#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_০৭
লেখনীতেঃ ভূমি
সেদিনের পর সাত সাতটা দিন কেঁটেছে। এই সাতদিনে রক্তিম অদ্রিজার সাথে প্রয়োজন ছাড়া একবারও কথা বলেনি।রক্তিম বাসায় ফিরলেই অবাক হয়ে চাইত অদ্রিজা।এই ছেলেটাকেই মন থেকে অভদ্র, অসহ্য লোক মনে করত সে।কিন্তু এই সাতদিনে পুরো পাল্টে গেল যেন যুবকটি। এই সাতদিনে কথা কথায় একদমই কাছে আসার চেষ্টা করে নি যুবকটি।মুখের কাছাকাছি মুখ এনে বাঁকা হেসে ও কথা বলেনি।ট্যারাব্যাকা দাঁত গুলোর ঝলক দেখিয়ে হু হা করে হেসেও উঠেনি।ফু দিয়ে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলোও উড়িয়ে দেয় নি।সদা সর্বদা চুপ থেকেছে।কোন বিশেষ দরকারে অদ্রিজা কিছু জিজ্ঞেস করলেও কেবলই হু, হা উত্তর দিয়েছে।রক্তিমের মুখে মেকি হাসি ব্যাতীত আগের সে চমৎকার হাসিটা এই কয়দিনে চোখেই পড়ে নি তার।কি হলো হঠাৎ এই লোকটার?সদা সর্বদা এমন গম্ভীরতা দেখাচ্ছে কেন সে? অদ্রিজা উত্তর খুঁজে পেল না।রাতের খাবারটা হাতে নিয়ে রুমে ডুকেই রক্তিমের দিকে তাকাল সে।ল্যাপটপে মনোযোগ স্থির তার।অদ্রিজা যে রুমে প্রবেশ করল তা হয়তো মস্তিষ্ক বুঝেই উঠল না তার।কিংবা বুঝে উঠলেও ইচ্ছে করই কোন কথা বলল না। অদ্রিজা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাবার নিয়ে রক্তিমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।ধবধবে ফর্সা লম্বা চওড়া শরীর। অদ্ভুত সুন্দর চোখজোড়া ঘন পাঁপড়িতে ঘেরা।মাথার ঘন কালো চুলগুলো কপালে ঝুকে আছে।অদ্ভুত সুন্দর।মুখের খোঁচা দাঁড়িগুলোও অনন্য সুন্দর মনে হলো অদ্রিজার।লোকটার নিরবতাও ভিন্নরকম সুন্দর।অদ্রিজা মৃদু হেসেই বলল,
‘ মিঃ রক্তিম?আপনার খাবারটা?’
রক্তিম মাথা উঁচু করে চাইল।চোখের সামনে পুষ্পের ন্যায় পবিত্র সুন্দর রমণীটিকে আপাদমস্তক দেখে নিয়েই মেকি হাসল সে।ক্লান্ত চোখজোড়া দিয়ে ইশারা করে বোঝাল, খাবার গুলো টেবিলে রেখে দিন।অদ্রিজা হতাশ হলো।এবারের মতোও রক্তিমের সাথে কথা বলার আশাটা হারিয়ে গেল তার।আত্নসম্মানের জ্বলন্ত অনলে বার কয়েক নিজের মনকে জ্বলসে নিয়েই পাশ ফিরে দাঁড়াল।খাবারটা টেবিলের উপর আওয়াজ করে রেখেই সামনের চেয়ারটায় বসে পড়ল।অদ্ভুত!এই লোকটা তার সাথে এমন করছে কেন?শুরু থেকে তো এমন ছিল না।তাহলে?হঠাৎ এতটা পরিবর্তন কেন তার মাঝে?আসলেই কি রক্তিমকে যেমনটা ভেবেছিল রক্তিম তেমন নয়?রক্তিমের বাবার কথাটাই কি তাহলে সত্যি? প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর পেল না অদ্রিজা।চেয়ারে বসে হোতজোড়া বুকে ভাজ করে দেখতে লাগল রক্তিমকে।শক্তপোক্ত দেহের এই পুরুষটি দেখতে মাত্রা অতিরিক্ত সুন্দর।তাই তো বোধ হয় মেয়েরা এই পুরুষটিকে এত সহজেই ভালোবেসে ফেলে।আর রক্তিম?রক্তিমও কি কোনদিন কোন মেয়েকে ভালোবেসেছে?সঙ্গে সঙ্গেই তাচ্ছিল্যমাখা হাসি ফুটল মুখে।দূর!এই লোকটা আবার কাউকে ভালোবাসতে পারে নাকি?নিজের ভাবনাগুলোকে ঝুড়ি ঝুড়ি দোষারোপ করে খাটের এক কোণায় শুয়ে পড়ল। গত সাতদিন রক্তিমকে ঘুমোতে দেখেনি অদ্রিজা।জানে আজও ঘুমোবে না।হয় খাটে বসে, নয়তো বেলকনিতে বসে এক নাগাড়ে ল্যাপটপই ঘাটবে।লোকটার কি ঘুম পায় না?চোখজোড়া কি ক্লান্ত হয় না?কে জানে!
