যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ০৭

0
2106

#যদি_বলি_ভালোবাসি♥
#PART_07
#FABIYAH_MOMO

-ভয় পাচ্ছিস? ভয় পাবিনা!! গাড়ি থেকে নামতে মানা করেছিলাম সিনু!!
মুগ্ধ ভাইয়া পেছন থেকে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন। আমার গলা থেকে হাত সরিয়ে পাশে এনে দাড় করালেন..আমি উনার পিছন যেয়ে লুকিয়ে পড়ি। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে লোকটাকে বলে উঠলেন-
-কি ভাই রাতের বেলা মদ খেয়ে কার জিনিসে নজর দিচ্ছো? বুকে ভয়ডর নেই?

লোকটা বলে উঠলো-
-এইডা কার মাল আমার হুইনা কাম নাই…এখন আমি খাইতে পারলেই বাছি..পুরা টাটকা একটা বোম্বা মরিচ…আহ্হহ
মুগ্ধ ভাইয়া আমার হাত টেনে চুমু দিয়ে বলল-
-সিনু ভয় পাবি না স্টপ! ইউ আর মাই গার্ল! ডেভিল গার্ল ইউ নো? একটু হালকার উপর ঝাপসা মেরে আসি…জাস্ট ওয়েট,

উনি আমাকে দাড়িয়ে থাকতে বলে ওই বদ লোকটার কাছে এগিয়ে গেল, হাতা ঠিক করতে করতে বলল-

-বোম্বা মরিচ? তুই খাবি? ও মাল?

তাচ্ছিল্যের গলায় বলতে বলতে মুগ্ধ ভাইয়া গালের উপর চড় মেরে দিলেন! লোকটা ছিটকে মাটিতে ধপাস করে পড়ল। আবারো বলে উঠলেন-
-তুই জানে বাচবি! তোকে আমি আস্তো রাখবো! তোকে যদি সুনশান রাস্তায় খুন না করছি! তোর কত্তো বড় সাহস!তুই ওকে খাবি বলিস!

নাকে মুখে চড় মেরে ঘুষাতে শুরু করল মুগ্ধ ভাইয়া। কোনো থামাথামি নেই…একের পর একে ঘুষি! লোকটা একপর্যায়ে এমন স্থিতিতে পড়লো নাক দিয়ে মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে থুতনি চোয়াল লেপ্টে যাচ্ছে…মুগ্ধ কোনোক্রমেই থামছেননা। অবস্থা চূড়ান্তপর্যায়ে খারাপ দিকে ধাবিত হলে আমি দৌড়ে পা খুড়িয়ে উনাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি।। লোকটা অনেক চেষ্টা করছে ছাড়া পেয়ে উড়াল পাখির মতো ছুটে যেতে কিন্তু মুগ্ধ ভাইয়ার হিংস্র মারামারিতে উড়াল দেওয়ার উপায়ন্তর নেই। আমি উনার হাত ধরে বাধা দিতে গেলে নিজেই কাটা জায়গায় উস্টা খেয়ে ব্যাথা পাই। ব্যাথার আর্তনাদ শুনলে মুগ্ধ ভাইয়া থেমে যান..মিনিটেই লোকাটাকে ছেড়ে আমার পা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। লোকটা ছাড়া পেয়ে ভোদৌড়।। মুগ্ধ উঠে তার পিছু নিতে চাইলেও আমার অবস্থা দেখে থেমে যায়।আমি পা ধরে বসে আছি…রক্ত পড়ছে।উনি পাশে বসে আস্তে করে পায়ের জুতা খুলে নেন। বুড়ো আঙ্গুলের নখ উপড়ে গিয়েছে…কাচের টুকরোয় বুড়ো আঙ্গুলের মাথায় চামড়া উঠে আলগা হয়ে আছে। পায়ের মধ্যভাগে গভীর আচড় বসেছে।। আমি ঠোট খিচে প্রচণ্ড ব্যাথায় কাতরাচ্ছি…চোখের পাতা ভিজে নাক ফুলে যাচ্ছে। উনি আমার পায়ের নিচে হাত রেখে পর্যবেক্ষণ করছেন। আমার চোখের পানি মুছিয়ে অস্থিরতার সুরে বলে উঠলেন-

