তিতির পাখির বাসা পর্ব-২৬

0
1003

#তিতির পাখির বাসা(পর্ব-২৬)
#জয়া চক্রবর্তী

ঝমঝম করে হঠাৎ আকাশ ভেঙে বৃষ্টি।তিতির দেখলো রাস্তায় হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে দর্শনার্থীদের।
প্রত্যেকেই গা বাঁচাতে শেড খুঁজছে।এদিকে বৃষ্টির ছাটে ভিজে যাচ্ছে তিতিরও।

তিতিরের মনে হলো নীচে গিয়ে সদর দরজাটা খুলে দিলে,বৃষ্টি থেকে বাঁচবে লোকগুলো।
আসলে সুদর্শনদের সদর দরজার ভেতরের দিকের বেশ কিছুটা অংশ শেডেড।

তিতির খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নীচে নেমে কোলাপসিবল গেটের তালা খুলে বেড়িয়ে কিছুটা হেঁটে গিয়ে সদর দরজার তালাটা খুলে দিলো।

বললো,’আপনারা চাইলে বৃষ্টি থামা অবধি দাঁড়াতে পারেন ভেতরে’।

তিতিরের কথায় ভরসা পেয়ে লোকগুলো ভেতরের দিকে এসে দাঁড়ালো।ধন্যবাদ জানালো তিতিরকে।
তিতির সামান্য হেসে আবার কোলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলো।

ব্যলকনিতে এসে দাঁড়াতেই আবার বৃষ্টির ছাট আসছে গায়ে।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে ব্যথাটা যেন আরো কামড়ে বসেছে তিতিরের হাঁটুতে।

যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ নিয়ে তিতির ব্যলকনি থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

ঘরে ঢুকে নাইট বালব টা নেভালো তিতির।সুদর্শন কুঁকড়ে শুয়ে আছে ঠান্ডায়।

তিতির আলমারি খুলে একটা পাতলা বেডসীট এনে সুদর্শন কে ঢেকে দিলো।

তিতির দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে-পাঁচটা বাজে।জানলার সামনে যেতেই বৃষ্টির ছাট এসে আবার ভিজিয়ে দিলো তিতিরকে। হাত বাড়িয়ে জানালার কপাট বন্ধ করলো।

সুদর্শনের পাশে শুতেই ঘুমের মধ্যেই হাতের বেড় দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তিতিরকে।তিতিরও সুদর্শনের বুকের পাশে ঘন হয়ে এলো।সুদর্শনের ঘুম ভেঙে গেলো।

‘সেকি পাখি তুমি তো ভিজে গেছো পুরো।ছাদে গিয়েছিলে নাকি আবার!’,তিতির বললো,হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়াতে ব্যালকনিতে গিয়ে চেয়ার নিয়ে বসেছিলাম।
হঠাৎই বৃষ্টি…..’।

সুদর্শন বললো,’হুম।তা ভেজা নাইটি পড়ে থাকলে যে ঠান্ডা লেগে যাবে পাখি,কথাটা বলেই সুদর্শন উঠে গিয়ে তিতিরের জামাকাপড়ের র‍্যাক থেকে নাইটি নিয়ে আসলো।

তিতিরের আপত্তি না শুনে নিজেই ভেজা নাইটি ছাড়িয়ে শুকনো নাইটি পড়িয়ে দিতে দিতে জানতে চাইলো,
‘ব্যথা কেমন পাখি?’সুদর্শনের কথায় তিতির বললো,’চিন্তা কোরনা ঠিক আছি।তবে একটু ঘুমোতে চাইছি,চোখ জড়িয়ে আসছে’।

সুদর্শন বললো,’আচ্ছা তুমি ঘুমোও,আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি’।

‘কিরে বাবিন তোরা কি আজ উঠবিনা বলে ঠিক করলি নাকি দুটিতে মিলে’,কথাটা বলতে বলতে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে জ্যেঠিমা।

সুদর্শন উঠে দরজা ধাক্কা দিতে বারন করবার আগেই জ্যেঠিমার দরজা পিটানোয় তিতিরের ঘুমটা গেলো ভেঙে।

সুদর্শন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো মাত্র সাড়ে- ছ’টা। তিতির বিছানা থেকে নামার উদ্যোগ নিতেই সুদর্শন তিতিরকে বললো,’উঠো না এখন।মাত্র সাড়ে-ছ’টা বাজে।আমি দেখছি গিয়ে’।

সুদর্শন দরজা খুলতেই জ্যেঠিমা একেবারে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলেন।

