ধর্ষিতা বউ পর্ব-১৬

0
4555

গল্প —- ধর্ষিতা বউ
লেখক —- মাহমুদ
পর্ব ১৬
@@@@@@@@@@@@@@@@@@
পার্ট ১৫ এর পর
প্রাপ্তি পেছনে তাকিয়ে দেখে তূর্য এক গুচ্ছ শিশির ভেজা লাল গোলাপ নিয়ে প্রাপ্তির দিকে হাটু গেড়ে হাত বাড়িয়ে আছে।
-প্রাপ্তি আমি তোকে অনেক ভালোবাসি রে।আমি তোর ওই অনাগত বাচ্চার বাবা হতে চাই।একটা সুযোগ দিবি প্লিজ?
-তুই এতোরাতে ছাদে কি করে এলি?
-পানির পাইপ টপকে।
-তোর তো দেখি কলিজাটা অনেক বড় হইসে রে।
-ধুর এসব বাদ দে তো।আমার উত্তর দে তুই আগে।
-তুই আগে উঠে দাড়া।
-না তুই এই ফুলগুলো নিবি,একটা উত্তর দিবি তারপর আমি উঠবো।প্লিজ জলদি বল।পায়ে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।
প্রাপ্তি ফুলগুলো হাত থেকে নিয়ে কিছু না বলেই একপাশে গিয়ে দাঁড়ালো আর বলল
-এইদিকে আয়।
তারপর তূর্য উঠে প্রাপ্তির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল
-কিছু বলবি না?
-দেখ তূর্য সায়ান যতকিছুই করুক না কেনো ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।আমার গর্ভে এখন ওর সন্তান।আমি ওর সাথে ৬ টা মাস সংসার করেছি।ও যত অত্যাচারই করুক না কেনো দিনশেষে তাও ও আমার হাজব্যান্ড তাইনা?
-তুই কি বলতে চাচ্ছিস প্রাপ্তি?তোদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ তা তো হয়ে গেছে কিন্তু…
-কিন্তু কি প্রাপ্তি?তুই কি তোর লাইফে মুভ অন করতে চাস না?তুই কি চাস না তোর অনাগত বাচ্চাটা কাউকে বাবা বলে ডাকুক?
-তূর্য প্লিজ।আমাকে এতো ডিপ্রেসড করিস না।
-দেখ প্রাপ্তি আমি সেই ছোট্ট বেলা থেকেই তোকে ভালোবাসি।সেটা তুইও ভালো করে জানিস।
-কবে বিয়ে করবি আমায়?
তূর্য অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো প্রাপ্তির দিকে।
-তুই রাজি?
-কবে বিয়ে করবি আমায়?
-তুই চাইলে এখনই।
-থাক এতো ভালোবাসা দেখাতে হবেনা এখন।কালকে আন্টিকে নিয়ে বাসায় আসিস।
-আন্টি কে রে?
-তোর মা মাথামোটা!!
-এখনো আন্টি বলে ডাকবি?
প্রাপ্তি কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিলো তূর্য এর হাতটা চেপে ধরে পেছন থেকে।
-আমার উত্তরটা দিবি না?.-সেটা এখনো পাস নি বুঝি?
-তবুও আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই সেটা।
-তূর্য হাত ছাড়।
-না আগে বল।
এই বলে তূর্য প্রাপ্তির সামনে এসে দাঁড়ালো।বলল,
-বলনা তুই আমায় ভালোবাসিস?
-হ্যাঁ বাসি।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি তূর্য কে সরিয়ে চলে গেলো।তূর্যর খুশির সীমা ছিলোনা।দুইহাতে মেলে আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে তার সব ভালোলাগাকে উপভোগ করছে।

সকালে তূর্য আর ওর মা আসলো প্রাপ্তিদের বাসায়।বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে।সবাই ড্রইং রুমে বসে ছিলো।বিয়ের কথা হচ্ছে।প্রাপ্তির এই পরিস্থিতিতে বিয়েটা কিভাবে দিবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা কেউ।তারপর তূর্য বলল
-বিয়েতে কোনো জাঁকজমক অনুষ্ঠান করার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি চাই ঘরোয়াভাবে সব মিটে যাক।আর যেহেতু প্রাপ্তির এই অবস্থা তাই আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে বিয়ে করে নিতে যেতে চাই।
-কি এই অবস্থায় ওকে এখন….(প্রাপ্তির মা)
-আপনি চিন্তা করবেন না মা।প্রাপ্তি যথেষ্ট স্ট্রং আল্লাহ্‌র রহমতে।আর ও তো বেশি লোড নিতে যাচ্ছেনা।রেগুলার যেমন ভার্সিটি তে যাচ্ছে,ক্লাস করছে,সময়মতো পড়াশুনো, নামাজ-কালাম সবই করছে।আর বিয়েটা আমি ঘরোয়াভাবে করতে চাচ্ছি তাই কোনো সমস্যা হবেনা।
সবাই রাজি হলো।বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক হয়ে গেলো।৫ দিন পরে ওদের বিয়ে।

