মেঘপিয়নের_ডাকে পর্ব ১৯

1
3709

#মেঘপিয়নের_ডাকে
পর্ব ১৯

সকালে ঘুম ভেঙ্গেই জুনায়েদ আশেপাশে তাকাল। অবনী নেই। ঘড়ি দেখেই বুঝে গেলো সবাই এখন ব্রেকফাস্ট টেবিলে। বিছানা ছেড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে দেখল অবনী আর জায়েদ রহমান টেবিলে বসে নাস্তা করছে। জুনায়েদ সিঁড়ি বেয়ে নেমে অবনীর পাশেরর চেয়ারটা টেনে বসে পড়ে বলল
–গুড মর্নিং বাবা।

তার আওয়াজ শুনে অবনী আর জায়েদ রহমান হতবিহবল চোখে তাকিয়ে থাকলেন কয়েক মুহূর্ত। জুনায়েদ একটু অসস্তিতে পড়ে গেলো। ভ্রু কুচকে বলল
–এভাবে কি দেখছ তোমরা?

জায়েদ রহমান বিস্ময়কর কণ্ঠে বলল
–তুমি এতো সকালে?

জুনায়েদ জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল
–আমি তো সকালেই উঠি বাবা। এতক্ষনে তো অফিসে থাকার কথা ছিল। ছুটির দিন বলেই এখনো বাসায়।

জায়েদ রহমান বিষয়টাতে অবাক হলেও প্রকাশ করলেন না। ফ্যাকাশে মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে খেতে শুরু করলেন। জুনায়েদ বাবার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। তারপর শীতল কণ্ঠে বলল
–বাবা আজ আমার জন্মদিন।

জায়েদ রহমানের হাত থেমে গেলো। চোখ তুলে তাকালেন তিনি। মুহূর্তেই চোখ ভরে এলো তার। জুনায়েদ চমৎকার হাসল। কত বছর পর এইদিনে ছেলেকে এভাবে চোখের সামনে দেখেছেন তিনি। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল
–শুভ জন্মদিন।

জুনায়েদ ঠোঁট এলিয়ে হাসল। বলল
–তুমি কি আজ ফ্রি আছো?

জায়েদ রহমান একটু ভেবে বললেন
–আমার দুপুরের পর একটু কাজ আছে। কেন বলতো?

–ভাবছিলাম আজ আমরা সবাই মিলে একটু বাইরে যাবো। অনেকদিন একসাথে এভাবে টাইম স্পেন্ড করা হয়না।

জায়েদ রহমানের চোখ খুশীতে ছলছল করে উঠলো। হেসে উঠে বললেন
–তোমরা দুজন ঘুরে আসো। আমি কাজ সেরে রাতে জয়েন করবো তোমাদের সাথে।

জুনায়েদ মুচকি হেসে সম্মতি দিল। জায়েদ রহমান খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন
–আমাকে এখন যেতে হবে। আমি আসছি।

জুনায়েদ উঠে বাবাকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। বলল
–তাড়াতাড়ি এসো বাবা।

জায়েদ রহমানের চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। তিনি গোপনে সেটা মুছে ফেলে বললেন
–ঠিক আছে।

জায়েদ রহমান বাইরে চলে যেতেই জুনায়েদ আবারো চেয়ারে বসে পড়লো। রোজ কফির কাপটা এনে জুনায়েদের সামনে দিয়ে চলে গেলো। জুনায়েদ কাপটা তুলে নিয়ে অবনীর দিকে তাকাল। তার মনে হল অবনী যেন গভীর কোন চিন্তায় মগ্ন। চেহারাতেও কেমন মলিনতার ছাপ। তেমন কথাও বলছে না। চঞ্চলতা থেমে গেছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
–কফি খাবে?

অবনী মাথা নাড়ল যার অর্থ সে খাবে না। জুনায়েদের এবার কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো। বুঝে গেলো সে কিছু একটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছে। তাই কফির কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল
–খাও।

অবনী মাথা নাড়িয়ে আবারো না বলল। জুনায়েদ গভীর দৃষ্টিতে পুরো মুখে দেখে নিয়ে বলল
–কফিই খাবে না নাকি আমার সাথে একই কাপে খেতে সমস্যা?

