গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ০৫
সাদিদ অনেকক্ষণ যাবত নিজের হাসি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এবার বোধহয় দম আটকে যাবে। তাই আচমকা গাড়ি ব্রেক করে সে স্টিয়ারিং ধরে হাসতে শুরু করল। আর পাশে বসা নীলা কেবল তীক্ষ্ণ চোখে সেটা পরখ করছে। কিছু বলার মতো মুখটাও শান্ত রাখেনি। শান্তর কথাগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতেই নীলা আবারও তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল।
—- ” দোস্ত তুই এটা আমার সাথে করতে পারলি? আমার ক্রাশময়, হি ইজ মাই ফাস্ট এন্ড লাস্ট ক্রাশবয়। এত কষ্ট করে যা একটা ক্রাশ খেলাম, সেটাও কি-না নিজের হবু দুলাভাই! ”
সাদিদ শান্তর কথার আগামাথা না বুঝে কেবল তাকিয়ে আছে। মেয়েটার কথাবার্তা-কাজকর্ম সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
নিজের চোখের সামনে একটা মেয়ের ফেচফেচ করে কান্না দেখে সাদিদ বলে উঠল,
—- ” কি হয়েছে তোমার? এমন করছ কেন? ”
সাদিদের কন্ঠস্বর শুনে শান্তর কষ্ট যেন দ্বিগুণহারে বেড়ে গেল। সে আচমকা নীলাকে ঝাপটে ধরে অশ্রুহীন চোখে বলতে লাগল,
—- ” নীল বেবি, কণ্ঠস্বরটাও মারাত্মক। আমিতো কন্ঠ শুনেই পেট ভরিয়ে ফেলতাম। তুই আমার একি সর্বনাশ করলি! ”
নীলা আর এসব সহ্য করতে পারল না। ঝাড়া মেরে শান্তকে ছাড়িয়ে ধমকিয়ে উঠল,
—- ” আর একটা বাজে বকলে তোর এই ফেচফেচ করা কন্ঠস্বরটা আমি ছিঁড়ে ফেলব। চুপ একবারে। ”
শান্ত ভদ্র মেয়ের মতো চুপ করে গেল। তাদের বন্ধুত্বে রাগ-ক্ষোভ-ভয় সবই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। যখন নীলা রেগে যায় তখন শান্ত তাকে ভয় পাই। আর যখন শান্ত রেগে যায় তখন নীলাকে অত্যধিক পরিমাণে ভয় পায়। যেমনটা এখন হচ্ছে।
শান্ত ভদ্র বাচ্চার মতো মাথা নিচু করে নখ খুঁটতে লাগল। নীলা লম্বা টেনে সাদিদের উদ্দেশ্য বলে উঠল,
—- ” আপনি এখানে কি করেন? ”
—- ” তোমাকেই নিতে এসেছি। ”
—- ” কেন? আমি কি বাড়ির রাস্তা ভুলে গিয়েছি? ”
—- ” এই, বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না। থাপড়িয়ে সবকটা দাঁত ফেলে দিব। ”
নীলা এবার মিইয়ে গেল। কিন্তু পাশে দাঁড়ানো শান্তর মুখে এবার হাসি ফুটল। সে প্রবল উৎসাহ নিয়ে বলে উঠল,
—- ” হ্যাঁ, হ্যাঁ ফেলে দিন। মেয়েটা বেশি কথা বলে। ”
—- ” শান্ত তোকে তো…
—- ” বোথ অফ ইউ সেটআপ। ”
সাদিদের নিচু গলার ধমকিতে সব কিছু স্বাভাবিক। সাদিদ এক কদম এগিয়ে এসে নীলার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
—- ” তোমার ফ্রেন্ড? ”
—- ” জ্বি। ”
—- ” নাম কি তোমার? ”
শান্ত উত্তর না দিয়ে নিষ্পলক সাদিদের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদিদ গলা খাঁকারি দিতেই নীলা পাশ থেকে তাকে ধাক্কা দিলো।
—- ” জ্বি মা..নে শান্তা ইসলাম। আপনি আমাকে শান্ত বলেই ডাকতে পারেন। ”
সাদিদ ভ্রুজোড়া কুঁচকে তাকাতেই নীলা দ্রুত বলে উঠল,
—- ” মানে হচ্ছে আমরা সবাই তাকে শান্ত বলেই ডাকি। এইজন্যই বলেছে। তাই না শান্ত? ”
নীলা চোখগরম করে শান্তর দিকে তাকাতেই সে বলে উঠল,
—- ” হ্যাঁ একদম, নীল ঠিক বলছে। ”
