অন্তরালের অনুরাগ ❤ পর্বঃ৬৯

0
5083

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৬৯ ❤

পদ্মলয়া ম্যানশন আজ যেন নতুন বউ বরণের আনন্দ মাখিয়ে নিজেকে সাজিয়েছে। জমকালো লাইট আর বিভিন্ন ফুলের বাহারে অতিপরিচিত বাড়িটি যেন অচেনা অচেনা লাগছে।
নীলা গাড়ি থেকে নেমে একদৃষ্টিতে জমকালো সাজে সজ্জিত এই ডুপ্লেক্স বাড়িটি দেখে যাচ্ছে। চোখে তার সীমাহীন বিষ্ময়। সে চমকিত দৃষ্টিতেই সাদিদের দিকে তাকালো।
আর সাথেসাথেই চোখজোড়া প্রেমময়ী চোখের মিলন হলো। কেননা প্রিয়তম যে মুগ্ধ দৃষ্টিতে এতক্ষণ তার প্রিয়তমাকেই দেখে যাচ্ছিল।

— ‘ এসব কি? ‘
— ‘ আমার প্রিন্সেস আর তার মাকে ওয়েলকাম করার ছোট একটা প্রচেষ্টা। ‘
— ‘ এটা আপনার কাছে ছোট মনে হচ্ছে? ‘

সাদিদ আরেকটু তার দিকে এগিয়ে আসলো। মেয়েকে একহাতে বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে অপর হাতটি দিয়ে নীলাকেও আলতো করে বুকে টেনে আনলো। অতঃপর প্রিয়তমার কপালের একপাশে ছোট্ট করে আদুরে চুমু খেয়ে বলল,

— ‘ কমই। তোমাদের সামনে পুরো পৃথিবী এক করলে ও আমার কাছে কমই মনে হবে। ‘
— ‘ আপনিও না! এতসব কখন করলেন? সবসময় তো আমাদের কাছাকাছিই ছিলেন। ‘
— ‘ নিজে উপস্থিত না থেকে কি কাজ করা যায় না? ভিতরে চলো। তাহলেই দেখতে পাবে কাজের মানুষের অভাব আছে কি-না। ‘

নীলা আর প্রতিউত্তর করলো না। সাদিদের সাথে পা মিলিয়ে ধীরে ধীরে সদরদরজার দিকে এগিয়ে গেল। তাদের আর কষ্ট করে কলিংবেল বাজাতে হয়নি। নীলা-সাদিদের হসপিটাল থেকে বের হবার খবর শুনেই সবকিছু প্রস্তুত ছিলো।
সবার হাতেই বড়সড় ফুলের ঝুড়ি। সাদিদ নীলাসহ মেয়েকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই একযোগে ফুল ছিটানো শুরু করলো। শুধু এটাতেই তারা ক্ষান্ত হলো না। সিলিং থেকে অনবরত লাল গোলাপের পাপড়ি পরতে শুরু করলো।
ছোট্ট মেয়েটা বোধহয় আচমকা এমন তান্ডবে বিচলিত হয়ে পড়ল। তাই সাদিদ মেয়ের মাথায় তোয়ালে দিয়ে তার মুখটা নিজের বুকে লুকিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলে উঠল,

— ‘ আচ্ছা আচ্ছা অনেক হয়েছে। আমার মেয়ে ভয় পাচ্ছে এসবে। এবার থামাও। ‘

কথায় বোধহয় কাজ হলো। আসলে পিচ্চি মানেই সব দোষ মাফ। এমনকি তার জন্য সবকিছুই মাফ।
শায়লা রহমান এগিয়ে এসে নীলাকে কাছে টানলেন। কপালে স্নেহের চুমু খেয়ে বললেন,

— ‘ এই একটা সপ্তাহ বাড়িটাকে বাড়ি মনে হয়নি রে। তোদের ছাড়া একটা মুহূর্ত শান্তি লাগে না। এবার তোরা এসে গিয়েছিস আমার আর কিচ্ছু চাই না। ‘
— ‘ হ্যাঁ খালা মণি, আমি বউকে এতোগুলা মিস করেছি। ‘
— ‘ শাদ আবার? ‘

মায়ের মৃদু ধমকে শাদের মুখখানা কিছুটা চুপসে গেল। বিগত কয়েকদিনে মায়ের থেকে যেই পরিমাণ ধমক খেয়েছে তার জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত বোধহয় এতোটা খায়নি। আর প্রতিবারের ধমকের কারণ কেবলমাত্র একটি ব্যক্তিকে কেন্দ্র করেই। অর্থাৎ শাদের বউ মানে সাদিদের পিচ্চি মেয়েটা।
শাদমান মায়ের কথায় মুখ লটকিয়ে নিলেও বাবুর পিছু ছাড়ল না। সাদিদের আশপাশে ঘুরতে লাগলো।

