#যদি_বলি_ভালোবাসি♥
#PART_23
#FABIYAH_MOMO🍁
কিছু সময় ব্যাপী থেমে বলে উঠলাম,
— “আমি কি বেশ্যা হয়ে গেছি? বাচার অধিকার কি নেই? মরে যাব ?”
আমার উৎকন্ঠায় মুগ্ধ আর পাগলপ্রায় হলেন না। উনি মাথা থেকে হাত সরিয়ে কপালে বুলিয়ে দিচ্ছেন। নরম শান্ত ধীর গলায় বলে উঠলেন-
–তিনটা প্রশ্ন করবো? জবাব দিবি? ইটস ইম্পর্ট্যান্ট ফর ইউর নলেজ সেক্টর, সো প্লিজ কারেক্ট এ্যান্সার দিবি।
–আচ্ছা,
–জীবনে কয়টা প্রেম করেছিস? কার সাথে এবং কখন?
–একটাও না। কারোর সাথেই না। কখনও না।
–গুড! নেক্সট এ্যান্ড সেকেন্ড কোয়েশ্চ্যান, বিয়ের ফ্যাক্ট ছাড়া সামহাও কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলছিস?
–না,
–ওকে! থার্ড এ্যান্ড হাম্বেল কোয়েশ্চ্যান, আমায় ভালোবাসিস নাকি অন্যকিছুর টান?
–ভালোবাসি আপনাকে। অন্যকিছুর টান কাজ করেনা, জাস্ট আপনাকে চাই আমি! আর কিচ্ছু না!
উনি তিনটি প্রশ্নোত্তর পেয়ে কি বোঝাচ্ছেন বা কি বোঝানোর সাবজেক্ট তুলবেন জানি না। উনি বুদ্ধাঙ্গুলিটা আমার চোখের উপর এনে বন্ধ করে দিলেন চোখটা। আমাকে তর্জনী উচিয়ে কালো আসমানে ইশারা দেখিয়ে বললেন,
–একটা চোখে দেখার চেষ্টা কর….কি দেখলি? কেমন দেখাচ্ছে?
আমি কথানুযায়ী একচোখ বন্ধ রেখে অপর চোখে আকাশে তাকালাম,
–স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কিন্তু মনের মধ্যে কেমন একটা খুতখুত থেকে যায়…এক চোখের চাহনি স্পষ্ট হলেও মনকে তৃপ্ত করছেনা,
উনি চোখের পাতা থেকে বৃদ্ধাঙ্গুলি সরিয়ে নিলেন, আজ্ঞাপন করলেন দুটি চোখে তাকানোর।
–কেমন দেখাচ্ছে বলতো? ক্লিয়ার? স্যাটিসফাইড?
–হুম পরিস্কার। একদম পরিস্কার।
আকাশে তাকানো মুখটা আমার উনার বুকে গুজে নিলেন। কপালে আলতো ঠোট ছুয়িয়ে বলে উঠলেন,
–মম পাকনি, আমার হাতে থাপ্পর না খেতে চাইলে সভ্য মেয়ের মতো বাজে ওই শব্দটা কখনো আর বলবিনা। তুই কোনো কারন ছাড়াই মানুষের সাথে আর্গিউম্যান্টে জড়াস না আমার ভালো করে জানা আছে। তুই আমার একটাও স্মৃতি অর ছোটবেলার ফাজলামি ভুলতে পারিসনি, যা একটা সময় তোর সাথে ঘটেছে। আমি জানি তোকে আমার ব্যাপারে যেটাই জিজ্ঞাসা করবো তুই ফট করে বলে দিবি। তোকে আমি দুইচোখে দেখি পাকনি, একচোখে না। একচোখে দেখা মানুষগুলো তোকে কুরুচিপূর্ণ কথা শোনাচ্ছে। শেষবার! আবারো রিপিট করছি, বাজে ওইওয়ার্ডটা আমার কানে যেন না আসে, আমি গায়ে হাত তুললে তোর মন ভাঙ্গলে এ বাড়ি ছাড়ার রাস্তা নেই। আমি ছাড়া তোর কেউ নেই,কথাটা মনে রাখিস, মুখোশ পাল্টে অনেকেই আসবে তোর পাশে থেকে ভালো সাজার, কিন্তু দেখার আগে চিন্তা করিস। তোর জন্য আমি আব্বুর পারমিশন ছাড়া, না দেখা করে চলে এসেছি। ব্যাপারটা বুঝিস প্লিজ।
কিছু বললাম না, চুপ রইলাম। উনি খুব সুন্দরভাবে আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন আমার আসলে কেমন ও কোথায়, কিভাবে থাকা উচিত। আমি ভুল কিছু করতে নিলেই সবসময় উনি সামনে এসে উপায় বাতলে দেন নয়তো পরিস্থিতি ঘুরিয়ে আমার সাপেক্ষে করে দেন। আমি নিজের জোরপূর্বক বিয়েটা উনার কথা শুনলে স্বার্থকাকারে মনে পড়ি।। একজন উনি থাকলে মনে করি, জীবনে সব পাওয়া হয়ে গিয়েছে আমার। সবটাই পেয়েছি যা একজন মেয়ে হিসেবে তার মানুষটার কাছ থেকে দরকার।
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে উনাকে দেখতে পাইনি, উনি সবসময়ের মতো পেশার টানে চলে গিয়েছেন হসপিটালে। এই জিনিসটা ভালো লাগে আমার আসাতে উনার মাঝে কাজ নিয়ে কখনো গাফিলতি আসেনি। একমনে একপানে উনি মানুষের সেবা দিয়ে থাকেন। সকালের নাস্তা সেরে ড্রয়িং রুমে গেলে দরজায় কেউ কলিং বেল বাজায়, আমি গলায় ওড়না দিয়ে দরজা খুলে দেই।
–জ্বি আমি তামান্না, পাশের ৮০১ নং ফ্ল্যাটের মানুষ। আপনারা কি নতুন এসেছেন?
