আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৪৮

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৪৮

__________________

~ উফফ এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে তারউপর এই জ্যাম!! প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেলো ছুটার নাম নেই। ভাল লাগেনা। ভ্যাপসা গরমে অসস্তি লাগছে। কেনো যে বাড়ির গাড়ীতে এলাম না, ধুরর!!

আর না পেরে রিক্সাওয়ালাকে টাকা দিয়ে নেমে পড়লো নিধি। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো এমন সময় রাস্তার পাশে ফুটপাতের ধারে একটা গাড়ি থামানো দেখলো। পিছনের সিটের দরজা ধরে ড্রাইভার দাড়িয়ে আছে। বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে। নিধি হালকা উকি দিয়ে দেখলো, ভিতরে একজন ভদ্রলোক বুকে হাত দিয়ে চোঁখ বন্ধ করে বসে আছেন। আর কি যেনো বির বির করে চলেছেন। ও পাত্তা না দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো কিন্তু গাড়িটার কাছে আসতেই শুনতে পেলো,,,
~ স্যার আপনার কি বেশি খারাপ লাগছে, হসপিটালে নিয়ে যাবো? ছোটো স্যারকে ফোন দিয়েছিলাম বন্ধ বলছে। বাসায় একটা কল করবো?
ভদ্রলোক হাতের ইশারায় না বললেন। সিটে বসে থাকতে ও ওনার কষ্ট হচ্ছে তাই চোঁখ বন্ধ করেই গা টা এলিয়ে দিলেন। এবারে ড্রাইভার আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলেন। ভদ্রলোককে ঝাঁকাতে শুরু করলেন।
~ স্যার কি হয়েছে? চোখটা খুলুন স্যার!!!
কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। নিধি এবার আর উপেক্ষা করে যেতে পারলো না। গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। আশেপাশে তেমন মানুষজন নেই।
~ ড্রাইভার আঙ্কেল ওনার কি হয়েছে?
ড্রাইভার নিধির দিকে ঘুরে চিন্তিত হয়ে বললো,,
~ অফিসে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করে বুকে ব্যাথা উঠেছে। কেনো এমনটা হচ্ছে বুঝতে পারছিনা। স্যার কথা ও বলছেন না। মনে হচ্ছে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। কি করবো এখন?
~ ওনার বাড়ির লোককে ফোন করুন। আর যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে নিয়ে যান।
~ ছোটো স্যার মানে ওনার ছেলেকে ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু ফোনটা বন্ধ। বাড়িতে ফোন দিতে স্যার নিষেধ করলেন।
~ আচ্ছা তাহলে আগে ওনাকে হসপিটালে নিয়ে যান।
~ হ্যাঁ তাই করতে হবে।
ড্রাইভার কিছুক্ষণ ভেবে ইতস্তত করে বললো,,,
~ আপুমনি যদি কিছু মনে না করেন আপনি কি একটু
বড়ো স্যারকে ধরে বসবেন। শুধু হসপিটাল পর্যন্ত গেলেই হবে। আসলে উনার তো জ্ঞান নেই। গাড়ি চালানোর সময় ওনার সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি একটু ধরে বসতেন। তবে আপনার সমস্যা হলে থাক!

