গল্প: ভুলের মাশুল
পর্ব: ১৭
লেখক: হানিফ আহমেদ
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অর্ণিকে আর মিরাকে দু’টু চেয়ারে বেধে রেখেছে।
অর্ণি আর মিরার চোখ বন্ধ মানে ওদের অজ্ঞান করা হয়েছে।
ভিডিওতে এক মুখোশ পরা লোক কথা বলছে।
লোক: মিস্টার অর্ণব দুই দিন টাইম দিলাম তোকে। পারলে তোর অর্ণিকে নিয়ে যা আমার কাছ থেকে।
ঠিক দুইদিন পর আমি অর্ণিকে বিয়ে করবো। সেটা অর্ণির অনিচ্ছাকৃত হলেও।
খুঁজতে থাক।
অর্ণি আমার আর কারো হতে দেবো না।
অর্ণব রেগে গর্জে উঠে।
অর্ণব: আমার সাথে এতো কিসের শত্রুতা মানুষের।
শুধু শত্রু আর শত্রু।
এই শহরকি আমার জন্য অপয়া হলো’রে হানিফ? (কান্না করছে। কারণ এই কিছুদিনে সে অর্ণিকে ভালোবেসে ফেলছে।)
হানিফ: কান্না করবি না।
দুইদিন টাইম দিছে তাই তো, এই দুইদিনে শহরের অলিগলি সব তন্নতন্ন করে খুঁজবো আমরা।
যদি সে কোনো গুহায় লুকিয়ে থাকে তাহলেও খুঁজে বের করবো।
শান্ত কর নিজেকে।
অর্ণব: আমার সাথেই কেন বারবার এমন হয়?
হানিফ: জানিস একটা কথা?
অর্ণব: কি?
হানিফ: আম্মু বলেন,
~যার শত্রু নেই সে কখনো সুখ এর স্বাদ ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে না~
আম্মুর কথার মানে আজ বুঝলাম।
তোর অনেক শত্রু,
দেখ তুই কিন্তু সুখেই আছিস।
ইশুর খুনিদের ধরে কিন্তু তুই নিজের ক্লান্তি ভুলে খুব আরামে রাত্রি কাটাতে পারছিস।
জয়কে ধরেও শান্তি পেয়েছিস।
এটাই বাস্তব, কিছু শত্রু না থাকলে জীবনের মূল্যটা বুঝা যায় না রে।
অর্ণব: হুম, কিন্তু তুই একটা কথা জানিস?
হানিফ: কি?
অর্ণব: কেউ তার সাধ্যের বাহিরে বেশি কিছু করতে পারে না।
আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি শুধু শত্রু চিহ্নিত করতে করতে।
কিছু মরে আবার কিছু জন্ম নেয়।
হানিফ: বলছিনা কান্না করবি না।
তুই একা না, আমরা আছি তো।
সবাই মিলে অর্ণিকে খুঁজবো।
অর্ণির ফ্যামিলি অর্ণির কিডন্যাপ এর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পরে।
অর্ণির মা: বাবা অর্ণব যেভাবে হোক আমার মেয়েকে খুঁজে এনে দাও।
অর্ণব: আম্মু আমার দেহে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও অর্ণির কোনো ক্ষতি করতে দেবো না আমি।
সেটা আমার জীবনের বিনিময়েও হলে।
অর্ণব ফোন রেখে দেয়।
অর্ণবের মা জাহানারা বেগম নিজেকে দোষ দিচ্ছেন।
জাহানারা: কেন অর্ণিকে যেতে দিলাম আমি।
যদি মানা করতাম তাহলে হয়তো আজ এমন হতো না।
রফিকুল: নিজেকে দোষ দিবে না তো।
এটা হওয়ার ছিলো,
অর্ণব ক্লান্ত হয়ে ড্রাইভিং ছিটে বসে আছে,
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, বিকেল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা নামছে, অর্ণির কোনো খুঁজ পেলো না।
হানিফ: বাসায় যা, এখনো আরো একদিন টাইম আছে। কাল সকাল থেকে আবার খুঁজবো।
আমরা CID টিম এক হয়ে সারা দিন খুঁজবো অর্ণিকে।
অর্ণি: কে আমাদের এখানে এনেছে। কে বেধে রাখছে আমাদের এখানে।
মিরা: আমি বাসায় যাবো, কেউ আছো, আমাদের বাঁধন খুলে দাও।
অর্ণি: অর্ণব, অর্ণব, (চিৎকার করে ডাকছে।)
কেউ দরজা খুলতে খুলতে,
অচেনা লোক: যতোই অর্ণব অর্ণব করে চিৎকার করো না কেন, অর্ণব কেন কেউ তোমায় বাঁচাতে আসবে না।
অর্ণি: কে তুই, মুখোশ পরে আছিস কেন?
