★নিজের প্রিয়তমাকে অন্য কারোর বাহু বন্ধনে আবদ্ধ দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল প্রহর। অলংকারহুল হয়ে অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে রইলো সে।মস্তিষ্ক আর হৃদস্পন্দনের তারগুলো বিছিন্ন আপাতত। চোখের সামনে যা বিরাজমান হচ্ছে তা কি বাস্তব নাকি নিতান্তই ভ্রম সেটার মাপ তোল করারও চৈতন্য নেই তার। যাকে সে গত পাঁচ মাস ধরে পাগলের মতো মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত উলোট পালোট করে ফেলেছে। সেই হৃদহরণীকে চোখের সামনে দেখে খুশিতে আত্মহারা হবে? নাকি যার বিরহে কাতর হয়ে বেঁচে থাকাও ভুলে গেছে। কোনরকমে নিঃশ্বাস টা নিয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে শুধু সেই প্রনয়ণীকে দেখার আশায় বেঁচে আছে। তাকে অন্য এক পুরুষের বাহুতে দেখে ক্রোধান্বিত হবে?
বন্ধুদের জোরাজুরিতে না চাইতেও আজ কক্সবাজার এসেছে প্রহর। গাড়িতে বসেই বিচের পরিদর্শন করছিল। যদিও প্রহরের বিচের দর্শনে বিন্দুমাত্র আগ্রহও নেই।তাকে যে এখন কোন সৌন্দর্যই মোহিত করতে পারে না। সেতো সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে তার নতুন সাথী এলকোহলের মিনি বোতল বের করে গলা ভেজাচ্ছে। প্রহরের এই উদাসীনতা দেখে ফাহিমের মেজাজ গরম হয়ে যায়। তাই সে ঝট করে প্রহরের হাত থেকে বোতল টা টান দিয়ে জানালার বাইরে ফেলে দেই। এতে প্রহর রেগে গিয়ে দ্রুত ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলে। প্রহর বোতল টা নেওয়ার জন্য যেই গাড়ির দরজাটা খুলবে তখনই গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই এই দৃশ্য দেখতে পায় সে। সে দেখতে পায় বিচের ওপর একটা লোকের কোলে চড়ে যাচ্ছে তার প্রিয়তমা। নিতান্তই হাসিমাখা ভাবে সেই লোকটার সাথে কথপোকথন বিনিময় করছে।
এই দৃশ্য দেখে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পড়েছে প্রহর। মস্তিষ্কের সঞ্চালন ক্রিয়া অকার্য হয়ে যাচ্ছে। পাশ থেকে ফাহিমের ঝাঁকুনি দেওয়ায় সম্ভূতি ফেরে প্রহরের। প্রহর সিক্ত চোখে তাকায় ফাহিমের দিকে। হাতের ইশারায় গাড়ির বাইরে দেখিয়ে কম্পিত গলায় কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু স্পষ্ট কিছু কন্ঠনালী থেকে বের করতে পারছে না। ফাহিম একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললো।
–কি হয়েছে প্রহর এমন করছিস কেন?
প্রহর অতী প্রচেষ্টার পড় কোনরকমে বললো।
–খু খুখুশি…..
ফাহিম চমকিত কন্ঠে বলে উঠলো।
–হোয়াট? খুশি? কোথায়?
ফাহিম এবার প্রহরের ইশারা বরাবর তাকালো। এবং সে নিজেও বিষয় টা দেখে চমকে গেল। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো।
–খুশী? এখানে?
ফাহিমের কন্ঠে খুশির নাম শুনে প্রহরের অচেতন হৃদয় তাকে এটা আস্বস্ত করলো যে, সে যা দেখছে সেটা ভ্রম না। ওটা সত্যিই খুশি। ওর খুশি। ওর দুষ্টুপরি। সহস্র খুশির ভাবপ্রবণের মেলা জমলো তার অন্তর্দেশ জুড়ে। যার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ প্রহরের আঁখি যুগলে অশ্রুরা ভীড় জমালো। প্রহর আর কালবিলম্ব না করে গাড়ির দরজা খুলে বাইরে যাওয়ার জন্য উদ্যোত হলো। তবে তার আগেই ফাহিম তার হাত ধরে আটকে দিয়ে বললো।
–কোথায় যাচ্ছিস প্রহর?
