আমার পুতুল বর পর্ব:১৩+১৪
লেখিকা : আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছিলেন আফিফ হাসান ও সুরাজ জামান। আর সুজানা, রিক, রোজ এক পাশের সোফায় বসে নিজেদের মতো গল্প করছে। অহনা আর আরিয়া সবাইকে নাস্তা দিচ্ছিলো। এমন সময় বাড়ির সদর দরজা ডিয়ে আরশি এলো। সবাই হাসি মুখ নিয়ে আরশির দিকে তাকালো। সুজানা কিছু বলবে তার আগেই আরশির পিছনের মানুষটিকে দেখে জমে গেলো সে। এবার বাকিদের ও নজর পড়লো আরশির পিছনের ব্যক্তিটার উপর। অহনা, আরিয়া আর সুজানা যেনো দিনের দ্বিতীয় শক খেলো। আফিফ হাসান আর সুরাজ জামান হা হয়ে তাকিয়ে আছেন। আরশি মাথা নিচু করে অস্থির ভাবে চোঁখ ডানে বামে ঘুরাচ্ছে। সূর্য ওকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো –
~ দাড়িয়ে আছো কেনো এভাবে? ভিতরে যাও। সামনে তাকিয়ে দেখলো সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
বির বির করে ( শুরু হবে এখন সবার ড্রামা ) বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সবাইকে উপেক্ষা করে উপরে নিজের ঘরে চলে গেলো। আরশি সবাইকে শুকনো হাসি দিয়ে চোরের মতো পালালো।
~ এই আপা হচ্ছে কি এসব? আমাদের চোখ ঠিক আছে তো? নাকি সত্যি সূর্য পাল্টাচ্ছে?
~ আমিও বুঝতে পারছি না। কিন্তু ওতো নিজেই আমাদের বলেছিলো ও আরশি কে মানবে না। তাহলে?
~ হ্যাঁ ত,,,,
~ উহুম উহুম সুজানা আর সুরাজ জামান শুকনো কাশি দিলো। অহনা আর আরিয়া ওদের দিকে তাকাতেই ওরা ইশারায় রিক আর রোজকে দেখালো।
ওরা দুজনেই জিবে কামড় দিলো। ওরাও যে এখানে আছে সেটা তো ওরা ভুলেই গেছিলো। রিক আর রোজ উৎসুক হয়ে ওদের কথা শুনছে। অহনা ওদের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বললো,,,
~ তোমরা বসো দাড়িয়ে আছো কেনো? আমি এক্ষুনি নাস্তা নিয়ে আসছি। এই আরু চল।
~ হ্যাঁ হ্যাঁ চলো। ওরা দ্রুত রান্না ঘরে চলে গেল।
~ হেহেহে রিক, রোজ বসো আমরা আমাদের গল্প কন্টিনিউ করি।
সূর্য বিছানায় বসে আছে এমন সময় ওর ঘরে সুরাজ জামান এলেন।
~ ভিতরে আসবো?
সূর্য মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো ওর বাবা দাড়িয়ে আছে। একটু হেসে,,
~এসো। পারমিশন নেওয়ার কি আছে।
সুরাজ জামান হেসে ভিতরে ঢুকলেন। সূর্যের পাশে বসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলল,,,
~আমি আজ খুব খুশি হয়েছি। তুমি আমার কথা রেখেছো এটা দেখে বেশ ভালো লাগছে।
~ বাবা আমি যা করেছিলাম আর যা করছি সবটাই দিম্মার জন্যে। আর কালকে তুমি আমাকে তোমার কথার দ্বারা দিম্মা কে করা আমার প্রমিস মনে করিয়ে দিয়েছিলে। আর তাই আজ আমি এসব করছি।
~ তুমি আজ আমায় বলছো যে যা যা তুমি করছো সবটা তোমার দিম্মার জন্য। কিন্তু একদিন এই একই কাজগুলো তুমি করবে আর সেটা নিজের জন্য করবে মিলিয়ে নিও।।
সূর্য তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। এমন দিন কখনো আসবে না বাবা। কারন জোর করে কখনো কিছু হয় না।
~ (হালকা হেসে) তোমাকে কেউ জোর করবে না। তুমি যা করবে নিজের থেকে করবে আমি তো তোমার বাবা আমার কথায় একটু ভরসা করে দেখো। কথাটা বলে তিনি সূর্যের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।
দরজার বাইরে সুজানাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। নিজের ঘরে চলে গেলেন। সুজানা সূর্যের ঘরে এসে ওর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,,,,
~ ভাই! বাবা তোকে কি বলেছে?
