আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৪৭

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৪৭

~ ভাইয়া নিধি তো এখনও এলো না। ফোন দিচ্ছি ফোনটা ও তুলছে না। আপনি কি জানেন ও কখন আসবে?
রেহান অভ্র ও বাকি ফ্রেন্ডসদের নিয়ে অডিটোরিয়ামের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলো তখনই নিধির বেস্ট ফ্রেন্ড উর্মি এসে রেহানকে কথাগুলো বললো। রেহান উর্মির কথা শুনে ভড়কে গেলো।
চিন্তিত হয়ে বললো,,
~ এখনও ক্যাম্পাসে আসে নি! সেই সকালে বেরিয়েছে। এতক্ষণে তো এসে পরার কথা।
~ ওয়েট কি হয়েছে? নিধি কোথায় গেছে রেহান? ( অভ্র )
~ আজকে সকালে আসার সময় বললো ওর নাকি বই কিনতে যেতে হবে আজকেই লাগবে । আমি সাথে যেতে চেয়েছিলাম জোর দিয়ে বললো নিজেই আনতে পারবে। তাই আমি আর জোর করি নি। কিন্তু বই কিনতে তো আর বেশি সময় লাগে না এতক্ষণে তো ফিরে আসার কথা।
~ মানে টা কি বই কিনতে গিয়ে একটা জলজ্যান্ত মেয়ে উধাও হয়ে গেলো নাকি ! আর সকালে বের হলে এখন বাজে ১:৩০ টা। ৩-৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। ফোনটা ও তুলছে না। এতক্ষন ধরে আর বই কিনছে না তাহলে গেলো কোথায় নিধি? ( নাহিদ )
~ রেহান নিধি বই কিনতে যেখানে গিয়েছে আমাদের একবার ওদিকে গিয়ে খোঁজ করা উচিত। ( অভ্র )
~ হ্যাঁ তাই করি চল।
~ উর্মি তুমি আরো কয়েকবার নিধি কে কল করো রিসিভ করলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবে। আর ও যদি আমাদের অ্যাবসেন্সে ভার্সিটিতে আসে তখন ও আমাদের ফোন দিয়ে জানাবে কেমন?(অভ্র )

উর্মি মাথা নেড়ে সায় দিলো। রেহান-অভ্র-নাহিদ নিধিকে খুঁজতে বেড়িয়ে পড়লো।
ওরা প্রতিটা দোকানে নিধির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কেউ কিচ্ছু বলতে পারছে না। তাও হাল ছাড়ছে না। আশে পাশের দোকানে ও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এর মাঝেই রেহানার ফোনে কল এলো। নিধি হতে পারে ভেবে নাম্বার না দেখেই দ্রুত কল রিসিভ করলো।
~ হ্যালো নিধি !!! কোথায় তুই? কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি ধরছিলি না কেনো?
~ আমি নিধি আপু নই।
~ তুমি!!!
~ হ্যাঁ। আপনাকে একটা অ্যাড্রেস সেন্ড করছি দ্রুত চলে আসুন। ( কল কেটে দিয়ে )
রেহান এর অজানা ভয়ে বুক কাপছে। একমাত্র বোন তার কোনো বিপদ-আপদ হলো না তো! মেসেজ আসতেই দ্রুত অভ্র আর নাহিদকে নিয়ে রওনা দিলো।

~ আপ্পি তুমি এখানে একা একা কি করছো?
সুজানা ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে এক মনে কিছু ভাবছিলো আরশির গলার আওয়াজ পেয়ে দরজার দিকে তাকালো। আরশি, রোজ আর ন্যান্সি দাড়িয়ে আছে।
~ কিছুনা এমনিই দাড়িয়ে ছিলাম।

