মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৩৯

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৩৯

#আনিশা_সাবিহা

রাতটা বেশ গভীর। কেবিনের জানালা দিয়ে শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। কিছুক্ষণ পরেই ভোর হবে। প্রায় সাড়ে তিনটে বাজেই। বেডের পাশের টুলে বসে জানালার দিকে চেয়ে একধ্যানে বসে আছে রুদ্র। বেগুনি রঙের শার্টের ওপর সাদা রঙের এপ্রোন পরা। টেনশনে তার কপাল, নাক, গলায় বিন্দু বিন্দু ঘাম ছুটছে। শিরশিরে বাতাসে সেটা শুকিয়েও যাচ্ছে। জানালা থেকে চোখ সরিয়ে রুদ্রের দৃষ্টি যায় বেডে চোখ বুঁজে থাকা এক ফ্যাকাশে মুখশ্রীর ওপর। পরনে লেহেঙ্গা বদলে হসপিটালের সাদা শার্ট পরিয়ে দিয়েছে। শুভ্র রঙের ছেয়ে গেছে মেয়েটার মুখে। মেয়েটার এক হাতে স্যালাইনের সিরিজ অন্যহাতে রক্তের ব্যাগের সিরিজ লাগানো। দুইদিক দিয়েই রক্ত ও স্যালাইন প্রবেশ করছে। তার শরীর থেকে এতোটাই রক্ত বেরিয়ে গেছে যে আরো দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হবে!

রুদ্র মেয়েটার মলিন মুখের ওপর কিছুটা ঝুঁকে পড়ে। চোখের নিচে হাত দিয়ে চোখ মেলে ধরার চেষ্টা করে। চোখের মূল অংশের নিচে অনেকটা সাদা হয়ে গিয়েছিল এখন কিছুটা লাল বর্ণের হয়েছে। এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। কিন্তু সে সোজা হয়ে বসে না। তার ভালো লাগছে। অদ্ভুত ভালো লাগছে। এভাবে লুকিয়ে কোনো মেয়েকে দেখলে কি কোনো অপরাধ হবার আশংকা আছে? হয়ত নেই। সে কারণেই রুদ্র সুযোগে সৎ ব্যবহার করছে। এই ভেবে তার হালকা ও একটু মোটা কোমল ঠোঁটে হাসি ফোটে।

মিইয়ে যায় সেই হাসিটা আবারও মেয়েটিকে দেখতেই। কে এই মেয়েটা? কোথায় তার ঠিকানা? কি করে সেই রাস্তায় সেই অবস্থায় পড়ে ছিল? এই অবস্থা ওই ছেলেগুলো করেনি সেটাতে নিশ্চিত রুদ্র। কারণ ছুরিটা মেয়েটার হাতেই ছিল। নিজের সে এতো বড় ক্ষতি করে ফেলেছে যে তার অবস্থা আন্দাজ করা যাচ্ছে না এই মূহুর্তে। সকালের মধ্যে মেয়েটার জ্ঞান না এলে খুব সমস্যার হয়ে যাবে মেয়েটাকে বাঁচানো। আর রুদ্র ও তার মন সেটা ভাবতেই একটা করে ধাক্কা খাচ্ছে। তাই তার মুখটা বেজার।

–“তাহলে তুমি এখানে বসে আছো?

হঠাৎ এমন কথায় কিছুটা চমকে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় রুদ্র। সিয়া কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনেও এপ্রোন। বেডে পড়ে থাকা মেয়েটার চিকিৎসা সে-ই বেশ কিছু হেল্প করেছে। রুদ্র নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
–“আসলে রাউন্ডে গেছিলাম তাই ভাবলাম এখানেও একটু নজর দিয়ে যাই।”

–“রাউন্ডে যাওয়া আর গত ২ ঘন্টা যাবত একটা পেশেন্টের কাছে বসে থাকা এক নয় রুদ্র। এটা আমি খুব ভালো করেই জানি।”

রুদ্র সিয়ার কথায় কিছুটা থতমত খায়। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
–“আসলে ওর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। ও কে সেটাও আমরা জানি না। আবার ওর ফ্যামিলি কি অবস্থায় আছে ওকে না পেয়ে সেটাই ভাবছিলাম। তাই একটু টেনশন হচ্ছিল।”

–“ওহ! অনেক তো রাত হলো। বাড়ি ফিরলে না যে?”

