তোমায় ঘিরে #শারমিন আঁচল নিপা #পর্ব-১৩

#তোমায় ঘিরে
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৩

কারণ ধরীতার মামী সিয়াম আর ধরীতাকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখে জোরে চিল্লানি দিয়ে বলতে লাগল

“নেহি এ হতে পারে না…..আমার মনকে খানখান করে ভেঙে দিয়ে এ হতে পারে না।”

ধরীতর মামীর কথা শুনে সিয়ামের বাবা, মা আর আত্মীয় স্বজন হা করে তাকিয়ে আছে। কাহিনির সার সংক্ষেপ কারও বোধগম্য হচ্ছে না। অবচেতন চোখে তাকিয়ে শুধু কাহিনি পর্যবেক্ষণ করতে সবাই ব্যস্ত। ধরীতা আর সিয়াম বুঝতে পেরেছে মামীকে আবারও সিরিয়ালের ভূত ধরেছে। এদিকে ধরীতার মামা তার সহধর্মিণী কে নিয়ে পড়েছে ভীষণ বিপাকে। এমন সব কান্ড মাঝে মাঝে করে বসে যার জন্য তিনি লজ্জায় পড়ে যান৷ তিনিও জানেন অতিরিক্ত সিরিয়াল দেখে তার অবস্থা এমন হয়েছে। বেশ কয়েকবার ডাক্তার দেখিয়েও কোনো ফল হয়নি। তিনি ধরীতার মামীকে ধরে নিয়ে পাশের সোফায় বসে মুখ চেপে ধরলেন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। সবাই শুধু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সিয়াম সবার মনোযেগ সরিয়ে দেওয়ার জন্য বলে উঠল

“আরে সময় নষ্ট না করে বিয়ের কাজ শুরু করুন সবাই। ধরীতার মামীর একটু মানসিক সমস্যা আছে। আপনারা কিছু মনে করবেন না।”

সবার মনোযোগ এবার ঘুঁচলো। বিয়ের কাজ শুরু হলো। ধরীতার মা নিজের মেয়েকে বিয়ের সাজে দেখে কাঁদতে লাগলেন। তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো চিন্তা ছিল নিজের মেয়ের বিয়ে নিয়ে আজকে যেন সব চিন্তা দূর হলো। এত ভলো পাত্র পাবে আশাও করেননি তিনি। সব মিলিয়ে উনার মনে এক প্রশান্তির হওয়া বইছে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লেও বুকটা বেশ হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে বড়ো একটা পাথর নেমে গেছে।

ধরীতাকে কাজী কবুল বলতে বলল। ধরীতা কাঁপা গলায় কবুল বলল। সাথে সাথে যেন চোখ দিয়ে গড় গড়িয়ে জল পড়তে লাগল। মনে হতে লাগল আজকে সে একা না। কারও ছায়ার নীচে সে আছে। পুরুষ নামক কোনো ব্যক্তির ছায়ার নীচে। যে পুরুষকে নিয়ে তার ভেতরে এত ঘৃণা জমে ছিল আজকে যেন সিয়ামের মতো পুরুষ পেয়ে সকল ঘৃণা ভালোবাসায় পূর্ণ হয়েছে।

সিয়ামও কবুল বলল। মোনাজাতের মাধ্যমে বিয়ে সমাপ্ত হলো। ধরীতার মামী এখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। উনার কষ্ট দেখার মতো কেউ নেই। অধরাও প্রচন্ডরকম খুশি হয়েছে। ধরীতার জীবনটা এভাবে পাল্টে যাবে কল্পনাও করতে পারেনি। সবাই বিয়ে শেষে মিষ্টি মুখ করল। খাওয়া দাওয়ার পর্ব সাড়ল। দেখতে দেখতে কখন সারাদিন কেটে গেল বুঝতে পারে নি কেউ। আস্তে আস্তে প্রাণচঞ্চল বাড়িটা শূন্য হতে লাগল। ধরীতার মামীর মাথা থেকে এখন সিরিয়ালের ভূতটা নেমেছে। তবে নিজের মেয়েকে রেখে ধরীতার এত ভালো জায়গায় বিয়ে হয়েছে এটা মানতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। মাথা পাগল মানুষের কত চিন্তায় মাথায় ঝেঁকে বসে বলা যায় না। সকল চিন্তাকে এক পাশে রেখে মুখে নাটকীয় এক রাশ হাসি এনে সবার কাছ থেকে বিদায় নিল ধরীতার মামী। ধরীতার মা চলে যেতে চাইলে সিয়াম আটকে দিল। কারণ সিয়াম আর তার পরিবার চায় ধরীতার মা তাদের সাথেই থাকুক। সিয়াম আর তার পরিবারের একপাক্ষিক জোরাজোরিতে তিনি আর অমত করতে পারেননি। অধরা চলে যেতে চাইলে ধরীতা হাতটা ধরে বলল

