শেষ_থেকে_শুরু
পর্ব_৭
#নন্দিনি_চৌধুরী
১৩.
রাতে মুগ্ধ আরিশ আর ওর বিয়ের ছবিটা নিয়ে বসে আছে।চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।সেতো চায়নি এমন কিছু।সে চায়নি আরিশের থেকে আলাদা হতে,সে চায়নি সমাজে ডিভোর্সি পরিচিয়ে থাকতে।সবতো তার ভাগ্যের পরিহাস।
“জীবনে আমরা যাকে অনেক বেশি ভালোবাসি বিশ্বাস করি সেই আমাদের সব চেয়ে বেশি কষ্ট দেয়। সে জন্য হয়তো কেউ বলেছিল__ জীবনে যাকে ভালোবাসো তাকে পেতেই হবে এমন কথা নেই। যদি সে তোমার না হতে চায়,যদি কেঁদেও তুমি তাকে না পাও। তবে তাকে হেসে মুক্তি দেও”।
সকালে,,,
মুগ্ধ যখন আরিশ সায়মা তার অপর সাইডে দেখে তখন সে তাদের থেকে আড়ালে যাওয়ার জন্য পিছাঁলেই। সায়মা তাকে দেখে ফেলে।সায়মা মুগ্ধকে দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে মুগ্ধের দিকে আগায়।মুগ্ধ সায়মাকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।কারণ ও ভালো করেই জানে এখন আর ও যেতে পারবেনা।সায়মা মুগ্ধের কাছে এসে দাঁড়ায় তারপর বলে,
সায়মা:আরে আপু তুই এখানে?
মুগ্ধ:হ্যা কলেজে যাচ্ছি।
সায়মা:বাব্বাহ ডিভোর্স এর মাত্র এক সপ্তাহ হলো এর মধ্যেই রাস্তায় বেরোচ্ছিস।লজ্জা সরম করেনা নাকি রে।
মুগ্ধ:কেন আমার লজ্জা করবে কেন? কেউ যদি ডিভোর্সের চারদিনের মাথায় বিয়ে করতে পারে। তো আমি কেন রাস্তায় বেরোতে পারবোনা।কোনো আইনে আমার জানামতে তো লেখা নেই যে, ডিভোর্সি মেয়ে রাস্তায় বের হতে পারবেনা।
সায়মা:উফফ এখনো তোর এতো দেমাগ আসে কোথা থেকে।যাই হোক আমি আর আরিশ বিয়ে করে ফেলেছি।
মুগ্ধ:হ্যা জানি।অন্যের স্বামীকে কেড়ে নিয়ে তাকে বিয়ে করে ফেলা কত সুখের তা তোকে না দেখলে জানতাম না।
সায়মা:তুই কি আমাকে অপমান করছিস?
মুগ্ধ:মান অপমান বোধ আছে তোর তাতো জানতাম না।এনি ওয়ে আমার দেড়ি হচ্চে সো এক্সকিউজ মি।
বলেই মুগ্ধ সোজা হাটা দিলো কলেজের পথে আর সায়মা ওখানে রাগে ফুসতে ফুসতে বলতে থাকে,
সায়মা:তোর লাইফ আমি হেল করে দেবো মুগ্ধ। যেমন করে সাদাফ,আরিশের কাছে তোকে নিচু করেছি। এভার তোর ফুল লাইফ নষ্ট করে দেবো আমি।তখন দেখবো কই থাকে এই বড় বড় কথা আর এটিটিউড। সায়মা আবার আরিশের কাছে ব্যাক করলো।আরিশ এত্তোখন ফোনে কথা বলছিলো দেখে খেয়াল করেনি সায়মা তার পাশে নেই বা মুগ্ধকেও দেখেনি।সায়মাকে আসতে দেখে আরিশ বলে,
আরিশ:কই গেছিলে?
