#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_১০
মেরি: ঈশান বেবি তুমি হলে আমার সোনার ডিম পাড়া রাজা হাঁস । তোমার সাথে এই অভিনয় করছি মাত্র তোমার ওই সম্পত্তির জন্য আর তুমি দেখতে খুবই ঝাক্কাস তাই তোমাকে নিজের করে সম্পত্তি আর রাজকুমার দুইটাই নিবো এই জন্যইতো এত প্ল্যান হাহাহা…
অন্যদিকে…..
ইসরাত: মাশাআল্লহ তোদের বাগান টা তো খুব সুন্দর।
জান্নাত: শুকরিয়া। জানিস ইসু পাখি ভাইয়ার কি ফুল পছন্দ?
ইসরাত: আমার কি জানার কথা ছিলো (জান্নাতের দিকে তাকিয়ে)
জান্নাত: তাও ঠিক। তুই জানবি কিভাবে? জানিস মানুষের গোলাপ গাঁধা বেলি ফুল পছন্দ কিন্তু ভাইয়ার পছন্দ বকুল ফুল। ভাইয়া বলতো ও নাকি ওর বউ কে কখনো উইশ করলে বকুল ফুল দিয়ে করবে।
ইসরাত: ওহহ
জান্নাত: হুম। ওই ইসু পাখি তোর কি ফুল পছন্দ রে?
ইসরাত: আমার বেলি ফুল পছন্দ।
জান্নাত: যা ভাগ হুর হুস,, তোরা দুইটা আনরোমান্টিক তোদের মাঝে কোনো রোমান্টিকতার র এই নাই। কই দুইজন গোলাপ নিয়ে একজন আরেকজন কে প্রপোজ করবি হাতে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে কথা বলবি। রোজ রাতে জোসনা বিলাসী করবি। হাতে হাত রেখে পুকুর পাড়ে বসে গল্প করবি। ঘাসের উপর ভর দিয়ে হাটবি। একজনের বুকে আরেকজন মাথা রেখে ফ্যামিলি প্ল্যানিং করবি। আর কিছু দিনের মধ্যে আমায় ফুফি বানাবি। কিন্তু তা না করে একজন বকুল আরেকজন বেলি ফুল নিয়া পড়ে আছে (মুখ বাঁকা করে বললো)
ইসরাত: বোন তুই কি কথা বলছিস নাকি কোনো মুভির কথা বলছিস । আর এইসব কি কথা বলছিস ছিঃ ছিঃ লজ্জা করে না তোর ।
জান্নাত: লজ্জার কি আছে (চোখ ছোটো করে) আমি তো রোমান্টিক কথা বলছি। আর শুন স্বামী স্ত্রী কিন্তু রোমান্স করতে পারে একাতিত্ব ভাবে। এইটা নিয়ে ইসলামে নিষেধ করে নাই।
ইসরাত: ওহহ মা আমার আমি বুঝতে পেরেছি সব এখন বাসায় চল….
জান্নাত: তোর মা আমি?
ইসরাত: নাহ ননদিনি রায়বাগিনি চলেন এখন।
পরে জান্নাত আর ইসরাত ছাদ থেকে চলে আসলো….
ঈশান: মমমমমমমমমমম আমার শার্ট কোথায়? মমমমমমম (চিল্লিয়ে)
ইসরাত রুমে প্রবেশ করে দেখলো ঈশান জোরে জোরে মা কে ডাকছে….
ইসরাত: আপনার কোনো সাহায্য লাগলে আমাকে বলতে পারেন ।
ঈশান: ওই একদম বেশি কথা বলবে না আর তুমি কে হুম যে তোমার হেল্প লাগবে আমার যত্তসব পাগল ছাগল…
ইসরাত কথাটা শুনে গায়ে মাখলো না কারণ ও বুঝে গেছে এই ছেলে ঠিক করতে হলে তাকে অনেক কাঠ খড় পুঁড়াতে হবে। তাই চুপ করে খাটের উপর বসে পড়লো….