– সিনু কান্না করিস না প্লিজ!! আমি দেখতেছি তো…কান্না করিস না!! তোর কিচ্ছু হবেনা!! একটু সহ্য কর…

উনি আমাকে কোলে তুলে গাড়ির উপর বসালেন। আমি পা ঝুলিয়ে গাড়ির সামনের দিকে বসে আছি। উনি দৌড়ে গাড়ির পেছন ডেকি থেকে কি একটা বাক্স এনে আমার সামনে মাটিতে হাটু গুজে বসলেন। একহাটু গুজে অপর পা মাটিতে রেখে আমার ক্ষত পা-টা উনার আধ বসা পায়ের উপর রাখলেন। রক্ত বেয়ে উনি পায়ের উপর পড়ছে। পায়ে ফু দিতে দিতে উনি বক্সটা খুলে হেক্সিসল, ওয়েন্টম্যান্ট, তুলো বের করলেন…দ্রুত হাতে কাজ চালিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করে ওয়েন্টম্যান্ট লাগিয়ে দিলেন। ব্যথায় চিৎকার দেওয়ার উপক্রম আমার! আগুনের শিখার মতো পায়ের অগ্রভাগ জ্বলছে। উনি ব্যান্ডেজের কাপড় বের করে হাত চালিয়ে পেচিয়ে দিলেন…সিজার বের করে ব্যান্ডেজের বাড়তি কাপড় কেটে সব আগের মতো বক্সে ভরে রাখলেন। আমার পা অলরেডি ফুলে গেছে, ব্যথায় চোখের পানি ফেলছি। আমার পা সাদা ব্যান্ডেজের আড়ালে ঢেকে গেছে। উনি আমার দিকে অনুতাপের দৃষ্টি তাকিয়ে আছেন…মনটা খারাপ করে পায়ের ব্যান্ডেজের উপর আলতো চুমু দিয়ে মাথা নুয়িয়ে বললেন-

-সরি সিনু…তোর ব্যাথার আমি দ্বায়ী প্লিজ..ক্ষমা কর!! আমি তোর জন্য পানি আনতে গিয়েছিলাম সিনু!! গাড়ি থেকে বের হতে না করেছিলাম… একটু কথা শুনতি?? সরি প্লিজ…

উনি আমার দুপায়ের নিচে হাত রেখে কপাল লাগিয়ে বসে আছেন। আমি উনাকে বলে উঠি-
-এই আপনি উঠুন…পায়ে মাথা ঠেকিয়ে আছেন কেন? আমার গুনাহ হবে প্লিজ…আপনি উঠুন..আমার ব্যাথা সেরে যাবে উঠুন প্লিজ…

উনি মাথা উঠিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিলেন। ঠান্ডা কন্ঠে বলে উঠলেন-
-বোকা! আমি কি পা ধরে বসে থাকতে পারবো না? কোথায় বলা আছে ছেলেরা পা ধরে বসে থাকতে পারবেনা? বলদ!

উনি আমার পা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন। গাড়ির দরজা খুলে আমাকে কোলে তুলে সিটে বসিয়ে দিলেন। সিটবেল্ট বেধে ঠিক করে বসিয়ে ডেকি থেকে একটা কুশন এনে আমার পায়ের নিচে রেখে দিলেন। আদেশ সূচকে বলে উঠলেন-

-পা টা কুশনের উপর রাখবি। বি এলার্ট পা কিন্তু নামাবি না…ব্যাথা করবে।

উনি দরজা লাগিয়ে পাশের সিটে বসে পড়লেন। সিটবেল্ট বেধে আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে আবার কি যেন করতে লাগলেন। উনার ড্রাইভিং সিটের উপর মেলে দেয়া এফ্রনটা মুচড়ে গোল টোপা বানিয়ে কুশনের পাশে রেখে দিলেন। উনার এফ্রনটা এভাবে রাখার মানে কি? ডক্টর হিসেবে এই এফ্রনটা উনার স্মৃতিজড়িত থাকার কথা! আমার পায়ের নিচে সেটা?