সায়মা:অই একটি সামনে গেছিলাম চলো ভিতরে চলো।
আরিশ:আচ্ছা চলো।
মুগ্ধ মাঝ পথে আসতেই সাদিয়ার সাথে দেখা হয়।নিজেকে নরমাল করে সাদিয়ার সাথে গল্প করতে করতে কলেজে যায়।কলেজে আজকে ক্লাস নেই সবাই অনুষ্টানের জন্য বিজি।সবাই কোনো না কোনো কিছু একটাতে নাম দিচ্ছে।সাদিয়া মুগ্ধকে বলছিলো নাম দিতে কিন্তু মুগ্ধ কোনো কিছুতে নাম দেবেনা।তার এসব ভালো লাগেনা।তাই সাদিয়াও আর জোর করেনি।মুগ্ধ আর সাদিয়া বেশ কিছু সময় কাটিয়ে চলে আসে বাসায়।বাসায় আসার পথে আজকেও কিছু মহিলার বাজ্ব কথার স্বিকার হয়েছে সে।তবুও মুখ বুজে সেসব শুনে চলে এসেছে।
বাসায় এসে নিজের রুমে বসে রইল মুগ্ধ।আজকে খেতেও যায়নি নিচে।রুহি এসে অনেকবার ডাক দিলেও মুগ্ধ বলছে তার শরীর ভালোনা তাই সে পরে খাবে।
এখন রাত হয়ে গেছে মুগ্ধ তার রুমেই আছে।কেন জানি তার বিষাক্ত মনে হচ্চে।এমন একটা জীবন তার কি প্রাপ্য ছিলো।
সায়মা আরিশের আলমারি,লোকার সব খুজে হাপিয়ে গেছে কিন্তু ফাইলগুলো পাচ্ছেনা।সায়মা ভেবে পাচ্ছেনা ফাইলগুলো গেলো কোথায়।মুগ্ধ তো এই আলমারিতেই সব রাখতো।তাহলে সব আছে কিন্তু অই ফাইল দুটো কই।
সায়মা:বুজতে পারছিনা ঘরে সব আছে শুধু ফাইল দুটোই উদাও।আচ্ছা ফাইলগুলো মুগ্ধ নিয়ে যায়নিতো।কিন্তু ও কি করে নেবে আইনোতো ওতো মুগ্ধের স্ত্রী নয়।তাহলে গেলো কই ফাইলগুলো।
সায়মা আবার সব কিছু হন্নে হয়ে খুজতে লাগলো।
কি খুজতেছো সায়মা?
হঠ্যাৎ পিছন থেকে কথাটা শুজে ভেবাঁচেকা খেয়ে গেলো সায়মা।পিছনে ফিরে দেখে আরিশ দরজায় দাঁড়ানো।আরিশ রুমে ডুকে দেখে আলমারির সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে।সায়মার কাছে এসে বলে,
আরিশ:এভাবে কি খুজতেছো বলোতো।সব এরকম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
সায়মা:অই আসলে আমার কানের দুল খুজে পাচ্ছিনা।
আরিশ:সামান্য একটা দুলের জন্য ঘর পুলা লন্ড বন্ড করে দিছো আল্লাহ।
সায়মা:ওটা তুমি আমাকে দিয়েছিলে আরিশ।কিন্তু কোথায় যে গেলো দুলটা খুজেই পাচ্ছিনা।এক কানের দুল আছে আর কানেএ দুল খুজে পাচ্ছিনা।
আরিশ ওর পকেট থেকে দুল বের করে সায়মার সামনে ধরলো,
আরিশ:দুলটা গাড়িতে পরে ছিলো।এই নেও এই সামান্য জিনিশ নিয়ে হাইপার হবার কিছু নেই।এই অবস্থায় রিলেক্স থাকা লাগে তুমি জানোনা।
সায়মা আরিশকে জরিয়ে ধরে বলে,
সায়মা:হ্যা জানিতো।(গাধা কথাকার। আমি কি এই দুলটার জন্য পাগল হয়েছিনাকি। আমিতো যেই জিনিশ দরকার সেটা খুজতেছিলাম। নাহ কালকে মায়ের সাথে কথা বলতে হবে।)
আরিশ:চলো ডিনার করে নেই।
সায়মা:হুম চলো।
রাতে মেহের বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আসলে রুহি মেহেরকে বলে,
