অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ #পর্ব-৩৯

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩৯
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★হাসিখুশি মুহূর্ত টা হঠাৎই কালবৈশাখী ঝড়ের মতো এলোমেলো হয়ে গেল। আনন্দিত পরিবেশ টা কেমন থমথমে গুমোট পরিস্থিতিতে পরিবর্তীত হয়ে গেল। সবার মাঝেই ছেয়ে গেল নীরব অশান্ত অবস্থা। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় আজ আর ওদের বিয়েটা হলোনা। জিদান সাহেব রাকিব হাসানের কাছে মাফ চেয়ে কিছুদিন সময় চাইলো। তারপরই ওরা বেড়িয়ে গেল। যাওয়ার আগে একবার অসহায় চোখে তাকালো বেলির দিকে।না চাইতেও মেয়েটিকে সে আবারও আঘাত দিলো। এরজন্য তার প্রচুর অপরাধ বোধ হচ্ছে। আজ নিজের অসাবধানতার কারণেই এসব হলো। জানা নেই এসব সে ঠিক করতে পারবে কিনা।

খুশির হাত শক্ত করে ধরে নিজেদের রুমে এলো প্রহর। সেই তখন থেকেই প্রহর একবারের জন্যও খুশির হাত ছাড়েনি। যেন হাত ছেড়ে দিলেই কেউ কেঁড়ে নিয়ে যাবে ওর খুশিকে। প্রহরের এই অশান্ত অবস্থা খুশির সহ্য হচ্ছে না। অন্তর কাঁদছে ওর। খুশির আপাতত অন্য সবকিছু বাদে শুধুই প্রহরের চিন্তা হচ্ছে। প্রহরের ভেতর যে কষ্টের আগুন জ্বলছে তা বুঝতে পেরেছি বুক ফেটে যাচ্ছে খুশির। কি করে প্রহরের কষ্ট কমাবে সেই উপায়ই শুধু খুঁজে চলেছে সে।

প্রহর খুশিকে নিয়ে বিছানার মাঝখানে বসালো। বসিয়ে দিয়ে কেমন অস্থির অস্বাভাবিক সুরে বলতে লাগলো।
–তু তুমি এখানেই বসে থাকবে হ্যাঁ? এখান একদম নড়বে না কিন্তু। ওই মহিলা আবার এসেছে। ও আমার সব সুখ কেঁড়ে নেয়। এখন আবার তোমাকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিতে এসেছে। আমি তা হতে দিবোনা। কিছুতেই না।
কথাগুলো বলে প্রহর উঠে দাঁড়িয়ে অস্থির ভাবে এগিয়ে রুমের সব দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে পর্দা টানিয়ে দিলো। প্রহরের এই অস্বাভাবিক করুন অবস্থা দেখে খুশির চোখের পানি বাঁধ ভেঙে বেড়িয়ে আসছে। খুশি মুখে হাত চেপে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো। এইমুহূর্তে প্রহরের সামনে কাঁদলে ও আরও পাগল হয়ে যাবে। তাই দ্রুত চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো খুশি।

সবকিছু আটকানো শেষে প্রহর আবারও দৌড়ে এলো খুশির কাছে। খুশির পাশে বসে খুশিকে বুকের মাঝে আবারও শক্ত করে নিলো। নাহ্ তাতেও যেন ভয় কমছে না প্রহরের। সে এবার বালিশগুলো নিয়ে খুশির চারিদিকে ঘেরাও করে দিলো। তারপর আবারও খুশিকে বুকের মাঝে নিয়ে অশান্ত কন্ঠে বললো।
–এখন ঠিক আছে। এখন আর কেউ আসতে পারবেনা তোমার কাছে। আমার খুশিকে কেউ কেঁড়ে নিতে পারবেনা আমার কাছ থেকে। কেউ না। আমি হতেই দিবো না।

খুশি প্রহরের বুক থেকে মাথা তুলে দুই হাতে প্রহরের মুখটা আগলে ধরে আবেগী কন্ঠে বললো।
–প্লিজ শান্ত হও প্রহর। দেখ আমি তোমার কাছেই আছি। আমাকে কেউ কেড়ে নিবে না তোমার কাছ থেকে। প্লিজ একটু সামলাও নিজেকে।