ঈশান পুরো রুমে নিজের এদিক ওদিক সরাচ্ছে তারপর ও পাচ্ছে না তখন বলে উঠলো….
ঈশান: মানুষ যে কতটা ক্রুল হতে পারে একজন মেয়ে না দেখলে বুঝতাম না। দেখছে আমি একটা জিনিষ খুঁজছি তাও কোনো হেল্প করছে না। আচ্ছা আমি বলছি বলে কি আমাকে সাহায্য করা যাবে না। ওনি শুধু বড় বড় কথা বলতেই জানে কিন্তু ওনার এতটুকু সেন্স নাই যে বিপদগামী লোকদের সাহায্য করাও যে একটা ইবাদত। হুহহ আমি কাকে কি বলছি।
ইসরাত: এইভাবে না বললেই তো হয় যে আমার সাহায্য লাগবে এত কথা বলার কি আছে।
ঈশান: বয়েই গেছে আপনার সাহায্য আমার।
ইসরাত ঈশানের কথা টা শুনে হেসে দিলো আর ও কে শার্ট টা খুঁজছিলো টা ঈশানের সামনে ধরলো….
ঈশান: আমিই খুঁজে নিতাম এখন । আপনি কেনো ধরলেন । আপনার জন্যই তো আমি শার্ট টা খুজে পাচ্ছিলাম না।(শার্ট টা নিয়ে)
ইসরাত: আমি আপনাকে সাহায্য করছি কেননা ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে মুমিনের পারস্পরিক সম্পর্ক হলো- একটি দেহের ন্যায়। দেহের একটি অঙ্গ যেকোনো ধরনের বিপদে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য অঙ্গ তাকে সাহায্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। উদাহরণ স্বরূপ- কারো চোখে কোনো কিছু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহের অন্য সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আপন কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা সবাই কিভাবে চোখকে তার বিপদ থেকে রক্ষা করবে সেদিকে নিমগ্ন হয়ে পড়ে। প্রয়োজনে অন্যেরও শরণাপন্ন হয়। অনুরূপ কোনো মুসলমান ভাই যখন কোনো প্রকার বিপদে পড়ে, তখন অপর মুসলমান ভাইয়ের কর্তব্য হলো- তাকে সাহায্য করা। কেননা যে মানুষকে সাহায্য করে মহান আল্লাহতায়ালা তাকে সাহায্য করেন।
ঈশান: শুরু হয়ে গিয়েছে আবার, বাট আমি কি আপনার ভাই হই?
ইসরাত: ওইটা একটা বয়ান বলছি (বলেই চলে আসতে নিলে শাড়ির কুচি তে পা আটকে পড়ে যেতে নিলো)
ঈশান: ওনি দেখছি পড়ে যাচ্ছে তাই অনেক ধরলাম আর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখ বন্ধ করে আছে কি নিষ্পাপ মুখ মনে হচ্ছে কোনো পরী আমার সামনে। আল্লাহ তায়ালা যেনো খুব যত্ন করে তাকে বানিয়েছে। একটা মানুষ এত টা নিকুট কিভাবে হতে পারে ওনাকে না দেখে বুঝতাম না।(এক ধ্যানে তাকিয়ে)
ইসরাত: হটাৎ মনে হচ্ছে পড়ে যেতে চাচ্ছি তাই চোখ বন্ধ করে রাখলাম কিন্তু একি আমি তো পড়ি নাই মনে হচ্ছে বাতাসে উড়ছি তাই চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি ওনি আমার দিকে কেমন যেনো একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাই একটু নড়ে চড়ে উঠলাম….