রুহি:শুনো পাখি আজ দুপুর থেকে না খাওয়া। আমি অনেকবার ডেকেছি কিন্তু বলছে শরীর খারাপ তাই খাবেনা।আমার না ঠিক মনে হচ্চেনা তুমি একটু দেখোনা।
মেহের:তুমি আমাকে একটা কল করবানা যে ও এখনো না খাওয়া।আচ্ছা তুমি খাবার রেডি করো আমি দেখছি ওর কি হয়েছে।
মেহের মুগ্ধের রুমে এসে দেখে মুগ্ধ ঘুম সোফায়। পাশে আরিশের আর ওর বিয়ের ফোটো ফ্রেম।মেহের মুগ্ধের পাশে বসে মুগ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
আমি জানি তোর খুব কষ্ট হচ্চে।কিন্তু তোকে শক্ত হতে হবে।আরিশের মতো ছেলে তোকে কোনোদিন ডিজার্ব করেনা।আরিশ কাচকে হিরা ভেবে আপন করেছে।এর ফল তো ওকে ভোগ করতেই হবে।আর কেউ না জানুক আমি জানি মিস সালমার মেয়ে ঠিক তার মতোই হয়েছে তার চেয়ে ২গুন ভয়ংকর হয়েছে।তোকে আমি সায়মার আশে পাশেও আর যেতে দেবোনা।আমি জানি ও অত পেতে বসে আছে তোর ক্ষতি করার জন্য।প্রোপার্টির ৫০% এর জন্য এসব করছে।ওই প্রোপার্টি তারা কোনোদিন পাবেনা এক মাত্র মা জানতো যে অগুলা সে কোথায় রেখেছে।
আমারটা খুব সহজে হাতালেও তোর ভাগেরটা তারা কোনোদিন পাবেনা।
মেহের মুগ্ধকে কোলে নিয়ে খাটে শুয়ে দিলো।
মেয়েটা একদম মায়ের মতো চাপা স্বভাবের হয়েছে।মাও কোনোদিন তার কষ্টের কথা গুলো কাউকে বলতোনা।মেহের যখন ২বছর তখন মুগ্ধ মায়ের পেটে।বাবা সেই অবস্থাতেও মাকে মারতো।মা মুখ বুজে সব সয্য করতো।মেহের তখোন ছোট তাই বুজতোনা।এরপর মুগ্ধ হলো কিন্তু বাবার অত্যাচার কমার বদলেএ বাড়তে লাগলো।রোজ মাকে মারতো।আর মা চুপ করে সয্য করতো।রাতে নামাজে বসে মা কাঁদতো।মায়ের এক্সসিডেন্টে এর এক সপ্তাহ আগে বাবা মায়ের সাথে হঠ্যাৎ করে স্বাভাবিক হয়ে গেলো।এর পরের সপ্তাহেই আমাকে বাসায় নিজের কাছে রেখে মাকে মুগ্ধকে নিয়ে পাঠালো নানুবাড়ি।নানুবাসা থেকে আসার পথে সারাজীবনের মতো হারিয়ে গেলো মা।আল্লাহ হয়ত আমার জন্য বোনটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলো।কিন্তু সেই বোনটাকে ভালো রাখতে পারলামনা।মাকে দেওয়া ওয়াদা রাখতে পারলাম না।সব সময় মা বলতো মেহেরকে যে আমার কিছু হয়েগেলে তুই তোর বোনকে আগলে রাখবি।সেই বোনকে সঠিক সময় আগলে রাখতে পারলাম না।যখন তার জীবনটা অই মহিলা আর তার মেয়ে নষ্ট করে দিলো তারপর আগলে নিলাম।নিজেকে অনেক অপরাধি লাগে।কিন্তু এখন আমার বোনের গায়ে একটা ফুলের টোকাও লাগতে দেবোনা আমি।
মেহের কথা গুলো বলে মুগ্ধের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে আসে।রুহি মেহেরকে আসতে দেখে জিজ্ঞেশ করে মুগ্ধের কথা মেহের বলে,
এখন ঘুমাচ্ছে ওর রুমে খাবার রেখে আসো।ঘুম যখন ভাংগবে তখন খেয়ে নেবে।রুহি মেহেরের কথা মতো খাবার মুগ্ধের রুকে দিয়ে আসে।
১৪.
