#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_৩০
মেরি দৌরে এসে সবার সামনে ঈশান কে জড়িয়ে ধরলো…..
ঈশান: কি করছো কি মেরি? সবাই আছে এইখানে ছাড়ো বলছি।
মেরি: কেনো ছাড়বো আমি হুম। আর তুমি তো দেখছি এখন মহা পুরুষ হয়ে গেছে। একদম সাধু। মনে হচ্ছে ভাজা মাছটি উল্টিয়ে খেতে জানো না আজকাল(চিল্লিয়ে)
ঈশান: মেরি তুমি কিন্তু এইবার লিমিট ক্রস করে ফেলতেছো । কি হয়েছে কি আগে সেটা বলো?
ঈশানের মা: ঈশান এই বিয়াদব মেয়েটা কে? আর আমাদের বাসায় বা কেনো এসেছে? আর এই মেয়ে তোমার কি লজ্জা শরম কিছুই নেই। বড়দের সামনে এইসব কি ড্রেস পড়েছে আর একজন বিবাহিত ছেলে কে এসে সবার সামনে জড়িয়ে ধরেছো তুমি তো আমাদের নারী জাতির কলঙ্ক।
মেরি: মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ । আর এইসব কি বলছেন আপনি? শুনুন এইটা ডিজিটাল যুগ। এইসব ড্রেস এখন কমন। আপনাদের বাসায় এসেছি বলে তো আজ মিনি স্কার্ট আর জিন্স পড়ে এসেছি নাহলে তো ট্র্যাঙ্ক টপস আর কেপ্রি শর্ট ট্রাউজার পড়ে আসতাম। আপনাদের তো গর্ববোধ করা উচিত আমাকে নিয়ে এখনও আপনাদের পরিবারের সাথে না মিশে নিজেকে বদলিয়ে নিচ্ছি।
ঈশানের বাবা: শাট আপ । ঈশান এই মেয়ে কে ?!আর এই মেয়ে কি বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলে তা এখনও শিখে নাই।
মেরি: বেবি দেখো তোমার ডেড কি বলছে আমায় এইসব। কিছু তো বলো। আর হুম আমি বুঝতে পেরেছি ওনাদের বয়স হয়েছে বিধায় এইসব আবোল তাবোল বলছে কিন্তু সমস্যা নাই কিছুদিন পর ওনাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবো ওইখানে আরো বুড়োদের সাথে থেকে থেকে ঠিক হয়ে যাবে।
ঈশান এতক্ষণ ঠিক ছিলো কিন্তু ওর আব্বু আম্মু কে এইসব বলায় নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে খুব জোড়ে মেরি কে থাপ্পড় মারে আর থাপ্পড় খেয়ে মেরি নিচে পড়ে যায়। জান্নাত তো এইটা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে কেউ বলবে না ওর যে বিয়ে। কেননা বিয়ের কনে যে এইভাবে হাসতে পারে কারো জানা ছিলো না।
ইসরাত এতক্ষণ চুপ ছিলো ঈশান যখন আবার যাবে মেরি কে মারতে ইসরাত গিয়ে ঈশানের হাত ধরে নেয়।
ইসরাত: কি করছেন কি আপনি । আপনি ভুলে গেছেন একজন পর নারী কে মারা ঠিক না।
ঈশান: তুমি কি দেখতে পারো নাই যে ও আমার ডেড আর মম কে কি বলেছে(দাঁতে দাঁত চেপে)
ইসরাত: এইটার শাস্তি কিন্তু ওনি পেয়েছে । এই ঘর ভরা মেহমানদের সামনে ওনাকে চড় মেরেছেন এইটাই তো ওনার শাস্তি। তাই আর এইসব ঝামেলা না করাই ভালো।
মেরি: এখন তোমার স্বামী কে নিয়ে এই ঘর ভর্তি মানুষের এমন কথা বলবো যা তুমি ভাবতেই পারবে না
ঈশান: ছিঃ ছিঃ মেরি তুমি এতটা নিচু জানতাম না আমি। অর্নিল তিয়াস ঠিক কথাই বলেছিলো তাহলে
মেরি: আমি নিচু হলে তো তুমি ওভার নিচু তুমি যে আমার সাথে কি করেছে ভুলে গেছো সব?
ঈশান: না ভুলি নাই শুধু তোমাকে খুব ভালোবাসে ছিলাম নিজের থেকেও বেশি তার শাস্তি এই এখন পাচ্ছি। এইভাবে তুমি আমাকে ধোঁকা দিতে পারলে। আমি সত্যিই খুব বোকা মেরি
মেরি: বোকা তুমি না আমি। কজ তোমার ভালোবাসা কে বিশ্বাস করে তোমার সহজ সরল হাবলা টাইপের চেহারা দেখে আমি নিজেকে তোমার কাছে বিলিয়ে দিয়েছিলাম আর তুমি আমার সেই সুযোগ নিয়ে এখন আমাকে ছেড়ে দিচ্ছো কিন্তু এই মেরি কিন্তু তা হতে দিবে না।
ইসরাতের আম্মু: মানে কি বলছো তুমি?
