রহিবে মনের গহীনে পর্ব-০৯

0
1908

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_০৯
#Nishi_khatun

সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে তবুও ড্রাইভার গাড়ি ছাড়ছে না। তা দেখে অরিন বিরক্তিকর ভাবে বলে ওঠে,
–“আঙ্কল সমস্যা কী আপনার? গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছেন না কেনো? বাড়িতে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে তো।”

ড্রাইভার বলল,
– “মামুনি ইফান বাবা একটু কাজে গেছে সে এখানে অপেক্ষা করতে বলছে। বাবা আসলেই না হয় আমরা রওনা দিবো কি বলেন?”

অরিনের কেনো জানি ইফানের জন্য অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করছিল না। তা-ই সে ড্রাইভার কে দিয়ে ইফানের কাছে কল করে। ইফান ড্রাইভার আঙ্কল কে বলে
তার আসতে হয়তো আরো আধাঘণ্টার বেশি দেড়ি হবে। তার জন্য অপেক্ষা না করে অরিনকে নিয়ে বাড়িতে চলে যেতে বলে ফোন রেখে দেয়।

বাড়তি কথা না বাড়ানোর জন্য অরিনের কেন জানি খুব রাগ হলো। তা-ই সে গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভার কে বলল-
“আঙ্কল আমি বাসে চলে যাচ্ছি। আপনি ইফান কে সাথে করে বাড়িতে আসেন। আমার পক্ষে এতো সময় অপেক্ষা করা সম্ভব নয়।”

কিন্তু মামুনি তোমাকে তো বাবাই বাড়িতে নিয়ে যেতে বলছে। সে যদি জানতে পারে তুমি একলা চলে গেছো তাহলে খুব রাগ করবে।

অরিন ড্রাইভার কে আশ্বস্ত করে যে,আমি একলা গেলে তাতে উনি রাগ করবেন না। আসলে রাগ করার মতো তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তা-ই আমার জন্য আপনাকে কিছু বলবে না সমস্যা নেই।”

ড্রাইভার আর কি বা বলবে? সে ইফানের কাছে চলে যায়। এদিকে অরিন বাসে করে বাড়িতে চলে আসে।

বাড়িতে আসতেই জিনিয়া নানারকম প্রশ্ন করতে শুরু করে দেয়। কেনো অরিন একলা এসেছে! রাস্তায় যদি কোন বিপদআপদ হতো তখন কে দেখতো? আজ ইফান আসুক ওর একদিন তো তার একদিন।

অরিন বুঝতে পারছে তার এভাবে একা আসাতে জিনিয়া মোটেই সন্তুষ্ট নয়।
সে তখন বলে,
–“ইফান ব্যস্ত তার আসতে দেড়ি হবে তা-ই আমি নিজেই একা চলে এসেছি। তাছাড়া ঐ গাড়িটা আপনাদের সুবিধা মত ব্যবহারের জন্য। আন্টি আমি গাড়িতে একা এসে আপনার ছেলেকে কোন সমস্যায় ফেলতে চাই নি। তাছাড়া আপনারা আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকবো।
এর থেকে বেশি কিছুর দরকার নেই।”

অরিনের এই সমস্ত কথা শুনে জিনিয়া জোড়ে ধমক দিয়ে বলে,”বেশি কথা শিখেছ তা-ই না? থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো। কিছুদিন ধরে দেখছি কেমন পর পর শুরু করেছ। এসব কোন ধরণের কথা। তুমি এটা ভুলে যেওনা এ বাড়িতে আমার যেমন অধিকার আছে ঠিক তোমারো তেমন অধিকার আছে। সময় আসতে দাও তুমি প্রকাশ্যে তোমার অধিকার গুলো পাবে। ততোদিন না হয় আমাদের মেয়ে হয়ে থাকো? তুমি আমার পর কেউ না এ কথা কেনো বুঝতেও চাইছো না? তোমার প্রতি আদরযত্নের কোন ত্রুটি তো রাখছি না আমরা। তোমার জন্য নিজের ছেলের সাথে খারাপ ব্যবহার করি যাতে তুমি কষ্ট না পাও। তারপর ও তুমি আমাদের আপন ভাবতেই চাইছো না?”