সকালে হতেই সায়মা তার মাকে কল লাগায়।আরিশ ঘুমিয়ে আছে এই সুযোগে কথা বলে নিতে হবে।
সায়মা:হ্যালো মা।
সালমা:হুম বল।
সায়মা:মা আমি পুরা বাড়ি খুজেছি কিন্তু কোথাও ফাইল দুটো পাইনি।
সালমা:কি আশ্চর্যকথা বাড়ি থেকে ফাইল গুলো গেলো কই।
সায়মা:বুজতে পারছিনা মা।তার উপর কাল আরিশের কাছে ধরা খেতে খেতে বেঁচেছি।
সালমা:মানে?
সায়মা:আরে কাল যখন ফাইল খুজতেছিলাম তখন আরিশ বাসায় এসে আমাকে এভাবে খুজতে দেখে জিজ্ঞেশ করছিলো আমি কি খুজতেছি।তখন একটা বাহানা দিয়ে দিয়েছি।
সালমা:আচ্ছা শোন কিছুদিন তুই ফাইল খোজা বন্ধ রাখ।আর শোন খুব সাবধানে চলবি বুজলি।খুব তাড়াতাড়ি এই বাচ্চার কাহীনী শেষ করবো।ততদিন একটি ম্যানেজ কর।
সায়মা:আচ্ছা।এখন রাখি আরিশ উঠে যাবে এখোনি।
সালমা:আচ্ছা।
মুগ্ধ সকালে আজকে উঠতে দেড়ি হয়ে গেছে।আড়মোরা দিয়ে উঠে দেখে পাশে টেবিলে খাবার রাখা আর সে বিছানায়।মুগ্ধ বুজতে পারব মেহের এসে তাকে শুইয়ে দিয়ে গেছে।মুগ্ধ উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।আজকে কলেজে যাবেনা কোনো ক্লাস যেহুতু নেই যাওয়ার দরকার নেই।মুগ্ধ নিচে চলে যায় নাস্তা করার জন্য।মেহের টেবিলে বসে ল্যাপ্টপে কাজ করছে রুহি ফল কেটে প্লেটে রাখছে।কাজের মেয়ে নাস্তা সাজিয়ে দিচ্ছে।মুগ্ধ এসে বসেই রুহিকে বললো,
মুগ্ধ:ভাবিপু আমার খুব খুদা লাগছে।আমাকে খেতে দেও।
রুহি:কেন আজকেও না খেয়েই থাক।তোর যে খুধা বলতে কিছু আছে তা তো জানা ছিলোনা আমার।
মুগ্ধ:সরি আর না খেয়ে এরকম করবোনা।
রুহি:হুম এই নে নাস্তা।
রুহি মুগ্ধকে পরাটা,মুরগির মাংস প্লেটে দিলো।মুগ্ধ খুধা পেটে থাকায় গবগব করে খেতে লাগলো।
মেহের:তোর কলেজের অনুষ্ঠানে চিপ গেস্ট কে জানিস?
মুগ্ধ:নাতো।কে?
মেহের:আমি আর আরিশ।
মুগ্ধ:আরিশ!
মেহের:হুম একটু আগেই তোদের প্রিন্সিপাল মেইল করলো ইনভিটেশন কার্ড আমাকে সেখানে দেখলাম।
মুগ্ধ:তাহলে আমি যাচ্ছিনা কাল।
মেহের:কেন?আরিশ আসবে বলে।আরিশ আসুক যা করুক তুই যাবিনা কেন।ওর সাথে তোর সব শেষ বুজলি।সো কাল তুই যাচ্ছিস এটা ফাইনাল।
মুগ্ধ:আচ্ছা😒।
মেহের:চল তোকে কলেজে দিয়ে আসি।
মুগ্ধ:না আজকে যাবোনা।
মেহের:আচ্ছা তাহলে আমি অফিসে গেলাম সাবধানে থেকো তোমরা।
রুহি,মুগ্ধ:তুমিও সাবধানে যেও।
মেহের অফিসে বসে কাজ করছে তখন ওর ফোনে কল আসে। মেহের ল্যাপ্টপের দিকে তাকিয়ে কল রিসিভ করে।অপাশ থেকে একজন অচেনা বলে উঠে,
অচেনা:আপনার বোনের সামনে খুব বিপদ।পারলে তাকে বাঁচিয়ে নেন।ছাড়বেনা ওকে ওরা ছাড়বেনা।
মেহের কথাটা শুনে চমকে গেলো। মেহের প্রতি উত্তরে কিছু বলবে তার আগেই কল্টা কেটে গেলো।মেহের আবার নাম্বারটাতে ট্রাই করলে নাম্বার বন্ধ দেখায়।মেহের কপালে চিন্তার ভাজ পরে যায়।কে এ কিসেএ বিপদের কথা বললো।কিসের বিপোদ।
#চলবে
আজকে ভাবছিলাম গল্প দিবনা কিন্তু দিয়ে দিলাম।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেনা।আগামিকাল একটা ঝটকা সবার জন্য ওয়েট করছে💁♀️🙆♀️।
#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_বোনাস
#নন্দিনী_চৌধুরী
১৭.
অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে মেহের।চোখ দুটো স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে উপরের লাল বাতিটার দিকে।কখন লাল বাতিটা বন্ধ হবে আর ডাক্তার বের হয়ে তার চড়ুইপাখির খবর দেবে।রুহি সাদিয়ার কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে।চোখ মুখ ফুলে গেছে তিনজনেরই।সাদাফ বসে আছে চেয়ারে।না চাইতেও অচেতন মনে বার বার মুগ্ধের জন্য ভয় লাগছে।মেয়েটাকে সে ভালোমতো চেনেও না অথচ তাও কত কষ্ট লাগছে।একটু পর নার্স বেরিয়ে আসলো থিয়েটার থেকে।নার্সকে আসতে দেখে মেহের সাদাফ এগিয়ে গেলো নার্সের কাছে।
মেহের:নার্স আমার বোন।
নার্স:দেখুন আমাদের AB+ রক্ত লাগবে।কিন্তু এই রক্ত আমাদের ব্লাড ব্যাংকে নেই।আপনাদের মধ্য যার AB+ সে রক্ত দিন।পেসেন্টের অনেক রক্তক্ষরন হয়েছে।
মেহের:আমার তো AB+না এখন কই পাবো এই রক্ত।
সাদাফ:আমার রক্ত AB+।আমি দিবো রক্ত।
নার্স:ওকে আসুন আপনি আমার সাথে।
নার্স সাদাফকে নিয়ে গেলো।আর মেহের গিয়ে সোফায় বসে পরলো।AB+ শুধু ওদের মায়ের ছিলো সেই ব্লাড গ্রুপ পেয়েছে মুগ্ধ।মেহেরের A+.
সাদাফ রক্ত দিয়ে কিছুক্ষনের মাঝে চলে আসলো।মেহের উঠে ওর কাছে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে বলে,
মেহের:ধন্যবাদ ভাই।আমার বোনকে রক্ত দেওয়ার জন্য।
সাদাফ:এখানে ধন্যবাদের কিছু নেই।একজন মানুষকে বাঁচানো মানুষ হিসাবে আমার কর্তব্য।আপনি মুগ্ধের ভাই?
মেহের:হ্যা আমি আরিয়ান ইসলাম মেহের।ও আমার বোন মেহরুবা ইসলাম মুগ্ধ।
সাদাফ:ওহ আচ্ছা আমি সাদমান হাসান সাদাফ।মুগ্ধের ক্লাসের প্রফেসোর।
মেহের:আই সি আচ্ছা তুমি কি মিস্টার সায়েদ হাসানের ছেলে নাকি?তোমদের নামের অনেক মিল চেহারার অনেক মিল।
সাদাফ:জি উনি আমার বাবা।কিন্তু আপনি ওনাকে চিনেন কিভাবে?