চোখ তুলে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও পারলো না। জুনায়েদের গভীর দৃষ্টি অবনীর অসস্তি সৃষ্টি করলো। দৃষ্টি নামিয়ে মিনমিনে কণ্ঠে বলল
–কফি খাবো না।

থেমে গেলো দুজনই। কয়েক মুহূর্তের নিরবতা অবনীর অসস্তি বাড়িয়ে দিলো। নিচের দিকে তাকিয়ে অস্থির দৃষ্টি ফেলছে। জুনায়েদ আদুরে গলায় বলল
–অবনী?

আচমকা এমন আওয়াজে অবনী চমকে উঠলো। জুনায়েদের দিকে তাকাতেই মুচকি হেসে বলল
–বাং’লা’দে’শে যাবে?

অবনী অদ্ভুতভাবে তাকাল। অস্থিরভাবে শ্বাস টেনে পলক ফেলে বলল
–যাবো।

জুনায়েদ মুচকি হেসেই বলল
–পরশু যাবো। সব গুছিয়ে রে’ডি হ’য়ে নাও।

অবনীর চেহারা হুট করেই পরিবর্তন হয়ে গেলো। জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলল
–প’রশু? আপনি যাবেন?

জুনায়েদ হেসে ফেলে বলল
–যাবো।

অবনী কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে ফেললো। উঠে যেতে নিলেই জুনায়েদ আটকে দিলো। বলল
–কোথায় যাচ্ছ?

অবনী মলিন হেসে বলল
–রে’ডি হতে।

–তোমার মন ভালো করে দেয়ার বিনিময়ে আমার কিছু পাওয়া উচিৎ বলে মনে হয়না তোমার?

অবনী সরু চোখে তাকাল। বলল
–সব সময় আপনার কেন পাওয়া উচিৎ জুনায়েদ সাহেব? আমারও তো কিছু চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে।

জুনায়েদ একটা শ্বাস ছেড়ে মাথা নাড়ল। বলল
–ঠিক বলেছ।

অপেক্ষা না করেই অবনীর ঠোঁটের কোণে গা’ড় চু’মু খেয়ে বলল
–হয়েছে? নাকি আরও কিছু লাগবে?

অবনী লাজুক হাসল। বলল
–আমি আসছি।

জুনায়েদ মুচকি হাসল। অবনী চলে যেতেই ডুবে গেলো গভির ভাবনায়। বাং’লা’দে’শে ফিরে যা হতে যাচ্ছে সেটা খুবই চি’ন্তার বিষয়। আশরাফ সাহেবের সব স’ত্যিটা যখন অবনী জা’নতে পা’রবে তখন ওকে কি’ভাবে সা’মলাবে।

—————
বৃষ্টি মুখোর পরিবেশ। রাত থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। এয়া’রপো’র্ট থেকে বেরিয়েই অবনী আকাশের দিকে তাকাল। প্রিয় শহর। প্রিয় মানুষগুলোর সাথে দেখা হওয়ার জন্য যতটা অ’স্থির হয়ে থাকার কথা ছিল তার তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। জুনায়েদ এক পলক অবনীর দিকে তাকাল তার চেহারা বেশ গম্ভীর। জুনায়েদ সবটাই খেয়াল করেছে। এতক্ষন এই বিষয়ে কিছু না বললেও এখন অবনীর চেহারা আরও গম্ভীর দেখে বলল
–অবনী তোমার কি শরীর খারাপ?

অবনী মলিন মুখে তাকাল। মাথা নাড়িয়ে না বলল। জুনায়েদ তেমন কিছু বলল না। ট্যাক্সি ডেকে বলল
–এখন কি মামনির বাসায় যাবে?

অবনী মাথা নেড়ে বলল
–নানুর বাসায় যাবো।

জুনায়েদ অবাক হল। বলল
–কিন্তু তোমার মামনি যে অসু’স্থ। তোমাকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর আমি বলেছিলাম আমরা ওখানেই আগে যাবো।

অবনী ট্যাক্সিতে উঠে বসেই সামনে তাকিয়ে বলল
–মামনির সাথে আমার কথা হয়েছে। আগে নানু বাসাতেই যেতে হবে। তারপর মামনির বাসায় যাবো।

