প্রিয় দিও বিরহ ” পর্ব-১৩

0
1070

“প্রিয় দিও বিরহ ”

১৩.

মেঝেতে ছড়িয়ে আছে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। একপাশে থেকে রক্তাক্ত কিছু টেনে আনার গাঢ় ছাপ।
দুজন লোক দাঁড়িয়ে কিছু হিসাবনিকাশ মিলানোর চেষ্টা করছে। শিমুল নামের একজনকে হাঁক ছেড়ে ডাকতেই ষোল, সতেরো বছরের ছেলেটা এসে হাজির হয়। বোঝাই যাচ্ছে সে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে ছুটে এসেছে। দু’জন লোকের মাঝে হায়দার নামের লোকটা শিমুলকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘সব পরিষ্কার করেছিস তো? স্যার কিন্তু অপরিষ্কার জিনিস পছন্দ করেনা৷ ‘

শিমুল একগাল হেঁসে বলল,

‘হেয়া মুই জানি। হের লেইগেই তো এত দৌড় দিয়া দৌড় দিয়া কাজ করবার লাগসি। ‘

‘ঠিক আছে, শোন ঐটার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এটার দিকে সবাই নজর রাখবি। ভুলেও যেন পালাতে না পারে। এটাকে যে কেনো এতক্ষণ বাঁচিয়ে রাখতে বলল স্যার, কে জানে! ‘

কথাটা বলে চেয়ারা বাঁধা যুবকের দিকে নির্দেশ করে ফজলু। ওর কথা শুনে হায়দার বলে,

‘জানিনা। শালা অনেক দিন ধরে স্যারের উপর নজরদারি করতেসিলো। কিন্তু টিকতে আর পারলো কই! ‘

বলেই দুজনে হো হো করে হেঁসে উঠলো। যেনো বিরাট কোনো কৌতুক পেশ হয়েছে এখানে। কথা বলতে বলতে বাহির থেকে হর্ণের আওয়াজ শুনলো দুজনে।
হড়বড় করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। দরজা খুলে এক সুঠাম দেহী পুরুষ প্রবেশ করলো। দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘কাজ শেষ? ‘

তিনজনই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। পুরুষটি ওষ্ঠে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল,

‘ঠিক আছে, তোমরা এখন যাও। আমি এখন এখানে কিছু কাজ করতে চাই। আমাকে একটা ধারালো ছুরি আর হাতুড়ি দিয়ে যেও। ‘

হায়দার নিচুস্বরে বলল,

‘ওসব রেডি করেই রেখেছি স্যার। আপনি চাইবেন জানতাম৷ ‘

পুরুষটি হেঁসে বলল,

‘হায়দার ওয়েল ডান। ‘

হায়দার, শিমুল আর ফজলু চুপচাপ স্থান ত্যাগ করে। তারা সবাই জানে এখানে এখন কী হবে। পুরুষটির মুখ থেকে প্রস্ফুটিত হাসিটি সরে যায়। ভেসে ওঠে তুমুল হিংস্রতা। কপালের অদৃশ্য রগগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে। এক হাঁটু মুড়ে বসে ফ্লোরে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় চেয়ারে বেঁধে রাখা যুবকটির দিকে। এতটা সময় ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেশার মতো আচ্ছন্ন হয়ে থাকলেও এখন জ্ঞান আছে সম্পূর্ণ। সে বুঝতে পারছে, এখন তার সাথে খুব একটা ভালো কিছু হবেনা। নিজেই যে নিজের বিরাট বিপদ ডেকে এনেছে সে। ভয়ে ভয়ে বলল,

‘আমাকে ক্ষমা করুন। আমি আর কখনো তার হয়ে কাজ করবো না। ‘

কথাটা বলার ঠিক এক মুহুর্ত পরই তারই দেহের থেকে আত্মা আলাদা হয়ে গেলো। পরিণত হলো লাশে। সামনের পুরুষটির সাদা পাঞ্জাবিটি রক্তে মেখে গেলো। এখন তার মুখের দিকে কেউ তাকালে বুঝতেও পারবেনা, যে সে হাতের ছুড়িটা দিয়ে এইমাত্র লোকটার মাথার উপরিভাগ কেটে দিয়েছে। মাথার উপরের অংশগুলো কেটে গিয়ে ভেতরের ব্রেইন আর রক্ত টগবগ করছে। যেন শরীরটা তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা। পুরুষটি দীর্ঘক্ষণ সেই টগবগে রক্তের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর সাইড থেকে রুমাল উঠিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলে,

‘এতোটা সহজ মৃত্যু তোকে শুধু এজন্যই দিলাম কারণ শেষ মুহুর্তে তুই ক্ষমা চেয়েছিস। ওপারে ভালো থাকিস। ‘

পুরুষটি বের হয়ে যায়। শিমুল ততক্ষণে বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

‘স্যার, এটাকেও কী সবার মতো মাটিতে পুঁতে দেবো?’

‘না, এটার মাথাটা কেটে আমার শ্বশুর মশাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে, বাকিটা টুকরো করে পাশের কুকুর গুলোকে খাইয়ে দিস। ‘

‘ওকে বস। ‘

আকাশে তিমির কেটে গিয়ে আলোর কিরণ ফুটেছে।
আঁধার কাটিয়ে আরেকটা ঝলমলে সোনালী দিনের আগমন। কী সুন্দর রোদ এসে ঘর ছুঁয়েছে! দক্ষিণা বাতাস বইছে। এলোমেলো করে দিচ্ছে ঘরের পর্দাগুলোকে। দর্পণ এক হাতে হেলান দিয়ে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি বরাবরই নিশ্চিন্ত মনে নিদ্রায় শায়িত মেহতিশা। মুখে অনবরত উষ্ণ শ্বাস পড়ায় ঘুম হালকা হয়। চোখ খুলেই দর্পণকে দেখে মুচকি হেসে দেয়। দর্পণও বিনিময়ে প্রশস্ত হাসে। মেহতিশার এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে বলে,

‘শুভ প্রভাত বউজান। ‘

‘শুভ প্রভাত। ‘

দর্পণের সাথে মিশে চোখ বুজে থাকে। দর্পণ মুচকি হেসে বলে,

‘উঠুন বউজান। তৈরি থাকুন। ‘

মেহতিশা ভ্রু কুচকে বলল,

‘কীসের জন্য তৈরি থাকবো? ‘

‘আপনার বাবাকে শান্তনা তো দিতে হবে তাই না? ‘

‘মানে? ‘

‘ফোনটা হাতে রাখুন। কখন কার মৃত্যু আসে বলা তো যায়না, ইন্না-লিল্লাহ। ‘

চলবে-
লেখিকা-নাঈমা হোসেন রোদসী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here