–না না খুশি তুমি জানোনা। উনি আমাকে সুখে দেখতে পারে না। আবারও আমার সব সুখ কেঁড়ে নিতে এসেছে। সে নিশ্চয় জানে তুমি আমার সব। তাইতো সে এখন তোমাকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিবে। খুশি তুমি সবসময় আমার বুকের মাঝেই থাকবে। আমাকে ছেড়ে এক পাও নড়বে না। তাহলে কেউ আর তোমাকে কেঁড়ে নিতে পারবেনা। কেউ না।

খুশি বুঝতে পারছে এভাবে প্রহর শান্ত হবে না।তাই সে কিছু একটা ভেবে বললো।
–আচ্ছা ঠিক আছে। আমার টায়ার্ড লাগছে। আমি বরং একটু শুয়ে থাকি কেমন?
কথাটা বলে খুশি বালিশে মাথা রেখে চিত হয়ে শুয়ে পড়লো। প্রহরের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো।
–তুমিও আসোনা আমার কাছে।
খুশির আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রহর আস্তে করে খুশির বুকে মাথা রেখে খুশিকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। খুশি দুই হাতে প্রহরের মাথাটা নিজের বুকের মাঝে পরম আবেশে আগলে নিলো। প্রহরের চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললো।
–প্রহর আমি পারছিনা তোমাকে এভাবে দেখতে। আমি জানি তোমার মাঝে অনেক ঝড় চলছে। তোমার ভেতরে কষ্টগুলো জমাট বেঁধে আছে। যা তোমাকে ভেতরে ভেতরে খেয়ে যাচ্ছে। আজ সেগুলো বের করে দাও প্লিজ। তুমি একটু মন খুলে কাঁদো। দেখবে তোমার ভেতরটা অনেক হালকা হয়ে যাবে। আমিতো তোমারই তাইনা? তাহলে আমাকে কি একটু তোমার কষ্টের সঙ্গী হতে দিবেনা? প্লিজ প্রহর নিজেকে আর আটকে রেখো না।ভেতরের সব বের করে দাও আজ।

খুশির আবেগী কথায় প্রহরও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা। এত বছরের জমানো কষ্ট গুলো আজ বাঁধ ভেঙে বেড়িয়ে এলো।খুশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে মুখ চেপে শরীর কাঁপিয়ে কেঁদে উঠলো প্রহর। বাঁধ ভাঙা কান্নায় ভাসিয়ে দিলো খুশিকে। প্রহরের সাথে কাঁদছে খুশিও। কাঁদতে কাঁদতে প্রহর বলতে লাগলো।
–উনি কেন আবার এসেছে খুশি? কেন আমাদের সুখ কেঁড়ে নিতে এসেছে আবারও? কোন মা কি এমন হয় বলোনা? উনার ক্রিয়াকর্মের কথা আমার বলতেও ঘৃণা লাগে। আমাকে অন্য রুমে আটকে রেখে তিনি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে…..। তারপর আমাকে ধমকি দিতেন আমি যদি বাবাকে এসব বলি তাহলে তিনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন। জানো আমি তার পায়ে ধরে কতো কান্নাকাটি করেছিলাম আমাকে ছেড়ে যেন না যায় সেজন্য। কিন্তু উনার মনে পেটের সন্তানের জন্য একটুও মায়া হয়নি। উনি আমার সাথে যা করেছে সেটা তবুও নাহয় আমি ভুলে গেলাম। কিন্তু উনি আমার বাবাকে যে কষ্ট দিয়েছে সেটা কখনও ভুলতে পারবোনা। আর তারজন্য আমি তাকে কোনদিন ক্ষমা করবোনা। আমি ছোট ছিলাম কেঁদে কেটে নিজের কষ্ট জাহির করতাম। কিন্তু বাবা তো সেটাও পারতোনা। একা একা ভেতরে ভেতরে গুমোট হয়ে থাকতো। একা রুমে বাবাকে আমি অনেক দিন লুকিয়ে কাঁদতে দেখেছি। দিনের পর একাকিত্বের সাথে লড়তে হয়েছে তাকে। আর আজ যখন বাবা নিজের জীবনে একটু সুখী হতে চলেছে উনি আবারও চলে এসেছেন বাবার সুখ কেঁড়ে নিতে। কেন করে এমন উনি? কি চায় তিনি? আর কত কষ্ট দিলে উনি শান্তি পাবেন?

