#তিতির পাখির বাসা (পর্ব-২২)
#জয়া চক্রবর্তী।
আজ চতুর্থী। সুদর্শনের ফোনেই ঘুম ভেঙেছে তিতিরের।ওর ট্রেন লেট,আসতে দেরী হবে-শুধুমাত্র এই টুকু জানিয়েই ফোন রেখে দিয়েছে সুদর্শন।
তিতির আরো খানিকক্ষণ সময় এপাশ ওপাশ করে বিছানা ছাড়লো।আজ রাতের ট্রেনেই অনুশ্রীদের বেড়াতে যাওয়ার কথা। তিতির চটপট স্নান সেরে রান্নাঘরে ঢুকে তরকার ডাল ভেজালো।
প্রেশারে ছোট আলু অর্ধেক করে কেটে ধুয়ে নিয়ে নুন দিয়ে সেদ্ধ বসালো।
তারপর চা বসিয়ে গামলায় ময়দা নিয়ে তার ভিতর সাদা তেল,নুন,চিনি,একটা ডিম,হাফ কাপ দুধ দিয়ে ময়ান ঠেসে উষ্ণ জল দিয়ে মাখতে থাকলো।আজ সকালে লুচি আলুরদম হবে বলে রেখেছিলো মামনি।
‘কি হলো তিতির চায়ের জল তো শুকিয়ে গেলো।একটু তো খেয়াল রাখতে হয় নাকি!কোন জগতে যে থাকো কে জানে!’,তৃণার কথায় রাগ হলেও কথার উত্তর না দিয়ে তিতির বোতল থেকে আরো কিছুটা জল ঢেলে দিলো চায়ের বাসনে।
জল ফুটলে চা পাতা দিয়ে ঢেকে দিলো রেকাবি দিয়ে।প্রেশারকুকার একটা সিটি দিতেই নামিয়ে রাখলো।তারপর আপন মনে ময়দার লেচি করে রাখতে থাকলো।
অনুশ্রী রান্নাঘরে ঢুকেই বললো,’বাবিনের তো সকালেই আসার কথা।তিতির বাবিন কি ফোন করেছিলো?’
তিতির বললো,’ফোন করে শুধু ট্রেন লেট জানিয়েই কেটে দিলো’।অনুশ্রী বললো,’তারমানে চার্জ নেই ফোনে’।
‘মামনি তোমাদের ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে?ওষুধ গুলো ঠিকঠাক মতো নিয়েছো তো?’তিতিরের কথায় অনুশ্রী শুধু বললো,’হুম’।
অনুশ্রীর নিজের ও বেশ খারাপ লাগছে পুজোর সময়টা তিতির আর বাবিনকে ছেড়ে যেতে।
তার ওপর তিতির যেভাবে মুখ শুকনো করে কাল বলেছিলো,’সবাইএর মধ্যে আমি নেই?’,তাতে মনটা বেশ খারাপ লাগছে অনুশ্রীর।
একবার ভেবেছিলো,থেকেই যাবে তিতিরদের সাথে।কিন্তু কৌশিক কে জানাতেই এক কথায় নাকচ করে দিয়েছে।
‘তরকার ডালটা আবার কেন ভেজালে?’,তৃণার কথায় তিতির বললো,’ তোমরা যাওয়ার আগে এগ-চিকেন তরকা আর রুটি বানিয়ে দেবো’।
অনুশ্রী বললো,’তোমার বাবাই বলেছে চারটা নাগাদ বেড়িয়ে পড়বে।হাতে সময় রেখে না বের হলে রাস্তায় জ্যামের কারনে পৌঁছোতে দেরী হবে।এসব কিছু বানাতে হবেনা।আমরা কিনে নেবো’।
তৃণা বললো,’আহাঃ বানাতে চাইছে যখন বানিয়ে দিক।তোমার আবার বাড়াবাড়ি। আমরা কোথাও যাওয়ার সময় ট্রেনের খাওয়ার তো বানিয়েই নিয়ে যাই’।
তিতির বললো,’চিন্তা কোরনা মামনি।তোমরা বের হওয়ার আগেই রুটি তরকা হয়ে যাবে।এখন লুচি খাবে তো?’অনুশ্রী বললো,না আমি স্নান সেরে পুজোর কাজটা সেরে ফেলি।তুমি কিন্তু জল মিষ্টিটা দিও রোজ’।তিতির বললো,’হুম দেবো’।
অনুশ্রী বললো,’তোমার ছাত্র ছাত্রীরা এসে যাবে।যা করার করে বেড়িয়ে যাও।আজ আর সবজি বানাবার দরকার নেই।পরে এসে আমি কালোজিরে কাঁচালঙ্কা দিয়ে হালকা করে মাছের ঝোল বানিয়ে ফেলবো’।তৃণা বললো,’তাহলে আমি গিয়ে বাকী জিনিস গুছিয়ে ফেলি গিয়ে’।অনুশ্রী বললো,’হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে’।