~ তেমন কিছুনা।
~ দেখ আমার থেকে লুকাবি না। বল!!
~কাল বাবা আমার ঘরে এসছিলো। আমি তখন আমার প্রজেক্টের ব্যাপারে কাজ করছিলাম।
~ সূর্য!! তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে। বাবার গম্ভীর কন্ঠ শুনে সূর্য মাথা তুলে তাকালো।
~কি বলবে বলো! ল্যাপটপ সাইডে রেখে।
~ আমি সোজাসুজি তোমাকে কিছু কথা বলছি ,,, তোমার দিম্মাকে তুমি কি প্রমিস করেছিলে তোমার মনে আছে? সূর্যের হাত মুঠ করে ফেললো। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। “কি হলো বলো মনে আছে ?”
~ হ্যাঁ মনে আছে।
~ তোমার কি মনে হয় তুমি সেই প্রমিস রেখেছো? ঠিক মতো পালন করেছো? সূর্য রেগে দাড়িয়ে গেলো।
~ বাবা আমি তোমাদেরকে আগেই বলেছি এই ব্যাপারে কোনো কথা আমি শুনবো না। ওই ইনসিডেন্ট টা আমার লাইফ এ একটা অ্যাকসিডেন্ট এর মতো। যেটা আমি ভূলে যেতে চাই।
~ ইনসিডেন্ট আর অ্যাক্সিডেন্ট যেটাই বলো সেটা কিন্তু তোমার একার সাথে হয়নি। অন্য একজন ও সেটায় জড়িয়ে আছে। আর তুমি জানো তার জায়গাটা তোমার দিম্মার কাছে ঠিক কি ছিলো।
আর ওই ইনসিডেন্ট টার রিজন ও তোমার অজানা নয়। তাহলে?
~ আমি কিছু শুনতে চাইনা, আর না কারো কথা ভাবতে চাই। প্লিজ আমাকে ফোর্স করো না।
~ কতকাল? কতকাল এই সত্যিটা থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে এসব বলে? যখন তুমি তোমার প্রমিস রাখতে পারবে না তখন করেছিলে কেন? এতে তুমি প্রত্যেকটা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ। বেশি কষ্ট পাচ্ছে দুজন। একজন তোমার দিম্মা আরেকজন কে তা তুমি ভালো করেই জানে।
~ এখন আমাকে কি করতে বলছো তুমি?
~ আমার বলার কিছুই নেই কিন্তু তোমার করার অনেক কিছু আছে। এবার তুমি ভাবো ঠিক কোন পথটা তুমি বেছে নিবে!! তোমার দিম্মার দেখানো তোমার জীবনের সত্যির পথটা নাকি নিজের তৈরি করা মিথ্যে আবরণে ঢাকা পথটা? বাবা চলে গেলেন। সূর্য বিছনায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।
….……………………………….………….…………………………
~ এর জন্যেই আজ তুই ওসব, এই অধিকার দেখানো সবটা ঐ প্রমিসের কারনে?
সূর্য কিছু না বলে শুধু শান্ত দৃষ্টিতে সুজানার দিকে তাকালো। সুজানা দু হাতে মুখ ঢেকে ফেললো।
~ ভাই তুই এটা ঠিক করছিস না। তুই ওকে মিথ্যে আশা দিচ্ছিস। ওর মন নিয়ে খেল,,,
~ সিরিয়াসলি আপু? তখন ওর বয়স কতো ছিলো? ওর মাঝে এসব বোঝার কোনো অনুভতি ছিলো?
