অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ পর্ব-১৮

অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
পর্ব-১৮
#লেখিকা-মেহরুমা নূূর

★বর্তমান,
ফাহিম প্রহরের রুমে ঢুকতেই হা হয়ে গেল। প্রহর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। প্রহরের লুক একদম চেঞ্জ করে ফেলেছে। চুলদাড়ি কেটে একদম মাচো ম্যান হয়ে গেছে। ফাহিম প্রহরের সামনে এসে শিস বাজিয়ে বলে উঠলো।
–ও মাই গড, লুক হু ইজ হিয়ার। দ্যা মাচো ম্যান ইন দ্যা হাউজ। আওয়ার স্টাইলিশ হিরো ইজ ব্যাক। ইউ আর কিলিং ব্রো।

প্রহর নিজের চুল সেট করতে করতে বললো।
–থ্যাংকস। ইটস নেসেসারি। খুশির দৃষ্টি আকর্ষন করতে হলে নিজেকে একটু প্রেজেন্টেবল করাটা জরুরি।খুশির সামনে সেই পুরানো প্রহরকে আনা দরকার। এখন দেখি আমাকে কিভাবে ইগনোর করতে পারে।

কথাটা বলে প্রহর চোখে সানগ্লাস পড়তে পড়তে বেরিয়ে গেল। ফাহিম পেছন থেকে শুধু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবতে লাগলো নাজানি ওর বন্ধুর কপালে কি আছে। ভাবনার মাঝেই ফাহিমের হঠাৎ তিশার কথা মনে হলো। ওই মেয়েটাকে শিক্ষা দেওয়া বাকি আছে ওর। আজকে তো হেব্বি মজা হবে। লেটস হ্যাভ সাম ফান। বাঁকা হেসে ফাহিমও বেড়িয়ে গেল ওর উদ্দেশ্যে।

তিশা ওর রুমে রেডি হচ্ছিল বাইরে যাওয়ার জন্য। তখনই হঠাৎ রুমের কারেন্ট চলে গেল। পুরো রুম অন্ধকার হয়ে গেল। তখনই আয়নায় কারোর মুখচ্ছবি ভেসে উঠল। তিশা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। সামনের ব্যাক্তি তখন তিশার মুখ চেপে ধরলো। তিশা আরও ভয় পেয়ে পেল। ভয়ে আত্মা শুঁকিয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পর রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। তিশা চোখ খুলে ফাহিমকে দেখতে পেল। ফাহিমকে দেখে বিস্ময়ে চোখ বড়ই হয়ে গেল ওর। ফাহিম বাঁকা হেসে বললো।
–কি মিস তিশা চিনতে পারছেন তো? নাকি চশমা লাগবে?

ফাহিম ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে নিল। তিশা অবাক সুরে বললো।
–আ আপনি? এখানে?

–ইয়েস মিস তিশা আমি। এখন এটা আপনার দূর্ভাগ্য বা আমার সৌভাগ্য বলতে পারেন যে এখানে আপনাকে দেখে ফেলেছি আমি। আর আপনার ষড়যন্ত্র গুলোও জেনে গেছি। আমাকে বোকা বানিয়ে ছিলেন না ? এখন আমার পালা।
তিশা ভীতু স্বরে বললো।
–মানে? কি করবেন আপনি?

ফাহিম বেডের ওপর আরাম করে বসে বললো।
–তেমন কিছুই না। জাস্ট মাকে ফোন করে বলবো যে আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে। আর বাকিটা তুমি নিজেই বুঝতে পারছ।

তিশা এবার সত্যিই ভয় পেয়ে গেল। সে ফাহিমের সামনে এসে বিনয়ী সুরে বললো।
–দেখুন প্লিজ এমন করবেন না। আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি বলুন?

–ক্ষতি করেছ মানে, আলবাত করেছ। আমার সাথে ধোঁকা ধারি করে আমাকে রীতিমতো বোকা বানিয়েছ। আর তোমাকে মানা করার কারনে সবার সামনে আমাকে ভিলেন বানিয়েছ।আর নিজে ভুক্তভোগী সেজে সবার সিমপ্যাথি লুফে নিচ্ছ। এটা কি তোমার কাছে কম মনে হচ্ছে?