অচেনা লোক: আরে আরে, এতো ঝাল কেন গো।
খুব তাড়াতাড়ি দেখবে আমায়, শুধু কালকের দিনটা যেতে দাও।
অর্ণি কান্না করছে।
অর্ণব রুমে বসে আছে, চেনাজানা সবাইকে ফোন দিয়েছে অর্ণির খুঁজ কেউ জানে না।
অর্ণব রুমটা ভালোভাবে দেখলো। অর্ণির কিডন্যাপ হওয়ার কোনো সুত্র কি পায়।
অর্ণব একটা ডাইরি পেলো।
যেটাতে শুধু অর্ণবকে নিয়ে অর্ণির লিখা সব স্বপ্ন, খুব নিখুঁত ভাবে লিখে রাখছে অর্ণি।
অর্ণব ডাইরি পড়ছে আর ভাবছে,
ঠিক ইশিতার মতো, সব ডাইরিতে লিখে রাখছে।
নিজের মনের সব কথা।
ইশিতার মতো অর্ণিকেও কি হারিয়ে ফেলবো।
আমার জীবনে কি ভালোবাসা শব্দটা বেমানা।
অর্ণব ভাবছে আর কাঁদছে।
ডাইরির এক পৃষ্ঠায় অর্ণবের চোখ আটকে যায়।
আজ অর্ণবের গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।
খুব ভালো লাগছে।
অর্ণব নিজে আজ কাজল পড়িয়ে দিয়েছে আমার চোখে।
ইশ ওর ঠোঁট জোড়া আমার চোখে যখন ছুঁয়ায়, কি যে অনুভূতি হচ্ছিলো।
আজ আর লিখবো না, একবারে অর্ণবের বাড়িতে গিয়ে লিখবো।
অর্ণব পরের পৃষ্ঠা উল্টালো।
খুব ভালোই কাটছিলো গাড়িতে থাকা মুহূর্ত গুলো।
চার দিকে মনমাতানো প্রাকৃতিক পরিবেশ।
আর পাশে বসা আমার রাজকুমার।
কিন্তু মুহূর্তেই মন খারাপ হয়ে গেলো।
যখন দিপু বললো।
পেছনে জিরাফ এর স্ট্যাচু করা কালো রঙের গাড়িটি ঢাকা থেকে আমাদের পিছু নিচ্ছে।
কেন ও আমার পিছু ছাড়ছে না? আমায় কি শান্তিতে থাকতে দিবে না।
ও যদি আমার অর্ণবের কোনো ক্ষতি করে নেয়।
না না কি ভাবছি এসব।
অর্ণব ডাইরির প্রতিটা লাইন পড়লো। সেই ও এর নামটা খুঁজে পেলো না।
অর্ণবের আজকের রাতটা ভালো লাগছে না।
আজ বুকটা শূন্যে ভরা।
নাই কারো মাথা।পারছেনা কারো চুলের ঘ্রাণ নিতে।
মনের সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে অর্ণির থেকে দূরে রাখতো।
শুধু একবারে আপন করে নেওয়ার জন্য।
কিন্তু এখন পস্তাতে মন চাচ্ছে।