নিধি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,,,
~ এভাবে অপরিচিত কারো সাথে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? কিন্তু উনিতো অসুস্থ্। দেখেতো আমার বাবার বয়সি মনে হচ্ছে। এভাবে ফেলে যাওয়াটা ও তো ঠিক হবে না। কি করবো? ক্লাসের জন্য ও তো লেট হচ্ছে।
শেষে আর কিছু না ভেবে গাড়িতে উঠে পড়লো। ভদ্রলোককে হালকা উঠিয়ে ওনার মাথা টা নিজের কোলে রাখলো। ড্রাইভার ওর দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা মাখা হাসি দিলো। পপুলার হসপিটালে পৌঁছে দুজনে মিলে ধরাধরি করে ভেতরে নিয়ে গেলো। যদিও ড্রাইভার নিধিকে চলে যেতে বলেছিলো, কিন্তু নিধি যায় নি। ডক্টরের সাথে কথা বলে জানতে পরলো ওনার মাইনোর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ড্রাইভার আর নিধি দুজনেই কথাটা শুনে ঘাবড়ে গেলো। ডক্টর বাড়ির লোকের সাথে কথা বলতে চাইছেন। শেষে নিধি বললো ভদ্রলোক ওর পরিচিত।
~ ওনার মাইনর অ্যাটাক হয়েছে। উনি মেবি প্রচুর স্ট্রেসড। এই বয়সে এতোটা স্ট্রেস ওনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খাওয়া দাওয়ার প্রতি ও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আমি চার্ট করে দিচ্ছি সেই অনুযায়ী খেতে দিবেন। ওনাকে সকল প্রকার স্ট্রেস থেকে দূরে রাখবেন এবং রেস্ট নিতে বলবেন। আমি ওষুধ দিয়ে দিচ্ছি সময় মতো খাওয়াবেন আর এক মাস পর চেকআপ করাতে নিয়ে আসবেন।
~ ঠিক আছে ডক্টর। আচ্ছা ওনার জ্ঞান কখন ফিরবে?
~ দ্রুতই গুরুতর অ্যাটাক না হওয়ায় উনি মোটামুটি ভালো আছেন।
কিছুক্ষণ পরেই ওনার জ্ঞান ফিরলে নিধি গুটি গুটি পায়ে ওনার কাছে গেলো। ড্রাইভার ওনার মাথার কাছে দাড়িয়ে আছে। নিধি কেবিনে এলে ওর দিকে ইশারা করে বললো,,
~ স্যার এই আপুটাই আমার সাথে করে আপনাকে এখানে নিয়ে এসছেন। ডক্টরের সাথে কথাও উনিই বলেছেন।
ভদ্রলোক নিধির দিকে তাকিয়ে চমকে গেলেন। ওকে ইশারায় নিজের কাছে ডাকলেন। নিধি এগিয়ে গেলো , উনি বসতে ইশারা করলে জড়তা নিয়েই বেডের কাছে টুলে বসে পড়লো।। নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে ধীর কণ্ঠে বললো,,,
~ তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মা, এভাবে অচেনা অজানা একজন কে সাহায্য করার জন্য।
~ না না আঙ্কেল এতে ধন্যবাদের কি আছে! একজন মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের সাহায্য করাটা তো আমার কর্তব্য। আর সেখানে আপনি তো অসুস্থ ছিলেন।
~ ( মুচকি হেসে ) তুমি ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে। কিন্তু তুমি কি জানো তোমাকে আমি চিনি!
নিধি অবাক হলো এই কথা শুনে ওকে চিনে মানে কি করে চিনে? ও তো ওনাকে আগে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ছে না।
~ আমাকে কি করে চেনেন আঙ্কেল? আমিতো আপনাকে আগে কখনো দেখিনি।
~ তোমার বাবা রায়হান আমার খুব ভালো বন্ধু। তোমাদের সবার ছবি আমি দেখেছি। আমি মাহাদ রহমান।
নিধির নামটা শুনে আবার বাবার ভালো বন্ধু যেনে একটু খটকা লাগছে। তাও হাসি মুখে বললো,,
~ তাহলে তো আপনি সত্যিই আমার আত্মীয়।
মাহাদ রহমান ও হাসলেন। এর মাঝে নার্স এসে জানালো ওনাকে এখন বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে। নিধি বিদায় নিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু মাহাদ রহমান ওকে যেতে দেয়নি। একপ্রকার জোর করে নিজের সাথে বাড়িতে নিয়ে এসছেন। নিধির ভীষণ অসস্থি হচ্ছিলো এভাবে কারো বাড়ি যেতে কিন্তু ওনার মুখের উপর না করতে পারলো না তাই ওনাকে নিয়ে বাড়িতে এলো। ওর ব্যাগটা গাড়িতেই রয়ে গেছে যার ফলে আর কাওকে জানানোর সুজোগ হয়ে উঠেনি।
এখানে আসার পর মিহি কে দেখে ওর সন্দেহ ঠিক প্রমাণ হয়। এটা মাহিরেরই বাড়ি। আর ভদ্রলোক ওর বাবা। চলে যেতে নিয়েও পারেনি লাঞ্চ করে তবেই যেতে পারবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মাহিরের মা। আর কোনো বারণ শুনবেন না বলেছেন। অগত্যা ওকে রাজি হতে হলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো বন্ধ হয়ে গেছে তাই মিহি কে বলেছিলো রেহানকে জানিয়ে দিতে যে ও এখানে আছে।