ওরা রান্নাঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যেতেই তিতির আলুরদম আর লুচিতে মনোনিবেশ করলো।
অনুশ্রীদের ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।
এবার এক কামরাতেই সবার সীট পড়েছে এটাই স্বস্তি।
দীপ, অর্না,পর্না নিজেদের ভিতর আগডুম বাগডুম গল্প জুড়েছে।কৌশিক একটা বই বের করে চোখ বোলাচ্ছে।তৃণা অঞ্জনের সাথে কি একটা বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে।
দেব মানে অনুশ্রীর ছোট দেওর কাগজপত্র বের করে হিসেবনিকেষে ব্যস্ত।
দেব বিয়ে করেনি।প্রথম দিকে অনুশ্রী আর তৃণা অনেক চেষ্টা করেছিলো দেবের একটা বিয়ে দেওয়ার।
কিন্তু রাজি করাতে পারেনি।অনুশ্রী দেখেছে,দেবের যেন কাজেতেই খুশী কাজেতেই আনন্দ।
এই কাজ পাগল লোকটা একটু খামখেয়ালি বদরাগী হলেও ওর মনটা বেশ ভালো।
ট্রেন হু হু করে ছুটছে।সবাই যে যার মতো আনন্দে মশগুল।শুধু অনুশ্রীর মনটা খারাপ।তিতিরের গলাটা কানে ভাসছে।আসার সময় অনুশ্রী তিতিরকে জিজ্ঞেস করেছিলো,’বলো আসার সময় কি আনবো?’
তিতির একটু উদাস গলায় বলেছিলো,’দার্জিলিং- কালিম্পং উপত্যকায় অসংখ্য অনিকেত মেঘ।অন্তত কয়েকখণ্ড মেঘ পাঠিও পৌঁছেই’।
অনুশ্রী হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে এসেছিলো,’সাবধানে থেকো দুজন’।তারপর বাবিনের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো,পুজোর দিনগুলোতে ওকে ঘরে বসিয়ে রাখিস না।মন্ডপে মণ্ডপে ঘুরিয়ে আনিস।খাওয়াদাওয়া টা বাইরেই করিস’।
‘আরে মা তুমি একদম চিন্তা কোরনা।তোমরা ভালো মতোন ঘুরে এসো।আর আমি তো এখন শিয়ালদা’তেই যাচ্ছি তোমাদের ট্রেনে তুলতে।বাকী ইন্সট্রাকশন গুলো না হয় ট্রেনে উঠবার আগে দিও’।
বাবিনের কথায় হেসে ফেলেছিলো সবাই।
দীপ এই প্রথম তিতিরকে বলেছিলো,’সাবধানে থেকো বউমণি’।
অর্না পর্নাও দীপের দেখাদেখি টা টা করেছিলো তিতিরকে।অনুশ্রী খেয়াল করেছিলো,তিতিরের ছলছল চোখটা।
কিছু কিছু মানুষের চোখ মুখ সত্যিই মনের আয়না।তিতিরকে তাই না ভালোবেসে পারেনি অনুশ্রী।
তাই হয়তো আজ সবার মাঝেও তিতিরের মন খুলে মামনি ডাকটা মিস করছে।
বাড়ী খালি।আপাতত তিতিরের করবার কিছুই নেই।আজ সকালে সংশপ্তকেও পুজোর ছুটি দিয়ে দিয়েছে।
নিজের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে তিতির মাদুর হাতে করে সোজা ছাদে চলে গেলো।পুরো বাড়ীতে এই একটা জায়গা ওদের দুজনেরই বড্ড প্রিয়।
অনেকক্ষণ সময় ধরে কফিটা শেষ করলো।
তারপর খোলা আকাশের নীচে শুয়ে পড়ে তারা ভরা আকাশের দিকে চেয়ে রইলো।
দূর থেকে ভেসে আসছে ঢাকের আওয়াজ।আগে পঞ্চমী ষষ্ঠীতে প্রথম ঢাকের কাঠি পড়তো।এখন চতুর্থী থেকেই শুরু হয়ে যায়।
তিতিরের অবাক লাগে এই একই বাজনা প্রথম দিকে মনে আনে আগমনী বার্তা।পরের দিকে আনে বিসর্জনের বেদনা।