ওরা তিনজন এগিয়ে এসে সুজানার পাশে দাড়ালো।
কিছুসম়য় নিরবেই কাটিয়ে দিলো। নীরব পরিবেশে বাজখাঁই আওয়াজে আরশির মোবাইল বেজে উঠলো।
মিহি কল করেছে। আরশি সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফোন লাউস্পিকারে রাখলো।
~ হ্যাঁ মিহি বল।
~ আরশি একটা বড়ো সমস্যা হয়ে গেছে রে।
~ সমস্যা! কি সমস্যা হয়েছে?
~ মা আমাকে ঐ মেয়েটার ছবি দেখিয়েছে। আসলে আমিই দেখতে চেয়েছিলাম।
~ কোন মেয়েটা? কার কথা বলছিস ?
~ য..যার সাথে ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
ম..মেয়েটিকে আমরা ভালোভাবেই চিনি আরশি।।

সুজানা চকিত হয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরশি দ্রুত জিজ্ঞেস করলো,,
~ আমরা চিনি? কে সে?
~ ন..নিধি আপু।
~ হোয়াট!!!
আরশি, রোজ আর ন্যান্সি একসাথে বললো।
~ হ্যাঁ আমিও প্রথমে অনেক অবাক হয়েছিলাম। মা বললো আমাদের বাবারা নাকি বন্ধু। আর সেই সূত্রেই বাবা আর আংকেল মিলে নিধি আপু আর ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করেছে। তারা চাইছে বিয়েটা দ্রুত দিয়ে দিতে।

সুজানা স্তব্ধ হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। গলা শুকিয়ে আসছে ওর। মাহিরের সাথে নিধি!! ভাবতেই বুকের ভেতর মোচড় দিচ্ছে। তারথেকে বড়ো কথা মাহিরের বিয়ে নিয়ে এখনো কথা চলছে। কথা চলছে কি দ্রুত দেওয়ার প্ল্যান করছে । তারমানে কি মাহির ওর বাবার সাথে কথা বলেনি??
আরশি আর কিছু বলতে পারছে না। মেয়েটা যে নিধি হবে তা ওর ভাবনার বাইরে ছিলো। হঠাৎ করে সুজানার কথা মনে পড়লো। ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো এক মনে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।
~ আর আজকে আরেকটা ঘটনা ঘটেছে। ঐ নিধি আপু আমদের…..( আর কিছু বললো না )
~ হ্যাঁ নিধি আপু কি? বল।
~ ( নো রেসপন্স )
~ হ্যালো মিহি ! আর ইউ দেয়ার?
~ ওহ আরশি আমি তোকে পরে সবটা বলবো এখন রাখছি।
~ ঠিক আছে।
আরশি সুজানার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলো। কিন্তু ওর কোনো হেলদোল নেই। আরশি একটা শ্বাস ফেলে ওকে জড়িয়ে ধরলো। সুজানা চুপ করে আরশি কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আরশি টের পেলো ওর কাধের দিকটা ভিজে গেছে। তার মানে সুজানা কাদঁছে। নিরব কান্না। আরশি বুঝতে পারলো সুজানার কষ্ট হচ্ছে যা নিরব কান্না হিসেবে প্রকাশ্যে আসছে। আরশি ওকে বাঁধা দিলো না। কাদুক। স্বাভাবিক হওয়ার পর হয়তো নিজেই নিজের কান্নার কারণ খুঁজবে আর এর ফলে হয়তো মনের কোণে জমে থাকা গোপন ইচ্ছের ব্যাপারে ও জানতে পারবে।