সাধারন দিনগুলোর মতোই যাচ্ছে ওদের দিনগুলো।এর মধ্যেই একদিন সায়ান আর ওর মা আসলো।ভার্সিটি থেকে এসেই প্রাপ্তি দেখে তারা ড্রইং রুমে বসে কথা বলছে প্রাপ্তির মায়ের সাথে।সায়ানের মাকে সালাম দিলো।সালাম দিয়েই নিজের রুমে যেতে নিচ্ছিলো তখনই সায়ানের মা প্রাপ্তিকে তার কাছে ডাকলো।প্রাপ্তির ভেতরে কেনো জানি মোচড় দিয়ে উঠলো কি যেনো একটা ভয়ে।তবুও প্রাপ্তি তার কাছে গেলো। যাওয়ার পর তিনি প্রাপ্তিকে তার পাশে বসালেন।বললেন
-কি অবস্থা এখন তোর শরীরের?
-এইতো ফুফু ভালোই আছি।
-ডাক্তারের কাছে যাস ঠিকমতো?
-হ্যাঁ সেদিনই চেকাপ করিয়ে আসছি।
-আচ্ছা।খেয়াল রাখিস নিজের।যা ফ্রেশ হয়ে নে।আমরা তোর সাথে দেখা করতে এসেছি শুধু।সায়ান বাইরে চলে যাবে।আর আমিও এখানে আর থাকবো না।রাজশাহী চলে যাবো
-ওহ।আমার বিয়েতে এসো।
প্রাপ্তির এই কথাটা সায়ানের বুকে চিন করে উঠলো।মনে হচ্ছিলো যেনো ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।বলল
-বিয়ে???
-হ্যাঁ,বিয়ে।
-তারমানে তুমি রাজি হয়ে গেছো বিয়েতে?
-মা তুমি বলোনি?(মায়ের দিকে তাকিয়ে)
তারপির প্রাপ্তি আবার বলে
-সায়ান আপনি যা করেছেন তার কোনো ক্ষমা নেই।আপনি ক্ষমার যোগ্য না।রাস্তার কুকুরের সাথেও মানুষ ওমন আচরন করে না যা আপনি আমার সাথে করেছেন।যাখানেই যান ভালো থাকবেন সবসময়।
বলেই প্রাপ্তি নিজের রুমে চলে গেলো।

সন্ধ্যায় তূর্য কল দিলো।
-কি ব্যাপার কোনো খোজ খবর নাই যে আমার মহারানীর?
-খোঁজখবর নাই তো কি আছে?নিজে কল দিছিস একবারও?
-এইযে দিলাম এখন সারাদিন তোর কোনো খবর না পেয়ে।
-এই ফোন রাখ তো।
-যা বাবা আবার কি হলো?
-তুই ফোন রাখবি???(রেগে)
-আচ্ছা তোর কি হয়েছে বলবি একটু?একটুতেই এতো রেগে যাস কেনো তুই বল তো?
প্রাপ্তি চুপ।
-দেখ আমি জানি তুই প্রেগন্যান্ট। তাই তোর মেজাজ এখন খিটখিটে থাকে।তাই বলে এমন করবি?
-কি বললি তুই??অসভ্য কোথাকার!!আমার মেজাজ খিটখিটে তো আমায় নিয়ে করতে চাস কেনো যত্তসব!!
বলেই ফোন টা কেটে দিলো প্রাপ্তি।

