বাংলাতে একটা প্রবাদ আছে ‘সুখে থাকতে ভূতে কিলায়’ আর ভূতে কিলালে যাও যমের বাড়ি। নিজের চলমান পরিস্থিতিতে শেষের অংশটুকু আমি যুক্ত করেছি।
কথাটুকু আপনমনে বলেই নীলা আবারও দাঁত কিড়মিড় করল। তার ইচ্ছে করছে সমানে কয়েকজনকে তুলে আছাড় মারতে। তাহলে যদি শরীরের প্রবাহমান তার রাগটুকু একটু কমে।
অতিরিক্ত রাগের কারণে তার ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রণহীন ক্রোধে শরীর তার থরথর করে কাঁপছে।
কেননা গ্রীষ্মের এই তাপদাহ কাঠখোট্টা গরমের দুপুরবেলায়, বাড়িসুদ্ধ তারা বোনের শশুর বাড়িতে যাচ্ছে। এককথায় সেজেগুজে যমেরবাড়িতে যাচ্ছে!
যম নয়তো কি? যেই ব্যক্তির একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজই হলো নীলাকে হেনস্তা করা, তাকে সে রাক্ষস ডাকতেও সংশয় বোধ করবে না।
—- ” আসলেই অসভ্যটা একটা মানুষরূপী রাক্ষস। নতুবা ছোট্ট একটা মেয়ের সঙ্গে কেউ এমনটা করতে পারে? ”
কথাটা বলে আয়নার নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে, আবারও রাগে-দুঃখে নীলা ড্রেসিংটেবিলের উপরে রাখা ফুলদানিটা মাটিতে আছাড় দিলো।
কিন্তু নীলা যাকে ভেবে ক্রোধে এতটা হাঁসফাঁস করছে, সে কিন্তু নেহাৎই একজন ভদ্র মানুষ।
নীলার সেই যম কেবল নীলার জন্যই যম হয়ে জন্মেছে।
বাকি সবার চোখে সেই যম নামক ব্যক্তির মতো ধোয়া তুলসীপাতা এই পৃথিবীর বুকে আর একটিও হতে পারে না।
যাকে এককথায় বলে ‘দুষ্প্রাপ্য’। যার নাগাল পাওয়া বা দর্শন খুবই বিরল বা দুঃসাধ্য ।
—- ” দুষ্প্রাপ্য না ছাই! পুরো দুনিয়ায় সামনে নম্র-ভদ্র, সুশীল সেজে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু তার আসল রুপ তো এই আমি জানি।
অসভ্য লোক একটা! ভালো মানুষের মুখোশ লাগিয়ে সবার সামনে সাধুসন্ন্যাসী সাজে। ”
নীলার যেন কোনোকিছু করেই ভিতরে জ্বলতে আগ্নেয়গিরির উত্তাপ শীতল হচ্ছে না।
এক নাম্বারের অভ্রদ্র, শয়তান, বেয়াদব, নির্লজ্জ, অসভ্য। মানে হচ্ছে পৃথিবীর সবগুলো বাজে উপাধি নীলা সেই ছেলের জন্য বরাদ্দ করে যাচ্ছে।
—- ” কিরে তোর হয়েছে, আর কতক্ষণ? ”
নীলা মায়ের শব্দ পেয়ে তার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। সে নিজের ভিতরকার রাগকে দমন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
মায়ের সাথে রাগ দেখিয়ে বিন্দুমাত্র লাভ হবে না। উল্টো ফলস্বরূপ কয়েকটা শরীর জ্বলানো কথা আর সজোরে থাপ্পড়ও খেতে পারে।
তাই শেষবারের মতো মুখে ভীষণ অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলে সে বলে উঠল,
—- ” আম্মু আমি ঐ বাড়ি যাব না। সেখানে গিয়ে আমার কি কাজ?