মেহের:আরে ওনার সাথে আমার প্রায় বিজনেস এর ডিল হয়।খুব ভালো মানুষ উনি।
সাদাফ:অহ আচ্ছা।আচ্ছা আমাকে বাসায় যেতে হবে।আমি বাসায় যাচ্ছি বিকালে আবার আসতেছি।সাদিয়া আয়।
সাদিয়া:আচ্ছা।
সাদাফ আর সাদিয়া বাসায় চলে আসলো।সাদাফের মাতো সাদাফের গায়ে রক্ত দেখে ভয় পেয়েযায়।সাদাফ পরে বলবে বলে রুমে এসে গোসল করে নেয়।গোসল করে নিচে এসে দেখে বাবা সোফায় বসা।সাদাফ গিয়ে সোফায় বসে।সাদাফের মা কফি নিয়ে আসে দুজনের জন্য।সাদাফ মাকে বলে,
সাদাফ:মা আমাকে দুটো লাঞ্চ বক্সে খাবার পেক করে দেওতো।
সাদাফের মা:কেন কার জন্য নিবি?আর তোর জামায় তখন রক্ত ছিলো কেন?
সাদাফ:অইজে আমার কলেজের একটা মেয়ে এক্সসিডেন্টে করেছে।তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছি।মেয়েটার বাবার পরিচিত একজনের বোন।
সাদাফের বাবা:কার বোন।
সাদাফ:তোমার কম্পানি যার সাথে প্রায় ডিল করে। আরিয়ান গ্রুপ ওফ কম্পানির মালিক আরিয়ান ইসলাম মেহেরের বোন মুগ্ধ।
সাদাফের বাবা:আচ্ছা মেহের।হ্যা ভিষন ভালো ছেলে।মেহেরাব খানের বড় ছেলে।খুব অল্প বয়সে নিজেকে এই জায়গায় এনেছে।অনেক কষ্ট করে আজ এখানে।
সাদাফ:মেহেরাব খান!
সাদাফের বাবা:হ্যা মেহেরাব খান মেহের বাবা মুগ্ধের বাবা।মেহেরাব আমার অনেক আগের বিজনেস কলিগ ছিলো।এখন আবার তার ছেলেও হয়েছে।মেহেরাব খানের প্রথম পক্ষের ছেলে মেয়ে মেহের মুগ্ধ।তার দ্বিতীয় পক্ষের ঘরে খালি একটা মেয়ে আছে।মেহেরের মা মারা যাওয়ায় তিনি আবার বিয়ে করেছিলেন।
তোমারতো মেহেরাবকে চেনার কথা।
সাদাফ:হ.হ্যা চিনি।মা তোমাকে যা বললাম সেটা করো।আমি একটু আসছি।
বলেই সাদাফ নিজের রুমে এসে ফোন হাতে নিলো।চলে গেলো তার বন্ধ ফেজবক আইডিতে যেটা দুইবছর ধরে বন্ধ।লাস্ট প্রেয়শীর সাথে কথা বলে আইডি অফ করে দিয়েছিলো।সাদাফ প্রেয়শীর আইডিতে গেলো।হ্যা এখানে দেওয়া ডোটার অফ মেহেরাব খান।তার মানে এই মুগ্ধই তার প্রেয়শী।কিন্তু তার প্রেয়শীর তো বিয়ে হয়ে গেছে তারতো স্বামীর বাড়ি থাকার কথা সে এখানে কেন?সাদাফ তড়িঘড়ি করে কলেজে ফোন লাগায়।কলেজের পিয়ন কল রিসিভ করতেই।
সাদাফ:শোনো এই বছর ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে একটা মেয়ে আছে নাম মুগ্ধ। আজকে এক্সসিডেন্টে করেছে। ওর ফরমটা আমাকে মেইল করে পাঠাও ৫মিনিটের মধ্য।
পিয়ন:জি আচ্ছা স্যার।
সাদাফ ফোন হাতে নিয়ে বসে পরলো।সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার মুগ্ধ এখানে তার সামনেই ছিলো কিন্তু সে চিনতে পারেনি কিভাবেই বা পারবে ছয় মাস তো শুধু চোখ দেখেই প্রেম করেছে।ফুল ফেস তো দেখেনি।চিন্তার মাঝেই মেইল আসলো সাদাফের ফোনে।সাদাফ মেইল চেক করে দেখে মুগ্ধের ছবি নাম বাবা মায়ের নাম সব মিলে গেছে।
