#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅পর্ব::০৩
#ইফা_আমহৃদ
ইফার চোখের অশ্রুতে রৌধিকের শার্টের আংশিক অংশ ভিজে একাকার হয়ে গেছে।। হাতের নখের আঁচড়ে রৌধিকের পিঠের নাজেহাল অবস্থা।। শার্টের উপর থেকে নখগুলো দাঁড়ালো অস্ত্রের মতো কাজ করছে।।পিঠের মাঝে মাঝে রক্তের বিন্দু বিন্দু ফোঁটা,, শার্টের উপর ভেসে আছে।।সাদা শার্টের মধ্যে অন্যরকম ছিপ ছিপ ডিজাইন হয়েছে।।একটা মেয়ে ইনজেকশনের কথা শুনে,, এতোটা ভয় পেতে পারে ধারণা ছিল না রৌধিকের।। শুধু নাম শুনেই এই অবস্থা ,,পুশ করলে কি হবে আল্লাহ মালুক।।আচ্ছা ইফা সত্যি ভয়ে এমন বিহেব করছে নাকি এক্সিডেন্টের রিভেঞ্জ নিচ্ছে।। আঘাতের বদলে আঘাত,, রক্তের বদলে রক্ত ।। কিন্তু একটা মেয়ে এতোটা হার্ট ল্যাস হতে পারে না।। বিনা শব্দে ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো রৌধিক ।। ইফার মাথাটা আলতো হাতে নিজের বুকে চেপে শান্ত কন্ঠে বললো…
— “ভয় পেয় না ।।আমি আছি তোমার সাথে”!!
বুক থেকে মুখ তুলে তাকালো ইফা।। এতোক্ষণ রৌধিক ইফার দিকে তাকিয়ে থেকেছিল।।বিধায় মাথা তুলতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল।।হার্ট দ্রুত তালে বিট করছে।। রৌধিকের শান্ত কন্ঠে মিশে আছে অদ্ভুত এক মাদকতা।যা বারবার গ্ৰাস করে ইফাকে।।বুকের মাঝে বয়ে যায় এক ঠান্ডা শিতল স্রোত ।।যা বোঝার মতো ক্ষমতা ইফার নেই।।রৌধিককে এতো কাছে দেখে মনে হচ্ছে,, এই বুঝি তার বুকে ভেতরে ঢুকে গেল।। –“এহেম ,,এহেম !!এই তো হয়ে গেছে !!
ডাক্তারের কন্ঠে হুশ ফিরলো দু’জনের।। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিল দু’জনে।। অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ইফা।ডাক্তার দু’জনের কান্ড দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন ।।রৌধিকের পিঠ চাপড়ে মৃদু শব্দে বললেন..
— “নো ইয়াং ম্যান!! ছেলেদের লজ্জা পেতে নেই।। আমিও এমন কতো করছি।।মাঝরাতে বউকে নিয়ে পালিয়ে আসা ।।কোলে নিয়ে হাঁটা ।। চন্দ্র বিলাপ করা,, গোধূলি উপভোগ করা।।একটা কথা মনে রাখবে ,,, “”Time and tide Wait for none””।। এটাই তোমাদের বয়স ।।যা ইচ্ছে তাই করবে।।নাহলে বৃদ্ধ বয়সে আফসোস করবে।।প্রাপ্ত বয়সে দুষ্টুমি গুলো বড্ড মিস করছি”।।
লজ্জায় পড়ে গেল ইফা।। ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক হয়ে যাক।।আর সে মাটির ফাঁকে ঢুকে যাক!! রৌধিকও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।।লোকটা বোধ বুদ্ধির ছিটেফোঁটাও নেই ,, তার কথার ধরণে স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে।।
