋষভ ভেবেছিলো এটাতেই হয়তো পরিসমাপ্তি ঘটবে কিন্তু অদৃষ্ট যে আরোকিছু লিখে রেখেছিলো সেটা সমন্ধে অবগত ছিলো না।
ঋষভ যখন ইন্টারভিউ দিতে দরজা ঠেলে অফিস কেবিনে প্রবেশ করলো তখন সামনের তিনজনের মধ্যে একজনকে দেখে চমকে উঠলো।একদিন যাকে নিজের থেকে অনেকটা ছোটো মনে হয়েছিল আজ তার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ঋষভ…..কি অদ্ভুদ জীবন তাই না?কিসুন্দর করে সমস্ত হিসেব মিলিয়ে দেয় একসময়!
ইন্টারভিউ বোর্ডে দুজন সদস্য আরেকজন সদস্যা।এই তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন ঋষভ এর ভাগ্যে চাকরিটা জুটবে কিনা।এরআগে মোট তিনভাগে পরীক্ষা হয়েছে আর আজ মুখোমুখি ইন্টারভিউ।আগের তিনটে বিষয়ে ঋষভ খুব ভালো না হলেও মোটামুটি রেসাল্ট করেছে।তবে ওর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই সময়ের ইন্টারভিউয়ের ওপর….বলা ভালো আহেলির ওপর।দুজন সদস্য বাদে আরেকজন যে মহিলা আছেন তিনি আর কেউ নয় ঋষভ এর প্রাক্তন প্রেমিকা।যে প্রেমিকা কে একদিন ঋষভ তার যোগ্যতা নিয়ে কথা শুনিয়েছিলো আজ একটা চাকরির জন্য তার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।ওদের সকলের ব্যবহারে এটা স্পষ্ট যে এখানে প্রধান হলো আহেলি…..ছটফটে প্রাণবন্ত মেয়েটাকে চশমার আড়ালে বেশ গম্ভীর লাগছে।ঋষভ এর দেওয়া ফাইলের কাগজপত্র ঘেটে বেশ সহজভাবে আহেলি ঋষভ এর চোখে চোখ রেখে বললো,,,,,
“আপনার সমস্ত কোয়ালিফিকেশন দেখলাম…..এই কোম্পানি তে থাকতে গেলে শুধু বেসিক কম্পিউটার জানলে হবে না।আপনাকে প্রপার একটা কোর্স করতে হবে।যার সার্টিফিকেট থাকবে।”
“আমি বুঝতে পারছি কিন্তু এই মুহূর্তে তো সেই সার্টিফিকেট নেই আমার কাছে।”
“ওকে দ্যান আপনি সময় নিন….নিজেকে আরো যোগ্য করে তুলুন এই পদের জন্য।এখানে আরো এমন অনেক ক্যান্ডিডেড আছে যাদের কাছে সার্টিফিকেট আছে,তাদের তো আমরা নিরাশ করতে পারি না তাই না?”
“আপনারা আমার রেসাল্ট তো দেখলেন….এই কোম্পানি তে যে কাজটা দেওয়া হবে সেটা আমি কম্পিউটারের নলেজ ছাড়াই পারবো।একটাবার ভরসা করতে তো পারেন।”
“ভরসা তো তখনই করবো যখন আপনি একটা নির্দিষ্ট কারণ দেখাবেন….আজকাল কম্পিউটার ছাড়া কি কিছু চলে?নিজেকে আপডেট করুন….কম্পিউটার ছাড়া কাজ তো হবে কিন্তু তাতে যে সময় লাগবে সেই সময় কোথায়?যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এগুলো তো জানতেই হবে।”
“ওকে….আমি কোম্পানি জয়েন করার ছমাসের মধ্যে সার্টিফিকেট জমা দেবো।তাহলে তো হবে?যে কোর্সটা আপনারা চাইছেন সেটা অনলাইনে করা যায়।আমি সবটা খোঁজ নিয়েই রেখেছি…অফিসের পাশাপাশি আমি এই কোর্সটা করে নেবো।”
“আপনার জন্য খামোখা আমরা এই স্পেশাল এরেঞ্জ কেনো করতে যাবো বলুন তো?আপনি প্রাক্তন সাংসদ বলে?সবজায়গায় সুবিধা পেয়ে পেয়ে অনেক লোভ হয়ে গেছে তাই না ঋষভ বাবু?”