_________________

সবটা বলে বড়ো বড়ো শ্বাস নিচ্ছে নিধি। অভ্র কিছুটা শান্ত হয়েছে। নরম কণ্ঠে বললো,,
~ ওহ এই কাহিনী।
~ হ্যাঁ এই কাহিনী। আর আপনি তখন থেকে কিসব উলটা পালটা কথা বলে যাচ্ছিলেন।
~ সরি।
~ ইটস ওকে।
~ ওয়েট ইটস নট ওকে। এই বাড়ীতে এসেছো ভালো কথা কিন্তু এই ঘরে কি করছো তুমি?
~ এটাও জানতে হবে আপনার?
~ অবশ্যই জানতে হবে কেনো জানবো না আমি? তুমি এ ঘরে কেনো এসেছো? কি কাজ তোমার এ ঘরে। ( চারপাশে তাকাতে তাকাতে )
নিধি বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,,,
~ আমি পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম আর সেই সুবাদে এই ঘরেও এসছি। এই ঘরের বারান্দাটা ভীষণ সুন্দর। বিভিন্ন ফুল গাছ দিয়ে সাজানো। তাই বারান্দায় দাড়িয়ে গাছগুলো ছুঁয়ে দেখছিলাম এর মাঝেই তো আপনারা এলেন। হয়েছে আপনার প্রশ্ন করা, সবকিছু জানা শেষ? উফফ বাবা আপনি এতো প্রশ্ন করেন না!!!
অভ্র কপাল কুঁচকে বির বির করে বললো,,,
~ হুহু! বারান্দাটা পছন্দ হয়েছে। বিভিন্ন ফুল গাছ দিয়ে সাজানো। ( মুখ বাঁকিয়ে ) কদিন পরে বলবে মানুষটা ও পছন্দ হয়েছে।
গাল ফুলিয়ে রাখলো অভ্র। নিধি অভ্রর কাহিনি কিছুই বুঝতে পারছে না।
এদিকে মিহি একবার রেহানের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার অভ্র-নিধির দিকে তাকাচ্ছে। রেহান হাসি মুখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মিহির কেমন সন্দেহ হচ্ছে। অভ্র ভাই আর নিধি আপুর মাঝে কি কিছু চলছে!! কিন্তু অভ্র ভাইয়া না আরশি কে পছন্দ করতো? তাহলে এসব কি!! আর এই রেহান ই বা কোনো রিয়েক্ট করছে না কেনো? উনি কি সবটা আগে থেকেই জানেন? তাহলে নিধি আপুর বিয়ে ভাইয়ার সাথে! মানে কি হচ্ছে কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না।
ওর ভাবনার মাঝেই কেউ ওর মাথায় টোকা মারলো। নিজের মাথা চেপে ধরে কটমট করে রেহানের দিকে তাকালো। রেহান বাঁকা হেসে বললো,,,
~ এই ছোটো মাথায় এতো বড় বড় ভাবনা এনো না। বেচারা এতো ভার নিতে পারবে না। শেষে হাফ মেন্টাল থেকে ফুল মেন্টাল হয়ে যাবা।।
কথাটা বলে পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে সোফায় গিয়ে বসলো। নাহিদ ও ওর পিছু পিছু গেলো। মিহি চোঁখ ছোট ছোট করে নাক ফুলিয়ে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে।

~ দোস্ত অভ্র তো এক্কেরে পাক্কা খেলোয়াড়!! আমি তো জানতাম আরশি রে পছন্দ করে কিন্তু এখন তো দেখতেছি কাহিনি অন্য? আমারে বল তুই এতো চুপচাপ কা!! কোনো রিয়েক্ট করলি না। তারমানে তুই এইসব জানতি??? ( চোখ বড় বড় করে রেহানের দিকে তাকিয়ে )
রেহান কোনো জবাব না দিয়ে নাহিদের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো জাস্ট। ব্যাস নাহিদের যা বুঝার তা বুঝে গেছে। আর কিছু বললো না।
___________________ ______________________

