#যদি_বলি_ভালোবাসি♥
#PART_21
#FABIYAH_MOMO🍁
পায়ের ব্যাথায় চিৎ করে উঠলো যেমন, আমি ঠোটে দাত চেপে কুজো হয়ে আছি। উনাকে চিল্লিয়ে তো বলতে পারবো না আমার পায়ে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাথা সংযোগ করেছে। কিন্তু উনি কিভাবে যেন বুঝলেন আমি অসহ্য ব্যথায় খিচে আছি। আমাকে ছেড়ে দিলেন, কোলে তুলে বাসার দিকে নিয়ে আসলেন। পথিমধ্যে আমি কোনো বাধা দেইনি বাসায় ফিরতে, ব্যথায় পা অসার হয়ে আসছিলো। হিতাহিত জ্ঞানে ছিলাম না মাথা থেকে ফেলে বসেছি, আমার এখন বাসায় না এলাকা ছেড়ে, মুগ্ধেকে ছেড়ে, সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। পায়ের ব্যথায় সব ভুলে বসেছিলাম।
উনি রুমে এনে শুয়িয়ে দিলেন, দরজা আটকে দিলেন দর্শক হিসেবে বাইরে থাকা রূপার মুখের উপর। বাকি সবাই আমার মিথ্যাচার খোলাসা করেই রুমে যেয়ে বসে আছে, শুধুমাত্র রূপা নামক নাট্যকলার মেয়ে ড্রয়িং রুমে ফোন টিপছিলো, মুগ্ধের কোলে আমাকে দেখেই তার চোখ চরগ হয়ে উঠেছিলো। বাকিটা জানেন। রগ টানা দিলে যেমন কাতরানো ব্যথা করে ঠিক পায়ের তালুতে আঘাতের ফলে পুরো পা আমার ব্যথা করে উঠছে। উনি তাড়াহুড়ো করে পায়ের পুরোনো, নষ্ট, ময়লাযুক্ত ব্যান্ডেজ খুলে নতুনভাবে জীবাণুমুক্ত করে পট্টি বেধে দিচ্ছেন। কাল সকালে ব্যান্ডেজ খুলে ফেলতাম, সে জায়গায় ব্যান্ডেজ আরো না খুলার পরিস্ফুটন ঘটলো। কাজ শেষে উনি পাশে শুয়ে পড়লেন। কালকের মতোই জড়িয়ে ধরলেন। কিন্তু আজকের ধরাটার মধ্যে পাথর্ক্য হলো কেবল উনি ধরে আছেন তাও চেপে।আমি ধরিনি উনাকে। মাথায় অজস্র ঠোট ছুয়িয়ে বললেন-
— জিজ্ঞেস করলি না, কেন থাপ্পর মারলাম? আমার কি ভালোবাসা ছাড়া শাসন করার অধিকার নেই? থাপ্পরটা শাসন হিসেবে দেইনি মম। আমায় বিশ্বাস কর….তোকে থাপ্পর দেয়া নিজের গালে দশটা থাপ্পর খাওয়ার মতো। আমি তোকে রাগ দেখিয়ে থাপ্পর মারিনি।
বুকে চেপে ধরে আছেন উনি, জিজ্ঞেস করলাম উনাকে-
–কেন থাপ্পর মারলেন? সবার সামনে আপনি উত্তম পুরুষ সাজলেন? আমাকে মেরে? খেলনার পুতুল তো আমি সবার চড়-মার খাওয়ার জন্য অধীর হয়ে থাকি।
–তুই খেলনার পুতুল কেন হবি? একটা মানুষ তুই, মেয়ে একটা! তোকে মেরে আমি উত্তম সাজবো? কেউ আমাকে টাকা দিয়ে যাবে? আমি থাপ্পরটা সবার কাছ থেকে দূরে সরানোর জন্য দিয়েছি। তুই ওখানে একা ছিলি, আমি এসে যদি তোর পক্ষে কথা বলতাম সবাই তোকে নিয়ে নানা কথা বলতো। আমাদের জন্য ঠিক হতো? বল?
আসলেই উনি উনার জায়গা থেকে ঠিক করেছেন। আমার কথা বলে বলে উনাকে আরো অপমানকর কথা শুনাতো, সেটা কি আমি শুনতে পারতাম? আন্টি তো বলেই দিলেন আমি উনাকে আচলে বেধে গোলাম বানিয়েছি। আরো কত কি শুনতে হতো কে জানে?