— ‘ কি হয়েছে বাবা? ‘
— ‘ বউকে একটু দাও। কোলে নেই। ‘

সাদিদ তার কথায় মুখ টিপে হাসলো। শাদের গালটা হালকা করে টেনে দিয়ে বলল,

— ‘ তুমিতো ছোট। নিতে পারবে? ‘
— ‘ হ্যাঁ নিতে পারব। তুমিতো বড় তারপরও বড় খালামণিকে কোলে নাও। তাহলে আমিও ছোট হয়ে ছোট বউকে নিতে পারবো। ‘

সাদিদ বারকয়েক শুকনো কাশলো। আর তানবীরতো পারলে হেসে খুন।

— ‘ বেশি হাসি পাচ্ছে তাই না? শাদ বাবা, তোমার তানবীর চাচ্চুকে কিছু বলবে না? ‘
— ‘ কি বলব? ‘
— ‘ বলব? ‘

সাদিদ তানবীরের দিকে তাকিয়ে ভ্রুজোড়া নাচাতেই তানবীর ভদ্র ছেলের মতো ঠিকঠাক হয়ে বসে গেল। নতুবা এই শাহেদ-নিধি দম্পতির পুত্র নমুনা এখনই ইজ্জতের ফালুদা করে দিবে।
সাদিদ তানবীরের কান্ডে একপলক সেদিকে তাকিয়ে সাবধানে মেয়েকে শাদমানের কোলে দিলো।

— ‘ সাদিদ ছেড়ো না। নতুবা এই ছেলে এখনই ফেলে দিবে। ‘

শাদমান মায়ের দিকে অসন্তুষ্ট দৃষ্টি তাকালো। মা কেন বারবার বউটার সামনে তাকে অপমান করছে এটাই তার বোধগম্য হচ্ছে না!
সাদিদ মৃদু হেসে ছোট্ট মেয়েটাকে শাদের কোলে ধরে রাখলো। কিন্তু পাকনার কি এতে পোষাবে? সে নিচুগলায় সাদিদের উদ্দেশ্য বলল,

— ‘ চাচ্চু বউয়ের সাথে প্রাইভেট কথা আছে তো। তুমি পাশে থাকলে কিভাবে হবে? ‘

সাদিদ বোধহয় এবার একটু জোরেই ধাক্কাটা খেল। জামাইতো তার শুধু ফাস্ট নয় বরং সুপার ফাস্ট। মেয়ের বাবার কাছেই নাকি মেয়ের পিছনে লাইন মারতে হেল্প চায়ছে! এসব কি মানা যায়? তাই সেও একেবারে নিচুস্বরে ফিসফিসিয়ে শাদমানের কানে কানে বলে উঠল,

— ‘ জামাই, এতো মানুষের মধ্যে প্রাইভেট কথাটা কি আর প্রাইভেট থাকবে? কিছুটা পাবলিকের আওতায় চলে আসবে না? ‘
— ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছ। এখন না বউ, আমরা পরে কথা বলবো। এখন বরং তুমি ঘুমাও। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ‘

শাদমান নিজের ছোট্ট হাতগুলো দিয়েই তার থেকেও ছোট পিচ্চির মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। ছোট্ট মেয়েটার চোখে ইতিমধ্যে ঘুম ঘুম ভাব থাকায় অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু তার নাকটা বরাবরের মতোই লালচে দেখা গেল। কারণটা কি? জামাই নামধারী শাদমানের জন্য? না-কি অন্যকিছু সেটাতো ছোট পিচ্চিটাই ভালো জানে।
সাদিদ ঘুমন্ত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। একইসাথে শাদমানের দিকে তাকাতেই তার ঠোঁটের কোণের হাসিটা প্রসারিত হলো।

— ‘ বাবা, বাবুকে এখন নিয়ে যাই? ঘুমিয়ে পরেছে। শুইয়ে দিব। ‘

শাদমান যেন নীলার কথাটাতে ভীষণ মনঃক্ষুণ্ন হলো। নীলা তার দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে বলে উঠল,

— ‘ ঘুম থেকে উঠলে আবারও তোমার কোলে দিব। দেখবো কতক্ষণ রাখতে পারো৷ ‘
— ‘ খালামণি ইউ আর গ্রেট। লাভ ইউ। ‘

শাদমানের কি হাসি। নীলা তার ঘন চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিলো।

— ‘ আমার লক্ষ্মি বাবাটা। ‘

.

