#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_15
#writer_srabon
সকালবেলা আরামে ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু তখনই ঘুমের মাঝে টের পেলাম কেউ একজন তার হাত দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এই হাতটা আমার খুব পরিচিত। তাই সাথে সাথেই চোখ মেলে তাকালাম। কিন্তু চোখ মেলে আমার সামনে কাউকে দেখতে পাই না।
যখন আমি খালার বাসায় ঘুরতে যেতাম তখন ঠিক এইভাবে শিমলা রোজ সকালে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে দিত।
তার মানে কি এটা শিমলা ছিল..? না না সেটা কি করে হবে.?
এগুলো ভেবে লাভ নেই। তাই বিছানা থেকে উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি টেবিলের উপরে এক কাপ গরম চা রাখা আছে।
কে হতে পারে এটা.?? নিশ্চয়ই শিমলা। কি জানি মেয়েটা কেন এখনো আমার পিছে পরে আছে।
এগুলো ভাবতে ভাবতে চায়ের কাপে মুখ দিলাম।
অসাধারণ….!!!
রোজ রোজ এমন চা দুই বেলা খেতে পরলে মন্দ হতো না।
রুমে বসে মোবাইল চেক করতেছিলাম আর চা খাচ্ছিলাম। তখনই ফোনে আসীমের কল এলো।
আমি রিসিভ করলাম,,,
— ভাইয়া ঘুম থেকে উঠছেন..?(অসীম)
— হুম..!কেন.?(আমি)
— ভাইয়া,,, নাদিম এর কথা মনে আছে..?(অসীম)
— কোন নাদিম.? (আমি)
— ওই যে,,৩নং হলে থাকত। বেশির ভাগ সময়েই আপনার পিছে পিছে থাকত। (অসীম)
— ওহহ,,ওই নাদিমের কথা বলতেছিস। কি খবর ওই ব্যাটার.??(আমি)
— ভাইয়,,ও তো আমাদের থানার এসআই। (অসীম)
— ওরেব্বাস এটা তো ভালো কথা। (আমি)
— ভাই,,নাদিম আপনার সাথে একটু দেখা করতে চায়। আপনি কি এখন আসতে পারবেন..? (অসীম)
— কোথায় তোরা এখন..?(আমি)
— কলেজ ক্যাম্পাসে ভাই। (অসীম)
— আচ্ছা,,অপেক্ষা কর আমি আসতেছি।।(আমি)
— আচ্ছা ভাই…!
এরপর ফোন কেটে দিলাম।।
রুম থেকে রেডি হয়ে বড় ভাইয়ার রুমের দিকে যেতে লাগলাম। কারন এখন রিকশা করে যেতে ইচ্ছে করতেছে না। ভাইয়ার বাইকটা পেলে সেই হবে।
ভাইয়ার রুমে ঢুকতে যাব তখনই বাইরে থেকে টের পেলাম ভিতরে কেউ আছে। গলার আওয়াজ পেয়ে টের পেয়ে বুঝলাম যে এটা শিমলা।
তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলাম কি বলে,,
— একি শিমলা,,,তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন.? কিছু কি হয়েছে..?(ভাইয়া)
— ভাইয়,,,আসলে….(শিমলা)
— কি হয়েছে বলনা..? (ভাইয়া)
— ভাইয়া আমি যখনই বাসা থেকে বের হই তখনই একটা ছেলে রোজ আমাকে ডিস্টার্ব করে। (শিমলা)
— কি বলিস.? নাম কি? কোথায় থাকে.?(ভাইয়া)
— ভাইয়া,, জানি না। তবে নাম শুভ। আর *** ভার্সিটিতে ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করে। প্লিজ ভাইয়া তুমি কিছু একটা করো। (শিমলা)
— সমস্যা নেই। আমি দেখতেছি কি করা যায়। (ভাইয়া)
————————————
শিমলার মুখে এমন কথা শুনে মাথাটা প্রচুর গরম হয়ে গেল। এমন কেন হচ্ছে আমি জানি না। আর তাছাড়াও আম তো ওকে আর ভালোই বাসি না। তাহলে আমার মাথা গরম হচ্ছে কেন। জানি না,,তবে ওই শুভর বাচ্চাকে মারতে না পারলে আমার শান্তি হবে না।
আমি আর দেড়ি না করে ভাইয়ার রুমে ঢুকে গেলাম,,,,
— শ্রাবন কিছু বলবি..??(ভাইয়া)
— বাইকের চাবি দাও। (আমি)
— ওই পাশে টেবিলের উপরে দেখ। (ভাইয়া)
এরপর আমি বাইকের চাবি নিয়ে বাইরে চলে এলাম।
বাইরে আসার সময় ভাবী খাবার খাওয়ার জন্য ডেকেছিল। আমি কাউকে কিছু না বলেই বাইরে চলে এসেছি।।
বাইরে এসে বাইকে স্টার্ট দিয়ে তাড়াতাড়ি করে অসীমের কাছে চলে গেলাম।
সেখাবে গিয়ে দেখি,,অসীমের সাথে নাদিম আছে। আর সাথে কয়েকটা পোলাপান।।
— ভাইয়া,,,কেমন আছে..?(নাদিম)
— এইতো ভালো। তুমি কেমন আছ..?(আমি)
— ভালোই। কিন্তু ভাইয়া আপনি তো আমাকে ভুলেই গেছেন। (নাদিম)
— আরে না। তোমাকে ভুলে যাব কেন..(আমি)
— তা না হলে,,আমাকে তুমি করে বলতেছেন কেন..? আগে তো তুই করে বলতেন। (নাদিম)
— ও আচ্ছা সরি। (আমি)
— ভাইয়া,,,কিছু হয়েছে..? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন..?(অসীম)
— আরে আর বলিস না। শুভ নামের একটা ছেলে শিমলাক নাকি খুব ডিস্টার্ব করতেছে। (আমি)
— কোন শুভ ভাইয়া..?