নিজের অজান্তে কোনো ভুল করলো না তো অর্ণব এতোদিন।
রাত ৯ টা,
নিধী: ভাইয়া ও ভাইয়া আম্মু ডাকছেন আসো ভাত খাবে।
অর্ণব: গিয়ে বল এখন খাবো না, ভালো লাগছে না।
নিধী: তুমি আসবে নাকি আমি না খেয়ে ঘুমাবো, আমিও খাইনি। আসো ভাইয়া তাত্তালি আসো।
অর্ণব: ক্ষিদে নাই আমার।
নিধী: দাঁড়াও, মিথ্যে কথা বলছো তো, আমি আম্মুকে নিয়ে আসছি।
অর্ণব: এই না না, তুই না আমার লক্ষী বুড়ি, যা আমি আসছি।
নিধী: আমি লক্ষী কিন্তু বুড়ি না।
এই দেখো আমার শরীরের চামড়া এখনো কতো শক্ত।
অর্ণব: হিহিহি,
নিধী: ভাইয়া তুমি শুধু শুধু আপুকে বকতে, রাগ দেখাতে, দেখছো আপু অভিমান করে কোথায় হারিয়ে গেছে।
অর্ণব নিধীকে কুলে নিয়ে।
অর্ণব: আমি খুঁজে বের করবো রে বুড়ি।
নিধী: আবার বুড়ি বলছো পিচ্ছি ভাইয়া।
অর্ণব খেয়ে এসে, সাহিল কে ফোন দিলো।
অর্ণব: আসসালামু আলাইকুম।
সাহিল: ওয়ালাইকুম আসসালাম।
অর্ণির কোনো খুঁজ পেয়েছো?
অর্ণব: না ভাইয়া, জানি না আমার সাথে এমন হয় বারবার,
সাহিল: কেঁদো না ভাই।
ধৈর্য ধরো।
অর্ণব: আম্মু আব্বু কি করছেন?
সাহিল: আম্মু কান্না করছেন এখনো, আব্বু বুঝাচ্ছেন কিন্তু উনি বুঝতে নারাজ।
অর্ণব: কান্না করতে মানা করো।
নাহলে অসুস্থ হবেন।
সাহিল: হুম, এই দিকে মিরার মা’ও কান্না করে একাকার হিয়ে যাচ্ছেন।
অর্ণব: ওদের বলো কান্না না করতে, কাল দিনেই অর্ণি আর মিরাকে নিয়ে আসবো আমি।
সাহিল: হুম
অর্ণব: আচ্ছা ভাইয়া একটা প্রশ্ন করি?
সাহিল: হুম করো।
অর্ণব: অর্ণির কি আগেও কোনো সম্পর্ক ছিলো?
সাহিল: না’রে তুমিই ওর প্রথম ভালোবাসা।
অর্ণব: ওও, তাহলে,
সাহিল: তাহলে কি?
অর্ণব ডাইরির লিখার কথা বললো।
সাহিল: কিহহ?
অর্ণব: চিনো নাকি ভাইয়া, ওই গাড়িকে?
সাহিল: হুম,
আমারতো ওর কথা মনেই ছিলো না।
অর্ণব: কে ভাইয়া?
সাহিল: আমার চাচাতো ভাই রাফি, যে অর্ণিকে বিয়ে করতে চায়।
অর্ণব: আমিও তো ওর কথা ভুলে গেছিলাম।
সাহিল: রাফি কিছু করেনি তো আবার?