প্রহরের কথা শুনে রাগে আর ঘৃণায় শরীর রি রি করছে খুশির।ইচ্ছে হচ্ছে এখুনি গিয়ে গলা টিপে খুন করে ফেলতে। কোন মা এমন কিভাবে হতে পারে? কিন্তু আর না। ওই মহিলাকে আমি এবার জিততে দিবোনা।এবার উনি আমার প্রহরকে কোন কষ্ট দিতে পারবে না। কিছুতেই না। খুশি প্রহরের মাথায় চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কান্না করে প্রহরের সত্যিই একটু হালকা লাগছে। সে ধীরে ধীরে খুশির বুকেই একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।
__

–ছাড় আমাকে ছেড়ে দাও। প্রহররররর… বাঁচাও আমাকে। দেখ ও নিয়ে যাচ্ছে আমাকে।

পাপিয়া বেগম খুশির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। খুশি ছাড়া পাওয়ার জন্য আকুতি মিনতি করছে। তবুও পাপিয়া বেগম ছাড়ছে না। টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। প্রহর অনেক চেষ্টা করেও এগিয়ে যেতে পারছেনা ওদের কাছে। মনে হচ্ছে ওর হাত পা কেউ শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। চিল্লাতে গেলে গলা দিয়ে কোন আওয়াজও বের হচ্ছে না। প্রহরের জানটা যেন বেরিয়ে যাচ্ছে।
–খুশিইইইইই

চোখ মেলে ঠাস করে উঠে বসলো প্রহর। জোরে জোরে হাঁপাতে লাগলো। সারা শরীর ঘেমে নেয়ে গেছে। প্রহর তড়িৎ গতিতে পাশে ফিরে তাকালো। বিছানায় খুশিকে না দেখে হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠল প্রহরের। খু খুশি?? খুশি কোথায়??খুশিইইই??খুশিইইই……….. প্রহর অস্থির হয়ে খুশির নাম ধরে ডাকতে লাগলো। ডাকতে ডাকতে দৌড়ে নিচে নেমে এলো প্রহর। পাগলের মতো খুশিকে খুঁজতে লাগলো।

জিদান সাহেব সোফায় বসেছিলেন। প্রহরকে এভাবে অস্থির হতে দেখে তিনি চিন্তিত সুরে বললেন।
–কি হয়েছে প্রহর? এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে?

প্রহর অস্থির কন্ঠে বললো।
–বাবা খুশি কোথায়? বলনা আমার খুশি কোথায়?

–খুশি মা তো একটু আগে বাইরে গেল। বললো কি যেন একটা দরকারি কাজে যাচ্ছে। একটু পরেই চলে আসবে।

খুশি বাসায় নেই এই কথাটাই প্রহরকে প্রাণহীন করার জন্য যথেষ্ট ছিল। প্রহর কম্পিত গলায় বললো।
–বা বাইরে গেছে মানে? কোথায় গেছে? আর তুমি ওকে যেতে দিলে কেন?
প্রহর দ্রুত ফোন বের খুশির নাম্বারে কল দিলো। কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না। কয়েকবার কল দেওয়ার পরও ধরলো না। প্রহর যেন এবার পুরো পাগল হয়ে গেল। দুই হাতে মাথার চুল টেনে ধরে উন্মাদের মতো পায়চারী করে বললো।
–এখন আমি কি করবো? কোথায় খুঁজবো খুশিকে? ও ওই মহিলা আমার খুশিকে কেঁড়ে নিবে। সব আমার দোষ। আমি কেন ঘুমুতে গেলাম? কেন? কেন? কেন?
প্রহর রাগে সামনের টি টেবিলে সজোরে একটা লাথি মেরে দিল। প্রহরের এমন পাগলামো দেখে জিদান সাহেব ঘাবড়ে গিয়ে বললো।
–এত চিন্তার কিছু নেই প্রহর। খুশির কিছু হবে না। আচ্ছা খুশিতো বাসার গাড়ি নিয়েই গেছে। এক কাজ কর ড্রাইভারকে ফোন করে জিজ্ঞেস কর ওরা কোথায়।

জিদান সাহেবের কথামতো প্রহর ওদের ড্রাইভারকে ফোন করলো। আর ড্রাইভারকে বলা ঠিকানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো প্রহর।
__

পাপিয়া বেগমের সামনে বসে আছে খুশি। কিছুক্ষণ পূর্বেই এখানে এসে পৌঁছেছে ও। পাপিয়া বেগম বলে উঠলেন।
–তো বলো এখানে কেন এসেছ তুমি? কি বলতে চাও?