আহেলির পাশে একজন মাঝবয়স্ক ভদ্রলোক বসেছিলেন যিনি কাজের পাশাপাশি রাজনীতি করে থাকেন।সামনে বিরোধী দলের কাউকে পেয়ে তাই তিনি আর নিজেকে আটকাতে পারলেন না….ভেতরের কথাগুলো বেশ রাগ নিয়ে উগরে দিলেন।ওই ব্যক্তির কথায় এবার আহেলি ক্ষুব্ধ স্বরে বললো,,,
“ওনার পার্সোনাল ম্যাটার এখানে টেনে আনার কোনো মানে আছে কি?উনি একজন ক্যান্ডিডেড তাই ওনার সাথে ব্যবহার সেরকমই করা উচিত।”
আহেলির কথায় লোকটা অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরালো।আহেলির সাথে থাকা আরেকজন এবার ঋষভ এরসাথে কিছু ডিসকাস করলেন।সবশেষে ঋষভ এর হাতে ওর ফাইল ধরিয়ে দিয়ে আহেলি চোখ থেকে চশমা সরালো….একবার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,
“আপনাকে আমরা যা জানানোর সেটা মেল করে জানিয়ে দেবো…তবে হ্যাঁ ওই যে বললাম,নিজেকে আপডেটেড করুন যাতে এভাবে রিকোয়েস্ট করতে না হয়।গুড লাক….”
ঋষভ বেরিয়ে যেতেই আহেলি নিজেও উঠে দাঁড়ালো।ইন্টারভিউ আজকের মতো শেষ….বেলা দেড়টা বাজে।আজ অফিসে হাফ ছুটির এপ্লাই করা ছিলো আর সেটা মঞ্জুর হয়েছে।আহেলি নিজের ডেস্কে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে ল্যাপটপ আর বাকি জিনিস ব্যাগে গুছিয়ে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পরলো।
আহেলির অফিসে ভীষণ কড়াকড়ি…..এখানে ওদের কথামতোই চলতে হয়।অফিসে বলাই ছিলো সবসময় ফর্মাল লুকে থাকতে হবে….সেজন্য আহেলি শার্ট আর হাঁটু অব্দি স্কার্ট পরে আসে।প্রায় সময় কুর্তি,সালোয়ার আর শাড়িতে অভ্যস্ত আহেলি প্রথম প্রথম অসুবিধা হতো কিন্তু এখন বেশ অভ্যেস হয়ে গেছে।আজ আহেলি পিঙ্ক রঙের শার্টের সাথে গ্রে কালারের স্কার্ট পরেছিলো।সুন্দর করে চুলটা বেঁধে হালকা মেকআপে আহেলিকে বেশ ভালোই লাগে অফিস লুকে…..আজ ঋষভ একদৃষ্টে আহেলির দিকে চেয়েছিলো।মেয়েটাকে একদম অন্যরকম লেগেছে আজ।কতো শান্ত,গম্ভীর আর মনোযোগী…..কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে মনে হবে আহেলি খুব পাকা এবিষয়ে।কয়েকমাসের মধ্যেই সবকিছু একেবারে বদলে গেছে…..ইলেকশনের পর ঋষভ যখন সাংসদ পদটা পায় তখন ওর মনে হয়েছিলো এতদিনের সমস্ত পরিশ্রম স্বার্থক হলো।সেই কলেজ লাইফ থেকে রাজিনীতি করে শেষ অব্দি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলো….হ্যাঁ এসবের জন্য ঋষভ এর জীবন থেকে অনেককিছু হারিয়ে গেছে কিন্তু সাথে আরো নতুন কিছু এসেছে।আহেলি সেদিন গালে চড় মারার পর ঋষভ এর বেশ রাগ হয়…..সবকিছু স্বীকার করে মিটিয়ে নিতে চাওয়ার পরেও মেয়েটা ওকে রাগ দেখালো?