অর্ণব: কালকেই দেখা যাবে ভাইয়া।
সাহিল: হুম।
অর্ণব ঘুমানোর জন্য বিছানা গুছালো।
আজ প্রতিটা কাজে অর্ণিকে মিস করছে অর্ণব।
বুঝতে পারছে সে শুধু অর্ণিকে ভালোবাসেই নি। অর্ণি তার অভ্যাস হয়ে গেছে।
কারো প্রেমে পড়লে তাকে কিন্তু ভুলতে বেশিদিন লাগে না।
কিন্তু কাওকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করলে তাকে ভুলে যাওয়া খুব কঠিন।
অর্ণি শুয়া থেকে উঠে পরলো।
তাহলে কি আমি ইশিতাকে কখনো ভালোই বাসিনি।
শুধু প্রেমে পরেছিলাম।
নাকি,,
কিছু ভবতে পারছে না অর্ণব।
সকাল সকাল উঠতে হবে অর্ণবকে, তাই ঘুমিয়ে পরলো।
সকালের মিষ্টি রোধে অর্ণবের ঘুমটা ভেঙে যায়।
জানালার পর্দা লাগাতে ভুলেই গেছিলো।
অর্ণব ব্রাশ হাতে নিয়ে বাগানে গেলো।
দাঁত ব্রাশ করছে আর বাহিরের প্রকৃতি দেখছে।
পাখিরা নিজের আহার খুঁজতে পারি দিচ্ছে অজানা পথে, কিন্তু সন্ধ্যায় আবার তাদের চিরো চিনা বাসস্থানে আসবে।
অর্ণব দাঁত ব্রাশ করে,
হালকা নাশতা করে বের হয়ে পরলো অর্ণির উদ্দেশ্যে।
~আজ মনের ছবিতে,
তোমার কালো ছায়া।
আমার কবিতায় আজ
ছন্দ ছাড়া,
এক অগোছালো ভাঙা শব্দের হাহাকার।
যে ছন্দে তোমায় হারাতাম,
সেই ছন্দে আজ তোমায় খুঁজার আহাজারি।~
অর্ণব ভাবছে আর গাড়ি ড্রাইভ করছে।
অর্ণব, রেজা,হানিফ, রাহিন, নিতিন, যাচ্ছে রাফির বাসায়।
কলিং বেল বাজালে এক বয়স্ক লোক দরজা খুলে দেন।
হয়তো রাফির বাবা।
অর্ণব সালাম করলো,
রাফির মা ওদের বাড়িতে গিয়েছেন। কিন্তু বাবা যায় নি।
রাফির বাবা সিরাজুল এতোজনকে দেখে একটু অবাকি হন।
ওদের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন।
সিরাজুল: কে তোমরা?
অর্ণব: আমি অর্ণির স্বামী। আর এরা CID officer,
সিরাজুল: ওও, আমার অর্ণি মা’র কোনো খবর পেলে বাবা।
রাফির মা রান্না ঘর থেকে আসতে আসতে,
রাফির মা: আরে জামাই বাবাজি যে,
অর্ণব সালাম দিলো।
রাফির মা সালামের উত্তর দিয়ে,
রাফির মা: অর্ণির কোনো খুঁজ পেলে বাবা?
অর্ণব: না এখনো পাই নি। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি পাবো।
সিরাজুল: জানি না মেয়েটার সাথে কে এমন করলো?
অর্ণব: আপনার ছেলে করেছে।
আপনার ছেলে করেছে, কথাটি শুনে রাফির মাবাবা দুজনি অবাক হয়ে,
মা বাবা: কিহহ?
অর্ণব: হুম, রাফি কি কাল থেকে বাসায় এসেছে?
সিরাজুল: না বাবা, ও নাকি ওর বব্ধুর বাসায় গিয়েছে।
রেজা: অর্ণব বুঝে গেছি শিকার আমাদের হাতের নাগালেই আছে। তা আপনাদে ছেলে নিজের চাচাতো বোনকে আর ওর ক্লাসমেট কে কেন কিডন্যাপ করলো বলতে পারেন।
রেজার রেগে কথা বলাতে ওরা ভয় পেয়ে যায়।
সিরাজুল: আমরা জানি না। কেন কিডন্যাপ করতে পারে।
রেজা: আমি বলে দিচ্ছি কেন কিডন্যাপ করেছে, কারণ সে নাকি অর্ণিকে বিয়ে করবে,
মিস্টার সিরাজুল আপনি আপনার ছেলের আশা ছেড়ে দিন।
আর এটা বলেন, আপনাদের কি আলাদা কোনো বাংলো আছে?