—- ” ওকে দেন চল, তোমাকেও ড্রপ করে দিব। ”
—- ” না, না এটা দরকার হবে না। আমার বাসা সামনেই। হেঁটেই যাওয়া যায়। ”
শান্তকে সাদিদ কয়েকবার বলার পরও সে নাকচ করে দিয়েছে। তাই সাদিদ আর জোর করেনি। নীলাকে গাড়িতে উঠে বসতে বলে, সে গিয়ে ডাইভিং সিটে বসল।
নীলা একপা সামনে এগিয়ে যেতেই শান্ত হাত টানল। নীলা পিছন ফিরতেই সে বাঁকা হেসে ফিসফিসিয়ে বলল,
—- ” বেস্ট ফ্রেন্ড বিধায় ভাগ বসাইনি। নতুবা এত সহজে ছেড়ে দিতাম না। ”
—- ” কি বলতে চাস? ”
—- ” মানে হচ্ছে ক্রাশবয়কে বান্ধবীর জন্য ছেড়ে দিলাম। নতুবা বিয়ে করে বাড়িতে যেতাম। ”
—- ” তোকে যেন বিয়ে করতে উনি বসে আছে! ”
—- ” হায়, সেটাই তো সমস্যা। আমার প্রেমিক পুরুষ তার প্রেমিকাকে নিয়ে ব্যস্ত। ”
—- ” শান্তর বাচ্চা দাঁড়া তুই…
বলেই নীলা শান্তর পিছনে দৌড় লাগালো। কিন্তু শান্তকে আর পায় কে? সে তো একদৌড়ে ভার্সিটির সীমানার বাহিরে।
শান্ত চলে যেতেই নীলাও হাঁপিয়ে এসে গাড়িতে বসল। সাদিদের সাথে কথা বলে এখন আর এনার্জি নষ্ট করার ইচ্ছা নেই। তাই চুপচাপ এসে বসে গেল।
সামনে রাখা পানির বোতল হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। সাদিদ সবটাই আড়চোখে দেখেছে কিন্তু কিছু বলল না। সুন্দরমতো গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিন্তু সে যে শান্তর কথা ধরতে পারেনি এমনটাও নয়। শান্তকে লজ্জা দিতে চায়নি বলে তখন প্রসঙ্গটা পাল্টিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু এতক্ষণ হাসি আটকিয়ে রাখলেও নীলার রাগে লাল হয়ে মুখটা দেখে আর পাড়ল না। গাড়ি ব্রেক করে একচোট হেসে নিলো।
সাদিদ সেই যে হাসি শুরু করেছে এখনও থামার নামগন্ধ নেই। আর সাদিদের এই হাসিগুলো যেন নীলার শরীরে ক্রমাগত কাটা গায়ে নুনেরছিটের মতো লাগছে। তাই সে এবার বাধ্য হয়ে বলে উঠল,
—- ” এখানে এত হাসির কি আছে? বাবু সেজে ভার্সিটি গেলে মেয়েরা তো ক্রাশ খাবেই। ”
—- ” তারমানে তুমিও খেয়েছ? ”
—- ” মানে? ”
—- ” ঐ ক্রাশ-ট্রাশ আরকি। ”
বলেই সাদিদ আবারও ঠোঁট টিপে হাসতে লাগল। আর নীলার তো রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সে গাড়ির দরজা খোলতে গেলেই সাদিদ হাসি থামিয়ে বলে উঠল,
—- ” কি করো। ”
—- ” আমি একাই বাসায় যেতে পারব। আপনার সাথে আমি একমুহূর্তও থাকতে চাই না। ”
—- ” আচ্ছা আর হাসব না। এবার শান্ত হও। ”
—- ” বললাম না আপনার সাথে থাকতে চাই না। আমি একাই বাসায় চলে যাব। ”
—- ” নীলাঅঞ্জনা তুমি কিন্তু নিজের কথা ভুলে যাচ্ছ। আমি কিন্তু তোমার কাছে পাওনা। ”
সাদিদের কথা শুনে নীলা এবার চোখ গরম করে তার দিকে তাকালো। সাদিদ তার রাগী চেহারা দেখে মৃদু হেসে বলল,
—- ” কি, খাওয়াবে না? ”
—- ” সম্ভব হলে তো বিষ খাওয়াতাম। খাবেন? ”
সাদিদের মুখের মৃদু হাসির রেখাটা ধীরে ধীরে বিলীন হতে লাগল।
নীলার আচমকা নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে। সে সাদিদকে কখনোই এমন কিছু বলতে চায়নি। কিন্তু রাগের মাথায় বলে ফেলেছে। এই জন্যই বলে অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না৷ এবং সেটা যদি রাগ হয় তাহলে তো আরও খারাপ। কেননা রাগের অপরনাম হচ্ছে ধ্বংস। এবং ধ্বংসলীলা কখনোই সুখকর হতে পারে না।