ঈশান: ওই মেয়ে তোমার কি কোনো কাজ নেই আমাকে বিরক্ত করা ছাড়া। একটু দেখছি তাও দেও না
ইসরাত: মানে…
ঈশান ইসরাতের কথায় ঘোর কাটলো আর বুঝতে পারলো কি বলে ফেলেছে…
ঈশান: মানে আপনি ঠিক মতো চলতে পারেন না হাটতে পারেন না আবার দেখো শাড়ি পড়ছে মনে হচ্ছে ওনি শাড়ি পড়ে নাই শাড়ি ওনাকে পড়ছে। ডেড যে কোন জায়গায় থেকে এইটাকে আনছে কি জানি(বলে ইসরাত কে সোজা দাড় করিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো)
ইসরাত: আজব তো কি বলে গেলো আমায়…. আমি কি বলেছি আমায় ধরতে বলি নাই তো তাও সাহায্য করে পরে কথা শুনাচ্ছে। বলি সাহায্য করে এইভাবে খোটা দিতে নাই(একলা একলা নিজে নিজে বির বির করে)
ঈশান: তু চিজ বাড়িয়া মাস্তি মাস্তি তু চিজ বাড়িয়া মাস্ত…
ডেড: কোথায় যাচ্ছো তুমি?
ঈশান: বাহিরে যাচ্ছি ফ্রেন্ডের কাছে
ডেড: আজ তোমার বৌভাত আর তুমি বাহিরে যাচ্ছো। তা আবার আমার মুখের উপর বলছো খুবই ভালো উন্নতি হচ্ছে তোমার দিন দিন।
ঈশান: শুনো ডেড, তোমার কথায় বিয়ে করেছি, তোমার কথায় আমার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে নাই। তোমার কথায় একটা গেঁয়ো সারাদিন ভূতের মতো ঘুরে বাড়িতে তাকে বিয়ে করেছি। যে মেয়ে আমাদের সোসাইটিতে ভালো মতো চলাফেরা করতে পারবে না। আমার ফ্রেন্ডের সাথে ভালো করে কথা বলতে পারবে না না পারবে কোনো পারফরমেন্স করতে তারপর ও তোমার কথায় তাকে বিয়ে করেছি। সব যদি তোমার কথায় হয় তাহলে তো আমি আমার লাইফ টা এনজয় করার আগেই শেষ করে ফেলবো তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার কথায় বিয়ে করেছি কিন্তু আর না এখন আমি আমার নিজের মর্জি মতো চলবো আমার পথে বাধা দিবে না ওকে
ডেড: ঈশান(চড় মারত যেয়ে)
ঈশান: হাত নিচে কেনো মারও মারও তারপর কি আমায় তোমার মতো করতে পারবে না। জীবনে ও না । আর যে মেয়েটাকে এনেছো ওর দ্বারা তো কিছুই হবে না তাই বাজার থেকে একটা কাচের শপ এনে তারমাঝে রেখে দিও যদি কোনো কাজে লাগে….
এই কথা টা শুনে ঈশানের বাবার মাথায় রক্ত উঠে গেলো কেননা এতক্ষণ অনেক অপমান করাতে ওনার কিছু হয় নি কিন্তু এখন ইসরাত কে সে অপমান করছে তাই সে তখন রাগের বসে….
ডেড: ঠাস ঠাস,,,তোর সাহস কি করে হয় আমার মা কে এইসব বলার। তোকে কিছু বলে নাই বলে ভাববি না যে এই জাহেদ চৌধুরী অচল হয়ে গিয়েছে। আর কাকে তুই অপদার্থ বলছিস। আমার মা কে আরেহ আমার মা হলো এমন একজন যা তুই হাজার বার জন্ম নিলেও পারবি না । আর তুই নিজেই তো অপদার্থ এখনও বাবার টাকায় খাস। তোর সাথে আমার মা টার বিয়ে দিয়েছি যেনো তোকে একটু শুধরাতে পারে কিন্তু আমি ভুলে গেছে কাকের গায়ে ময়ূরের পেখম লাগলে যে কাক ময়ুর হয় না । তেমন তুই ও ঠিক হবি না। আর কি বলছিস তুই ড্যান্স সোসাইটি আরেহ মৃত্যুর পর এইসব যাবে না আমাদের সাথে যাবে নামাজ কুরআন ইবাদত ।
ঈশান তার বাবার কথা গুলো শুনে খুব রাগ হচ্ছে ইসরাতের উপর কেননা ওর মনে হচ্ছে এই ইসরাত এক দিনে এসেই তার বাবার হাতে তাকে এত কথা শুনাচ্ছে। তাই সে রাগে গজগজ করতে করতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো….
