মনের_অন্দরমহলে পর্ব ২৬

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ২৬
#আনিশা_সাবিহা

বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাবার পরেও আমাকে একইরকম ভাবেই জাপ্টে ধরে রয়েছেন আয়াশ। তবে ধীরে ধীরে উনার হাতের বাঁধন খানিকটা আলগা হয়ে আসছে। আমি সেভাবেই মিনমিন করে বললাম,
–“এইযে শুনছেন? আপনি বাড়ি যাবেন না? অনেক দেরি হয়ে গেল। কয়টা বাজে?”

আয়াশের কোনো হেলদোল নেই। একটা শব্দও পর্যন্ত উচ্চারণ করলেন না উনি। আচমকা আবারও নিজের হাতের বাঁধন শক্ত করে আরো জোরে জড়িয়ে ধরলেন উনি। মনে হচ্ছে আমাকে নিজের ভেতরে জড়িয়ে নেবেন। আমি খানিকটা সরে আসার চেষ্টা করলাম। মাথা তুলে সরিয়ে আনতেই বুঝতে পারলাম লোকটা এখনো মাথা নিচু করে আছেন। উনার দাঁড়ি ভর্তি গালে হাত রাখলাম আমি। একটু ঝাঁকুনি দিয়ে বললাম,
–“আয়াশ? আপনি এখানে থাকতে পারেন না। সকালে আপনাকে দেখলে বিশ্রী কান্ড হয়ে যাবে।”

–“সারা রাত ঘুমাইনি। লেট মি স্লিপ। চোরের মতো এই বাড়িতে ফিরে যাবার জন্য আসিনি। যদি যেতে হয় এই বাড়িতে থাকা সবথেকে দামি জিনিসটা আমি নিয়ে যাব। যেটা একান্ত আমার।”

ঘুম জড়ানো কন্ঠে কথাগুলো বলে দম ফেললেন আয়াশ। শুকনো ঢক গিলে উনার চোখেমুখে হাত রাখলাম আমি। চোখে হাত পড়তেই বুঝতে সময় লাগলো না উনি অলরেডি ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছেন। আমি শুধু ভাবছি কাল আয়াশ আর আমাকে একই ঘর থেকে বের হতে দেখলে সকলে কি ভাববে! আর যদি আয়াশের সঙ্গে এতোরাতে ওই বাড়িতেও চলে যাই তাহলেও বিষয়টা বড্ড খারাপ দেখাবে। লোকটা বেশরম হলেও আমি তো তা নই। লজ্জায় তো মাটির নিচে ঢুকে যেতে মন চাইবে। এসব ভেবে এখনই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। আয়াশকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললাম,

–“আপনি নিজের বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। কাল সকালে আসবেন।”

তবুও কোনো ভাবান্তর হলো না আয়াশের। আমাকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লেন উনি। আমি গিয়ে উনার বুকের ওপর পড়লাম। এভাবেও কেউ ঘুমায়। হাতের কনুই দিয়ে উনাকে গুঁতো দিতে দিতেই কানে এলো স্পষ্ট কারো পায়ের আওয়াজ। আওয়াজটা আরো দৃঢ় হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই ঘরের দিকেই আসছে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। এই অবস্থায় যদি আমাদের কেউ দেখে নেয় তাহলে লজ্জায় সুইসাইড করতে হবে সিউর। আস্তেধীরে আয়াশের কবল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ধড়ফড়িয়ে বেড থেকে নেমে পড়লাম। বাম দিকে রয়েছে দরজা। সেই অনুযায়ী দরজার কাছে গিয়ে দরজা টানতেই মনে হলো আয়াশ আগে থেকেই দরজা লক করে দিয়েছেন। চোখ বুঁজে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললাম আমি। সঙ্গে সঙ্গে দরজায় টোকা পড়তেই কেঁপে উঠলাম।

–“আনিশা, আনিশা?”