–“আজ যাব না। ওভার নাইট ডিউটি আছে আমার।”

–“সত্যি? আমি তোমার রুটিন চার্ট দেখেছি। আজ তোমার ওভার নাইট ডিউটি নেই। মিথ্যে বলছো কেন?”

রুদ্র কি বলবে সেটা ভেবে ভাবুক হয়ে পড়ে। কেন যে শুধু শুধু মিথ্যে বলতে গেছিল? অবশ্য মিথ্যে না বলে উপায় কি? সে কি করে বেহায়ার মতো বলত যে তার যেতে ইচ্ছে করছে না মেয়েটাকে একা রেখে। ওর মেয়েটার পাশে বসে থাকতে মন চাইছে।

ও এতোটাও লজ্জাহীন নয়। ওর বেস্টফ্রেন্ড আয়াশের মতো নয় সে। আয়াশ যেমন লাগামহীন কথাবার্তা বলতে থাকে তেমনই রুদ্র চাপা স্বভাবের। গলা টিপে মেরে ফেললেও তার মাঝে থেকে ওর গোপন ও মনের কথা বের করা অসম্ভব! সে শুধু একজনের কাছেই নিজের কথাগুলো শেয়ার করেছে সে হচ্ছে আয়াশ। যদিও আজ রাতে বেশ কয়েকবার ফোনে আয়াশকে কল করেও ব্যর্থ হয়েছে সে। তার ফোন বন্ধ। তাই রুদ্র একটু বেশিই চিন্তিত।

রুদ্র প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
–“তুমিও তো যাওনি বাড়িতে। এতো রাতে কেন এখনো রয়েছো?”

–“তুমি আছো তাই জন্যই ছিলাম। নয়ত চলেই যেতাম। কিন্তু তুমি কেন আছো সেটাই ভাবছি। জিজ্ঞেস মিথ্যেও বলছো। কেন জানি না মনে হচ্ছে, তুমি মেয়েটার জন্যই যাচ্ছো না বাড়িতে।”

–“হ্যাঁ তোমায় বললাম তো ওর জন্য আমার চিন্তা আছে। বিশেষ করে ওর পরিবার তো জানেও না ওর কি অবস্থা।”

–“এর আগে কোনো পেশেন্টের জন্য তোমায় এতো বিচলিত হতে দেখিনি।”

রুদ্র কিছু বলার আগেই সিয়া তার দিকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে মলিন হাসি দিয়ে বলে,
–“নাও কফি খাও। তোমার পছন্দ মতো বানানো। কড়া করে বানিয়েছি।”

রুদ্র মাথা নাড়িয়ে মানা করতেই সিয়া তার হাতে জোর করে কফির মগ ধরিয়ে বলে,
–“আরে খাও! সারাদিন কাজ করেছো, রাতেও হসপিটালেই আছো নিশ্চয় অনেক ধকল যাচ্ছে। ফ্রেশ লাগবে খাও।”

রুদ্র সিয়ার দিকে এক নজরে তাকিয়ে কফির মগে হালকা চুমুক দেয়। মেয়েটাকে এড়িয়ে যেতে চেয়েও পারে না সে। মেয়েটা নিজ থেকেই আবারও তার পিছু নেয়। সিয়ার এতো কেয়ার রুদ্র চায় না। অন্যদিকে সিয়া রুদ্রের কেয়ার করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। তবুও যেন রুদ্র কিছুই বোঝে না!