দীর্ঘদিন পরে নিজেদের পূর্বেকার রুমটাতে এসে নীলার খুব ভালো লাগছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সে সবগুলো জিনিস ছুঁয়ে দেখছে। যদিও তার এই রুমে খুব বেশি একটা দিন থাকা হয়নি কিন্তু তারপরও এটা মানেই স্পেশাল। সাদিদ তার জীবনের দীর্ঘ সময় এই রুমটাতেই ব্যয় করেছে। তাই এটাতে যেন আলাদা তৃপ্তি। কেবলমাত্র নীলার শরীরের কথা ভেবেই এতদিন তারা নিচের রুমে ছিল। কিন্তু আজকে সরাসরি তারা দুইতলার দক্ষিণ পাশের রুমটাতেই উঠেছে।

— ‘ কি দেখছো এমন করে? ‘

সাদিদ নীলাকে পিছন থেকে আলতো করে পেট জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখলো। মুখটা হালকা ঘষতে ঘষতেই প্রশ্নটা করলো।
নীলা পিছন না ফিরেই স্বামীর উষ্ণ স্পর্শে আবেসে চোখ বন্ধ করলো। নিচুস্বরে বলল,

— ‘ আমাদের রুমটা। ‘
— ‘ এটাতো আগেও দেখেছ। ‘
— ‘ হুম দেখেছি কিন্তু এখন কেমন যেন অন্যরকম অন্যরকম লাগছে। হয়তো বা আর দেখবো বলে আশা করেনি তাই এমনটা লাগছে। ‘
— ‘ নীলাঞ্জনা! ‘
— ‘ আচ্ছা সরি। এতো রেগে যান কেন? ‘
— ‘ রাগ করার মতো কথা বললে রাগ করবো না? ‘

নীলা নিঃশব্দে মুচকি হাসলো। অতঃপর সাদিদের হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে তার বুকে মাথা হেলিয়ে দিলো৷ সাদিদ নিঃশব্দে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লান্ত স্বরে বলল,

— ‘ এটাই তো পারো। রাগের কারণ ঘটিয়ে এসব করে পার পেয়ে যাও। ‘

নীলাও নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ফাঁকি দেওয়ার কোনো চান্সই থাকে না। কেননা এই মানুষটা যে নীলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে পরিচিত। একান্ত পরিচিত কাছের মানুষ।

— ‘ মেয়ের নাম কি ঠিক করলেন? ‘

একান্তে কিন্তু নীরব মুহূর্ত কাটিয়ে নীলার তরফ থেকে এমন একটা কথা শুনে সাদিদ তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।

— ‘ তুমি বলো। ‘
— ‘ আমিতো ভাবিনি। ‘
— ‘ কেন? ‘
— ‘ প্রিন্সেসের বাবা থাকতে এইকাজ আমি করলে প্রিন্সেস রাগ করবে না? ‘

সাদিদ আলতো করে নীলার কানের পিছনে ঠোঁট স্পর্শ করে আদুরেস্বরে বলল,

— ‘ এটা কেমন কথা? তুমি কি আমার প্রিন্সেসকে খারাপ বলে অখ্যায়িত করছ? ‘
— ‘ না সেটা নয়। কিন্তু আদরের দুলালী বললে অবশ্য খারাপ হবে না। ‘

সাদিদ এবার মৃদুস্বরে হাসলো। বাহুবন্ধনী আরেকটু নিবিড় করে বলল,

— ‘ তোমার কি হিংসে হচ্ছে? হলেও কিছু করার নেই। মেয়ে আমার একটাই। তাকে আদর না করলে কাকে করব? ‘

নীলা কনুই দিয়ে আস্তে করে সাদিদের পেটে খোঁচা দিলো। তারপর কন্ঠে বেশ ভাবের সংমিশ্রণ নিয়ে বলে উঠল,

— ‘ হুম আমার তো বয়েই গিয়েছে! আপনি আপনার আদরের দুলালীকেই নিয়ে থাকেন। যখন আমার আব্বা আসবে তখন দেখব কিভাবে আপনারা বাপ-বেটি জ্বলেন। আমাদের মা-ছেলেকে দেখবেন আর লুচির মতো ফুলবেন। ‘

নীলার কথায় কিঞ্চিৎ হাসির রাশ। কিন্তু সাদিদের মুখে হাসি লক্ষ্য করা গেল না। বরং তার মুখে গাম্ভীর্যের ছাপ। সে এবার সম্পূর্ণ প্রসঙ্গটাকে পাল্টে ফেলার জন্য বলল,