–দেখুন আমি কোনভাবে শুধু বিয়েটা ভাঙতে চাচ্ছিলাম। আসলে আমি এখুনি বিয়ে করতে চাইনা। বিয়ে মানে স্বাধীনতা শেষ হয়ে যাওয়া। যেটা আমি মোটেও চাইনা।মা বাবাকে বললে ওনারা মানতো না। তাই ওমন করেছিলাম। প্লিজ ভুলে যান না ওসব।

–আ হাহা নিজে ভালো থেকে অন্যকে ভিলেন সাজানো তাইনা। বিয়ে করবে না সেটা নিজে বলে দিতে। তানা করে তুমি আমার ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি করেছ। এখন এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। আমি এখুনি মাকে ফোন করে বলে দিবো যে আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি। তারপর বুঝবে মজা।

–দেখুন প্লিজ দয়া করে এমন করবেন না। এতে আপনার কি লাভ বলুন? আপনিও তো এতে ফেঁসে যাবেন তাই না?

–দ্যাটস নট ম্যাটার। এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ, ওয়ার এন্ড রিভেঞ্জ । তাই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য যদি আপনাকে বিয়ে করতে হয় তাতেও সমস্যা নেই। এমনিতেও চেহারা সুরত মোটামুটি ভালোই আছে। আমি কাজ চালিয়ে নিতে পারবো।

তিশার রাগে শরীর রি রি করছে। ইচ্ছে তো করছে লোকটাকে এখানেই বালিশ চাপা দিয়ে মেরে লাশ গুম করে দেই।
হঠাৎ ফাহিম বলে উঠলো।
–ফ্লপ প্ল্যান।

তিশা চমকে উঠে বললো।
–মানে?

–মানে, আমাকে খুন করার যে প্ল্যান করছেন সেটা টোটালি ফ্লপ আইডিয়া। কারণ এই রিসোর্টের কোনায় কোনায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।আর এটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের রিসোর্ট।তাই আমি কবরে যাওয়ার আগেই তুমি ফাঁসির দড়িতে লটকে থাকবে। তাই বলছি ফ্লপ আইডিয়া।

তিশা অবাক হয়ে ভাবলো এ আমার মনের কথা কিভাবে শুনলো? যাইহোক এখন রাগলে চলবে না। আপাতত এর সামনে নত হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই তিশা নিজের রাগ গিলে নিয়ে বললো।
–দেখুন কি চান আপনি? আপনি আমাকে অন্য যা শাস্তি চাইলে দিতে পারেন। তবুও প্লিজ বিয়ের কথা বলবেন না।

ফাহিম বাঁকা হেসে বললো।
–আর ইউ শিওর? যা বলবো তাই করবেন?

–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।

–ওকে ফাইন। আপনি যখন এতো আকুতি মিনুতি করছেন তখন আপনাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি। আপনিও কি মনে রাখবেন কোন দয়াবান লোকের সাথে পালা পড়েছিল। যাইহোক আসল কথায় আসি। তো এখন থেকে আমি যে কয়দিন এখানে আছি। আমি আপনাকে যা যা করতে বলবো আপনাকে তাই তাই করতে হবে। যখন যেখানে ডাকবো সেখানেই যেতে হবে।

তিশা একটু ভীতু স্বরে বললো।
–যা খুশি তাই মানে? দেখুন খবরদার আমার সাথে উল্টো পাল্টা করার কথা ভাববেন না। আমি মোটেও সে ধরনের মেয়ে না।

ফাহিম তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–তোমাদের মেয়েদের চিন্তাধারা সবসময় ওয়ান ওয়ে ট্রাকেই চলে তাইনা? যত্তসব চিপ চিন্তাভাবনা। আমার এতো খারাপ দিনও আসেনি যে তোমার সাথে ওসব করতে যাবো। আই হ্যাভ এ ক্লাস।