.
ঘুমটা আজ একটু দেরিতেই ভাঙ্গল অদ্রিজার।যখন বোধ হলো সকাল হয়েছে তখন প্রায় নয়টা বাঁজল।ঘন পাঁপড়িতে ডাকা চোখজোড়া খুলে আশপাশটায় তাকাতেই কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তিমের উম্মুক্ত বুক চোখে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে উঠে বসল অদ্রিজা।গভীর দৃষ্টি ফেলে পরখ করতে লাগল সামনের যুবকটিকে।শরীরে তোয়ালে পেঁছানো।লোমবিহীন সাদা ধবধবে উম্মুক্ত বুক। মাথার ঘন কালো ভেজা চুলগুলো কপালে এসে ভীড় করল জড় হয়ে।মুখের খোঁচা দাঁড়িতেও বিন্দু বিন্দু পানি।চোখজোড়া লাল টকটকে হয়ে আছে।চোখেমুখে উদ্ভট গম্ভীরতার ভীড়।এই লোকটাকে আদৌ গম্ভীরভাবে মানায়?একদমই নাহ।অদ্রিজা উঠে দাঁড়িয়ে রক্তিমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।বিরক্তি নিয়ে চেঁচিয়ে বলল,
‘ সকাল সকাল এমন কাপড় চোপড় বিহীন শরীর নিয়ে পুরো রুম ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন?’
রক্তিম মাথা তুলে চাইল।অদ্রিজাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে সরে দাঁড়াল।মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ সমস্যা?’
অদ্রিজা সরু চোখে চাইল।আকাশ সমান বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,
‘ সমস্যা?সমস্যা কিনা তা জিজ্ঞেস করছেন আপনি?আসলেই আপনি অসহ্যকর একটা লোক রক্তিম।একে তো বড়সড় মাপের বেহায়াপনা করছেন আবার জিজ্ঞেস করছেন সমস্যা?’
অদ্রিজার তীক্ষ্ণ ভাবে এই ঝেড়ে দেওয়াকে এটুকুও পাত্তা দিল না রক্তিম।নিজের জামাকাপড় নিয়ে অদ্রিজাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেল।অদ্রিজা সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল।কপালে পড়ল ভাজ।এই লোকটা হঠাৎ পাল্টে গেল কেন? এই ব্যবহারটা কেবল তার সাথেই করছে? নাকি সবার সাথে?
.
রক্তিম রেডি হয়ে বের হওয়ার সাথে সাথেই অদ্রিজাও কোনভাবে শরীরে একটা শাড়ি পেঁচিয়ে বের হলো রুম থেকে। ড্রয়িং রুমে বসে থাকা রিয়াদ সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।রক্তিমকে দেখেই চশমার ফের দিয়ে চাইলেন তার দিকে। রক্তিম দরজা পর্যন্ত যেতেই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
‘ রক্তিম?’
রক্তিম পা জোড়া স্থির করে দাঁড়াল।ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়েই সোফায় বসে থাকা রিয়াদ সাহেবের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল।তীব্র বিরক্তি নিয়ে চেয়ে থাকতেই রিয়াদ সাহেব বললেন,
‘ আমার রুমে এসো তো একটু।’
রক্তিমের বিরক্তি এবার আকাশ ছুঁয়ে গেল যেন।কপাল কুঁচকেই বলে উঠল সে,
‘ আপনার আর আমার মাঝে বিজন্যাস পার্টনার ব্যাতীত অন্য কোন সম্পর্ক নেই মিস্টার মাহমুদ।প্লিজ,ভুলে যাবেন না কথাটা।আর আমাকে এভাবে আপনার রুমে যাওয়ার আদেশ দেওয়ার ও অধিকার আপনার নেই।মাইন্ড ইট!’