~ তখন কতখানি ছিলো জানিনা কিন্তু এখন!! এখন তুই ওকে দেখে বুঝতে পারছিস না ??? আর তোর নিশ্চয়ই মনে আছে এয়ারপোর্টে সেদিন ও কি বলেছিলো!! একটা বাচ্চা নিশ্চয়ই শুধু শুধু আর দায়িত্ব – কর্তব্যের কথা বলবে না।। আর ও তোকে ঐদিন পুতুল বউটা দিয়েছিলো তো? বল দিয়েছিলো না??
~ ওর কাছে সব টা পুতুল খেলা আপু! আমার কাছে নয়। ফর গড সেক !!! আমি এখন আর কিচ্ছু শুনতে চাইছি না। প্লিজ জাস্ট লিভ মি অ্যালোন।
~ তুই খুব বড়ো ভূল করছিস ভাইয়া। খুব বড় ভুল। একদিন বুঝবি কিন্তূ দেখিস খুব বেশি দেরি করে ফেলিস না যেনো।। কথাগুলো বলে চোখে পানি নিয়ে সুজানা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। সূর্য সে দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওর ব্যাগের ভেতর থেকে পুতুল টা বের করলো। পুতুলটাকে কিছুক্ষণ দেখে ওইটা নিয়ে আলমারিতে রেখে দিল তারপর ব্যালকনিতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
~ কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। এ কোন পরিস্থিতিতে তুমি আমাকে ফেললে দিম্মা?? ( চোখ বন্ধ করে ফেললো এতে চোখের কোণা বেয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো )
এতক্ষণ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সূর্য আর সুজানার সব কথাই ন্যান্সি শুনেছে। নিজের ঘরে এসে ,,,
~ কি সব বলছিলো ওরা? কাকে নিয়ে কথা বলছিলো? কিসের দায়িত্ব পালনের কথা বলছিলো।
আর দিম্মা মানে সূর্যের গ্র্যান্ডমা !!! উনি কি প্রমিস করিয়েছিলেন সূর্যকে দিয়ে??? আহহহ! মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। কি কাহিনি চলছে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। কিন্তু কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি সূর্যকে আমার থেকে আলাদা হতে দিবনা। কখনো না। ( চোখ- মুখ শক্ত করে )
…………………..…………………………….………………………
আজকের করা সূর্যের কাজগুলোর কথা ভেবে একা একাই হাসছে আরশি।
~ উফফ এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো আমার? এগুলো তো নরমাল ব্যাপার তাও ভীষণ সুখ লাগছে। আলমারি থেকে পুতুল বর টা বের করে,,,,,,
~ আমার পুতুল বর কি এবার আমার সত্যি বর হবে? সে কি তার পুতুল বউকে আপন করে নিবে??? হুঁ! বল না।।।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুতুল টাকে জড়িয়ে ধরে হেসে যাচ্ছে।
#চলবে
আমার পুতুল বর
লেখিকা : আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব:১৪
রেহানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই মেয়ে ওকে পেয়েছেটা কি, সেলসম্যান?? সন্ধ্যা থেকে এখন রাতের ১১টা বাজে এই নিয়ে ৬ বার ও মিহির বাসার নিচে এসেছে। কারণ মিহির একবার আইসক্রিম, একবার চকলেট, একবার ফুসকা, ঝালমুড়ি খেতে মন চাচ্ছে। আর এসব রেহান কে এনে দিতে হয়েছে। আর এখন!! বাসায় আলু শেষ তাই রেহানকে ডেকে বাজারের ব্যাগ আর টাকা দিয়ে বললো,,,,
~ ঘরে আলু শেষ হয়ে গেছে আর এত রাতে আমি একটা মেয়ে হয়েতো বাইরে যাব না। তাই আপনিই দয়া করে আলু কিনে নিয়ে আসুন।।।
~ এই রাতে তোমার আলু লাগবে কেনো? দিনে ও তো কিনতে পারো!!
~ না পারিনা। আমার এখন আলুর চপ খেতে ইচ্ছে হয়েছে মায়ের হাতের। মা বলেছে আলু নেই তাই বানিয়ে দিতে পারবেনা। কিন্তু আমার তো এখন ই খেতে হবে তাই আলু লাগবে। আর আপনি এখন আমাকে আলু এনে দিবেন।
~ সময় দেখেছো??