ফাহিমের কথায় রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তিশার। তবে কিছু করার নেই। মাইনকার চিপায় ফাইস্যা গেছে যে। এখন এই হাঁদারাম কেই গুরুঠাকুর মানতে হবে। ফাহিম বলে উঠলো।
–আর হ্যাঁ একদম চালাকি করার চেষ্টা করবেন না। আমাকে না বলে চলে গেলে আমি সাথে সাথেই মাকে ফোন করে বিয়ের কথা বলে দিবো।

তিশা দ্রুত বলে উঠলো।
–আরে না না আমি কোন চালাকি করবোনা। আপনি যা বলবেন তাই হবে। তবে আপনিও প্রমিজ করুন। এরপর আপনি আর বিয়ের কথা বলবেন না।

–ওকে প্রমিজ। তো এখন চলো কাজ শুরু করো।

–কি কাজ?

ফাহিম বেডের ওপর আরামে শুয়ে পড়ে বললো।
–আপাতত আমার পা অনেক ব্যাথা করছে। একটু আপনার কোমল হাতে আমার পা টিপে দিন।

তিশা অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বললো।
–হোয়াট? আমি পা টিপে দিবো?

–হ্যাঁ এখানে কি আমি তুমি ছাড়া অন্য কেউ আছে? জলদি জলদি শুরু করো। নাহলে দ্বিতীয় বার চর বলবোনা। সোজা মাকে ফোন লাগিয়ে দিবো।

–না না আমি করছি তো।

–গুড। লেটস স্টার্ট।

তিশা দাঁতে দাঁত চেপে ফাহিমের পা টিপে দিতে লাগলো। ফাহিম বিশ্ব জয়ের হাসি হাসছে।
__

খুশি সমুদ্র কিনারে ছাতা বিশিষ্ট চেয়ারে হাঁটু ভাজ করে, হাঁটুতে থুতনি ঠেকিয়ে বসে আছে। সামনের অথই সমুদ্রের পানির উত্তাল ঢেউকে অবলোকন করছে। যদি পারতো তাহলে নিজেকেও এই অথই সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতো। এই বোঝতুল্য এই জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে যেত ও। হঠাৎ খুশি পাশে তাকাতেই ওর নজর আটকে গেল। প্রহরের এই পরিবর্তীত রুপে খুশির হৃদয়ের তার বেজে উঠলো। না চাইতেও প্রহরের আবহে ডুবে গেল ও। চোখের সামনে ভেসে উঠছে পুরান দিনের প্রতিচ্ছবি। এই সুদর্শন যুবক যে বরাবরই ওকে ঘায়েল করে দেয়। এমন কেন করছে সে? এমনিতেই এতো কঠিন সবকিছু। তারওপর এখন এভাবে আমার সামনে এসে আমার জন্য সবকিছু আরও কঠিনতর করে দিচ্ছে।

খুশিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রহর বাঁকা হাসলো। সে জানতো আজ খুশি ওর থেকে নজর সরাতেই পারবেনা। প্রহর আকর্ষণ থেকে খুশির বাঁচা মুশকিল।

তবে প্রহরের এই আকর্ষণ শুধু খুশি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রইলো না। আশেপাশের মেয়েগুলোও প্রহরের আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে পড়লো। সবাই লোলুভ দৃষ্টির তীর নিক্ষেপ করছে প্রহরের দিকে। কয়েকজন তো এগিয়েও এলো প্রহরের সাথে পরিচিত হতে। একপ্রকার ক্লোজ হওয়ার চেষ্টায় নিয়জিত তারা। আর এসবকিছুই খুশির চক্ষুশূল হয়ে উঠছে। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণতর হচ্ছে। বুকে জ্বলে উঠছে হিংসুক অগ্নির শিখা। খুশি দাঁতে দাঁত চেপে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তবে বেহায়া চোখের অবাধ্য নজর ঘুরেফিরে সেদিকেই যাচ্ছে । মেয়েগুলো যেন প্রহরের গায়ে ঢলে পড়তে চাইছে। খুশির হাত পায়ের মাঝে নিসপিস করছে। মেয়েগুলোকে এই বালির মাঝে পুতে ফেলার অদম্য ইচ্ছেও জাগছে মনে।

