সিনিয়র খালাতো বোন পর্ব-৫

0
1918

#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_05
#writer_srabon

আমি এইবার সামনে দিকে তাকাব। কারন এই সিয়াম ব্যাটাকে দেখার আমার খুব ইচ্ছে। কিন্তু আমি
সামনে তাকাতেই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেলাম।
কারন আমার সামনে আমার নিজের ভাই বসে আছে।
আমি এটা দেখে এক কদম পিছিয়ে গেলাম।।
এখন আমার কি করা উচিত আমার জানা নেই।।

এইবার আমার কাছে সব কিছু ক্লিয়ার হয়ে গেল। স্পর্শি যে সিয়ামের সাথে রিলেশন করত সে আর কেউ নয়। আমার মেজ ভাই সিয়াম ছিল।
যেহেতু সিয়াম ভাইয়া এখানে তার মানে ওরা সবাইও এখনে আছে। তাই আমি আশেপাশে তাকাতে লাগলাম। হুম পেয়ে গেছি।
আব্বু,আম্মু,বড় ভাইয়া,ভাবি সবাই এক জায়গায় বসে আছে। আশেপাশে আমার পরিচিত অনেক লোকজন রয়েছে। আমি কি করব.? এখন আমার কি করা উচিত..? মনে মনে ভাবতেছি তখনই,,,,,

— শ্রাবন বাবা তোমার আবার কি হলো.?? আশেপাশে তাকাচ্ছ কেন.? ছেলে পছন্দ হয় নি তোমার.?? (আন্টি)

আমি একটু চমকে উঠলাম। সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,,

— না না,,আন্টি ছেলে তো অনেক হ্যান্ডসাম..! বেশ মানিয়েছে স্পর্শির সাথে। (আমার গলা আটকে যাচ্ছে)

— না,,,আমার তো তেমনটা মনে হচ্ছে না। নিশ্চয়ই কোথাও গড়মিল আছে। কি হয়েছে আমাকে বল.?? আর বাসার ভিতরেও কি সানগ্লাস পরে থাকা লাগে নাকি..??(আন্টি)

এটা বলেই আন্টি আমার চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ফেলল। এইবার এখানে উপস্থিত সকলে আমরা চোখ দেখতে পেল। কিন্তু অনেক অবাক হলাম আমার পরিবারের লোকজনকে দেখে। কারন পরিবারের প্রত্যেকটা লোক আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না তারা কি আমাকে চিনে ফেলেছে নাকি.??
চেনার কথা তো নয়। কারন, আমার মুখে মাস্ক দেওয়া। + আমার গলার কন্ঠ আগের থেকে অনেক বদলে গেছে।

আমি আর তাদের দিকে না তাকিয়ে আন্টিকে বললাম,,,

— আন্টি,,আমি অনেক ক্লান্ত। আমাকে একটা রুমে নিয়ে চলেন। আমি একটু বিশ্রাম নিতে চাই। (আমি)

— আচ্ছা,,চলো তাহলে….!!!

আন্টি আমাকে নিয়ে বাসার ভিতরে যাবে তখনই,,,

— আম্মু,,,ওকে নিয়ে এদিকে আস। ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। (স্পর্শি)

এইবার আমি পরে গেলাম দোটানায়। ভাইয়ার কাছে গেলে হয়তো আমার মাক্স খোলা লাগতে পারে। আর তখন কি হবে.? নিশ্চয়ই স্পর্শির জন্য সেইটা মোটেও ভালো হবে না। আমাকে যত দ্রুত সম্ভব এই বাসা থেকে চলে যেতে হবে। না হলে আমার কারনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আন্টিকে।।।

আমি মনে মনে এগুলো ভাবতেছিলাম। এর মধ্যে আন্টি আমার হাত ধরে ভাইয়ার সামনে নিয়ে এসেছে।
ভাইয়া খুব মনোযোগ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।

— এই হচ্ছে সেই শ্রাবন। যার কথা আমি তোমাকে বলেছিলাম। এই বান্দরটার জন্যই আজকে এত কাহিনি করতে হয়েছে আমাকে। তবুও লেট করে এসেছে ও।৷ (স্পর্শি)

— হ্যালো..! শ্রাবন। আমি সিয়াম আহমেদ। তোমার বান্ধবীর একমাত্র জামাই.. (ভাইয়া)