–জানেন, আমি সবাইকে গলাবাজি করে চুপ করে দিতে পারতাম, ওই রূপা….ওই রূপাকে তো বাড়ি ছাড়া করে দিতাম। আপনার জন্য আমি কিছু করিনি। প্রতিদানে আপনি চড় দিলেন। কষ্ট লাগে বুঝলেন, কারোরটা না হোক আপনার চড় গুলো লাগে। গালে না সোজা বুকে যেয়ে লাগে।
উনি গালটা ধরে আমার মাথা উঠালেন, আবারো ওই চড় দেওয়া গালে চুমু দিতে লাগলেন। প্রতি মিনিটে একশোটা।
— খুব লেগেছে তোর? এই যে চুমু দিয়ে দিচ্ছি।। আদর করে দিচ্ছি, প্লিজ প্লিজ আমার শেষ ভুল ভেবে মাফ করে দে। প্লিজ আমি হাত তুলবো না, হাত দুটো কেটে ফেলব! আমি কি তোর পা ধরে মাফ চাইবো? মাফ করবি? দাড়া…
উনি “দাড়া” বলেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে ব্যস্ত হলেন ‘মাফ’ চাওয়ার জন্যে। আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে বাধা দিচ্ছি।
— এই না ! আমি মাফ করে দিয়েছি। পা ধরা লাগবেনা, মাফ করেছি প্লিজ।
–না আমার ভুল হয়েছে, ভুলের মাশুল হিসেবে বউয়ের কাছে মাফ চাইতে সমস্যা নেই। আমি মাফ চাইব মম, তোকে থাপ্পর দিয়ে অনেক কষ্ট দিয়েছি…
— প্লিজ আমি বলেছি তো আপনাকে মাফ করে দিয়েছি, আপনার ওভাবে ক্ষমা চাইতে হবেনা। প্লিজ আপনি শুয়ে থাকুন।
–আমাকে ছাড় না প্লিজ, আমি মাফ চাই।
–আপনি এমন কেন! একটা কথা বারবার বলতেছি তাও ঘ্যাড়ামি করছেন! ছাড়বো না! শুয়ে থাকুন।
কোলবালিশে দুইহাত আবদ্ধ করে যেভাবে ধরে থাকে মুগ্ধকে “পা ধরে” মাফ চাওয়ার পাগলামিতে ওভাবেই বাধা দিচ্ছি। উনি মাফ চাইবেনই! থাপ্পর দিয়ে মস্ত বড় ভুলের পাহাড় বানিয়েছেন, তা পা ধরে মাফ চাইলেই গুড়িয়ে যাবে। স্বর নামিয়ে বললাম-
–আমি পায়ে ব্যাথা পাচ্ছি মুগ্ধ। প্লিজ ফোর্স করা বন্ধ করুন? আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি তো, তিন সত্যি, বিশ্বাস করুন, মাফ করে দিয়েছি!!
চুপ করে আছেন। মুখে গ্লু লাগিয়ে স্টপ উনি। চাড়ঘোড়ার মতো নড়াচড়া করা বন্ধ করে দিয়েছেন উনি।
–শান্ত হয়ে গেলেন? বুদ্ধির আটিঁ পাকানো বন্ধ করুন ডাক্তার সাহেব। আমি মাফ করে দিয়েছি। ঘুমান।
–……………………………….(উনি চুপ)
–চুপ হয়ে গেলেন কেন? কিছু তো বলুন!!
–……………………………….
–নিচে যে কথাগুলো বলেছি, রাগের বশে বলিনি। আপনি বিরক্ত হয়ে পড়লে বলে দিবেন, আমি সত্যি চলে যাব। সুইসাইড করবো না। ওটা করার সাহস আমার নেই। নিজেই নিজেকে শেষ করতে গেলে অঢেল সাহস লাগে, এ ক্ষেত্রে আমার সাহস নেই।
— না না চুপ, প্লিজ চুপ কর। প্লিজ দোহাই! আমি বিয়ে করবো না। আমি তোর সাথে থাকতে চাই। তোর…..তোর অংশীদার হিসেবে কাউকে মেনে নিতে পারবো না প্লিজ। তোর বিরক্ত চলে আসলে আমায় বলবি, আমি সায়ানাইড বিষ খেতে দ্বিধাবোধ করবো না। তোর মৃত্যুর কথা খোলাখুলি বলিস না প্লিজজ।আমার দু’কানে শোনার সাহসিকতা রাখিনি। আমি অনুতপ্ত মম। মাফ করে দে আমায়….প্লিজ একটাবার? শেষ বারের মতো? প্লিজ?