-ভাইয়া আপনার এফ্রনটা এভাবে পায়ের নিচে কুশনের পাশে রাখলেন কেন? এটা আপনার ভেল্যূব্যল জিনিস না?
-এমন হাজারটা ভেল্যূব্যল জিনিস তোর সামনে কিছুই না…এই এফ্রন তো সামান্য একটা তুচ্ছ জিনিস। গাড়ি চালাতে ব্রেক কষলে পায়ের ব্যালান্স বিগড়ে গেলে এফ্রনে পা পড়বে। ফলাফল ব্যথা পাবি না।

ব্যথার মধ্যেই বাকা হাসলাম আমি…আমি কোথায় ব্যথা পাবো না পাবো সব উনি ভালো জানেন!! উনাকে চেনা বড় দায়!!

.
.

ড্রয়িং রুমে বসে আছি। বসে আছি বললে ভুল হবে তলব দরবারে বসে আছি। আব্বু আম্মু মিরা আপু সবাই আমার সামনে দারোগাবাবুর মতো হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছেন…আমি হচ্ছি জেল থেকে পালানো আসামী। সোফায় আমার সাথে আরেক প্রাণী বসে আছেন, যার নাম ‘ভাইয়া’। আব্বু হুংকার দিয়ে বললেন-
-পায়ে ব্যান্ডেজ কি করে !
৪০০ ভোল্টেজের কারেন্টের মতো ধমক কানে আসতেই আমি কেপে উঠলাম। ভাইয়া ইনিমিনি করছে আমাকে আব্বুর দানবীয় তান্ডব থেকে বাচানোর, কিন্তু বেচারা নিজেই ভিজাবিলাই হয়ে শেষ। আম্মু চেচিয়ে বলল-
-তোর কি শরম লজ্জা হয়নাই ! তুই যে বড় একটা মেয়ে হইছোস! কাল বিয়ে দিলে পরশু দুই বাচ্চার মা হবি স্মরনে নাই! কার সাথে কুস্তি লড়াই করছোস!

যা বাবা! আম্মু দেখি বিয়ের পিড়িতে বসানোর পরিকল্পনা করছে! আমি কি এখনো লুইচ্চাদের হাওয়া টাইট করবো নাকি! আমি বড় হয়েছি না? ওসব তো ছোট বাচ্চাদের কাজ। এবার সুর বাজালো মিনকা শয়তান মিরা আপু-
-মম সাফ সাফ বল কই গেছিলি! কার সাথে গেছিলি ! পায়ের দশা এমন হলো কেন ! চাচ্চু কাকির প্রশ্নের জবাব দে ! চুপ করে থাকবি না!

আমি মাথা ঝুকিয়ে ত্যাড়া চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আড়চোখে আমার দিকে ‘খাটি বাঙালি শুদ্ধ গালি’ ছুটাচ্ছেন। আমি আকুতি মিনতি করে চোখের ইশারায় বললাম-

-মেরি ভাই মুঝে বাচালে..আমি কানে ধরছি আর জীবনেও রিমোটের ব্যাটারি চুরি করবো না!! আমারে বাচা ভাই!

ভাইয়া আড়চোখে আমার মিনতি শুনে উনাদের দিকে জোরপূর্বক হাসি দিলেন। মোটকথা হাসি দেওয়ার ইচ্ছে নেই কিন্তু বেচারা ফান্দে ফেসে ভেটকি দিচ্ছে। ভাইয়া কাচুমাচু করতে করতে বলে উঠলো-
-আব্বু আম্মু…ব্যাচ থেকে আসার সময় রিকশা ওর পায়ের উপর দিয়ে নিয়ে গেছিলো বুঝছো। পরে ধরাধরি করে ওরে হাসপাতালে এডমিট করছে। আর এই শয়তানের হাড্ডি সারাদিন ওখানে ছিলো। এই….মানে…এজন্য ব্যান্ডেজ…

আম্মু কপালকুচকে বলে উঠল-
-তোর নাম কি মম? তুই ওর সাথে আছিলি? আমরা কি তোরে জিজ্ঞাসা করছি! চপর চপর বন্ধ কর…তুই যে ওরে গা ঢাকা দিতাছোস বুঝিনা মনে করছোস!
-হায় হায় আম্মু সত্যি কথা বলতেছি, রিকশাওয়ালা বেতাল হয়ে পায়ের উপর উঠিয়ে দিছে…সিনু আমাকে কল করে জানিয়েছে…(আমার মাথায় থাবড়া দিয়ে) ওই বদমাইশ বলিস না কেন…তুই রিকশার নিচে পা দিয়ে বসেছিলি!