দরজা খুলতেই অভ্র আর রেহান হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকলো। ওদের পিছনে বেশ শান্ত ভঙ্গিতে নাহিদ প্রবেশ করলো। অভ্র-রেহান আশে পাশে তাকিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে খুঁজলো কিন্তু না পেয়ে হতাশ হলো। রেহান ছুটে দরজায় দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার কাছে গেলো। ব্যাস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,
~ নিধি কোথায়? এখানে কি করে এলো ও?
~ আপনি শান্ত হোন। আপু ঠিক আছে। আর আপু ওই ঘরে আছে। ( দ্বিতীয় ঘরটার দিকে ইশারা করে )
কথাটা শোনা মাত্রই অভ্র আর রেহান দৌড়ে ওই ঘরে চলে গেলো। নিধি আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো কারো হুড়মুড় করে ঘরে ঢোকার আওয়াজে বারান্দা থেকে রুমে এলো। রেহান আর অভ্র কে দেখে অবাক হয়ে বললো,,
~ তোমরা! তোমরা এখানে কি করছো?
রেহান নিধির কাছে গিয়ে ওর আপদমস্তক চেক করে নিলো। যখন বুঝলো না কোনো সমস্যা হয় নি তখন আচমকা জোরে ধমকে বললো,,,
~ ঠাটিয়ে মারবো এক চড় বেয়াদব মেয়ে। আমাদের জিজ্ঞেস করছিস আমরা এখানে কেনো? আগে তুই বল তুই এখানে কি করিস? তুই না বই কিনতে গেছিলি? ফোন কোথায় তোর, ফোন তুলছিলি না কেনো? কতবার আমি অভ্র, উর্মি তোকে কল করেছি কোনো হিসেব আছে তোর? কথা বলছিস না কেনো? ফাজিল, বদ মেয়ে একটা।
রেহান রাগে ফুঁসছে। অভ্র এক ধ্যানে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি নাহিদ এলো ঘরে। নিধিকে সুস্থ দেখে রেহানকে টেনে বাইরে নিয়ে এলো। অভ্র এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে নিধিকে দেখছে। ওকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিধি জিজ্ঞেস করলো,,,
~ কি হয়েছে ভাইয়া এতো রেগে আছে কেনো? আমার এখানে আসা নিয়ে নাকি?
অভ্র ধীর পায়ে নিধির দিকে এগিয়ে গেলো। নিধি কিছু বুঝে উঠার আগেই ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আকস্মিক ঘটনায় নিধি হতভম্ব হয়ে গেছে। চোখ বড় বড় করে অভ্রকে দেখছে।
~ অ..অভ্র ভ..ভাইয়া ক..কি করছেন?
~ হুসসস!!! ( ঠোটেঁ আঙ্গুল দিয়ে ) জানো আজকে প্রথমবারের মতো আমার বুক কেপেছে। প্রিয় কিছু হারানোর ভয় জেকে ধরেছিলো আমায়। কেনো বলোতো?? কেনো এভাবে ভয় দেখালে আমায়?
নিধি ফ্যালফ্যাল করে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে।
~ কি হয়েছে ওর? হঠাৎ করে এসব কি বলছে? প্রিয় মানুষ, হারানোর ভয়! কে ওর প্রিয় মানুষ, আমি?
ভনিতা না করে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,,,
~ কি বলছেন অভ্র ভাইয়া? প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলার ভয়? কে সেই প্রিয় মানুষ? আমকে তো আপনি মানুষ বলেই গণ্য করেন না আবার প্রিয় মানুষ ভাববেন! ( তাচ্ছিল্য করে )
অভ্রর চোঁখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে। নিধির কাছে গিয়ে ওর বাহু শক্ত করে চেপে ধরলো। রাগে গজগজ করতে করতে বললো,,,
~ কি বললে তুমি? তোমাকে মানুষ বলে গণ্য করিনা আমি? তুমি জানো যখন শুনলাম তুমি মিসিং, ফোনটা ও তুলছো না তখন কি চলছিলো আমার মনের ভিতর? কতোটা অশান্ত হয়ে উঠেছিলো এই মন, কতো রকমের চিন্তা মাথায় আসছিলো কোনো আইডিয়া আছে তোমার?
নিধি নির্বিকার কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,,