সবসময় কথা দ্বারা উপর্যুক্ত হ্যা বোধক না বুঝিয়ে কাজের মাধ্যমে বোঝানো দরকার। ওটায় আলাদা মার্জনীয় সৌন্দর্য ফুটে উঠে। আমিও তাই করলাম, উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। কাদছিলাম উনার বুকে মুখ লুকিয়ে, উনি ঘাড়ে হাত রেখে বলে উঠলেন-
–মানুষ প্রিয়জনকে না পেলে ছবির ফ্রেম বুকে নিয়ে ঘুমায়, আমি তো ভাগ্যবান পাকনি, প্রিয়তমা বুকে নিয়ে ঘুমাচ্ছি। সবাই ভালোবাসার দ্বারে মাথা ঠুকলেও আমি ঠুনকো হইনি। একটা ছোট্ট অনুরোধ করবো? আমার আচরনের জন্য আমাকে ছেড়ে যাবিনা প্লিজ। নিজের সাথে রেখেছিস, শেষ পযর্ন্ত নিজের করেই রাখিস। আমাকে ভুল বুঝিস না…কোন ভুলের কেমন খেসারত দেয়া লাগে ডাক্তারি পেশায় থেকেও আমার জানা নেই। আমায় ক্ষমা কর….
.
.
সকালে ঘুম থেকে চোখ মেলে নিজেকে মুগ্ধের বুকেই আবিষ্কার করলাম। ভাবান্তর ঘটলো এই, সকাল দশটা বেজে বিশ মিনিট উনি হসপিটালে যাননি। ঘুমিয়ে আছেন। চুলের অগ্রাধিকার উনার কপালে একটু বেশিই বটে, কেননা চুল সেট ছাড়া অবস্থায় কপালে বেশি জায়গা করে নেয়। হাস্যকর একটা ব্যাপার আছে, ফ্যানের নিচে আমার চুল যত ঢেউ খেলে তার চেয়ে পাচগুন বেশী উনার চুল উড়ে। দেখতে সুন্দর!! ঘুমের মধ্যে উনি কেপে উঠছেন, জ্বর নেই। তাহলে কি কান্না করেছেন? রাতে আমাকে ঘুমে রেখে কেদেছেন? কপালের চুলগুলো হাত লাগিয়ে পিছনে করে দিলাম, উনি উঠে গেলেন।
–সকাল সকাল লুকিয়ে আমায় চুপচাপ দেখছিস, আদর কোথায়? মনিং কিস?
কিছু বললাম না, দেয়ালে লাগানো ঘড়ির কাটায় আরেকবার দেখলাম, মিনিটের কাটা সাড়ে দশটার ঘরে ছুইছুই। উনার কপালে উল্টো হাতে ছুয়ে দেখে বলে উঠলাম-
–সত্যি করে একটা কথা বলুন। সকাল সকাল মিথ্যা বলবেন না। জ্বর নেই, ঘুমের মধ্যে কাপছিলেন কেন?
উনি হাতটা কপাল থেকে নিয়ে উনার বুকের বামপাশে ধরে রাখলেন। চোখবন্ধ উনার। ঠান্ডা ধ্বনিতে বলে উঠলেন-
–জায়গাটা ব্যাথা করছিলো অনেক, খুব ব্যাথা প্রচণ্ডরূপে ব্যাথা করছিলো।। আমাকে মেডিসিন দেওয়া মানুষটা আরামে বুকে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়েছিলো। তার গালের দাগটা দেখে চিনচিন করে উঠছিলো এই বা-পাশটায়। খুব নাজুক জানিস!! চোখের দেখা দেখেই কার্ডিয়াক(হৃৎপিন্ড) ব্যাথা করে উঠে।
আমি উনার ঘুমে ঢুলু কথার মর্ম আন্দাজ করতে পেরে ব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেই,
— আপনি কেদেছেন ?
বা-পাশটা থেকে আমার হাতটা সরিয়ে ঠোটের কাছে আনলেন উনি। আলতো ঠোট ছুয়িয়ে পাগল করা হাসিটা দিলেন, যেটা দেখলে সময় থমকে যায় আমার। উনি চোখ খুলে আমার নাকে নাক লাগিয়ে বললেন-
–মম মহাশয়া আমার পাকনি বউ রেডি হন প্লিজ!! বাইরে যাব। হসপিটালে যাচ্ছি না আজ। আপনার জন্য সব মাফ। চলুন, উঠুন, রেডি হয়ে নিচে আসুন। আমি অপেক্ষায় আছি।
.
.