অরিন জিনিয়ার কথা শুনে চুপচাপ মাথা নিচু করে থাকে। আসলে জিনিয়ার কোন কথার উওর তার কাছে নেই। কি বলবে সে?

জিনিয়া আর কিছু না বলে বলল,
– “রুম যাও ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো খাবার খাবে।
মুখটা শুকিয়ে গেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে পেটে প্রচুর খুধা তোমার।”

অরিন মাথা নাড়িয়ে সোজা উপরে চলে যায়। আসলেই তার প্রচুর খুধা লেগেছে।

একটুপর ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে খাবার খেয়ে আবারো রুমে ফিরে যায়।

এদিকে ইফান বাড়িতে ফিরে সোজা অরিনের রুমে চলে যায়।

অরিন তখন রুমে বসে ফোনে কথা বলছিল সে জানে না তার রুমে সে ছাড়া আরো একজন আছে।

–হ্যালো ভাইয়া জানো আজকে আমার কলেজের প্রথম দিন ছিলো। উফফফফফ সেই এক্সাইটেড ছিলাম আমি। তোমার কাছে যেমনটা গল্প শুনতাম তার থেকে বেশি অনুভূতি কাজ করেছে আমার।

আলহামদুলিল্লাহ্‌ তাহলে ভালো বনু! তুই ভালো থাকলেই আমরা খুশি। আমাদের থেকে এতো দূরে আছিস তার জন্য সারাদিন এমনিতে আমাদের টেনশন হয় তোকে নিয়ে।

–ডোন্ট ওয়ারি ভাইয়া! তোমার বোন নিজের খেয়াল নিজে রাখতে জানে। আমার কোন অভিভাবকের দরকার নাই। নিজের অভিভাবক আমি নিজেই।

এমন সময় ইফান অরিনে হাতের ডেনাতে খুব শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়।হঠাৎ এমন জোড়ে টান পড়াতে অরিনে মুখটা ইফানের বুকের মাঝে আবদ্ধ হয়ে যায়। হাতে থাকা ফোনের অপরপাশে থেকে হ্যালো হ্যালো আওয়াজ ভেসে আসছিল। সেই কলটা ইফান ডিসকানেক্ট করে দেয়।

এলোমেলো চুল গুলো মুখের সাথে লেপ্টে ছড়িয়ে আছে। তার ফাঁকে দিয়ে ইফানের চেহারা দেখে অরিনের খুব ভালো লাগছিল। নিজের কাছের মানুষের কাছে থাকতে কার না ভালো লাগে? অরিনের মধ্যেও ঠিকি সেই অনুভূতি কাজ করছিল।
তবে ইফানের চোখে চোখ পড়তেই সে অনুভূতি গুলো উধাও হয়ে গেছে। বেচারার চোখ জোড়া লাল টকটকে হয়ে আছে। এখুনি মনে হয় রক্ত গড়িয়ে পড়বে।

অরিন নিজেকে ছাড়াতে ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। তবে ইফান দুই হাত দিয়ে অরিনকে আবদ্ধ করে রাখে নিজের বুকের সাথে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে। অরিনে দমবন্ধ হয়ে আসার অবস্থা।
ইফান অরিনের কাঁধের চুল গুলো সরিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে দাঁতের উপর দাঁত কিটমিট করে বলে,”তোমার খুব বার বেড়েছে তাই নাই? কোন সাহসে আমার কথা অমান্য করো? কে দিয়েছে এতো সাহস তোমাকে? বেশি পণ্ডিতি করো কোন অধিকারে?”