সিরাজুল: হুম আছে, এখান থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে, ২নাম্বার রাস্তার ৫নাম্বার বিল্ডিং।
রেজা: রাফি কোনো ফোন দিলে আমাদের কথা ভুলেও বলবেন না। আমরা যে এখানে এসেছিলাম।
দুই ঘন্টার মধ্যে অর্ণিকে ফিরিয়ে আনবো আর রাফিকে জেলে।
ওরা রাফির বাবার দেওয়া ঠিকানা মতোন যায়।
গিয়ে দেখলো বাসার দরজা ভিতর থেকে আটকানো।
বুঝতে সমস্যা হলো না।
ভিতরে যে তাদের শিকার আছে।
রেজা: হানিফ নিতিন তোমরা বাসার পেছন দিকে যাও,
আর আমরা সামন দিকেই যাচ্ছি।
হানিফ: জ্বি স্যার যাচ্ছি।
হানিফ আর নিতিন রেজার কথা অনুযায়ী বাসার পেছনের দিকে যায়।
অর্ণব কলিং চাপলো,
কোনো রেসপন্স পেলো না ভিতর থেকে।
অর্ণব দরজার লক বরাবর ফায়ার করে, দরজা খুলে যায়,
ভিতরে তিনজন মুখোশ পরা লোক।
অর্ণবরা ভিতরে ডুকতেই।
ওদের মধ্যে একজন,
:সামনে আগাবে না, নইলে গুলি করে দেবো।
অর্ণবের বুঝতে বাকি রইলো না, এটাই রাফি।
অর্ণব: কাপুরুষ তুই, নারীর মাথায় বন্ধুক টেঁকিয়ে কোনো মহাপুরুষ এর কাজ দেখাচ্ছিস না তুই।
: চুপ কর, আরো এক পা সামনে আসলেই ওর মাথা উড়িয়ে দেবো।
অর্ণব: দে দেনা উড়িয়ে দেখি তর কেমন সাহস মিস্টার রাফি।
অর্ণি: রাফি তুমি।
রাফি: চিনেই গেছিস যখন তাহলে আর মুখ ঢেকে লাভ কি, মুখোশ খুলে দিলো।
অর্ণি: ছিঃ ছিঃ, এতোটা নিচে নেমেছিস তুই, নিজের চাচাতো বোনকে কিডন্যাপ করেছিস।
রাফি: বোন না বউ হবি বউ।
অর্ণব: স্যার ওর মাথা উড়িয়ে দেই বন্ধুকের গুলি দিয়ে?
রেজা: না, রাফি বন্ধুক নিচে করো, তোমার সঙ্গীদের বন্ধুক নিচে রাখতে বলো।
রাফি: হা হা, কখনো না।
হয়তো আজ বিয়ে করবো অর্ণিকে নয়তো ওরে জানে মারবো।
রাহিন নিশানা লাগিয়ে মিরার সাইডে থাকা একটার হাতে গুলি করে
তখন রাফি আর ওর আরেকটা চামচার দৃষ্টি তখন যার হাতে গুলি লেগেছে তার দিকে।
সেই সুযোগে অর্ণব আর রেজা গিয়ে রাফি আর অন্য একটার কাছ থেকে বন্ধুক কেরে নেয়,
অর্ণব রাফিকে কিছু উত্তমমধ্যম দিয়ে,
অর্ণব: কি রে কাপুরুষ বলছিলি তুই আমায় দুইদিন টাইম দিয়েছিস অর্ণিকে খুঁজার জন্য, আমি পেয়েছি আমার অর্ণিকে খুঁজে।
(অর্ণির কানে একটা শব্দই আসছে, আমি পেয়েছি আমার অর্ণিকে খুঁজে)
কিছুদিন আগেই জেল থেকে বের হয়েছিস, কিন্তু তোর লজ্জা নাই, আবার তুই আমার আর অর্ণির পিছনে লেগেছিস।
এবার তো দুইজনকে কিডন্যাপ এর দায়ে যাবজ্জীবন হবে তোর।
রাফি: ভুল করেছি, তখনি অর্ণিকে মেরে দিতাম,,
অর্ণব কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে,
রেজা: অর্ণব এদের গাড়িতে তুলো,
অর্ণব: হুম স্যার,
ওদের গাড়িতে তুলার পর,
অর্ণি গিয়ে অর্ণবকে ঝাপটে ধরে।
অর্ণব: আরে পাগলী করছো কি?
