হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-৭

0
1970

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৭
অভ্রর কথামতো ফুল চুপচাপ স্থির হয়ে বসে থাকার প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো,
-ধুর রাজপুত্রটা তো আমার চেয়ে ৬২ গুণ চতুর! বিকেল অব্ধিও তো শান্তশিষ্টই ছিলো।সন্ধ্যা থেকে এরকম পিছু লেগেছে আমার, আজ অসাধ্য সাধন করিয়েই ছাড়বে মনে হয় !আল্লাহ পাঁচ মিনিট কখন ফুরাবে!চাট্টি খানি কথা নাকি চুপচাপ স্থির হয়ে বসে থাকা!কথা বলতে দিলেও একটা ব্যাপার ছিলো!

মনে মনে বকবক করে যাচ্ছে আর দীর্ঘ প্রতিক্ষা করে যাচ্ছে কখন পাঁচ মিনিট ফুরাবে!

প্রায় দেড় মিনিট পার হওয়ার পর ফুল অভ্রর দিকে নিরীহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আস্তে করে বললো,
– অভ্র ভাইয়া!
-কথা বলা যাবে না তো!
-মশা কামড়াচ্ছে,একটু মশাটা মারি?

অভ্র ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করে ফুলের দিকে ধরে বললো,
-কোথায় মশা?
-আমার ডান হাতে!
-তোমার মারতে হবে না, আমি মেরে দিচ্ছি।
-আস্তে থাপ্পড় দিয়েন!
অভ্র ঠোঁট টিপে হাল্কা হেসে দিলো,
ফুলের দিকে লাইট ধরে চেয়ার টান দিয়ে ফুলের সামনে বসলো। আর ফুলের কথামতোই ওর হাতে একটা মশা দেখতে পেলো,অভ্র কোনো প্রকার আঘাত না করে আস্তে করে এক আঙুল দিয়ে টিপ দিয়ে মশাটা মেরে দিলো।

অভ্রর মশা মারার ধরণটা ফুলের মনে ধরলো খুব।
-বাহ মশা মারার নিঞ্জা টেকনিক! ৫মিনিট শেষ হলে শিখতে হবে এটা।হেব্বি ইন্টারেস্টিং মশা মারার স্টাইল টা!

-হয়েছে মেরেছি মশা।আবার কোথাও কামড়ালে বলো।তুমি নড়বে না আর দু মিনিট আছে।
-…………………!

অভ্রর কাছে পাঁচ মিনিট হলেও ফুলের কাছে এই পাঁচ মিনিট পাঁচশো মিনিট মনে হচ্ছে।
-সময় যেনো কোনো ভাবেই পেরুচ্ছে না। উল্টো মনে হচ্ছে, সময়টাও আমার সাথে চুপচাপ স্থির হয়ে আছে!আচ্ছা উনার ঘড়িটা নষ্ট নয় তো?না তা কি করে হবে উনি তো মোবাইলে স্টপ ওয়াচ অন করেছে।(মনে মনে)

পাহাড় সমান মনে হলেও ফুলের স্থিরতার সময়কাল সফল ভাবে চার মিনিট পার হতেই অভ্রর পেছনে এসে অনু দাঁড়ালো।

-আরে ফুল তুমি এখানে!আর আমরা সবাই তোমাকে খুঁজছি।চলো তুমি না নাচ শিখবে বললে তখন।
-হ্যাঁ শিখবো তো, চলো।

কথাটা বলেই ফুল উঠে দাঁড়ালো।ওর খেয়াল ই নেই পাঁচমিনিট এখনো পূর্ণ হয় নি। উঠে দাঁড়ানোর পর মনে হলো ফুল অজান্তেই ভুল করে ফেললো, অভ্রর দিকে মাথা নিচু করে তাকাতেই দেখলো অভ্র চুপচাপ ফুলের দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে ফুলের কর্মকান্ডে খুব মুগ্ধ!
-সরি ভাইয়া।আজকে আমাকে দিয়ে হবে না।নেক্সট আরেকটা চান্স দিন।আমি কথা দিচ্ছি নেক্সট টাইম আমি ১০ মিনিট স্থির হয়ে থাকবো।