খুশির এই জ্বলন প্রহরের চোখ এড়ালো না। বাঁকা হাসলো প্রহর। খুশির মনের অবস্থা আচ করতে পারছে সে। প্রহরের মনে আছে কোন মেয়ে ওর ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করলে খুশি কতটা ক্ষেপে যায়। ওর করা সেই পাগলামি গুলো প্রহর কখনোই ভুলতে পারে না। এসব কথা মনে পড়তেই প্রহর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। এখন এই জ্বলনই খুশিকে ওর কাছে নিয়ে আসবে। আমাকে অন্য মেয়ের ক্লোজ হতে দেখলে খুশি সহ্য করতে পারবেনা। ও নিশ্চয় কোনো না কোন রিয়্যাক্ট করবে। আর নিজের মনের কথাও বলে দিবে। এসব পরিকল্পনা করে প্রহর সেই মোতাবেক একটা মেয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলতে লাগলো। মেয়েটার হাত ধরে সমুদ্রের পানিতে হাঁটতে শুরু করলো। খুশিকে দেখিয়ে দেখিয়ে মেয়েটার সাথে নানান অঙ্গভঙ্গী করে হাসিঠাট্টা করতে লাগলো । আর আরচোখে তাকিয়ে খুশির রিয়্যাকশন দেখছে। মেয়েটা একসময় ইচ্ছেগত ভাবেই প্রহরের গায়ের ওপর ঢলে পড়লো। প্রহরের ভেতরে ভেতরে চরম বিরক্ত লাগলেও আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না।

খুশির আর সহ্য হচ্ছে না। বুকের মাঝে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল। চোখে নোনাজল জমে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখুনি গিয়ে মেয়েটাকে পানির মাঝে চুবিয়ে মেরে ফেলতে। কিন্তু না, ওর নিয়ন্ত্রণ হারালে চলবে না। নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করতে হবে। আমিতো এটাই চাই। প্রহর আমাকে ভুলে নিজের জীবনে সামনে অগ্রসর হোক এটাই তো চাই। তাহলে এখন যখন সেটাই হচ্ছে তাহলে আমার দূর্বল হয়ে পড়া চলবেনা। খুশি মাথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে চোখের পানি মুছে নিল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে উল্টো পথে হাঁটা ধরলো। তবে চাইলেও মনকে শক্ত করতে পারছে না। দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে ভেতর টা। মাথার ভেতর চক্কর দিয়ে উঠছে। চোখের সামনে কেমন সব ঘোলাটে হয়ে আসছে। শরীরের শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। পায়ের চলা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বেশিক্ষণ আর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেনা। কিন্তু এখন যে ওকে এখান থেকে যেতেই হবে, নাহলে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে। খুশি অনেক কষ্টে নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। তবে মনে হচ্ছে না বেশিক্ষণ আর টিকে থাকতে পারবে। খুশি শরীরের শক্তি হারিয়ে পড়ে যেতে লাগলো। তখনই কেউ সামনে থেকে এসে ধরে ফেললো। খুশি সামনের ব্যাক্তির বুকে গিয়ে পড়লো। খুশি সেই ব্যাক্তির কাঁধে ভর দিয়ে অনেক কষ্টে মাথা তুলে দেখলো এটা জারিফ। খুশি আধো আধো চোখে তাকিয়ে অতি ক্লান্ত সুরে বললো।
–আমাকে নিয়ে চলো বিবি। জলদি নিয়ে চলো। ও দেখার আগেই নিয়ে চলো আমাকে।

জারিফের বুঝতে বাকি রইলো না খুশি কি বলতে চায়ছে।সে একমুহূর্তও দেরি না করে খুশিকে দ্রুত কোলে তুলে নিল। কোলে নিয়ে যেতে যেতে বললো।
–আমি জানি তুই এসব ইচ্ছে করেই করিস। যাতে আমার কোলে উঠে ঘুরতে পারিস। সেদিনও এমন করেছিলি। ছোটবেলার অভ্যাস আর গেলনা তোর। নিজের বউকেও বোধহয় এতবার কোলে নেইনি।