নীলা অপরাধী চোখে সাদিদের দিকে তাকালো।
তার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, সে স্টিয়ারিং হাতে ধরে বাহিরে মুখ করে আছে।
নীলারও সাহস হচ্ছে না তাকে কিছু বলার। তাই অস্থির হয়ে হাসফাস করছে।
সাদিদ কিছু মুহূর্ত পর নীলার দিকে তাকালো। চোখ-মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই তার ভিতরে এখন কি চলছে।
সাদিদ নীলার মুখের দিকে তাকিয়েই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল,
—- ” যদি তুমি দিতে পার তাহলে আমি খেতেও পারব। দিবে? ”
বলেই সাদিদ মলিন হাসল। নীলার কেন জানি সাদিদের এই হাসিটা বুকে ছুরির আঘাতের মতো লাগছে। সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না।
অপরদিকে মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাহিরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।
চোখগুলো তার ভীষণ জ্বালা করছে। জ্বালা কমাতে চোখের পাতা বন্ধ করতেই, তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দুই ফোঁটা অশ্রুজল।
নীলা প্রচন্ড অবাক হলো। তার চোখে পানি? কিন্তু কেন? সাদিদের কষ্টে সে নিজে কেন কষ্ট অনুভব করছে?
নীলা তার কাঙ্খিত উত্তর খোঁজে পেল না।
ইতিমধ্যে সাদিদও গাড়ি স্টার্ট করেছে। নীলা বাহিরের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারল, সাদিদ মিরপুরের দিকে যাচ্ছে।
সব রাগ-ক্ষোভ একপাশে রেখে নীলা এবার বলে উঠল,
—- ” কি খাবেন? ”
সাদিদ আচমকা নীলার এমন স্বাভাবিক কন্ঠে আশ্চর্য হলো। এই দুইদিনে নীলা তার সাথে স্বাভাবিকভাবে একবারও কথা বলেনি। যখন-ই কথা হয়েছে রাগ নতুবা বিরক্তি নীলার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
তাই হঠাৎ করে তার এমন শান্ত স্বরটা, সাদিদকে অবাক করে দিচ্ছে।
সাদিদের এমন অবাক চাহনি দেখে নীলারও ইতস্ততবোধ করছে৷ তাই সে গলা খাঁকারি দিয়ে আবার বলল,
—- ” আমি কারও কাছে ঋণী থাকতে চাই না। তাই বলছিলাম কি খাবেন? বাজেট বেশি হলে আজ সম্ভব নয়। হাতে মাত্র পাঁচশত টাকার মত রয়েছে। এর মধ্যে হলে বলেন। ”
সাদিদের মুখে এতক্ষণে খুশিময় হাসির রেখা দেখা গিয়েছে। সাদিদের হাসিমুখ দেখে নীলার অজান্তেই তার মুখেও হাসি ফুটে উঠল।
সাদিদ উত্তর না দিয়ে হাসিমুখে গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো। অনেকদূর যাওয়ার পর নীলা প্রশ্ন করে উঠল,
—- ” কোথায় যাচ্ছেন? ”
—- ” নেভারল্যান্ড। ”
—- ” সত্যি? আমি কখনও যায়নি, কিন্তু নাম অনেক শুনেছি। ”
নীলার উৎফুল্লতা দেখে সাদিদ মৃদু হাসল। তারপর বলে উঠল,
—- ” আমিও তো যায়নি। ইনফেক্ট আজই প্রথম। ”
নীলা সন্দেহপ্রবল দৃষ্টিতে সাদিদের দিকে তাকাতেই সাদিদ আবার বলল,
—- ” আরে বাবা, যাব কি করে? এতদিনতো ইংল্যান্ডে ছিলাম। কিন্তু ফ্রেন্ডদের অনেকবার যেতে দেখেছি। তাই ভাবলাম আজ যাওয়া যাক। খাব যেহেতু প্রকৃতি দেখে দেখেই খাওয়া ভালো। অন্যরকম একটা ফিলিংস আসবে। ”