— ‘ আচ্ছা সেসব বাদ দাও। এখন বলো দেখি মেয়ের নাম কি ঠিক করলে? ‘
— ‘ বললামই তো। আমি কিছু ঠিক করেনি। ইনফ্যাক্ট চেষ্টাও ছিল না। কেননা আপনি যে আছেন। ‘
— ‘ এটা বললে হয়? আমার যেমন মেয়ে তোমার ও তো মেয়ে। ‘
— ‘ আচ্ছা সমস্যা নেই। মেয়েরটা আপনি রেখে দেন। ছেলের সময় না হয় আমি চিন্তা করে দেখব। ‘

নীলা স্বাভাবিক অর্থে কথাটা বললেও সাদিদের চোখ-মুখ মুহূর্তেই লালচে বর্ণে পরিণত হলো। সে নীলাকে পিছন থেকে ঘুরিয়ে সামনে আনলো। আচমকা সাদিদের এমন রক্তলাল চোখ দেখে নীলা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সাদিদের গালে আলতো করে হাত রেখে চিন্তাপূর্ণ মনোভাবে বলে উঠল,

— ‘ একি! আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? ‘
— ‘ আমরা আর কখনও বেবি নিব না পাখি। ‘

সাদিদের কথাটা নীলার ঠিক হজম হলো না। তাই দ্বিধাবোধ নিয়েই সে পুনরায় প্রশ্ন করলো,

— ‘ মানে? ‘

নীলাকে যতটাই চিন্তিত দেখাচ্ছে সাদিদ ততটাই স্বাভাবিক। তার মধ্যে চিন্তার কোনো ছাপ নেই। নীলার বুঝার সুবিধার্থে সে আবারও স্পষ্টস্বরে বলল,

— ‘ তোমার কোল আলো করে আর কোনো প্রিন্স অথবা প্রিন্সেস আসবে না। আমাদের আর কোনো বাচ্চা হবে না। ‘
— ‘ এসব কি বলছেন আপনি? ‘
— ‘ যা শুনেছ তাই। ‘
— ‘ কিন্তু কেন? ‘

নীলার চোখে-মুখে মারাত্মক চঞ্চলতা। যেন সাদিদের এই কথাটুকু বিন্দুমাত্র বিশ্বাস যোগ্য নয়। সাদিদ কয়েক মুহূর্ত নীরব থেকে নির্নিমেষ নীলার মুখপানে তাকিয়ে রইল। অতঃপর বিছানার মাঝখানে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত রাজকন্যাটার দিকে একপলক তাকিয়ে নীলাকে কাছে টানলো। নরম আদুরে প্রিয়তমার কপালে ভালোবাসাময় আলতো চুমু দিয়ে তাকে নিজের বুকে টেনে আনলো। ছোট্ট মাথাটা বক্ষপিঞ্জরের সাথে চেপে ধরে ভরাট গলায় বলল,

— ‘ আমাদের কাছে একটা ফুটফুটে রাজকন্যা আছে তো৷ আর কিসের দরকার? অনেক কাপল তো একেবারেই নিঃসন্তান থাকে। কিন্তু করুণাময় আমাদের নিঃসন্তান রাখেননি৷ আমাদের ঘর আলো করে প্রিন্সেস এসেছে। তাই আমরা আর বেবি না নিলাম। তাতে কি খুব ক্ষতি? ‘
— ‘ এসব আপনি আমার কথা ভেবে বলছেন। তাই না? ‘

নীলার ঝাপসা চোখজোড়া সাদিদ সযত্নে মুছে দিলো। প্রিয়তমার কানের পিছনে হাত গলিয়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকালো। অতঃপর আদরমাখা নম্র কন্ঠে বলে উঠল,

— ‘ না লক্ষীটি। তোমার জন্য নয় বরং নিজের জন্য বলছি। আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারো। আমি এই অপবাদ সাদরে গ্রহণ করতে রাজি। ‘
— ‘ কিন্তু একবার সমস্যা হলেই যে বার…
— ‘ চুপ। আর কিছু শুনতে চাই না। যা বলেছি তাই। ‘