সাদাফ:যদি এই মুগ্ধ আমার মুগ্ধ হয় তোবে সে এখানে কেন তার স্বামী কোথায়?না আমাকে জানতে হবে ব্যাপারটা।
সাদাফ জলদি করে মায়ের কাছ থেকে খাবার আর সাদিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেসে।
সাদাফ হাসপাতালে আসলো রিসিপশোন থেকে জানালো যে মুগ্ধের অপারেশন শেষ তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে।সাদাফ রুম নাম্নার জেনে কেবিনে গেলো।কেবিনে গিয়ে দেখে রুহি মুগ্ধের পাশে বসা আর মেহের পাসের সিটের বেডে বসা।মেহের সাদাফকে আসতে দেখে উঠে গেলো ওর কাছে।
মেহের:আরে আসো।
সাদাফ:এখানে আপনাদের জন্য খাবার আছে খেয়ে নেন।
মেহের:এগুলা কি দরকার ছিলো।
সাদাফ:আমি জানি বোনের শোকে আপনারা দুজন সারাদিন না খাওয়া না খেয়ে থাকলে তো আর বোন ঠিক হবেনা।তাই আমি বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছি।আপনারা দুজন খেয়ে নিন আমি আর সাদিয়া বসছি এখানে।
মেহের:ধন্যবাদ।তুমি আসলে তোমার বাবা মতো ভালো একজন মানুষ।
মেহের আর রুহি খাবার খেতে লাগলো।আর সাদিয়া আর সাদাফ রুহির পাশে।সাদাফ দাঁড়ানো আর সাদিয়া রুহির পাশে চেয়ারে বসা।মাথায় ব্যান্ডেজ করা মুগ্ধের।হাতে পায়েএ আঘাত লেগেছে সেখানেও ব্যান্ডেজ করা।মেহের খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে আসলো।সাদাফ মেহেরের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেশ করলো,
সাদাফ:ডাক্তার কি বললো কোনো সমস্যা নেই তো?
মেহের:না সমস্যা নেই।কিন্তু মাথায় আঘাতটা কিছু গভির।সারতে সময় লাগবে।আল্লাহ রহমতে আল্লাহ আমার বোনটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
সাদাফ:আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
মেহের:হ্যা বলো।
সাদাফ:না আসলে আজকে বাবাকে যখন আপনার আর আপনার বোনের কথা বলি তখন বাবা বললেন আপনারা নাকি মেহরাব আংকেলের ছেলে মেয়ে।আমার জানা মতেতো মুগ্ধের বিয়ে হয়েগিয়েছিলো তো ও এখানে ওর হাজবেন্ড কোথায়?
মেহের:তুমি মিস্টার খানকে কিভাবে চেনো?
সাদাফ:আমার বাবার একসময়ের বিজনেস ফ্রেন্ড ছিলেন তারা।আংকেল প্রায় বিজনেসের কাজে আমাদের বাসায় আসতো বাবাও যেতো তাই চিনি।
মেহের:অহ আচ্ছা হ্যা আমরা মিস্টার খানের সন্তান।আর এটাও ঠিক আমার বোনের বিয়ে হয়েছে।ওকে জোর করে একটা জানোয়ারের কাছে বিয়ে দিয়েছিলো মিস্টার এন্ড মিসেস খান।ছেলেটা দুই বছরের মাথায় আমার বোনকে ছেরে পরোকিয়া করে সেই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে।
সাদাফ:জোর করে!