নীলা আর কিছু বলল না। কিন্তু মনে মনে সেও ভীষণ খুশি হয়েছে। ঘুরাঘুরি তার বরাবরই ভালো লাগে। কিন্তু সবমিলিয়ে আর যাওয়া হয়ে উঠে না। কিন্তু হঠাৎ কিছু মনে হতেই সে বলে উঠল,
—- ” আপনি রাস্তা চিনবেন কিভাবে? নিজেও তো যাননি। তারউপর এতদিন বাহিরে থাকলে পরিচিত রাস্তাও মানুষে ভুলে যায়। ”
—- ” বাহ্ বেশ বুদ্ধিমতী বলতে হবে। কিন্তু বুদ্ধিমতী মেয়ে, এখনকার যুগে রাস্তা চেনা খুব একটা বড় বিষয় না। গুগল মেপে সবই দেখা যায়। ”
নীলা প্রথম কথাটাই একটু ভাব নিলেও পরমুহূর্তেই চুপসে গেল। উত্তেজনায় সাদিদকে একটা বোকামিমার্কা প্রশ্ন করে ফেলেছে।
সাদিদ মিরপুর ১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড রোড হয়ে নেভারল্যান্ড যাবে। তাই পার্কের উদ্দেশে বেড়িবাঁধ সড়ক ধরে গাড়ি সামনের দিকে ডাইভ করতে লাগল।
নেভারল্যান্ডে গাড়ি থামাতেই আশেপাশে আরও জনসমাগমের দেখা মিলল। সাদিদ-নীলা গাড়ি থেকে নেমে সামনে হাঁটতে লাগল।
সাদিদ আড়চোখে নীলার দিকে তাকালো। সে বেশ উপভোগ করছে। সাদিদ তাকে নিয়ে নদীর কিনারা ঘেঁষে তৈরি করা একটা টেবিলে বসল। তারপর নিজে গিয়েই খাবার অর্ডার করে আসলো।
কিছু মুহূর্তের মধ্যে খাবারও চলে আসলো।
নীলা এবার টেবিলের দিকে তাকিয়েই শুকনো একটা ঢুক গিলল।
সাদিদ ভেজিটেবল রাইস, মিক্সড চাউমিন, নেভারল্যান্ড স্পেশাল থাই স্যুপ, চিকেন মাসালা, গার্লিক চিকেন, কেশোনাট সালাডের সাথে ডেজার্ট আইটেম হিসেবে স্ট্রভেরি লাসসি আর ওরিও কিটকেট শেক অর্ডার করেছে।
নীলা একবার খাবারের দিকে তাকাচ্ছে তো আর একবার আড়চোখে নিজের ব্যাগের দিকে তাকাচ্ছে।
একটা চকলেটের দাম বুঝি এত?
সাদিদ নীলার ভাবভঙ্গি দেখে হেসে ফেলল। নীলা তার দিকে তাকাতেই সে বলল,
—- ” ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ের থেকে টাকা নিয়ে খেলে, আমার মানসম্মান থাকবে বুঝি? আমি বিল-পে করে এসেছি। তাই খাওয়া শুরু করো। ”
—- ” কিছুতেই না। আপনি আমাকে মিথ্যা বলেছেন। নতুবা আমি কখনও আপনার সাথে আসতাম না। ”
—- ” আচ্ছা এসে যখন গিয়েছ এবার খেয়ে ফেলো। অযথা খাবার নষ্ট করতে নেই। ”
—- ” বললাম না খাব না। আমি চলে যাব এখান..
—- ” চুপ। আর একটা কথা নয়, চুপচাপ খাও। ”
—- ” আমি খাব…
—- ” নীলাঅঞ্জনা। ”
সাদিদের রাগীস্বরের ধমকে নীলার চোখজোড়া মুহূর্তেই ঝাপসা হয়ে আসলো। সে ঝাপসা চোখে সাদিদের দিকে তাকিয়ে আছে।
সাদিদের এখন নিজের উপর-ই রাগ হচ্ছে। সে নীলাকে ধমক দিতে চাইনি। কিন্তু তারপরও রেগে দিয়ে ফেলেছে।
তাই সে নীলার মন ভালো করতে বলে উঠল,
—- ” সরি। ”
নীলা ফিরেও তাকালো না। তার ভীষণ রাগ হচ্ছে। আর রাগের থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে।
সাদিদ তাকে ধমক দিলো কেন? এখানে নীলার কি দোষ? সাদিদ-ই নীলাকে মিথ্যা বলেছে। তাই নীলার রাগ করাটা জায়েয।
সাদিদ নীলার ভাবভঙ্গির পরিবর্তন না দেখে এবার বেশ রসিয়ে সুর তুলে বলে উঠল,
—- ” আরে এই যে বিয়াইনসাব, ভাব নিয়েন না
এতো গুলা খাবার আপনি নষ্ট করতে পারেন না।
আরে এই যে বিয়াইনসাব, মাইন্ড খাইয়েননা
মুখটা এমন কালা করলে কিন্তু বেইল পাবেননা
একেতো রূপের আগুন
আর আপনার ফাঁপর দ্বিগুণ
মনের দয়া মায়া সব কি আপনার
ভেংটি ব্যাগে রাখছেন