মৃদু ধমকে নীলা চুপ করে গেল। বিপরীতে আর একটি কথা বললো না।
সাদিদ প্রাণপাখির লটকানো মুখশ্রী দেখে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল। কিন্তু সে নিরুপায়। আরেকটার তাকে ঐ অবস্থায় সাদিদ দেখতে পারবে না। সে আর তার সৃষ্টিকর্তা জানে ঐ প্রহরগুলো সাদিদ কিভাবে পার করেছে। এই নিদারুণ যন্ত্রণা সহ্য করার নয়। তাইতো তার এই কঠিন সিদ্ধান্ত। অবশ্য এই সিদ্ধান্তটা নিতে সাদিদ বুকে পাথর বেঁধেছে। কিন্তু তবুও সে অনড়। যত কষ্টই হোক না কেন সে প্রিয়তমা স্ত্রীকে আর ঐ অবস্থায় দ্বিতীয়বার দেখতে পারবে না। সৃষ্টিকর্তা যে শেষ পর্যন্ত তার কলিজা এবং কলিজার টুকরোটাকে সুস্থভাবে সাদিদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে এটাতেই সে তৃপ্ত। আর কিছুর প্রয়োজন নেই তার।
সাদিদ হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করলো। অতঃপর নীলাকে ছেড়ে দিয়ে হালকা তাড়া দিয়ে বলল,

— ‘ ফ্রেস হবে না? অল্প সময়ের মধ্যেই হুজুরসহ সবাই চলে আসবে। তাড়াতাড়ি করো। ‘
— ‘ হুহ। ‘

ছোট্ট একটা হ্যাঁবোধক শব্দ উচ্চারণ করে নীলা পাশ ফিরে চলে যেতে চাইল। কিন্তু সাদিদ পিছন থেকে নীলার কব্জি টেনে ধরল।

— ‘ মুখটা এমন মলিন করে রাখার মানে কি? ‘
— ‘ কই? ‘
— ‘ আমি কি চোখে কম দেখি? ‘

নীলা আর কথার পিছে কথা বললো না। ধরা পরে গিয়েছে যে। শুধু মাথা নিচু করে বলল,

— ‘ আপনি একজন পারফেক্ট হাসবেন্ড হলেও আমি পারফেক্ট ওয়াইফ নই। এই জীবনে কষ্ট ব্যতিত আর কিছুই আপনাকে দিতে পারলাম না। ‘

সাদিদ একপলক তীব্র অনুতপ্ততায় দগ্ধ নীলার থমথমে মুখশ্রীতে নজর দিলো। নীলার এহেন কথায় তার রাগে মাথা ফেটে যাবার অবস্থা। কিন্তু এই অবস্থায় সে কোনোভাবেই নীলার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। তাই কোমড়ে হাত ধরে মাথা নুইয়ে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস টেনে নিজের মধ্যেকার অগ্নি লাভাটাকে দমন করার চেষ্টা করলো। অতঃপর এক হেঁচকা টানে নীলাকে বুকে এনে ফেলল।
সাত দিন কেটে গেলেও আচমকা এমন টান পরাতে সেলাইয়ে ব্যাথা অনুভব করলো। চোখ-মুখ কুঁচকে সাদিদের দিকে জিজ্ঞাসা সূচক চাহনিতে তাকাতেই সাদিদ অতি দ্রুত প্রিয়তমার অধরযুগল নিজের মধ্যে নিয়ে নিলো। স্থান, সময় ভুলে পরম আবেশে দুইজোড়া ঠোঁটের উষ্ণ ভালোবাসা চলতে লাগলো। একমিনিট, দুইমিনিট অবশেষে ঠিক কতো মিনিট পর সাদিদ তাকে ছাড়লো এটার হিসাব রাখা দায়। কেবল ঘন নিঃশ্বাসের শব্দগুলোই বলে দিতে পারবে এর দীর্ঘ সময় কাল। নীলা এখনও মাথা নুইয়ে হাঁপিয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন শ্বাস টেনে সাদিদের দিকে তাকাতেই তার প্রবল নেশালো চোখজোড়ার সম্মুখীন হলো। সাদিদ এগিয়ে আসলো। নীলার মুখটা আঁজলাভরে ধরে নেশালো চোখে কয়েক পলক স্থির তাকিয়ে রইল। অতঃপর আবারও আলতো করে প্রিয়তমার রক্তলাল ঠোঁটজোড়াতে উষ্ণ চুমু খেল। ঠোঁটের কোণে ঠোঁট লাগিয়েই ঘন পুরুষালী স্বরে বলল,

— ‘ তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হই নীলাঞ্জনা। এতো সাহস তুমি কোথায় পাও! আমার প্রাণপাখির গায়ে এতো বড় অপবাদ দেওয়ার আগে একটিবার আমার কথা ভাবলে না? আমি কিন্তু এসব মেনে নিব না। ‘

সাদিদ থামলো। ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই ডানহাতের তর্জনী আঙুলটা নীলার বুক বরাবর রেখে আবারও বলল,

