উপন্যাস :হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে।
কলমে:চন্দ্রা।
পর্ব:০৩
চৌধুরীর বাড়ির অন্দর মহলে জনসংখ্যা বেশী না হলেও সবসময় সেটা মুখরিত থাকে জনসমাগমে। বাড়ির গিন্নিদের মিশুকে স্বভাবের কারণে অন্য বাড়ির মহিলাদের যাতায়াত ছিলো অবাধে।কেউ বলতে পারবে না যে, চৌধুরী গিন্নির কাছে কেউ কিছু চেয়ে আজ পর্যন্ত খালি হাতে ফিরেছে।
আজ চৌধুরী বাড়ির অন্দর মহলে প্রায় শখানেক আত্মীয় স্বজনদের ভিড় কিন্তু এত মানুষের ভিড়েও নিস্তব্ধ অন্ধকার পুরীতে পরিনত হয়েছে আলোয় ঝলমলে প্রাসাদটি।কারো মুখে কোন কথা নেই।শিশুরা পর্যন্ত তাদের স্বভাবসুলভ চিৎকার চেঁচামেচি করতে ভুলে গিয়েছে। অন্নপূর্ণা দেবী কতক্ষন বিলাপ করে কেঁদে কেঁদে এখন শান্ত হয়ে গিয়েছেন। প্রভাকর চৌধুরী আরাম কেদারায় চোখ বুজে পরে রয়েছেন। নিকটাত্মীয় যারা রয়ে গিয়েছেন তাঁরাও বিমর্ষ।মামি শাশুড়ির পায়ের কাছে বসে নিঃশব্দে চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছে জয়া।
অন্নপূর্ণা দেবী বললেন জয়াকে, এখানে বসে কাঁদলে চলবে না মা, মেয়েটার কাছে যা।ক্ষয়-ক্ষতি যা হওয়ার,তা তো ওরই হলো।ওকে একটু সামলা মা।
রিতি কাউকে কাছে যেতে নিষেধ করেছে মামিমা,এই বয়সে এমন প্রত্যাখ্যান কেউ সইতে পারে?পাথর হয়ে গেছে মেয়েটা।গলা ধরে আসে জয়ার।
আজ পূর্ণিমা।গগনে চাঁদ তারার মেলা।বড় সাইজের জানালার কাঁচ ভেদ করে একফালি চাঁদের আলো পরেছে রিতির মুখে। পুরোনো আমলের কালো কুচকুচে আব্লুস কাঠ নির্মিত পালঙ্কের পায়ার সাথে হেলান দিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে সে। কোলের উপর ডান হাতে ধরা স্বামী প্রদত্ত চিঠি খানি।বার কয়েক পড়েছে । কিন্তু অনুভূতি একই রকমের।যন্ত্রনা একটু কমও না বেশীও না।এই ঘড়ের শুধু পালঙ্কটাই একটু পুরোনো আমলের ।অন্যসব জিনিস, আসবাবপত্র গুলোর প্রতি পরোতে পরোতে আধুনিকতার ছোঁয়া।রূপ নিজে পছন্দ করে একেকটা জিনিসপত্র এনে সাজিয়েছে নিজের ঘড়টা।
নিজেদের খামার বাড়ি থেকে টাটকা গোলাপ, রজনী গন্ধা, গাঁদা,ডালিয়া এনে ফুলসজ্জার জন্য সাজানো হয়েছে পুরো ঘড়টা।কেউ কি এই ঘড়খানা সাজানোর সময় ভেবেছিলো এখানে আজ সুখের আর্তনাদের চেয়ে বিরহের অন্তর যাতনা বেশী হবে?বুঝলে হয়তো এমন ভাবে রিতির বিরহের চিতার আগুনে কেউ ধুপ ছিটাতো না।উঠে দাঁড়ায় রিতি।শরীরটা ভীষণ ভারী ভারী লাগছে তার ।গা ভর্তি নতুন পুরোনো মিশেলে ভরি সাতেক সোনার গহনা। বৌভাতের বেনারসী এখনো সাপের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে আছে শরীরে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বেডের সাথে লাগোয়া ছোট টেবিলের সামনে। দামী ফ্রেমে রূপের হাস্যরত ছবিটা জ্বল জ্বল করছে।হৃদমোহিনী চাহনিতে তোল- পাড় হয়ে যায় রিতির ভিতর বাহির। বেশীক্ষণ সেদৃষ্টি সইতে পারেনা সে।মুখটাতে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়।এযেনো শুধু ছবি নয় রক্তে মাংসের সাকার মানুষটা। এতক্ষণে সংযমের বাঁধ ভেঙে মনের দুকূল ছাপিয়ে জল গড়ায় গন্ডোদেশ বেয়ে।বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলে রিতি,