আপনে দেখতে ঝাক্কাস
শুনছি খান না ভালো
কিন্তু আজকের দিনে কষ্ট কইরা একটু খাইয়া দেখেন।
বিয়াইনসাব আপনার জন্য কষ্ট কইরা এতদূর আসছি
প্রাণ খুইলা হাসেন আপনি ঠান্ডা ঠান্ডা লাসসি আনছি। ”
সাদিদের রাগ ভাঙানোর কায়দা দেখে নীলা এবার হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে সেও গেয়ে উঠল,
—- ” এত রংঢং করেও এই মন পাইবেন না
মন পেতে গাইতে হবে প্রেমের গান,
দূর থেকে চোখ মেরে লাভ হবে না
অন্তরে থাকতে থাকতে হবে ভালোবাসার টান। ”
সাদিদ দুষ্টুমি করে গাইলেও এবার চমকিত দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকালো। সাদিদের এমন চাহনি দেখে নীলাও এতক্ষণ সে কি গেয়েছে, সেটা তার মাথায় আসলো।
আর মুহূর্তেই তার হাত-পা কাঁপতে লাগল। লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে নীলা দ্রুত লাসসি হাতে নিয়ে গ্লাসে চুমুক দিলো।
সাদিদও নিঃশব্দে মৃদু হেসে খাবার খেতে শুরু করল। নীলা যে খেতে রাজি হয়েছে এইটাই অনেক। কিছু বলে বেচারিকে আর লজ্জা দেওয়ার ইচ্ছা আপাতত তার নেই।
জমিয়ে রাখছে, পরে সুদে-আসলে উশুল করবে।
কথাটা ভেবেই সাদিদ একপলক নীলার দিকে তাকিয়ে আবারও মৃদু হাসল।
নীলা লজ্জা-ভয় সবমিলিয়েই সবগুলো থেকে একটু একটু করে খেয়েছে। কিন্তু সাদিদের খাওয়া দেখে নীলার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম।
সে সবগুলো খাবারই বেশ আয়েশ করে খেয়েছে। নীলা খাওয়া শেষ করে, সে এখন বসে একদৃষ্টিতে সাদিদের এই খাওয়া দেখছে।
সাদিদের হঠাৎ নীলার উপর চোখ পড়তেই নীলা ঘাবড়িয়ে গেল। দ্রুত অন্যদিকে তার চোখের দৃষ্টি ফেলল।
কিন্তু সাদিদ ঠিক-ই বিষয়টা বুঝে নিয়েছে। তাই খাবার মুখে নিয়েই বলে উঠল,
—- ” নজর দিচ্ছিলে? ”
—- ” মানে! কি বাজে বকছেন? নজর দিব কেন? ”
—- ” হুহ্ অবশ্য দিলেও লাভ নেই। আমিতো আর তোমার মতো কবুতরের খাবার খাব না। ছেলেদের শরীরে শক্তি প্রয়োজন, তাই খাবারও বেশি করে খেতে হবে। ”
—- ” কেন, ছেলেরা কি কুস্তি লড়ে? ”
সাদিদ নীলার কথায় ঠোঁট টিপে হাসল। কিন্তু নীলা লজ্জা পাবে বিধায় আর উত্তর দিলো না।
সাদিদের খাওয়া শেষ হতেই তারা টেবিল থেকে উঠল। সাদিদ নীলার উদ্দেশ্য বলে উঠল,
—- ” নীলাঅঞ্জনা, তুমি এখানে দুই মিনিট অপেক্ষা করো। আমি দ্রুত আসছি, কিন্তু খবরদার একপাও এদিক-ওদিক যাবে না। ”
বলেই সাদিদ সামনে এগিয়ে গেল। নীলা সাদিদের গমনপথের দিকে তাকিয়ে আছে।
সাদিদ কিভাবে তার উপর অধিকার দেখায়! অন্য কেউ হলে নীলার প্রচুর রাগ হতো। কিন্তু কেন যেন সাদিদের এই অধিকার খাটানো নীলার কাছে খুব ভালোলাগছে। নীলার ঠোঁটে অজান্তেই মৃদু হাসি ফুটে উঠল।
সাদিদ অল্প সময়ের মধ্যেই ফিরে আসলো। নীলার হাতে একটা কুলফি আইসক্রিম দিয়ে বলল,
—- ” বেয়াইনসাব আপনার জন্য। ”
নীলা মৃদু হাসল। তারপর আইসক্রিমটা হাতে নিয়ে বলল,
—- ” এটার কি দরকার ছিল? অনেক কিছুই তো খেলাম। ”
—- ” সবকিছুই কি প্রয়োজনবোধে করতে হয়? মাঝেমধ্যে অপ্রয়োজনে করলে কি খুব ক্ষতি? ”
নীলা উত্তর না দিয়ে সাদিদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা তার কাছে আশ্চর্যজনক রহস্যময়!