মেরি: ঈশান আমার সাথে ফ্লাট করেছে ওর বাচ্চা এখন আমার পেটে।(কান্না করে)
ঈশান আর ইসরাত মনে হয় আকাশ থেকে পড়ছে। ইসরাত তো ঈশানের দিকে তাকিয়ে আছে
ঈশান: মেরি তুমি জানো যে আমি মিথ্যাবাদীদের ঘৃনা করি আর তুমি কিনা আমার চরিত্র নিয়ে এইসব বলছো।
মেরি: আমি জানি এমন কিছু হবে তাই তো প্রমাণ নিয়েই এসেছি। এই দেখো ছবি আর এই যে রিপোর্ট।(ইসরাতের হাতে দিয়ে)
ইসরাত রিপোর্ট টা দেখলো আর ওইখানে সত্যিই লিখা বাচ্চাটা ঈশান আর মেরির। আর ছবি গুলো দেখে ও সাথে সাথে নিচে ফেলে দেয় আর ছলছল চোখে ঈশানের দিকে তাকিয়ে থাকে
ঈশান ছবি আর রিপোর্ট দেখে বলে…
ঈশান: এইসব কিছু বানানো আমি এতটাও খারাপ না যে এইসব কিছু করবো
মেরি: ছিঃ ছিঃ ঈশান ওইদিন তো তুমিই অনেক ড্রিংস করেছো আর আমার সাথে(বলে কান্না করতে লাগলো)
জান্নাত: এই মেয়ে নিজের চরিত্র নিয়ে এইসব বলতে তোমার লজ্জা করে না বেহাইয়া মেয়ে মন চাইতাছে অ্যালোভেরা আর নিম পাতা মিক্স করে জুস বানিয়ে তাতে একটা তেলাপোকা ছেরে দিয়ে ওইটা খাওয়াই ফাজিল মেয়ে কোথাকার।
মেরি: বেশি কথা না বলে পিক আর রিপোর্ট দেখো আর এইটা কিন্তু মিথ্যা না চাইলে তোমরা ডক্টর কে ফোন দিতে পারো আর পিক গুলো যে এডিট না তোমরা দেখেই বুঝতে পারছো।
জান্নাত পিক গুলো দেখে ওর ভাই কে আস্ক করলো…
জান্নাত: ভাইয়া এইসব কি
ঈশানের জান্নাতের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো কেননা ওর মনে নেই এইসব কিছু কিন্তু হলেও হতে পারে যেহেতু ড্রিঙ্কস করেছে তাই…
ঈশানের বাবা এসে ছেলে কে সবার সামনে জোরে কোষে একটা থাপ্পর মারে
তোকে তো আমার ছেলে বলতেও ঘৃনা হচ্ছে। না জানি কি পাপ করেছিলাম সেই জন্য তোর মতো একটা ছেলে কে জন্ম দিয়েছি
ঈশানের মা: কোন পাপের বিনিময়ে তোর মতো ছেলে কে যে পেটে ধারণ করেছিলাম জানি না। আগে জানলে তোকে আগেই মেরে ফেলতাম(কান্না করে)
ইসরাতের বাবা: ভাই তোর উপর ভরসা করে আমার মা টাকে এই বাড়িতে বিয়ে দিয়েছি কিন্তু তোর ছেলে যে এতটা খারাপ তা আগে আমাদের কেনো বললি না।
ইসরাতের মা: আমি আগেই বলেছি যে সব ভেবে চিন্তে করবে এখন দেখো আমার মেয়েটার কি একটা অবস্থা(ইসরাত কে ধরে কান্না করছে)
এইদিকে ইসরাত যেনো পাথর হয়ে গেছে ওর মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছে না। ও এতদিনে ঈশান কে ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু ঈশান কি এই কাজ আজও করতে পারে এই নিয়ে সে দু টানায় আছে যেহেতু ঈশান ও ঠিক করে কিছু বলতে পারছে না….