আর তাছাড়া আমার শরীরটাও তেমন সুবিধার মনে হচ্ছে না। জ্বর-টর আসতে পারে। তাই আমি বাসায় থাকতে চাই তোমরা বরং যাও। ”
—- ” চুপ বেয়াদব মেয়ে, শুধু বেশি কথা বলিস। ছেলেটা এতদিন পর দেশে আসছে কোথায় গিয়ে একটু ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিবি।
তা না করে কি করছিস? অযথা অসুস্থতার বাহানা দেখাচ্ছিস! থাপড়িয়ে সবকটা দাঁত ফেলে দিব।
পাঁচ মিনিট সময় দিলাম, জলদি রেডি হয়ে বসারঘরে আস। ”
বলেই নার্গিস খাতুন হনহনিয়ে রুম থেকে বের হলেন। রাগে-দুঃখে নীলা সোনালী রঙের চিরুনিটা, জোরে একটা আছাড় দিয়ে মেঝেতে ফেলল। রাগে তার পিত্তি পর্যন্ত জ্বলে উঠছে।
—- ” কি আমার নবাব সিরাজুদ্দৌলার বংশধর আসছে! উনাকে গিয়ে নাকি আবার দেখতেও হবে।!
সম্ভব হলেতো আমি সেই অসভ্য ব্যক্তিকে পঁচা ডোবায় চুবিয়ে এনে স্বাগতম জানাতাম।
এই ছেলের নাকি আবার অতিথি আপ্যায়ন! ”
নিজের মনোবাসনাকে আপাতত সান্ত্বনা দিয়ে, নীলা উঠে দাড়িয়ে লিভিংরুমের দিকে হাঁটা দিলো।
গন্তব্য এখন বনানি।
এতদিন বাড়ির নামটা পদ্মলয়া হলেও, আজ থেকে নীলা এই সুন্দর নামটা পাল্টিয়ে নতুন করে নামকরণ করেছে।
সুতরাং গন্তব্য এবার “যমের বাড়ি”।
.
বাহ্ এতো দেখি এলাহিকান্ড! সবকিছুতেই তাদের যেন অস্বাভাবিক বাড়াবাড়ি।
রান্নাঘরে লেগে আশে বাড়ির ছোট ছেলের পছন্দের খাবারের লাইন। এত খাবার দেখে মনে হচ্ছে সে কোনো মানুষ নয়, কোনো ভুড়িওয়ালা পেটমোটা ভোজনরসিক খাদক।
অবশ্য নীলা তাকে দেখেনি। এখন ভুড়িওয়ালা পেটমোটা হলেও হতে পারে। কিন্তু এত খাবার কি কোনো সাধারণ মানুষ খেতে পারে?
শুধু খাবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের সবকিছুতেই চলছে অসম্ভব রকমের বাড়াবাড়ি।
ডুপ্লেক্স বাড়িটাকে সম্ভব হলে উনারা আজ বিয়ে বাড়ি বানিয়ে ফেলে। আশেপাশের ডেকোরেশন দেখে নীলার কাছে এমনটাই মনে হচ্ছে। বাড়ির ভিতর-বাহির সবকিছু যেন ঝকঝকে তকতকে ফকফকে।
এমনিতেই বনানির এই আকাশের রঙে রাঙানো বাড়িটা আভিজাত্যপূর্ণ। বাড়ির প্রতিটি কোণায় কোণায় যেন আভিজাত্যের ছোঁয়া।
বাড়ির ভিতরের অংশটা যেমন সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ একইভাবে বাহিরের অংশটাও মনোমুগ্ধকর।
বিচিত্র লতাগুল্ম দিয়ে উঁচু দেয়াল প্রাচীরগুলো আবৃত। বিশাল বাগানে ফুটে আছে অসংখ্য লাল-সাদা গোলাপ, বেলি, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, মাধবীলতা, কুঞ্জলতা, ভোগেনবিলিয়া, হরেক রকমের মর্নিং গ্লোরিসহ আরও অনেক ফুল। ফুলে ফুলে চারপাশ যেন মুখরিত।
মনে হয় সৌন্দর্যভরা প্রকৃতির এক অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য। যা কোনো প্রকৃতি প্রেমিকের চোখে মুগ্ধতা আনতে বাধ্য।
এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে দিয়েও আভিজাত্যের ছোঁয়া গায়ে লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে, স্কয়ার আকারের বিশাল সুইমিংপুলটি।
আজ যেখানে দিনেরবেলাতেও লাল-নীল-সোনালী রঙের মরিচ বাতি দিয়ে আলোকিত করে রাখা হয়েছে।
এটা কি মানা যায়?