সে সাদিদকে পছন্দ করে না। একপ্রকার ঘৃণা করে। তারপরও সে সাদিদের কথা ফেলতে পারে না। আবার তার কথা ভুলেও থাকতে পারে না। সবসময় কেবল সাদিদ-ই তার মাথায় ঘুরঘুর করে।
নীলার এমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে সাদিদ বলে উঠল,
—- ” এমন করে তাকিও না, নতুবা প্রেমে পড়ে যাবে। ”
নীলা বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। কি বলে সাদিদ! তারপর নিজেকে সামলিয়ে তেজ দেখিয়ে বলে উঠল,
—- ” অসম্ভব! প্রেম আর আপনি? এই জীবনে সম্ভব নয়। ”
—- ” কেন? আমার মধ্যে খারাপ কি? ছেলে হিসেবে কোন দিক দিয়ে কম? ”
—- ” কম না বরং বেশি। আপনি একটা নির্লজ্জ এবং অসভ্য। ”
বলেই নীলা লাজুক হেসে সামনে এগিয়ে গেল। কেন যেন সাদিদের এমন করে এইসব কথা বলে ফেলাতে, নীলার প্রচুর লজ্জা লাগছে। কিন্তু তার এখানে নিয়মঅনুযায়ী রাগ করা উচিত ছিল। কিন্তু সে রাগ করতে পারছে না। লজ্জার ভার রাগের থেকে ছাড়িয়ে গেছে।
সাদিদও মৃদু হেসে নীলার পিছনে এগিয়ে গেল। নদীর পাশ ঘেঁষে দুইজনে বসল। দুইজনের মধ্যেই নীরবতা ছেয়ে আছে।
সাদিদ-ই নদীর দিকে দৃষ্টি রেখে হঠাৎ ডেকে উঠল,
—- ” নীলাঅঞ্জনা? ”
—- ” জ্বি? ”
—- ” একটা কথা বলব? ”
—- ” আপনি আবার পারমিশন কবে থেকে নেন? ”
নীলার কথায় সাদিদ নিঃশব্দে মৃদু হাসল। তারপর বলে উঠল,
—- ” তুমি আমার সাথে এতদূর চলে এসেছ, ভয় করছে না? তোমার তো ভয় পাওয়া উচিত। ”
নীলার চোখগুলো বড় হলো। সত্যিই তার এখন ভয় পাওয়া উচিত। আর সাদিদকে বিশ্বাস করা একেবারেই উচিত নয়। কেননা সাদিদ অতিতেও তার সাথে অনুচিত কাজ করেছে। এখন একা পেয়ে যে করবে না তার বিশ্বাস কি?
কিন্তু অকল্পিতভাবে নীলার এসবের কিছুই মনে হচ্ছে না। এমনকি সাদিদ না বললেও হয়তো নীলা এমনটা চিন্তাও করত না।
কেন এমন হচ্ছে? সাদিদকে কেন তার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে? নীলার ক্ষতি হবে এমন কোনো কাজ সাদিদ করবে না, এমনটা কেন বাঁধাহীন মনটা মানতে চাই?