আমি ফুল স্পিডে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ হ্যাঁ করে বললাম-

-হ্যা আম্মু হ্যাঁ সত্যি সত্যি ভাইয়া যা বলছে সব সত্যি!! আমি রিকশার নিচে পা দিয়ে বসেছিলাম…..এই না নাউজুবিল্লাহ নাউজুবিল্লাহ…মানে রিকশা পায়ের উপর উঠিয়ে দিছিলো…

আব্বু আম্মু দুজনের দিকে তাকিয়ে চোখাচোখি করে কি যেন করলেন। এরপর মিরা আপুকে বলে আমাকে রুমে নিয়ে যেতে বললেন। মিরা আপু ক্ষুদ্ধ হয়ে আছেন বোঝাই যাচ্ছে। মিরা আপুর হাত ধরে রুমে যেয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ি। ভাইয়া এসে সব চেক করে আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে দরজা লাগিয়ে রুম ত্যাগ করলেন। আমি চুপচাপ লাইট জ্বালিয়ে কাথা গায়ে শুয়ে আছি। পায়ে তুখোর যন্ত্রণা করছে…প্রচন্ড ব্যাথা। কপালে কবজি উঠিয়ে চোখ বন্ধ করলে হঠাৎ একটা শব্দ আসলো! আমার কাছে খটকা লাগলে কপালের উপর হাত সরিয়ে শব্দের দিকে তাকাই। দেখি মুগ্ধ ভাইয়া টিশার্ট গায়ে জানাল দিয়ে রুমে ঢুকে হাত ঝারছেন। আমি উঠে বসতে নিলে উনি বলে উঠলেন-
-স্টপ! উঠবি না! আমি উঠতে বলিনি!

আমি শুয়ে পড়ি। উনি হাত ঝেড়ে আমার পায়ের দিকে চলে গেলেন। এদিক ওদিকে কিছু খুজে চলছেন…আমি জিজ্ঞাসু সুরে বলে উঠলাম-
-আপনি কি খুজছেন? আমাকে বলুন?
-তোর রুমে কি কুশন বা এক্সট্রা বালিশ নেই? কেমন রুমে থাকিস?
উনি ট্রাউজারের পকেট থেকে ফোন বের করে কাকে যেন কল করলেন-

-শালা রুমের মধ্যে শুয়িয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ? পায়ের নিচে কুশন কই দিছোস আবাল! তাড়াতাড়ি কুশন বা এক্সট্রা বালিশ নিয়ে আয়…আমি রুমে আছি। আয় জলদি।

মুগ্ধ ভাইয়া একটা নির্জীব প্রাণী কিপ্টা জাতবিশিষ্ট বড় ভাইকে কল করেছেন। ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আরেক পকেট থেকে ইনজেকশন ও কাচের একটা শিশি বের করলেন। শিশিতে ইনজেকশনের সূচ ঢুকিয়ে পুরোটা ইনজেকশন ভর্তি করলেন। কাচের শিশি জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে ইনজেকশন নিয়ে আমার পায়ে কাছে বসলেন। উনি কি আমার পায়ে ইনজেকশন লাগাবেন? আল্লাহ আল্লাহ আমি সূচের ভয় পাই!! আমি টিকা দিতে যে কাহিনি করেছিলাম ভাইয়া আম্মু ওই অবস্থা মনে করলে এখনো নিজের চুল টেনে ছিড়বে!