সাদামাটা পোশাকে দুইপাশে চুল ছেড়ে সুন্দর একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে, নাম বলল তামান্না। গড়ন পাতলা, আমার চেয়ে উচ্চতায় লম্বা, গায়ের রঙ শ্যামলী। আমি অতিথি বুঝে স্বাগত জানানোর জন্য হাসিমাখা ভঙ্গিতে বলে উঠলাম,
–হ্যা আমরা নতুন… আমি মম। আসুন, আসুন…
তামান্না ভেতরে ঢুকলো। ওকে সোফায় আসন করতে বললাম। ও বসলো। বয়সে আমার সমান বয়সী বলে আমি ওকে “তুমি-তুমি” করেই ডাকতাম।
–কাল তোমাদের দেখেছি ফ্ল্যাটে ঢুকতে। আমার হাসবেন্ড বাইরে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলছিলো, তারপর আর খুলার প্রয়োজন পড়েনি দেখলাম….
তামান্না একটা লাজুক সূচকে হাসি দিল, ব্যাপারটা প্রথমে ধরতে না পারলেও পরে বুঝি আসলে কাল মুগ্ধের রোমান্টিকগিরির বায়না হয়তো দরজা খুলার আগে উনারা টের পেয়েছিলো। কি লজ্জা!! “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়” প্রবাদটা পুরোপুরি খেটে গেল!! না করেছিলাম উনাকে, কেউ দেখে ফেলবে!! মনে মনে মুগ্ধকে আট দশটা ছবক মারতেই তামান্না রুমের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বলে উঠলো,
–তোমার হাসবেন্ড খুব সুন্দর, খুব সুদর্শন দেখতে,
আমি কপালকুচকে তামান্নার কথার উক্তি মিলাতে পারলাম না, ও কিভাবে কথাটা উপস্থাপন করলো, জিনিসটা ভাবতে বাধ্য করছে খুব।
–জী?তুমি আমার হাসবেন্ডকে বললে? বুঝলাম না,
তামান্না কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলল,
–সরি আমার কথায় ওই মতলব বোঝাইনি, বোঝাতে চেয়েছি, তুমি খুব ভাগ্যবতী, হাসবেন্ড সুন্দর,
–কেন? মনে কিছু না করলে, প্রশ্ন একটা জিজ্ঞেস করি?? তোমার হাসবেন্ড কি সুন্দর না????
–সুন্দর। হ্যান্ডসাম দেখতে। কিন্তু…..
–কিন্তু?
–হাহা কিছু না, আমি না প্রথমদিন এসেই সাংসারিক গল্প বসিয়ে দিয়েছি। তুমি বলো, কোথায় থাকো? কোথা থেকে এসেছো?
–নারায়নগন্জ থেকে এসেছি, স্থানীয় ওখানকার।
–নাম শুনেছি অনেক, যাওয়া হয়নি এখনো…
–বসো আমি চা করে নিয়ে আসছি,
–না প্লিজ বসো তুমি। আমি একা থাকি, সময় কাটে না, তাই কথাবার্তা-গল্পগুজব করতে চলে আসলাম। আমি কিছু খাবো না, কিছু আনতে হবেনা, বসো।
–আচ্ছা আচ্ছা ঠিকআছে। তোমাকে দেখে নতুন বউ বউ লাগছে, নিউলি ম্যারিড কাপেল?
তামান্না একটা ম্লান হাসি দিল, যেটা আমরা কষ্ট লুকানোর জন্য দিয়ে থাকি। ও বলল,
–জানো, আমি তোমার সমবয়সী হলেও একটা বিপুল পার্থক্য আছে আমাদের মধ্যে…
–পার্থক্য?