— ‘ এই মেয়েটা আমার জীবনের তপ্ত বিকেলের একমুঠো হিমেল পরশ। বৃষ্টিস্নাত রাতের অতি উষ্ণ আদুরে ভালোবাসার পরশ। আমার কলিজার টুকরোটাকে এই পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখানোর অসামান্য রমণী সে। সে পারফেক্ট নয় তো কে পারফেক্ট? আর তারপরও যদি তার মধ্যে কোনো ডিফেক্ট থাকে দ্যান আই ডোন্ট কেয়ার। সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে আমি তাকে ভালোবাসি। প্রচন্ড বেশি। ‘

নীলা স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ। তার জানার থেকেও বহুদূর এগিয়ে সাদিদ তাকে চায়। যেই চাওয়াতে নীলা ব্যতিত অন্য কারো নামনিশানা নেই।

— ‘ আর কে বলেছে সে কিছু দিতে পারেনি! দার্জিলিং, শ্রীমঙ্গলের আদুরে ভালোবাসার তুলনা কি কোনো কিছুর সাথে হয়? এই একটুকরো ভালোবাসার জন্য যে সারাজীবন পথ চেয়ে বসে থাকলেও বৃথা যাবার নয়। ‘

এতক্ষণ মুগ্ধ হলেও শেষোক্ত সাদিদের ঠাট্টাভরা লাজুকবাণে নীলার গালও লালচে বর্ণে ছেঁয়ে গেল। নীলা তাকে নিজের থেকে সরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর অপরদিকে সাদিদ ঠোঁট কামড়ে বাঁকা হাসছে। তাদের সম্পর্কটাই তো টক-ঝাল-মিষ্টিতে পরিপূর্ণ। তাহলে কি শুধু আবেগভরা কথা দিয়েই চলবে?
প্রিয়তমার লজ্জারাঙা মুখটা আরেকটা রাঙিয়ে তুলতে সাদিদ এবার তার কানের কাছে ঠোঁট ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ‘ তাইতো পথ চেয়ে বসে আছি। আবারও সেই উন্মাদনা, সেই অক্লান্ত প্রেমময়ী উষ্ণতায় হারিয়ে যেতে চাই৷ দূর থেকে বহুদূর। ‘

সাদিদ একটু থামলো। প্রিয়তমার নরম কানের লতিটা আলতো করে কামড়ে দিয়ে ঘন স্বরে আবারও বলল,

— ‘ যেখানে কেবল তার এবং আমার বসবাস। এবং অবশ্যই আমাদের তপ্ত ভালোবাসাগুলো। ‘

ইশশ কি ঠোঁটকাটা এই ছেলে! লজ্জায় নীলার দম বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা। সে মাথা না তুলেই সাদিদকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরালো। এবং লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে কোনোমতে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে ছুটলো। কিন্তু যাওয়ার পূর্বে সাদিদের লোমকূপ খাঁড়া করা নির্লজ্জ বাণের থেকে রক্ষা পাওয়া গেল না। কেননা ফাঁকা ঘরের মধ্যে তার পুরুষালী দুষ্টুস্বরটা এখনও ভেসে আসছে,

— ‘ আরে এখনই এতো লজ্জা? আরও তো মাস দুয়েক সময় আছে৷ তখন না হয় লজ্জা পেলে মানাবে। তাই এই টুকটুকে আবিরগুলো তখনকার জন্য রেখে দাও। নতুবা সেই উন্মাদনায় রক্তিম আবিরের তীব্র অভাব অনুভব করবে। ‘

____________

শাদমান মুখটাকে বাংলার পাঁচ করে বসে রয়েছে। আর বারবার আড়চোখে নিজের পাশে ছোট্ট প্রাণটার দিকে তাকাচ্ছে। আর একই সাথে তার মায়ের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।
কেন তার কোনো গোলাপি রঙের কাপড় নেই? তার ছোট্ট বউয়ের সাথে সে মেচিং করতে পারছে না। এই আফসোস সে কোথায় রাখবে?
তানবীর শুরু থেকেই ছোট নবাবের মায়ের সাথে মন কষাকষি দেখেছে৷ তাই তাকে মুখ ফুলিয়ে ছোট্ট মেয়েটার পাশে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে আসলো। শাদমানের শরীর ঘেঁষে বসতেই শাদ তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে তাকালো। এমনিতেই তার মেজাজ বড্ড তিরিক্ষি হয়ে আছে। সে চাচ্ছে না তানবীরের মতো দুষ্টু চাচ্চুটার সাথে কথা বলে মুডের তেরোটা বাজাতে।
কিন্তু তানবীর কি এতো ভালো মানুষ? শাদ পাত্তা না দিলেও সে একেবারে হুমড়ি খেয়ে পরেছে।