অভ্র ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
-পাঁচ মিনিট ই তোমায় দিয়ে সম্ভব হলো না,আর তো দশ মিনিট।
-না ভাইয়া আমি সত্যি প্রমিস করছি।আমি রুমে স্থির হয়ে থাকার প্র‍্যাক্টিস করবো তারপর আপনার সামনে স্থিরতার পরীক্ষা দেবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে যাও, দেখা যাবে পরে।তুমি গিয়ে নাচ শেখো।
-ঠিক আছে ভাইয়া আমি যাচ্ছি।

ফুল অনুর হাত ধরে যাচ্ছে তখন অভ্র পেছন থেকে অনুকে ডাক দিলো,
-অনু!
অনু পেছন ঘুরে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
-হ্যাঁ ভাইয়া?
-একটু কথা আছে শুনে যা।
-ঠিক আছে আসছি।
অনু ফুলকে বললো,
-ফুল তুমি যাও, আমি আসছি ভাইয়ার থেকে কথা শুনে।
-ঠিক আছে আমি গেলাম, তুমি আসো।

অনু অভ্রর কাছে যেতে নিলো, আর ফুল ভোঁ দৌড় মেরে নিজামদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো। মেয়েদের রিহার্সাল ওখানেই চলছে, কারণ নিজামের স্ত্রী প্রেগন্যান্ট তার উপর শরীর টা দুর্বল, হাঁটা চলা যতো কম করা যায়।সে জন্যই নিজামদের ড্রয়িংরুমে সবাই রিহার্সাল করছে আর সুমাইয়া দেখছে। ফুল ওদের কাছে যাওয়ার পর মীরা ফুলকে নাচ শেখানোর প্রস্তুতি নিলো।
মীরা আর বৃষ্টি অনেক ভালো নাচ পারে।সবাইকে ওরা দুজনই নাচ শেখাচ্ছে।

অনু অয়নীও পারে তবে ওদের দুজনের মতো এতো নিখুঁত না।

মীনা, বর্ষা আর ফুলের ভাবীদের নাচ শেখানোর পর তাঁরা আলাদা আলাদা প্র‍্যাক্টিস করছে আর বৃষ্টি তাদের নাচ ঠিক মতো হচ্ছে কিনা দেখছে।এবার ফুলের পালা,
-ফুল তুমি কি গানে নাচবে?
-একটা হলেই হলো,তবে আমি ঝাকানাকা গানে নাচবো।
মীরা হেসে দিয়ে বললো,
-ঝাকানাকা গানে নাচবে তুমি?আচ্ছা গানের নাম বলো।
-অই যে হিন্দি গান আছে না কি যেনো বলে অই গানটাই।
কি যেনো বলে! কি নাম যেনো পেটে আসছে মুখে আসছে না ।

গানের ছবিটা স্পষ্ট চোখে ভেসে উঠছে কিন্তু লিরিক্স মনে করতে পারছে না।মাথা টোকাতে টোকাতে মনে করার চেষ্টা করছে ফুল।মনে না করতে পারার কারণ গানটা হিন্দি আর ফুল হিন্দি একদম ই বুঝে না উচ্চারণ তো দূরে থাক।শুধু মাঝে মাঝে সাউন্ড বক্সে গান বাজে তখন শুনে। ফুল যে গানটার কথা বলার চেষ্টা করছে সেটা টিভিতেও কয়েকদিন দেখেছিলো যার জন্য গানটা ভালো লাগলেও ওটাতে কি বলে সেটা ফুল বুঝতে পারে না।

-কি হলো মনে পড়ছে না?
-অই যে কি যেনো বলে না গানের মধ্যে ছিটিয়া কালি দে ছিটিয়া কালি দে, বলে রাস্তার মধ্যে নাচানাচি করে। নায়িকার নাম টাও মনে আসছে না তো!

ফুলের কথা বুঝতে পারছে না কেউ, ফুলের কথাটা বুঝার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে প্রত্যেকেই ।এমন সময় কবিতা ফুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-পরী তুমি কি চিটিয়া কালাইয়া ভে গানের কথা বলছো?
-হ্যাঁ হ্যাঁ ওটাই ওটাই ওটাই!আমি অই গানটাতে নাচবো।
কিছুক্ষণের জন্য সবাই নিরবতা পালন করে নিলো ফুলের এমন আতংকময় কথা শুনে!

