হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
১৪.
শোবার ঘরের সাথে লাগানো ছোট্ট বারান্দায় চেয়ার পেতে বসেছিলেন মুহিব রহমান। বারান্দার বাইরে বিশাল জায়গা জুড়ে মাঠ। খোলা মাঠ। মাঠের চারপাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে সুপারি গাছ। বাড়ির প্রাচীর ঘেষেও আছে কিছু কিছু। দেখলে মনে হয় গাছগুলো প্রহরীর কাজ করছে। লোকচক্ষুর আড়াল থেকে বাড়ির রক্ষায় নিয়োজিত! মুহিব রহমান শান্ত তবে গভীর দৃষ্টিতে দেখেন মাঠের চারদিকের ঘাসবিহীন সরু রাস্তার উপর বসে থাকা দুটো পাখিকে। পাখি দুটো দু এক কদম হাঁটছে। থেমে গিয়ে রাস্তায় পরে থাকা কিছু মুখে তুলে নিচ্ছে। ডানা ঝাঁপটে উড়তে গিয়েও নেমে আসছে আগের জায়গায়। মুহিব রহমানের ধ্যান ভাঙে কারো কাশির শব্দে। ঘাড় ঘুরাতেই চোখে পরে মুখ কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা মতিউর রহমান। মুহিব রহমান চেয়ার থেকে উঠে শোবার ঘরে ঢোকেন। পাঞ্জাবীর ভাজ ঠিক করে করে বলেন,
‘জি আব্বা বলুন!’
মতিউর রহমান আগের চেয়েও খানিক জড়সড় হয়ে দাঁড়ালেন। লাঠিতে দুহাত ভর দিয়ে শুকনো গলায় বলেন,
‘তোমার বড় শ্যালকের মেঝ মেয়ের বিয়ে কাল।’
মুহিব রহমান কিছু মনে করার চেষ্টা করে বলেন,
‘ওনারা কি আপনাকে বা আমাদের বিয়ের দাওয়াত দিয়েছেন?’
মতিউর রহমান মাথা দুলান। গাঢ় শ্বাস টেনে বলেন,
‘আমি তখন ওদের কথায় সায় দেই নি এখন খুব জোড়াজোড়ি করছে। হানিফ শরীফ সকাল থেকে দু বার কল করেছেন। বড় বউমাকে বার বার অনুরোধ করছেন যেনো সবাইকে নিয়ে যাই। কি করা যায় বলোতো?’
মুহিব রহমান ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলেন,
‘আমি তো এবিষয়ে কিছুই জানি না। ভাবি সেদিন বলেছিলেন ও বাড়িতে বিয়ে। কিন্তু দাওয়াত যে দেয়া হয়েছে সেটা এখন আপনার থেকেই জানলাম।’
‘আমিই মানা করেছিলাম সবাইকে। ভেবেছিলাম যাবো না।’
মুহিব রহমান ভ্রু কুঁচকে বলেন,
‘তাহলে এখন যাওয়ার কথা মনে হলো কেনো?’
মতিউর রহমান মৃদু হেসে বলেন,
‘বয়স হয়েছে। কখন কি ভাবি নিজেই জানি তাছাড়াও হিমির বড় মামী ফোন করে যেতে বলছেন। মানা করতে চেয়েও পারি নি। বুঝতেই পারছো বলে দিয়েছি এখন না গেলে ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না।’
মুহিব রহমান বলেন,
‘যা আপনি ভালো বুঝেন তাই হবে।’
মতিউর রহমানের চোখ উজ্জল হয়ে উঠে। হাস্যোজ্জল গলায় বলেন,
‘তাহলে কাল যাচ্ছি আমরা।’
কথাটা বলেই পেছন ফিরলেন মতিউর রহমান। লাঠিতে ভর দিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে যেতে উচু গলায় বলে উঠেন,
‘বড় বউমা? সবাইকে বলো কাল ও বাড়িতে যেতে হবে। বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। তুমি বরং ছোট বউমার সাথে যাও। কিছু একটা উপহার দেয়া উচিত মেয়েটাকে। পুরো পরিবারের তরফ থেকেই দিতে হবে বুঝলে! নিজেরা যা ভালো বুঝো, দেখে শুনে এনো। যাও যাও, দেরি করো না।’
আমিনা বেগম শ্বশুরের আচরণে অবাক হলেও জাহির করলেন না। বরং খুশি হলেন। দু বাড়ির রাগ, জেদ মিটছে। এ যেনো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য! মুহিব রহমান স্তম্ভিত হয়ে আছেন। হিমির মামার বাড়ি এর আগেও একটা বিয়ে হয়েছে। মাত্র দুবছর আগেই হয়েছে। অথৈর বড় বোন অন্বেষার। কিন্তু তখন কোনো দাওয়াত দেয়া হয় নি তাদের। ফোন করে কখনো একে অপরের খোঁজও নেয়া হয় নি। অথচ আজ হঠাৎ বিয়ের দাওয়াত? কেনো? আবার বাবা নিজ ইচ্ছায় ওবাড়িতে যেতে চাচ্ছেন বিষয়টা মেনে নিতে পারছেন না তিনি। কেমন অদ্ভুত লাগছে! এর পেছনে কোনো কারন নেই তো আবার?