“তুই চলে গেলে হবে নাকি। তুই থাক। মামা আর মামী যাক। কাল সকালে তোকে সিয়াম দিয়ে আসবে নে। আর এমনিতেও তো কালকে ক্লাস আছে।”

অধরা কিছুটা হেসে জবাব দিল

“তুই কী কালকে ক্লাস করতে যাবি নাকি। মানে এত সিরিয়াস স্টুডেন্ট কবে ছিলি তুই। ক্লাস করতে চাচ্ছিস কালকে।”

“হুশ আমি কী স্বাদে ক্লাস করব নাকি। দেখা যাবে সিয়ামেই আমাকে ক্লাস করতে নিয়ে যাবে। তুই থাক প্লিজ।”

“আচ্ছা বলেছিস যখন থেকে গেলাম।”

ধরীতা অধরাকে জড়িয়ে ধরে বলল

“আমার পাশে এভাবেই সবসময় থাকিস।”

“সে তো আমি থাকবই। তবে রাতের গল্প সকালে উঠে বলিস। নাহয় আমি আর থাকছি না। একা একা রোমান্স করবি তা তো হয় না। রাতে কী হয়েছে সব সকালে বলবি কিন্তু।”

“তোর জ্বালায় বিয়ে করেও শান্তি নেই। রাতে ভিডিও কল করে তোকে লাইভ দেখাব। হারামি একটা।”

অধরা আর ধরীতা কথাগুলো বলতে বলতে জোরে হাসি দিয়েও থেমে গেল।

কথোপকথন শেষে ধরীতা অধরাকে নিয়ে সিয়ামের ঘরে ঢুকতে চাইলে সিয়ামের খালাত বোন তুষা দরজা আটকে দিয়ে বলে উঠল

“ঘর সাজানোর পূর্বে প্রবেশ করা নিষেধ। আগে ঘর সাজিয়ে নিই তারপর আপনাকে ঘরে ঢুকিয়ে ভাইয়ার কাছ থেকে টাকা আদায় করব। আপাতত আপনি একটু সোফায় গিয়ে বসুন।”

তুষার কথা শুনে অধরাও বলে উঠল

“তুষা আমাকেও সাথে নাও। আমি ও তো ভাইয়ার শালী। আমি কী তোমাকে সাহায্য করতে পারি সাজানোতে?”

অধরা কথাগুলো বেশ উৎফুল্লতার সহিত বললেও তুষা বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নেয় নি। সে মুখের উপর অধরাকে বলে বসল

“আমার কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আমি একাই পারব। বলেই মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিল।”

অধরার মুখটা চুপসে গেল। ধরীতা বুঝতে পারল না অধরার সাথে তুষা কেন এমন আচরণ করল। যদিও ধরীতার সাথে এ পর্যন্ত তুষার যতটুকু কথা হয়েছে তাতে মনে হয়েছে মেয়েটা খুব মিশুক। তবে এতটা কঠোর বুঝতে পারেনি। এদিকে অধরার যেন অপমানটা হজমেই হচ্ছে না। কিছুটা আত্মসম্মানেও লেগেছে তার। বয়সে ছোটো একটা মেয়ের কাছে এমন আচরণ সে মানতে পারছে না। ধরীতা অধরার মন খারাপের কারণটা বুঝতে পেরে প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে হাসি মুখে বলল