এটা তো অর্ক ভাইয়ার গলা। সে এখন এতোরাতে এখানে কি করছে? আমি একবুক সাহস নিয়ে জবাব দিতে উদ্যত হলেও মিইয়ে পড়লাম। এখন ভাইয়াকে বিশ্বাস করাতে হবে যে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তার জন্য উত্তর দিলে চলবে না। অর্ক ভাইয়া আবারও দরজায় টোকা দিয়ে নিচু সুরে বলে,
–“আনিশা, তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?”

আমি এবার জবাব দিতে নিতেই পেছন থেকে ফট করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে আয়াশ বলে দিলেন,
–“ইয়েষ। আনিশা ঘুমিয়ে পড়েছে। ডোন্ট ডিস্টার্ব। ইউ মে গো।”

মূহুর্তেই থতমত খেয়ে কপালে ভাঁজ পড়ে গেল। ইচ্ছে করছে গিয়ে লোকটাকে ইচ্ছে মতো কয়েকটা কিল দিয়ে আসি। চিন্তায় কূলকিনারা পেলাম না। আবার অর্ক ভাইয়ারও কোনোরকম সাড়াশব্দ না পেয়ে গলা শুকিয়ে আসছে ভয়ে। এবার ভাইয়া উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল। বেশ উত্তেজনা নিয়ে আমার ঘরের দরজা জোরে জোরে ধাক্কানো শুরু করল আর বলল,

–“আনিশা? আর ইউ ওকে মাই সিস্টার? ভেতরে কে ঢুকেছে? এই কে ঢুকেছিস ওর ঘরে বের হ। আমার বোনকে স্পর্শ করবি তো হাত কেটে ফেলব।”

জ্বিহ্বা কাটলাম আমি। এখন ভাইয়াকে কি করে বলব যে ভেতরে অন্য নয় বরং আয়াশ ঢুকেছে। হতবিহ্বল হয়ে একবার আয়াশকে বিড়বিড় করে কথা শুনিয়ে আটকা আটকা গলায় বললাম,
–“ক…কি অর্ক ভাইয়া? কি..কিছু বলবে তুমি? এতো রাতে যে? আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছি।”

ভাইয়া দরজা ধাক্কানো থামিয়ে দিলেন। ভাইয়া হয়ত বিস্মিত হয়েছে। গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল,
–“কি…কিন্তু তোমার ঘর থেকে যে আমি একটা ছেলের কন্ঠ পেলাম?”

–“আ…আমার ঘরে ছেলে কি করে আসবে ভাইয়া? আমি তো ঘর বন্ধ করে রেখেছি। আর ঘুমিয়েও গিয়েছিলাম। কিছু বলবে তুমি?”

–“না আসলে রান্নাঘরে পানি খেতে গিয়েছিলাম ওখানে জানালা হাট করে খোলা দেখলাম। ভাবলাম চোর-টোর এসেছে হয়ত। আচ্ছা তুমি ঘুমাও। আর সরি হ্যাঁ এতো রাতে ডিস্টার্ব করার জন্য। গুড নাইট।”

পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম। অর্থাৎ ভাইয়া চলে যাচ্ছে। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। ধুপধাপ শব্দ ফেকে আয়াশের কাছে গিয়ে বসলাম। উনার চোখের ওপর হাত দিয়ে অনুভব করলাম উনি চোখ বুঁজে রয়েছেন। এর মানে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে আরামে ঘুমিয়ে যাচ্ছেন। রাগে কটমট করতে থাকলাম। চোখজোড়াও ছোট করে রয়েছি। চোখ ভালো থাকলে চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিতাম লোকটাকে।

–“এভাবে মুখের ভাবভঙ্গি করতে নেই নিশাপাখি। উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় আসে। পরে দোষ দিতে পারবে না।”

আয়াশের এহেন কথায় স্থির হয়ে গেলাম। নড়াচড়া করতেও পারলাম না। না পড়ল চোখের পলক। মাথায় শুধু একটা কথায় আসছে, একটা লোক এতোটা বেশরম হয় কি করে? আয়াশ তৎক্ষনাৎ আমার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে শোয়ালেন। আমাকে নিজের মধ্যে বন্দি করে অগুনতি কয়েকটা চুমু খেতে খেতে আমার গালে গাল ঘষেই ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি সাবধানে উনার মাথা বালিশে রাখলাম। অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। মনের কোণে বিষণ্ণতা নেই। হারিয়ে গেছে আয়াশের আবেশে।