-মুগ্ধ ভাইয়া…. জানেন আপনি অনেক কিউট মাশাআল্লাহ!! ভাইয়া আপনি অনেক ভালো….কত ভালো…পারলে একটা মশাকে চুমু দিয়ে রক্ত খেতে দিবেন…বুঝলেন..
-ইনজেকশনে ভয় পাস? আমার প্রশংসা করে লাভ নেই…আমি ব্ল্যাকমেইলে গলি না…সো ইটস ইউজলেস, আমি আমার কাজ করবোই…স্টে কোয়াইট!
-না না না ভাইয়া…না প্লিজ…আমি ইনজেকশনে ভয় পাই ভাইয়া…আমি কিন্তু চিৎকার করবো…আমি ইনজেকশন নিবো না!!!!
-চিৎকার করবি? সো কর!! আ’ম এ্যা ডক্টর রাইট? সবাই আসলে বলে দিব আবির আমাকে চেক করতে পাঠিয়েছে,
-আপনি কি আমাকে সাইজ করতে প্রিপেয়ার হয়ে থাকেন নাকি? সর্বদা আমাকে ট্যাকেল মারতে প্রস্তুত!
-(একটু হেসে) বিজয়ীরা নতুন বিজয়ীর কাছে হার মানবে ইটস এ্যা নেচার’স রুল। আমি ছিলাম না তাই তোকে কেউ সোজা করতে পারেনি..বাট আ’ম ব্যাক!!

হঠাৎ রুমের দরজা খুলে আবির ভাইয়া ভেতরে ঢুকলেন। হাতে কুশন। উনি এসে মুগ্ধ ভাইয়ার পাশে ঝুকে কাধে হাত রেখে ফিসফিসিয়ে বললেন-
-নে কুশন আনছি। মনে ছিলো না পায়ের নিচে দেওয়ার কথা। তুই ওরে ইনজেকশন দিবি মুগ্ধ?
-ইয়াপ! যেই ব্যাথা লাগছে একটুপর গোঙানি শুরু করবে…ট্যাবলেটে টাইম লাগবে। ইনজেকশন দেওয়া ছাড়া ওয়ে নেই।
-দেখিস আবার এই শয়তান কিন্তু চালাকের হাড্ডি! লাত্থি মেরে তোকেই না ইনজেকশন ঢুকিয়ে ছাড়ে !
-তুই নিজে একটা আবাল! বোনটারে বানাইছিস বড় একটা আবাল!

আমি দুইজনের ফুসফুসানি শোনার তীব্র চেষ্টা করছি কিন্তু কানে স্পষ্টভাবে কিছুই আসলো না। মুগ্ধ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
-সিনু তোকে ইনজেকশন দিবো না। ভাবলাম তোর ব্যাথা হবে। ঠিক করেছি না?

আমি একটু অবাক হলাম। কুকুরের মুখে গরুর ডাক, আজিব না? যে একটু আগে ইনজেকশনের মোহে অন্য গান কানেই নিলো না সে কিনা ডিসিশন পাল্টে ইনজেকশন দিবেনা?

-ঠিক করেছেন। ধন্যবাদ।
-বিয়ে করবি ঠিক না? পড়াশোনা করবি? কি হওয়ার ইচ্ছা? আমার মতো ডক্টর নাকি অন্যকিছু? আই হেভ নো প্রবলেম ইউ নো!! তুই যা ইচ্ছা হবি ইটস ইউর চয়েজ, ওকে?……….ডান বেব!!

আমি উনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। কি বললো? কেন বললো?কি ডান? মানে পুরাই আমি কনফিউজড! জিজ্ঞেস করলাম-
-কিসের ডান বললেন?
আবির ভাইয়া হোহো করে হাসতে হাসতে দরজা লাগিয়ে চলে গেলেন। মুগ্ধ ভাইয়া পায়ের কাছে এখনো বসে আছেন। আমি ফের বলে উঠলাম-
-আপনি কি ক্লিয়ার করে বলবেন কি আকাম করলেন? কিসের জন্য ডান বললেন?

উনি হাসছেন। পায়ের নিচে কুশন রেখে কাথা দিয়ে ঢেকে দিলেন। আমার মাথার কাছে বিছানায় বসে মাথায় চুমু দিয়ে বললেন-
-ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি। পার্ফেক্টলি ডান। ঘুমা কেমন? আমি সকালে আরেকবার চেক করে যাবো। এখন আসি। বায়।

উনি উঠে জানালা দিয়ে আগের মতো চলে গেলেন। মাথা উচিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে আনমনে হাসছি….জানালা না থাকলে তবে কেমন ঘটনা হতো!!!