তিতির কোনকালেই ভীড়ভাট্টা ঠেলে ঠাকুর দেখতে ভালোবাসে না।তিতিরের কাছে পুজো মানেই ছিলো মন্ডপের কাজ,পুজো মানেই ছিলো পুজোবার্ষিকী।
সুদর্শনরা সম্ভবত বই পড়ে না।এখনো একটাও পূজোবার্ষিকী আসেনি বাড়ীতে।
তিতির মনে মনে ভাবলো কাল সকালেই সুদর্শনকে টাকা দিয়ে ওর প্রিয় পূজোবার্ষিকী গুলো কিনিয়ে নিতে হবে।
অনুশ্রীদের ট্রেনে তুলেই সুদর্শন ফেরার ট্রেন ধরলো।আজ সুদর্শনের পা ঠিক মাটীর ওপরে নেই।
মনের সাথে সাথে শরীরটাও উড়ছে সুদর্শনের।
‘খালি বাড়ী’ আর ‘তিতির’এই শব্দ দুটো ভিতরে ভিতরে কেমন অস্থির করে তুলছে সুদর্শনকে।তার ওপর বেশ কয়েকদিন তিতিরকে জড়িয়ে ধরে তিতিরের নরম বুকের ওমে মুখ ডুবিয়ে ঘুমোয়নি।
তবে ট্রেনে করে ফিরতে ফিরতে নিজের ওপরেই রাগ হলো সুদর্শনের।
আসার সময় তিতিরের জন্য তিনটে পুজোবার্ষিকী কিনে এনেছিলো।বই গুলো দিয়ে আসলে তিতিরকে এখন একা একা থাকতে হোতোনা।
ট্রেন থেকে নেমে পাউরুটি আর তিতিরের পছন্দের গোলাপ জামুন কিনে রিক্সা ধরে নিলো সুদর্শন।
‘একটু তাড়াতাড়ি তো চালাতে পারো ভাই’,সুদর্শনের কথায় একটু রেগে গিয়ে রিক্সাওয়ালা বললো,’জোরেই তো চালাচ্ছি।আর কত জোরে যাব!মেশিন তো নই বাবু।তেমন হলে ট্যাক্সি বুক করে নিতেন’।
সুদর্শন আর কথা বাড়ালো না।আসলে রিক্সা ওয়ালা জোরে রিক্সা টানলেও এই মুহুর্তে সুদর্শনের মনের গতির সাথে পাল্লা দেওয়ার সাধ্য নেই তার।অগত্যা চুপ করে রিক্সা গন্তব্যে পৌঁছোবার অপেক্ষা।
রিক্সা থামতেই ভাড়া মিটিয়ে সুদর্শন দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।পকেট থেকে চাবি বার করে দরজা খুলে ভিতরের দিকে পা বাড়ালো।
যাওয়ার সময় তিতিরের কথাতেই বাইরে থেকে আটকে গিয়েছিলো সুদর্শন।
সুদর্শন দেখলো পুরো বাড়ী অন্ধকার।ঘুরে ঘুরে লাইট গুলো সব জ্বালালো।তারপর কোথাও তিতিরকে দেখতে না পেরে সোজা ছাদে চলে গেলো।
পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলো তিতিরের দিকে।দেখলো তিতির ঘুমে অচৈতন্য।
সুদর্শন তিতিরকে না ডেকেই সোজা নীচে গিয়ে শাওয়ার নিলো।তারপর একটা স্কাইব্লু কালেরের হাফ পাঞ্জাবী আর পায়জামা চাপিয়ে সোজা ছাদে এসে তিতিরের পাশে শুয়ে পড়লো।
ক্রমশ রাত বাড়তে থাকে।
জোনাকি লন্ঠন,ঘুমন্ত তিতির,নির্জীব সূর্যমুখীর গোপন আকুলতা,মৃদুমন্দ বয়ে চলা মলয় বাতাস আর আদিগন্ত চুপচাপ রাতের ঘ্রাণ সুদর্শনকে পাগল করে দিতে থাকে।
তবু সুদর্শন তিতিরের ঘুম ভাঙায়না।
একসময় তিতির চোখ মেললো।আড়মোড়া ভেঙে পাশ ফিরে শুতেই সুদর্শনকে দেখলো।
বললো,’তুমি কখন আসলে?আমায় ডাকোনি কেন?নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়ে গেছে তোমার।
চলো খেতে দিই’।
সুদর্শন বললো,’সত্যি পাখি ভীষণ ভীষণ খিদে পেয়ে গেছে আমার।কিন্তু আমি যা খেতে চাইবো কোনো প্রশ্ন না করে খাওয়াতে পারবে তুমি?’