ভোর পাঁচটা। অর্ক হসপিটালে ঢোকে। আয়াশ রয়েছে সেখানে। তার বাবা তাকে জানিয়েছে অপারেশন হয়েছে। সেটা সাকসেসফুল। কিন্তু অনেকটা সময় লেগে গেছে অপারেশন করতে। বিষয়টা বড্ড রিস্কি ছিল ডক্টরদের কাছে। কারণ আয়াশের দুই দিকে ধারালো ছুরির আঘাত কিডনিতে হালকা প্রভাব ফেলেছিল। যেটা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন ডক্টররা। বর্তমানে সব ঠিকঠাক আছে এবং আয়াশ ঘুমাচ্ছে।

অর্ক হসপিটালের করিডোরে পা রাখতেই তার চোখ আঁটকে যায় করিডোর বরাবর বসে ঘুমিয়ে পড়া মৃধাকে। ঘুমন্ত অবস্থায় কি কারো সৌন্দর্য বেড়ে যায় নাকি আশ্চর্য!

অর্ক অবাক হয়ে এগিয়ে এসে দাঁড়ায়। আরো কিছুটা অবাক হয় সে এখনো বাড়ি যায়নি সেটা দেখে। অবশ্য মৃধার তো স্বভাব সে অচেনা মানুষের জন্যেও ভাবে। আনিশার জন্যেও কত ভেবেছিল সেদিন। সেখানে আয়াশ তার স্যার হয় তাই তার জন্য এতটুকু চিন্তা করা অস্বাভাবিক না!

অর্ক খেয়াল করে ঘুমের ঘোরে মৃধার কাঁধে থাকা ব্যাগ পড়ে যাচ্ছে। অর্ক একটু হেলে ব্যাগটা হাতে নিয়ে নেয় সেটা পড়ে যাবার আগেই। তৎক্ষনাৎ ভেঙে যায় মৃধার কাঁচা ঘুম। তার প্রথম নজর পড়ে নিজের ব্যাগের দিকে। তার ব্যাগ অন্যকেউ ধরে আছে ভেবেই চিৎকার দিয়ে ওঠে সে,
–“চোর! চোর, চোর, চোর। আমার ব্যাগ চুরি করেছে। এই চোর আমার ব্যাগ আমায় দে।”

বলেই ব্যাগ ছোঁ মেরে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল মৃধা। ইতিমধ্যে আশেপাশে থাকা নার্স, ডক্টর ও লোকজন কিছুটা জড়ো হয়ে গিয়েছে। অর্ক বেকুব হয়ে গেল মৃধার কান্ড দেখে। মৃধা এখনো জোরে জোরে চেঁচিয়েই যাচ্ছে।

–“সুযোগ পেলেই হয়েছে না? চুরি করতেই হবে। চোর কোথাকার। কে কোথায় আছেন? তাড়াতাড়ি আসুন। দেখুন হসপিটালে ছিঁচকে চোর।”

অর্ক এবার মৃধার সঙ্গে না পেরে নিরুপায় হয়ে ওর মুখটা চেপে ধরে। ফিসফিস করে বলে,
–“হুঁশশ… হুঁশশ… এটা আমি। কোনো চোর নয়। আমাকে দেখুন। ঠিক মনে পড়বে আমি কে।”

মৃধা এবার মাথা উঠিয়ে তাকায়। অসহায় অর্কের চাহনি। অসহায় চাহনি হবে না-ই বা কেন? সে শেষমেশ কিনা চোরের উপাধি পেয়ে বসল? এর চেয়ে লজ্জার কি আর কিছু হতে পারে? অর্ক মৃধার ঠোঁটের ওপর থেকে হাত সরায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে। তাড়াহুড়ো করে মৃধার এতোটা কাছে গিয়ে ওর ঠোঁট অবধি ছুঁয়ে ফেলেছে ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছে তার। এরই মাঝে একজন লোক বলে উঠল,