ক্ষমা করো আমায়।আমিই লোভের বশে নিজের সীমাটা ভুলে গিয়েছিলাম।বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়িয়েছি।তাইতো হাতের সাথে মনটাও পুড়ে ছারখার হলো। কিন্তু একবার সমনে দাঁড়িয়ে কথা বলে দেখতে ,অতটাও অবুঝ আমি নই।মেয়েরা যে অতি অল্প বয়সে অনেক বেশি পরিনত হয়।সামনে দাঁড়িয়ে শুধু মুক্তি ক্যানো একবার চাইলে প্রাণটাও হাসতে হাসতে দিয়ে দিতাম।কতটা উঁচুতে তোমার আসন পেতেছি তুমি যদি জানতে তাহলে নিজেকে এভাবে ছোট করে যেতে না আমার কাছে। তোমার অপমান যে,বিষের ছোবল মারছে আমার বুকে।তুমি কারো কাছে কমিটেড এটা আমাকে ক্যানো বললে না?তাহলে তোমাকে দেশান্তরী হতে হতোনা। নিজের জন্য যত্ন করে ঘড় সাজিয়েছো সেই ঘড়ে আমিই তোমাকে বাস করতে দিলাম না,এই অপরাধ বোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাবে। কতকিছুই বলার ছিলো,একটি বার সুযোগ ক্যানো দিলেনা বলো?যে কথা গুলো বলার সময়টুকু আমাকে দিলে না সেই কথাগুলো শোনার জন্য একদিন মরিয়া হয়ে উঠবে তুমি কিন্তু সেদিন আমি কিছুই বলবোনা । কিছুই না। সেদিন কিন্তু কাঠিন্যের অপবাদটা আমায় দিতে পারবেনা।
চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ায় রিতি। নিজেকে শান্তনা দেয়,যে তার নারীত্ব কে অপমান করে, সামান্য বালিকা ভেবে মানসম্মান পদদলিত করেছে তাঁকে ভেবে চোখের জল ফেলবে না।
পরেরদিন,
সূর্যটা সবে পূব আকাশে ডগমগে হয়ে উঠেছে।শশীশেখর হালদার প্রবেশ করলেন চৌধুরী বাড়ির মূল ফটক দিয়ে।এবাড়িতে সবাই এখনো জাগেনি। ভেতরে বসার ঘড়ের দামী ঝারবাতিটা জলছে তখনো।জয়া উঠে সবে চুলোয় চায়ের জল চাপিয়ে অন্নপূর্ণা দেবীর ঘড়ের দিকে যাচ্ছিলো।অন্দর মহলের দরজায় দাদুকে দেখে থমকে দাঁড়ায়।এক রাতেই মানুষটার চেহারায় আমূল পরিবর্তন এসেছে ।মুখটা বিভ্রান্তি আর কাঠিন্যে থমথম করছে।জয়ার বুকটা কেঁপে ওঠে আসন্ন ভাঙনের আশঙ্কায়।দ্রুত এগিয়ে গিয়ে নতজানু হয়ে প্রণাম করে ঠিকই কিন্তু অন্যদিনের মতো দাদু আজ মিষ্টি হেসে আশির্বাদ আর শুভকামনার ফুলঝুরি ঝরালেন না।শুধু জয়ার নত মস্তকে কাঁপা কাঁপা ডান হাতটা ছোঁয়ালেন।
সামনে এগিয়ে সোফায় বসতে দিয়ে জয়া ছুটলো মামা -মামীর ঘড়ে।
সকাল নয়টা ,