মুগ্ধ ড্রেসিং টেবিলের উপর বসে আমাকে সামনে একটা চেয়ার পেতে বসিয়েছেন। একটু আগে মাথার চুল আচড়ে দিতে যেয়ে কতবার ব্যর্থ হয়েছেন!! তাও চুলের খোপা বাধাতে হাফ ছেড়েছেন। এখন বসিয়েছেন মুখের তর্জমা করতে,
–আচ্ছা টিপ পড়িস? আমি কি আনবো? তোর জন্য কিছুই কিনে আনা হয়নি। কেমন ইরেসপন্সেব্যাল আমি! বিয়ে করেছি, বউ দেখে রাখতে পারছিনা, থাপ্পর দেই কি করি না করি, ঘুরতেও নিয়ে যাইনা, হাও লেম আই এম!! সরি কাল থাপ্পর দিয়েছি। এক্সট্রেমলি ভেরি সরি। এভাবে চললে চলবেনা।। নো নো নিজেকে চেন্জ করতে হবে…রাইট? দেখি আজ থেকে সব চেন্জ করবো…নো আজ কেন? এখন থেকেই চেন্জ হবো!!
আমি উনার কথা গিলে চলছিলাম, বকবকানির রোগ কি উনার পেলো নাকি, বুঝার সিচুয়েশন নেই। কাল চড় দেওয়ার পর থেকে একশোবারের চেয়েও কয়েক হাজারবার “সরি সরি সরি” বলে যাচ্ছেন। মানুষ এতো অনুতপ্ত হয় কি করে? গলা ঠিক করে বলে উঠলাম উনাকে-
–শুনুন, আমি সাজতে পছন্দ করিনা। স্বাভাবিক জীবনের বেশভূষায় থাকলে তাতেই আমার চলমান ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে। কৃত্রিম কিছুর প্রয়োজন নেই। আমার একটু খানি ভরসা এবং পুরোটা জুড়ে আপনাকে লাগবে। দিবেন তো?
উনি ড্রেসিং টেবিল থেকে নেমে দাড়ালেন, কোলে তুলে বলে উঠলেন,
–সবটা পূরন করবো, পাকনি। সবকিছু পূরন করার চেষ্টা করবো। এক বিন্দু ঘাটতি রাখতে চাইনা। নতুন করে নতুন ভাবে আবার সবটা সাজাতে চাই। সব!!
উনার কথাটা বোধকরি রাখা হলো না, আছড়ে পড়লো একের পর এক ঝড়। আঙ্কেল মুগ্ধের সাথে রূপার বিয়ে নিয়ে মুগ্ধের দাদুর কাছে কথা দিয়েছিলেন। আর বড় ফুপি তার বহু সাধনার মেয়ে রূপাকে ভালো, সুদর্শন, চাকুরীরত মুগ্ধের হাতে তুলে দিয়ে শান্তি পেতেন, থেমে গিয়েছিল আমার কিডন্যাপিংয়ের জন্য। বাসায় থেকে উনার ফুপি শক্ত ঘাটি গেড়ে বসলেন, উনি রূপাকে এ বাড়ির বউ বানাবেনই। আমাকে কিভাবে উনার জীবন থেকে বের করা যায় নিত্য নতুন কৌশল খাটাতেন ফুপি। রাফিনও সুযোগের হাত ছাড়তো না।
বিয়ের দ্বিতীয় দিন। মুগ্ধ হসপিটালে ইর্মাজেন্সি ফর্মে গিয়েছেন। দরজা খোলা রেখে বুক শেল্ফ ঘাটছিলাম, হঠাৎ বড় ফুপি দরজা ধরে ঠেস মেরে দাড়ালেন। আমি একটা বই বের করে দৃষ্টি দিয়ে প্রশ্ন সূচকে বললাম,
–কিছু বলবেন ফুপি? বাকি আছে আর কোনো গালিভরা কথা বলতে?
ফুপি কোমরে আচল গুজে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়লেন, চোখ দুটো ছুড়ি হলে আমি এতক্ষনে ক্ষতবীক্ষত হয়ে যেতাম।
–তোর সাত কপালের ভাগ্য তুই রাদিফ বাবারে আচলে বাধছিস! তোর মতো মেয়ে কেমন জায়গায় লাত্থি উস্টা খাওয়ার যোগ্য, আমার মুখ দিয়ে বলার দরকার নাই ।
বইটা খুলে প্রথম পৃষ্ঠায় মনোযোগ দিলাম। পড়ায় চোখ রেখে বলে উঠলাম,
–কোনো ভালো মেন্টালিটির মহিলা তার ভাইয়ের বাসায় থেকে দিনের পর দিন পড়ে থাকেনা। বাইরের মানুষ নাক ছিটকায়। থুথু করে। আমার কথা বাদই দিলাম। পুরো এলাকা জানে, আমি উনার বউ। মাঝখান দিয়ে আপনার কাছে যোগ্যতার দলিল নিয়ে ভাবুক সাজার দরকার অন্ততপক্ষে আমার নেই।
ফুপি দৌড়ে এসে আমার হাত থেকে বইটা নিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলেন।
–শোন নির্লজ্জা! তোর মুখে লাগাম লাগিয়ে কথা বলিস! জিহবা বেশি চৈচৈ করলে কেচি এনে কেটে দিব!