মীরা ফুলকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,
-ওহ তুমি ওই গানটার কথা বলছো,আচ্ছা ঠিক আছে।আসো আমি গানটা প্লে করছি,আমি যেরকম যেরকম করবো তুমিও সে রকম সে রকম করে নাচবে ঠিক আছে?
-ওকে।

গানের তালে তালে মীরা একটা একটা করে স্টেপ শেখাচ্ছে আর ফুল মীরার সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।গান ফুলের দ্বারা সম্ভব না হলেও নাচটা আজকে ফুলকে দ্বারা সম্ভব হচ্ছে একটু একটু করে।

অনু অভ্রর সামনে চুপচাপ বসে আছে। অভ্র অনুকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো ভাবেই বলতে পারছে না।
-এই ভাইয়া বলো না কি বলবে,আমার রিহার্সাল বাকি আছে।রাত তো অনেক হলো, ঘুমাতে যাবে সবাই একটু পর
-আরে বলছি এতো তাড়া কিসের!
-বললাম তো আমার রিহার্সাল বাকি আছে।
-শোন অনুষ্ঠান রাতে হবে,সো দিনের বেলা অনেক টাইম আছে।কাল সারাদিন রিহার্সাল করতে পারবি।
-আচ্ছা সেটা বাদ দিলাম,এখন বলো কি বলবে।
-বলছি বলছি।
অভ্র ভাবছে ফুলের ব্যাপার টা অনুকে বলবে।অনুর একদম কাছে গিয়ে অনুকে বলবে বলে মাথা ঝুঁকতেই, ওদের সামনে অয়ন এসে উপস্থিত হলো,
-আরে অনু তুই!আমি তো ভেবেছিলাম এটা ফুল।দূর থেকে তোকে ফুলের মতো লাগছিলো।হা হা হা,যাক ভালোই হলো ফুল নেই।
-কেনো কি হয়েছে?
অয়ন হাসতে হাসতে চেয়ার টান দিয়ে বসে বললো,
-আরে কি বলবো তোরা তো বাড়ির ভেতর সাউন্ড বক্স জুড়ে গান শুনছিলি তাই বাইরে কি ঘটছে জানতে পারিস নি।
একটু আগে আমরা বিনামেঘে বজ্রপাতের আওয়াজ শুনছিলাম।
-কি ঘটনা ক্লিয়ার করে বলোতো ভাইয়া।

অভ্র অয়নের দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-আরে ছাড়না,যেটা হয়েছে হয়েছেই। রিপিট করার প্রয়োজনটা কি!অনু তুই যা রিহার্সাল করতে যা।
-কিন্তু তুমি না কি যেনো বলতে চাইলে।
-পরে বলবো যা তুই এখন।
-ঠিক আছে গেলাম তাহলে।

অনু উঠে চলে গেলো।
অভ্র খানিকটা বাঁকা নজরে অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,
-এখন বলতো, গান চলা কালিন সবাই কোথাই উধাও হয়েছিলি?
-আরে আমরা উধাও হই নি কোথাও। আকাশদের ফ্ল্যাটে আমরা চারজন বাদে ওরা সবাই ওখানে বসে সে দেখি আড্ডা দিচ্ছে।আমরাও জয়েন করলাম ওদের সাথে।অনেক্ষণ ধরে তোর খবর নেই তাই তোর খোঁজ নিতে এলাম।
-বেঁচে আছি। আমি একটা জিনিস ভেবে খুব অবাক যে তোরা।তিনজনে বলে কয়ে ওকে গান গাইতে অনুরোধ করলি সবাই এতো না করার পরেও কোনো বাঁধা মানলি না ।আর গান না শুনেই পালিয়ে গেলি তোরা।
-কে জানে এই রকম হবে!কাব্য তো কত কিছু বলেছে ওর সম্বন্ধে কিন্তু গানের ব্যাপারে কোনো দিন কিছু বলে নি তো।
-ওকে ফরগেট ইট,বাকিরা কোথায়?
-আকাশদের ফ্ল্যাটেই।তোকে ডাকতে এলাম ওখানেই সবাই চল।
-ঠিক আছে চল।