আর তখনই মনে হয়েছিলো আহেলি আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই সাধারণ ভাবনায় নিমজ্জীত যেখানে নিজের বয়ফ্রেন্ডকে কেউ দেখলেও সেটা নিয়ে ঝগড়া করতে শুরু করে।এরম মেয়ের সাথে ঋষভ নিজেও থাকতে পারবে না।সাংসদ হওয়ার পর ওর কাঁধে আরো দায়িত্ব আসবে….পার্টির স্বার্থে কতকি করতে হয়।আহেলি তো তখন আরো ঝামেলা করবে,এসব ভেবে ঋষভ আর এগিয়ে যায়নি আহেলিকে ফেরাতে।আর ঠিক তার পরই সারার কথা বলে মন্ত্রী-মশাই।স্মার্ট,এডুকেটেড সারাকে দেখে ঋষভ এর মনে হয়েছিলো এরকম মেয়েই ওর জন্য পারফেক্ট যে ওকে একটু বুঝবে।আজ ঋষভ একটা কথা খুব ভালোমতো বুঝে গেছে,পারফেক্ট বলে জীবনে কিছুই হয় না…..সকলের মাঝে দোষ গুন ত্রুটি সবই থাকে আর সেগুলোকে মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়।সারাও তো একটা সময় ঋষভকে সেই দোষ দিতে শুরু করলো…..আর তারপর মেয়েটার আসল রূপ সমন্ধে জানলো।সারার কথাটা জানার পর ওর মায়ের মুখে কুলুপ এঁটে গেছিলো…..যে মেয়েকে নিয়ে তিনি এতো বাড়াবাড়ি করলেন সেই যে ষড়যন্ত্র করে শ্রীনাথ কে দিয়ে ঋষভ কে এভাবে পথে বসাবে তা ধারণার বাইরে ছিলো।এখন ঋষভ নিজেই ভীষণ সাধারণ একটা ছেলে…..আর আহেলি সেতো ঋষভ এর থেকে অনেক এগিয়ে গেছে।
দুপুরের কাঠফাটা রোদের মধ্যে কোনো গাড়ি না পেয়ে চুপচাপ অফিসের সামনের বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলো ঋষভ…..এদিক ওদিক তাকাতে হঠাৎই ঋষভ দেখলো ব্যাগ হাতে অফিস থেকে বেরোলো আহেলি।একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তারপর কাকে একটা ফোন করলো…..মিনিট তিনেক পরই আহেলির সামনে একটা কালো গাড়ি এসে থামলো।গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো আহেলির হবু স্বামী প্রান্তিক।আহেলির দিকে এগিয়ে এসে কিছু বলে ওকে আগে গাড়িতে বসালো তারপর আবার নিজের জায়গায় ফিরে গেলো।গাড়িটা ঋষভকে ক্রস করে যাওয়ার সময় ঋষভ খেয়াল করলো প্রান্তিকের একটা হাত ধরে ওর কাঁধে মাথা রেখে স্বতস্ফূর্তভাবে অনর্গল কথা বলে চলেছে আহেলি।আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ঋষভ এর বুক চিড়ে……আমাদের সকলেরই দুটো দিক থাকে।একটা দিক যেটা বাইরের পৃথিবী দেখে আর আরেকটা দিক হয় যেটা আমাদের একেবারে আসলসত্বা যেটা আমরা আমাদের খুব কাছের মানুষের কাছে উন্মুক্ত।আহেলি এখনো সেই আগের মতোই ছটফটে প্রাণবন্ত আছে…..তবে সেটার দেখা সবাই পায় না।
বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামলো ঋষভ…..আহেলি ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় একটা কথা ঠিক বলেছে,যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে নিজেকে পরিবর্তন করতেই হবে।আর সব্বার আগে নিজের যোগ্যতা তৈরি করতে হবে।