সকালে,
ঘরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পায়চারি করছি। দরজা এখনো লাগিয়ে দেওয়া। তার কারণ এখনো বেঘোরে ঘুমিয়ে আছেন আয়াশ। ইতিমধ্যে একবার ডেকে গিয়েছেন মামি। আমার কি করা উচিত সেটাই ভাবছি আর দাঁত দিয়ে অনবরত নখ কেটে যাচ্ছি। এখন কি আয়াশকে সকলের সামনে নিয়ে যাব? ব্যাপারটা বড্ড লজ্জাজনক হয়ে যাবে! হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে ঝনঝন শব্দ হতেই চমকে গেলাম। আমার হাত লেগে হয়ত কিছু পড়ে গিয়েছে।

–“গুড মর্নিং নিশাপাখি! কি হয়েছে? এভাবে হর্স ডান্স করছো কেন?”

আয়াশের কন্ঠে স্পষ্ট আলসেমির ছাপ। আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
–“হর্স ডান্স?”

–“হ্যাঁ। তুমি যেভাবে পায়চারি করছিলে জোরে জোরে তারপর এর থেকে ভালো পদবী আমার মাথায় এলো না।”

–“আমি এদিকে চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি আর আপনি ফাজলামি করছেন? উঠুন! উঠুন বলছি। এক্ষুনি যেভাবে বাড়ির ভেতর ঢুকে এসেছিলেন সেভাবেই বাইরে চলে যান।”

জোর গলায় কথাটা বলে উঠলাম আমি। আয়াশ বিস্ময় নিয়ে বললেন,
–“হোয়াট? আমি তো এই বাড়ির জামাই। বাইরে মামাশ্বশুর, মামিশাশুড়ি আমার জন্য ওয়েট করছো আর তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো? দিস ইজ ভেরি ব্যাড! আর সকালে উঠে আমি আগে কফি খাই তারপর জিমে যাই জানো না?”

–“ওসব একদিন না করলে কিছু হবে না। আপনাকে এখান থেকে বের হতে হবে। আর কালকে অর্ক ভাইয়ার কথায় ওভাবে জবাব দিয়েছিলেন কেন? আমি বলেছিলাম জবাব দিতে?”

বেশ সিরিয়াস হয়ে রেগে রেগে প্রশ্ন ছুঁড়লাম আমি। আয়াশ বেশ স্বাভাবিক কন্ঠেই বললেন,
–“তুমি জবাব দিচ্ছিলে না তাই ভাবলাম তোমার কাজ আমি করে দিই। আর তাছাড়া আমার ওয়াইফের রুমে এতো রাতে ঠকঠক করার পারমিশন কে দিয়েছে ওকে? ও কেন তোমার দরজায় ওতো রাতে নক করছিল?”

আমায় উল্টে প্রশ্ন করলেন আয়াশ। আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
–“আপনি সব সন্দেহের বীজ রান্নাঘরে পুঁতে রেখে এসেছেন তো ঘরে আসবে না? তাছাড়া অর্ক ভাইয়ার কোনো বোন নেই। সেকারণে আমাকে নিয়ে চিন্তা করে বেশি। বুঝেছেন এবার?”

–“তাহলে ঠিক আছে। চলো এবার বাড়ি যাই।”

বলেই আমার হাতটা ধরলেন আয়াশ। আমি চটপট করে হাত ছাড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে বললাম,
–“এভাবে না। আপনাকে বাইরে যেতে হবে আবার আসতে হবে। যাতে সকলে বুঝতে পারে আপনি বাইরে থেকে এলেন। যান।”

–“মামাশ্বশুরের বাড়ি থেকে এভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছো?”

মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল আমার। এখনো ব্যঙ্গ করেই চলেছে লোকটা। ঝাঁঝ মেশানো কন্ঠে বললাম,
–“চোরের মতো বাড়িতে ঢোকার সময় কথাটা মনে ছিল না? এখন যাবেন? নাকি….”