দুজনেই উঠে দাঁড়ালো, পেছনের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার সামনের দিকে ঘুরে আকাশদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।ফুলদের ফ্ল্যাটের বাম পাশের ফ্ল্যাট বড় চাচার,আর ডান পাশের ফ্ল্যাট মামার,বড় চাচার ফ্ল্যাটের বাম পাশেরটা ফুপিদের।
সব কটা ফ্ল্যাট পাশাপাশি।

কোনো রকম নাচ শেখায় সফল হয়েও যেনো হতে পারছে না ফুল।যে লিরিক্সে যে স্টেপ দেয়ার কথা সেখানে অন্য স্টেপ দিয়ে বসছে।

ওকে নাচ শেখাতে গিয়ে সবাই হাসতে হাসতে বেহুঁশ!

ফুল একমাত্র দুষ্টুমি আর খেলাধুলোতেই পারদর্শী, কেউ হারাতে পারে না।এমনকি ওর সাথে একটা যুবক বয়সী ছেলে দৌড়ে কম্পিটিশন নিলেও ওকে হারাতে পারবে না। কিন্তু এসব নাচ গান এক কথায় কোনো ভাবেই ফুলকে দিয়ে সম্ভব না।

বারোটা অব্ধি ওদের রিহার্সাল চলছিলো।বারোটার পর সবাই যার যার মতো চলে গেলো।

ফুল ওদের বাড়িতে ঢুকতে যাবে তখন অনুর কাছে গিয়ে বললো,
-অনু।
-বলো,
-তুমি রাতে কার সাথে ঘুমাবে?
-অয়নী আপুর সাথে।
-অয়নী আপুকে একা ঘুমাতে বলো আর না হয় মীরা আপুদের সাথে ঘুমাতে বলো।তুমি আমার সাথে ঘুমাবে চলো।আমি একাই ঘুমাই।আমরা দুজনে অনেক গল্প করবো রাতে।
-ঠিক আছে আমি অয়নী আপুকে বলে আসি তাহলে?
-আচ্ছা বলো,

অনু অয়নীকে জানিয়ে এলো রাতে ফুলের সাথে থাকবে।অয়নী যেতে বললো আর মীরা বর্ষার সাথে চলে গেলো।

রাতে প্ল্যান মতোই অনু ফুলের রুমে এলো ওর সাথে থাকবে বলে।ফুলের রুমটাও ফুলের মতোই কিউট করে সাজানো।ওয়াল গুলোতে পাখি , গাছ, ফল,ফুল,লতা-পাতা নানান রকম পেইন্টিং।অনু ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখছে।

ফুলের রুমের জানালা দিয়ে তাকালে পাশের ফ্ল্যাটে আকাশের রুমের জানালা দিয়ে পুরো রুম দেখা যায়।আবার আকাশের জানালা দিয়ে ফুলের পুরো রুম দেখা যায়। অবশ্য ফুলের জানালা পেরিয়ে একটা বারান্দাও আছে,তবে আকাশের রুমের এপাশে বারান্দা নেই শুধু জানালাই আছে, বারান্দা অন্য পাশে।

রুমের লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে, ফুল জানালার পর্দা সরাতে গেলো।বিছানায় শুয়ে চাঁদের আলো দেখতে খুব পছন্দ। পর্দা সরাতে গিয়ে ফুলের চোখ গেলো আকাশের রুমের জানালা বরাবর , আর ওদিকে তাকিয়েই দেখতে পেলো আকাশের রুমে লাইট জ্বলছে। রুমে কাব্য আর অভ্রকে দেখা যাচ্ছে। কাব্য বিছানায় বসে অভ্রর দিকে তাকিয়ে কথা বলছে বুঝা যাচ্ছে। অভ্র কাব্য বরাবর দাঁড়িয়ে আছে,গায়ে থেকে টিশার্ট খুলে হেসে দিয়ে কাব্যর মুখের দিকে ছুঁড়ে দিলো দুষ্টুমি করে, কাব্য সেটা বল বানিয়ে অভ্রর দিকে ছুঁড়ে দিলো আবার।এসময় আকাশ রুমে এলো হাতে কফিমগ নিয়ে দরজার সামনে কাজের লোক হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আকাশ তার হাত থেকে কফিমগ গুলো নিয়ে রুমে ঢুকেছে। অভ্র কাব্যর হাতে একটা একটা দিলো।অভ্র শরীর মোচাড় দিয়ে হাতে কফি মগ নিয়ে সোফায় বসে খেতে লাগলো।