খুশি জানে জারিফ ওর মন ভালো করার জন্য এসব বলছে। তাই খুশিও জারিফের কাঁধে মাথা রেখে ক্লান্তিকর হাসি দিয়ে ক্লান্ত সুরে বললো।
— তোমার বউকে কোলে নিলে তোমাকে তখন চার কাঁধে তুলতে হবে বিবি।

–চুপ বদমাশ। নিজের ভাবিকে মোটা বলছিস? তোর ভাবি শুনলে হয়। তোর মামুর বাড়ি আসা বন্ধ করে দিবে।

অথচ ওরা জানলোই না, ওদের পেছনে কেউ তিব্র ক্রোধে ধ্বংসাত্মক রুপ ধারণ করছে। তার চোখের তপ্ত লাভায় পৃথিবী ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। খুশিকে তখন চলে আসতে দেখে প্রহরও ওর পিছু নেয়। তবে কিছুদূর আসতেই খুশিকে অন্য লোকের বাহু বন্ধনে দেখতে পায় ও। সাথে সাথেই থমকে যায় ওর কদম। লোকটার হাত যখন খুশিকে জড়িয়ে ছিল তখন প্রহরের ভেতর মনে হচ্ছিল কেউ অগ্নিগিরির লাভা ঢেলে দিয়েছে। আর লোকটা যখন খুশিকে কোলে তুলে নিয়ে গেল তখন মনে যেন হলো কেউ ওর কলিজায় ধারালো ছুরি বসিয়ে দিয়েছে। কষ্ট আর ক্ষোভে প্রহরের কপালের রগ ফুলে উঠেছে।চোখের লালিমার পরদ গাঢ় হচ্ছে। হাতে থাকা সানগ্লাস টা হাতের মুঠোয় সজোরে চেপে ধরলো প্রহর। সানগ্লাস ভেঙে হাতের ভেতর গেধে গেল। হাত থেকে টপটপ করে নিচে রক্ত পড়তে লাগলো। তবে তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই প্রহরের। সে যে আপাতত তার হৃদহরণির দহনে জ্বলে মরছে।
___

রাতে ডিনার শেষে নিজের রুমে যাচ্ছিল খুশি। খাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। তবে জারিফের জোরাজুরিতে না গিয়ে পারলোনা। অগত্যা অল্প কিছু খেয়ে এসেছে। করিডর দিয়ে হেঁটে যেতেই কেউ আচমকা ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে রুমের ভেতর নিয়ে গেল। খুশি চমকে উঠে সামনে তাকিয়ে দেখলো এটা প্রহর। প্রহর রুমে এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল। খুশিকে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। খুশির দুই হাতের মাঝে হাত রেখে খুশিকে আটকে দিল। খুশির মুখের ওপর ঝুঁকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো।
–ও কেন ছোঁয় তোমাকে? বল কেন?

খুশি ভ্রু কুঁচকে বললো।
–ছোঁয় মানে? কি বলছ এসব?

–তুমি ভালো করেই জানো আমি কি বলছি। বলো ও কেন ছোঁয় তোমাকে? ওর সাহস কি করে তোমাকে ছোঁয়ার? ও কেন ছুঁবে তোমাকে?

প্রহরের মুখ থেকে মদের তীব্র দুর্গন্ধ আসছে। চোখ দুটোও ভীষণ লাল হয়ে আছে। খুশি বুঝতে পারছে প্রহর এখন সম্পূর্ণ মাতাল আর চরম পর্যায়ে রেগে আছে। এই অবস্থায় ওর হিতাহিত জ্ঞান নেই। খুশি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো।
–প্রহর ছাড় আমাকে। ইউ আর ড্রাংক নাও। তোমার হুঁশ ফিরুক তারপর কথা বলবো।

প্রহর আরও ক্ষিপ্ত সুরে বললো।
–নাহ তুমি যাবে না। কোথায় যাবে তুমি হ্যাঁ? ওই রাস্কেলটার কাছে যাবে? কেন যাবে হ্যাঁ? কেন যাবে? কেন ও তোমাকে ছুঁবে? তুমি শুধু আমার। তোমাকে ছোঁয়ার অধিকার শুধু আমার। ও কেন ছুঁবে? কেন ছুঁবে বলো?
প্রহর খুশির কোমড়ে হাত রেখে কিছুটা অস্বাভাবিক সুরে বললো।
–এখানে ছুঁয়েছিল তখন তাইনা? কেন ছুঁয়েছিল ও বলো?