অতিরিক্ত ভাবপ্রবনতায় জড়িয়ে আসা প্রহর অস্থির কন্ঠে বললো।
–কোথায় যাচ্ছি মানে? ফাহিম তুই দেখছিস না আমার খুশি ওখানে? আমার খুশি। যাকে আমি এতদিন ধরে পাগলের মতো খুজছিলাম সেই খুশি। ফাইনালি আজ তাকে পেয়ে গেছি আমি। আর তুই কিনা আমাকে জিজ্ঞেস করছিস আমি কোথায় যাচ্ছি? আমি আমার খুশির কাছে যাচ্ছি। ছাড় আমাকে।
ফাহিম প্রহরকে দুই হাতে আটকে ধরে শান্ত সুরে বললো।
–দেখ আমি তোর মনোভাব বুঝতে পারছি। কিন্তু খুশির কাছে যাওয়ার আগে একটু ভেবেচিন্তে যাওয়া দরকার তোর জন্য।
–মানে?
–মানে তুই খুশি আছে এটাতো দেখলি।কিন্তু খুশির সাথে যে অন্য কেউও আছে সেটা তুই অদেখা করছিস। ভালে করে দেখ খুশি কিন্তু ওখানে একা নেই। তার সাথে অন্য একজনও আছে।
–হ্যাঁ তো কি হয়েছে? হবে হয়তো কেউ। হয়তো খুশির কোন কাজিন বা রিলেটিভ হবে। তাতে কি হয়েছে?
–তোর কি সত্যিই এমন টা মনে হয়? তুই বিষয় টা বুঝতে পারছিস না? নাকি বোঝার চেষ্টা করছিস না? নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করছিস?
–ফাহিম ডোন্ট ট্রাই মাই পেশেন্স। যা বলবি ক্লিয়ারলি বল।
–ওকে ফাইন তাহলে শোন। দেখ ওদের দুজনের ভাবভঙ্গি দেখে কোন এঙ্গেল থেকে ওদের কাজিন বা রিলেটিভ মনে হচ্ছে না। এটা কক্সবাজার। এখানে বেশির ভাগ দম্পত্তি বিয়ের পর বেড়াতে আসে। হতে পারে ওরাও..
ফাহিমের কথার সারমর্ম বোধগম্য হতেই আঁতকে উঠল প্রহরের হৃদপিণ্ড। কাতর হৃদয় টা আতঙ্কে কেঁপে উঠল। বিবর্ণ লালচে চোখে তাকালো ফাহিমের দিকে। ফাহিমের মুখ বাক্য প্রহরের কর্ণপাত হলেও তার মন মস্তিষ্ক কোনটাই সেটা কোনক্রমেই মানতে রাজি না। না না কিছুতেই না। এটা হতেই পারে না। আ আমার খুশি অন্য কারো? এটা আভাস পেতেও যেন প্রহরের রক্তকণা জমে যাচ্ছে। নো নো নেভার এভার উইল হ্যাপেন্ড দ্যাট। প্রহর আতঙ্কিত আর অস্থির কন্ঠের সংমিশ্রণে বলে উঠলো ।
–জা জাস্ট শাট…. আপ। মুখ আছে বলেই কি মুখে যা আসে তাই বলবি তুই? তোর সাহস কি করে এমন ফালতু কথা বলার? খুশি শুধু আমার। ও আমাকে ছাড়া অন্য কারোর হতে পারে না। কখনো না।
ফাহিম বললো।
–এটা কি তুই আমাকে বোঝাতে চাচ্ছিস? নাকি নিজেকেই ভুল বোঝানোর অযথা প্রয়াস করছিস? দেখ খুশি তোর জীবন থেকে আলাদা হয়েছে প্রায় পাঁচ মাস হলো। তো এর মাঝে হতেই পারে খুশির বিয়ে হয়ে গেছে। আর ওর হাসব্যান্ড এর সাথে এখানে বেড়াতে এসেছে।
ফাহিমের বিষাক্ত বাক্য গুলো প্রহর শ্রবণ করতে পারছে না।সে অতিমাত্রায় ক্ষিপ্ত সুরে বলে উঠলো।
–স্টপ ইট ফাহিম। স্টপ ইট রাইট নাও। অর আই উইল কিল ইউ।
ফাহিম এবার দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো।
