#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_২৫
ঈশান: খুঁজ নেই না বলেই তো আজ কার সাথে বিয়ে তার নাম জানতে গিয়েছিলাম……
ঈশানের বাবা: জেনেই তো গিয়েছো তাহলে আবার আস্ক করছো কেনো?
ঈশান: তুমি অর্নিলের সাথে জান্নাতের বিয়ে ঠিক করেছো এই কথাটা আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না।
ঈশানের বাবা: প্রয়োজন মনে করি নাই বলেই তো জানাই নাই তোমাকে
ঈশান: ডেড
ঈশানের বাবা: আর কি কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে তোমার?
ঈশান: নো ডেড…
ঈশানের বাবা চলে যায় আর ঈশান ওর রুমে চলে যায়…
ঈশান: সবাই আমায় ভুলে যাচ্ছে সবাই আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। অর্নিল আমি অনেক আগেই বুঝতে পারছি যে তুই জান্নাত কে লাভ করিস। কারণ তুই কথায় কথায় জান্নাতের কথা বলতি তাই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে তুই জান্নাত কে পছন্দ করিস কিন্তু কোনোদিন তোকে আস্ক করি নাই কজ ভেবেছিলাম হইতো তুই আমায় বলবি কিন্তু তুই কোনোদিন বললি না আমায় আর আজ আমি জানতে পেরেছি কিন্তু তুই একটি বারো বললি না এমনকি আমার ডেড ও বললো না আজ আমি আমার পরিবার বন্ধু সব হারিয়ে ফেলেছি(কান্না করে)
এইসব কিছু ইসরাত দরজায় দাড়িয়ে শুনছিলো ওর ও খুব কান্না পাচ্ছে ঈশানের কথা শুনে….নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে হুহুহু করে কেদে উঠলো ইসরাত…..
হটাৎ কারো কান্না শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি ইসরাত কান্না করছে । ও কেনো কান্না করছে বুঝতে না পেরে আস্ক করলাম….
কান্না করছো কেনো?
আমি কারো কান্না দেখলে থাকতে পারি না আমারও খুব কান্না পায় তাই আমি ও কান্না করে দেই(কান্না করে)
ঈশান ইসরাতের কথা শুনে হাসবে নাকি কান্না করবে বুঝতে পারছে না অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,……
একবার আমার মামার মেয়ের একটা কানের দুল হারিয়ে গিয়েছিলো ও ভয়ে খুব কান্না করছিলো ওর কান্না দেখে আমি ও কান্না করে দেই(কাদছে আর নাক টানছে 😶)
ঈশান এখন ইসরাতের কথা শুনে খুব জোরে হেসে দিলো এই রকম বাচ্চাদের মতো ও কেউ কাদতে পারে হাহাহা….
হাসবেন না তো আমি কি করবো হুম আমার কান্না পাইলে কি আর আমি আটকিয়ে রাখবো নাকি পরে তো দম বন্ধ হয়ে আসবে আমার….
আহারে বাচ্চা মেয়ে টা কিভাবে কান্না করছে বলে ওর রুমাল টা দিলো …
এই নাও চোখ মুছো ….
ইসরাত চোখ মুছার সাথে সাথে নাক ও পরিষ্কার করলো….
ঈশান তো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ইসরাতের দিকে…..
এই নিন আপনার রুমাল….
নানা ন না লাগবে না তোমার কাছেই রেখে দাও কখন আবার কাজে লাগে তোমার…
ইহহ এখন রেখে দেই পরে এসে এইটা নিয়ে বকবে 😒
না বকবো না তুমি রেখে দাও….
হুম(আবারো নাক পরিষ্কার করে)
ঈশানের ফোন বেজে উঠলো দেখলো অর্নিল ফোন দিয়েছে…..
ফোন ধরার পর ঈশান কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্ণিল বলে উঠলো…..
এখন একটা কথা না বলে আমাদের আড্ডাখানায় আয় জরুরি কথা আছে বলেই ফোন কেটে দিলো….