সুদর্শনকে বললেন,’কিরে বাবিন কাল সদর দরজাটা বন্ধ করিসনি রাতে?একেবারে হাঁ করে দরজা খোলা।ভাগ্যিস আমি ছিলাম এখানে তাই রক্ষে’।

একটু নিশ্বাস নিয়ে বললেন,’কতগুলো উটকো লোক এসে দাঁড়িয়েছিলো ভিতরে।আমি আচ্ছা মতো শুনিয়ে দিয়ে সবকটাকে বিদায় করে দিয়েছি’।

সুদর্শন বললো,’সেকি!আমি তো দরজা লাগিয়ে ছিলাম নিজে’,জ্যেঠিমা বললেন,’বলছে কি জানিস এই বাড়ীর লোকই নাকি দরজা খুলে ওদের ভিতরে দাঁড়াতে বলেছে’।

তিতির এতোক্ষনে মুখ খুললো,’ঠিকই বলেছেন ওনারা।আমিই দরজা খুলে ওদের ভিতরে এসে দাঁড়াতে বলেছিলাম।প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো।বাচ্চারাও ছিলো ওদের সঙ্গে’।

জ্যেঠিমা বললেন,’মানে তুমি নিজেই এই মহান কাজটা করেছো।তাহলে আর আমার কিছুই বলার থাকেনা’,কথাটা বলেই জ্যেঠিমাএবার সোজা তিতিরদের খাটের সামনে এসে দাঁড়ালেন।

তিতিরকে বললেন,’তোমার ব্যথা কেমন আছে?,তারপর তিতিরের উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই বলতে লাগলেন,’পাপান কে দিয়ে সকালেই ওর বাবাকে ফোন করিয়েছি।বলেছি চালে ডালে একটু ফুটিয়ে নিতে।আমার যেতে দুদিন দেরী হবে’।

সুদর্শন এবার রীতিমতো ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলো,’সেকি কেন?জ্যেঠুর না শরীর খারাপ?হঠাৎ না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে গেলে কেন?’

জ্যেঠিমা বললেন,’কাল তিতির পড়ে গিয়ে অমন ব্যথা পেলো,আমি তোদের একা ছেড়ে দিয়ে যাই কি করে!’

জ্যেঠিমার কথা শেষ না হতে হতেই সুদর্শন বললো,’একা কোথায় জ্যেঠিমা!আমি আছিতো।তাছাড়া পাপান ও তো থাকবে।তুমি বরং চলেই যাও।আমি চাইনা জ্যেঠুর কোনরকম অসুবিধা হোক’।

জ্যেঠিমা বললো,’সেকি কথা!আমার তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি!’সুদর্শন অনেকভাবে চেষ্টা করলো।কিন্তু জ্যেঠিমা নিজের কথায় অনড়।

অতএব সুদর্শন হাল ছেড়ে টয়লেটের দিকে এগিয়ে গেলো।

সুদর্শন বেড়িয়ে যেতেই জ্যেঠিমা তিতিরকে বললো,’আমার আবার হাঁটুর ব্যথাটা বেড়েছে কাল রাত থেকে।তাই বলে তো আর শুয়ে থাকবার জো নাই আমার’।

তারপর বাঁ-হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে বললেন,’যাই দেখি চা-জলখাবার এর ব্যবস্থা করি গিয়ে।পুজোপার্বনের দিন,না খাইয়ে তো আর রাখতে পারিনা ছেলেদুটোকে’।

তিতির এবার নেমেই পড়লো বিছানা থেকে।হাঁটুটা কেমন টনটন করে কামড়ে ধরলো।

জ্যেঠিমা বললেন,’তুমি আবার কেন উঠছো?’তিতির বললো,’চা জলখাবারের ব্যবস্থা করতে’।

জ্যেঠিমা বললেন,’আরে আমিই তো যাচ্ছিলাম রান্নাঘরে।তা আমার জন্য একটু আদা ফেলে দিও চায়ের জলে।ঘুষঘুষে একটা কাশি হয় সকালে’।
তিতির ব্যথা পা টা টানতে টানতে এগিয়ে যায় রান্নাঘরের দিকে।

তিতিরকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখেই পাপান কোথা থেকে তিতিরের সামনে এসে উদয় হলো।

তিতিরকে বললো,’সেকি তিতির ব্যথা শরীরে আবার কোথায় যাচ্ছ!’ তিতির কোনরকম উত্তর না দিয়ে সোজা নীচের দিকে নেমে গেলো।(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here