–মারলে মার তবুও বাস্তব টা গ্রহণ করতে হবে তোকে। খুশি কেনকিছু না বলেই তোর জীবন থেকে চলে গেল। হতে পারে বিয়ের জন্যই ও এমনটা করেছে। তোকে ছেড়ে গিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে ও।তোর মতো আমিও চাই যে আমি যা ভাবছি তা যেন মিথ্যা হয়। তবে যদি সত্যি হয় তখন? তাই এই মুহূর্তে খুশির সামনে যাওয়া ঠিক হবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আমাদের সুযোগ বুঝে খুশির সাথে একা কোথাও কথা বলতে হবে।
ফাহিমের যুক্তিজ্ঞান কিছুই প্রহরের মন মস্তিষ্ক মেনে নিতে রাজি না। তবে ভয়টা তার সর্বত্র জুড়ে ঠিকই ঘিরে ধরেছে। বুক কাঁপছে, কাঁপছে সর্বশরীর। যদি ফাহিমের কথা সত্যি হয় তখন? খু খুশি যদি সত্যি…..। নো নো দ্যাটস নট পসিবল।নট অ্যাট অল। ফাহিমের কথা সত্যি হতেই পারে না। কিছুতেই না। আমার খুশি শুধুই আমার। সি ইজ অনলি মাইন। প্রহর রক্তিম চোখে তাকালো আবারও বাইরের দিকে। লোকটা এখনো খুশিকে কোলে নিয়ে হাঁটছে, আর হাসিমুখে নানান কথা বলছে। হাতের মুঠো শক্ত গভীর হয়ে আসছে প্রহরের। চোয়াল শক্ত হয়ে কপালের রগ ফুলে ফেঁপে উঠছে। মন চাচ্ছে এই মুহূর্তে ছুটে গিয়ে ওই লোকটার হাড্ডি মাংস এক করে বস্তায় ভরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে। তবে না চাইতেও ফাহিমের কথা মেনে চুপ করে রইলো প্রহর। তবে বেশিক্ষণ সে চুপ থাকবে না। খুব শীঘ্রই সে খুশির কাছ থেকে সব কিছুর জবাব আদায় করবে। ওর সাথে যে অনেক বোঝাপড়া বাদ আছে তার।
_____
রিসোর্টের ভেতর করিডোর দিয়ে একা একা হেঁটে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল খুশি। হঠাৎ একটা হাত এসে পেছন থেকে খুশির মুখ চেপে ধরলো। আঁতকে উঠল খুশি। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে মুখ দিয়ে উম উম শব্দ বের করতে লাগলো। তবে খুব একটা সফল হলো না সে। কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই আগন্তুক খুশিকে চেপে ধরে পাশের রুমের ভেতর টেনে নিয়ে গেল। রুমের ভেতরে এনেই দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো খুশিকে। খুশির দুই হাতের মাঝে হাত ঢুকিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো সে। খুশি আতঙ্কিত চোখে সামনের ব্যাক্তির দিকে তাকালো।
সামনের ব্যাক্তির মুখশ্রীর দর্শন হতেই পূর্বের আতংকে থাকা হৃদয় টা এবার তীব্র মাত্রায় কেঁপে উঠল। থমকে গেল তার হৃদকম্পন। শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্রিয়া অকার্য হতে লাগলো। চোখের মনি এলেমেলো ভাবে সামনের ব্যাক্তির মুখমন্ডলের চারিদিকে ঘুরতে লাগলো। সেকি সত্যিই দেখছে? এটা কি সত্যিই প্রহর? না না সে নিশ্চয় প্রতিবারের মতোই আবারও কল্প জগতে হারিয়ে গেছে। এটা প্রহর হতেই পারে না। খুশি চোখ বুজে মাথা ঝাকিয়ে কল্প জগত থেকে বেড়িয়ে আসার প্রয়াস করছে।