খুশি দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো।
–দেখুন ভনিতা করে লাভ নেই। আমি ভালো করেই জানি এসবি মানে আমার শশুরের সাথে নতুন করে সংসার শুরু করার আপনার কোন ইচ্ছেই নেই। আর না প্রহরের প্রতি কোন মায়ার কারণে এসব করছেন। তো আসল পয়েন্টে আসুন। কি চান আপনি? টাকা না সম্পত্তির ভাগ? দেখুন আমি সংসারের সুখের জন্য সব করতে রাজি।

খুশি টি টেবিলের ওপর একটা ফাইল রেখে বললো।
–এখানে প্রহরের সম্পত্তির পঁচিশ পার্সেন্ট শেয়ার আছে। যা প্রহর আমার নামে করেছিল। আমাকে বিয়ের গিফট হিসেবে দিয়েছিল। এটা আমার কাছে শুধু সামান্য কাগজের টুকরো ছাড়া কিছুই না। তাই এগুলো আমি আপনার নামে করে দিতে রাজি। বিনিময়ে আপনি এই ডিভোর্স পেপারে সাইন করবেন।আর প্রমিজ করবেন আর কখনো আমাদের জীবনে দখলদারি করতে আসবেন না।

পাপিয়া বেগম কতক্ষণ খুশির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর শান্ত সুরে বললো।
–ঠিক আছে।

পাপিয়া বেগম ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিলো। আর খুশি সম্পত্তির পেপারে। সাইন শেষেই খুশি পেপার নিয়ে উঠে আসতে নিলেই পাপিয়া বেগম নরম সুরে বলে উঠলেন।
–প্রহর সত্যিই অনেক লাকি। কারণ তোমার মতো জীবনসাথী পেয়েছে। দেখে ভালো লাগলো।

পাপিয়া বেগমের সুর কেমন বদলানো মনে হচ্ছে আজ। খুশি বলে উঠলো।
–এতই যখন ওকে ভালো দেখতে চান তাহলে ওর ক্ষতকে কেন তাজা করতে আবার চলে এসেছেন?

পাপিয়া বেগম অপরাধী সুরে বললো।
–আমি ইচ্ছে করে এসব করিনি। আমার কাছে আর কোন উপায় ছিলোনা। আমার আরেক ছেলে পলাশের ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে। চিকিৎসার জন্য লাখ লাখ টাকার দরকার। আর আমার বর্তমান হাসব্যান্ড রাসেল এর ব্যাবসা লসে গেছে। ব্যাংকরাপ্ট হয়ে গেছি আমরা। রাসেল সেই শোকে দিনরাত মদ খেয়ে পড়ে থাকে। এসব হয়তো আমারই কর্মের ফল পাচ্ছি। তবে যাইহোক ছেলেকে তো আর চোখের সামনে মরতে দেখতে পারি না। তাই একমাত্র এটাই উপায় ছিলো। ডিভোর্সের বদলে কিছু পাওয়ার আশাই এসব করেছি। জানি এখানেও স্বার্থপরের মতোই কাজ করেছি। কিন্তু কি করবো? আর কোন উপায় ছিলোনা।

দরজায় দাঁড়িয়ে এতক্ষণ সবকিছু শুনছিল প্রহর। খুশিকে খুঁজতে এখানে এসেছিল ও।কিন্তু দরজার কাছে আসতেই পাপিয়া বেগমের কথাগুলো শুনতে পায় সে। প্রহর এবার ভেতরে এসে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–আপসোস আপনি আপনার সন্তান কে কখনো চিনতেই পারেননি। আরে একবার বলেতো দেখতেন। যতটাকা চাই দিয়ে দিতাম। এই প্রহর মেহরাব চ্যারিটি করতে কখনো পিছু পা হয়না। সে যেই হোক না কেন। তারজন্য আমাদের জীবনে এসে তান্ডব না করলেও হতো।

