তিতির পাখির বাসা পর্ব-২

0
977

#তিতির_পাখির_বাসা (২ পর্ব)
#জয়া_চক্রবর্তী

ইইইবাবা।এসব কি কথা।না না কিছুতেই নিয়ে যেতে পারবে না সুদর্শন কে।কে জানে লোকটা অপয়া কিনা।যদি ফার্স্ট ক্লাসটা এর জন্য কেচিয়ে যায়।তার ওপর বন্ধুদের মাঝে এই অতি শান্ত,নিরীহ,গোবেচারা লোকটাকে নিয়ে যাওয়া মানে সকলের হাসির খোরাক জোগানো।”
মনে মনে এমন লক্ষ কথা বলছিলো তিতির।

মাত্র এক মাস এগারো দিন আগে বিয়ে হয়েছে তিতিরের।মনে মনে সে যথেষ্ট বিরক্ত তার মা বাবার ওপরে।এদের হাবভাব ও মোটেই ভালো লাগছে না তার।সন্দেহ হচ্ছে বাকি জীবনটা গৃহবঁধু হয়েই না কাটাতে হয় তার।

“কি হলো তিতির?তৈরী হওনি?চটপট করো,”সুদর্শনের কথায় সম্বিত ফেরে তিতিরের।সত্যিই তো বড্ড দেরী হয়ে গেলো।কিন্তু কি করে বলবে ওকে যে তিতির একাই যেতে চায়।

তিতিরের চিন্তাচ্ছন্ন মুখের দিকে তাকিয়ে সুদর্শন মৃদু হেসে বলে ,”ভয় করছে?আরে ভালোই হবে রেজাল্ট।”গম্ভীর মুখে তিতির বলে,”আমি কিন্তু একাই যাবো।”সুদর্শন বললো,”আচ্ছা,তুমি না চাইলে আমি যাবোনা।”

এবার তিতির নিশ্চিন্ত মনে শাড়ি পরলো।দীর্ঘ চুলটাকে আঁচড়ে একটা বেনী,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ,কানে ছোট্ট দুল,সিঁথিতে সামান্য সিঁদুর ছুঁইয়ে তিতির সুদর্শনের দিকে চাইলো।মনে হলো একটু বিষন্ন।উঃ হুঃএখন এসব ভাববার সময় নেই।দেরী হয়ে যাচ্ছে।

কাঁধে ব্যাগ ফেলে ঝড়ের গতিতে বের হতেই পাহাড়ের মুখোমুখি।
“একা যাচ্ছো নাকি?কিরে বাবিন ওকি একা যাচ্ছে নাকি?তোর কি কান্ডজ্ঞান নেই? ইত্যাদি নানান প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হতে বাবিনটি ও তৈরী হয়ে তিতিরের সঙ্গে চলে।

তিতির আর কথা বাড়ায় না।গাড়ীতে ও চুপচাপ থাকে।অবশেষে কলেজ।সুদর্শনকে দাঁড়াতে বলে তিতির প্রায় উড়ে কলেজে গিয়ে ঢোকে।

মনে এমনিতেই তখন দামামা বাজছে।চোখে সর্ষে ফুল।লিস্টের সামনে ও বড়সড় ভীড়।এই প্রথমবার ভয়ে তিতিরের হাত পা কাঁপছে।নামটা থাকবে তো?

সকাল থেকেই শঙ্কিত মন।হঠাৎ দেবযানী কোথা থেকে এসে তিতিরকে জড়িয়ে ধরলো।বললো ,”কপাল ফাটালি কবে?”,কথাটা বেশ মনে ধরলো তিতিরের।প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললো,”আমি লিস্ট দেখিনি এখনো”।

দেবযানী নিজেই ভীড় ঠেলে সামনে নিয়ে গিয়ে নাম দেখালো।তারপর হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেলো ক্যান্টিনে।

বললো,”বিয়ে আর রেজাল্টের খুশিতে খাওয়াতে হবে।তুই অর্ডার দে,আমি বাকীদের ডেকে আনছি।সবাই মিলে জমিয়ে তোর বিয়ের গল্প শুনবো।”

তিতির চটপট দেখে নিলো ব্যাগে কত টাকা আছে।তাড়াহুড়োতে আলাদা করে কিছুই ঢোকানো হয়নি।মনেমনে হিসেব করে দেখলো দুটো করে এগ্ ডেভিল আর একটা করে কফি হয়ে যাবে।

এগডেভিলে ছোট্ট ছোট্ট কামড় আর এক এক চুমুক কফির আমেজ নিয়ে জমে উঠলো আড্ডা।সুদর্শনকে আনতে চায়নি বলেই হয়তো ভুলে গেলো ওকে দাঁড় করিয়ে রেখে আসবার কথা।

বাইরে তখন অস্থির সুদর্শন।ছট্পটে মেয়েটি এর মধ্যেই তার মনের অনেকটা জুড়ে।অকারন ব্যস্ত পায়ে সিঁড়ি ভাঙা- চানঘর বন্ধ হলেই এক নাগাড়ে গান নয়তো কবিতা পাঠ করা-অপছন্দের কথা কিছু বললেই জিভ বের করে ভেঙানো…….সব মিলিয়ে নিজের থেকে সম্পূর্ন বিপরীত চরিত্রের মেয়েটিকে ভালো লেগে গেছে তার।

কিন্তু কি হলো এতো দেরী করছে……সকাল থেকেই আনমনা।একাই আসতে চাইছিলো।

আরে ঐতো তিতির বের হলো।সঙ্গে এক দঙ্গল ছেলে মেয়ে।কিন্তু তিতির কোথায় যাচ্ছে ওদের সাথে?সুদর্শন কে কি ভূলে গেলো?ড্রাইভারকে ইশারায় পেছনে আসতে বলে সুদর্শন ও হাঁটতে থাকলো।

কি মনে হতে তিতির পেছনে তাকালো।দূর থেকে হেঁটে আসা লোকটাকে বড্ড চেনা লাগছে।আরে এর সাথেই তো বিয়ে হয়েছিলো।আজ তো ওর সাথেই এসেছিলো, বেমালুম ভুলে গেছে।এখন যে কি করে তিতির!!

বন্ধুদের হাত ছেড়ে ছুটে এসে সুদর্শনের কাছে ক্ষমা চাইতে যেতেই ওর হাতে আলতো চাপ দিয়ে সুদর্শন বললো,”আমি আছি তো, আমি থাকবো,তুমি কথা বলে নাও ওদের সাথে”।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here