কে ফোন দিলো আপনি হেলো ও বলতে পারলেন না আবার কেটে দিলো…?
অর্নিল….
ওহহ কিন্তু কে ওনি আপনার বন্ধু..?
শুধু বন্ধু না সাথে বোনজামাই(হাসি দিয়ে)
মানে জান্নাতের….
হবু বর। আচ্ছা আমি আসছি টাটা….
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু….
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু…
ঈশান চলে যাবার পর জান্নাত আসলো….
জান্নাত: ওই ইসু পাখি আব্বুর সাথে ভাইয়ের আবারো ঝগড়া হয়েছে আর জানিস আমার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে?
ইসরাত: হুম জানি,,,,
জান্নাত: আমাকে আগে বললি না কেনো?
ইসরাত: আমি তো এই মাত্র জেনেছি
জান্নাত: অর্ণিল ভাইয়ার সাথে বিয়েটা হচ্ছে তাহলে(মন খারাপ করে)
ইসরাত: আরেহ জানু পাখি মন খারাপ করবি না মহান আল্লাহ তায়ালা যা করে ভালোর জন্য করে।
জান্নাত: হুম বাট জানু পাখি কে?
ইসরাত: হিহিহিহি তুই যেমন আমায় ইসু পাখি ডাকিস তাই আমি ও তোকে জানু পাখি বলে ডাকবো।
জান্নাত: কি সুন্দর নাম (ইসরাতের গাল টেনে)
ইসরাত: ওইটা তুন্দর হবে না
জান্নাত: তুন্দর আর সুন্দর একই কথা হিহিহিহি
ইসরাত: ওলে আমার দুষ্টু ননদিনিরে…..
জান্নাত: তুই ও কিন্তু কম না
জান্নাত: আগামীকাল কলেজ যাবো
ইসরাত: আচ্ছা…..
ইসরাত আর জান্নাত গল্পে মেতে উঠলো….
অন্যদিকে……
আমার ভুল হয়েছে আমার মাফ করে দে আমার তোকে আগেই বলার দরকার ছিলো ওইদিন এই কারণেই আসছিলাম কিন্তু মেরির কথা গুলো শুনে চলে গিয়েছিলাম …… অর্নিল বললো….
ঈশান: মানে কখন
তিয়াস: যেদিন আমাদের নিয়ে মেরি তোকে কু মন্ত্রণা দিয়েছিলো ওইদিন….
ঈশান: সরি রে,,,ওইদিন মেরি সত্যিই একটু বেশি বলে ফেলেছিলো ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি….
অর্নিল: হালা আর একবার যদি ক্ষমা চাওয়ার কথা বলিস তাহলে তিন রাস্তার পাশে বসিয়ে সবার সামনে ক্ষমা চাওয়াবো….
ঈশান: আপনাকে তো এখন আর কিছু বলতে পারবো না কজ এখন তো আপনি আমার বোনজামাই আর তিনদিন পর তো বিয়ে আপনার…..
অর্নিল: কতদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চাচ্ছে আমার।
তিয়াস: তোর তো তাও হচ্ছে আমার বিয়াইন তো আমাকে পাত্তাই দেয় না।
ঈশান: কেনো আজ ও কি উত্তর দিলো না
অর্নিল: আর দিবেও না বিয়াইন হইতো বুঝে গিয়েছে ওইটা মানুষের রক্ত না মুরগির রক্ত
বলেই ঈশান আর অর্নিল হাসা শুরু করলো…..
তিয়াস: আমারও সময় যে এখন খারাপ বুঝবার পারছি তাই কিছু কইতাম না কইলে কি আর মার্কেট পাওন যাইবো
ঈশান: এইটা অনেক আগের ভাইরাল হয়ে যাওয়া তাহেরি ডাইলগ এইটা এখন বাদ দে…..