— ‘ কিরে শালার ভাতিজা, মুখখান এমন পেঁচার মতন ক্যান? তোর পেঁচি কি তোকে ছ্যাকা দিছে নাকি? ‘
— ‘ ছিঃ চাচ্চু৷ তোমার ভাষা জঘন্য। ‘
— ‘ হালার পুত তুই আগে আমারে কো ইতা কথা কইবার বেলা তোর উচ্চারণের সমস্যা কই যায়? এমনে তো আমার নামডার চাল-ডাল ছাড়াই খিচুড়ি বানাস। ‘
— ‘ চাচ্চু যাও এখান থেকে। তোমার বিশ্রী কথাবার্তা আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না। এমনিতেই আমার মন খারাপ। ‘
— ‘ ক্যান? প্রেমিকার লগে মেচিং-সেচিং করতে পারো না বইল্লা? ‘
— চাচ্চু ডোন্ট কল হার প্রেমিকা। সি ইজ মাই লক্ষ্মি বউ। ‘

তানবীর যেন একটা বিষম খেল। এই ছোট্ট পেকেটের বিশাল বিশাল ধামাকাগুলো তার শরীর আর কুলিয়ে উঠছে না। শাদ রেগে চলে যাওয়া ধরতেই তানবীর তাকে টেনে কাছে আনলো।

— ‘ চাচ্চু ছাড়ো। ‘
— ‘ আরে ছোট্ট শরীরে এতো রাগ কোথায় রাখস! শুন না তোরে একটা বুদ্ধি দিতাম আইছিলাম। ‘
— ‘ লাগবে না। তোমার পঁচা বুদ্ধি তোমার কাছেই রেখে দাও। ‘
— ‘ আরে বেটা শুইন্না তো দেখ। পরে চাচ্চুর গলায় ঝুলে নাচবি। ‘

শাদ বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে তানবীরের দিকে তাকালো। কিন্তু সে নিজের মতো ভাব নিয়ে বলতেই লাগল,

— ‘ পিংক তো মাইয়া গো কালার। তাইতো তোর প্রেমিকা না মানে তোর বউ গোলাপি পরছে। কিন্তু তোর বউতো মাশাল্লাহ শুভ্র পরী। কালার কি কাপড়ের সাথেই মেচিং করা লাগবো? তুই বরং তোর বউয়ের শরীরের সাথে মেচিং করে দলা কিছু পরে নে৷ না-কি তোর বিজনেসম্যান বাপ সাদা ও কিছু কিনে নাই? ‘

শাদ পারে না সত্যিই তানবীরের গলায় ঝুলে পরবে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে সে তানবীরের কথার কোনো প্রতিউত্তর না জানিয়েই রুমের দিকে দৌড় লাগালো। আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা যাবে না। অতি দ্রুত বউয়ের সাথে মেচিং করে শুভ্র বর্ণের কাপড় গায়ে দেওয়া আবশ্যক।

.

ছোট্ট রাজকন্যাটার নামকরণ এবং আকিকার উপলক্ষে বাড়িতে বেশ কয়েকজন হুজুর এবং মিসকিন খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইসাথে ঢাকার কয়েকটা বড় বড় এতিমখানাতেও খাবারের ব্যবস্থা এবং এতিম বাচ্চাদের যাবতীয় দরকারী জিনিসপত্রের ব্যবস্থা সাদিদ নিজে করেছে। সৃষ্টিকর্তা তার ঘরে যেই আলো পাঠিয়েছেন সে হিসেবে এসব যেন অতি তুচ্ছ। সারাজীবন করে গেলেও এই ঋণ শোধ করার মতো নয়।
অতঃপর তাদের সকলের খাওয়া দাওয়ার পর একান্ত কাছের মানুষগুলোও খাওয়ার পর্ব শেষ করলো। বরাবরের মতনই এইটুকু সময় পিচ্চিকে চব্বিশ ঘণ্টা রক্ষাকারী দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে শাদমান তার পাশে উপস্থিত ছিল। এক মুহূর্ত যেন এই ছোট্ট মেয়েকে ছাড়া তার চলে না। নিধি হাজার বকলেও সেসব তার কানে ডু্কে না।
তার এককথা। তার বউ ছোট। সে দেখে না রাখলে কে দেখবে?
আজকাল না-কি শহরে বখাটে ছেলেপেলে বেড়ে গিয়েছে। সে টিভিতে দেখেছে এসব৷ তাই নজরদারি আরও জোরদার। পিচ্চি বউকে নিয়ে কোনোভাবেই রিক্স নেওয়া যাবে না।
ভাবা যায় এসব? বউ যার এখনও ডাইপার পরে সেই বউকে নিয়ে বখাটেরা কি তার ন্যাপি চেইঞ্জ করবে!
সবাই আবারও একদফা হাসাহাসি করলো। কিন্তু শাদমান ভাবলেশহীন। এসব তার গায়ে মাখালে চলবে না বস। ছোট্ট বউ তার। ভীষণ গুরুদায়িত্ব!