— **** ভার্সিটিতে পড়ে। ফাইনাল ইয়ারে। (আমি)
— আচ্ছা,,ভাই চলেন আগে এর একটা ব্যবস্থা করে আসি। (অসীম)
— হুম চল…!!
এরপর শুভর ভার্সিটির সামনে চলে এলাম।
অসীম ভিতরে গিয়ে শুভ নামের ছেলেটাকে খুজে নিয়ে এলো।।
— একি কারা আপনারা.? আর আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন..?(শুভ)
— আজকে তোকে প্রেম কিভাবে করতে হয় সেটা শিখাবো। (আমি)
— মানে কি..?(শুভ)
ঠাসসসসসস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম,,,
— শিমলাকে কি বলেছিস আজকে..?(আমি)
— শিমলা কে ভাই..? আমি চিনি না তো তাকে (শুভ)
— নাদিম,,তুই একটু ওই দিক থেকে ঘুরে আয়। আমি আর অসীম এর সাথে একটু কথা বলে নেই। (আমি)
— হাহাহা,,বুঝতে পেরেছি ভাই।
এরপর নাদিম চলে গেল।
কারন পুলিশ এর ড্রেস পরে মারপিট করলে সমস্যায় পরে যাবে।
এরপর আমি আর অসীম দুজনে মিলে ছেলেটাকে অনেক ক্যালনি দেই।
এমনিতেই মেজাজ খারাপ ছিল। তার উপরে ছেলেটা আবার প্রথমে মিথ্যা বলেছে। তাই অনেক মেরেছি।
মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।
অসীম থাকার কারনে আশেপাশের লোকজন কেউ ফিরেও তাকায় নি। আর পুলিশ তো নাদিম। কোন প্যারা নেই।।
— এইবার বল শিমলা তোর কি হয়..?(অসীম)
— ভা..বীইইই…(ঠিক ভাবে বলতে পারতেছে না)
— আর কখনো কোন মেয়েকে ইভটিজিং করবি.??(আমি)
— না,,কোন দিনও করব না। এবারের মতো মাপ করে দেন ভাই। (ছেলেটা)
— অসীম অনেক হয়েছে। এইবার ছেড়ে দে।।
এরপর আমি একটা রিকশা ডেকে এনে ওকে হসপিটালে পাঠিয়ে দিলাম। সাথে কিছু টাকা রিকশাওয়ালা মামাকে দিয়ে দিলাম।।।
— ভাই,,,,অনেক বেশি রেগে ছিলেন মনে হয়। (নাদিম)
— জানি না…!!(আমি)
— একি ভাই,,আপনার হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে কেন..? কেটে গেছে তো..!(অসীম)
— ওকে মারতে গিয়ে কেটে গেছে মনে হয়। (আমি)
— ও আচ্ছা,,চলেন ফার্মেসিতে যাই।
— দরকার নেই। এতে কিছু হবে না। আমাকে বাসায় যেতে হবে। (আমি)
— কিন্তু ভাই…
— কোন কিন্তু না। এখন বাসায় যাই। পরে তোদের সাথে দেখা করবো। সমস্যা নেই। (আমি)
— আচ্ছা ভাইয়া।।।
এরপর আমি বাইক চালিয়ে সোজা বাসায় চলে এলাম।
বাসার সামনে এসে হাতের রক্ত রুমাল দিয়ে মুছে ফেললাম।
কিন্তু এর পরেও টের পাওয়া যাচ্ছিল। তাই হাতটা পিছে রেখে বাসার কলিং বেল বাজালাম।
শিমলা এসে দরজা খুলে দিল।
— শ্রাবন বাবা এতক্ষণ কই ছিলি..? সকালের নাস্তা করবি না.?((আম্মু)
— আম্মু একটু কাজে গেছিলাম। তুমি আমার খাবার উপরে পাঠিয়ে দাও। আমি রুমে বসে খেয়ে নিব।(আমি)
এরপর এক প্রকার লুকেয়ি আমার রুমে চলে এলাম।