এত আধিখ্যেতার কিছু কি এখানে আছে?
আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো রাজা-মহারাজার আগমন ঘটতে চলেছে।
অবশ্য তাকেও রাজা বলা যায়।
নীলার ভাষ্যমতে অসভ্য সাম্রাজ্যের এক রাজা।
—- ” পিচ্চু বাবুকে একটু কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করতো। শান্তিতে কাজটুকুও শেষ করতে পারছি না। ছেলে হয়েছে এক বাপের পেয়াদা। বাপ ছাড়া সে কিছুই বুঝে না। আমার কি এখন তাকে কোলে নিয়ে হাঁটার সময় আছে? ”
নিধি মুখের ঘামটা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতে, শাদমানকে নীলার কোলে দিয়ে দিলো।
নীলা বোনপো কে কোলে নিয়ে তার গালে ঠোঁট স্পর্শ করে আদর করল।
তারপর নিধির দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,
—- ” আমার এত ভালো জিজুটার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন? জিজুর কাছে কিন্তু খবরটা পৌঁছিয়ে দেব। ”
—- ” একে বলে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। নিজের আপন বোনকে বাদ দিয়ে জিজুর চামচাচি করিস! ”
—- ” আরে আপুনি রাগ করো কেন? কি করব বলো, আমার জিজুটাই যে এমন। প্রশংসা না করে থাকতেই পারি না। ”
—- ” হয়েছে হয়েছে। তোমাদের জিজু-শালিকার আধিখ্যেতা নিয়ে আমার বসে থাকার সময় নেই
। এত এত কাজ বাকি আছে। আর সময় একদমই হাতে নেই। সে চলে আসলো বলে।
আচ্ছা তোরা থাক আমি এবার গেলাম। ”
নিধি দ্রুত রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। নীলা একবার সেদিকে তাকিয়ে রাগ মিশ্রিত অনুভূতি প্রকাশ করল। তারপর সবকিছুকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে, বোনপো কে নিয়ে খেলায় মেতে উঠল।
—- ” বাবা খালামণিকে একটা চুমু দাওতো। ”
শাদমান তার সামনের ছোট্ট ছোট্ট দাঁত বেড় করে মিষ্টি হাসল। তারপর এগিয়ে এসে নীলার গালে চুমু দিলো। নীলাও তাকে আদর করতে লাগল।
হঠাৎ আধো শেখা বুলিতে শাদমান বলে উঠল,
—- ” পা.পু। ”
—- ” কি বাবা? ”
—- ” পা.পু। ”
নীলা কিছু বুঝতে পারল না। মিনু নীলাকে লেবুর শরবত দিতে এসে শাদমানের কথাটুকু শুনতে পেল।
নীলা যে তার কথা কিছুই বুঝতে পারেনি, সেটা বুঝে বলে উঠল,
—- ” আপামণি শাদ বাবা ছোট ভাইয়ের কথা বলতাসে। ”
নীলার কানে কথাটা পৌঁছাতেই, নীলার শরীরে আবারও যেন গরম তেলের ছিটা পড়ল। মুহূর্তেই তার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গিয়ে বিতৃষ্ণা নেমে এলো।
মিনু শরবতের গ্লাসটা সেন্টার টেবিলের উপরে রেখে চলে যেতেই শাদমান আবারও বলে উঠল,
—- ” পা.পু। ”
নীলার মুখে এখন আর বিতৃষ্ণা নয় বরং হাসি ফুটে উঠল। ভীষণ তৃপ্তির এক হাসি। মনে হচ্ছে শরীরের জ্বলন্ত আগুনে ছোট্ট শাদমানটা হিমশীতল জল ঢেলে দিয়েছে।
নীলা শাদমানকে কাছে টেনে তার গালে আওয়াজ করে একটা চুমু দিয়ে বলে উঠল,
—- ” বাবা এর জন্য তোকে আমার নোবেল পুরষ্কার দেওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু আমার সাধ্যের বাহিরে, তাই চুমু দিয়ে পূরণ করলাম। এতদিন তোর ‘চ’ কে ‘প’ বলা নিয়ে বহুত কসরত করেছি।