বাড়িতে ঢুকেই ভ্রু কুঁচকে গেলো সূর্যের। এতো চেচামেচি কেনো!! রিক ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,
~ এরোকম চেঁচাচ্ছে কেনো সবাই? কিছু হয়েছে নাকি?
~ তুই যেখানে দাড়িয়ে আছিস আমিও সেখানেই আছি , তো আমি কি করে জানবো?
~ ইয়াহ ইয়াহ রাইট! ( মেকি হাসি দিয়ে )
সূর্য বিরক্তি নিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। সোফার সামনে সবাই গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে। আরিয়া কাওকে বকে যাচ্ছে। ন্যান্সির হাতে ফার্স্ট এইড বক্স। মাটিতে তাকিয়ে রক্ত মাখা পা দেখতে পেলো সূর্য। কুচকানো কপাল আরো কুচকে গেলো। আর একটু এগিয়ে গিয়ে সোফায় বসে থাকা মানুষটাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। দ্রুত পায়ে সোফার দিকে এগিয়ে গেলো। সবাইকে সরিয়ে রক্ত মাখা পা টা হাতে নিয়ে মাটিতে বসে পড়লো।। ব্যাস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,
~ তোমার পায়ে রক্ত!! কি করে কাটলো? ওহ গড! কতখানি কেটে গেছে।। কি করে হলো এসব? ( চিৎকার দিয়ে )
সূর্যের আকস্মিক চিৎকারে সবাই দু-পা পিছিয়ে গেলো। আরশি কান্না করা বন্ধ করে একরাশ ভয় নিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে।
~ কি করে হলো বলছো না কেনো? কতখানি রক্ত বের হচ্ছে এখনো ব্যান্ডেজ না করে বসে আছো কেনো?

কেউ কিছু বলছে না। রাগে সূর্যের মুখ লাল হয়ে গেছে কপালের রগ ভেসে উঠেছে। আরশি শুধু ঢোক গিলছে। সূর্য ওর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে ন্যান্সির হাত থেকে ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে নিলো।
ব্যান্ডেজ করার ফাঁকে আবার জিজ্ঞেস করলো কি করে কেটেছে পা। আরশি সবাইকে চোঁখ দিয়ে বলতে মানা করছে। কিন্তু আরশ কি আর ওর কথা শোনার ছেলে! গড়গড় করে বলতে শুরু করলো,,,
~ আপু মাটন বিরিয়ানি রান্না করতে গেছিলো। কাটাকুটি করার সময় অসাবধানতায় ছুরিটা ওর পায়ের উপর পড়েছে। ছুরিটা ধারালো হওয়ায় পা বেশখানিকটা কেটে গেছে।
সূর্য কটমট করে আরশির দিকে তাকালো। ধমক দিয়ে বললো,,
~ কে বলেছিলো তোমাকে রান্নাঘরে ঢুকতে? বাসায় কি রান্না করার লোক ছিলো না? তোমাকে বেশি লাফালাফি করতে নিষেধ করেছিলাম না আমি, তাহলে কেনো গেছিলে রাধুনী সাজতে?
~ আ..আমিতো এর আগেও রান্না করেছি। কখনো এরোকম কিছু হয় নি। আ..আজ কি করে হলো কি জা..জানি!! ( কাঁদো কাঁদো গলায় )
~ চুপ একদম চুপ করে থাকো। আগে কি করেছো না করেছো আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না আজকের পর থেকে তুমি আর রান্নাঘরে পা রাখবে না।
~ কি..কিন্তু !
~ কোনো কথা না। আমি যা বলেছি তাই করতে হবে তোমাকে।
আরশি ঠোঁট ফুলিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়া আর অহনা সূর্যের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সুজানা, রিক, রোজ আর ন্যান্সির কাছে সূর্যের ব্যাবহার স্বাভাবিক লাগলেও ওদের দুজনের কাছে এসব নতুন। সুজানা এগিয়ে এসে বললো,,,
~ আরশি রানি আমার সাথে আয় তোকে তোর রুমে দিয়ে আসি। রেস্ট নিবি কিছুক্ষন।
আরশি মাথা দুলিয়ে সুজানার হাত ধরে দাড়াতে যাবে কিন্তু ডান পায়ের কাটা জায়গায় চাপ পড়ায় মৃদু চিৎকার করে আবার বসে পড়লো। প্রায় সাথে সাথে সূর্য বাজখাঁই আওয়াজে ধমকে উঠলো।
~ কাটা পা নিয়ে হাঁটতে যাচ্ছো কেনো তুমি? চুপ করে বসে থাকতে পারো না? আর আপু! তোর মাথায় বুদ্ধি নেই? দেখছিস ওর পা কাটা তারপর ও ওকে হাঁটিয়ে রূমে নিয়ে যেতে চাইছিস?
~ তাহলে কি করে নিয়ে যাবো? অনেকক্ষণ ধরে এখানে বসে আছে এখন তো একটু রেস্ট নেওয়া দরকার।
সূর্য আর কিছু না বলে সকলের সামনে আরশি কে কোলে তুলে নিলো। আরশি বড়ো বড়ো চোখ করে সূর্য কে দেখছে। একি অবস্থা অহনা আর আরিয়ার ও। আরশ তো খুশিতে হাত তালি দেওয়া শুরু করেছে।
সুজানা, রিক, রোজ আর ন্যান্সি দাত কেলিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আরশি লজ্জায় সূর্যের কোল থেকে নামতে চাইলে সূর্য আরো জোরে আকড়ে ধরে ধমকে বললো,,
~ সমস্যা কি তোমার? নামতে চাইছো কেনো?
~ সবাই আছে এখানে আর আপনি ওদের সামনে এভাবে…
~ সবসময় এতো সবাই আছে, সবাই দেখছে এসব বলো কেনো? সবাই দেখেছে তো কি হয়েছে? আমি কি সকলের সামনে তোমায় চুমু খেয়েছি? জাস্ট কোলেই তো নিয়েছি এতো রিয়েক্ট করার কি হলো এতে!!
আরশি সূর্যের লাগামহীন কথাবার্তা শুনে আর কিছু বললো না।এমনিতেই রেগে আছে। এখন আর কিছু না বলাই শ্রেয়। সূর্য আরশি কে ওর ঘরে নিয়ে এলো। ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শাসনের সুরে বললো,,
~ শুয়ে থাকো, মাটিতে পা রাখবে না। কোনো দরকার লাগলে আমাকে বা আপুকে কল করবে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আরশি মাথা নেড়ে সায় দিলে সূর্য ওর কপালে চুমু দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। দরজায় ওর মা আর খালামণিকে দেখতে পেলো কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
অহনা আর আরিয়া নিচে নেমে এসে সোফায় বসে পড়লো। সুজানা ওর মা আর খালামনির অবস্হা দেখে মুখ টিপে হাসছে। ও টুপ করে গিয়ে ওদের মাঝে বসে পড়লো। তারপর দুজনের কাধে হাত রেখে বললো,,,
~ ইজি গার্লস, ইজি।। তোমাদের কাছে ভাইয়ের এই রূপ নতুন কিন্তু আমাদের কাছে নয়। ভাইয়ের মনের খবর আমরা সাজেক থাকতেই জেনে গেছি।
অহনা আর আরিয়া উৎসুক হয়ে সুজানার দিকে তাকালো। সুজানা ওদের সাজেকে থাকতে আরশি আর সূর্যের মধ্যে যা যা ঘটেছে সবটা বললো। দু-বোন
খুশিতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।।।
অবশেষে সব ঠিক হয়ে গেছে। ছেলেমেয়ে দুটো একে অপরকে মেনে নিয়েছে। ওদের মধ্যকার দুরুত্বের অবসান ঘটেছে। এর থেকে খুশির ব্যাপার আর কি হতে পারে ওদের কাছে।।।