কাউকে বুঝতে দেই নি যে আমার হাত কেটে গেছে।
————————————
এদিকে শ্রাবন তার রুমে চলে আসার পরে,,
— আম্মু,,,কি হয়েছে ওর..? এত তাড়াতাড়ি সকালে কই গেছিল..?আর এমন তাড়াহুড়ো করে রুমে চলে গেল কেন..?(ভাবি)
— আমিও তো বুঝতে পারলাম না কিছু। (আম্মু)
— আম্মু,,আমি তো আরেকটা বিষয় খেয়াল করলাম,, ও ওর ডান হাতটা পিছনে লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু কেন..?(স্পর্শি)
— হুম,,আমিও খেয়াল করেছি। (ভাবি)
— আর তাছাড়াও আমি নিশ্চিত ও কোন এক কান্ড ঘটিয়ে এসেছে। যখনই কোন কিছু ঘটিয়ে আসে তখন ও এমন করে কথা বলে। (স্পর্শি)
— কি জানি ! অনেক বেলা হয়েছে। বড় বউমা তুমি ওর খাবারটা দিয়ে আসো। (আম্মু)
— আমি পারব না আম্মু,,তোমার ছোট ছেলের হবু বউকে বলো। (ভাবি)
— না না,,আমি পারব না। (শিমলা)
— তোমাকেই যেতে হবে। এই নাও খাবারের প্লেট। (স্পর্শি)
সবাই একসাথে হেসে দিল। আর শিমলা প্লেট নিয়ে আস্তে আস্তে শ্রাবনের রুমের দিকে যেতে লাগল।।
————————————
নিজের রুমে বসে ভাবতেছি। আজকে হটাৎ আমার কি হয়ে গেল..? কেন হটাৎ করে এত রেগে গেলাম.?
তাও আবার শিমলার কারনে। কেউ যদি শিমলাকে বাজে কথা বলে তাহলে আমার কি? আমার এমন কেন হয়.? কিছুই বুঝি না।
এদিকে হাতের দিকে তাকিয়ে দিয়ে অনেকটা রক্ত বেরিয়েছে। ফার্মেসিতে গেলেই বোধহয় ভালো হতো।
হাতের রক্তটা পরিষ্কার করতেছিলাম তখনই শিমলা খাবার প্লেট নিয়ে আমার রুমে চলে এলো।
আমি তাড়াতাড়ি করে ঠিক হয়ে বসে পরলাম।।
শিমলা হয়তো আমার কাটা জায়গাটা দেখে ফেলেছে।
কিন্তু শিমলা খাবার প্লেট টেবিলে রেখেই চলে গেল।
এমন আচরণ দেখে মনটা একটু খারাপ হলো।
আগে তো আমার কিছু হলেই শিমলা অনেক চিন্তা করত। আমার যত্ন নিত। তবে এখন কেন.?
নিজের মাথা থেকে এসব ঝেরে ফেলে দিলাম।
হাত দিয়ে যখন খাবার খেতে যাব তখনই ভিষণ ব্যাথা পেলাম। হাতটা জ্বলে উঠল। আমার তো মনেই ছিল না যে হাত কেটে গেছে।
আমি হালকা একটা চিৎকারে করে উঠলাম।
আর তখনই শিমলা দৌড়ে আমার রুমে চলে এলো।
হাতে একটা ফাস্টএইড বক্স।
আমি ওকে দেখে একটু নড়েচড়ে বসলাম।
শিমলা আমার কাছে এসে আমার হাতটা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করতে লাগল।
— এটার কোন……(আমাকে থামিয়ে)
— একদম চুপ…(জোরে বলে উঠল)
আমি শিমলার চোখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারলাম না।
হাতে ব্যান্ডেজ শেষ করেই শিমলা কিছু না বলে চলে গেল।
আমি খাবার খেতে গিয়ে ব্যর্থ হই। কারন হাতে ব্যান্ডেজ করা। তখনই…………..
.
.
.
.
.
.
#চলবে…..????