~ আমার বাসার ঘড়ি নষ্ট তাই জানিনা। আপনি দেখে নিন।
~ওহ গড!!!!! (হাত দিয়ে কপাল চাপড়ে)শুনো আমি এতো রাতে আলু আনতে যেতে পারবোনা। ধরো তোমার বাজারের ব্যাগ আর টাকা।( মিহির হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে পিছন ফিরে চলে যাচ্ছিলো )
~ ( নিজের হাতের ব্যাগের দিকে তাঁকিয়ে রেহানকে ডেকে ) আরেহহ! আপনি কিন্তু আপনার কথার খেলাপ করছেন ।।।
রেহান পিছু ফিরে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
~ হ্যাঁ আপনি প্রমিস করেছেন ২৪ ঘণ্টা আমি যা যা বলবো তাই করবেন। তাহলে এখন কি হলো ? পারলেন না তো নিজের প্রমিস রাখতে??
~(বির বির করে ) কোন পাগলে কামড়েছিল আমায় যে এমন একটা প্রমিস করতে গেছিলাম এই আধপাগল মেয়েটাকে ।।। এখন আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।।। উফফ!!
~ কি হলো?
~ তোমার মাথা !! দাও ব্যাগ দাও।
–রেহানকে ব্যাগ দিলো। আরে টাকা টা!!!! (রেহান কিছু না শুনে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলো। মিহি মিষ্টি হাসলো ওর অবস্হা দেখে )
২৫ মিনিট পর,,,
~নাও তোমার আলু। আমি গেলাম।
~ টাকা টা নিন।
~ কিসের টাকা?
~ আলুর।
~ কোনো দরকার নেই তুমিই রাখো। আরো আলু কিনে খেয়ো। এমনিতেই তো আলুর বস্তার মতো।।( মুখ বাঁকিয়ে বললো ) তারপর বাইক নিয়ে চলে গেলো।
~ মিহি চোঁখ বড়ো বড়ো করে বললো- কি বললো বাঁদর টা ?? আমি আলুর বস্তা !!!! হুহ! ফাজিল একটা। কিন্তু আজকে অনেক জ্বালিয়েছি। লাস্ট এই আলুর জন্যে থ্যাংকস তো বলাই উচিত।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং;;;
~ আবার !!! ( ফোন রিসিভ করে ) এবার যদি আর কিছু বলেছো তো তোমার খবর আছে আমি কি…..
~ থাঙ্কু আজকের জন্যে। আর আজকের মতো আপনাকে জ্বালানো এখানেই শেষ হলো বাকিটা কালকে জ্বালাবো, হ্যাঁ! রাখছি।।।
ফোন কেটে হেসে দিলো। রেহান ফোনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
~ আসলেই আধপাগল একটা।।।।
……………………………………………………………………….
~ ব্যাপারটা কি হলো আজ ১১:১৫ বেজে গেছে অথচ মেয়েটা ফোন দিচ্ছে না। খুব রেগে আছে কি? ফোন হাতে নিয়ে,,, আমি কি একবার ফোন করবো??
না না,, পরে যদি উল্টো পাল্টা কিছু ভেবে নেয় তখন? কিন্তু সরি ও তো বলা দরকার। কাল ভার্সিটি তে বলে দিবো!!!
এসব ভাবতে ভাবতে ঘরময় পায়চারি করছে অভ্র।
এদিকে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে নিধি। আর সমানে অভ্র কে বকে চলেছে।
~কেমন খচ্চর, অসভ্য, খবিশ, বাজে লোক একটা।।।
ফোন করে একটা সরি পর্যন্ত বলল না। আজকে আমি সময় করে ফোন দেইনি সেটা তার চোখে পড়েনি? নাকি আমি ফোন না দেওয়াতে বেশ খুশি হয়েছে? হবেই তো খুশি আমার থেকে মুক্তি পেলেই তো উনি বেচে যান। আর কোনোদিন কথা বলবো না আমি দেখে নিয়েন,,,,, ফাজিল, বদমাশ, খ,,,,
ক্রিং,ক্রিং,
ফোন বাজার সাথে সাথে রিসিভ করে ফেললো নিধি,
কিন্তু কোনো কথা বললো না। অপরপাশের ব্যাক্তি ও কিছু বলছে না। শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
~ নিধি!!