— হায়…. (আমি)

— এই তুই এইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবি.? নাকি তোর মুখ থেকে মাস্কটা খুলে আমাদেরকে তোর মহা মূল্যবান চেহারাটা দেখাবি..??(স্পর্শি)

— এই বেয়াদব মেয়ে..! আস্তে কথা বল। চারিদিকে অনেক রিলেটিভ আছে। ভুলে যাস না তুই এখন সকলের সামনে বসে আছিস। (আন্টি স্পর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল)

— হুহ,,তাতে বয়েই গেছে..(স্পর্শি)

আমি যখন কিছু বলতে যাব তখনই আমার ফোনে একটা কল এলো..! ব্যাস পেয়ে গেলাম এখান থেকে বের হওয়ার অযুহাত।।

— আন্টি,,আমার একটু জরুরি কল এসেছে। দুলাভাই আসি,,আপনার সাথে পরে কথা বলব কেমন..? (আমি)

এটা বলেই আমি সকলের সামনে থেকে চলে এলাম।
তবে,, আসার সময় একটা জিনিস লক্ষ করালাম যে,
আমি যখন ভাইয়াকে দুলাভাই বললাম তখন ভাইয়া আর স্পর্শি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাল।।
এর কারনটা আমি বুঝতে পারলাম না। কারন স্পর্শি তো আমার বান্ধবী লাগে,,সেই দিক দিয়ে তো ভাইয়া আমার দুলাভাই লাগে। এখানে আমার কিছু করার নেই,,ভাইয়া বললে সন্দেহ করতে পারে। তাই দুলাভাই বললাম।।

কিন্তু এখন তো দেখতেছি দুলাভাই বলে অন্যায় করে ফেলেছি।। শালা কি দিনকাল পরল ভাইয়াকে দুলাভাই বলা লাগতেছে।।।

মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে আছে। কারন আজকে তিন বছর পরে পরিবারের সকলকে দেখলাম।
তবে একজনকে দেখলাম না। আমার দুচোখ যে বার বারই তাকে খুজেছে এই বিয়ে বাড়িতে।
সে হয়তো তার নতুন সংসার নিয়ে ব্যাস্ত। তাই হয়তো ভাইয়ার বিয়েতে আসতে সময় পায় না। সে ভালো থাকলেই আমি ভালো।। আমার আর এখন এগুলো ভেবে লাভ নেই।।।

আমি গেট দিয়ে বাসার বাইরে বের হলাম। গেটে বসে দারোয়ান চাচা অনেকবার ডেকেছিল৷ কিন্তু আমি সারা না দিয়েই রাস্তায় চলে আসি।।
একটা টং দোকানে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বেঞ্চে বসে পরলাম। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া উড়াতে লাগলাম।।

ও হ্যাঁ,, আপনার তো কিছুই বুঝতেছেন না। আসুন আপনাদেরকে প্রথম থেকে খুলে বলি।।

#অতিত

প্রথমে আমার পরিবারের কথা বলি,,
পরিবার বলতে আমি,আব্বু,আম্মু,আর আমার থেকে বড় দুই ভাই মিলেই আমার পরিবার ছিল।
আমি ছিলাম পরিবারে ছোট ছেলে। তাই সকলের থেকে আদর আমি একটু বেশিই পেতাম।
বড় ভাইয়া বিয়ে করে যখন আমি সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করি। এরপর বাসায় নতুন একজন সদস্য আসে। আমি অনেক সংখ্যায় ছিলাম যে ভাবি আমাকে নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসবে নাকি দূর দূর করে তারিয়ে দেবে..?

কিন্তু আমার সব ধারণা ভুল করে দিয়ে ভাবি আমাকে নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসা দিত। এতে তো আমি অনেক খুশি ছিলাম।।
এরপর কিছু দিন পরে আমাদের পরিবারে আরো একজন সদস্য বেরে যায়। আর সে হচ্ছে আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। মানে আমার ভাতিজা..! আমি তখন অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র।।

সব কিছু মিলিয়ে আমাদের পরিবারে আনন্দের কোন কমতি ছিল না।
কিন্তু এই সময়ে আমার জীবনে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়৷ আমি ভেবেছিলাম এই সময়ে আমি আমার পরিবারকে কাছে পাব। কিন্তু পাই নি। পরিবার বলতে আব্বুকেই বেশি বোঝাতে চেয়েছি আমি৷
আমার আব্বুর সাথে আমার সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো ছিল।কারন আব্বু অনেক রাগী ছিল। আর বাসার সকলে আব্বুকে ভয় পেত। শুধু আমি বাদে। (ছোট পোলা😁)