~ কেনো? কেনো চিন্তা হচ্ছিলো আপনার? আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা কেনো করছিলেন আপনি? কে হই আমি আপনার? জাস্ট ফ্রেন্ডের বোন নাথিং এলস, রাইট?
অভ্র নিধিকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। ওর মাথায় নিধির বলা কথাগুলো ঘুরছে। আসলেই তো! ও তো আমার আপন কেউ না। শুধুমাত্র ফ্রেন্ডের বোন। তাহলে ওকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে এতো অস্থির কেনো হয়ে উঠেছিলাম আমি? কেনো বারবার ওর আগের করা পাগলামি গুলো মনে পড়ছিলো, ওর মুখটাই মনে পড়ছিলো বারংবার। কি হচ্ছে আমার সাথে। এসব ভাবছিলো আর মাথার চুল টেনে আশেপাশে তাকাচ্ছিলো। হঠাৎ একটা জায়গায় ওর চোখ আটকে গেলো। নিভু নিভু রাগটা আবার ধপ করে জ্বলে উঠলো।। নিধির দিকে তেড়ে গেলো। চিৎকার করে বললো,,,
~ এই মেয়ে তুমি এই বাড়িতে কি করছো। এখানে কেনো এসেছো তুমি? মাহির ভাই এর ঘরে কেনো তুমি? বিয়ের আগে শ্বশুর বাড়ি কেমন তা দেখতে এসেছো? আবার দেখছি হবু স্বামীর ঘরেই অবস্থান করছো। ( নিধির কাধ ধরে ঝাঁকিয়ে ) বিয়েটা করবে তুমি? বলো এই বিয়েটাতে তুমি রাজি আর সেজন্যেই আজ এখানে এসেছো? তাই না? কথা বলছোনা কেনো? আনসার মি ড্যাম ইট!!!
নিধি অভ্রের হঠাৎ চিৎকারে ঘাবড়ে গেছে। তারউপর অভ্রর এসব কথা নিধির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে অভ্রর চিৎকার শুনে রেহান-মিহি-নাহিদ দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো। অভ্র যা যা বলেছে সবটাই ওরা শুনেছে। মিহির অভ্রর কথা শুনে অবাক লাগছে। এভাবে বিহেভ করছেন কেনো অভ্র ভাইয়া? ও ভিতরে ঢুকতে নিলে রেহান ওর হাত ধরে থামিয়ে দিলো। মিহি রেহানের দিকে তাকালো। বেশ শান্তভাবে সবটা দেখছে। এতে মিহি আরো বেশি অবাক হলো। বোনকে তারই বেস্ট ফ্রেন্ড এতোকিছু বলছে অথচ লোকটার কোনো হেলদোল নেই। ওনার তো রেগে যাওয়ার কথা। রেহানকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,
~ এই আপনি এখানে দাড়িয়ে তামাশা দেখছেন? অভ্র ভাইয়া নিধি আপুকে এসব কি বলছে? ওনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ভাইয়া আর আপুর বিয়ে ঠিক এই ব্যাপারে উনি আগে থেকেই জানতেন। কিন্তু আপনার কথা শুনে তো মনে হলো আপনি আজকেই জানতে পারলেন? কাহিনীটা কি বলুনতো? আর আপনি এতটা শান্তই বা কি করে আছেন?
~ চুপ করে দেখে যাও, নিজেই সব বুঝতে পারবে।
মিহি আবারো কিছু জিজ্ঞেস করতে নিচ্ছিলো তার আগেই রেহান ওকে ঘরের দিকে তাকাতে ইশারা করলো। মিহি আর কিছু না বলে কান পেতে রইলো কি কথা হয় তা জানার জন্য।।।

~ নিধি আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি উত্তর দাও। আমার কিন্তু মাথা গরম হচ্ছে।
নিধি ওর এরোকম রিয়েক্ট দেখে ভড়কে গেছে। আমতা আমতা করে বললো,,,
~ আঙ্কেল এর সাথে এসেছি
~ কে আঙ্কেল? ওহ মাহির ভাই এর বাবা! কেনো ওনার সাথে কেনো এসেছো? তুমিতো বই কিনতে গেছিলে। তারমানে তুমি মিথ্যে বলে এখানে এসেছো?
~ আরে আমি মিথ্যে বলতে যাবো কোন দুঃখে! আমার পুরো কথাটা আগে শুনুন তারপর মন্তব্য করবেন।
~ তো পুরো কথাটা বলছো না কেনো? সঠিক লগ্নের অপেক্ষা করছো নাকি?
নিধি বুঝতে পারলো অভ্র প্রচন্ড রেগে আছে। এখন বেশি কথা বললেই বিপদ।।
~ আসলে আমি যখন বই কিনে ফিরছিলাম তখন________________

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here