স্যার সহ সবাই দেখছে তো। (আস্তে আস্তে বললো)
অর্ণি: ওও সরিইই( অর্ণবকে ছেড়ে দিয়ে)
রেজা আর রাহিন মুচকি হেসে, পাগল একটা।
নিতিন মিরাকে দেখে,
নিতিন: হানিফ ভাবির সাথে মেয়েটাও কিউট কিন্তু,
হানিফ: ওমা আজকাল CID officer ও লুচু দেখা যাচ্ছে।
নিতিন: হুহ, ভাই প্রেম লাগিয়ে দে?
হানিফ: স্যারকে বলি?
নিতিন: না না, আমি চিরোকুমার থাকবো ভাই, তারপরেও স্যারকে বলিস না, তাইলে যে আমার চাকরীটা থাকবে না।
হানিফ: হাহাহাহা।
আজ অর্ণবের বাড়িতে যেন ঈদ লেগেছে, অর্ণির মা বাবা ভাই এসেছে, অর্ণবের ফ্রেন্ডসরাও এসেছে, অর্ণবের মা অনেক কিছু রান্না করেছেন।
বলতে গেলে ছোটখাটো একটা উৎসব বলা যায়।
সাহিল: অর্ণি এসব কিভাবে হলো?
অর্ণি: ভাইয়া আমি আর মিরা শপিং করার জন্য বের হই, আমরা কিছুদূর যাবার পর আমাদের গাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে থামে।
আমি আর মিরা কথা বলার জন্য গাড়ি থেজে নামি, তারপর আর কিছু মনে নেই,
কিছুক্ষণ পর এক অন্ধকার বন্ধ ঘরে নিজেকে বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম।
সাহিল: তোর যা কিছু লাগে, অর্ণবকে বলবি, বা আমায় বলবি, তারপরেও এভাবে কোথাও একা যাবি না।
অর্ণি: একা যাই নি তো। মিরাও তো ছিলো।
সাহিল: ও তো মেয়ে।
অর্ণি: হুম।
রাতে খাবার পর,
অর্ণি: অর্ণব আমার জন্য তোমার কষ্ট হয়েছে কি?
অর্ণব: না না কষ্ট হবে কেন, আমি তো রুমে ডিজে গান লাগিয়ে ডান্স করেছি।
অর্ণি: রেগে যাচ্ছো কেন?
অর্ণব: অনর্থক প্রশ্ন করো কেন।
অর্ণি: চলো না বাগানে যাই?
অর্ণব: রাত ১০টা বাজে।
অর্ণি: তো?
অর্ণব: ভয় পাবে না বুঝি?
অর্ণি: অর্ণি কাওকে ভয় পায় না। (চুল গুলো ঠিক করতে করতে)
অর্ণব: প্রেতনী কি কখনো জীন ভুতকে ভয় অয়ায়।(আস্তে বললো)
অর্ণি: কি বললে?
অর্ণব: কিছু না, যাবে কি বাগানে?
অর্ণি: হুম,
অর্ণব আর অর্ণি বাগানের রাখা দোলনা তে বসে আছে,
অর্ণি অর্ণবের কাদে মাথা রেখে, ওই দূর আকাশে মায়াবী চাঁদের মুখ পণে তাকিয়ে আছে। চাঁদটা যেন আজ হাসছে, চাঁদের আলোয় দেখা যাচ্ছে ওদের একে ওপরকে।
অর্ণি: ইশ এখন যদি বৃষ্টি আসতো।
অর্ণব: তাহলে সুন্দর একটা ঘুম হতো আমার।
অর্ণি: কচু, তোমায় নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতাম।
বৃষ্টির প্রতিটা স্পর্শ তোমায় নিয়ে উপভোগ করতাম।
অর্ণব: ভিজার সময় যদি বিদ্যুৎ চমকায় তখন?