কিন্তু আর না। এখন থেকে আমি স্বয়ং তোকে টেনিং দিবো কিভাবে ‘স’ কে ‘প’ বলতে হয়।
কিরে বাবা, পারবি না? ”
ছোট্ট শাদমান নীলার কথার আগামাথা না বুঝে ড্যাব ড্যাব করে তারদিকে তাকিয়ে আছে। নীলা তার গালটা হালকা টেনে দিয়ে কুটিল হেসে বলল,
—- ” তোকে যে পারতেই হবে। তার জন্য তোকে আজ থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তুই হবি আমার কামানের গোলা। তোকে দিয়ে আমি তোর পা.পুকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার করব। ”
বলেই নীলা আবারও একটা বিজয়ের হাসি, ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে তুলল। আর আনন্দে আত্মাহারা হয়ে বোনপো কে নিয়ে বিশুদ্ধ হাওয়া খেতে বাগানের দিকে এগিয়ে গেল।
এখন সূর্যের তাপ কিছুটা কমেছে। আর পূর্বের নামানুসারে পদ্মলয়ার এই দক্ষিণ পাশটাতে খুব বাতাশ থাকে। অনেকগুলো ফুল-ফলের গাছের সমারোহে সবসময় একটা শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। তাই ছায়ার নিচে দোলনায় বসে দুইজনে খুনসুটি আর শিক্ষাগ্রহণে মেতে আছে।
আজকের তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘স’ কে ‘প’ উচ্চারণ করা।
শাদমান এমনিতে সবকিছুই মোটামোটি ঠিক করে উচ্চারণ করতে পারলেও ‘চ’ কে ‘প’ বলে ভুল করে। হাজার চেষ্টা করেও তাকে এই ভুল থেকে বের করে আনা যায়নি।
তাই বাড়ির সবাইও এখন আর কিছু বলে না। মানে একপ্রকার হাঁপিয়ে উঠেছে।
তাই সে যদি আজ থেকে তার ভুলের খাতায় আরেকটা শব্দ যোগ করে, তাহলে বাড়ির কারও নীলার উপর সন্দেহ আসবে না।
এবং নীলা অদৃশ্য শক্তি নিয়ে তার যমকে শায়েস্তা করবে।
নীলার এসব ভেবেই আনন্দে নাচতে ইচ্ছা করছে।
কেমন হবে তার মুখটা? যখন শাদমান তাকে,
—- ” পাদিদ বলে নাম সম্বোধন করবে? ”
নীলা কথাটা বলেই আবারও একদফা কুটিল হাসি হাসলো। তারপর আবারও দ্বিগুণ উৎসাহে শাদমানকে ভাষা শেখাতে লেগে গেল।
খালামণি বোনপো এতই নিজের কাজে ব্যস্ত, মেইন গেইট দিয়ে যে কালো রঙের গাড়িটা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল সেদিকে তাদের খেয়াল নেই।
শাহেদ সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নিচে নামল। তারপর ছোট ভাইয়ের উদ্দেশ্য বলে উঠল,
—- ” ভাই ওয়েলকাম হোম। ”
সে উওরে মিষ্টি করে হাসল। শাহেদ নিজেই আবার বলে উঠল,
—- ” তাড়াতাড়ি আয়, বাসার সবাই বোধহয় অপেক্ষা করে বসে আছে। মায়ের যে কি অবস্থা হবে, আমার সেটা ভাবতেই হাসি পাচ্ছে। ”
—- ” ভেরি ব্যাড ভাইয়া। আমার সুইটহার্টকে নিয়ে এমন মন্তব্য আমি মোটেই সহ্য করব না। ”
—- ” হয়েছে বাদ দে, তোর এই মিষ্টি কথা আমাকে বলতে আসবি না। তোমাকে আমি হারে হারে চিনি। ”
—- ” কাম অন ভাইয়া, আমি কিন্তু তোমাকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে চিনি। ”
শাহেদের মুখটা এবার চুপসে গেল। ইচ্ছে করছে এখনই ছোট ভাইটাকে কয়েকটা উওম মাধ্যম লাগাতে।
কে বলেছিল তাকে পড়ে পড়ে এমন বিদ্যাসাগর হতে?
হয়েছে ভালো কথা। কিন্তু বড় ভাইয়ের পিছনে নিউজ রিপোর্টের মতো গোয়েন্দাগিরি করতে কে বলেছে?