চৌধুরী মহলের বসার ঘরে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। কোনো কথা বলেই মানানো যায়নি শশীশেখর বাবুকে। তাঁর মুখায়াবয়বে এমন ক্রোধ আগে কেউ কখনো দেখেছে বলে মনে হয়না। তিনি কারো কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে প্রভাকরকে শুধু বললেন,তোমাকে তো আমি আগেই বলেছিলাম ছেলের মতামত নাও। আমার দিদিভাইয়ের সুখের সাথে আমি কোন কিছুই সওদা করতে পারবো না। কিন্তু এটা কি করলে তুমি ?কি করে গেলো তোমার ছেলে? বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলে তোমরা?এই বৃদ্ধ বয়সে সারা জীবনের লজ্জায় ফেললে আমাকে।কোনমুখে দাঁড়াবো মেয়েটার সামনে বলো?গলা ধরে আসে তাঁর। অসহায়ের মত আধো মুখে দাঁড়িয়ে আছেন প্রভাকর রায় চৌধুরী। ছেলের বৌয়ের এই পরিনতিতে তিনি বিচলিত কি না জানি না তবে ছেলের যে মৃত্যু যোগ রয়েছে সে চিন্তায় তিনি শংকিত। অন্নপূর্ণা দেবী কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করছেন বারবার,রিতিকে যেনো নিয়ে না যায়।এবাড়িতে তার কোনো অযত্ন হবে না। মেয়ের মতোই থাকবে।শশীশেখর বাবু জানেন কথাটা কতখানি সত্য তথাপি তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল, কিছুতেই আর এবাড়ির সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবেন না তিনি। কিছুতেই প্রাণাধিক দৌহিত্রীকে এখানে রেখে যাবেন না। তবে শর্ত দিয়েছেন রিতি যদি কখনো নিজে থেকে আসতে চায় এবং রূপ যদি তার ভুল স্বীকার করে রিতিকে মন থেকে সন্মান দিয়ে ফিরিয়ে আনে তবেই সে এবাড়িতে আসবে নয়ত না।
রিতির নিরাভরণ বেশভূষায় দিকে তাকিয়ে জয়ার বুকটা ভেঙে আসে। গতকাল এমন সময়ও মেয়েটার চোখে কত রঙিন স্বপ্নের অনুভূতি ছিলো।আজ সেখানে সর্বহারা নিঃসঙ্গতা।
এমন করিস না বোন আমার।আমরা কি তোর কেউ নই? কান্নায় কন্ঠ রোধ হয়ে আসে জয়ার।যখন এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিল তখন কতটুকুই বা বয়স রিতির। ছটফটে স্বভাবের ছোট মেয়েটি যতটুকু সময় এবাড়িতে থাকতো বৌদিদি বৌদিদি করে পাগল করে ছাড়তো।সেই প্রাণোচ্ছল, চঞ্চল মেয়েটার জীবনে এমন ঝড় আসবে কখনো কেউ ভেবেছে কি?
বউদিদি,তোমরাই আমার সব। তিনি কেউ হননা আমার।আগে যেমন ছিলাম এখনো তেমনি থাকবো।বৌদিদি ডাকটাই ভালো।দিদি ভাই আর ডাকা হলোনা। কিন্তু এখানে থাকতে বলোনা। নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাবো তাহলে। তুমি কি চাও তোমার ছোট বোনটা আত্ম মর্যাদা হারিয়ে এখানে পরে থাকুক? তাঁর কোনো দোষ দেওয়ার স্পর্ধা নেই আমার।তিনি বিদ্বান, বুদ্ধিমান ব্যক্তি।যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে মঙ্গলময় হবে সবার জন্য।
সকালে যে গহনা গুলো শরীর থেকে খুলে রেখেছিলো সেগুলো জয়ার দিকে দিতে দিতে স্বাভাবিক ভাবেই কথাগুলো বললো রিতি।
আঁচলে চোখ মুছলো জয়া। কিইবা বলার আছে তার।কে শুনবে তার কথা । ছোট ভাইয়ের চেয়েও যাকে অধিক স্নেহ দিয়ে এসেছে সে ই এমন কাজটা করলো?
