#তিতির_পাখির_বাসা(পর্ব-৩)
#জয়া_চক্রবর্তী।
মন বলছে,”প্রতিবাদের ভাষা মুখে,সবার আগে দাঁড়াও রুখে”…কিন্তু পারছে কই??ভাবনার অজস্র-অনুচ্চারিত শব্দরা মুক্তির প্রহর গোনে,বিধ্বস্ত মন পতাকা পালটায় অথচ মুখে সুদর্শনকে কিছুই জানাতে পারেনা তিতির।
তবে কী লিখে জানাবে?যদিও অনাহারী মন তিতিরকে কলম ধরতে মানা করে।তবে এই কয়দিনেই বুঝে গেছে তিতির যে, প্রতিশ্রুতি দিলেও তিতিরকে পড়াবার ব্যাপার নিয়ে, শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের কোন মাথাব্যথা নেই।
কতগুলো ছেঁড়া জীর্ন রাত,নির্জন দুপুরকে বুকে জড়িয়ে তিতিরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনারা রাতের বালিশ ভেজায়,তবে কী সারা জীবন গৃহবধূ হয়েই থেকে যাবে সে??
না-না-না কিছুতেই সম্ভব নয়।অবশেষে হাতিয়ারটা নিজেই তুলে নিলো তিতির।রাতে খাওয়ার টেবিলে সবার সামনে সোজাসুজি সুদর্শন কে জানালো,”আই ওয়ান্ট ডিভোর্স”।
তারপরেই সোজা বেডরুম, শুয়ে শুয়েই তিতিরের কানে আসতে থাকে টুকরোটুকরো কথাবার্তা, যার কিছুই প্রায় তিতিরের মাথায় ঢুকছিলোনা।তিতির যে সিদ্ধান্তটা ভীষন ভুল নিয়ে ফেলেছে,হয়তো সেসব নিয়েই আলোচনা চলছে,সে যাই-ই চলুক তিতিরের কী?বরং বলে দিতে পেরে খানিকটা ভারমুক্ত সে…এবার একটা টেনে ঘুম দিতে হবে,বেশ কয়েকটা হাই তুলে কোলবালিশটায় নাক ঘসে আমেজে চোখ বুজলো….”মুক্তি-মুক্তি-মুক্তি”,ছোট্ট একটা শব্দ অথচ কি তৃপ্তির,কি শান্তির”।
কিন্তু চোখ বুজলেও ঘুম যে কেন আসছেনা তিতিরের….কোথাও কি কোন ভুল করে ফেলেছে সে?”কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তে হয়”….”যে সয় সেই রয়”…এমন অনেক কথা তার মাথায় আসছে।শুনেছিলো হয়তো আগে।ছোট থেকেই তো কত জন কত জ্ঞান ফ্রিতে দিয়ে গেছে,অবচেতন মনে সেসবের কিছু কিছু রয়ে গেছে হয়তো।
তিতির উঠে বসে ঢকঢক করে গলায় জল ঢাললো,খাওয়ারটা না খেয়েই ডিভোর্সের কথা শুনিয়ে চলে আসাটা ভুল ছিলো,খিদেতে এখন নাড়িভুঁড়ি বেড়িয়ে আসবার জোগাড়।
সুদর্শনের মনে ওদিকে এলোপাথাড়ি ঝড় বয়ে চলেছে…কি শুনিয়ে গেলো পাখিটা??ডিভোর্স চায়??!!কিন্তু কেন??কাজের জন্য হয়তো সময়টা কম দিতে পারে তিতিরকে,কিন্তু এই তিন মাসেই ওর মনের আনাচেকানাচে তিতির যে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
নেক ব্যস্ততার মধ্যেও বাড়ী ফিরলে তিতিরের মন খোলা হাসি ওর কাছে এক ঝাঁক মলয় বাতাস,তিতির ওর অক্সিজেন, বেঁচে থাকবার রসদ।সুদর্শন বুঝতে পারছেনা,এটা কি নিছক মজা!!ভয় পাওয়াবার কৌশল!!নাকি সত্যিই ডিভোর্স চায় তিতির!!
এদিকে তিতির ঘর ছেড়ে চলে যেতেই আলোচনার ঝড় উঠেছে ঘরে,ওরা নাকি জানতোই তিতির সংসারী মেয়ে নয়,এই মেয়ে যে ঘর করবে না সেটাও ওদের অজানা নয়।সুদর্শন কিছুক্ষন ভাত নাড়াচাড়া করে উঠে পরলো,তবে ঘরে যাওয়ার আগে কি মনে হতে প্লেটে এক হাতা ভাত,দুপিস চিকেন কষা নিয়ে নিলো।
তিতির বাইরে অন্ধকারের দিকে একমনে চেয়ে আছে,সুদর্শন ছদ্ম হাসি মুখে টেনে নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলো,বললো,”ডিভোর্স কি ক্যাডবেরি, যে চাইলেই দিয়ে দেওয়া যায়?? এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।কিন্তু ততদিন কি পাখিটা দানাপানি বন্ধ করে রাখবে?বলতে বলতেই ভাত মেখে গ্রোস করে তিতিরের মুখে ঢুকিয়ে দেয়,তিতির ও কথা না বলে চুপচাপ সুদর্শনের হাত থেকে খেতে থাকে।(চলবে)