এইসব কিছু ইসরাত দেখছিলো আর কান্না করছিলো….হটাৎ তার কাঁধে কারো স্পর্শ পিছনে তাকিয়ে দেখে জান্নাত আর জান্নাত কে দেখে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো…
জান্নাত: ইসু পাখি ডোন্ট ক্রাই বেবি। তুই না আমার ইসু পাখি তুই না অনেক স্ট্রং। তুই তোর ওই মধুর কথায় সবাই কে ঠিক করে দিতে পারিস যেমন আমায় বানিয়েছিস।
ইসরাত: আমি কি করবো জান্নাত বুঝতে পারছি না (কান্না করে)
জান্নাত: তুই জানিস না আল্লাহ তায়ালা যা করেন ভালোর জন্য করে আর দেখ ওনি হইতো তোর জন্য জিবনে এমন কোনো সারপ্রাইজ রেখেছে যাতে তুই সফল হতে পারিস। আর ইসু পাখি আমার তুই ভেঙ্গে না পরে তোর #পবিত্র_ভালোবাসা দিয়ে ভাইয়ার মনের সব অপবিত্র জিনিস কে মুছে ফেল। তুই তো জানিস #পবিত্র_ভালোবাসা পারে না এমন কোনো কিছুই নাই । আর তোদের এই #পবিত্র_ভালোবাসার কাছে শয়তান ঠিকই হার মানবে আমি সিউর। আর একটা কথা কি জানিস ভাইয়া এখনও শয়তানের পরিচালনা থেকে নিজেকে বের করতে পারে নাই আর “অজ্ঞ ব্যাক্তি নিজের ভাল নিজেই বোঝে না, তাছাড়া অন্যের উপদেশ তাচ্ছিল্যের সাথে প্রত্যাখান করে।” এইটা তো জানিস তাই না..?
জান্নাতের কথা শুনে ইসরাতের একটি আয়াতের কথা বলে হলো ১১ বার পড়লে মনের প্রশান্তি ঘটে আর এই দোয়া টি ফরজ নামাজের পড়া উত্তম ঠিক এমন জোহরের আযান তার কানে বেজে উঠলো তাই সে দেরি না করে চলে গেলো নামাজ পড়তে…..
দোয়া টি হলো…
ফাসতাকিম কামা উমিরতা- ওয়ামান তাবা মাআকা, ওয়ালা তাতগাও ইন্নাহু বিমা তা’মালুনা বাসির।’
যার অর্থ হলো…
সুতরাং (হে পয়গম্বর) তোমাকে যেভাবে আদেশ করা হয়েছে তাতে (সরল পথে) দৃঢ়ভাবে অবস্থান করো, তুমি এবং তোমার সঙ্গে যারা (আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছো (সবাই, সঠিক পথ থেকে) সীমালংঘন করো না। তোমরা যা করো তিনি (আল্লাহ) তা ভালোভাবেই দেখেন।
প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর বর্ণিত আয়াতখানা ১১ বার করে পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ মনের অস্থিরতা দূর হবে। অন্তরে প্রশান্তি মিলবে।
অন্যদিকে….
হাই বেবি কি হয়েছে তোমার তোমাকে মনে হচ্ছে তুমি কিছু কারণে আপসেট হয়ে আছো….
চলবে….
বানান ভঙল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
শিক্ষণীয় কিছু কথা: আমরা একে উপরের উপকার করবো তাহলে ওই ব্যাক্তি কিন্তু আপনার বা আমাদের ভালো সব সময় বলবে আর এই কারণে কিন্তু আমাদের পাপের পাল্লা কম হবে আর পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে। আর গল্পে যে দোয়া টি দেওয়া হয়েছে টা ফরজ নামাজের পর ১১ বার পড়তে হয় আর ফলে মনের অশান্তি অস্থিরতা দূর হয়। ☺️