“অধরা বাদ দে তো। এমনিতে তোদের বাসায় গেলে তখন ঘর সাজাস। এমন তো না আমি তোদের বাসায় যাব না। আর চল আমরা একটু সোফায় বসে আড্ডা দেই। মা মনে হয় সিয়ামের বাবা মায়ের সাথে রুমে কথা বলছেন। আর সিয়াম মনে হয় বাইরে গিয়েছে। এই সুযোগ দুজন মন খুলে আড্ডা দেওয়ার। আগের মতো তো আর দুজন একসাথে থাকতে পারব না। তাই সময় নষ্ট না করে চল আড্ডা দিই। ”

ধরীতার কথা শুনে অধরার গাল বেয়ে চোখের পানি পড়তে লাগল। ধরীতাকে আচমকা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল

“তোর বিয়ে হয়েছে আমি বেশ খুশি হলেও তোকে ছাড়া থাকতে হবে এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে।”

ধরীতাও আর আবেগটা সামলাতে পারল না। সেও কেঁদে দিল। একমাত্র অধরা তার জীবনের এমন একটা মানুষ যে তার সুখে দুঃখে সবসময় পাশে ছিল। তাকে ছাড়া থাকতে তারও ভীষণ কষ্ট হবে। দুজনের চোখ বেয়ে শুধু জল গড়িয়ে পড়ছে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আর কোনো কথা বলছে না।

দেখতে দেখতে রাত একটা বেজে গেল। সিয়ামের মা এসে তুষাকে তাড়া দিতে লাগল তাড়াতাড়ি যেন ঘর সাজায়। তুষা ঘর সাজাতে সাজাতে আড়াইটে পর্যন্ত রাত গড়িয়ে নিল। এবার তুষা ধরীতাকে ধরে ঘরে বসাল। তারপর সিয়ামকে আসতে বলল। একটা ফিতা ধরে দরজার সামনে নিজের দুহাত মেলে দাঁড়াল। অধরা বুঝতে পারছিল তুষার বেশ কষ্ট হচ্ছে এভাবে একা ফিতা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে। তাই সে পুরনো অপমান ভুলে আবারও বলে উঠল

“তুষা তোমার মনে হয় একা ধরতে কষ্ট হচ্ছে আমিও ধরি তোমার সাথে?”

তুষা এবারও অধরাকে কটু গলায় বলে উঠল

“আমি একাই ধরতে পারব। কারও সাহায্য লাগবে না।”

ধরীতা বুঝতে পারছে না তুষা কেন অধরাকে সহ্য করতে পারছে না। অধরা আর দাঁড়িয়ে থাকার ইয়ত্তা পেল না। সোজা হনহন করে রুমে চলে গেল। রাগে গজগজ করছে সে। ধরীতার মা অধরাকে রাগতে দেখে হালকা গলায় জিজ্ঞেস করলেন

“কী রে কী হয়েছে এভাবে রেগে আছিস কেন?”

“কিছু হয়নি ফুফু। তুষা মেয়েটা জাস্ট বিরক্তিকর।”

“কেন কী করেছে?”

“এখন আর বলতে পারব না। আরও রাগ উঠে যাবে। আমার মাথাটা একটু টিপে দাও ঘুমাব।”

বলেই অধরা ধরীতার মায়ের কোলে মাথা রেখে দিল।

এদিকে সিয়াম যতই রুমে প্রবেশ করতে চাচ্ছে তুষা ততই আটকে দিচ্ছে। পাঁচ হাজার টাকার এক টাকা কম দিলেও সে দরজা থেকে সরবে না। এদিকে সিয়ামও নাছোরবান্দা তিন হাজার টাকার বেশি দিতেই চাচ্ছে না। অবশেষে দর কষাকষি করে সিয়াম পরাজিত হয়ে তুষাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে রুমে প্রবেশ করল।

রুমে প্রবেশ করে দরজাটা লক করল। ধরীতার দিকে তাকাতেই ধরীতা এমন কান্ড করে বসলো যে সিয়াম বুঝতে পারছে না কী করবে। তার বেশ চিন্তা হচ্ছে এটা ভেবে যে সে কী কোনো রণক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে নাকি বাসর চন্দ্রিমায়।

কপি করা নিষেধ

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here