বলেই থেমে গেলাম আমি। পরের শব্দ কি বলা যায় মাথায় এলো না। আয়াশ এবার কন্ঠে গাম্ভীর্য আনলেন।
–“আরে যাচ্ছি। ফ্রেশ হতে হবে নাকি!”

–“ঠিক আছে যান।”
ওয়াশরুমে চলে গেলেন আয়াশ। কপালে হাত দিয়ে বসলাম আমি। মাঝেমধ্যে লোকটাকে কি বলা উচিত বা উনাকে কি করা উচিত তা ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু উনি বোধহয় আমাকে জ্বালাতেই ভালোবাসেন। একদিকে অসহ্য লাগে অন্যদিকে এক সুখানুভূতি!

সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো অর্ক। সকাল সকাল জগিং করতে যাওয়া ওর নিত্য দিনের কাজের মধ্যে পড়ে। এসেই ঘর্মাক্ত শরীরে সোজাসুজি ওয়াশরুমে ঢুকে একেবারে ফ্রেশ হয়ে বের হয়। সাদা রঙের টাওয়াল ঘাড়ে ঝুলানো তার। পরনে থ্রি কোয়াটার কালো প্যান্ট আর সাদা টিশার্ট। টাওয়ালটা দিয়ে মুখ মুছতে থাকে সে। আচমকা তার কিছু একটা মনে পড়তেই হেঁসেও ফেলে। পরক্ষণেই নিজের মাথায় টোকা মারে অর্ক। বিড়বিড় করে বলে,

–“অর্ক, তোর কি হয়েছে বল তো? এতো হাসছিস কেন? পাগল হয়ে গিয়েছিস? এভাবে অকারণে তো তুই হাসিস না। যার জন্য হাসছিস তার সম্পর্কে তো নাম ছাড়া কিছুই জানিস না। কি এক যন্ত্রণা উফফ….!”

নিজেকে ধমক দিয়ে আরো একটু হেঁসে ফেলে অর্ক। তার হাসির কারণ গতকালকে আচমকা উপস্থিত হওয়া ওই হাসিখুশি মেয়েটা, মৃধা! লোকে বলে মানুষ অন্যের হাসি, চোখ, মুখ, চেহারা দেখে মুগ্ধ হয়। কিন্তু অর্কের ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারেই ভিন্ন। সে মুগ্ধ মেয়েটার বকা শুনে। অবাক হলেও এটাই সত্যি। অর্ক বারংবার স্মৃতিচারণ করতে থাকে মৃধাকে।

গতকাল,
এ্যাশ কালার ফুল শার্ট পরিধান করে শার্টের হাতা উঠাতে উঠাতে সবেমাত্র বাইরে বের হচ্ছে অর্ক। তার বাবার জন্য কিছু ঔষুধ লাগবে। বাড়ির মেইন দরজা খুলতেই একটা অচেনা মেয়েকে দেখে ভড়কে উঠল সে। দুইধাপ পিছিয়ে গেল অর্ক। কিছু প্রশ্ন করবার আগেই তার দুচোখ গেল আনিশার দিকে। ফ্যাকাশে চোখমুখ, কপালে ব্যান্ডেজ দেখে কিছুটা আঁতকে ওঠে অর্ক। মেয়েটা ঠিকঠাক দাঁড়াতেও পারছে না। অচেনা মেয়েটা আনিশাকে ধরে রেখেছে। হয়ত পায়েও ব্যাথা পেয়েছে। অস্ফুটস্বরে অর্ক বলে ওঠে,

–“আ…আনিশা তুমি?আর….”