সুজানা ওর ভাই আর আরশি রানির জন্য ভীষণ খুশি। কিন্তু মাহিরের কথা মনে পড়তেই মনের মধ্যে চাপা কষ্টটা আবার মাথা চারা দিয়ে উঠলো। চোখ ভিজে উঠছে বারবার। মাহির ওর সাথে কোনো যোগাযোগ করছে না। ওখান থেকে উঠে নিজের ঘরে চলে এলো। মোবাইল হাতে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। কল করবে কি করবে না বুঝতে পারছে না। খুব ইচ্ছে করছে একবার ওর কন্ঠটা শুনতে। আচ্ছা কল দিলে কোনো ক্ষতিতো আর হবে না তাইনা!! অবশেষে কাপা কাপা হাতে কল দিয়েই ফেললো। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। কেটে গেলে আবার ডায়েল করলো। এবারেও রিসিভ করছে না।
~ মাহির তো একবার রিং হতেই রিসিভ করে নিতো সবসময় তাহলে আজ কেনো করছে না? আমার উপর রেগে আছে নাকি এভয়েড করছে!!

কথাগুলো ভেবে ফোন কাটতে যাবে তার আগেই অপরপাশ থেকে একটা গম্ভীর আওয়াজ ভেসে এলো।
সুজানা শক্ত করে ফোনটা চেপে ধরলো। সেই সাথে চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here