এইবার আসি মূল কাহিনিতে,,,

আমি যেহেতু আমার সিনিয়র খালাতো বোনকে ভালোবাসতাম। তাই সূযোগ পেলেই খালার বাসায় চলে যেতাম। আর আপুকে ভালোবাসি বলে বলে পাগল করে ফলতাম।।

তো সেইবার কোন এক ছুটিতে আমি আমার সব কিছু নিয়ে খালার বাসায় চলে যাই।
আর গিয়ে আপুর সাথে অনেক দুষ্টুমি করি।
আমি এটা বুঝে যাই যে আপুও আমাকে মনে মনে ভালোবাসে। আমি মনে মনে ঠিক করি পরিবারের সবাইকে সব কিছু জানিয়ে দিব। যেদিন আপু আমাকে ভালোবাসি বলবে সেইদিন আমি সবাইকে জানিয়ে দিব। আর সবাইকে মানিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আমিই নিব।।
এইভাবে আপুদের বাসায় কিছু দিন চলে গেল।

আমি আর আপু একদিন বিকালে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে বাসায় আসি।
কিন্তু বাসায় এসে একজন অপরিচিত লোককে দেখতে পেয়ে আমি অবাক হই।
তখন খালা,খালু দুজনেই আমাদেরকে দেখতে পেয়ে বলল,,,

— শ্রাবন,,এদিকে আয়,,এই হচ্ছে রহিম…! তোর আপুর সাথে আমরা রহিমের বিয়ে ঠিক করেছি। আগামী ১২ তারিখ তোর আপুর বিয়ে। মানে হাতে আর মাত্র ৭ দিন আছে। সব কাজ কিন্তু তোকেই করতে হবে..!

আমি খালার এমন কথায় আপুর দিকে তাকালাম। আপু আমার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।।

আমি কাউকে কিছু না বলে আমার রুমে চলে এলাম। আমার পিছু পিছু আপুও চলে এলো..
আমার প্রচুর রাগ হচ্ছিল আপুর উপরে। আপু যদি আন্য কাউকে বিয়ে করবে তাহলে আমার সাথে এমন হেসে খেলে না বেরালেই পারত। আমার কষ্ট হলেও আমি আপুর খুশির কথা চিন্তা করে আপুর থেকে দূরে চলে যতাম। কিন্তু আপু এটা কি করল..???

তখনই আপু আমার কাছে এসে বলল,,,,,

— মন খারাপ তোর…?? (আপু)

— এমনটা না করলেও পারতে..! (আমি)

— বিশ্বাস কর,,আমি এই ব্যাপার কিছুই জানি না। আমিও প্রচন্ড অবাক হয়েছি তোর মতো..!(আপু)

— জানলেই বা কি করতে.? নিশ্চয়ই বিয়ে করে নিতে। (আমি হেসে)

— তুই এইটা বলতেছিস.?? (আপু অবাক হয়ে)

— মানে..? বুঝলাম না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর বেহায়ার মতো সারাক্ষণ শুধু ভালোবাসার কথা বলি তোমার কাছে। কিন্তু তুমি তো আর আমাকে ভালোবাস না। তাই তোমার কি এসে যায় এতে..?(আমি)

— শ্রাবন আমিও যে এই বেহায়াকে ভালোবাসি। বিশ্বাস কর,,তোর সাথে থাকতে থাকতে আমিও বুঝতে পারি নাই যে তোকে আমি কতটা ভালোবাসি। (আপু)

এইটা বলেই আপু আমার কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরল।।
আমিও পরম আদরে তাকে জরিয়ে ধরলাম।।

— অনেক হয়েছে এইবার ছাড়। কেউ দেখে ফেলবে। (আপু)

— না,,কেউ দেখবে না..!(আমি)

— আমাকে অনেক জরিয়ে ধরার সময় পাবি। এখন যে করেই হোক বিয়েটা ভেঙে দে। না হলে আমাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দে। (আপু)