সুদর্শনের চোখে মুখে দুষ্টু হাসি।তিতির বললো,’আমি খাবারের কথা বলেছি’।সুদর্শন বললো,’আমিও তো খাবারের কথাই বলেছি’।
তিতির উঠবার চেষ্টা করতেই তিতিরের হাত ধরে হাল্কা টান মারলো সুদর্শন।
সুদর্শনের বুকে তিতিরের মুখ এসে পড়তেই সুদর্শন তিতিরের মাথাটা জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকে।
তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,’খাইয়ে দাও আমায়,খাইয়ে দাও।
এই আকাশ সাক্ষী থাকুক,তারারা সাক্ষী থাকুক তোমার আমার ভালোবাসার’।
তিতির চোখ বুজেই সুদর্শনের চোখের ওপর ঠোঁট ছোঁয়ালো।তারপর সুদর্শনের সারা শরীর জুড়ে তিতিরের ঠোঁট ওঠানামা করতে থাকলো।উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে তিতির,থরথর করে কাঁপছে সুদর্শন।
সুদর্শনের হাত প্রথমে তিতিরকে পরে নিজেকে উন্মুক্ত করে দিলো।তিতিরের নোখ বসে গেলো সুদর্শনের পিঠে।সুদর্শনের দাঁত বসে গেলো তিতিরের ঠোঁটের পাপড়িতে।কিন্তু ওদের কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
প্রচন্ড আবেগে একে অপরকে আঁকড়ে ভালোবাসার প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে তিতির, ভিজতে থাকে সুদর্শন। সময় বয়ে চলে তার নিজের ধারায়।কিন্তু তিতির সুদর্শনের জন্য থমকে থাকে সময়।
পূব দিকের আকাশ পরিষ্কার হতে না হতেই দূর থেকে ভেসে আসে ঢাকের আওয়াজ।বিশ্বস্ত প্রহরীর মতো অবিচল দাঁড়িয়ে থাকা গাছেদের সাক্ষী করে সুদর্শন তিতিরের হাত ধরে ছাদের পাঁচিলের সামনে এসে দাঁড়ালো।
‘চলো তিতির বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি’,সুদর্শনের কথায় তিতির বললো,’কোথায়?’
সুদর্শন বললো,’সে যেতে যেতে ঠিক করলেই হবে’।তিতির পাকা গিন্নীদের মতো মুখ করে বললো,’চলো বললেই তো আর চলা যায়না।শিউলিদি আসবে বাসী কাজ সারতে’।
সুদর্শন বললো,’সে আজকের বাসী কাজ না হয় কাল এসে সারবে।প্লিজ পাখি অজুহাত দিও না।চট করে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নাও’।
অগত্যা তিতির নীচে নেমে আলমারি খুলে শাড়ী ব্লাউজ নামালো।টাওয়াল নিয়ে বাথরুমের দরজা বন্ধ করতেই সুদর্শনের টোকা পড়লো দরজায়।’শিগগিরি খোলো পাখি,চাপতে পারছিনা’।তিতির দরজা খুলে দিতেই সুদর্শন ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তিতির বললো,’এটা কি হলো?তুমি নাকি চাপতে পারছো না।আমার সামনেই কি করবে নাকি কিছু?’
সুদর্শন হেসে বাঁ হাত দিয়ে তিতিরের কোমর জড়িয়ে নিজের দিকে টেনে এনে শাওয়ার চালিয়ে দিলো।
কানের কাছে মুখ এনে বললো,’আজ থেকে লক্ষ্মী পূজোর আগের দিন পর্যন্ত তোমায় চোখের আড়াল করা যাবেনা, এটা মহান অনুশ্রী দেবীর আদেশ।আর তাঁর উপযুক্ত জ্যৈষ্ঠ পুত্র হিসেবে আমার সেই আদেশ পালন করা একমাত্র কর্তব্য’।
তিতির সুদর্শনের চুল মুঠো করে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললো,’তাই বুঝি,সব কিছু একসাথে করবে!!’