🌸🌸🌸🌸
ফাল্গুন মাসের মতো বিবাহের উপযুক্ত সময় বোধহয় আর কোনো মাস নয়…..না গরম আর না ঠান্ডা বরং মনোরম একটা আবহাওয়া থাকে এই সময়।বসন্তের কোকিলের কুহুতান আজ ঢেকে গেছে নহবতের সুরে…..সকাল থেকেই আহেলির বাড়ি জুড়ে ব্যস্ততা।আত্নীয়-স্বজনের ভিড়ে পরিপূর্ণ বাড়িতে হাসি ঠাট্টা চলছে কনেকে ঘিরে।সেই ভোর থেকে শুরু হয়েছে নানান আচার, একের পর এক নিয়ম মানার পর উপস্থিত হয়েছে সেই মহেন্দ্রক্ষন।আহেলির বাড়ির সামনের ফুলে সাজানো গেট দিয়ে সন্ধ্যে হতেই এক এক করে সমস্ত নিমন্ত্রিত ব্যক্তি এগিয়ে চলেছেন বাড়ির ভেতরে।আলো ফুল আর রঙিন কাপড়ে সাজানো বাড়িটা কাল থেকে একদম ফাঁকা হয়ে যাবে…..বাড়ির একমাত্র মেয়ে বিয়ে করে চলে যাবে বলে কথা তাই উমা দেবী আর অমিও বাবুর মনটা বেশ খারাপ কিন্তু যতবার প্রান্তিকের কথা মাথায় আসছে তখনই বেশ নিশ্চিন্ত লাগছে।
নিজের ঘরে বসে মেকআপ আর্টিস্টদের সহায়তায় তৈরি হচ্ছিলো আহেলি….আর পাঁচটা কনের মতোই লাল টকটকে বেনারসি সোনার গয়নায় সেজেছে আহেলি।কপালে চন্দনের কলকা,মাথায় শোলার মুকুট পরিয়ে দেওয়ার পর সকলেই একদৃষ্টে চেয়ে আছে নববধূর ডিজে……আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আহেলি নিজেও নিজেকে দেখছিলো।কদিন আগে আহেলি আর প্রান্তিক নিজে গিয়ে সৌমিলি,রিয়া,অনুশ্রী আর সপ্তককে ইনভাইট করে এসেছে।সকাল থেকে সকলেই এসে উপস্থিত হয়েছে আহেলির বাড়িতে….বিশেষ করে সপ্তক ভাইয়ের মতো অনেক দায়িত্ব সামলে চলেছে।গায়ে হলুদের সময় রিয়া অনুশ্রী কে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহেলি ওদের কাছে ডাকলে অনুশ্রী জানায়,ওরা সেদিনের জন্য লজ্জিত।যেদিন আহেলির পাশে বন্ধুর মতো থাকা উচিত ছিলো সেদিন ওরা আহেলিকে দোষ দিয়ে দূরে সরে গেছিলো।ওদের কথায় আহেলি মুচকি হেসে জানায় পুরোনো কথা মনে রেখে আর কি লাভ?যা হওয়ার তা হয়েই গেছে…..আহেলি যদি ঋষভকে ক্ষমা করতে পারে তাহলে ওরা তো বন্ধু।তারপর থেকে বেশ সহজভাবে প্রতিটা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে সকলে মিলে….
আহেলির ঘরের দরজায় করাঘাত হতেই অনুশ্রী গিয়ে খোলে দরজাটা…..একজন জানায় বাড়ির গেটে বর দাঁড়িয়ে।তৎক্ষনাৎ ঘরে থাকা সকলের মধ্যেই ব্যস্ততা দেখা যায়….মুহূর্তের মধ্যে ঘর খালি করে বেরিয়ে যায় সকলে।অনুশ্রী,রিয়া আর সৌমি আহেলিকে কনের জায়গায় বসিয়ে ওরাও গেটের দিকে চলে যায়।আহেলির মনের মধ্যে এই মুহূর্তে যে কি হচ্ছে তা একমাত্র ওই জানে…..আচ্ছা প্রান্তিককে কেমন লাগবে আজ বরবেশে?
