পবিত্র ভালোবাসা❣️পর্ব-৯

0
1527

#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_৯

কথা বলতে না বলতেই ঈশান আসলো….

ঈশান: হোয়াটটটট

ঈশানের গলার শব্দ পেয়ে ইসরাত অনেকটা ভয় পেয়ে যায়…

ঈশান: দাদিমা কি বলছো তুমি এই গেঁয়ো ভূত টাকে দেখাবো তাও আবার আমার ফ্রেন্ডদের বা বাসার গেস্টদের, কিভাবে বললে তুমি?

দাদিমা: এইটাই তো নিয়ম দাদুভাই

ঈশান: কিসের নিয়ম হুম আমি মানি না এইসব এমনেতেই তো জোর করে বিয়ে করতে বাধ্য করেছো এখন আবার এইসব ফালতু নিয়ম গুলো ফলো করতে বলবে না (এই কথা বলেই হনহন করে হেঁটে চলে গেলো)

ইসরাত ঈশানের এই কথাটা শুনে অনেক খুশি হয় কেননা যতই তাকে অপমানে এই কথাটা বলা হোক এই ঈশানের কারণে কিন্তু তাকে অন্য ছেলে বা পুরুষ রা দেখতে পারবে না। তার মনে যেনো এখন খুশি দুল দুলছে।

জান্নাত: ভাইয়া কেনো যে এমন করে, নিয়ম ও মানতে চায় না (মন খারাপ করে)

ইসরাত: ওনি তো ভালোই বলছে,

দাদিমা: ভালো বলছে মানে?আর ও তোমাকে গেঁয়ো ভূত বলেছে এইটা ও ভালো বলছে তাই না (রেগে)

ইসরাত এখন কি করবে ভেবে না পেয়ে বললো…

ইসরাত: দাদিমা ওনি চান আমি কোনো পুরুষের সামনে না যায় তাই এমন ভাবে কথা বলেছে। এতে তো মেয়েদের পর্দা নষ্ট হয় তাই না। এখন কিভাবে বলবে তা বুঝতে না পেরে এইভাবে বলে গেছে। আর নিয়ম কিন্তু ইসলামে অনুযায়ী এমন না…

জান্নাত: তো কেমন?..

ইসরাত: হুম শুন,,,,একটি বিয়ে হবার আগে কি করতে হয়। সৌন্দর্যে যতই প্রসিদ্ধ হোক তবুও তাকে বিবাহের পূর্বে এক ঝলক দেখে নেওয়া উত্তম। ঘটকের চটকদার কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা না রেখে জীবন-সঙ্গিনীকে জীবন তরীতে চড়াবার পূর্বে সচক্ষে যাচাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধনে মধুরতা আসে, অধিক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। একে অপরকে দোষারোপ করা থেকে বাঁচা যায় এবং বিবাহের পর পস্তাতে হয় না।

পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র যা দেখবে তা হল, পাত্রীর কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয়। অন্যান্য অঙ্গ দেখা বা দেখানো বৈধ নয়। কারণ, এমনিতে কোন গম্য নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করাই অবৈধ। তাই প্রয়োজনে যা বৈধ, তা হল পাত্রীর ঐ দুই অঙ্গ।

এই দর্শনের সময় পাত্রীর সাথে যেন তার বাপ বা ভাই বা কোন মাহরাম থাকে। তাকে পাত্রের সাথে একাকিনী কোন রুমে ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়। যদিও বিয়ের কথা পাক্কা হয়।

পাত্র যেন পাত্রীর প্রতি কামনজরে না দেখে। আর দর্শনের সময় তাকে বিবাহ করার যেন পাক্কা ইরাদা থাকে।

পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা বৈধ। তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বহুবার অথবা দীর্ঘক্ষণ তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়।

পাত্রীর সাথে মুসাফাহা করা, রসালাপ ও রহস্য করাও অবৈধ। কিছুক্ষণ তাদের মাঝে হৃদয়ের আদান-প্রদান হোক, এই বলে সুযোগ দেওয়া অভিভাবকের জন্য হারাম।