তিয়াস: আমি কিন্তু সত্যিই মিশু কে খুব ভালোবাসি কিন্তু ও আমায় ট্রাস্ট করে না আর করবেই বা কি করে আমি তো ওর বিশ্বাসের যোগ্য না (মন খারাপ করে)
অর্ণিল: আরেহ yaar মন খারাপ করিস না দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে…..
তিনজন অনেক আড্ডা দিলো….
ইসরাত: একটা কথা বলবো কি?
ঈশান: হুম বলো?
ইসরাত: আগামীকাল আমি আর জান্নাত কলেজ যেতে চাচ্ছি যাবো কি?
ঈশান: তিনদিন পর ওর বিয়ে ও এখন কলেজ যাবে। আর তার চেয়ে বড় কথা যে মেয়েকে রোজ বকাবকি করে কলেজ পাঠানো হতো সেই মেয়ে কিনা বিয়ের দুই দিন আগে কলেজ যেতে চাচ্ছে স্ট্রেঞ্জ…..
ইসরাত: একদিনেই তো আর সারাদিন বাসায় বসে বসে আর ভালো লাগছে না
ঈশান: আচ্ছা যাও…. আর একটা কথা….
ইসরাত: হুম বলেন…?
ঈশান: তোমার নাম তো চেঞ্জ করা দরকার । ইসরাত জাহান মাওয়া ওরফে ইসরাত চৌধুরী….
ইসরাত: কিন্তু কেনো?
ঈশান: বিয়ের পর তো বাবার পদবী চেঞ্জ করে স্বামীর পদবী লাগাতে হয়
ইসরাত: কে বলেছে আপনাকে?
ঈশান: এইটাই তো দেখছি এখন সোসাইটির নিয়ম….
ইসরাত: এইটা সম্পূর্ণ ভুল নিয়ম…
ঈশান: তাহলে ঠিক টা কি?
ইসরাত: নিজ পরিবারের ও বংশের নাম পরিবর্তন করে অন্য পরিবারের ও বংশের নাম লাগানো সম্পূর্ণ হারাম এবং বড় গুনাহ। আর এটা হচ্ছে জাহেলিয়াত ও বিজাতীয় অনুসরণ। আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর স্ত্রীদের নামের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাবেন- তাদের নামের সাথে মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর নাম যুক্ত ছিল না, তারা তাদের নামের সাথে স্বামীর নাম যুক্ত করেন নি। বরং তাদের নামের সাথে তাদের পিতার নাম যুক্ত ছিল। উদাহরনঃ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর বিয়ের পরেও তাঁর নামের সাথে “সিদ্দিকা” তাঁর পিতার নাম যুক্ত ছিল। তাঁর নামের সাথে মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর নাম যুক্ত করে “আয়েশা মুহাম্মাদ”রাখা হয় নি।
তেমনি রাসুল (ছাঃ)-এর অন্যান্য স্ত্রীদের নামও তাদের যার যার পিতার নামের উপরই ছিল।
যেমনঃ খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ
হাফসা বিনতে উমর
হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়া
রামালাহ বিনতে আবি সুফিয়ান
মাইমুনা বিনতে আল-হারিস ইত্যাদি।
সুতরাং কারো নাম হবে তার নামে ও তার বাবার নামে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তোমরা তাদের সন্বোধন কর তাদের বাপেদের নামে, এটিই আল্লাহর কাছে বেশি ন্যায়সংগত।” [সূরা আহযাব ৫]
হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতার নামে। অতএব তোমাদের নামগুলো সুন্দর করে রাখ। (আবু দাউদ, বায়হাকী ও মুসনাদে আহমদ)
আবূ যার (রা) থেকে বর্ণিত,
নবী (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, কোন ব্যক্তি যদি নিজ পিতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অন্য কাকে তার পিতা বলে দাবী করে তবে সে আল্লাহর (নিয়ামতের) কুফরী করল এবং যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সাথে নসবী সম্পৃক্ততার দাবী করল, যে বংশের সাথে তার কোন নসবী সম্পর্ক নেই, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়। [বুখারি ৭১১]