–সাহস থাকলে কাটুন না! ভয় কিসের? আমিও তো দেখি ভাইয়ার বাসায় পা তুলে খাওয়ার শক্তি কতটুকু বাড়লো!
–ওই ! তোকে সাবধান করছি ! আমার সাহসের নতিজা দেখতে আসিস না !
–কেন কেন? দেখবো না কেন? আমি এইযে বসে আছি। নেন, সাহস দেখান।
–ছি ছি ছি ! মানুষের পেটেও এমন মেয়ে হয় রে বাপ ! মানুষের পেটেও বলে এমন মেয়ে জন্ম নেয়! কোন তাবিজের পড়া পানি খাইয়ে আমার রাদিফ বাবাটার চোখে পট্টি লাগিয়েছিস!! আমার কথা শুনেও না।
ফুপি ধিক্কার করে আরো কয়টা কথা শুনিয়ে চড় মারতে হাত উঠালেন, কিন্তু খোদার রহমতে মুগ্ধ আজ দেখে ফেললেন। উনি দরজায় দাড়িয়েই চিৎকার করে বললেন,
— ফুপি থামো!!
উনি হাতের এফ্রনটা ফেলে আমার কাছে আসলেন। আমার কাধে হাত রেখে আগলে ধরে নিলেন। উনি আশ্চর্য হয়ে ফুপিকে বললেন,
–তুমি ওকে মারতে হাত তুলেছিলে? ফুপি জবাব দাও ! আমি জবাব চাই ফুপি।
ফুপি শুরু করলেন পুরোনো টেকনিক, চোখের জলে নিজেকে সাধু সাজা, যেই জলে বশবর্তী হয়ে সেদিন চড় দিয়েছিলেন উনি। ফুপি হুহু করে আচলে নাক ঢেকে বলে উঠলেন,
–বাবা রে, ও বাবা। আমার মানিক বাবা…তোদের বাসায় আমি হাত পা গুটিয়ে তোর মাকে খাটিয়ে নিজের শক্তি বাড়াচ্ছি তাই নারে?? তোর বউ শুনিয়ে দিল…বাবা, তোর বউটা শুনিয়ে দিল তোর মা-ও যে কথা আজও বলেনি। পরের ঘরের মেয়ে এসে শুনিয়ে দিল….
ফুপি ঝর্না ছেড়ে কান্না বাড়িয়ে রুম থেকে চলে গেলেন। মুগ্ধ আমার কাধ ছেড়ে দরজা আটকাতে গেলেন। বুকে ধুকপুক ধুকপুক করছে উনি আবারো আমায় চড় মেয়ে কষ্ট দিবেন। চড় দিলে আমি বসে থাকবো না, চলে যাব। আমার গাল ও শরীর কোনো সরকারি জিনিস না আপন মানুষের চড় খাওয়ার পরও চুপ করে বসে থাকব। দরজা লাগানো শেষ, মুগ্ধ আমার কাছে দাড়ালেন। চোখ নিচু ফেলে, হাতের আঙুলে নখ বসিয়ে চলছি, বাকা চাদের মতো চিকন দাগ কাটছে আঙুলে। উনি আমার থুতনি উচু করে বললেন,
–ফুপি যা বলছে সব সত্যি?
কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা। ফুপিকে রাগ চড়িয়ে অনেক কথাই শুনিয়েছি, আজকের কথাগুলো সত্য। বুকের ধড়ফড়ানি তুমুল কম্পে কম্পিত হচ্ছে, ইন্জিন ঘুরানো চাকার মতো কম্পন। উনি থুতনিটা আরো একটু উচু তুলে ঠোটে ঠোট ছুয়িয়ে দিলেন। আমি অবাক! উনি চড় মারলেন না! ফুপির কথা কানে নিলেন না!
–“বাসা পেয়ে গেছি মম পাকনি, কাল আমরা চলে যাচ্ছি”
-চলবে
-Fabiyah_Momo