জুনায়েদ কোন কথা না বলেই উঠে বসল। অবনীর নানু বাসায় পৌছাতে অনেকটা সময় লেগে গেলো জ্যামের কারণে। অবনী এর মাঝে একটা কথাও বলেনি। জুনায়েদ ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলো অবনীর এমন আচরণে। হুট করেই মেয়েটার কি হল এমন। গাড়ি থেকে নেমে অবনী সোজা বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। জুনায়েদ লা’গেজ নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই দেখে অবনী তার নানাকে জড়িয়ে ধরে কা’ন্নাকাটি করছে। জুনায়েদকে দেখে থেমে গেলো। বিয়ের পর জুনায়েদ প্রথমবার এই বাড়িতে এসেছে। তাই আপ্যায়নের শেষ নেই। অবনীকে রেখে তারা জুনায়েদকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এক এক করে সবাই জুনায়েদের সাথে কথা বলছে। তার ভীষণ অসস্তি হচ্ছে। এদিকে অবনী জুনায়েদকে রেখে বাইরে গেছে। বলে গেছে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে। জুনায়েদকে কিছুই বলার সুযোগ না দিয়েই তার বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে জুনায়েদের বিস্ময়ের শেষ নেই। কিন্তু তখন কিছুই বলেনি। এখনো না আসায় জুনায়েদ বিরক্ত হয়ে অবনীকে ফোন করলো। কিন্তু সে ফোনটা রিসিভ করলো না। এবার জুনায়েদের ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। রাতের খাবারের সময় হতেই অবনী চলে এলো। তাদের জন্য যে ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে জুনায়েদ সেই ঘরে চোখ বন্ধ করে রেস্ট নিচ্ছিল। অবনী দ্রুত ঘরে ঢুকে বলল
–ঘুমাচ্ছেন? খাবেন না?

জুনায়েদ কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–কোথায় গিয়েছিলে?

অবনী জুনায়েদের সামনে বসে পড়লো। মুচকি হেসে গালে হাত রেখে বলল
–একটা গুরু’ত্বপূর্ণ কাজ করতে গিয়েছিলাম।

জুনায়েদের কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো। কৌতূহলী কণ্ঠে বলল
–কি এমন গুরু’ত্বপূর্ণ কাজ যা আমাকে জানানো যাবে না?

–আমি তো বলিনি আপনাকে জানানো যাবে না। তবে আপনিও তো সবকিছু আমাকে জানান নি। সে হিসেবে একদম ঠিক আছে।

জুনায়েদ অবনীর কথায় কিছুটা অবাক হয়েই বলল
–আমি কি জানাই নি?

অবনী চমৎকার হেসে বলল
–ঐ যে আপনার গা’র্ল ফ্রে’ন্ডের কথা জানান নি।

জুনায়েদ অবনীর চুল টেনে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–আমার কোন গা’র্ল ফ্রে’ন্ড ছিল না।

–তাহলে কি ছিল?

–কিছুই ছিল না।

অবনী জুনায়েদের হাত থেকে নিজের চুল ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
–কিছুই ছিল না? কিন্তু আমি তো অন্যকিছু জেনেছি।

জুনায়েদ অবনীকে কাছে টেনে এনে বলল
–স্পষ্ট করে কথা বল। কি বলতে চাও তুমি?

অবনী অদ্ভুতভাবে হেসে উঠলো। বলল
–আপনাকে খেতে ডাকছে। খেয়ে তারপর কথা বলি?

জুনায়েদকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়েই অবনী উঠে বাইরে চলে গেলো। জুনায়েদ বেশ অবাক হল। অবনীর এমন আচরনের কারণ বুঝতে পারলো না। তাই সেও চলে গেলো বাইরে।

————–
সারারাত জুনায়েদের ঘুম হয়নি ওয়েদার সিক’নেসের কারণে। এপাশ ওপাশ করে কাটিয়েছে। অবনী যেহেতু ঘু’মের ঔষধ খেয়েছে তাই সে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। সকাল বেলা অবনী ঘুম ভেঙ্গে দেখল জুনায়েদ তখন ঘুমাচ্ছে কেবল। তাই আর তাকে ডাকল না। খুব সাবধানে বেরিয়ে গেলো যাতে জুনায়েদের ঘুম না ভেঙ্গে যায়। বাইরে বেরিয়েই সবাইকে বলে দিলো জুনায়েদকে যেন কেউ বিরক্ত না করে। কিন্তু বেশীক্ষণ ঘুমানো হল না জুনায়েদের। ফোনের শব্দে উঠে গেলো। বি’রক্তি’তে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফোনটা ধরল। জুনায়েদ কোন কথা না বলতেই ওপাশ থেকে জায়েদ রহমান বললেন
–জুনায়েদ তুমি কোথায় এখন?