__________________
দেড় ঘন্টা ধরে কাকের মত কা কা করে যাচ্ছে রুমকি।। সোফায় হেলান দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে ইফা ।। একটু পর পর কানে হাত দিয়ে ,,, কান পরিষ্কার করার অভিনয় করছে ।।রুমকির বকবকানি শুনতে একদম ভালো লাগছে না তার।।এই বকবকানি কাকের কা কা শব্দকে ও হার মানাবে ।। নিহাত হাঁটতে পারে না।।নাহলে এখানে বসে এইসব সহ্য করতো না।।তারপাশে বসে আরামসে কফি খাচ্ছে রৌধিক।।এখানেও রৌধিক কোলে করে নিয়ে এসেছে।। অবশ্য রৌধিক কফি খেতে চায় নি।।মেয়ের উপকারের প্রতিদান দেওয়ার জন্য এইটুকু করছে।। তিনজনের ভাবনার পথেই হুরমুর করে বাড়িতে ঢুকে পড়লো ইমতিয়াজ আমহৃদ আর ইভু।।ইফার বাড়ি ফেরার পরপরই ফোন করে জানিয়েছে রুমকি।।এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করে তখনই বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা।।ইফাকে ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় দেখে বিচলিত হয়ে পড়লেন।। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।।ইফার গালে কয়েকটা চুমু খেয়ে রৌধিকের সামনে গিয়ে দাড়ালেন।।রৌধিকের হাত নিজের হাতের মাঝে বন্দি করে ইমতিয়াজ আমহৃদ বললেন…
— “তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বাবা।। আমার মেয়েটাকে ঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।। আবার বাড়িতে পৌছে দেওয়ার জন্য”।।
রৌধিক এক দৃষ্টিতে ইমতিয়াজ আমহৃদ এর দিকে তাকিয়ে আছে।। ইমতিয়াজ আমহৃদ যেন তার বাবা আদ্রিক আহম্মেদের প্রতিচ্ছবি!!হয়তো দুজন মানুষের কখনো দেখা হয়নি।। তবুও একে অপরের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।। ইফার কথায় ধ্যান ভাঙলো রৌধিকের…
— “পাপা ওকে ধন্যবাদ দিয়ে আহামরি কোন লাভ নেই।। বিকজ তোমার এই বাবার বাইকের সাথে আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে”।।
— “সে যাই হোক!! আজকাল কেউ এক্সিডেন্ট দেখলে ভয়ে পালিয়ে যায়।।এর ও তো এক্সিডেন্ট করে ,, চিকিৎসা করে বাড়ি এসে পৌঁছে দিয়ে গেছে।।(রৌধিককে উদ্দেশ্য করে ইমতিয়াজ আমহৃদ) আচ্ছা বাবা তোমার নাম কি”??
— “আফসান আহম্মেদ রৌধিক”!!
— “মাশাআল্লাহ!! খুব সুন্দর নাম”!!
বলে হাত ছুয়ালেন রৌধিকের মাথায়।। ঠোঁট নাড়িয়ে শব্দহীন ভাবে দুবার উচ্চারণ করলো ইফা,,”” রৌ-ধি-ক,, রৌধিক।। ফলশ্রুতিতে ,, ইফা ছাড়া বাকি কারো মস্তিষ্কে পৌঁছালো না।। এতোক্ষণ একসাথে আছে,,,আর কেউ কারো নাম জানে না।। হঠাৎ করেই কঠিন শব্দে গর্জে উঠলেন ইমতিয়াজ আমহৃদ…??
— ”কালকে রাতে তোমাকে আমি কি বলেছিলাম..?? ইফাকে দিয়ে আসা +নিয়ে আসা তোমার দায়িত্ব ছিল না।।আজই আমি ইফার গাড়ি বিক্রি করার ব্যবস্থা করছি ।। তুমি যদি না পারো ,, তাহলে আমি ওর দায়িত্ব নিবো”!!(ইভুকে উদ্দেশ্য করে ইমতিয়াজ আমহৃদ)
— “যত দোষ নন্দ ঘোষ।।তোমার চোখে গাড়ি ছাড়া আর কিছু পড়ে না।। ইফার কিছু হলেই গাড়ি বিক্রি করে দেবো।।সব দোষ গাড়ির।।আজকে গাড়ি ছাড়া বের হওয়াতে এক্সিডেন্ট হয়েছে,, সেটা তোমার চোখে পড়ছে না ।। শুধু গাড়ি বিক্রি করে দেবো।।এখানে ইফার কোনো দোষ নেই ,,সব দোষ রৌধিকের আর রিক্সাওয়ালার ।।তাই গাড়ি বিক্রি তো দূরে থাক,,, আননোন মানুষ গাড়ি টার্চ করে দেখুক”।।
কথাগুলো বলে ব্যস্ত পায়ে হেঁটে চলে গেল ইভু।। সত্যিই তো এখানে ইফার কোনো দোষ নেই সব রৌধিক আর রিক্সাওয়ালা।। ইমতিয়াজ আমহৃদ মলিন হেসে বললো…