তবে চোখ খুলে তাকাতেই সে আবারও প্রহরকেই দেখতে পেল।নিঃশ্বাস আটকে এলো খুশির। তা তারমানে এটা সত্যিই প্রহর?প্রহর স্বয়ং ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে? আজ এতোটা দিন পর প্রহরকে নিজের চোখের সামনে দেখে চোখ জোড়া প্রহরে আবদ্ধ হয়ে গেল। মুহূর্তের জন্য সবকিছু যেন থমকে গেল।আবেগপ্রবণ হয়ে গেল খুশি। সমুদ্র সমান মায়া আর আবেগ ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো প্রহরের দিকে। এই সেই প্রহর। ওর প্রহর। ওর ড্রিম বয়। চেহারায় অনেক টা পরিবর্তন এসে গেছে তার। চুল গুলো আগের মতো আর সিল্কি নেই। কেমন লম্বা এলোমেলো, অগাছালো, অযত্নে পড়ে আছে। দাড়ি গোফও অনেক বড়ো হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে অনেক দিন কাটে না। অনেক টা শুঁকিয়ে গেছে।চোখ দুটো কেমন লাল রক্তিম হয়ে আছে। যেন কতকাল ঘুমায় ন। চোখের নিচে কালিও পড়ে গেছে।কেমন জীর্ণ শীর্ণ জামাকাপড় পড়ে আছে। প্রহরের এমন বিধ্বস্ত বেহাল অবস্থা দেখে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো খুশির। তবে এতোকিছুর পরেও ওর ড্রিম বয়টা এখনো সেই আগের মতোই হ্যান্ডসাম আর এট্রাক্টিভ আছে। চেহারার আকর্ষণ এক বিন্দুও কমেনি।
–ছেলেটা কে ছিল?
হঠাৎ প্রহরের কথায় বাস্তবে ফিরে আসে খুশি। বাস্তবতার মুখোমুখি হতেই দ্রুত অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে নিজের চোখের পানি বহমান হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ভয় এসে ঘিরে ধরে খুশির সর্বত্র জুড়ে। প্রহর হঠাৎ কোথাথেকে এখানে এলো? এখন কি বলবে ও? কি জবাব দিবে ওকে? কিভাবে এড়িয়ে যাবে ওকে? প্রহর যে তার জবাব চাইবে। এখন কি করবে ও?
খুশিকে চুপ থাকতে দেখে প্রহর আরও বেশি রেগে উঠে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–কি হলো? জবাব দাও আমাকে। কে ছিল ওই ছেলেটা?
খুশি ভ্রু কুঁচকে বললো।
–ছেলেটা? কোন ছেলেটা?
–বাহ্ কতজন আছে তোমার জীবনে, যে কোনটার কথা বলছি তাই বুঝতে পারছ না?
খুশি একটু রাগী কন্ঠে বললো।
–প্রহর, মাইন্ড ইওর টাঙ্ক। এসব কি ধরনের কথা?
প্রহর তাচ্ছিল্যের সুরে বললো
–ওয়াও তো ম্যাডামের সামনে এখন আদবের সহিত কথা বলতে হবে তাইনা? ওকে ফাইন। তো জনাবা, আপনি তখন যার কোলে চড়ে আরামে সমুদ্র দর্শন করছিলেন সেই ব্যাক্তি টা কে ছিল? এত শীঘ্রই বিয়ের পিড়িতে বসে পড়েছেন বুঝি? তা এইজন্যই বুঝি এভাবে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন? যাতে বিয়ে করতে পারেন? তা এখানে কি হানিমুনে আসা হয়েছে?