জুনায়েদ উঠে বসে পড়লো। ঘুমন্ত মস্তিষ্ক বাবার কথা বুঝতে কিছুটা সময় নিলো। মস্তিস্ক সজাগ হতেই বলল
–অবনীর নানু বাড়িতে। ঘুমাচ্ছিলাম বাবা।

জায়েদ রহমান গম্ভীর গলায় বললেন
–খ’বর শু’নেছ?

জুনায়েদ অস্থির পলক ফেলে মৃদু আওয়াজে বলল
–কিসের খব’র?

–তার মানে তুমি এখনো কিছুই জানো না?

জুনায়েদ বুঝতে পারলো না জায়েদ রহমানের কথা। কৌতূহলী কণ্ঠে বলল
–কি জানার কথা বলছ তুমি?

জায়েদ রহমান একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন
–তৈয়বা নাজনিনের হা’সপাতা’ল সি-ল করে দে’য়া হ’য়েছে। অ’বৈধ ভাবে অ-র্গা-ন সা-প্লা-ই ক’রার জ’ন্য তা’র লা-ই-সে-ন্স’ বাতিল করে এ’রে’স্ট’ করেছে র‍্যা’ব। সাথে আশরাফ সাহেবের সমস্ত কুকীর্তির প্রমান পেয়ে তাকেও এরেস্ট করেছে।

জুনায়েদ থমকে গেলো। কোথা থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই মাথায় ঢুকল না। বিস্মিত কণ্ঠে বলল
–কি বলছ বাবা? কিভাবে এসব হল?

জায়েদ রহমান তাচ্ছিল্য হেসে বলল
–ঐ বাড়িতে থেকেও তুমি কিছুই জা’নতে পা’রলে না। আর গো’টা বি’শ্ব জে’নে যাচ্ছে।

জুনায়েদ মাথায় হাত দিয়ে বলল
–এটা কিভাবে সম্ভব? সমস্ত প্র’মা’নসহ ফা’ইল গুলো তো আমার কাছে। আর আমি এখনো ওগুলো হ্যা’ন্ড ও’ভার করিনি। এসব কারো হা’তে যা’ওয়া’রও কথা নয়। ই’ন’ফ্যা’ক্ট শামিম আঙ্কেলের সাথে আমার এখনো কথাই হয়নি।

জায়েদ রহমান একটু ভেবে বললেন
–এ ধরনের লোকের তো শ’ত্রু’র কোন অ’ভাব নেই। দেখো হয়তো এম’ন কে’উ আছে যে তোমার ম’তোই ওদের বি’রু’দ্ধে প্র’মান জো’গা’ড় করে ফেলেছে। তোমার আগেই হ’য়তো ব্য’ব’স্থা নি’য়েছে।

জায়েদ রহমান থেমে যেতেই জুনায়েদ গভীর চি’ন্তায় ডুবে গেলো। জায়েদ রহমান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারন করলেন
–অবনী কোথায়?

জুনায়েদের মস্তিস্ক সজাগ হল। অস্থির হয়ে বলল
–আমি দেখছি বাবা অবনীকে।

ফোনটা কেটে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। অবনী নিশ্চুপ টেবিলে বসে খাচ্ছে। জুনায়েদ অস্থির হয়ে অবনীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। মৃদু স্বরে বলল
–অবনী।

অবনী ভীষণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। অবাক হয়ে বলল
–ঘুম ভেঙ্গে গেলো?

জুনায়েদ লম্বা শ্বাস ছেড়ে তাকাল। বলল
–তুমি ঠিক আছো?

অবনী কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে অদ্ভুতভাবে হাসল। স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল
–আমি ঠিক আছি। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। খাবেন।

জুনায়েদ অবনীর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। বের হয়ে এসে দেখল অবনী কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। জুনায়েদকে দেখতে পেয়েই বলল
–আমি বাসায় আছি আঙ্কেল। আপনার সময় মতো চলে আসবেন।

জুনায়েদ অবনীর পাশে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল
–তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে অবনী।

অবনী মুচকি হেসে বলল
–কথা তো হবে জুনায়েদ সাহেব। আগে খাবারটা শেষ করুন।

জুনায়েদ কোন কথা বলল না। চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো। তাদের খাওয়া শেষ হতেই অবনীর নানু বলল
–অবনী তোমার আঙ্কেল এসেছে।

অবনী জুনায়েদের দিকে এক পলক দেখে বলল
–আমরা আসছি।

জুনায়েদকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলো বসার ঘরে। সেখানে গিয়েই জুনায়েদ অবাক হয়ে গেলো শামিম সাহেব কে দেখে। বিস্মিত কণ্ঠে বলল
–আঙ্কেল আ’পনি এখানে?