.
.

সকালে পটকা ফুলিয়ে মুখের তেরোটা বাজিয়ে বসে আছি। সামনে মনিরা “দ্যা বরিশাইল্লা খ্যাত”! গালে হাত দিয়ে আমার দিকে ষাঁড় গরুর মতো তাকিয়ে আছে। পা টা ঠিক থাকলে এক চড় মেরে দিতাম…চুন্নি! মনিরা ঘ্যানঘ্যান করে বলে উঠল-
-কালকে তুই নূর-ই-আজমীর গেছোস! চুম্মাচুম্মি করছোস! রোমান্স করছোস! গুন্ডার কেদানিও খাইছোস! আর আমাকে একটা কল দিয়ে সাথে নিয়ে যাস নাই !!এই জীবন আমি আর রাখতাম না!!!!

আমি ওর কথায় সিরিয়াসলি এক লাত্থি মারতাম! কিন্তু কপাল! পা টা আজকেই গেছে!
-ওই যে জানালা দেখছোস? যা একটা লাফ দে…ডিরেক্ট উপরে যাবি। যা লাফ মার!
-মম আমি মুগ্ধ ভাইরে দেখবার চাই! দেখবার চাই!! তুই আমার বান্ধবী না…***! কেমনে পারলি একলা একলা টোটো মাইরা যাইতে!বজ্জাত ছেরি!
-ওই! মুখ সামলে কথা বল! আমি ঠিক হলে মাইর একটাও মাটিতে পড়বো না বলে দিলাম!

মনিরা ম্যালোড্রামা শুরু করে দিয়েছে। ঢঙ্গের কি কান্না! একবার খালি আমার কাছে এসে বসতো… চুলের মুঠিটা ধরে দিতাম কটা ঠুকে! আমি আজাইরা নাটক দেখতে হাম মেরে বসে আছি।

“সিনু এই মেডিসিন গুলো খেয়ে…..”

হঠাৎ কেউ কিছু বলতে যেয়ে আটকে গেল। কারোর গলার পেয়ে আমি মনিরা মুখ তুলে উৎসের দিকে তাকালে দেখি মুগ্ধ ভাইয়া জানালা ধরে ভেতরে ঢুকে মেডিসিন হাতে থ মেরে দাড়িয়ে আছেন! মনিরা ভাইয়াকে দেখে দাড়িয়ে যায়। আমি মুখ ঘুরিয়ে আগের মতো অবস্থানে ফিরি। মনিরা কোন্ নজরে হা মেরে দাড়িয়ে গেছে মুগ্ধ ভাইয়ার চেহারা দেখলে বলা সম্ভব। কালকের মতো শার্ট ইন কোমরে বেল্ট, পড়নে প্যান্ট গেটআপ। কালো শার্ট, কালো প্যান্ট, ব্রাউন কালার বেল্ট, শার্টের শেষপ্রান্ত ইন। এককথায় পার্ফেক্ট ফর্ম! বেচারা মেয়েলি চাহনি পেয়ে দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছে। মনিরাকে উপেক্ষা করে মুগ্ধ ভাইয়া আমার পাশ ঘেষে বসলেন। কপালে হাত দিয়ে চেক করতে বললেন-
-পায়ের ব্যাথা কমেছে? কমার কথা। কপাল গরম না…জ্বর আসেনি। শোন আমি মেডিসিনের পাতা দিয়ে যাচ্ছি এখন হসপিটালে যেতে হবে…পেশেন্ট এসে বসে আছে। আমি রাতে এসে চেকআপ করে যাব।

মনিরার দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে ছয়টা চকলেট বের করে দুইটা ওর দিকে বাড়িয়ে বললেন-

-হবু শ্যালিকা আমার বউয়ের ঠিকমতো টেক কেয়ার করবা। কোনো অভিযোগ আমার কানে না আসে, খবরদার! চকলেট চাইলে আরো দিবো বাট সিনুকে জ্বালাতন করবে না। বায় দ্যা ওয়ে নাইস টু মিট ইউ…ইউ আর কিউট…

-চলবে

-Fabiyah_Momo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here