এই সময় পাত্রীর মন বড় করার জন্য কিছু উপহার দেওয়া উত্তম। কারণ,

‘‘স্মৃতি দিয়ে বাঁধা থাকে প্রীতি, প্রীতি দিয়ে বাঁধা থাকে মন,
উপহারে বাঁধা থাকে স্মৃতি, তাই দেওয়া প্রয়োজন।’’

তাই তখন কিছু উপহার দেওয়া উচিত। পাত্রের বাড়ির যে কোন মহিলা বউ দেখতে পারে। তবে পাত্র ছাড়া কোন অন্য পুরুষ দেখতে পারে না; পাত্রের বাপ-চাচাও নয়। সুতরাং বুনাই বা বন্ধু সহ পাত্রের পাত্রী দেখা ঈর্ষাহীনতা ও দ্বীন-বিরোধিতা। পাত্রী ও পাত্রীপক্ষের উচিৎ, একমাত্র পাত্র ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে পাত্রীর চেহারা না দেখানো। নচেৎ এতে সকলেই সমান গোনাহগার হবে। কিন্তু যে নারীকে না চাইলেও দেখা যায়, সে নারী ও তার অভিভাবকের অবস্থা কি তা অনুমেয়।

পাত্রী দেখার আগে অথবা পরে বাড়ির লোককে দেখানোর জন্য পাত্রীর ফটো বা ছবি নেওয়া এবং পাত্রীপক্ষের তা দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে বিবাহ না হলে সে ছবি রয়ে যাবে এ বেগানার কাছে। তাছাড়া ঈর্ষাহীন পুরুষ হলে সেই ছবি তার বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য পুরুষ তৃপ্তির সাথে দর্শন করবে।

তাই বলছি এইগুলো করে কিন্তু ইসলামী অনুযায়ী নিয়ম না এইগুলো হলো আমাদের এখন সমাজের নিয়ম।

জান্নাত: তাহলে যে তুই আব্বুর সামনে গিয়েছিস তখন তো পর্দা ছিলো না।

ইসরাত: এই নিয়েই ইসলামে কিছু কথা আছে। আর যাদের সামনে ইসলামে নারীরা যেতে পারবে তা নিয়ে তো একটা আয়াত আছে । যে সকল পুরুষের সামনে নারীর দেখা দেওয়া,কথা বলা জায়েজ এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন সম্পূর্ণ হারাম তাদের কে শরীয়তের পরিভাষায় মাহরাম বলে| . মাহরাম কারা? -সূরা আন নূরের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীর মাহরাম নির্ধারিত করে দিয়েছেন| পূর্ণ আয়াত টি হল – “আর মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজেদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজেদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আন-নূর:)

দাদিমা: মাশাআল্লাহ, আমার মানিক টা ঠিকই বলেছে আমার দাদু ভাইয়ের জন্য একটা হীরা হেনেছে । আসলে কি জানিস ইসরাত আমি তোকে দেখতে চাইছিলাম আমার কথায় তুই কি উত্তর দিস। সত্যিই আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি তোর কথায়।

ইসরাত: শুকরিয়া দাদিমা

জান্নাত: এখন চল ইসু পাখি তোকে আমি আমার বাগান টা দেখায়(হাত ধরে টেনে)

ইসরাত: যাচ্ছি তো এইভাবে টানাটানি করছিস কেন

জান্নাত: চল চল….

এইদিকে…

মেরি: বাহ আমার সাথে দুইদিন প্রেমের অভিনয় করে গতকাল অন্যজনের সাথে বাসর সেরে ফেললে।

ঈশান: বিশ্বাস করো মেরি আমি কিছু বুঝার আগেই ডেড…

মেরি: ঈশান তুমি এখনও ছোটো না যে তোমার ডেড তোমায় যা বলবে তাই করতে হবে।তুমি যেভাবে কথা বলছো মনে হচ্ছে ৫ বছরের একটা ছেলে কে তার বাবা জোর করে ওষুধ খাওয়ানো জন্য বলছে আর সে খেয়ে ও নিচে।

