#হুজুরের বউ যখন ডক্টর
লেখকঃ রাকিবুল ইসলাম
পর্বঃ২২ ও শেষ।
কেবিনে প্রবেশ করেই দেখতে পায় মেহেদী বেডে শুয়ে আছে,জাফরী আর সাথি এগিয়ে গেল,।জাফরী বলল,
– এখন কেমন লাগছে হুজুর?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো,কিন্তু আমি এখানে এলাম কি করে?
– আপনি আমাকে খুজতে গিয়ে এয়ারপোর্টের শিড়িতে পড়ে গিয়েছিলেন। পাশ থেকে বলে উঠলো সাথি।
জ
– আপনাকে খুজতে গিয়ে?
– জি,
– কিন্তু আপনি কে? আমি কেন আপনাকে খুজতে যাবো? আজব.
– এসব আপনি কি বলছেন হুজুর,আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না?( সাথি)
– নাহ তো,কে আপনি আপু?(মেহেদী)
মেহেদীর এমন কথায় বেশ অবাক হয় সাথি ও জাফরি দুজনেই।
জাফরী- কি বলছেন আপনি, আপনি আপু কে চেনেন না? মানে কি?
মেহেদি – ওফ,বললাম তো চিনি না,বার বার কেন বলছেন এক কথা,আর কে ইনি,আমি তো আপনাকে বাস্ট্যান্ডে ছেড়ে আসছিলাম,কিন্তু এখানে এলাম কি করে?
এবার জাফরী আর সাথি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।
সাথি – হুজুর ভালো করে মনে করুন আমার কথা,আমি সাথী, আপনার স্ত্রী।
মেহেদি – কি যাতা বলছেন আপনি।,আপনি কেন আমার স্ত্রী হতে যাবেন,আমার স্ত্রী তো জাফরী। তবে কেন জানি মনে হচ্ছে আপনাকে কোথাও যেন দেখেছি।
জাফরী – হুজুর,ওনি ঠিকই বলছেন ওনি আপনার স্ত্রী। দ্বিতীয় স্ত্রী, ওনার নাম সাথি,আপনার কি কিছুই মনে পড়ছে না? খাদিজা,আব্দুল্লাহ,এদের কারো কথাই কি মনে পড়ছে না?
মেহেদি – ওফ,মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে, আহ,
এই বলে মেহেদী আবার জ্ঞান হারালো।
জাফরী তারাতারি গিয়ে নাসরীন কে ডেকে আনলো। আর সাথী কেবিনের এক কোথায় দাঁড়িয়ে কান্না করছে।
জাফরী বলল,
– কান্না করো না আপু,দেখবে এক সময় হুজুরের সবই মনে পড়বে, তুমি কোন চিন্তা করিও না,
– কিন্তু উনি যদি আমাকে অস্বীকার করে তবে আমার সন্তান গুলোর কি হবে?
– আপনি শান্তো হোন আপু,আল্লাহ নিশ্চয় এতোটা কঠোর নয়,তিনি অতি দয়ালু, তিনি আমাদের ঠিকই সাহায্য করবেন।
– তাই যেন হয় বোন।
বেশ কিছুক্ষন পর মেহেদীর জ্ঞান ফিরে এলো,কিন্তু যখন জ্ঞান ফিরলো তখন জাফরী বলল, এখন কেমন লাগছে।
– হুম,আলহামদুলিল্লাহ,
– আর কিছুই কি আপনার মনে নেই?
সাথিও এক পলক তাকিয়ে আছে মেহেদীর দিকে যে সে কি বলে।
সাথী- হুজুর আমাকে কি এখনো চিনতে পারেন নি?
– নাহ,
সাথি এবার মন খারাপ করে বাইরে চলে যাচ্ছিল ঠিক এমন সময় মেহেদী পিছন থেকে তার হাত টেনে ধরে।
বলল,,,
– কোথায় যাচ্ছো আবার আমাকে ছেড়ে?
– দুচোখ জেদিকে যায় সেদিকেই চলে যাবো,থাকবো না আমি আর।
– তাহলে আমার কি হবে?..
– কেন জাফরী আছে তো,সেই আপনার খেয়াল রাখবে।
– কিন্তু আমি তো আমার খাদিজার আম্মুকে যেতে দিতে চাই না।
মেহেদীর এই কথায় বেশ অবাক হয় সাথি।
– আপনার কি তাহলে আমার কথা মনে পড়েছে?
– জি ছোট মহারানী
তার এই কথায় অনেকটা খুশি হয়েই মেহেদীকে জোরিয়ে ধরে সাথি।
মেহেদী বলল,
– দেখো পাগলী,এখানে কত্তো মানুষ আছে,এভাবে জোরিয়ে ধরলে চলবে?
তার কথায় লজ্জা পেয়ে যায় সাথি,
জাফরী- হয়েছে হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে,এখন থেকে দুজন মিলে হুজুরকে সুস্থ করে তুলবো,কেমন?
সাথি-হুম
নাসরীন বলল,
– দু দিন পর মেহেদী ভাইকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন,আর হ্যা,ওখানেও কিন্তু রেস্ট নিতে হবে।
জাফরী আর সাথি একসাথে বলল,আচ্ছা,।
৬ মাস পর…..
সাথি তার ছোট ছেলেকে দুধ খাওয়াচ্ছিল এমন সময়…
খাদিজা- আম্মু,ও আম্মু,
সাথি,- কি হয়েছে কি শুনি? এতো চেচাচ্ছিস কেন?