আর এপাশে ফুল চোখে ঘোর লাগিয়ে তাকিয়ে আছে।অনু ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো ফুল জানালার গ্রিল ধরে কপাল ঠেকিয়ে বসে আছে।
-কি দেখছো ফুল?
বেঘোরে অবস্থায় ফুল উত্তর দিলো,
-রাজপুত্রকে।
অনু উত্তর টা শুনে খানিকটা বিষ্মিত হয়ে বললো,
-রাজপুত্র!কোথায়?
এবার ফুল ছিটকে গেলো,
-না মানে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে হলো,ঘোড়ায় চড়ে রাজপুত্র যাচ্ছে।
-তাই নাকি!ইন্টারেস্টিং তো!
-আমিও দেখবো।
-আরে না, সেরকম না।এক নজরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে মেঘগুলো উড়ে উড়ে বিভিন্ন আকার ধারণ করে মনে হয়, সেটা বলছিলাম আমি।
-ও এই কথা!একদম ঠিক বলেছো বিশেষ করে বিকেল বেলা আকাশে মেঘ উড়ে যায় আর মনে হয় হাতি হচ্ছে ঘোরা হচ্ছে,আরো কতো রকম।দেখতে খুব ভালো লাগে।
-হুম।আসো শুয়ে পড়ো এখন।রাত হয়েছে অনেক।

ফুল জানালার পাশে দুটো বালিশ নিয়ে মাথা উঁচু করে শুয়ে পড়লো,যেনো অভ্রকে দেখতে পারে, আর পাশেই অনু শুয়ে পড়লো।দুজনে প্রায় অনেক রাত ভরে গল্প করলো শুয়ে শুয়ে। একটা সময় পর আকাশের রুমে লাইটটা অফ হয়ে গেলো যার কারণে আর অভ্রকে দেখা গেলো না। লাইট টা অফ হওয়ার পর ফুলও ঘুমিয়ে গেলো।

ফজরের আজান দিতেই ফুলের রুমে ওর মা এসে ফুলকে ডাকতে লাগলো।
-পরীমা?
-………………

-এই পরী! মা উঠো নামাজ পড়তে হবে।আজান দিয়েছে, নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।

আয়েশা বেগম ফুলের মাথা হাতিয়ে হাতিয়ে আলতো করে ডেকেই যাচ্ছে,ফুলের ঘুম না ভাঙলেও পাশে শুয়ে থাকা অনুর ঘুম ভেঙে যায়।অনু উঠে বসে ঘুম ঘুম চোখে আয়েশা বেগমকে জিজ্ঞেস করলো,
-আন্টি কি হয়েছে? ফুলকে ডাকছেন কেনো?
-আজান দিয়েছে নামাজের জন্য ডাকছিলাম।
-ওহ আজান দিয়েছে?
-হুম,তুমি নামাজ পড়বে?
-হ্যাঁ আন্টি।
-ঠিক আছে মা যাও, পড়ে নাও।

অনু উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ফুলের মা ফুলকে অনেক্ষণ ধরে ডাকাডাকির পর ফুল উঠে বসলো,ফুল ঘুম চোখে নিয়ে উঠে বসে বিরক্তি ভাবে বললো,
-মা ডাকলে কেনো?কতো সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম রাজপুত্রকে নিয়ে!
-স্বপ্ন পরে দেখো এখন উঠো।নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।

ফুল চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে গেলো।ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসে নামাজ পড়ে নিলো।

ফজরের আজানের পর পর ই অভ্ররা সবাই মসজিদে নামাজ পড়তে চলে যায় নামাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসার পর সবাই আবার ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু অভ্রর আর ঘুম আসে না। অনেক্ষণ ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম আসে না। চোখ বন্ধ করলেই তাঁর হুরের কায়াটা স্পষ্ট ফুটে উঠছে চোখের সামনে।

ভোরের আলো ফুটবে ফুটবে এমন সময় অভ্রর কানে একটা আওয়াজ এলো।একটা সুর!কিন্তু এতো সকালে কোথা থেকে আসছে এ সুর!কান পেতে কিছুক্ষণ শুনার পর বুঝতে পারলো এটা মেবি ভায়োলিনের সুর।

কিন্তু মনে হচ্ছে আকাশদের বাড়ির ছাদ থেকে সুর টা আসছে। এক অন্য রকম মায়া দিয়ে টানছে সুর টা !