রাগের বশবর্তী হয়ে এসব কথা বললেও প্রহর মন প্রাণে চাইছে খুশি যেন মানা করে দেয়। আমাকে যেন ভুল প্রমানিত করে দেয়। চিল্লিয়ে বলুক না আমি ভুল ভাবছি। আমার ধারণা ভুল।দরকার হলে আমার ওপর রাগ করুক। আমাকে মারুক। মারতে মারতে বলুক আমি এমনটা ভাবতেও কিভাবে পারলাম। কিভাবে পারলাম ওকে নিয়ে এমন পঁচা কথা বলতে। এতবড় সাহস কি করে হলো আমার। আমার এই কথাটার জন্য আমাকে চরম শাস্তি দিক। তবুও যেন আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিক।এই প্রথম নিজের ধারণা ভুল হওয়ায় সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হবে প্রহর।
তবে সেটা আর হলোনা। প্রহরের সব আশায় বালিচাপা দিয়ে, এবং তার ধারণা কেই সত্যের সিল মেরে দিয়ে খুশি বলে উঠলো।
–হ্যাঁ ঠিক বলেছ। আমি বিয়ে করেছি।আর আমার হাসব্যান্ডের সাথে এখানে হানিমুনে এসেছি।
খুশির এই ছোট্ট স্বীকারোক্তি টা যেন প্রহরের কানে উত্তপ্ত লাভা হয়ে ঢেলে পড়লো। কান দিয়ে প্রবেশ করে সারা শরীরে সেই লাভা ছড়িয়ে পড়লো। সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। মুহূর্তেই তার পৃথিবী টা থমকে গেল। মস্তিষ্কের সঞ্চালন ক্রিয়া অকার্য হয়ে পড়লো। তপ্ত হৃদস্পন্দনের গতিবেগ থেমে গেল। চোখ দুটো রক্তের গালিচায় পরিণত হচ্ছে। খুশির কথা টা কান দিয়ে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে পৌঁছালেও, মন তা কিছুতেই মানতে রাজি না। একেবারেই।না। প্রহর কম্পিত গলায় বললো।
–মি মিথ্যে, সব মিথ্যে। তু তুমি মজা করছ তাইনা? আমি জানি তুমি মজা করছ। তোমার তো এসব মজা করতে অনেক ভালো লাগে। এখনো তুমি মজাই করছ তাইনা? প্লিজ বন্ধ করোনা এই মজা করা।
খুশি নিজেকে শক্ত করার যথেষ্ট চেষ্টা চালাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে শক্ত গলায় বললো।
–আমি মোটেও মজা করছি না। এটাই সত্যি। তুমি যাকে দেখেছ সেই আমার স্বা…
খুশির কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রহর খুশির মাথার পাশে দেয়ালে সজোরে একটা ঘুষি মেরে উচ্চস্বরে ব্যাথিত কন্ঠে বলে উঠলো।
–স্টপ ইট……..। নো নো নো দ্যাটস নট ট্রু। নট ট্রু, নট ট্রু। ইউ লাইং টু মি। ইউ কান্ড ডু দিস টু মি ড্যাম ইট।
খুশি ভেতরে ভেতরে ভয়ে কেঁপে উঠলেও উপরে সেটা বুঝতে না দিয়ে নিজেকে শক্ত রেখে বলে উঠলো।
–এ এটাই সত্যি। আর সত্যি মেনে নেওয়ায় ভালো। এতেই সবার মঙ্গল।
প্রহর দুই হাতে খুশির মুখটা শক্ত করে ধরে ক্রোধিত কন্ঠে বললো।
–টু হেল উইথ ইওর মঙ্গল। কিসের মঙ্গল হ্যাঁ? তুমি বি বিয়ে…।না না এটা হতে পারে না। তুমি এটা করতে পারো না আমার সাথে। তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে তাইনা? ভুলে গেছ সবকিছু? বিয়তো আমাদের হয়েছিল। আমি না তোমার স্বামী ছিলাম? আর তুমি আমার বউ? সেসব ভুলে গেলে? ভুলে গেলে সব ওয়াদা? বলো? আমি তো তোমার স্বামী। তাহলে অন্য কেউ কিভাবে হতে পারে? বলো?
খুশি শক্ত গলায় বললো।
–ওহ প্লিজ। বাচ্চাদের মতো কথা বলো না। তুমি নিজেও জানো, ওসব কিছু শুধুই একটা ছেলেমানুষী ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ওই খেলা খেলা বিয়েকে সত্যি মেনে বোকামো করোনা। তখন আমি ছেলেমানুষী করতাম। তাই না বুঝে যা ইচ্ছে তাই করতাম। তাই বলে তুমিও ওটা ধরে বসে আছ? দেখ ওইসব প্রেম প্রেম খেলাকে ভুলে যাও। আর নিজের জীবনে অগ্রসর হও।
প্রহর অতিরিক্ত রেগে গিয়ে পাশে থাকা টি টেবিলে একটা লাথি মেরে উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
–জাস্ট শাট আপ। আমাদের ভালোবাসা তোমার কাছে এখন বোকামি মনে হয়? আমাদের দুই বছরের সম্পর্ক টা তোমার কাছে ছেলেমানুষী হয়ে গেল? আর এতদিন পরে তুমি সেটা উপলব্ধি করতে পারছ? তাহলে কেন এসেছিলে আমার জীবনে বলো? আমিতো একা ভালোই ছিলাম। কেন আমার জীবন টাকে এলোমেলো করে দিলে তুমি? বলো কেন করলে এমন?