সুদর্শন হেসে বললো,’আঃ আঃ চুল ছাড়ো লাগছে’।
স্নান পর্ব সারতে না সারতেই শিউলি মাসীর কলিংবেল।সুদর্শন বললো,’জ্বালিয়ে খেলো সব’।তারপর টাওয়াল পেঁচিয়ে সদরে গিয়ে দরজা খুললো।
শিউলিকে বললো,’মাসী কাল সকালে এসে বাসী কাজ সেরো।আমরা একটু বের হবো’।শিউলি নিজের মতো কিছু একটা বুঝে নিয়ে হেসে বেড়িয়ে গেলো।
সুদর্শন টাওয়াল জড়িয়েই ফ্রিজ থেকে পাউরুটি বের করে সেঁকে নিলো।তারপর সময় নিয়ে পাউরুটি তে মাখন লাগিয়ে প্লেটে সাজালো।ফ্রিজ থেকে গোলাপ জামুন ও বের করে প্লেটে দিলো।তিতির বের হতেই বললো,’আগে খেয়ে নাও তারপর তৈরি হবে’।
তিতির বললো,’তুমি খেতে থাকো।আমি চট করে ঠাকুরকে জল মিষ্টি দিয়ে আসি’।
সুদর্শনের বাইকের পিছনে বসে ডান হাত দিয়ে সুদর্শনের কাঁধে হাত রাখলো তিতির।সুদর্শন বললো, ‘এইভাবে বসলে চালাবো না।কোমর পেঁচিয়ে ধরে বসতে হবে’।তিতির তাই করলো।
পঞ্চমীর সকাল হলে হবে কি,বাইরে কিন্তু লোকের ঢল নেমেছে এখনি।সুদর্শন তিতিরকে কোন মন্ডপে দাঁড় না করিয়ে সোজা একটা বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালো।
তিতির চোখ কুঁচকে চারদিকটা দেখে বললো,’আমরা কোথায় এলাম!’
সুদর্শন উত্তর না দিয়ে বাইকের ডিকি খুলে একটা বড়ো ব্যাগ বার করে আনলো।তারপর তিতিরের হাত ধরে সোজা ভিতরে।
তিতির দেখলো ভিতরে প্রার্থনা চলছে।সেখানে বিভিন্ন বয়েসের মানুষজন।প্রত্যেকেই দৃষ্টিহীণ।
সুদর্শনকে দেখে আশ্রমের একজন এগিয়ে আসলো সুদর্শন বললো,’পরিচয় করিয়ে দিই, আমার বীণা দি আর বীনাদি ও হলো তিতির পাখি,আমার বৌ’।
বীনাদি এক গাল হেসে তিতিরের হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বাকীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।সবাই তিতিরের হাত ছুঁয়ে ওকে অনুভব করতে চাইলো।
সুদর্শন তিতিরকে ডেকে ব্যাগটা ধরিয়ে দিলো।তিতির দেখলো ভিতরে র্যাপ করা অনেক গিফট।তিতির সবার হাতে একটা একটা করে গিফট ধরিয়ে দিলো।
আর মনে মনে ঠিক করলো,প্রতিবছর পুজোর সকাল গুলো এবার থেকে এখানেই এদের সাথে কাটিয়ে যাবে।
সুদর্শন আশ্রমের এক কর্মী মানব দাকে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে গিয়ে মাংস কিনে আনলো।তিতির বীনাদির অনুমতি নিয়ে সেই মাংস রান্না করলো।রান্নার মাসীও তিতিরকে সাহায্য করলো।
বীনাদি জানালো,সব শুদ্ধু ৩০ জন থাকেন এই আশ্রমে।আশ্রমটা দুবছর হলো হয়েছে।সুদর্শন প্রথম থেকেই এই আশ্রমে জড়িত।সব মিলিয়ে তিতিরের মন সুদর্শনের প্রতি শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসলো।
আশ্রম থেকে ফেরার পথে তিতির অনর্গল কথা বলে চললো।সুদর্শনের ভয় ছিলো আশ্রমের কথাটা তিতিরকে জানালে হয়তো সুদর্শনকে তিতির খরচা করতে দেবেনা আশ্রমের জন্য।কিন্তু এখন নির্ভার লাগছে মনটা।তিতির বেশ খুশীই হয়েছে আশ্রমে এসে।
বাড়ী ফিরেই আবার সুদর্শনের দুষ্টুমি শুরু।তিতির বললো,’দস্যি একটা’।সুদর্শন বললো,’যেমনি হই শুধু তোমার’,তিতির এবার নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাথাড়ি চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে সুদর্শনকে।
‘শুধু তোমার’ শব্দটায় সত্যিই যাদু আছে।আসলে মানুষ তার একান্ত কাছের মানুষটিকে কারো সাথেই বুঝি শেয়ার করতে পারেনা।(চলবে)