–“এই হসপিটালে কি সিকিউরিটি নেই? চোর অবধি ঢুকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে! অদ্ভুত। এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন সবাই? ধরো চোরকে।”

থতমত খেয়ে অর্ক মৃধার দিকে তাকায়। নিজের চাহনি দিয়ে সে বোঝাবার চেষ্টা করছে মৃধা যেন তাড়াতাড়ি ওদেরকে আঁটকায়। নয়ত গণধোলাই আজকে নিশ্চিত! মৃধা তার দৃষ্টি বুঝে প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়ে বলে ওঠে,
–“দাঁড়ান সবাই। সরি। আসলে উনাকে আমি চিনি। ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারিনি তাই ভুল করে চোর সম্বোধন করে ফেলেছি। এক্সট্রিমলি সরি আপনাদেরকে বিরক্ত করার জন্য।”

সকলে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে করতে চলে যায়। অর্ক হাফ ছেড়ে বাঁচে। তবুও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় মৃধার দিকে। মেয়েটার জন্য শেষমেশ কিনা এতো বড় অপমান? মৃধাও বাঁকা চোখে অর্কের দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলে,
–“আপনাকেও সরি। ঘুমের ঘোরে ছিলাম বুঝতেই পারছেন। আমি আপনার চোর উপাধিটা ফিরিয়ে নিলাম ঠিক আছে?”

অর্ক হাসবে না কাঁদবে বুঝতেই পারছে না। মিশ্র রিয়েকশন দিতে গিয়ে তার অবস্থা বেহাল। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
–“এটাই তো আপনি পারেন। কথা আর উপাধি ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু কথাগুলো কিভাবে ফিরিয়ে নেওয়া যায় সেই সাইন্স, হিস্ট্রি, ম্যাথ আমায় বোঝান।”

মৃধা মাথা চুলকে লজ্জায় মুখ ঢাকে। সেও না দেখেই কত জোরে চিল্লাপাল্লা শুরু করেছিল। জ্বিহ্বা কেটে নিজেকে মনে মনে কয়েকবার বকল। তখনই ব্যাগ থেকে তার ফোনটা বেজে উঠল। দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই দেখে তার মনি মা ফোন করেছে। এতো ভোরে তার মনি মাকে জেগে থাকতে দেখে বেশ হতবাক হয় মৃধা। দ্রুত ফোন রিসিভ করে বলে,
–“হ্যালো মনি মা? তুমি এখনো ঘুমাওনি? এতো রাত জেগে থাকা ঠিক না জানো না? তোমার তো হার্টের প্রবলেম।”

— “ঘুম কি করে আসবে বল?”

–“কেন? এই সময় কারা জাগে জানো? যারা প্রেম করে তারা। সারা রাত ফোনে কথা নয়ত চ্যাটিং করে কাটিয়ে দেয়। বাই এনি চান্স এই বয়সে নিজের কোনো মজনু পাওনি তো?”

দাঁত বের করে হেঁসে বলল মৃধা। অনেকক্ষণ পর সে হাসছে। আয়াশের অপারেশন সাকসেসফুল শুনে সে বেশ খুশি। তাই নিজরে দুষ্টুমিও শুরু করে দিয়েছে সে। এসব কথা শুনে বিষম খায় অর্ক। এই মেয়েটা কি বলে? বেজায় সাংঘাতিক তো! কাকে যে অর্কের মনে ধরল সেটা অর্কের অজানা। ফোনের ওপরপাশে মনি মাও ধমক দিয়ে বলেন,

–“ফাজিল মেয়ে! নিজের মনি মাকে এসব কথা বলছিস? বাড়িতে আয় শুধু। মজা দেখাচ্ছি।”

–“আচ্ছা বাবা! তুমি কেন জেগে আছো বলো তো?”