নীলা এসব প্রশ্নের উত্তর কোনো খোঁজে পায় না।
সাদিদ নীলার উত্তর না পেয়ে তার দিকে তাকালো। নীলার এমন ইতস্ততবোধ দেখে প্রসঙ্গ পাল্টাতে সে বলে উঠল,
—- ” নৌকায় বেড়াবে? ”
নীলা সাদিদের দিকে তাকালো। হঠাৎ করে সাদিদের এতটা স্বাভাবিক কন্ঠ নীলার মানতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও নিচুস্বরে বলে উঠল,
—- ” দেরী হলে আম্মু-আব্বু চিন্তা করবে। তাই বাসায় চলে যাব৷ ”
—- ” আমি আঙ্কেল-আন্টিকে বলে দিব। তাহলে যাবে? ”
—- ” আম্মু-আব্বু আপনার কথায় রাজি হয়ে যাবে? ”
নীলার এমন প্রশ্নে সাদিদ রহস্যময় হাসল। তারপর এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
—- ” সাবধানে এসো, এখানে উঁচু-নিচু জায়গা আছে। ”
নীলা নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে এলেমেলো পায়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগল। সাদিদের মুখের হাসিটাতে কি যেন একটা ছিল। নীলার কাছে কেমন যেন রহস্য রহস্য গন্ধ আসছে।
হঠাৎ বেখেয়ালিভাবে সামনে পা দিতে গেলেই নীলার পা স্লিপ করে। নিচে পড়ে যাবে তখনই সাদিদ তার হাত টেনে ধরল। এবং নীলা কিছু বুঝে উঠার আগেই সে হেঁচকা টান দিলো।
নীলা তাল সামলাতে না পেরে সোজা গিয়ে সাদিদের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
সাদিদ নীলার খামখেয়ালিতে রেগে গিয়ে ধমক দিতে গেলেই,
—- ” ষ্টুপিড, চোখ কোথায়…
সে আর কিছু বলতে পারল না। নীলা সাদিদের পিঠ আঁকড়ে ধরেছে। নীলার মাথাটা সাদিদের হৃদপিন্ডের উপরস্থ জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। সাদিদের বুকের ধুকপুকানি ক্রমশ বেড়ে গিয়েছে। তার শরীরের রক্তগুলো মনে হচ্ছে গরম হয়ে যাচ্ছে। এইমুহূর্তে তার ভয়ানকসব কাজ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
সে মাথাটা নিচু করে নীলার দিকে তাকালো।
নীলাও একটা ঘোরে চলে গেছে। সাদিদের স্পর্শে এসে নিজের চিরচেনা রূপটা যেন মুহূর্তেই পরিবর্তন হচ্ছে। নিজের অনুভূতিগুলো অবাধ্য হয়ে, ভয়ংকর সব কাজ-কারবার করে ফেলতে চায়ছে। এবং অসহায় নীলা তাদের বাধা দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করছে। তারা যেন সংখ্যায় এবং শক্তিতে নীলাকে ক্রমশ সাদিদের কাছে পরাজিত করছে।
সে রাগের উপরে গিয়ে সাদিদের স্পর্শ চাইছে। ঘৃণার পরিবর্তে সাদিদকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু কেন? এত বিপরীত প্রতিক্রিয়া কেন হচ্ছে? এমনটা হবারতো কথা নয়!
নীলা ঠায় হয়ে সাদিদের বুকে মাথা রেখে আছে। দুইজনের শরীরেই মৃদু কম্পন অনুভব হচ্ছে।
সাদিদ এবার নিজের হাতদুটো নিয়ে নীলার মুখটা আঁজলাভরে ধরল।
নীলা সাদিদের দিকে তাকাতেই দুইজনের দৃষ্টি মিলিত হলো।
নীলার কম্পনরত চোখ-মুখ দেখে সাদিদ ক্রমশ নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে।
কিন্তু সে এবার আর এমন কোনো ভুল করতে চায় না। অতিতে যে ভুল তার দ্বারা হয়েছে, বর্তমানেও সেই একই ভুল সে করতে চায় না।
তাই নিজের হাতদুটো সে ধীরে ধীরে আগলা করে ধরল।
সাদিদ নীলাকে ছেড়ে কয়েক কদম সামনে এগিয়ে গিয়ে মাথা নিচু করল।
তার সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলছে। এই আগুন নিভানোর ঔষধও সাদিদ জানে। কিন্তু তারপরও সাদিদ সেটা চায় না। নীলাকে আর কোনোভাবেই সে নিজের থেকে দূর করতে পারবে না। এতগুলো বছর কষ্টে তার বুকটা জর্জরিত হয়েছে। আর যে সম্ভব নয়। এবার যে বাঁচার জন্য নীলাময় একটা শীতল বাতাশের প্রয়োজন। বড্ড প্রয়োজন।
_________________
নীলা একদৃষ্টিতে জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছে। সে না নিজেকে বুঝতে পারছে আর না নিজের অনুভূতিকে। এই নীলাকে তার নিজের কাছেই বড্ড অপরিচিত মনে হচ্ছে।