রিয়াদ সাহেব হতাশ চাহনি ফেলল।চায়ের কাপটা একপাশে ঠেলে রেখেই বললেন,
‘ রক্তিম, তুমি না মানলেও আমি মানি আমি তোমার বাবা ।তোমার মা ও বোধ হয় তাই মানে।এখন তুমি কি তোমার মাকেও বলবে সে তোমার মা নয়?যদি ধরেও নি আমরা তোমার বাবা মা নই, তাও কি এসে যায়?তুমি সত্যিই কি আমাদের ছেলে না?তুমি এক্চুয়েলি বিঘড়ে গেছো রক্তিম।তোমার মস্তিষ্কটাই বিঘড়ে গেছে।নয়তো নিজের বাবা মাকেও অস্বীকার করতে?’
কথাগুলো শুনে রক্তিমের চোখমুখে হঠাৎ ই অদ্ভুত পরিবর্তন নামল। চোখমুখে ফুটে উঠল অদ্ভুত রকম হিংস্রতা,ঘৃণা আর রাগ।কপালের রগটা সঙ্গে সঙ্গেই ফুলে উঠল যেন।চোখজোড়া লাল টকটকে হয়ে উঠল দ্রুত।রাগে সামনের চেয়ারটাকে এক লাথি মারতেই চেয়ারটা গিয়ে গড়িয়ে পড়ল অদ্রিজার পায়ে। কাঠের ভারী চেয়ারটা পায়ের উপর পড়তেই ব্যাথায় কনকনিয়ে উঠল পায়ের মাংসপেশী।মুখ দিয়ে অস্ফুট সুরে বেরিয়ে আসল,”আহ”।চোখ টলমলিয়ে উঠল সঙ্গে সঙ্গে।তীব্র ব্যাথায় মোমের মতো সাদা তুলতুলে মুখটা হয়ে উঠল নীল।অস্ফুট স্বরে কাঁতরে উঠেই বসে পড়ল সঙ্গে সঙ্গে। পায়ে হাত দিয়ে চেপে ধরেই কপাল কুঁচকে তাকাল রক্তিমের দিকে।রক্তিমকে আগের মতোই হিংস্র দেখাচ্ছে।চোখে মুখে এখনও সেই প্রখর ঘৃণা।জ্বলন্ত চাহনিটা এখনও ঠিক ততোটাই জ্বলন্ত। অদ্রিজা নামক মেয়েটি যে তার দেওয়া ব্যাথায় কাঁতরে উঠল তা তার বোধই হলো না।কিংবা হয়তো বোধ হলো।তবে তাতে হয়তো তার কিছু এসেই যায় না। অদ্রিজা তপ্তশ্বাস ফেলল নীল হয়ে যাওয়া মুখটা নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল।ক্ষ্রিপ্ত গলায় চেঁচিয়ে বলল,
‘ এভাবে ছুড়লেন কেন চেয়ারটা?মাথায় সমস্যা আছে আপনার?নিজের বাবা মায়ের সাথে তো ঠিক মতো কথা বলেন না তা না হয় বাদ।তা বলে অস্বীকার করছেন বাবা মা কে?ছিঃ!সন্তান হিসেবেই আপনি অযোগ্য।’
রক্তিম লাল টকটকে চোখজোড়া দিয়ে অদ্রিজার দিকে তাকাল।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ স্টপ অদ্রিজা।আপনি একটা কথাও বলবেন না এই বিষয়ে।আপনার সেই অধিকার নেই।’
অদ্রিজা থ হয়ে তাকিয়ে রইল।অধিকার?সত্যিই কি অধিকার নেই?রিয়াদ সাহেব ধমকের সুরে বললেন,
‘ আহ, রক্তিম?তুমি এভাবে ওর সাথে কথা বলতে পারো না।তাছাড়া তুমি তো বলেছিলে এই একমাস তুমি অদ্রিজার খেয়াল রাখবে।এটাকে তো খেয়াল রাখা বলে না রক্তিম।’
রক্তিম মাথা চেপে ধরল।মাথার চুলগুলো দুইহাতে মুঠো করে ধরেই চেঁচিয়ে বলে উঠল,
‘ মিস্টার মাহমুদ?আপনি আমার উপর অধিকার দেখাচ্ছেন? বাবার অধিকার?লজ্জ্বা করে না?ছিঃ!প্লিজ নিজের লিমিটটা ক্রস করবেন না।আর ঐ মেয়েটাকেও নিজের লিমিটেই থাকতে দিন। উনি লোভী।টাকার লোভে বিয়ে করেছেন আমায়। কাল অন্য একজনের কাছে বেশি টাকা পেয়ে লাফ মেরে চলে যাবে আমার জীবন থেকে।তাই দুইদিনের অতিথির আমার সম্পর্কে কথা বলার কোন অধিকারই নেই মিস্টার মাহমুদ।কোন অধিকার নেই!’
