#তিতির_পাখির_বাসা(১) #জয়া_চক্রবর্তী বরাবরই স্বপ্নের জগতে থাকতে ভালোবাসতো তিতির। মৈত্রেয়ী দেবীর ণ হন্যতে থেকে শুরু করে দেশ পত্রিকা সবই গিলতো গোগ্রাসে।যদিও তার জন্য বরাদ্দ ছিলো চাঁদমামা-শুকতারা-হাঁদা ভোদা-নন্টেফন্টে-বাঁটুল দি গ্রেট।তিতিরের অবশ্য এই বই গুলোও দারুন লাগতো। চোখ বুজলেই এদের সবাইকে সে দেখতে পেতো,কথাও বলতো এক সমুদ্র। মাঝেমাঝেই শেষের কবিতার অমিত তার প্রেম গভীর স্বরে বলতো,”দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর,ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর”…….তিতির অস্থির হয়ে পরতো।মনে হতো ঐ অদেখা মানুষটির গভীরতা একমাত্র সে বুঝতে পারছে। ছুটির অলস দুপুর গুলিতে বালিশে মাথা দিয়ে,আধশোয়া হয়ে, খোলা বই বুকের ওপর রেখে, সে ভেসে যেতো তার স্বপ্নের প্রেমিকের সাথে।তিরতির করে কাঁপতো চোখের পাতা।চোখ বুজে নিজের ঠোঁটের পাপড়ি দুটো সমর্পন করতো আরো দুটো পাপড়ির কাছে।সময় শেষ হয়ে যেতো। বিকেলের নরম আলোয় এক রাশ ভালো লাগাকে সঙ্গী করে,কোলবালিশের আড়ালে লাজুক হেসে মুখ লুকোতো। বাস্তবের ছেলেদের মোটেও তিতির পাত্তা দিতনা।অনেকেই চেষ্টা করতো তার মন জয় করতে।হয়তো মাঝেমাঝে কাউকে ভালো লাগতো,কিন্তু মোহভঙ্গ হতে দুদিনের বেশী লাগতোনা।বুঝতো এরা তার মনের সাথে পাল্লা দিতে পারবেনা। এদের প্রত্যেকেই আমিত্ব ছেড়ে বের হতে পারেনি।যেন বাজারে এসে নিজের যোগ্যতা প্রমানে ব্যস্ত।তাই এদের যাবতীয় গুন তিতিরের চোখে পোকা ধরা বেগুন,যার ওপরটাই শুধু সুন্দর। মনের সৌন্দর্য্য ধূপের মতো,যা ছড়িয়ে পরে আপন গুনে।আর দৈহিক সৌন্দর্য্য তিতিরকে যে খুব একটা টানে এমন নয়।কারন তা কোনও মানুষের নিজের হাতে নেই।তিতির নিজেও যে খুব রূপসী এমন নয়।তবে সব মিলিয়ে একটা আকর্ষন আসে তাকে দেখলে। তিতির স্বপ্নের সাথে বাস্তব মেলাতে চায়।নিবিড় ভাবে কাউকে ভালোবাসতে চায়।কিন্তু পারেনা।চোখ ফেটে জল আসে তিতিরের।আরো ডুবে যেতে থাকে বই এ। আরো অলস দুপুর কাটে হাতে হাত,চোখে চোখ,ঠোঁটে ঠোঁট রেখে। ইতিমধ্যে বাড়ির লোকের চোখে তিতির বিবাহ যোগ্যা বলে গণ্য হয়।তিতির হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকে কোলবালিশে মুখ গুজে।বাড়ির লোকে ভাবে নির্ঘাত কেউ আছে চোখের জলের আড়ালে।ভাৎসনাও জোটে যথেষ্ট। দেরী না করে নিজেদের পছন্দ করা পাত্রের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় তিতিরের।শুভদৃষ্টির সময়ও সকলের অনুরোধকে সন্মান করে ,একবারও সে তাকায়নি সুদর্শনের দিকে। আজ আবার বৌভাত।চারদিক ঝলমল করছে আলো।অতিথিদের দিকে তাকিয়ে তিতিরকেও সৌজন্যের দেঁতো হাসি হেসে পরিচয়পর্ব সারতে হচ্ছে।এরমধ্যে একসময় বিয়েবাড়ি খালি হয়ে যায়।বাড়ির মেয়েরা হাসাহাসি করতে করতে তিতিরকে একটা ফুল সাজানো ঘরে নিয়ে যায়।তিতিরের নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ভয়ে বুকের তিতির পাখিটি ছটপট করতে থাকে।মেয়েগুলোর মধ্যে কয়েকজন গিয়ে সুদর্শনকেও ঘরের মধ্যে নিয়ে আসে।মেয়েটির দীর্ঘ চুল খুলে দেয় বলে সুদর্শনের পা নারকেল জল দিয়ে ধুয়ে, চুল দিয়ে মোছাতে হবে।তারপর সেই জল চরণামৃতের মতো মুখে নিতে হবে। তিতিরকে সুদর্শন এটা করতে দেয়নি।সুকৌশলে মেয়েদের দলকে বের করে দরজায় আগল দিয়ে বলে,”আর ভয় পেতে হবেনা,চুপটি করে ঘুমিয়ে পরো।”………এই প্রথম সুদর্শনের দিকে তাকালো তিতির। সাদামাটা ছেলেটিকে ভালো লাগলো।এই ভালো লাগাগুলো জমতে জমতেই একদিন হয়তো এক সমুদ্র ভালোবাসা হবে।(চলবে)