উত্তরটা আহেলি পেলো আরো ঘন্টাখানেক পর যখন ছাদনাতলায় ওদের চারচক্ষুর মিলন হলো।পানপাতা সরাতেই লাল পাঞ্জাবি পরিহিত ছেলেটাকে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো আহেলির…..প্রান্তিককে আজ সত্যিই বড্ড সুন্দর লাগছে বরের সাজে।
“আমরা তো জানতাম শুভদৃষ্টির সময় বর বউয়ের দিক থেকে চোখ সরাতে পারে না,ওমা আমাদের আহেলি তো সব ধারণা উল্টে দিলো।”
আহেলি বাড়ির কোনো আত্মীয়ের কথায় চোখ নামিয়ে নিলো।লজ্জ্বায় আর চোখ তুললোই না…..একে একে সমস্ত নিয়ম মেনে বিবাহ এগিয়ে চললো।সিঁদুরদানের পর লজ্জ্বাবস্ত্র সরাতেই দুটো তৃষ্ণার্ত চোখের সম্মুখীন হলো আহেলি…..সকলের সামনে প্রান্তিকের এমন দৃষ্টিতে আহেলি আবারো কুঁকড়ে গেলো।হঠাৎই মনে পড়ে গেলো বছর খানেক আগের সেই হাওড়া স্টেশনের বাইরের ঘটনা।জীবন কি অদ্ভুদ তাই না?সাউথ ইন্ডিয়ার ভিলেনের সাথেই শেষ অব্দি সাত পাকে বাধা পরলো আহেলি।যাকে বলে মধুরেণু সমপায়েত…….বিয়ের মন্ডপে থাকা উমাদেবী-অমিও বাবু ,প্রান্তিকের মা আর সুব্রত বাবু সকলেই আশীর্বাদ করলেন নবদম্পতি কে।সৌরিক তো বৌমনির হাত ছাড়তেই চায় না।
নিমন্ত্রণ থাকলেও আজ ঋষভ বা তার বাড়ির লোক কেউই আসেনি আহেলির বাড়িতে।চক্ষুলজ্জ্বা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে তো নাকি?ঋষভ নিজের ঘরের বিছানায় চুপচাপ শুয়েছিলো ঘর অন্ধকার করে…..নিস্তব্ধ ঘরের মধ্যে টুংটাং শব্দ হচ্ছে।আহেলি কোনো একটা মেলা থেকে ঋষভ এর জন্য একটা উপহার এনেছিলো….একটা ঘর সাজানোর জিনিস।ঋষভ এর ঘরে জানলার সামনে টাঙিয়ে দিয়েছিলো…..কয়েকটা ছোট্ট কাঁচের পায়রা সুতোয় ঝুলছে।পায়রার পায়ে ছোট্ট করে ঘুঙুর লাগানো….হাওয়ায় পায়রাগুলো দুলে উঠলেই শব্দ হয়।এটা দেখে ঋষভ এর মনে হয়েছিলো এরকম শো-পিস বাচ্ছাদের ঘরে মানায়।এইনিয়ে আহেলি কে কথাও শুনিয়েছিলো কিছুটা….তাও মেয়েটা জোর করে টাঙিয়ে বলেছিলো,,,
“আমার কথা তোমায় মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য টাঙিয়ে দিলাম।”
ফোনে মেসেজের শব্দ হওয়ায় উঠে বসলো ঋষভ।হাতে ফোন নিতেই হাসি ফুটে উঠলো মুখে।অবশেষে আহেলির অফিস থেকে চাকরিটা ওকে দিয়েছে…..তবে একটাই শর্ত ছমাসের মধ্যে কোর্স করে সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।আর যে অফিসে আহেলি থাকে সেটা নয় একটা অন্য ব্রাঞ্চে জয়েন করতে বলা হয়েছে ঋষভ কে।মনটা অনেকটা হালকা হলো ঋষভ এর….নতুন করে জীবনটাকে সাজিয়ে নেওয়ার যখন একটা উপায় পেয়েছে সেটা আর হাতছাড়া করবে না ঋষভ।
🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸
চাঁদের স্বচ্ছ জোৎস্নায় চারদিক দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার…..তাই রিসোর্টের বেলকনি দিয়ে তির্যকভাবে চাঁদের আলো এসে অন্ধকার ঘরটা আলোয় ভরে উঠেছে।বিছানায় পা ছড়িয়ে বসে প্রান্তিক একদৃষ্টে ওয়াশরুমের দরজার দিকে রয়েছে…..অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আহেলি বেরিয়ে এলো দরজা ঠেলে।আজকাল আহেলি আসার সাথে সাথে একটা মিষ্টি সুগন্ধে প্রান্তিকের চারপাশটা ভরে যায়…..এই সুগন্ধি প্রান্তিককে আরো বেশি করে টানে আহেলির দিকে।