— ‘ সাদি, এবারতো নামকরণটা করা দরকার। সবতো শেষ হলো। ‘
— ‘ হুম বাবা। আমিও সেটাই ভাবছি। ‘
— ‘ তা জিজু কি নাম ঠিক করলেন শুনি? আমারতো আর তর সইছে না। ‘
— ‘ তোর কোনটাতেই ধৈর্য্য আছে? সবকিছুতেই তো অধৈর্য্যের বস্তা। ‘
— ‘ আপনি আবারও শুরু করেছেন? আমি কিন্তু চলে যাব। ‘
— ‘ যাইগ্গা। তোরে কিতা আমি ডরাই…
— ‘ এই চুপ৷ আমার মেয়ের পিছনে লাগলে তোর খবর আছে। ‘
— ‘ মেয়ে পাইয়া ছেলে ভুইল্লা গেলা! তুমিতো ভীষণ আপডেট মার্কা মাদার। ‘

শায়লা রহমান আবারও দুষ্টুটার কান মলা দিলো।

— ‘ পাঁজি ছেলে একটা। এবার বলতো সাদি, কি নাম ঠিক করলি? আমার ছোট্ট দাদুমণিটার জন্য বাবা কি নাম ঠিক করেছে সেটা আমরাও জানতে চাই। ‘

সাদিদ একপলক নীলার দিকে তাকালো। সে মেয়েকে কোলে নিয়ে সাদিদের মুখপানে তাকিয়ে মৃদু হাসছে। সাদিদ মেয়ে আর মেয়ের মায়ের দিকে এগিয়ে গেল।
নীলা সোফায় বসা ছিল। সাদিদ সবার সামনেই হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসলো। অতঃপর মায়ের কোলে থাকা নিজের আদুরে অংশটার কপালে বাবার স্নেহময় দীর্ঘ চুমু পড়ল।

— ‘ নীয়ানা। ‘

নীলা মুচকি হাসলো। প্রশ্নের পূর্বেই প্রিয়তমার ভালো লাগাটা সাদিদ বুঝে নিলো। অতঃপর সাদিদ নিজেও মৃদু হাসলো। মেয়ের ছোট্ট হাতটা নিজের শক্ত পোক্ত মুঠিতে নিয়ে আদুরেস্বরে ডাকলো,

— ‘ প্রিন্সেস? ‘

পাকনা মেয়ে বাবার একডাকেই চোখ বড় বড় করে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ মুখে হাসি নিয়েই বলল,

— ‘ আমার প্রিন্সেসের নাম পছন্দ হয়েছে? ‘

মেয়ের ঠোঁটের কোণে মনভোলানো হাসি। অতি খুশিতে সাদিদের চোখটা নিমিষেই ঝাপসা হয়ে গেল। নীলার কোল থেকে সাবধানে মেয়েকে নিজের বুকে নিয়ে ছোট্ট মুখটাতে অগণিত স্নেহের উষ্ণ পরশ দিলো। মেয়ে নিজেও বাবার মুখটা ছোট্ট হাতে ধরার চেষ্টা করছে।
বাবা-মেয়ের এমন হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবার চোখজোড়াও ম্লান হলো। অতঃপর সম্মানিত হুজুরগণেরা ছোট্ট মেয়েটার জন্য দোয়া করলেন। উপস্থিত সবাইও সেই দোয়ায় মন থেকে সামিল হলো।

— ‘ তাহলে রাজকন্যার পুরো নাম কি হলো? ‘

নীলা শান্তর কথায় সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ একদৃষ্টিতে নীলার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। সাদিদের স্থির দৃষ্টি এটাই বলে দিচ্ছে এবার তোমার পালা। নীলাও পিছু হাঁটল না। বাবার কোলে থাকা রাজকন্যাটাকে মায়ের তরফ থেকে কোমল আদর দিয়ে বলে উঠল,

— ‘ নীয়ানা বিনতে সাদিদ। ‘

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here