–“তোর জন্যই তো। বাড়ির মেয়ে বাইরে সারা রাত থাকলে ঘুম কি আসে? শোন জীবনকে হসপিটালে পাঠিয়েছি। চলে আয় তুই। তোর জন্য চিন্তায় পাগল হয়ে যাব এবার আমি।”

মনি মার কথায় মুখটা কালো হয়ে আসে মৃধার। সে চাইছিল আয়াশের ঘুম ভাঙলে একটু কথা বলে তবে যাবে। তাই সে মানা করলেও মনি মা তার কোনো কথা এবার শুনল না। মৃধা বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে ফোনটা কেটে দিল। অর্ক তখন মৃধার দিকেই তাকিয়ে আছে। মৃধা অর্কের দিকে তাকাতেই অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো অর্ক।

–“বলছিলাম যে শুনুন, আমায় বাড়ি যেতে হবে। ভাইয়া এসেছে। আয়াশ স্যারের ঘুম ভাঙলে আমায় জানাবেন প্লিজ? আমি একবার দেখতে আসব।আপনাকে আমি নম্বরটা দিই?”

অর্কের চোখটা চকচক করে উঠল। এতো মেঘ না চাইতেই জল। এই এক বছর অর্ক শুধু মৃধার সামান্য স্মৃতি নিয়েই কাটিয়েছে। এবার হয়ত কোনো না কোনে বাহানায় যোগাযোগ অন্তত রাখতে পারবে। তাই অর্ক মাথা নাড়ায় দ্রুত। মৃধা নিজের নম্বরটা দিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। অর্ক সেই পানে চেয়ে থাকে।

চোখজোড়া খোলার চেষ্টা করছি। খুলছে না। বলা যায় খোলার চেষ্টা করেও পারছি না। সেই শক্তি টুকুও অবশিষ্ট নেই যেন। একপ্রকার জোর করেই চোখজোড়া খুলতেই চোখে স্নিগ্ধ সূর্যের কিরণে চোখমুখ কুঁচকে এলো। মাথাটা বড্ড ভার লাগছে আমার। হাতটা উঠাতেই তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলাম। তখনই আমার হাতটা ধরে ফেলল অন্য কারো হাত। আয়াশের পর কি আজ ঘুম ভাঙল তবে? মুচকি হেঁসে তাকাতেই অস্পষ্ট অচেনা কারো চেহারা চোখে পড়ল। ঘোলাটে দৃশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠতেই একটা পুরুষকে দেখেই মনে পড়ল গতকালকের ঘটনা!

হকচকিয়ে উঠে নিজের হাতটা সরিয়ে ফেললাম তার হাতের থেকে। উঠে বসার চেষ্টা করেও পারলাম না। মনে হলো লোকটা আবারও আমার সম্মানহানি করার জন্য আসেনি? এই ভেবে চিৎকার দিতে থাকলাম আমি। কিন্তু গলা দিয়ে সুর বের হচ্ছে না। চোখ বড়বড় হয়ে এলো। কথা বলার চেষ্টা করেও গলা থেকে একটা আওয়াজও বের করতে পারলাম না। এ কি হলো আমার? সামনে থাকা ব্যক্তিটি তৎক্ষনাৎ আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন,

–“রিল্যাক্স! ভয় পেও না। আমি তোমার কিছু করব না। তুমি একদম ঠিক আছো। কাল রাতে তুমি রাস্তায় পড়ে ছিলে। আমি নিয়ে এসেছি তোমায়। নিজের হাতের শিরা কেটে ফেলেছিলে। ভেবেছিলাম তোমার জ্ঞান ফিরবে না। কিন্তু ফিরেছে। থ্যাংক গড!”

কালকের কথা সব একে একে মনে পড়ল। মনে পড়ল আয়াশের কথা। উনার ভয়াবহ অবস্থার কথা! বুকটা কেঁপে উঠল তখনই। জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সকাল হয়ে গেছে। এক অজানা আশংকায় সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। আয়াশ কেমন আছেন এখন? উনার অপারেশন হয়েছে?