আহেলির মেহেন্দি রাঙানো হাতদুটো তোয়ালে রেখে ভিজে চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে দেয়…..আর তখনই অনুভব করে ভিজে চুলের মধ্যে কারোর উষ্ণ নিশ্বাস…..কোমড়ে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ।ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করতেই আহেলি টের পায় গলায় একজোড়া পুরু উষ্ণ ঠোঁটের অস্তিত্ব।এসব স্পর্শ আহেলির অপরিচিত নয়….গত বেশ কয়েকদিন ধরে এসবের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে আহেলি।যখন তখন আহেলি প্রান্তিকের এহেন রোমান্টিক মুডের পরিচয় পায়…..বিয়ের সমস্ত ঝামেলা মিটতে সকলেই যখন ওদের হানিমুন যাওয়ার প্রস্তাব দেয় তখন ওরা জানায় শান্তিনিকেতন যাবে।এমন একটা জায়গায় বেড়াতে আসার কথা শুনে সকলে অবাক হলেও আহেলি প্রান্তিক নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল…..বিয়ের পর প্রথম হোলিটা কাটবে সেখানে যেখানে প্রথম প্রান্তিক আহেলির প্রেমে পড়েছিলো।সেইমতো এখন ওরা শান্তিনিকেতনের রিসোর্টে…..সারাদিন ঘোরার পর আহেলি স্নানে গেছিলো আর প্রান্তিক অপেক্ষায় ছিলো কখন বেরিয়ে আসবে আর তখনি জাপটে ধরবে বরাবরের মতন।
চাঁদের জোৎস্নায় আহেলি লজ্জ্বা লজ্জ্বা মুখটা প্রান্তিকের উন্মুক্ত বক্ষে লুকিয়ে নিচু গলায় বললো,,,,
“আজকেও তোমার জন্য আমার একটুও ঘুম হলো না।আরেকটু পরই ভোর হয়ে যাবে।”
আহেলির কথায় হাসলো প্রান্তিক।আহেলির মুখটা ধরে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,,,,
“বড্ড জ্বালাচ্ছি তাই না?আচ্ছা আর তো মাত্র কটাদিন,বাড়ি ফিরে দুজনই ব্যস্ত হয়ে যাবো।তখন কিন্ত নিজেই মিস করবে।”
“বাড়ি ফিরলে ডঃরয় কি গুডবয় হয়ে যাবে?”
“নাহ তা নয়….তবে শান্তিনিকেতন এসেই তো পেয়েছি তোমায়।তাই এখানে যতবার আসবো ততবার একটু বেশিই পাগল হবো।আরো বেশি করে ভালোবাসবো।”
প্রান্তিকের কথায় আহেলি একটা বড়ো নিশ্বাস নিয়ে জড়িয়ে ধরলো প্রান্তিককে।ভাগ্যিস অনুশ্রীদের সাথে এসেছিলো নাহলে ভালোবাসার আসল মানেটা অজানা থেকে যেতো আহেলি।
আহেলি আর প্রান্তিক যখন সেই গ্রামের ছোট্ট বাড়িটায় উপস্থিত হলো তখন বাবলুর আনন্দ দেখে কে?ওতো বলেইছিলো এটাই প্রান্ত-দাদার বউ….মিললো তো ওর কথা।প্রতি বছরের মতো এবছরও প্রান্তিক গোটা একটাদিন থাকবে বাবলুদেরবাড়ি….এবছর আহেলি আছে সাথে।সারাদিন বেশ আনন্দ করেই কাটলো…..সন্ধ্যেবেলা প্রান্তিক আহেলি কে নিয়ে উপস্থিত হলো বাউলের আখড়ায়।দুজনে অনেক রাত অব্দি গান শুনলো বসে বসে।
বাউল গান শুনে যখন দুজন রিসোর্ট ফিরছে তখন বেশ অনেকটা রাত হয়েছে।আকাশটা হটাৎ করেই সন্ধ্যে থেকে মেঘলা করে আছে….ফাঁকা নির্জন লালমাটির রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আহেলি প্রান্তিকের হাতটা চেপে ধরলো।প্রান্তিক কিছু একটা ভেবে বললো,,,,
“একটা জায়গায় যাবে আহেলি?”
“এতরাতে কোথায় যাবে?এখনই হয়তো বৃষ্টি নামবে।”
“বৃষ্টিতে তো আসল মজা….তোমার কোনো ভয় নেই।আমি আছি তো নাকি?”
প্রান্তিকের সাথে যখন আহেলি কোপাইয়ের ধারে এসে দাঁড়ালো তখন ঝিরঝির করে বৃষ্টি পরতে শুরু করেছে।এমন সময় নদীর ধারে আসার কারণ জানতে চাইতে প্রান্তিক বললো,,,,
“কোপাইয়ের ধারে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চুমু খেয়েছো কখনো?”