সাদিদও নিঃশব্দে শুধু ডাইভ করছে। কিন্তু তার চোখ-মুখ ভয়ানক লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। এতদিন নিজের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলেও এখন নীলার সম্মুখে এসে সেটা ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। কোনোভাবেই সে স্থির থাকতে পারছে না।
নীলাদের বাসার সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করে, সাদিদ চুপচাপ নিচে নেমে গেল।
নীলার পাশের দরজাটা খোলে দিয়ে অপরদিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো।
নীলা একপলক সাদিদের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে সামনে এগিয়ে গেল।
নেভাল্যান্ডের তখনকার ঐ পরিস্থিতিটা যেন দুইজনকেই বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। মনে হাজারো কথা কিন্তু মুখে প্রকাশ করার রাস্তা নেই।
নীলার পা-জোড়া সামনে চলছে না। কেন যেন মনের কথাগুলো শুনতে, তার বড্ড ইচ্ছে করছে। অভাবনীয় কোনো একটা কাজ করে ফেলতে ভীষণ মন চাইছে।
নীলার এমন এলেমেলো হাঁটার মধ্যেই সাদিদ পিছন থেকে করুণস্বরে ডেকে উঠল,
—- ” নীলাঅঞ্জনা? ”
নীলা দ্রুত পিছনে ফিরল। এতক্ষণের সব জড়তা, না পাওয়া প্রশ্নের উত্তর সব যেন সাদিদের একটা ডাক হাজারো মাইল দূর করে দিয়েছে।
নীলা ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে পিছনে ফিরে তাকালো।
রাস্তায় হাতে গোনা কয়েকজন চলাফেরা করছে। রিক্সাগুলোতেও ইতিমধ্যে হলদেটে বর্ণের হারিকেনের ন্যায় আলো জ্বলে উঠেছে। বৃষ্টি আসার পূর্বাভাসে চারদিকে শীতল হাওয়া বয়ে বেড়াচ্ছে। দূরে কোথাও মেঘেদের গর্জন শোনা যাচ্ছে। দেখতে দেখতে কয়েকফুটো বৃষ্টির কণা এসে সাদিদ-নীলাকেও ভিজিয়ে দিয়েছে।
সাদিদের স্লিকি চুলগুলো ইতিমধ্যে কপালে লেপ্টে গিয়েছে। সাদিদ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে আচমকা নীলাকে বুকে টেনে আনলো।
শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরল।
নীলার সমস্ত শরীরজুড়ে ভূমিকম্পের ন্যায় অনুভব হচ্ছে। শিরা-উপশিরায় যেন রক্তগুলো ছুটে চলার প্রতিযোগিতায় লেগেছে।
সাদিদ নীলাকে নিজের সাথে আরেকটু নিবিড়ভাবে মিশিয়ে নিয়ে অপরাধী কন্ঠে বলে উঠল,
—- ” প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আর কত পুড়াবে? নিজেও তো পুড়ছ। প্লিজ, একটাবার অতিতের ভুলটা ভুলার চেষ্টা করো।
সেদিন নিজের স্ব-ইচ্ছায় আমি ভুলটা করিনি। নিজের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি, একপ্রকার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিলাম।
যেমনটা আজকেও পারছি না। তুমি সামনে থাকলে আমি পুরোপুরি এলেমেলো হয়ে যায়। নিজেকে আটকিয়ে রাখা দুঃসাধ্য হয়ে উঠে।
প্লিজ এবার ক্ষমা করো। আমি নিজের করা ভুলের জন্য অনুতপ্ত। ”
নীলার শরীর অসার হয়ে পড়েছে। মুখ দিয়ে কথা কি সামান্য টু শব্দটাও বের হচ্ছে না।
সাদিদ নীলার মাথাটা বুক থেকে তুলে তার দুইগালে নিজের হাত রাখল।
নীলার দৃষ্টি শীতল। ঝুমবৃষ্টিতে ইতিমধ্যে ভিজে দুইজনে টইটম্বুর। সাদিদ নিজের মুখটা নীলার মুখের কাছে নিয়ে হালকা ঝাকি দিয়ে আবারও বলে উঠল,
—- ” এত কেন রাগ? কেন এত অভিমান? ভুল করেছি সেটা স্বীকারও করছি। তারপরও কেন এই দূরত্ব। অনেক তো হয়েছে। এতগুলো বছর ধরে জ্বলে-পুড়েও রাগ-ক্ষোভ কমেনি?
আর যে সহ্য হয় না।
প্লিজ একটাবার সব ভুলে নতুন করে শুরু করো, একটাবার। ”
#চলবে…
[ প্রিয়পাঠক, আমি আজকের পর্বে কন্ঠশিল্পী প্রতীক হাসান এবং নাওমির বিয়াইনসাব গানের কয়েকটা লাইন ব্যবহার করেছি। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু নতুন বাক্য তাতে সংযোগ করেছি। তাই পাঠকগণ আপনারা এটাকে গানের শব্দের অপব্যবহার মনে করবেন না। আমার বিন্দুমাত্র এমন কোনো ইচ্ছা নেই। তাই দয়া করে গানের শব্দের বিকৃতি করেছি এমন মনোভাব কেউ পোষণ করবেন না। ]