— “তুমি ইভুর কথায় রাগ …
— “ইটস্ ওকে আঙ্কেল” !!( কথা কেড়ে নিয়ে রৌধিক)
সমস্যা হলো অন্য জায়গায় ।। ইমতিয়াজ আমহৃদের হাঁটুতে ব্যাথা। এদিকে ইভুর আসার কোনো খবর নেই।।তাই ইমতিয়াজ আমহৃদের কথায়,, বাধ্য হয়ে রৌধিক ইফাকে কোলে তুলে রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো।।এই প্রথমবার ইফা খেয়াল করলো,,, রৌধিকের শারীরিক গঠন।।দেখতে তুলনামূলক মাত্রারিক্ত ফর্সা।।চোখগুলো অদ্ভুত নীলাভ রঙের ।।অধর একটু বেশিই গোলাপী রঙের।।গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।। দাঁড়ির মাঝে লুকিয়ে আছে লালচে রঙের তিল।।যেটা শুধুমাত্র খুব কাছ থেকে অবলোকন করা সম্ভব।। চুলগুলো এলোমেলো।।আহিরের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি অবাক করা হ্যান্ডসাম।। দেখে বোঝার উপায় নেই রৌধিক বাংলাদেশি।। হয়তো কয়েক বছর দেশের বাইরে কাটিয়েছি।।
ইফাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে,,, একটু জায়গা করে পাশে বসে পড়লো রৌধিক।।
— “এখন রেস্ট নাও।। একটু পর উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিও ।। ভালো লাগবে”!!!
ইফার মাথায় হাত রেখে একটু ঝুঁকে অধর ছুঁয়ালো ইফার কপালে।।আবেশে নয়ন আবৃত করে নিল ইফা।।চোখ খোলার আগেই রুম প্রস্থান করলো রৌধিক।।ব্যাপারটা বোধগম্য হতে হতে রৌধিক ধরা ছোঁয়ার বাইরে।।
__________________
আনুমানিক রাত ১০টা ছাড়িয়ে ।। রাতের আকাশে আজ তারাদের জাগরণ।। হাজার হাজার,,লক্ষ লক্ষ,,কোটি কোটি কিংবা তার চেয়েও বেশী তারারা আকাশে বুকে আলো করে রয়েছে।। তবুও চাঁদের আলোর মতো আলোকিত নয় পৃথিবীটা।।রাতের আকাশে চাঁদের অনুপস্থিতি আজ অনেক কিছু জানান দিচ্ছে।।সূর্য আর চাঁদ ছাড়া আকাশ যেন সম্পূর্ণ নিঃস্ব।। ঠিক তেমনি আজ রৌধিকের বুক টাও নিঃস্ব।। কখন থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে বসে আছে,, ইফাকে ফোন করবে কি করবে না ।।সেই দিদা ধন্দে ভুকছে।।আধ ঘন্টা আগে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে।।পরনে একটা ছাই রাঙা টাওজার।। চুলের পানি টপটপ করে পড়ছে।। শরীরের পানি এসির ঠাণ্ডা হাওয়ায় শুকিয়ে গেছে।। অনেকক্ষন নিজেকে সামলে কাঁপা কাঁপা হাতে চোখ বন্ধ করে ইফার ফোনে ডায়াল করলো।।ইফাকে না জানিয়ে ফোন নাম্বারটা নিয়ে এসেছে।।
|||||||
ইভুর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে ইফা।।বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে।ইভু ইফাকে রাজকুমারীর গল্প শুনিয়ে ঘুম পারিয়েছে।। হঠাৎ ফোনের রিং বাজতেই তট জলদি সাইলেন্ট করে নিল।।ইভু চায় না ইফার ঘুম ভাঙুক।। ইফার মাথাটা কোল থেকে নামিয়ে বালিশে রাখলো।।বেলকেনিতে গিয়ে চেক করে দেখলো আননোন নাম্বার ।।তবু রিসিভ করে দুই বার হ্যালো উচ্চারণ করলো,, কিন্তু অন্যপাশের কোনো কথা তার কানে অবধি পৌঁছালো না।।উপায় না পেয়ে কল কেটে দিল।।ফোন অফ করে ইফার পাশে রেখে রুমের লাইট নিভিয়ে নিজের রুমে চলে এলো।।
চলবে…🎀🎀