প্রহর খুশির কোমড়ে জোরে খামচে ধরলো। হাতের নখগুলো সব গেঁথে পড়লো কোমড়ে। ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো খুশি। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো নোনাজল। তবে নেশায় মাতাল প্রহরের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। অতিরিক্ত রাগ আর কষ্টের সংমিশ্রণে পুরো উন্মাদ হয়ে গেছে ও। কি করছে তা নিজেও জানে না।পাগলের মতো বলতে লাগলো।
–আর কোথায় কোথায় ছোঁয় ও তোমার?
প্রহর এবার খুশির গলার ওড়না টা টান দিয়ে নিচে ফেলে দিলো। গলায় হাত রেখে পাগলের মতো বলতে লাগলো।
–এখানে ছুঁয়েছে হ্যাঁ?
কথাটা বলে এবার গলায় কামড় দিয়ে বসালো প্রহর।সবগুলো দাঁত বসিয়ে দিল চামড়ার গভীরে। ব্যাথায় খুশির নাজেহাল অবস্থা। খুশি আর সহ্য করতে না পেরে সর্বশক্তি দিয়ে প্রহরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে উচ্চস্বরে বলতে লাগলো।
–ছাড় আমাকে। পাগল হয়ে গেছ তুমি। জুঙ্গলী জানোয়ার দের মতো আচরণ করছ। হ্যাঁ ও ছোঁয় আমাকে তো? তাতে কি হয়েছে? আমার স্বামী আমার যেখানে খুশি সেখানে ছুঁতে পারে। আমার সাথে যা খুশি তাই কর…….

কথা শেষ করতে পারলো না খুশি। ক্ষিপ্ত প্রহর খুশির কথায় আরও ক্ষিপ্র হয়ে এবার খুশির অধর আঁকড়ে ধরলো। সমস্ত রাগের প্রতিক্রিয়া ঘটালো খুশির নরম অধর কামড়ে ধরে। এটার জন্য খুশি মোটেও প্রস্তুত ছিলনা।কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল ও। প্রহরের দাঁতের ধারে খুশির নিচের ঠোঁট কেঁটে রক্ত বের হতে লাগলো। খুশি এবার নিজেকে ছাড়ানোর জন্য প্রহরের বুকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারতে লাগলো। তবে পাগল প্রহরের সাথে পেরে উঠছেনা কিছুতেই। খুশির অশ্রুধারা গড়ে প্রহরের ঠোঁটে এসে লাগলো। প্রহর ওই অবস্থায়ই খুশির চোখের দিকে তাকালো। খুশির চোখের পানি দেখে প্রহরের একটু হুঁশ এলো। তবে খুশির অধর ছাড়লোনা ও। এবার দাঁতের হিংস্রতার বদলে ও নিজের অধর দিয়ে খুশির অধরে মোলায়েম মিষ্টতা ঢেলে দিতে লাগলো। মেতে উঠলো অন্য এক নেশায়। যে নেশার সামনে এই অ্যালকোহলের নেশা কিছুই না।