খাদিজা- আম্মু দেখো ছোট আম্মু মাথাঘুরে পরে গেছে।
সাথি- কি বলছিস এসব? আমাকে আগে ডাকলি না কেন? কই দেখি দেখি কি হয়েছে?
সাথি দেখলো জাফরী মাটিতে পড়ে আছে আর খাদিজা তার পাশে বসে তাকে ডাকছে,
– জাফরী,এই জাফরী,কি হলো তোমার হঠাৎ? এই জাফরী,
খাদিজা রাতাতারি তার আব্বুকে কল দিলে,তার আব্বু বাইরে ছিল, তাই বারিতে এসেই জাফরীকে নিয়ে হাসপাতালের রউনা দিলো
হাসপাতালের আসার আধঘন্টা পর…
মেহেদি – জাফরী এখন কি অবস্থা আপু,ও হঠাৎ জ্ঞান হারালো কিভাবে?
নাসরীন- আসলে…..
মেহেদি – আসলে কি আপু?
নাসরীন- দেখুন মেহেদী ভাই অবস্থা খুবই গুরুতর,আর এই রোগ সাধারনতো বিশেষ কোন কারনে হয়ে থাকে। তবে…..
মেহেদী- তবে কি আপু?
নাসরীন – তবে যদি আপনি আমাদের সবাই কে মিস্টি খাওয়ান তবেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
মেহেদি – এসব আপনি কি বলছেন আপু? এমন ধরনের আবার রোগ হয় নাকি?
নাসরীন – জি,কেন হবে না শুনি?
মেহেদি – দেখুন আপু হেয়ালী না করে বলুন জাফরীর আসলে কি হয়েছে এদিকে আমি
– সাথি- হ্যা আপু,বলুন প্লিজ?
নাসরীন – আগে কথা দিন আমাদের সবাই কে মিস্টি খাওয়াবেন?..
-আচ্ছা ভাই কথা দিলাম,যত খুশি পারেন খাওয়াব,এবার বলুন তো হয়েছে টা কি?
– আপনি বাবা হতে চলেছেন,🥰
– কি?
-জি ঠিকই শুনেছেন,আপনি বাবা হতে চলেছেন আর আমি খালা হতে চলেছি,
– আলহামদুলিল্লাহ আপু,এটা তো অনেক খুশির সংবাদ,আপু আমি কি জাফরীর সাথে এখন দেখা করতে পারি? প্লিজ?
– হুম,কেন নয়,জান, তবে আমাদের মিস্টি?
– ওটা আপনাকে ভাবতে হবে না,যতখুশি পারেন খাওয়াবো,আগে আমার পাগলীকে দেখে আসি,
নাসরীন আর সাথি দারিয়ে দারিয়ে শুধু হাসছে,আর মেহেদীর কান্ডগুলো দেখছে,
খাদিজা- আম্মু,আম্মু, আমার আরেকটা বোন হবে?
সাথি- হ্যা আম্মু,আরেকটা বোন হবে,তবে তুমি কিন্তু তাকেও যত্ননিবে এখন যেমন আব্দুল্লাহ যত্ন নিচ্ছো, কেমন?
– আচ্ছা।
কেবিকে এসে মেহেদী দেখছে,জাফরী চুপ করে শুয়ে আছে।
মেহেদী বলল – কি ব্যাপার মহারানী,এতো কিছু হয়ে গেল আর আমাকে বললে না একবারও?
জাফরী তাতেও কিছু বলছে না,
– কি ব্যাপার, তুমি কি আমাদের সন্তান আসায় খুশি নউ?..
– আসলে তা নয়,ভাবছি আমাদের সন্তান আসায় খাদিজা আর আব্দুল্লাহ এর প্রতি আমার যদি ভালোবাসা কমে যায় তখন?.
– ইন্না মা আমালু বিন নিয়্যাত। আল্লাহ তায়ালা বলেন সকল কিছুই নিয়তের উপর নির্ভরশিল,তুমি যেমন টা চাইবে ঠিক তেমনটাই হবে। বুঝলে?
– হুম,বুঝলাম,
-তো কি বুঝলে?
– বুঝলাম এখন আমার থেকে আপনাকে ৬ হাত দূরে থাকতে হবে,হি হি হি,
– কেন, এমন কেন?
– কারন আমার কাছে তো বাচ্চা আছে,আর আপনি চাইলেও আমার কাছে আসতে পারবেন না,
– এই ডা কোন কথা…🥴🥴🥴
এভাবেই কেটে যাচ্ছে মেহেদী জাফরী আর সাথির সংসার, সবাই মিলে কেমন খুনশুটি করেই দিন কাটাচ্ছে। মেহেদী যখন জাফরীর সাথে ঝগড়া করে তখন সাথে এসে তাকে বাচায় আর সাথির সাথে যখ৷ ঝগড়া লাগে তখন জাফরী হয় মেহেদী সাপোর্টার। হি হি হি
(*আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক গন, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে,আর আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি৷ গল্প শুধু পড়ান জিনিস নয়,এটা দেখে অনেক কিছু শেখারও আছে আবার বোঝারও আছে। গল্প শুধু মাত্র তাকেই লেখা মানায় যিনি নিজে আমল গুলো করেন এবং অন্যকে এই ব্যাপারে উৎসাহিত করে। ইনশাআল্লাহ আবার হাজির পরের গল্প নিয়ে ততদিন ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন,আর দোয়া করুন আমার জন্য যাতে এই আমল গুলো আমিও পালন করতে পারি,জাযাকুমুল্লাহ খইরান*)