–হুম পার্থক্য। তুমি খুব ভাগ্যবতী মম। তুমি তোমার স্বামীর একমাত্র বউ। আর আমি তিনজনের মাঝে ফেসে আছি, ওর তিনটে বউ, আমি তৃতীয়।
তামান্নার কথায় স্পষ্ট কষ্টের গন্ডি বুঝলাম। স্বামীর ভাগীদার তিনটে মেয়ের মাঝে খন্ডিত হলে তামান্না তবে কি সুখী? সমাজে ছেলের কতক বিয়েটা খারাপ চোখে দেখে না, কিন্তু মেয়ে হলেই সর্বনাশ। উনিও কি আমার উপর বিরক্ত হয়ে অধিক বউ রাখবেন? দুই-তিনটা বিয়ে করে কি উনিও ভুলে যাবেন? করলেও তো কেউ উনাকে কুকথা শোনাবে না। হঠাৎ দরজায় কলিংবেল পড়লো, আমি দরজা খুলবো, তামান্না আগেই উঠে দাড়ালো। দরজা খুললে দেখি এক লোক দাড়িয়ে আছেন। মোটা গলায় বলে উঠলো,
–তামান্না কি ভিতরে ?
বয়স চল্লিশের ঘরে পৌঁছছে হয়তো, পোশাক দেখে বয়সের ছোয়া মিলবেনা, মুখে ভাজের বলি কমই বটে। তামান্না পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে গেল ওদের ফ্ল্যাটে, ভদ্রলোক তামান্নার সাথে চলে গেল তখন। বেডরুম থেকে আমার ফোনের ঘন্টা বাজছে, আমি রিসিভ করতে দরজা আটকে দিলাম। ফোন নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার, চিনি না আমি, কে সে বলতে পারছিনা। ফোন রিসিভ করলাম,
–** মেয়ে কেমন আছো? মুগ্ধকে নিয়ে কোথায় গেছো? শুনলাম, রাফিন ভাইকেও ঠিকানা বলো নি, এতো কি কানামাছি খেলার? সারপ্রাইজটা কেমন হলো ** মেয়ে?? নাম্বারটা দেখে চিনতেই পারোনি…হা হা হা….
বুঝে গেছেন তো? রূপা কল দিয়েছে, ফোন ধরতেই মুগ্ধের নিষেধ করা গালিটা দিয়ে কথা শুরু করেছে। ফোনটা কাটলাম না আর, শক্ত করলাম নিজেকে দু-চারটা বাজে ওয়ার্ড আমিও শুনিয়ে ছাড়ব রূপাকে!
–আচ্ছা সম্বোধন কি বলে করা দরকার? “তুই” নাকি “আপনি”? মুগ্ধের ছোট! তুই আমারও ছোট! তুই নিজে ** ! আমি ** না! বেশি আকাশে উড়বি তোর ডানা ভেঙ্গে মাটিতে গুড়িয়ে দেবো!
–“দুইদিনের সন্নাসী ভাতকে বলে অন্ন”, তোমার এবিউজ তোমার মতোই থার্ড গ্রেডেড মম! মুগ্ধ তো আমার বর হবেই শুধু সময়ের অপেক্ষা। ওহ্ গুড নিউজ শুনো, তোমার ‘আব্বু’স্ট্রোক করেছে, হ্যাল সিচুয়েশন। মরে যাবে আই থিংক সো….
আব্বু স্ট্রোক করেছেন? “স্ট্রোক” বলল না? স্ট্রোক! ঠিক শুনছি তো ? আমার জন্য স্ট্রোক করলেন? রূপা “হ্যালো হ্যালো” বলে কল কেটে দিল। কান্নায় টপটপ জল পড়া শুরু হয়ে গেল, বাবার কাছে মেয়ে প্রিয়, বাবাই তাকে দূর করে দিল। আমি কি দেখতে পারবোই না?আমি কোন মুখ নিয়ে উনাকে একবার দেখতে যাবো? গলার ঢোক আটকে আসছিলো, হাতের কাপা ভাব শুরু। কোনোরকমে চেষ্টাখাত চালিয়ে কল করি মুগ্ধকে, হাত থরথরিয়ে কাপছে,
–হ্যা মম পাকনি বল, কি অবস্থা এখন?বাসায় অল রাইট?
কানে ফোন রেখেও হাত কাপছে, কি বলে শুরু করবো মাথায় গুল খাচ্ছে, উনি অস্থির হয়ে উঠলেন, আরম্ভ করলেন প্রশ্নের ঝুড়ি,
–মম? শুনছিস? কথা বল! কি হলো? তোর কিছু হয়েছে? আমি আসবো?? আমার দরকার? সে সামথিং ড্যাম! সিট !
–চলবে
–Fabiyah_Momo