অদ্রিজা টলমলে চোখে চেয়ে থাকল।লোভী!সে লোভী?লোভী সম্বোধনটা কি জীবনের শেষপ্রান্তে গিয়েও সহ্য করতে হবে তাকে?মস্তিষ্ক কঠিন ভাবে বলল,’ হ্যাঁ হবে।তুমি লোভীই তো অদ্রিজা।তা নাহলে কি টাকার বিনিময়ে বিয়েটা করতে অদ্রিজা?পারতে না।রক্তিম লোকটা ঠিকই বলেছে। তুমি লোভীই।’তৎক্ষনাৎ মাথা চেপে ধরল সে। টলমলে হওয়া চোখজোড়া দিয়ে গালে বয়ে পড়ল নোনতা জল।রক্তিম নামক পুরুষটা সে চোখের পানিটা খেয়ালই করল না।দ্রুত পা ফেলে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
.
এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে দিহান।এতদিন পর ভার্সিটিতে এসেই পরিচিত মুখ গুলোকে খুঁজে বেড়াল চোখজোড়া।অদ্রিজা নামক মেয়েটিকে দেখার অপেক্ষা করতে না পেরেই দ্রুত ক্লাসরুমে ডুকল।কিন্তু চোখজোড়া খুঁজে পেল না অদ্রিজাকে।সঙ্গে সঙ্গে হৃদয় থেকে বেরিয়ে আসল দীর্ঘশ্বাস।এভাবে অসুস্থ হওয়ার পরও অদ্রিজা একবারও তার সাথে কথা বলল না?কথা বলার প্রয়োজনবোধ ও করল না।কি অদ্ভুত!দিহান ক্লাসরুমে আর দাঁড়াল না।পা বাড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেই কল দিল অদ্রিজাকে।একবার, দুইবার, তিনবার কল দিল।কিন্তু কল ধরল না অদ্রিজা।বিরক্তে চোখ মুখ কুঁচকে সামনে তাকাতেই শরীর জুড়ে বয়ে গেল অদ্ভুত শীতলতা।রিক্সায় অদ্রিজা নামক রমণীটিকে দেখেই মনের ভেতর জেগে উঠল দগ্ধ হওয়া সেই অনুভূতি।মোমের মতো সাদা তুলতুলে শরিরে কালো রংয়ের শাড়ি।চোখজোড়া ফুলে আছে।দেখেই বোঝা গেল সে অনেক কেঁদেছে।নাকের অগ্রভাগ এখনও লাল হয়ে আছে।কিন্তু কেন?কেন কাঁদল?বুকের ভেতর তৎক্ষনাৎ চিনচিনে ব্যাথার উদ্ভব হলো। নিজের প্রেয়সীর দুঃখে কষ্টিত হয়ে উঠল নিজের হৃদয়টাও।চোখজোড়া বার কয়েক বন্ধ করেই অদ্রিজা নামক মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেল সে।রিক্সাটা সামনে এসে থামতেই অদ্রিজা পাশ ফিরে দিহানকে দেখল।এতক্ষন রক্তিমের আর নিজের উপর থাকা রাগ, ক্রোধ আর ঘৃণাটা সঙ্গে সঙ্গে উবে গেল চওড়া অপরাধবোধে।এক্ষুনি দিহান কিছু বলে বসলে?কি বলবে সে?কি উত্তর দিবে?দিহানও কি তাকে লোভী বলবে?অদ্রিজা ভেবে পেল না। দ্রুত ভাড়াটা দিয়ে দিহানকে এড়িয়ে পা ফেলতেই দিহানের শান্ত কন্ঠটা কানে এল,
‘ এড়িয়ে যাচ্ছো কেন আমায় দ্রিজা?’
