প্রাপ্তির_হাসি পর্ব_০৮

0
2771

#প্রাপ্তির_হাসি
#পর্ব_০৮
DI YA

হসপিটালে অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছি আমি। অপারেশন শুরু হওয়ার ২ ঘন্টা হতে চললো। এখনো কিছু জানা যায়নি। অন্য দিকে আন্টি ও অজ্ঞান হয়ে পাশের কেভিনে রয়েছে। ডাক্তার ইনজেকশন পুশ করেছে আর বলেছে জ্ঞান ফিরতে ৫ ঘন্টা সময় লাগবে।তখন আন্টির ফোনে একটা লোক কল করে বলেছিল,

যার ফোন থেকে উনি কল করেছে। তার এক্সিডেন্ট হয়েছে। প্রচুর কারাপ অবস্থা তার – লোকটি

আন্টি তো এটা শোনার সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে।আমি আন্টির কাছে থেকে ফোন নিয়ে লোকটার সাথে কথা বলে সব জানতে পারি। তখন আমি বলি,

আপনি প্লিজ দয়া করে উনাকে আশেপাশের কোনো হসপিটালে নিয়ে যান।আর আমাদের তার ঠিকানা টা দেন।আমরা এখনি আসছি – আমি
(লেখিকা দিয়া রোজা)

আচ্ছা ঠিক আছে। আমি উনাকে ********** এই হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। আপনারা জলদি আসেন – লোকটি

আমরা এখনি আসছি – আমি

তারপর আমি গাড়ির চাবি নিয়ে এসে বের হতে যাবো।তখনি আন্টি বলে,

আমিও যাব মা।আমাকে ও নিয়ে চলো। এই আমার শেষ ভরসা।ও না থাকলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো – লিমা আহমেদ

আচ্ছা চলেন – আমি

তারপর আমরা জলদি হসপিটালে চলে আসি।হসপিটালে এসে রিয়ানের এই রকম অবস্থা দেখে আন্টি জ্ঞান হারায়।সত্যি প্রচুর খারাপ অবস্থা রিয়ানের। পুরো শরীর রক্তে মাখামাখি। আকাশি কালারে টিশার্ট ও লাল হয়ে গেছে পুরো। বুঝতে পারছি না কি হবে। কি করবো আমি উপায়ন্তর না পেয়ে আমি বাবাইকে কল করি। তারপর সবকিছু খুলে বলি। তারপর বাবাই বলে,

আচ্ছা ঠিক আছে। তুই টেনশন করিস না মা আমি এখনি আসছি – বাবাই

আচ্ছা – আমি

অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুলে ডাক্তার বেরিয়ে আসেন।আমি এগিয়ে যাই উনার দিকে,

উনি এখন কেমন আছে ডাক্তার ? – আমি

হি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার।কিন্তু মিনিমাম এক মাস উনার বেড রেস্টে থাকতে হবে।কোনোরকম চাপ নিতে পারবেন না। আর পায়ের জখম টা সারতে ও ১ মাসের মত সময় লাগবে। ততদিন উনি একা একা হাটতে পারবে না । এছাড়া নিয়মিত ঔষধ নিলে উনি জলদি সেড়ে উঠবেন – ডাক্তার

থ্যাংক্স ডাক্তার – আমি

তারপর উনারা চলে যায়।রিয়ানকে ও কেবিন রুমে শিফট করা হয়।রিয়ানের কেবিনে ঢুকে আমি তার পাশে গিয়ে বসে তার মাথায় হাত বুলাতে থাকি। জানিনা কেনো আজকে যখন শুনেছি উনার এক্সিডেন্ট হয়েছে তখন বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হয়।প্রচুর ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।মনে হচ্ছিল নিজের খুব কাছের কিছু আমার কাছে থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। হারিয়ে ফেলছি খুব মূল্যবান কিছু একটা।বুঝতে পারছি না কিছু আমি।কেনো হচ্ছে এসব কিছু । মন আর মস্তিষ্ক দুটো দুই কথা বলছে। ইচ্ছে করছে মনের কথা টা মেনে নেই। কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে না। আমি ডিভোর্সী। আর ডিভোর্সিদের সাথে কারো নাম জড়াতে নেই।শুধু শুধু নিজের জন্য সেই মানুষ টার জীবন আমি পারিনা নষ্ট করতে।উহু নেই তো তার কোনো কমতি। তাহলে শুধু শুধু কেনো নিজের জীবনের সাথে তার জীবনটা জড়িয়ে ফেলছি আমি।এর ফল যে খুব একটা সুখকর হবেনা আমার জন্য তা ঠিকই বুঝতে পারছি।কিন্তু কি করবো মনের উপর কি আর কারোর নিয়ন্ত্রণ চলে ?
(গল্পের লেখিকা দিয়া রোজা)