শামিম সাহেব মাথা নেড়ে বলল
–আমি অবনীর সাথে একটু কথা বলতে এসেছি। খুব বেশী দেরি করবো না।

জুনায়েদ অবনীর দিকে তাকাল। অবনী শামিম সাহেবের সাথে কথা বলছেন। তার সব প্র’শ্নে’র উ’ত্তর অবনী ভীষণ গুছিয়ে দিলো। কথা শেষ করেই তিনি চলে গেলেন। জুনায়েদ অবনীর সামনে দাঁড়ালো। বলল
–তুমি সব জানতে?

অবনী মলিন হেসে বলল
–আপনার ফো’নে মা’মনির কল এসেছিলো সেদিন সকালে। মামনির নাম্বার দেখেই ফোনটা আমি রিসিভ করি। আর আপনাকে ভেবেই মামনি অনেক কথাই বলে। তারপর আমি না’নুকে ফোন করি। নানু প্রথমে বলতে রাজি নাহলেও আমার জে’দের কারণে সব বলে দেয়। তারপর আমি শামিম আঙ্কেল কে ফোন করে যখন সব বলি তখন তিনি আপনার কথা আমাকে জানান। আপনার কাছে যে সব প্র’মা’ন আছে সেগুলো বলে দেন আমাকে। আর আপনি সেগুলো আঙ্কেল কে দি’তে’ই সাথে করে দেশে আনছেন। আমি আপনাকে না জানিয়েই ব্যা’গ থেকে ফা’ই’ল গুলো বের করে আঙ্কেল কে দি’য়ে আসি কাল রাতেই।

সব কথা শুনে জুনায়েদ অবাক চোখে অবনীর দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মনে ভয় তৈরি হয়। অবনীকে নিয়ে সে খুব চি’ন্তায় ছিল। সবটা জানার পর অবনী কিভাবে নেবে বিষয়টা। কিন্তু পুরো ঘট’নাই এখানে উ’ল্টা। অবনী প্রশস্ত হেসে বলল
–জুনায়েদ সাহেব আপনি ভেবেছিলেন আমি সব জানার পর কিভাবে নেবো। কিন্তু আপনি এটা ভুলে গেছেন যে জীবনে অনেক কিছুই আমি দেখেছি। আমার মা মা’রা যাওয়ার পর বাবা যেদিন বিয়ে করে বাসায় আসলো সেদিনই আমি ভে’ঙ্গে পড়ি। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেইনি। সৎ মায়ের অ’ত্যাচা’র সহ্য করতাম। কাউকে কিছুই বলিনি। মামনি যখন সব জেনে গেলো তখন আমার উপরে দ’য়া দেখাতেই নিয়ে গেলো আমাকে। বাপিও খুব ভালোবাসতো। ধীরে ধীরে আমার শরী’র খারা’প হতে শুরু করে। মামনি অনেক চেষ্টা করে আমাকে সু’স্থ করে তুলতে। কিন্তু লাভ হয়না। আর আমার ট্রি’ট’মেন্ট নিয়ে যে মামনি আর বাপির ঝগ’ড়া হতো সেগুলো কিন্তু আমার চোখ এড়া’য় নি। তখন সেগুলোর কারণ না জানলেও এখন আমি জেনে গেছি। আপনি চাইলেই স’বটা আমাকে বলতে পারতেন। আমি খুব ভালো প’রিস্থি’তির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি। এই যে দেখুন আমি এক’দম ঠিক আছি।

জুনায়েদ অসহায়ের মতো তাকাল। অবনী নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করলেও তার ভেতরে কষ্ট হচ্ছে সেটা সে বুঝতে পারছে। অবনীকে এই মুহূর্তে বিদ্ধস্ত লাগছে। আর কোন কথা না বলেই অবনী নিজের ঘরে চলে গেলো। জুনায়েদ কি করবে বুঝতে পারছে না। অবনীকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা তার নেই। এই মুহূর্তে মেয়েটাকে কিভাবে সামলাবে সে। নিজেকে অসহায় লাগছে তার। হতাশ শ্বাস ছেড়ে ঘরে গেলো। অবনী বিছানায় উল্টা দিকে ঘুরে শুয়ে আছে। তার শরীর কেঁপে উঠছে। জুনায়েদ বুঝে গেলো সে কাঁদছে। ধির পায়ে বিছানায় গিয়ে বসল। অবনী বুঝতে পেরেও ঘুরে তাকাল না। জুনায়েদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
–অবনী তোমার মামনিকে বাঁ’চানো’র যথাসাধ্য চেষ্টা আমি করবো। ওনার কোন দো’ষ নেই। উনি পরি’স্থিতি’র স্বীকার। আমি সব ব্যাবস্থা করে ফেলেছি।