পাপিয়া ছলছল চোখে তাকালো প্রহরের দিকে। নিজের ছেলেকে সে আসলেই কখনো চিনতে পারেনি। আসলে ওর মতো ছেলের মা হওয়ার যোগ্যই না আমি।

প্রহর এবার দ্রুত পায়ে খুশির কাছে এসে দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে অস্থির কন্ঠে বললো।
–তুমি আমাকে না বলে এখানে কেন এসেছ? জানো কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি? আমাকে জ্বালাতে খুব মজা লাগে না তোমার?

খুশি অপরাধী সুরে মিনমিনিয়ে বললো।
–সরি, তোমাকে বললে তুমি আমাকে কখনোই আসতে দিতে না। তাই না বলে এসেছি। প্লিজ মাফ করে দাও।

–হ্যাঁ এখন ইচ্ছে করে এমন কিউট ফেস করবে যাতে আমি গলে যাই তাইতো? তুমি আগে বাসায় চলো তারপর দেখাচ্ছি মজা।

প্রহর খুশির কাঁধ জড়িয়ে ধরে ওকে নিয়ে চলে যেতে উদ্যোত হলো। ঘুরে দুকদম আসতেই আবার একটু দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে থাকা অবস্থায়ই পাপিয়া বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
–আমি আজ থেকে আপনাকে মাফ করে দিলাম। কারণ আমি আপনার জন্য আমার মনে কোন রকম অনুভূতি রাখতে চাইনা। এমনকি ঘৃণাও না। আজ থেকে আপনি আমার জন্য বাকি সাধারণ মানুষের মতো শুধুই একটা অচেনা ব্যাক্তি। যার প্রতি কোন অনুভূতিই থাকে না।

কথাটা বলেই প্রহর খুশিকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল। পাপিয়া বেগমের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা জল। এটাই হয়তো ও ডিজার্ভ করে।
__

দুদিন পর ঘরোয়া ভাবে জিদান সাহেব আর বেলির বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ের কার্যক্রম শেষে বউ নিয়ে বাসায় ফেরে সবাই। খুশির আনন্দ আর দেখে কে। নাচতে নাচতে বেহুশ হয়ে যাচ্ছে সে। প্রহর বেচারা কিছুতেই তাকে শান্ত রাখতে পারছেনা। কোনরকমে ধরে বেঁধে বাসায় নিয়ে আসলো তাকে।

বাসায় এসেও সেই হৈ হুল্লোড়। বেলিকে নিয়ে গেল জিদান সাহেবের রুমে। রুমে এসে বাসর ঘর সাজানো দেখে চরম অস্বস্তিতে পড়ে গেল বেলি। সে খুশির উদ্দেশ্যে চোখ গরম করে বললো।
–এই পাগলী এসব কি করেছিস? এই বয়সে কেউ বাসর করে?

–ওমা বাসর করার ওপর কি কোন এজ লিমিট দেওয়া আছে নাকি যে এত বছর পর বাসর করা যাবে না? আরে বাসর তো ফিলিংস থেকে হয়। এসবির নাহয় দ্বিতীয় বিয়ে। তোমারতো প্রথম বিয়ে তাইনা? বাসর নিয়ে নিশ্চয় কতো প্লানিং আছে। বলোনা মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটছে তাইনা বলো? ♬ আজ মধুরাত আমার ফুলসজ্জার…

বেলি খুশির কান টেনে ধরে বললো।
–অনেক পাঁজি হয়ে গেছিস তাইনা? প্রহর আর জিদান তোকে লায় দিয়ে একেবারে মাথায় তুলেছে। এখন আমি এসে গেছি। তোর সব বান্দরামী আমি ছুটিয়ে দিবো।

–বাহ্ শাশুড়ী হতেই নিজের রঙ দেখানো শুরু করে দিলে? একেবারে প্রথম দিনই দজ্জাল শাশুড়ীর রোল চালু করে দিয়েছ। তুমি তো রিনা খানকেও ছাড়িয়ে যাবে। একেই বলে ইচ্ছে করে বিপদ ডেকে আনা।

–হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস। আমি আসলেই একটা দজ্জাল শাশুড়ী। এখন দেখ এই দজ্জাল শাশুড়ী তোর কি হাল করে।

খুশি যথারীতি তার ওভারডোজ মেলোড্রামা শুরু করে দিলো। নেকি কান্নার সুরে বললো।
♬ মারবেন না মারবেন না আ.. আম্মাজান গো..
♬ ও আম্মাজান মারবেন না আমারে গো…
♬ আম্মা.. আম্মাজান গো…

বেলি এবার খুশির দিকে তেড়ে যেতে লাগলে খুশি হাসতে হাসতে দৌড়ে বাইরে চলে গেল।
নিজের রুমে এসে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই প্রহর ওর সামনে এসে আবির্ভাব হলো। প্রহরকে দেখে খুশির চোখের মনি বেড়িয়ে আসার উপক্রম। প্রহর সাদা শার্ট আর সাদা প্যান্ট পড়েছে। শার্টের বোতাম সবগুলো খোলা। যার দরুন প্রহরের বলিষ্ঠ দেহ দৃশ্যমান। এই আকর্ষণীয় যুবককে দেখে গলা শুঁকিয়ে যাচ্ছে খুশির। প্রহর এক হাত খুশির মাথার পাশে দরোজায় ঠেকালো। আরেক হাত খুশির কোমড়ে রেখে খুশির দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বললো।
–হায় সেক্সি, এত দেরি করলে কেন আসতে? জানো কখন থেকে তোমার অপেক্ষা করছিলাম?

খুশির এবার মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম। এটা কি সত্যিই প্রহর? নাকি আবারও ও জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে? খুশি কোনরকমে ঢোক গিলে বললো।
–প্রহর তুমি কি উল্টো পাল্টা কিছু খেয়েছ নাকি?

প্রহর খুশির কানের কাছে ঝুঁকে লো ভয়েসে বললো।
–উহুম খাইনি। তবে এখন খাবো, তোমাকে।

নাহ্ আর নিতে পারলোনা খুশি। খুশির হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠে বললো।
–আআআ ভুততত ভুততত….. বাঁচাও বাঁচাও ভুত এসেছে আমার ঘরে। প্রহর কোথায় তুমি?

বেচার প্রহর ভ্যাবাচেকা খেয়ে মন। তড়িঘড়ি করে খুশির মুখ চেপে ধরে বললো।
–আরে আরে কি করছ? চিৎকার কেন করছ? পুরো মহল্লা জানাবে নাকি? আর আমাকে কোন অ্যাঙ্গেল থেকে তোমার ভুত মনে হচ্ছে? পুরো রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজিয়ে দিলে।

কথাট বলে প্রহর খুশিকে ছেড়ে সরে দাঁড়াল। খুশি তখন বললো।
–তাহলে এসব কি? হঠাৎ করে এমন আউট অফ ক্যারেক্টর চলে গেলে ভুত ভাববো নাতো কি করবো? বিবিসি চ্যানেলে হঠাৎ এমটিভি চলে আসলে তো একটু চমকেই যাবো।

–কিহ্ আমি বিবিসি চ্যানেল? ওকে ফাইন। আমি তাহলে গিয়ে বরং শুয়ে পড়ি।

প্রহর অভিমান করে চলে যেতে নিলেই। খুশি দ্রুত প্রহরের সামনে এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
–আচ্ছা আচ্ছা সরি সরি ভুল হয়ে গেছে। এতদিন পর আমার হাসব্যান্ড এর এতো রোমান্টিক আন্দাজ দেখতে পাচ্ছি। এটা বন্ধ করোনা প্লিজ। চলোনা আবার শুরু করি। হ্যাঁ তো বলো তুমি কি যেন বলছিলে?

প্রহর ফট করে খুশিকে কোলে তুলে নিয়ে বললো।
–বলাবলির সময় শেষ। ইটস টাইম ফর এ্যাকশন।

খুশি দুষ্টু হেসে বললো।
–হায়, আজতো খেলা জমবে বেস।

চলবে…..

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here