……………………………
বিছানায় বেসামাল হয়ে শুয়ে ছিলো হিমি। আমিনা বেগম আলতো করে ডাকতে থাকেন তাকে। হিমির সারা না পেয়ে এবার আস্তে আস্তে ধাক্কা দিতে থাকেন। হিমির চোখ মুখ কুঁচকে যায়। চোখ পিটপিট করে তাকায় সে। পাশেই দাঁড়ানো মাঝবয়সী সুন্দরী মহিলার মুখে লম্বা হাসি দেখে ধরফরিয়ে উঠে হিমি। অবাক হওয়া গলায় বলে,
‘কি ব্যাপার বড় মা? এতো খুশি! জেঠু মনি দেশে ফিরছে?’
আমিনা বেগম শক্ত চোখে তাকান। হিমির হাতে চড় বসিয়ে বলেন,
‘তোর জেঠুমনি ফিরলেই আমি খুশি হই নাকি?’
‘হুম হও তো। তুমি জানো না? তোমার উচিত নিজেকে আয়নায় দেখা। তাহলেই বুঝবে। অবশ্য জেঠু মনি ফিরলে তুমি তাকেই দেখতে থাকো, নিজেকে দেখার সময় কই?’
কথাটা বলে চোখ মারলো হিমি। আমিনা বেগম লাজুক চেহারায় রাগি ভাব এনে বললেন,
‘বাঁদর মেয়ে। খালি বাজে কথা।’
হিমিকে সোজা করে বসিয়ে চুল হাতিয়ে দিয়ে বললেন,
‘জানিস কি হয়েছে আজ?’
হিমি উঠে দাঁড়িয়ে দায়সারা গলায় বললো,
‘কি আর হবে? নিশ্চয় আমি এতক্ষন পরে পরে ঘুমোচ্ছি বলে দাদু রেগে বোম হয়ে আছেন। খাবার তো আর আজ পাচ্ছি না। ও বাড়ি গেলাম আমি।’
আমিনা বেগম আটকে দেন হিমিকে। জোড়ালো শ্বাস টেনে বলেন,
‘তোর বড় মামু ফোন করে বিয়ের দাওয়াত দিয়েছেন আমাদের। আব্বা বলেছেন আমরা সবাই যাচ্ছি কাল!’
হিমির চোখ দুটো রসগোল্লার ন্যায় বড় হয়ে যায়। গোল গোল চোখে তাকিয়ে থেকে হঠাৎই হাসে সে। ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,
‘সত্যিই?’
‘হ্যা হ্যা, সত্যি। আমি কি ভাবছি বলতো, কাল নিহান আর মিশ্মির বিয়ের কথা বলি?’
হিমি তটস্থ হলো। চোখ সরিয়ে উল্টো দিকে ঘুরলো। কোমরে হাত রেখে স্মিত গলায় বললো,
‘এখন না বড়মা।’
‘এখন না মানে? এখন নয় তো কখন? তুই জানিস, এসব বিয়ের অনুষ্ঠানেই মানুষজন কনে পছন্দ করে ফেলে। আমাদের আগে যদি কেউ মিশ্মির জন্য সম্বন্ধ পাঠায় আর যদি তোর মামা মামীরা রাজি হয়ে যায়? ভাবতে পারছিস, কতো ক্ষতি হয়ে যাবে! না না, তুই যাই বলিস না কেনো আমি তো কাল ও কথা তুলবোই!’
হিমি আমিনা বেগমকে আটকাতে চেয়েও পারে না। তিনি ওনার মতো ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে গেলেন। হিমি মাথা ধরে বসে পরলো খাটে। মুখে উড়ে আসা চু্ল খামচে ধরে হালকা চেঁচায়। চুলগুলো টেনে হাতখোঁপা করে রেখে দেয়। গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে মাথার ঘাম মোছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। এই সময় এসব কথা বলা উচিত হবে কি না বুঝতে পারছে না হিমি। বড়মাকে কি করে আটকাবে তাও বুঝছে না।
চলবে,,,,,,,,,
[আজকের পর্বটা ছোট হয়ে গেছে তার জন্য সরি। পরের পর্ব অনেকটা বড় করে দেবো। হ্যাপি রিডিং। গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ। আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দেবেন, যেনো শুধরে নিতে পারি। অগ্রীম ধন্যবাদ। উড়োচিঠি(২) কাল দেবো😒 আজ মোড নাই লিখার😑!]