অদ্রিজার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে উঠল।কপাল ঘেমে উঠল।ঘাড় ঘুরিয়ে দিহানের দিকে তাকাতেই আবারও বলল দিহান,
‘ তোমার বর এতটা সন্দেহ করে তোমাকে যে তার ছেলে বন্ধুর সাথেও কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছে?অন্তত আমার তো লোকটাকে তেমন মনে হয়নি অদ্রিজা।তুমি স্বেচ্ছায় আমায় এড়িয়ে যাচ্ছো। কেন?’
অদ্রিজা উত্তর দিতে পারল না।অস্থিরভাবে মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ তেমন কিছু নয়।ক্লাস আছে দিহান।’
কথাটা বলেই উল্টোদিক ফিরে খুঁড়িয়ে চলতে লাগল অদ্রিজা।দিহান ভ্রু কুঁচকে চাইল।পেঁছন থেকে অদ্রিজার হাতটা এই প্রথমবারের মতো ধরে নিয়ে বলে উঠল,
‘ মিথ্যে।শুধুমাত্র ক্লাস আছে বলে তুমি আমায় এড়িয়ে যেতে পারো না অদ্রিজা।’
অদ্রিজা অবাক হয়ে পেঁছন ফিরে চাইল।দিহান তার হাত ধরেছে তা তার বিশ্বাসই হচ্ছে না।অবাক হয়েই তাকিয়ে রইল দিহানের হাতের বন্ধনের দিকে।মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ হাত ছাড়ো দিহান।’
দিহান আরো শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ আগে এড়িয়ে যাওয়ার কারণটা বলো দ্রিজা।আমি তো তোমায় অপরাধী বলিনি।অন্যান্য প্রেমিকের মতো তোমায় ছলনাময়ী কিংবা প্রতারকও বলব না আমি।তুমি তুমিই। তুমি দ্রিজা।তুমি সেই মেয়েটা যাকে আমি ভালোবাসতাম, ভালোবাসি।যার কাছে আমি এটুকু সময় চেয়েছিলাম।যাক, সেসব না হয় বাদ।কিন্তু আমায় এড়িয়ে যাচ্ছো কেন দ্রিজা?আমি তো তোমার কাছে কিছু চাইছি না।কিছু বলছিও না তোমাকে।তোমার জীবনসঙ্গী হিসেবে তুমি যাকে চুজ করেছো তাকেই জীবনসঙ্গী করেছো এতে আমার বিন্দুমাত্র কম্প্লেইন নেই।কিন্তু প্লিজ, আমাকে এড়িয়ে যাবে না দ্রিজা।আমাকে আগের মতোই বন্ধু মেনে কথা বলবে।এটুকু চাওয়া রাখতে পারবে?প্লিজ।’
অদ্রিজা শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে রইল।দিহান আবারও বলল,
‘ আমি চাই তুমি যেখানেই, যার কাছেই থাকো ভালো থাকো দ্রিজা।তবে আমাকে এড়িয়ে যেতে পারবে না।প্রমিজ?সম্পর্কটা আগের মতোই বন্ধুত্বের থাকবে।অবশ্য তোমার কাছে আমি বন্ধু ব্যাতীত অন্য কিছু ছিলামও না কোনকাল।তাই না?’
অদ্রিজা মুখ টিপে হাসল। তারপরই বলল,
‘ আর এড়িয়ে যাব না দিহান।’
দিহান মুচকি হাসল।অদ্রিজার খুঁড়িয়ে হাঁটাটা আগেই লক্ষ্য করেছিল সে।ডান পায়ের লাল টকটকে জায়গাটাও চোখে পড়েছিল।এতক্ষন সে বিষয়ে না বললেও এবার বলল,
‘ কেঁদেছো?পায়ে ব্যাথা পেলে কিভাবে?পায়ে ব্যাথা পেলে এতটা কাঁদতে হয় নাকি দ্রিজা?’
অদ্রিজা মুগ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে রইল।এই ছেলেটা তাকে এত কেন বুঝে?এত কেন ভালোবাসে।সবকিছু না বলতেই কেন বুঝে যায় এই ছেলেটা!জানা নেই তার।কিন্তু এই ছেলেটাকে সে তার জীবনে পায় নি এটাই আক্ষেপ।এই স্বভাবের কোন ছেলেকেও পায়নি, যাকে পেয়েছে সে কেবলই আঘাত করতে পারে।দুঃখ দিতে পারে।
#চলবে….
{ ভুলত্রুটি মার্জনীয়।ভালোবাসা।আজকের পর্বটা অগোছাল হয়েছে।দুঃখিত তার জন্য!}