দুহাতের আজঁলাতে রিতির মুখখানি বন্দী করে বললো,এমন লক্ষী প্রতিমার মতো মুখখানি যার চোখে পড়লো না,অনাদরে পায়ে ঠেললো তাকে বুদ্ধিমান বলিস না দিদি।সে যে চরম মূর্খ , একদিন তা হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
হাতে শাঁখা পলা, সিঁথিতে সিঁদুর লেপ্টে আছে এখনো, সাধারণ একটা সুতি শাড়ি পরে সিঁড়ি দিয়ে নামছে রিতি, পেছনে জয়া বসার ঘরে উপস্থিত সবাই সেদিকেই তাকিয়ে আছে।গতকালও এই ছোট্ট মেয়েটাকে দামী শাড়ি গহনায় অপূর্ব লাগছিলো।আজ সে জ্যোতিটুকুও ম্লান হয়েছে।নিরাভরণ রিতিকে দেখে চোখ জালা করে ওঠে শশীশেখর সহ চৌধুরী দম্পতির। রঘুনাথ দৌড়ে এসে রিতির হাত ধরে সিঁড়ির শেষ ধাপটা নামায়,
দাদাভাই, আমি একটুও দূর্বল হইনি জানো?আমাকে হাত ধরে নামাতে হবে না। শান্ত মৃদু স্বরে বলল রিতি।
ছোট বেলায় তুই যখন এবাড়িতে ঘুমিয়ে যেতি,তোকে কাঁধে করে হাঁটু কাঁদার মধ্য দিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসতাম।তখন নিজের সমস্ত ভার আমার উপর ছেড়ে দিতি।এখন ক্যানো দাদা ভাইকে বিশ্বাস,ভরসা করতে পারছিস না বুড়ি(ছোট থেকে বুড়ি বলে ডাকে)।থেকে যা না!মনে আছে একবার পাখির ছানার জন্য কি কান্নাটাই না কেঁদেছিলি? নিজে গাছ বেয়ে তোকে পাখির ছানা এনে দিয়েছিলাম?দাদাভাই আছি তো,ওকে ঠিকই বেঁধে ছেদে নিয়ে আসবো তোর কাছে।
তুমিও এই কথা বলছো দাদাভাই?যে আমাকে চায়না তাকে ধৃষ্ঠতা ক্যানো দেখাবো বলো?ওনার দিকটা কেউ ভাবছো না। আমার মতো অসুন্দর, অশিক্ষিত মেয়েটাকে তাঁকেই গছিয়ে দিতে হলো? তিনি নিজেও কি কম শাস্তি পেলেন বলো? আমার তো তোমারা সবাই আছো আর তাঁর বেলায়?এতদিন একা ছিলেন আজো একাই রয়ে গেলেন। তুমি আমার দাদাভাই ছিলে,আছো,থাকবে সেজন্য কোনো অসাধ্য সাধনের প্রয়োজন নেই তো।
রঘুনাথ বুঝতে পারে একরাতের ব্যবধানে তার ছোট্ট বুড়িটা অনেক বড়ো হয়ে গেছে।
অবশেষে ধূতির খুঁটে চোখ মুছতে মুছতে শশীশেখর হালদার পৌত্রীকে নিয়ে যখন চৌধুরী বাড়ির মূল ফটক দিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালেন তখন ঘড়িতে ঘন্টার কাঁটাটা দশটা ছুঁই ছুঁই করছে।
রঘুনাথ এসেছিলো রিতিকে পৌঁছে দিতে।তার মন ভারাক্রান্ত। মেয়েটাকে স্নেহ দিতে কার্পণ্য করেনি কখনো।তখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রিতি। একবার স্কুলে হাতের লেখা না নেওয়ায় ফলে নতুন স্যার দু ঘা বেত মেরেছিলো ।রিতি কোনো কথা না বলে ছুটে গিয়েছিলো চৌধুরীদের কাছারীতে। রঘুনাথ হিসাব নিকাশ করা অবস্থায় দেখে রিতি ছুটে আসছে।মেয়ে কান্নার দমকে কথা বলতে পারছিলো না। বেশ কিছুক্ষণ পরে যখন কান্নার কারন জানতে পারলো রঘুনাথ তখন কোনো উচ্চবাচ্যটি করলো না বোনকে কোলে নিয়ে সোজা গিয়ে মামীমার কোলে ফেললো।দুই মাসের মাথায় সেই শিক্ষক বদলী নিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলো। কিন্তু বদলীর কারনটা শুধুমাত্র জেনেছিলেন অন্নপূর্ণা দেবী।