উফফ এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।এখনই এমন করে বিয়ের পরে যে কি করবে আমার সাথে সৃষ্টিকর্তা ভালো জানে।
তূর্য একাএকাই বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।রাতে পড়াশুনো শেষ করে প্রাপ্তি শুয়ে পড়লো।তার কিছুক্ষন পরেই সায়ান কল দিলো।বেশি চিন্তাভাবনা না করে প্রাপ্তি কল রিসিভ করলো।
-ভালো থেকো তুমি সবসময়।
-হুম
-আমি যে কষ্টগুলো দিয়েছি সেগুলো যেনো তূর্যর ভালোবাসা দিয়ে ও তোমাকে ভুলিয়ে দিতে পারে।
-হুম।
-পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
-হুম।
-খালি হুম হুম করবা কিছু বলবা না?
-সব বাজে অভ্যেস ত্যাগ করে নতুন করে শুরু করেন।
-কাকে নিয়ে শুরু করবো?সেরকম কেউ তো নাই।আর আমার দরকারও নাই।আমি হয়তো কারো যোগ্য না।
-আচ্ছা আমি রাখছি।আমার কল আসছে বারবার।
বলে প্রাপ্তি ফোন কেটে দিলো।তূর্য কল দিচ্ছিলো।রিসিভ করতেই
-কি ব্যাপার বিজি ছিলো কেনো?
-সায়ান কল দিয়েছিলো।
-কি বলল
-বাইরে চলে যাবে।আজকে এসেছিলো ফুফু সহ।এখন আমাকে শুভ কামনা দিচ্ছিলো।
-ওহ আচ্ছা।রাগ কমেছে মহারানীর?
-আমি রাগ করলাম কখন আবার?
-ওমা সন্ধ্যায় তো আমার সাথে এতগুলা ঝগড়া করলি।
-হ্যালো মিস্টার ঝগড়া আমি না আপনি করেছেন!
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আমি করেছি।আচ্ছা শুয়ে পড়েছিস?
-হুম কেনো?
-একটু কষ্ট করে বারান্দায় আসবি প্লিজ?
-পারবোনা।
-দেখ এই ঠান্ডায় আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি তোর জন্য আয় না প্লিজ।একটু দেখেই চলে যাবো।
-বিয়ের পরে দেখলে হবে না?
-আরে তখন দেখা আর এখন দেখায় তফাৎ আছে।আয় না প্লিজ!!!
-আচ্ছা দাড়া আসছি।
বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানোর পর দেখে তূর্য নিচে দাঁড়িয়ে আছে।নিচে থেকে ইশারা দিয়ে বলল ফোন কানে নেওয়ার জন্য।ফোন টা আবার কানে নিয়ে বলল
-জানিস প্রাপ্তি আমি কখনোই ভাবিনি তোকে বিয়ে করতে পারবো আমি।আমি যে কতটা খুশি তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা রে।বিশ্বাস কর।আমি তোর জীবনের সব দু:খ কষ্ট ভুলিয়ে তোকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবো।আজ এই রাতে এই চাঁদ আর সৃষ্টিকর্তাকে সাক্ষী করে কথা দিচ্ছি।কখনো তোকে ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিবোনা।
-হুম।দেখবো নি কতটা ভালোবাসা দিবি আমাকে।
-এইভাবে বলিস কেনো রে বারবার।সকালটা হলেই আমাদের বিয়ে।বেশ কয়েক ঘন্টার ব্যাবধান মাত্র।কিন্তু আমার যে আর তর সইছে না।আমি পারছি না এই সময়গুলো কে ঠেলে পার করে দিতে।
-এতো অস্থির হচ্ছিস কেনো?
-হু তুই তো আমাকে ভালোবাসিস না।তাই এমন করিস।
-হুম বাসি না।যা বিয়ে বসবো না তোর কাছে।
-এই এই এই ভুলেও এই কথা উচ্চারন করবি না আর মুখ দিয়ে বলে দিচ্ছি।
-তাহলে কি নাক দিয়ে করবো!!
-উফফ প্রাপ্তি!!আমি আসলে বুঝি না তোকে।কখন কি বলিস নিজেও জানিস না।পাগলি বউ আমার।
-এখনো বউ হইনি কিন্তু।
-হস নি তো হবি।শুধু কয়েকটা ঘন্টার পার্থক্য।
-হুমমম।(বড় নিশ্বাস ফেলে)
-কিরে কোনো সমস্যা?এতো বড় নিশ্বাস ফেললি যে?
-না না কিছুনা।
-তুই কি মন থেকে রাজি হয়েছিস বিয়েটার জন্য নাকি সবার চাপে পড়ে?
-অনেক রাত হয়েছে তূর্য। আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।ঘুমাবো।
প্রাপ্তি ফোন টা কেটে দিয়েই রুমে চলে গেলো।তূর্য আরো কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেলো।

পরদিন সকালে সবাই আসলো।তূর্য ওর মা আর কাজী আসলো।সবাই ড্রইং রুমে বসলো!প্রাপ্তি তখনো রেডি হয়নি।তূর্য ওকে একটা গোল্ডেন পাড় গাঢ় লাল রাঙা শাড়ী আর প্রয়োজনীয় গয়নাগাটি দিলো।প্রাপ্তি কিছুই পরে নি সকাল থেকে।গোসলটাও করে নি।চুপ করে খাটের এক কোনায় বসে ছিলো।ওর মা এসে এই অবস্থা দেখে ওর পাশে গিয়ে বসলো।বলল
-কিরে এখনো তৈরি হলি না কেনো?সবাই তো এসে পড়েছে।ড্রইং রকমে সবাই অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ড্রইং রুমে চলে আয়।
-আমার জীবনটা এমন কেনো হলো মা?আমি কি কোনো পাপ করেছিলাম আগে?
-বাজে কথা বলিস না রে মা।এটাই হয়তো আল্লাহ্‌র ইচ্ছা।
-তুমি যাও আমি আসছি।
তারপর প্রাপ্তির মা চলে গেলেন।প্রাপ্তি শাড়ি পরে নিলো।তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে ভেজা চুলগুলো আচড়াচ্ছিলো।সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি হয়ে নিলো।তার কিছুক্ষন পরেই ওর মা আবার আসলো এসে ওকে নিয়ে গেলো ড্রইং রুমে।
বিয়ের কার্যক্রম শুরু করার আগে তূর্য বলল
-প্রাপ্তির সাথে আমার কিছু কথা আছে।যদি কারো আপত্তি না থাকে তাহলে আমি একটু রুমে গিয়ে কথা বলতে চাই।
কিছুক্ষন পরে প্রাপ্তির বাবা সম্মতি দিলেন।তারপর প্রাপ্তি আর তূর্য ওর রুমে গেলো।

পার্ট ১৭ এর অপেক্ষায়………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here