_____

সাত দিন পর,

রিয়ানের জ্ঞান ফেরার দুদিন পর তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।এ সবকিছুতে বাবাই আমাকে হেল্প করেছিল। রিয়ানের বিজনেস টা ও এখন বাবাই দেখাশোনা করছে। আমিই বাবাইকে বলেছি এক মাসের জন্য এই দায়িত্ব টা নিতে।ভাবতে ও অবাক লাগে এই মানুষটির সাথে আমার কোনো রক্তের সম্পর্কই নেই।তবুও কত করে চলেছে তিনি আমার জন্য। সত্যি হয়তো এখনো দুনিয়ায় ভাল মানুষ বেঁচে আছে।রিশাদের বাসা থেকে চলে আসার পর রাস্তায় আমি আনমনে হাটছিলাম। তখনি দেখি এক ভদ্রলোক অজ্ঞান হয়ে পরে আছে রাস্তার এক পাশে।যেহেতু চলতি রাস্তা সেহেতু প্রচুর মানুষ জমে গিয়েছিল সেখানে।কিন্তু কেউ উনাকে হসপিটালে নিয়ে যায়নি। পরে আমি কিছু লোকের সাহায্যে উনাকে হসপিটালে নিয়ে যাই।তারপর উনি ঠিক হওয়ার পর আমি উনার সম্পর্কে জানতে পারি দুনিয়ায় আপন বলতে কেউই নেই উনার একাই থাকেন। সেদিন ড্রাইভার আসতে লেট করেছিল। আর জরুরি মিটিং থাকায় রাস্তায় আসেন অন্য গাড়ির খোঁজে। সেখানেই বিপি লো হয়ে সেন্সলেস হয়ে যান। তারপর আমার সম্পর্কে জানতে চান। আমিও আমার বিষয়ে সব খুলে বলি উনাকে। তারপর উনি আমাকে প্রস্তাব দেয় উনার সাথে উনার মেয়ে হয়ে থাকার জন্য। যেহেতু আমি একা, আপন বলতে কেউই ছিল না সেই সময় পাশে দাঁড়ানোর। তাই আমি রাজি হয়ে যাই উনার প্রস্তাবে।বাসা থেকে যাওয়ার সময় নিজের পরীক্ষার রেজাল্ট গুলো নিয়ে এসেছিলাম। সাথে বাকি আরো জরুরি কাগজপত্র। তা দিয়ে বাবাই আমাকে ওখানে এক মেডিকেলে ভর্তি করে দেন।বাবাইয়ের কারণেই তখন চান্স পেয়েছিলাম আমি সময় চলে যাওয়ার পর ও।সত্যিই রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও অনেক মানুষ আপন হয়ে যায়।আর অনেকের সাথে যত আপনই সম্পর্ক থাক না কেন , প্রয়োজনের সময় কাউকেই পাশে পাওয়া যায়না। এটাই হচ্ছে চরম বাস্তবতা মানুষের জীবনের।
~~~~~~~
মাত্র ডিভোর্সের সব কাজ শেষ করে বাসায় আসলো রিশাদ।একটা সাইনের মধ্যে দিয়ে এতবছরের সম্পর্ক এত স্মৃতি এত মূহুর্ত সব এক পলকেই শেষ হয়ে গেলো। একসময় প্রাপ্তির সাথে যা যা করেছিল। এখন সেসব ঘটনা পুনরায় ঘটছে।পার্থক্য শুধু এখন প্রাপ্তির জায়গায় রিশাদ নিজে রয়েছে। কি যে হবে এরপরে সে বুঝতে পারছেনা। নিয়তি এখন তাকে এমন একটা জায়গায় এনে দাড় করিয়েছে। না পারছে এসবকিছু সহ্য করতে। আর না পারছে কিছু করতে।রিশাদ বুঝতে পারছে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে এখন।চাইলেও আর কিছু করা সম্ভব নয়।ভাগ্য এখন তাকে যেভাবে চালাবে তাকে সেভাবেই চলতে হবে।

““““““`

মিস্টার রিয়ান সমস্যা কি আপনার ? খাচ্ছেন না কেনো এখনো? স্যুপটা তো ঠান্ডাই হয়ে যাবে। তখন খেয়ে কি হবে বলেন দেখি ? – আমি

আমার হাত ব্যাথা আমি খেতে পারবনা। – রিয়ান

ভাল আন্টি পাপার তো হাত ব্যাথা তুমি যেভাবে আমাকে খাইয়ে দেও পাপাকে ও সেই ভাবে একটু খাইয়ে দাও না প্লিজ – রিয়ানা

রিয়ানার কথা শুনে আমি নিশ্চুপ।

তোমার ভাল আন্টি হয়তো চায়না আমি জলদি সুস্থ হই৷তাই তো খাইয়ে দিতে চাচ্ছে না। যাকগে ছাড়ো আমি এভাবেই থাকি – রিয়ান

দেখি মুখ খুলুন। আমি খাইয়ে দিচ্ছি – আমি

সত্যি – রিয়ান

হুম – আমি

তারপর ধীরেধীরে পুরো স্যুপটা রিয়ানকে খাইয়ে দিলাম।হঠাৎই নিচে থেকেে চেচামেচির আওয়াচ শুনে নিচে যেতেই দেখি সিমা এসেছে সাথে কিছু পুলিশ।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কেনো এসেছে সে।

অফিসার রোজ রোজ একজন ভদ্র মানুষের বাসায় পুলিশ আসা কেমন কথা বলেন দেখি ? – আমি

কিসের ভদ্রলোক আমি রিয়ানার মা আমি ওকে নিয়ে যেতে চাই – সিমা

রিয়ানা তুমি কি ওই আন্টির সাথে যাবা নাকি আমাদের সাথে তোমার পাপার সাথে থাকবা ? – আমি।।

আমি ভাল আন্টি আর পাপার সাথে থাকবো। ওই পচা আন্টির কাছে আমি যাবনা- রিয়ানা

দেখেছেন অফিসার। দ্বিতীয় বার আর এখানে আসলে কিন্তু আমি আপনাদের নামে মামলা করতে পিছপা হবনা – আমি।

সরি ম্যাম – বলে অফিসার রা বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে🥰
রিচেক করা হয়নি সরি।ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন হ্যাপি রিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here