অর্কের কথা শেষ না হতেই আনিশার বদলে অচেনা মেয়েটা ঝাঁঝালো গলায় ধমকে ওঠে অর্ককে।
–“আপনি কেমন মানুষ হ্যাঁ? নিজের বোনের খেয়াল ঠিকঠাক রাখতে পারেন না? আপনার বোনের স্পেশাল খেয়াল রাখা উচিত ছিল না? ওকে হারালেন কি করে? আবার দেখে তো মনে হচ্ছে ওকে হারিয়ে আপনার মনে কোনো ভাবান্তরই নেই। চোখেমুখে এক ফোঁটাও চিন্তা দেখতে পাচ্ছি না। এই আনিশা, তুমি বলো তো! তোমার মামার বাড়ির লোক তোমায় খুব অত্যাচার করে তাই না? আমায় বলো শুধু এদের সবাইকে পুলিশের ঘানি টানিয়ে ছাড়ব।”

অর্ক ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। ওর দৃষ্টি স্থির। মেয়েটা কি পাগল নাকি? কিসব বলে যাচ্ছে? আনিশা ওকে থামিয়ে বলল,
–“উঁহু না। তুমি ভুল ভাবছো। মামার বাড়িতে আমি ওদের মেয়ে। হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দোষটা আমার।”

মেয়েটা আবার ঠোঁট উল্টে অর্কের উদ্দেশ্যে বলে,
–“ঠিক আছে। তাহলে আমার কথাগুলো আমি ফিরিয়ে নিলাম। মাইন্ড করবেন না ওকে? কথা ফিরিয়ে নিয়েছি কিন্তু।”

বর্তমান,
ঠোঁটজোড়া আরো প্রসারিত হয় অর্কের। কথা নাকি ফিরিয়েও নেওয়া যায়। এটাও সম্ভব? সেই মূহুর্তেই অর্কের হুঁশ ফিরতেই মাথা অনবরত এদিক ওদিক নাড়ায় সে। মনের মধ্যে কি টান টান অনুভূতি! সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। তাকে এই পাগল হওয়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

ড্রয়িংরুমে নিস্তব্ধতা। সকলে নিরব। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আয়াশ ধরা পড়ে গেছেন। রান্নাঘরে মামি উপস্থিত থাকায় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন উনি। সেই সঙ্গে আমিও। লজ্জায় মাথাকাটা যাচ্ছে আমার। মুখ তুলেও তাকাতে পারছি না। অর্ক ভাইয়া গাম্ভীর্যের সঙ্গে বলে উঠলেন,
–“তোমায় আমি রাতে জিজ্ঞেস করেছিলাম আনিশা। যদি তাই হয় তাহলে মিথ্যে কেন বললে? সত্যিটা তো বলতে পারতে।”

ঢক গিললাম আমি। বলতে গিয়েও কোনো কথা আসছে না। কথাগুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে গলায়। তবুও অস্পষ্ট গলায় বললাম,
–“কাল রাতে উনি আসেন। আর আমার ভুল ধারণা ভাঙিয়ে দেন। উনি আমার সঙ্গে এই জঘন্য কাজ করেননি। আমি উনাকে ভুল বুঝেছিলাম অর্ক ভাইয়া।”

অর্ক ভাইয়ার বদলে মামা শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
–“তবে কে ঘটিয়েছে এমন জঘন্য ঘটনা?”

–“মিসেস. মালিহা।”
ভার কন্ঠে উত্তর দেন আয়াশ। সঙ্গে সঙ্গে যেন সকলে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা কেটে যাবার পর অর্ক ভাইয়া দৃঢ় কন্ঠে বলে,

–“হোয়াট? ওই মহিলা? উনি তো ওই বাড়িতেই থাকেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না উনি এমন কাজ করলেন? আর আনিশা? আবারও তোমাকে ওই বাড়িতে যেতে দেব ভাবলে কি করে? আবার যদি ওই মহিলা কিছু করে বসে? এতো ইনসিকিউরিটির মাঝে তোমায় ছাড়তে পারব না সরি।”

আমি কিছু বলতে নিলাম কিন্তু তার আগেই আয়াশ বলে উঠলেন,
–“নো ওয়ে। আর সেকেন্ড চান্স পেতেই দেব না আমি। আনিশাকে আমি ওই বাড়িতে নিয়ে গেলে তো চান্স পাবে তাই না?”

আয়াশের কথায় হকচকিয়ে উঠলাম। চোখজোড়া বিস্ময়ে ভরে গেল। উনি ঠিক কি করতে চাইছেন সেটা বোধগম্য হচ্ছে না আমার।

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here