অর্ণি: তোমার বুকে নিজেকে লুকিয়ে নিতাম।
অর্ণব: বাব্বাহ কি লোমান্তিক বউ আমার।
অর্ণি: যাহ তুমিও না।
আবার কিছুটা সময় নীরবতা,
অর্ণব দোলনায় শুয়ে পরে অর্ণির কুলে মাথা রেখে।
অর্ণি অর্ণবের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।
অর্ণব: আজকের চাঁদটা খুব সুন্দর তাই না?
অর্ণি: কচু, তার চেয়ে তুমি অনেক সুন্দর।
অর্ণব: তাই নাকি।
অর্ণি: হুম
অর্ণব: আচ্ছা তুমি আমার কি দেখে প্রেমে পড়লে?
অর্ণি: এসবের বর্ণনা দিতে গেলে রাত কেটে যাবে। তবুও শেষ হবে না।
রাতে অর্ণি অর্ণবের বুকে শুয়ে আছে
হয়তো অর্ণি ঘুমিয়ে গেছে।
রাত ১২টা ছুঁই ছুঁই।
হঠাৎ অর্ণবের ফোন বেজে উঠে।
অর্ণি ফোনে কথা বলে অনেক খুশি হলো।
সকালে
অর্ণব: হানিফ কোথায় তুই?
হানিফ: বাসায়
অর্ণব: আজ এক জায়গায় যাবো, তুই সারপ্রাইজ হয়ে যাবি।
হানিফ: সরি রে, আজ একটা বিশেষ কাজ করবো। তোর সাথে যেতে পারবো না।
অর্ণব: ধুর আয় তো।
হানিফ: প্লিজ আজ ছেড়ে দে আমায়।
তুই একাই যা, তোকে একটা খুশির খবর শুনিয়ে সারপ্রাইজ করবো।
অর্ণব: তোর ওই খবর এর চেয়ে আমারটা বেশি বড় সারপ্রাইজ।
আচ্ছা দু’জন দু’জনকে সারপ্রাইজ করবো।
হানিফ: আচ্ছা।
অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে শহর থেকে একটু দূরে।
এক সুন্দর লোকালয়ে।
বর্তমানে সে এক ঘরের মধ্যে একটা ছোট্ট রুমে বসে আছে।
অপেক্ষা করছে তার প্রাণ পাখিকে দেখার জন্য,
(হুম ইশিতার খুঁজ পেয়েছে।
রাতে অর্ণবের বয়সী একজন ছেলে ফোন দিয়ে বলেছে ইশিতার কথা)
এক বয়স্ক মহিলা ইশিতাকে নিয়ে আনেন,।
অর্ণব বিশ্বাস করতে পারছে না, এটা ইশিতা,
বা পা’য়ের হাটু পর্যন্ত কাটা।
রুপ আগ থেকে সুন্দর হলেও, চোখের নিচে কালিলি পরেছে।
অর্ণব নিজেকে ঠিক রাখতে পারে নি, দৌড়ে গিয়ে ইশিতাকে ঝাপটে ধরে।
অর্ণব আজ মন খুলে কান্না করছে।
ইশিতাও কান্না করছে। ইশিতার পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক ছেলে অর্ণবের বয়সী।
অর্ণব: একবারো কি আমাদের কথা মনে পরলো না তোর?
ইশিতা: মনে পরেছে, কেমন আছো তুমি? (অর্ণবকে ছাড়িয়ে, কান্না করে)
অর্ণব: বাহ, তুমি হয়ে গেলাম।
ইশিতা: হুহ, সময় পালটে গেছে।
হানিফ, মৌ, রাতুল, সজিব, দিপু, রণি ওরা কেমন আছে, হানিফ আসলো না,
অর্ণব: হানিফ এক জায়গাতে গেছে, কি কাজ জানি আছে।
ইশিতা: ওওও, অর্ণব এটা আমার স্বামী রিফাত।
অর্ণব: বাহ বিয়ে করেছিস,
ইশিতা: কেন তুই করিস নি বুঝি?