নবী (ছাঃ) আরো বলেন, “যে ব্যক্তি তার পিতা বাদ দিয়ে অন্যের সাথে সম্পর্কের দাবি করে পরিচয় দেয় অথবা নিজের মনিবকে ত্যাগ করে অপরকে মনিব বলে পরিচয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল এবং সকল মানুষের অভিশাপ। তার নফল বা ফরয কোন ইবাদতই কবুল করা হবে না।” [ইবনে মাজাহ ২৫৯৯]
যেহেতু স্বামী রক্ত সম্পর্কে অন্য বংশের তাই তার নাম নিজের বংশীয় নাম পরিবর্তন করে লাগানো যাবে না। আর এটা এক ধরনের জাহেলিয়াত ও বিজাতির অনুসরণ।
উল্লেখ্য, হিন্দু ধর্মে কোন মেয়ে যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন তার নিজের বংশ, গোত্র তথা জাত পরিত্যাগ করে স্বামীর জাত গ্রহণ করে যা ৭ (সাত) জনম পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তাই স্ত্রীর নামে বিয়ের পরে তার নিজের গোত্রের টাইটেল ছেড়ে স্বামীর গোত্রের টাইটেল সংযুক্ত হয়, যেমনঃ স্ত্রীর নাম ছিল আম্রুপালি দাস, বিয়ের পর হল আম্রুপালি সরকার যেহেতু স্বামীর নাম বিপ্লব সরকার।
শত শত বছর ধরে এই উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম এক সাথে বসবাস করে আসছে এবং এর ফলশ্রুতিতে ধর্মের ভেতর প্রচুর সংমিশ্রণ ঘটেছে, যেমনঃ গায়ে হলুদ, বিয়েতে গান-বাজনা, কপালে টিপ, স্ত্রীর নামের পরিবর্তন ইত্যাদি যা কখনই ইসলামে ছিল না তা এখন আমাদের সমাজে নির্দ্বিধায় প্রচলিত হয়ে আসছে।
অতএব, বিয়ের আগে এবং পরে নারীরা সব সময়ই নিজের পিতার নামে পরিচিত হবে। বিয়ের পরে নামের সাথে স্বামীর নাম লাগানো- এটা সম্পূর্ণরূপে ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের তথা বিধর্মীদের সংস্কৃতি।
মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, “ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা জাতি হিসেবে নির্বোধ, কারণ তারা ইব্রাহীম (আঃ) এর দ্বীনে হানীফ (এক আল্লাহর ইবাদত করা এবং সমস্ত শিরক থেকে বেঁচে থাকার ধর্ম) থেকে ফিরে কুফুরীতে লিপ্ত হয়েছে।” সেজন্যে ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের তথা বিধর্মীদের সংস্কৃতি অনুকরণ করা মুসলমানদের জন্যে হারাম। একবার চিন্তা করে দেখুন, এই কাজটা কত বোকামী। এক মেয়ে বিয়ের পরে স্বামীর নাম যুক্ত করলো, হয়তো কোন একসময় তালাকপ্রাপ্ত হয়ে বা স্বামীর মৃত্যুর কারণে অন্য পুরুষের ঘরে গেলো। তখন আবার তাকে নাম পাল্টাতে হবে। ইসলাম আমাদেরকে নিজের বাবার নামে পরিচিত হতে আদেশ করেছে। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের দ্বারা একজন নারীর প্রকৃত পরিচয় হতে পারে না।
ইবনু উমার (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের অনুকরণ করবে সে ঐ কাওমের বলেই গণ্য হবে।” [বুলুগূল মারাম ১৪৭১]
ঈশান: আমার একটা কথা খটকা লাগছে…
ইসরাত: কোন কথা…
ঈশান: মহান আল্লাহ তায়ালা…..
চলবে…..
বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
যারা যারা তিয়াস ভাবছিলেন তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা জানালো হলো 🤭