সামনের থাকা ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করতে চাইলাম অনেক কিছু। কথা গলা থেকে বের না করতে পারায় অস্থির হয়ে উঠলাম আমি। তা দেখে লোকটি বলল,
–“কথা বলতে পারছো না?”

আমি মাথা নাড়ালাম। উনি আবারও বললেন,
–“প্লিজ চাপ নিও না। তুমি কি জ্ঞান হারাবার আগে এমন কিছু দেখেছো যাতে তোমার ফোবিয়া আছে? যাতে তুমি অতিরিক্ত ভয় পাও?”

আমি এবারও মাথা নাড়ালাম। ইশারা করে বোঝাতে লাগলাম রক্তের কথা। উনি বুঝেও গেলেন। কিছুটা ভেবে বললেন,
–“এই ভয় পাওয়া থেকে তুমি তোমার কথা বের করতে পারছ না। মানে তোমার গলায় সুর আসছে না ভয়ে। এটা পারমানেন্ট নয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। একটু সময় দাও। একটু রিল্যাক্স হতে হবে তোমাকে।”

রিল্যাক্স হবো কি করে এখন? আয়াশ কেমন আছেন না জানা পর্যন্ত আমার মন শান্ত তো হবে না। জোর করে কথা বলতে চেয়েও হলো না। এক পর্যায়ে কেঁদে দিলাম আমি। সামনে থাকা লোকটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
–“আর ইউ ওকে? দেখো, তুমি যত শান্ত হবে কথাটা তত দ্রুত বলতে পারবে।”

আমি উনাকে কেঁদে কেঁদে ইশারা করে বোঝানোর চেষ্টা করলাম আমি বাড়ি যাব। আমার হাজবেন্ডের অবস্থা ভালো নয়। কিন্তু উনি বুঝতে পারছেন না। আমার কান্নার বেগ বেড়ে যায়। খাতা-কলম দিয়ে লিখব তাও উপায় নেই। আমার দুই হাতই কাটা ক্ষত-বিক্ষত ভাবে। লিখতেই পারব না এই ব্যান্ডেজ করা হাত নিয়ে। একটা সময় উনি কিছুটা বুঝে বললেন,
–“আই থিংক তুমি নিজের বাড়ির কথা বলছো!”

আমি মাথা দুলাতেই উনি নিজের ফোনটা বের করেন। আর বলেন,
–“নিজের বাড়ির নম্বর ইশারায় বলো। আমি ডায়াল করে কথা বলছি। আর শান্ত হও প্লিজ!”

এবার আমি শান্ত হয়ে বালিশে ঠেস লাগিয়ে চোখ বুজলাম। আমি আর অন্যকিছু জানি না শুধু জানি আমি আয়াশের কাছে যেতে চাই। উনাকে এক নজর দেখতে চাই। উনি ভালো আছেন সেটা দেখতে চাই। নয়ত এভাবে গুমরেই মরে যাব আমি।

ব্যক্তিটি ফোনের লক খুলে বলেন,
–“এনিওয়ে, আমি রুদ্র! এখন বলো নিজের বাড়ির নম্বর।”
প্রথমে নামটা চেনা লাগলেও কার মুখে শুনেছি তা মনে পড়ল না। মনোযোগ দিলাম নম্বর ইশারা করে বলাতে। বর্তমানে আয়াশের নম্বরে কাজ হবে না সেটা বুঝতে পেরে অর্ক ভাইয়ার নম্বর ইশারায় বললাম আমি। রুদ্র নম্বর ডায়াল করে কল দিলেন। আমি চাতক পাখির মতো বসে রইলাম কলের উত্তরের অপেক্ষায়!

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তাই বাস্তবে এর অস্তিত্ব খুঁজবেন না]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here