অর্ণব: হুম দু’মাস হয়ে যাচ্ছে বিয়ে করেছি।
ইশিতা: ভালোই,
অর্ণব: কবে করলি?
ইশিতা: আজ ২০ দিন হলো।
কারো জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।
অর্ণব কেঁদে,
অর্ণব: আমিও কারো জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।
আচ্ছা এসব থাক।
ইশিতা: আম্মু আব্বু আর রবি কেমন আছে?
অর্ণব: ওদের কেউ খুন করেছে, (কষ্ট হলেও বলেছে)
ইশিতা: আব্বুকে তো আমার সামনেই মেরেছেলো।
অর্ণব দেখো আমার বা পা টা ওরা কেরে নিয়েছে, সেদিন যদি রিফাতকে না পেতাম তাহলে আজ আর বেচে থাকতাম না।
অর্ণব: তোর ফ্যামিলির খুনিদের আমি শাস্তি দিয়েছি।
ইশিতা: কিভাবে সব জানলি।
ইশিতাকে সব খুলে বললো, ডাইরির কথা বললো।
অর্ণব: সত্যিই আমার ভুলের জন্য এমন হয়েছে,
ইশিতা: তোমার ভুল মানে?
অর্ণব:ডাইরিতে লিখা লেখা গুলো আমি পড়েছি।
আমায় কেউ ভালবাসতো।
কিন্তু আমি তাকে মনের কথাটা বলতে পারিনি।
ইশিতা: এসব থাক এখন, আমিও তো কম অপেক্ষা করিনি, কিন্তু রিফাতের ভালোবাসা আমায় বাচিয়ে রেখেছে। আমার কাছে একটু ভালোবাসা ভিক্ষা চেয়েছে সে।
অর্ণব: ভালো করেছিস, আমার বিয়েটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।
ইশিতা: মানে?
অর্ণব ইশিতাকে সব খুলে বললো।
অর্ণব: রিফাত ভাই একটা কথা বলি?
রিফাত: হুম বলেন,
অর্ণব: তোমরা আর এখানে থাকবে না
।
ইশিতার বড় বাসা আছে ওইটাতে থাকবে।
ইশিতা: আমার বাসা এখনো আছে কি। ওরা নেয় নি।
অর্ণব: ওদের ফাসির অর্ডার আসবে।
ইশিতা: খালামণি কেমন আছেন?
অর্ণব: ভালোই তোর জন্য কান্না করেন সব সময়, আর উনার স্বামীকে আর ছেলেকে ফাসি দেওয়ার কথা বলছেন।
ইশিতা: এতে তো আমার আম্মু আব্বু ভাই কে ফিরে পাবো না।
অর্ণব: কাঁদিস নারে।
রিফাত চলো,
আন্টি আপনিও চলেন।
রিফাত: হুম, ইশিতার মুখে আপনাদের সবার কথা শুনেছি। হানিফ যার কথা বেশি বলেছে,আর আপনি তো ওর মনের ঘরে ছিলেন।
অর্ণব: এসব থাক,
ইশিতা: কাপর চেঞ্জ করে আসি।
অর্ণব: কিছুই না,
এভাবেই চল।
হানিফ তোকে যখন ইশু পাখি ডেকে জড়িয়ে ধরবে তখন আমি বেশি খুশি হবো রে।
ইশিতা:হুম, খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
অর্ণবের ফোন বেজে উঠে,
ফোন রিসিভ করে,
ওপাশের কথা গুলো শুনে অর্ণবের হাত থেকে ফোনটি পরে যায়,
ইশিতা: কি হয়েছে অর্ণব?
অর্ণব কিছুই বলছে না, চিৎকার করে কান্না করছে, তার কান্নার আওয়াজ ইশিতার বুকে গিয়ে লাগছে।
ইশিতা: অর্ণব বলো কি হয়েছে?
চলবে,,,,
(আরো দুই পর্বে শেষ করে দেবো।
কালকের পর্বটাই আসল ঝমক।
গল্পের ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আশাকরি উৎসাহ দিবেন)
ভালো থাকবেন।
ঘরেই থাকবেন।