–ঠিক আছে আমি তোমার অপরাধী। আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে। যা শাস্তি দিতে চাও দিতে পারো। চাইলে আমাকে মেরেও ফেলতে পারো। আমি কোন অভিযোগ করবো না।
প্রহর অগ্নি চোখে খুশির দিকে তাকিয়ে ওর কাছে এসে বললো।
–এটাই তো আমি পারি না। এখানেই আমি দূর্বল। তুমি ভালো করেই জানো আমি নিজেকে শেষ করতে পারি। কিন্তু তোমাকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ আঘাতও করতে পারবোনা। তবে ওই রাসকেল টাকে তো আমি ছাড়বো না। তোমাকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নেওয়ার সাহস দেখিয়েছে ও। ওকেতো এর শাস্তি পেতেই হবে।
খুশি এবার আঁতকে উঠে বললো।
–দেখ তুমি ওকে কিছু করবে না। তোমার অপরাধী আমি। এতে ওর কোন দোষ নেই। তাই যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দাও। ওকে কিছু করবে না প্লিজ।
প্রহর তিরস্কার করে বললো।
–বাহ্ এতো ভালোবাসো বুঝি? তার জন্য নিজেকে কুরবান করে দিবে?
খুশি প্রহরের চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো।
–নিজের স্বামীকে তো ভালো না বাসলে কাকে ভালোবাসবো? সেই তো আমার সব।
প্রহর অশ্রুসিক্ত রক্তলাল চোখে তাকিয়ে বললো।
–চলে যাও এখান থেকে। নাহলে সত্যিই জানি না আমি কি করে বসবো। জাস্ট গেট লস্ট।
খুশি মাথা নিচু করে দৌড়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে এলো। খুশি চলে যাওয়ার সাথে সাথেই প্রহর উন্মাদ হয়ে রুমের সব জিনিস পত্র ভাঙতে শুরু করে দিলো। ভাঙতে ভাঙতে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো।
–হোয়া….ই? হোয়াই ড্যাম ইট? হোয়াই??????
খুশি দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। দরজা ঘেঁষে নিচে বসে পড়লো সে। তারপর মুখে হাত চেপে ডুকরে কেঁদে উঠলো সে। এতক্ষণ ধরে অনেক কষ্টে আটকে রাখলেও, এখন যে বাঁধ ভেঙে এলো অশ্রুধারা। কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
–কেন এলে তুমি? কেন? আবার কেন ফিরে এলে তুমি? কেন আবার পুড়তে এলে তুমি? সব যে শেষ হয়ে গেছে। প্লিজ চলে যাও এখান থেকে। প্লিজ…
কাঁদতে কাঁদতে দূর্বলচিত্তে ফ্লোরে নিজের শরীর এলিয়ে দিল খুশি। চোখের সামনে ভেসে উঠলো প্রহরের সাথে কাটানো সেই মুহূর্ত গুলো। মনে পড়ে গেল দু বছর আগের কথা। কিভাবে ওর জীবনে এসেছিল প্রহর। ওর ড্রিম বয়।
চলবে….
অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
পর্ব- ১
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
(ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে নতুন গল্প নিয়ে। এই গল্প টা বিশেষ কোন কারণ ছাড়াই আমার কাছে একটু স্পেশাল। আশা করি আপনাদেরও ভালো লাগবে।
অনেক দিন পর গল্প দিচ্ছি। তাই হয়তো সবার পৌঁছাতে নাও পারে। তাই যার যার কাছে পৌঁছাবে তারা একটু লাইক বা যেকোনো রিয়্যাক্ট দিবেন প্লিজ। আমি দেখতে চাই গল্প কতজনের কাছে পৌঁছাচ্ছে। )
গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/