ঈশানের বাবা: তুই এখনই এই মেয়ে কে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি জীবনেও তোর মুখ দেখতে চাই না আমি। আর তোর মতো সন্তান বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। বের হয়ে যা (জোড়ে চিল্লিয়ে)
মেরি: দেখো ঈশান এই মেয়ের জন্য আজ তুমি তোমার পরিবার কে হারাচ্ছো এই মেয়ে তোমার জিবনে লাকি না আনলাকি (এই কথা বলে মেরি চলে গেলো যেহেতু ওর কাজ শেষ মুখে একরাশ হাসি দিয়ে ইসরাতের কানে কানে বললো ) দেখো তোমার #পবিত্র_ভালোবাসা কিন্তু আমার অবৈধ ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়েছে। আর ঈশান কে বললো তুইমি চাইলে আমার কাছে আসতে পারো আমি কিন্তু ফিরিয়ে দিবো না শত যাই হোক তুমি কিন্তু আমার সন্তানের পিতা।
ঈশানের বাবা ঈশান কে ঘর থেকে বের করে দিলো….
পুরো বাড়ি একদম নিস্তুব। ইসরাত ওর রুমে একা চুপচাপ বসে ছিলো…. অর্ণিল আসলো আর সালাম দিলো(রুমের বাহিরে থেকে)
ইসরাত সালামের জবাব নিয়ে পর্দার হারালে চলে গেলো….
অর্ণিল: ভাবি আমি কিছু দরকারি কথা বলবো এইখান থেকেই বলি
ইসরাত: জ্বি ভাইয়া বলেন
অর্ণিল: ভাবি আমার দৃঢ় বিশ্বাস ঈশান এই রকম কাজ কোনোদিন ও করতে পারবে না। ওর প্রতি এই বিশ্বাস আমার আছে। প্লিজ ওকে রেখে যাবেন না। ও তাহলে খুব একলা হয়ে যাবে। আর ঈশানের প্রতি মনে হচ্ছে খুব বড় একটা ষড়যত্ন করা হয়েছে। আর মেরি মেয়ে টা কিন্তু ভালো না ভাবি। তাই যা সিদ্ধান্ত নিবেন ভেবে চিন্তে নিবেন। এইটুকু অনুরোধ রইলো ভাবি।
এই কথাগুলো বলে অর্ণিল চলে গেলো
ইসরাত কিছুক্ষণ ভেবে জান্নাতের রুমে গেলো আর মুখে হাসি নিয়ে বললো….
বাবা বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করুন। আর এইসব ব্যাপার আপাতত বন্ধ থাকুন । দয়া করে এইসব আর বলবেন না।
ইসরাতের কথায় আর কেউ কিছু বললো না। ওরা বিয়ের কাজ শেষ করলো জান্নাত ও চলে গেলো ওর শশুর বাড়ি। বাড়ি ভর্তি মেহমান ও চলে গেলো । বাড়ি এখন খুব চুপচাপ। ইসরাতের বাবা মা থেকে গেলো। রাতে ইসরাত ওর বাবা – মা কে বললো….
আমি এখন এই বাড়িতেই থাকতে চাই। আর বাবা মার কাছে এখন কেউ নেই আমি ছাড়া। প্লিজ তোমরা না করো না।
ইসরাতের বাবা মা আর কিছু বললো না।
ইসরাতের এখন জান্নাত কে খুব দরকার ছিলো। কারণ জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে ওর কান্না করতে খুব মন চাচ্ছে….
ঈশান মেরির কাছে না গিয়ে ও ক্লাবে গেলো আর প্রচুর ড্রিঙ্কস করতে লাগলো তিয়াস মানা করা সত্ত্বেও ও তিয়াসের কথা শুনলো না। পরে তিয়াস রাগ করে চলে গেলো।
অন্যদিকে….
মেরি: ইসসসসসস ডার্লিং কি যে শান্তি লাগছে। আর ওইদিন তুমি যদি এই কাজ টা না করতে তাহলে এইসব আমি একা করতে পারতাম না। ভাগ্যিস ওই পিক গুলো তুলেছো। আর এই ঈশান তাও তো খুব নাছোড়বান্দা কত যে কষ্ট হইছিলো ওই পিক গুলো তুলতে। মাতাল থাকা সত্বেও তার মুখে শুধু ইসরাত আর ইসরাত। কত ধরে বেঁধে যে পিক তুলেছি।
নাঈম: হুম। আর ওর কাছ থেকে তো অনেক টাকা ও পেয়েছি আমি (মেরি কে জড়িয়ে ধরে)
মেরি: শুনো বেচারা কে আগামীকাল বলে দিবো আমি যে ম্যারিড। তাহলে আরেকটা ধাক্কা খাবে বেচারা পরে হইতো আর বেঁচেই থাকবে না। বলেই হাসা শুরু করলো।
নাঈম: ঠিক বলেছো পেয়ারা বিবি ।
আমাকে বাঁচাও আমি আর পারছি না বাঁচাও আমাকে।আমার ভুল হয়েছে মাফ করো আমাকে। আমি আর এইসব করবো না। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমার পুরো শরীল যেনো জ্বলে যাচ্ছে।
কি হয়েছে কি মেরি কি হয়েছে তোমার?
চলবে……..