দিনে দিনে রিতি বড়ো হয়েছে। চৌধুরী বাড়িতে যাতায়াতও কমেছে। রঘুনাথের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ততা বাড়ায় তেমন খোঁজ খবরও রাখতে পারেনি। কিন্তু রাখীপূর্ণিমায় সময় করে রাখীটা নিতে ভোলেনি সে।সেই স্নেহের বোনের এই দুর্দিনে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই রঘুনাথের।শাস্তি যাকে দেবে তার পিঠে বেত্রাঘাত করলে কালসিটে তো নিজের বুকেই পরবে।মামার চোখ ফাঁকি দিয়ে শহরে কাজের কথা বলে কতবার ছুটে গিয়েছে ভাইয়ের কাছে। শুধু একটি বার দেখার আশায়। বিদায়ের সময় চোখে জল ঝরেনি এমন দিনের কথা রঘুনাথ বলতে পারবে না।
লৌহ কাষ্ঠ নির্মিত বড়োসড়ো মাপের চৌরী (চারপাশে বারান্দাযুক্ত ঘড়)ঘড় রিতিদের।প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে বেশ কিছু টাকা খরচ করে এই ঘড়খানি তুলেছিলেন শশীশেখর বাবু।ঘড়ের চারপাশে চারটি বারান্দা।উপরেও শোবার জায়গা আছে। গ্রামবাংলায় এই ঘড়কে দেড়-তলা টিনের ঘড় বলা হয়।
বেশ কয়েকজন মহিলা জড়ো হয়েছে সামনের বারান্দায়। বারান্দার একপাশে পাতা খাটে বসে বিলাপ করছিলেন সুমিতা দেবী।তাকে সান্তনা দিতেই এত মহিলার সমাগম।সান্তনাও দেবেন আবার ফ্রিতে মজাও নেবেন কেউ কেউ।বড় উঠোনের সামনে রিতি দৃশ্যমান হতেই সুমিতা দেবী দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে রিতিকে।রিতি পিসিকে সান্তনা দিতে দিতে এগিয়ে যায় ঘড়ের দিকে। সকলে শোকে কাতর কিন্তু রিতি নির্বিকার। গতকাল থেকে কেউ রিতির চোখে অশ্রু দেখেনি এমনকি ওবাড়ি থেকে আসার সময় ও না।
বারান্দায় উঠে হেসে বলে উঠলো,পিসি,,,ও পিসি,,,,কি হলো তোমার ?কাল চলে গেলাম বলে কাঁদলে আর আজকে ফিরে এসেছি তাতেও কাঁদছো?তোমাকে নিয়ে তো পারিনা।এই দ্যাখো আবার কাঁদে,,আমি কি মা, বাবার মতো পটল তুলেছি যে মরা কান্না কাঁদছো?সুমিতা দেবী রিতির মুখে হাত চাপা দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলেন,মরবে তো তোর শত্তুর (শত্রু)।
কান্না থামাও এবার।কাল থেকে ঘুম হয়নি বুঝলে? এখন একটা লম্বা ঘুম দেবো।বেশ তো পুটে উচ্ছে (ছোট করলা)মেয়েকে বরবটি চিঁচিঁঙ্গার মতো লম্বা চওড়া জামাই দেখে বিয়ে দিলে।মিটলোতো সাধ? এবার আমাকে বেশী বেশী করে বরবটি,চিঁচিঁঙ্গার ঘন্টো রেঁধে খাওয়াবে যেনো কুমড়োর মতো হৃষ্টপুষ্ট হতে পারি বুঝলে।হাসতে হাসতেই বললো রিতি।
সুমিতা দেবী ভেবেছিলেন মেয়েটা হয়তো সইতে পারবে না। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম না ভেবে সস্তি পেলেন খানিকটা।তার অবচেতন মন ভেবে নিলো, বাচ্চা মেয়ে হয়তো ব্যাপার টাকে গুরুত্ব দেয়নি।
পিসিকে শান্ত করে ঘড়ে ঢুকে কপাট দিলো রিতি।সে এখন কাঁদবে। নিজের ভেতরের কষ্ট, অপমান চোখের জলে ধুয়ে সাফ করবে।মন প্রান খুলে কাঁদার জন্যেওতো উপযুক্ত একটা স্থান চাই। কিন্তু কাউকে চোখের জল দেখিয়ে সমবেদনায় উহুরে,, আহারে,,, করতে দেবেনা।
চলবে,,,,
বি:দ্র:লেখাটা সবে শুরু তাই হয়তো এলোমেলো লাগছে তবে ধৈর্য সহকারে সাথে থাকুন সবাই,ধীরে সুস্থে গুছিয়ে নেবো।
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
ভালো থাকবেন সবাই।