ঈশান: মেরি তুমি যদি আমার জায়গায় থাকতে তাহলে বুঝতে। আর বিশ্বাস করো মেরি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি

মেরি: ভালোবাসা মাই ফুট । তোমার যেহেতু এতই শরীলের কামনা ছিলো তো আমায় বলতে আমি তো তোমাকে অনেকবার ফোর্স ও করেছে কই তখন তো শুধু বলতে যে তুমি আমায় বৈধ ভাবে পেতে চাও অবৈধ না। আর এখন বিয়ে করেছে ফেলেছো। আসলে তোমাদের লোফার ছেলেরা মেয়েদের সাথে জাস্ট টাইম পাস করার জন্য আসে ভালোবাসতে না।

ঈশান: প্লিজ ট্রাস্ট মী মেরি, আমি তোমার সাথে কোনো টাইম পাস করি নাই আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি আর তুমি যাই বলো লোফাঙার খারাপ আমি সব মেনে নিবো বাট আমাকে ছেড়ে যেও না।

মেরি: আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো তো তুমি যাকে বিয়ে করেছো সে কি আমার থেকে সুন্দরী?

ঈশান: আই ডোন্ট নো…আমি তাকে এখনও দেখি নাই আর আমি সিউর যে ওই মেয়ে আমার মেরি থেকে কখনো সুন্দরী হবে না । আমার মেরি হলো বিশ্বসুন্দরী

মেরি: প্লিজ ঈশান তোমার ননস্টপ কথা গুলো বন্ধ করো আর হে আমি জানি আমি কেমন আর একটা কথা শুনে হাসি পাচ্ছে যার সাথে গতকাল তোমার বাসর হলো তুমি নাকি তাকে দেখই নাই নাইস জকিং ঈশান।

ঈশান: ওই মেয়ের সাথে আমার এখনও এমন কিছু হয় নাই মেরি কেননা আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি আর তোমার জন্য আমি সব করতে পারি যদি তুমি চাও আমি আমার ডেডের সমস্ত সম্পত্তি ত্যাগ করে তোমার কাছে চলে আসবো।

মেরি: ঈশান বেবি এইসব কি বলছো আমি জাস্ট দেখছি তুমি আমায় ভালোবাসো নাকি এইজন্য তো তোমার সাথে অভিনয় করছি

ঈশান: সত্যি

মেরি: হুম,,, আচ্ছা বেবি বাই পরে কথা হবে

ঈশান: ওকে মেরি ডার্লিং ,,,,উম্মাহ

মেরি: উম্মাহ টু….

ফোন রাখার পর ঈশানের মনে হলো ওর মন থেকে অনেক বড় একটা বুঝা কমে গেছে আর এইদিক দিয়ে….

মেরি: ঈশান বেবি তুমি হলে আমার সোনার ডিম পাড়া রাজা হাঁস । তোমার সাথে এই অভিনয় করছি মাত্র তোমার ওই সম্পত্তির জন্য আর তুমি দেখতে খুবই ঝাক্কাস তাই তোমাকে নিজের করে পেতে তখন সম্পত্তি আর রাজকুমার দুইটাই নিবো এই জন্যইতো এত প্ল্যান হাহাহা…

চলবে…

বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

শিক্ষণীয় কিছু কথা: পর্দা এমন একটি জিনিস যা রক্ষা খুবই কঠিন আমার খুবই সহজ। হুম যারা আল্লাহ তায়ালার আদেশ নির্দেশ মেনে চলে নবী রাসূল গণের দেখানো পথে চলে মৃত্যুর পর পরকাল বলে কিছু আছে বিশ্বাস করে আল্লাহ তায়ালা কে ভয় পাই তাদের জন্য পর্দা রাখা কঠিন কোনো ব্যাপার না। আর আমি গল্পে বলেই দিয়েছি কাদের কাছে পর্দা করা জায়েজ আর কাদের কাছে পর্দা না করেও যাওয়া যায়। ☺️ যদি কিছু ভুল হয়ে থাকে তাহলে কমেন্ট করে বলবেন প্লিজ। তাহলে পরবর্তীতে এই ভুল না করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here