জুনায়েদের গলার আওয়াজ শুনে অবনী নিজেকে সামলাতে পারলো না। জুনায়েদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। জুনায়েদ শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। চুলের ভাজে হাত দিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলল
–কেঁদো না। শান্ত হও। ঠিক হয়ে যাবে।

অবনী শান্ত হল না। কাদতেই লাগল। জুনায়েদের নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে। সে চুপচাপ অবনীর কান্না সহ্য করেই যাচ্ছে। এক সময় কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো অবনী। জুনায়েদের বুকের মাঝে মাথা রেখেই বলল
–এই জীবনে আমি যাকেই আঁকড়ে ধরে বাঁ’চতে চেয়েছি সেই আমাকে ছে’ড়ে গেছে।

জুনায়েদ শক্ত করে ধরে বলল
–আমি কখনো যাবো না অবনী। বিশ্বাস করো। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকে সব সময় ভালো রাখার চেষ্টা করবো।

————
কেটে গেছে অনেকদিন। কলোরাডোর পাহাড় ঘেরা সেই বাড়িটাতে নিস্তব্ধ রাত। অফিসের কাজে কয়েকদিন যাবত জুনায়েদ খুব ব্যস্ত। খুব বেশী সময় সে পাচ্ছে না। কিন্তু অবনীর শরীর খারাপ তাই ডক্টর শাহেরকে এসে একবার দেখে যেতে বলেছে। তিনি এসে অবনীকে দেখে গেছেন। অফিস থেকে সমস্ত ক্লাস শেষ করে ফিরতে জুনায়েদের বেশ রাত হয়ে গেলো। বাসায় ফিরে সোজা নিজের ঘরে গেলো। কিন্তু অবনীকে কোথাও দেখতে পেলো না। এপাশ ওপাশ দৃষ্টি ফিরিয়েও কোথাও দেখতে পেলো না তাকে। এখন জুনায়েদের চিন্তা হচ্ছে। অবনীকে সে অসুস্থ দেখেছে। এপাশ ওপাশ তাকাতেই চোখে পড়লো টেবিলের উপরে একটা খাম। উপরে বড় বড় করে লেখা “মেঘপিয়ন”। জুনায়েদ কৌতূহল বশত সেটা হাতে তুলে নিলো। খামটা নাড়াচাড়া করে খুলে ফেললো। ভেতরের কাগজটা বের করতেই পেছন থেকে মেয়েলী মিষ্টি আওয়াজ কানে আসলো।
–মেঘপিয়নের_ডাকে আপনার চিঠি এসেছে জুনায়েদ সাহেব।

জুনায়েদ কৌতূহলী হয়ে তাকাল। অবনীকে দেখে নিয়ে বলল
–কোথায় ছিলে?

অবনী এগিয়ে এলো। মুচকি হেসে বলল
–খুলবেন না?

জুনায়েদ একটু বিরক্ত হয়েই কাগজটা খুলল। কাগজটা পড়েই থমকে গেলো। সেদিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে অবনীর দিকে তাকাল। অবনী লজ্জায় দৃষ্টি নত করে ফেললো। জুনায়েদ অবনীকে দুই হাতে ধরে বলল
–এটা কি সত্যি? তুমি প্রেগন্যান্ট!

অবনী হেসে মাথা নাড়ল। জুনায়েদ তাকে জড়িয়ে ধরল। চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো তার। অবনীকে জড়িয়ে ধরে বলল
–মেঘপিয়নের_ডাকে এতো বড় একটা খুশীর খবর আসবে সেটা আমার ধারনা ছিল না অবনী। আমার জীবনের সবথেকে সুখের মুহূর্ত আমি পেয়ে গেছি।

দুজন নীরবে দুজনকে জড়িয়ে ধরে রাখল। বাইরে ঝুম বৃষ্টি। মেঘ ডেকে উঠছে থেমে থেমে। আকাশ কাঁপিয়ে চলছে প্রেম বর্ষণ।

সমাপ্ত
(গল্পটা অবশেষে শেষ হয়ে গেলো। যারা এতদিন ধরে গল্পটা পড়েছেন সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। রিচেক করা হয়নি। ভুলভ্রান্তি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here