শাহেদ আর কথা বাড়াতে গেল না। নতুবা “কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেড়িয়ে আসবে। ”
শাহেদ হালকা গলা কেশে পরিস্থিতি সামলে নিয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠল,
—- ” আচ্ছা চল এবার, সবাই অপেক্ষা করছে। ”
দুইজনে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই সে বলে উঠল,
—- ” ভাইয়া তুমি ভিতরে যাও, আমি একটু আসছি। ”
—- ” তুই আবার কোথায় যাবি? ”
—- ” আরে একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে। তুমি যাওতো আমি এখনই আসছি। ”
শাহেদ আর জোর করল না। সদরদরজা খোলো ভিতরে চলে গেল।
—- ” বাবা হচ্ছে না তো। বলো পাদিদ। ”
—- ” পাদিদ। ”
—- ” এখন বলো সাদিদ। ”
—- ” সাদিদ। ”
—- ” আরে বাবা সাদিদকে ‘পাদিদ’ বলবি। এতক্ষণ তোকে কি শেখালাম আমি?
এইভাবে জ্ঞান অর্জন করলে ভালো ছাত্র হতে পারবি না। তাই আবারও মনোযোগ দিয়ে খেয়াল কর।
কেউ যদি তোকে ডাকতে বলে সাদিদ, তুই তখন ডাকবি পাদিদ। মনে থাকবে? ”
—- ” সাদিদ। ”
—- ” ধুর ছাই! তুই একেবারে গাধা স্টুডেন্ট। এত বলার পরেও ভুল উচ্চারণ করিস! ”
নীলা গালে হাত দিয়ে অসহায় মুখে শাদমানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার এতক্ষণের বিজয়ের উৎসাহে যেন ক্রমান্বয়ে ভাটা পড়ছে। নিজের চরম শত্রুকে শায়েস্তা করার আগেই যেন, তাকে পরাজয় মেনে নিতে হচ্ছে। দুঃখে-কষ্টে নীলার কলিজা পুড়ে খানখান হচ্ছে।
—- ” চাচ্চু? ”
হঠাৎ পিছন থেকে পরিচিত-অপরিচিত কন্ঠের মিশেলে কারও আওয়াজ শুনে, নীলা ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল।
এবং মুহূর্তেই চোখ-মুখ তার অটোমেটিকলি নিজেদের আকার পরিবর্তন করে ফেলল।
ঠোঁট দুটো একে অপরের থেকে আলাদা হলো। চোখগুলোও যেন প্রায় তার অক্ষিকোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো।
সাদিদ এগিয়ে এসে নীলার কোল থেকে শাদমানকে একপ্রকার ছিনিয়ে নিলো।
নীলার অবশ্য সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। কেননা সে যে এখন ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়ে বসে আছে।
এসব ফালতু জিনিস নিয়ে ফ্রেন্ডদের এতদিন পচিয়ে আসলেও, আজ নিজেই খেয়ে বসে আছে।
ছেলেটা বাংলাদেশে থাকাকালীনও গায়ের বর্ণ উজ্জ্বল ছিল। আর এতদিন ইংল্যান্ডের হিমশীতল আবহাওয়ায় থেকে উজ্জ্বলতা যেন আরও বেড়ে গিয়েছে।
ভিতরে সাদা টি-শার্ট আর উপরে নীল রঙের জ্যাকেট যেন সেটাকে আরও ফুটিয়ে তুলেছে। কালো জিন্সের সাথে কালো কনভার্স জুতা।
জেল দিয়ে চুলগুলো সেট করে রাখাতে মুখে একটা গাম্ভীর্যতা ফুটে উঠেছে।
তার সাথে যুক্ত হয়েছে গালের খোঁচা দাড়ি।
ইশশ নীলা কয়েকটা শুকনো ঢুক গিলল। তার সাদা, নীল, কালো রঙ পছন্দ বলেই কি ছেলেটাকে নিজের চোখে এতটা সুন্দর লাগছে? নাকি অন্য কিছু সেটা নীলা বুঝতে পারছে না।
সে যে এমন নির্লজ্জের মতো একটা ছেলেকে গিলে খাচ্ছে, সেটাতে এইমুহূর্তে তার বিন্দুমাত্র নজর নেই।
নীলা যে এখন ধ্যানে বসেছে। সাদিদকে চোখ দিয়ে গিলে খাবার ধ্যানে।
—- ” চাচ্চু তুমি এসব মূর্খ মেয়েদের সাথে কি করো? যে কি-না নিজের মাতৃভাষা বাংলার মাত্র পঞ্চাশটি বর্ণমালাও, ঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারে না!