প্রান্তিকের এহেন প্রশ্নে আহেলি অবাক হয়ে তাকাতে প্রান্তিক হালকা হেসে বললো,,,,
“দুবছর আগে ফটোগ্রাফির জন্য একবার দুপুরে এদিকে এসেছিলাম।হটাৎ বৃষ্টি আসায় ক্যামেরা বাঁচানোর জন্য যখন গাছের তলায় দাড়ালাম তখন দেখি ঠিক এখানে দাঁড়িয়ে দুজন ছেলে মেয়ে চুম্বনে ব্যস্ত….তখন আমি ব্যাচেলর মানুষ।লজ্জ্বায় ক্যামেরা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে পালিয়ে গেছিলাম কিন্তু তখনই ভেবে রেখেছিলাম পারলে আমিও একদিন বউকে নিয়ে চুমু খাবো কোপাইয়ের ধারে।”
“তুমি সত্যিই একটা পাগল….এতরাতে যদি কোনো বিপদ হয় তখ.
আহেলির কথা থেমে যায় তৎক্ষনাৎ।বৃষ্টির বেগ বাড়ায় প্রান্তিক আর অপেক্ষা করতে পারছিলো না ইচ্ছে পূরণের জন্য….আহেলি এবার নিজেও তাল মেলায় প্রান্তিকের সাথে।এমন একটা মুহূর্ত আজীবন মনে থাকবে দুজনের।
শান্তিনিকেতনে দোলউৎসব মানেই একটা অন্য পরিবেশ…..আহেলি আজ শাড়ির সাথে প্রান্তিকের দেওয়া সেই পোড়ামাটির গয়না পরেছে সাথে মাথায় পলাশের মালা।গানের তালে তালে সকলেই নাচানাচি করছে একসাথে…..আহেলিও কয়েকটা মেয়ের সাথে যোগ দিয়েছে।প্রান্তিক ক্যামেরা নিয়ে বরাবরের মতোই মুহূর্তবন্দিতে ব্যস্ত।তবে এবছর আহেলির ছবি একটু বেশিই উঠছে…..
নাচ ছেড়ে আহেলি এগিয়ে এলো প্রান্তিকের কাছে।ফাজিল হেসে হাতের মুঠোয় থাকা লাল আবীর দিয়ে প্রান্তিকের মুখসহ সাদা পাঞ্জাবির রঙ বদলে দিলো মুহূর্তেই….প্রান্তিকও আহেলিকে কাছে টেনে এনে নিজের গালের সাথে আহেলির গাল ঘষে দিয়ে ফাজিলের মতো হেসে বললো,,,,
“কেমন লাগলো?”
আহেলি হঠাৎই জড়িয়ে ধরলো প্রান্তিককে।শক্ত করে জড়িয়ে বুকের কাছে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো।কোনো কথা না বলে প্রান্তিক নিজেও জড়িয়ে ধরলো।এতো মানুষের মাঝে দুজনে ডুবে আছে দুজনের মধ্যে…..সকলে ওদের দিকে দেখলেও তাতে ওদের কোনো আগ্রহ নেই।
মনের মানুষকে খুশি রাখার জন্য শুধু একটু ভালোবাসতে হয়…ভালোবেসে বুঝিয়ে দিতে হয় মানুষটা তার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ন আর তাকে আগলে রাখতে জানতে হয়।
শান্তিনিকেতন যখন রঙ খেলায় মেতে উঠেছে….প্রান্তিক আর আহেলিও মেতে উঠেছে সকলের সাথে।কখনো দুজনে একে অপরকে রঙ মাখাচ্ছে তো কখনো বাচ্ছাদের মতো দৌড়াদৌড়ি করছে আবার প্রান্তিক কখনো আহেলি কে পাশে নিয়ে সকলের সাথে নাচে পা মেলাচ্ছে।
শান্তিনিকেতনের বাতাসে তখন ভেসে বেড়াচ্ছে বাউলের গলায় সেই চিরপরিচিত গান…..
পথিক কয় ভেবো নারে ডুবে যাও রূপসাগরে,
পথিক কয় ভেবো নারে ডুবে যাও রূপসাগরে,
বিরলে বসে করো যোগ-সাধনা।
একবার ধরতে পেলে মনের মানুষ,
ছেড়ে যেতে আর দিও না
ধরতে পেলে মনের মানুষ,
ছেড়ে যেতে আর দিও না
দেখেছি,
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
এই মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে থাকে মনের আমাদের সকলের মনের মানুষ।তাকে শুধু খুঁজে নিতে হয়…..যার সাথে হাতে হাত রেখে সারাজীবন চলা যায়।
সমাপ্ত….❤️