আপুর কথায় আমিও আপুকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,,

— কোন চিন্তা করো না..! আমার লেখাপড়ার শেষ না হওয়া পর্যন্ত খালা তোমার কোন সমন্ধ টিকিয়ে রাখতে পারবে না৷ (আমি)

— বেশি ভাব না নিয়ে এই বিয়েটা আটকে দেখা আগে..!(আপু)

— আরে আপু,,এটা তো আমার বা হাতের কাজ..! এতদিন ভার্সিটির রাজনীতি কি সাধে করেছি.??(আমি)

— ওই রাখ তোর রাজনীতি,, তুই আমাকে এখনো আপু বলিস কেন..?(রেগে)

— ওহ,,সরি,,বাবু…!(আমি)

— হ্যাঁ এইবার ঠিক আছে..! (আপু লজ্জা পেয়ে দৌড়ে রুম থেকে চলে গেল)

আমিও আমার রুমে বসে হাসতে লাগলাম।। হুম,, এইভাবেই আমার আর শিমলার ভালোবাসার শুরু হয়েছিল। তবে সেটাও মাত্র অল্প কিছু দিনের জন্যে….

#বর্তমানে,,

মনে মনে আগের ঘটনা গুলো চিন্তা করতেছিলাম। তখনই আমার ফোনে একটা কল এলো.. আর সাথে সাথেই আমার ঘোর কেটে গেল। আমি পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলাম আন্টি ফোন করেছে।
আমি সাথে সাথেই রিসিভ করলাম,,,

— হুম,,আন্টি বলুন..!(আমি)

— কোথায় তুমি..? ফোনে কথা বলা হয়েছে.? অনেক জার্নি করে এসেছ। এইবার বাসার ভিতরে এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে নাও..(আন্টি)

— হুম,,আন্টি ঠিক বলেছেন..! কিন্তু বাসায় তো অনেক লোকজন। কোন রুম কি ফাকা আছে.?(আমি)

— তোমাকে এই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমার আর তোমার আংকেলের রুম ফাকা। এখানে চলে আসো..! আমি তোমার বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। একটু পরে আবার ওনারা স্পর্শিকে নিয়ে বেরিয়ে যাবে। (আন্টি)

— ওকে আন্টি..! আমি আসতেছি।।।

এরপর ফোন কেটে বাসার ভিতরে চলে গেলাম।
অতীতের কথা আজকেও শেষ করতে পারলাম না। সমস্যা নেই অন্য একদিন বলব কেমন..

বাসার ভিতরে এসে চারিদিকে দেখতে লাগলাম।
আম্মুকে আরাল থেকে দুচোখ ভরে দেখে নিলাম। অনেক দিন আম্মুকে দেখি না। তভে আম্মু আগের থেকে অনেক রোগা, পাতলা হতে গেছে। কারনটা হয়তো আমি। কিন্তু আম্মু তুমি তো জানো তোমার ছোট ছেলেটা একটা পাগল..!! যেটা একবার মাথায় গেথে ফেলে সেইটা মরে যাওয়া পর্যন্ত পালন করার চেষ্টা করে।।।

এরপর আমার দুই চোখ আরেকটা মানুষকে খুজতে লাগলো। সে আর কেউ না। আমার ভালোবাসার মানুষ শিমলা। কিন্তু এইবারও আমি ব্যর্থ হলাম। কোথাও তাকে দেখতে পেলাম না। শুনেছিলাম বিয়ের পর ওর জামাই নাকি ওকে নিয়ে বিদেশ চলে যাবে। শিমলাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো আমাকে ছেড়ে অনেক অনেক দূরে চলে গিয়েছে সে।
চোখ থেকে দুই ফোট পানি গড়িয়ে পরল। আমি চোখের পানি মুছে নিলাম।
এরপর বাসার ভিতরে চলে গেলাম। যেহেতু এই বাসায় আমি এর আগে অনেকবার এসেছি। তাই আন্টির রম চিনতে আমার একটুও ভুল হলো না।
রুমের সামনে এসে দেখি দরজা হালকা খোলা। হয়তো আন্টি ভিতরে আছে। এটা ভেবে আমি দরজা খুলে ভিতরে গেলাম।

কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করেই একশ ভোল্টের আরেকটা শক খেলাম।জানি না এক দিনে আমি কত সারপ্রাইজড হব…!
কারন আমার……….

.
.
.
.
#চলবে…..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here