অরিন ইফানের পায়ের উপর জোড়ে লাথি দিয়ে দেয়। এতে করে ইফান আহ করে ওঠে। তবুও অরিন কে নিজের কাছ ছাড়া করে না।

অরিন তখন জোড়ে জোড়ে বলে,”কোন অধিকারে আপনি আমাকে এভাবে স্পর্শ করে আছেন? আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন তারপর না হয় আমাকে প্রশ্ন করতে আসবেন। ”

অরিনের মুখে অধিকার কথাটা শুনে ইফান অরিন কে ছেড়ে দেয়।

ইফানের কাছ থেকে ছাড় পেতেই অরিন ইফানের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বলে,” আমার উপর আপনার কোন অধিকার নেই। না আছে আপনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক তাই দয়া করে নেক্সট টাইম আমার কাছে জবাবদিহিতা চাইতে আসবেন না। আপনার সকল প্রশ্নের উওর দিতে বাধ্য নই। এবার আমার রুম থেকে আসতে পারেন।হুট হাট একটা মেয়ের রুমে প্রবেশ করাটা আপনার শোভা পাই না স্যার।”

ইফান রেগে বলে,”আমাদের বাড়িতে থাকছো, খাচ্ছ, পড়ছো, তার জন্য বাধ্য তুমি সকল প্রশ্নের জবাব দিতে।”

অরিন তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”কথা ছিলো আপনার সাথে যাবো আসবো। যেখানে আপনে আসবেন না সেখানে আপনাদের প্রয়োজনীয় গাড়িটা নিজের জন্য ব্যবহার করাটা আমার আত্মসম্মানে বাঁধছিল তা-ই আসি নাই আপনার গাড়িতে।একা এসেছি এবার পেয়েছেন উওর আসতে পারেন।”

ইফান রেগে অরিনের রুমের বাহিরে যেতেই অরিন ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দেয়।

ইফান আরো বেশি রেগে নিজের রুমে এসে সব কিছু এলোমেলো করে রাখে। নিজের চুল নিজেই টানাটানি করছে। কিন্তু কেন এতো রাগ কাজ করছে তা সে বুঝতে পারছে না। অরিন তাকে এভোয়েড করছে তাতে ইফানের কেন বাধছে? সে তো অরিন কে পছন্দ করে না। তাতে কি হয়ছে? অরিন ইফানের দাঁয়িত্ব। মেয়েটা ছোট নিজের ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা তার এখনো হয়নি। যে দিনকাল পড়েছে তাতে মেয়েদের একা বাহিরে চলাফেরা করা উচিৎ না। আর অরিন কেনো যে বুঝতে চাইছে না তা-ই মাথায় কাজ করে না।

অরিন দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে বসে পড়ে।
হাঁটু ভাজ করে তাতে মুখ গুঁজে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। কিছুসময় অতিবাহিত হবার পর চোখের পানি মুছে মুচকি হাসি দিয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে জিনিয়ার কাছে চলে আসে।

জিনিয়ার সাথে টুকটাক কথা বলে রাতের খাবার খেয়ে নিজের রুমে আসার পথে একবার ইফানের রুমে উঁকিবুকি দেয়।

তখন হুট করে অরিনের সামনে ইফান এসে দাঁড়াতেই অরিন ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে।

গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে,”আমার রুমের সামনে কি করছো তুমি?”

-আমতাআমতা করে বলে,”আমার রুমে যাচ্ছিলাম আরকি?'”

তোমার রুম তো এদিকে নয় তাহলে এদিকে কেন এসেছো?

জামাই দেখতে জামাই সে আপনি বুঝবেন না স্যার।
তা-ই বলে প্রস্থান করে। এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে থাকে ইফান অরিনের সাথে কথা বলে না অরিন ও ইফানের সাথে কথা বলে না। তবে দুজনে এখন রেগুলার একসাথে যাওয়াআসা করে। তবুও অচেনা মুসাফির তারা দুজনে।

(গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই! নয়তো নেক্সট পর্ব লিখতে আগ্রহ পাবো না! তখন গল্প না পাইলে দোষ আমার না।)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here