~ ( এতো আবেগ নিয়ে ডাকটা শুনে নিধি চমকে উঠলো পুরো শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। ) না চাইতে ও মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো ,,,,, হুঁ??
~ খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাইনা? আই এম রিয়েলি সরি।। আমার তোমাকে এতটা বাজে কথা বলা ঠিক হয়নি ক্ষমা করে দাও প্লিজ।।
নিধির ভীষণ কান্না পাচ্ছে।। অভ্রর মোলায়েম কণ্ঠ শুনে জমানো কান্নাটা যেনো উপছে পড়ছে ।কান্নার জন্যে কিচ্ছু বলতেও পারছে না।।।
ফুফানোর আওয়াজ পেয়ে,,,, নিধি তুমি কাদঁছো?? প্লিজ কেঁদোনা। আর কখনো তোমার সাথে এভাবে কথা বলবো না। প্লিজ প্লিজ কেঁদোনা।
~ (কান্নামাখা কণ্ঠে ) আপনি স্যরি কেনো বলছেন? আপনি তো যা যা বলেছিলেন একদম ঠিক বলেছিলেন।। আমি আপনাকে খুব ডিস্টার্ব করি,, আমি তো বাজে মেয়ে।
~ নিধি প্লিজ দেখো ওগুলো আমি রাগের মাথায় বলেছি মন থেকে বলিনি। প্লিজ তুমি মণ খরাপ করোনা।
~ তারমানে আমি ফোন করা তে আপনি ডিস্টার্ব ফিল করেন না? আমি পিছনে পিছনে ঘুরলে রাগও করেন না?
~ সেটা কখন বললাম?
~ মাত্রই তো বললেন। যা যা বলেছেন সেগুলো আপনার মনের কথা নয়। তারমানে আপনার কাছে আমার কাজগুলো ভালো লাগে। ( খুশি হয়ে )
~ আমি একদমই তা মিন করিনি।
~ ওহ তার মানে যা যা বলেছেন সব ঠিক তাইতো? সব আপনার মনের কথা।
~ আরে নিধি আমি বলছি….
~ আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না।। ফোন রাখছি আমি। আর কখনো আপনার সাথে কথা বলবো না।
~ আরে দাঁড়াও দাঁড়াও। আমি সরি বললাম তো।।
~ কে চেয়েছে আপনার কাছে সরি শুনতে?
~ আচ্ছা?? তুমি আমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলে না?
~ নিধি থতমত খেয়ে গেলো। কে আপনার ফোনের অপেক্ষায় বসে ছিলো?
~ তুমি।
~ মোটেই না।
~ একদম ই তাই। তা না হলে রিং হওয়ার সাথে সাথে রিসিভ করতে না।
~ নিধি এবার মিইয়ে গেলো ধরা পরে যাওয়া চোরের মতো।।। নিজেকে নিজে আচ্ছামত বকলো।
~ কি?? ঠিক বলেছি তো?
~ দেখুন আপনি…
~ তুমি,,, তুমি করে বলো।
~ ( নিধি হেসে দিলো ) আমার তুমি বলা ভালো লাগে বুঝি?
~ আব… হ্যাঁ, না মানে আগে তো তুমিই বলতে তাই বললাম। আর আমি আবারও আমার ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইছি প্লিজ রাগ করে থেকো না।
~ আচ্ছা তোমার উপর আমি একটুও রেগে থাকবো না। তুমিতো আমার জান। রেগে থাকা যায় নাকী? আজকে তো তুমি ফোন দিলে,, কালকে থেকে সময় মট আমি ফোন দিব।কাল ক্যান্টিনে দেখা হচ্ছে।। এখন আমি ঘুমাতে গেলাম টাটা।।।উম্মাহ (😚) ফোন কেটে দিলো।
অভ্র হতভম্ব হয়ে গেছে। এই মেয়ে কি ধাতুর তৈরি?? সরি বলাতেই আগের ফর্মে ব্যাক করে ফেলেছে। অভ্র আপন মনে হাসলো। পরমুহূর্তেই আরশি আর সূর্যের কথা মনে পড়তেই গম্ভীর হয়ে গেলো।।।
#চলবে