অভ্রর মনে পড়লো,রাতে কাব্য আর আকাশ অভ্রকে বলছিলো।

“-শুন অভ্র যদিও আগে বলা হয় মি তোদের তবে আজ বলে রাখছি, যদি আগে বলতাম ভয়ে তোরা আসতি না।
-আচ্ছা বল কি কথা?
-দিনে দুপুরে মাঝরাতে বিভিন্ন অদ্ভুত অসময়ে এই বাড়ির এরিয়া থেকে একটা মিষ্টি সুর ভেসে আসে। কোথা থেকে আসে কেউ জানে না,আর জানতেও পারে নি।অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কেউ জানতে পারে নি এর রহস্য।হঠাৎ করেই মাঝরাতে সুরটা ভেসে আসে আবার ভোর বেলা ভেসে আসে । সুরটা খুব বেশি মিষ্টি আর মাতোয়ারা টাইপের মারাত্মক লেভেলের।
যদি রাতের বেলা বাজে সেটা বেশি মারাত্মক ভাবে মায়ায় টানে।আজ অব্ধি এ সুরের উৎস কারো ক্ষতি করে নি।
তাই কেউ ভয় না পেয়ে উল্টো এনজয় করে।
-যত্তসব ফাউল কথা। এসব সম্ভব নাকি!
-জানি তুই বিশ্বাস করবি না তাই তোকেই বললাম।
-ফাও প্যাঁচাল অফ যা,আর ঘুম দে একটা।”

কিন্তু দুজনের একজনও বলেনি সুরটা আসলে কিসের! আর রাতে অভ্র ওদের কথা শুনে কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে ব্যাপার টা মাথায় ই নেয় না।

এখন দুইয়ে দুইয়ে চার এখন মিলে গেলো অভ্রর।

-তাহলে ওরা রাতে সত্যি কথায় বলছিলো।কোনো অদৃশ্য মায়া থেকেই ভেসে আসে সুরটা!এটা যে একটা বেহালার সুর তা তো স্পষ্ট কিন্তু কে এই মায়াবী সুরের উৎস!?

বিছানা ছেড়ে অভ্র উঠে দাঁড়ালো, গায়ে শার্ট পড়ে বোতাম আটকাতে আটকাতে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদের সিঁড়ি বরাবর গেলো আর ছাদে যেতে লাগলো, কে বাজাচ্ছে ভায়োলিন টা সেটা আবিষ্কারের উদ্দ্যেশে।

নানান কথা ভাবতে ভাবতে অভ্র ছাদে চলে গেলো। কিন্তু ছাদে পা রাখতে না রাখতেই বাজনা অফ হয়ে গেলো।এতোক্ষণ ভরে উতলে উঠা হৃদস্পন্দন ভায়োলিনের সাথে সাথে থেমে গেলো।ছাদে গিয়ে এদিক ওদিক তাকাতাকি করেও কোথাও কাউকে দেখা গেলো না।পুরো ছাদে মানুষ তো দূরে থাক একটা পিঁপড়াও নেই।ব্যাপার টা খুব বেশি অবাককরা লাগলো।তবুও অভ্র এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করেই যাচ্ছে।

চলবে…………
(আসসালামু আলাইকু ভাই বোনেরা, আমার মোবাইল নষ্ট।গল্প লিখার সময় অনেক প্রবলেম করে।অনেক সময় পুরো পর্ব লিখার পর অটো ডিলেট হয়ে যায়,তখন নতুন করে লিখতে হয়।তাই অনেক সময় পর্ব ছোটো হয়ে গেলে আমাকে কেউ গালী দিয়েন না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here