মেহের:হুম আমার বোন যখন এসেসি এক্সাম দেয় তখন ওকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।আমি তখন দেশের বাহিরে ছিলাম তাই বিয়েটা আটকাতে পারিনি।দেশে আসার পর শুনি অই ছেলে আমার বোনকে ছেড়ে পরোকিয়া করে।আমার বোনকে ডিভোর্স দিয়ে ডিভোর্সের চারদিনের মাথায় অন্য একজনকে বিয়ে করেছে।
সাদাফ:অহ আচ্ছা আপনি বসেন আমি আসছি।
সাদাফ বাহিরে এসে কপালে আজ্ঞুল ঘষছে আর মনে মনে বলছে,
জোর করে বিয়ে দিয়েছে।যদি ওকে জোর করে বিয়ে দেয়। তাহলে মুগ্ধ সেদিন কেন আমাকে ম্যাসেজে বলছিলো ও নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছে আমাকে ও ভালোবাসেনা আমি ওর টাইমপাস।আমার সামার্থ নেই ওর মতো মেয়েকে বউ হিসেবে পাওয়ার।তাহলে অগুলা কি ছিলো।তাহলে কি অইটা মুগ্ধ ছিলোনাহ।কিন্তু সেটা কিভাবে হতে পারে।নাহ মাথায় কিছু আসছেনা।জানতে হবে আমাকে সব যে আসলে ব্যাপারটা কি।এই অংকের হিসাবে কোনো একটা ভুল আছে।সেই ভুলটা কি সেটা আমাকে জানতে হবে।মুগ্ধ যদি অই মুগ্ধ না হয় তাহলে সে কে যে আমার সাথে ছয় মাস ছিলো আমাকে জানতে হবে।
সাদাফ আসতে করে মুগ্ধের কেবিনে আসে মেহের বাহিরে গেছে কিছু মেডিসিন আনতে।রুহি আর সাদিয়া গেছে পাশের দিকটায়।সাদাফ আসতে করে এসে মুগ্ধের পাশে বসলো।মুগ্ধের ক্যানোলা করা হাতের উপর হাত রেখে বললো,
যদি তোমার ভাইয়ের কথা সত্যি হয়। আর যদি সত্যি তুমি সে না হউ। তাহলে তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে কোনো কষ্ট পেতেদেবোনা।আর যদি তুমিই সে হউ তাহলে তোমাকে আমি কষ্ট ফেরত দেবো যা আমি গত দুইবছর পেয়েছি।আমার কেন জানি মনে হয় তুমি সেনা একজন ভাই কোনোদিন বোনের ব্যাপারে মিথ্যা বলবেনা আর দ্বিতীয়ত তুমি যদি সে হতে তাহলে আমাকে দেখার পর তোমার চোখে একটা ভয় অনুশোচনা থাকতো কিন্তু আমি তা দেখিনি।কথা দিচ্ছি মুগ্ধ। তোমার আর আমার সাথে যারা এই কাজটা করেছে তোমাকে আমার থেকে আলাদা করেছে তাদের আমি ছাড়বোনা।সবার আগে আমাকে জানতে হবে মুগ্ধ সেজে আমার সাথে নাটক কে করেছিলো।এরপর জানতে হবে এর পিছনের কারন।
সাদাফ কথা গুলো বলে উঠে দাঁড়ালো।আসতে করে মুগ্ধের কপালে একটা চুমু দিলো।এর মাঝে রুহি সাদিয়া চলে আসছে।সাদাফ সাদিয়াকে নিয়ে মেহেরকে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে আসলো।
নিজের রুমে বসে পাইচারি করছে সায়মা।হাত পা বার বার ভয়ে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে,,,
সাদাফ যদি জানতে পেরেযায় সত্যিটা তাহলেতো সব শেষ।যদি সাদাফ জেনে যায় তাহলে ও সবকিছু জেনে যাবে।আমার এতোদিনের করা প্লান সব নষ্ট হয়ে যাবে।এখন আমি কি করবো।যদি সাদাফ জানতে পারে আমি মুগ্ধ হয়ে ছয় মাস রিলেশন করে ওকে ধোঁকা দিয়েছি তাহলে তো সব খেলা শেষ।উফ গড এই মুগ্ধ আমার জন্য একটা কাঁটা না পারছি গিলতে না পারছি ফেলতে।এখন একটাই উপায় আছে মগ্ধকে সরিয়ে দিতে হবে।নাহলে আমি মা ধোরা পরে যাবো।না মুগ্ধকে বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা।কিছুতেই না।
#চলবে
বোনাস দিলাম। অনেক বিজি থাকি স্কুল খুলায় পড়ার চাপ বাড়ছে।সকাল ছাড়া সময় পাইনা।তাও আজকে কিছুটা সময় বের করে লিখেছি আপনাদের রিকোয়েস্ট রাখতে।এভার সাদাফের হাত দিয়ে সায়মার সব কুকির্তি ফাস হবে💁♀️।এখন থেকে সাদাম মুগ্ধের একটু প্রেম কাহীনী দেখাবো কেমন।আপনাদের মুগ্ধের জীবন এখন পালটে দেবে সাদাফ ভাই।ভুল ত্রুটি মাফ চাই।🙏