প্রহরের এই ছোঁয়ায় খুশিও নিজেকে সামলাতে পারলোনা। ধীরে ধীরে কেমন শান্ত হয়ে এলো ও।না চাইতেও এতদিন পরে প্রিয়তমের ভালোবাসাময় ছোঁয়ায় দূর্বল হয়ে পড়ছে ও। কিছুক্ষণের জন্য সব ভুলে যেতে ইচ্ছে করছে। নিজেকে ভাসাতে ইচ্ছে করছে প্রহরের জোয়ারে। খুশিকে শান্ত হয়ে আসতে দেখে প্রহর এবার খুশির কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে আরও মিশিয়ে নিলো। আর থাকতে পারলোনা খুশি। সব ভুলে নিজেও সায় দিল প্রহরের সাথে। প্রহরের কাঁধের পেছনে হাত দিয়ে প্রহরের চুল খামচে ধরে নিজেও হারালো প্রহরের মাঝে। খুশির রেসপন্স পেয়ে প্রহরের নেশা আরও বেড়ে গেল। প্রহর এবার খুশির অধর ছেড়ে ধীরে ধীরে গলায় নেমে এলো। খুশির গলায় চুমোতে ভরিয়ে দিতে লাগলো। কোমড়ে রাখা হাতটা এবার খুশির কামিজের পেছনের চেইনে রাখলো। চেইন টা একটু খুলতেই খুশির হুঁশ এলো। চমকে গেল ও। ও কি করছে এসব? না না এটা একদম ঠিক না। এভাবে প্রহর ওর কাছে আসলে প্রহর বুঝে যাবে যে,আমি এখনো কুমারী আছি। আমার কোন বিয়ে হয়নি। আমার এতদিনের সব পরিশ্রম ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। না না আমি এটা হতে দিতে পারি না। কিছুতেই না।

খুশি এবার দুই হাতে প্রহরের বুকে সজোরে ধাক্কা দিল। আচমকা ধাক্কায় প্রহর ব্যালেন্স হারিয়ে নিচে পড়ে গেল। খুশি আর একমুহূর্তও না দাড়িয়ে নিচ থেকে ওড়না টা নিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। প্রহর শুধু আহত দৃষ্টিতে খুশির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। তারপর হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বললো।
–খুশিইইইইইই
__

জারিফ খুশিকে দেখার জন্য ওর রুমে এসে দেখলো খুশি রুম অন্ধকার করে,নিচে ফ্লোরে বসে বেডের ওপর মাথা রেখে কাঁদছে। জারিফের বুঝতে বাকি রইলো না খুশির কাঁদার কারণ কি। নিশ্চয় ওই ছেলেটার সাথেই কিছু হয়েছে। জারিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্তে করে বেডের ওপর বসে খুশির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো।
–কেন এসব করছিস খুশি? ছেলেটাকেও কষ্ট দিচ্ছিস। আর নিজেও কষ্টে ভুগছিস। এরচেয়ে ভালো ছেলেটাকে সব সত্যি টা বলে দে।

খুশি মাথা তুলে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
–কি বলবো বিবি? বলো কি বলবো? কিভাবে বলবো? কিভাবে বলবো যার সাথে ও নিজের জীবন কাটাতে তার জীবন রেখায় শেষ হয়ে গেছে? কিভাবে ওকে আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে জড়িয়ে নিবো? যে জীবনটাকে মরণঘাতী “”ব্রেইন টিউমার”” তিলতিল শেষ করে দিচ্ছে। কিভাবে বলবো বলো? ওকি সইতে পারবে? না না কিছুতেই সইতে পারবেনা। আমি চাইনা আমার পরে ও আমার শোকে সারাটাজীবন জীবন্ত লাশ হয়ে থাকে। আমার এই মরণঘাতী অসুখের কথা ওকে কিছুতেই জানানো যাবে না। আমি চাই ও আমাকে ঘৃণা করুক। তবেই ও ওর জীবনে সামনে এগুতে পারবে।

–দেখ তোকে এখানে এনেছিলাম তোর ভালোর জন্য। যাতে প্রকৃতিতে সময় কাটিয়ে তোর একটু ভালো লাগে। কিন্তু এখানে এসে তো তুই এসব স্ট্রেসের কারণে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিস। তুই যত যাই বলিস। আমার মনে হয় তোর ওকে সত্যি টা জানিয়ে দেওয়াই উচিত। নাহলে হয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। ভেবে দেখিস আমার কথা।
কথাটা বলে জারিফ চলে গেল। আর খুশি মনে মনে বললো, কিভাবে বলবো ভাইয়া? ওযে সইতে পারবেনা। খুশির মনে পড়লো সেইদিনের কথা। যেদিন ও একটুখানি অসুস্থ হওয়ায় প্রহরের কি অবস্থা হয়েছিল। সেদিনের কথা ও আজও ভুলতে পারে না। চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই স্মৃতি।

চলবে……

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here