চলে আস বাবা, এসব খারাপ মেয়েদের আশেপাশে তোমাকে থাকতে হবে না। নতুবা সঙ্গ দোষে মূর্খ হয়ে যাবে। ”
কথাটুকু বলেই সাদিদ নীলাকে একপ্রকার অদেখা করে, হনহনিয়ে শাদমানকে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেল।
কৌশল বিনিময় দূরের কথা, দুইজন পারলে একে অপরকে এখনই ছক্কা মেরে মাঠের বাহিরে ফেলে দিবে।
সাদিদ দৃষ্টির বাহিরে যেতেই নীলা এতক্ষণের নিজের করা নির্লজ্জতার জন্য, নিজের গালে নিজেই দুইটা থাপ্পড় বসালো।
রাগের বশে একটু জোরে থাপ্পড় দিয়ে ফেলাতে এখন গালে হালকা জ্বলছে।
নীলা সেই জ্বলন্ত গালে হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
—- ” ছিঃ নীলা। তোর উপর এইমুহূর্তে একগাদা থুথু ফেলা উচিত।
এই ছেলে! এই বেয়াদব, অভদ্র, অসভ্য, শয়তান ছেলের উপর তুই ক্রাশ খাস? দুনিয়ায় কি খাবারের অভাব নাকি ছেলের অভাব?
আর দেখলি কি অভদ্র। যার নাকি নূন্যতম কমনসেন্স নেই, সে আসছে আমাকে শেখাতে। নেহাৎ নিজের বোনের শশুর বাড়ি।
নতুবা এখনই সাদিদ নামের এই অভদ্র ছেলেটাকে কৌশলাদি বিনিময় শিখিয়ে, ঝাঁটা মেরে বাংলাদেশ থেকে বিদায় করতাম।
ইউরোপীয়দের সাথে থাকতে থাকতে আদবকায়দা ভুলে গেছে। সালাম-সম্মান বাদ দিয়ে তাদের থেকে চুমাচুমি শিখেছে।
নীলা লজ্জা থাকলে এখনই বমি কর। এই অসভ্য ক্রাশকে নিজের ভিতর থেকে উগলিয়ে ফেল। ”
বলেই নীলা সাইডে গিয়ে ওয়াক ওয়াক শুরু করল। বমি হোক বা না হোক চেষ্টা করতে দোষ কি?
দরকাল হলে হারপিক দিয়ে খাদ্যনালি, পাকস্থলী সবকিছু ওয়াস করে ফেলবে। তবুও যে এই অসভ্য পুরুষকে, নিজের দেহ থেকে তাকে বের করতেই হবে।
#চলবে…
গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ 💙❤💙
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ০১
[ প্রিয় পাঠক আপনাদের জন্য আবারও এক ভালোবাসাময় অনুভূতি নিয়ে হাজির হলাম।
কিন্তু প্লিজ আপনারা কেউ এটাকে #অন্তরালের_অনুভূতি সেকেন্ড সিজন মনে করবেন না।
শুধু আপনাদের ভালোলাগা চিন্তা করে, আমি চরিত্রগুলোর নাম পরিবর্তন করিনি। কিন্তু অন্তরালের অনুরাগের সাথে অন্তরালের অনুভূতির কাহিনীর কোনো মিল খোঁজে পাবেন না।
কিন্তু অন্তর্নিহিত একটা সারমর্ম অবশ্যই খোঁজে পাবেন। এবং ঐটা কি?
সেটা আপনারা পর্যায়ক্রমে বুঝতে পারবেন।💙❤😊 ]
[ পাঠকগণ আপনাদের পাঠপ্রতিক্রিয়াগুলো আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের ভালোলাগা-মন্দলাগাগুলো জানতে আগ্রহী। ]