মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৪০

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৪০
#আনিশা_সাবিহা

কেবিনের বেডের আশেপাশে যত প্রকার জিনিস ছিল সেসব নিচে অগোছালো হয়ে পড়ে আছে। এমনকি বেডের চাদর নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া। বেডের ওপর ঘাড় কাঁত করে বসে আছে আয়াশ। ঘাড়ের ও কপালের রগ ফুলে উঠেছে প্রগাঢ়ভাবে। বড় বড় শ্বাস নেওয়া বলে দিচ্ছে যে সে রাগ প্রচন্ডভাবে বেড়ে চলেছে। আশেপাশে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে তার জ্ঞান হারাবার আগের কথাগুলো মনে করতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় নিজের হাত আঘাত করে চিল্লিয়ে বলে ওঠে…

–“আই উইল কিল ইউ নীলাদ্র! আগের বার ছেড়ে দিয়েছি। মানুষের যখন সময় ঘনিয়ে আসে তখন সে নিজে থেকেই নিজের পায়ে কুড়াল মারে। তার সুন্দর একটি উদাহরণ তুই নীলাদ্র!”

বলেই তার পেছনের বালিশ খামচে ধরে দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে মারে। নড়াচড়া করতে ভীষণ ব্যাথা লাগছে তার। বিশেষ করে পেটে আর পায়ে। মাথাতেও ব্যাথা। মাথায় হাত রাখতে চাইতেই তার ডান হাতে টান পড়ে জোরে। চোখমুখ কুঁচকে রেগে তাকায় হাতের দিকে। তার হাতে স্যালাইনের সিরিজ লাগানো। রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
–“হোয়াট রাবিশ! এসব কি? আর ও? ও কোথায়? নিশাপাখি?”

জোরে ডাক দিয়েও আনিশার কোনো সাড়া পায় না আয়াশ। তার এই মূহুর্তে পাগল পাগল লাগছে। আনিশার ওপরেও রাগ হয় তার। বিড়বিড় করে বলে,
–“এই মেয়েটা কি জানে না? বেশিক্ষণ ওর থেকে দূরত্ব আমার সহ্য হয় না? আমার অস্থির লাগে। ভয় হয়। ও জানে না? জানে তো! তাও নেই কেন আমার কাছে? আনিশা?”

এবারেও কোনো লাভ হয় না। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আয়াশ আনিশার দেখা পাওয়ার আশায় সেদিকে তাকায়। কিন্তু আশাহত হয় সে। কেবিনে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে অর্ক। অতঃপর আয়াশের দিকে ভীত চোখে তাকায় সে। অর্ক এই ভয়টাই পাচ্ছিল। আয়াশের জ্ঞান ফিরলে কি জবাব দেবে সেটা নিয়েই বড্ড চিন্তিত ছিল। এখন আয়াশ আনিশার খোঁজ করছে। এর উত্তরে কি বলবে অর্ক?

–“অর্ক? তুমি এখানে? আনিশা কোথায়? ওকে দেখছি না তো। ও কি আসেনি?”

অর্ক কেবিনের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়। আয়াশের বর্তমান অবস্থা আন্দাজ করে। আনিশার নিখোঁজ হবার কথা কি করে জানাবে তাকে? আয়াশ অর্কের নিরবতা দেখে তীক্ষ্ণতা দিয়ে অর্কের ভাবভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করে। আর গাম্ভীর্যের সঙ্গে বলে,

–“আমি একটা প্রশ্ন করেছি। এন্সার মি প্লিজ! আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিও না। বিশেষ করে আনিশার ক্ষেত্রে ধৈর্য জিনিসটা আমার সহ্য হয় না। ও এসেছিল আমি জানি। আমার এই অবস্থা আর ও আসবে না এটা হয় না। ও কোথায়?”

–“ও…ওই তোমার ব্যাংক একাউন্ট আর টাকা যেসব ব্যাংকে রয়েছে সব ব্লক ক…করা হয়েছে।”

–“আই ডোন্ট কেয়ার। টাকা-পয়সার ব্যাপারে আমি জানতে চাইনি। আমার কাছে যে প্রাণের প্রিয় তার কথা জানতে চেয়েছি।”

অর্ক খানিকটা নিচু সুরে বলে,
–“আনিশাকে কাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। ও কোথাও নেই। আমি কাল সারারাত খুঁজে গেছি পাইনি। পুলিশকে বলেছি। পুলিশ ২৪ ঘন্টা যাওয়ার আগে কোনো একশান নেবে না।”

আয়াশের দৃষ্টি ধীরে ধীরে আরো তীক্ষ্ণ হয়ে আসে। চোয়াল শক্ত হয়। দৃঢ় কন্ঠে বলে,
–“ওদের মতো পুলিশ থাকার থেকে না থাকা ভালো। আমিও দেখব ওরা কি করে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে থাকে। আই ওয়ান্ট মাই ওয়াইফ রাইট নাউ। আদারওয়াইজ, আই উইল কিল নীলাদ্র!”

–“নীলাদ্র?”

আয়াশের কথা শুনে ক্ষীণ কন্ঠে নীলাদ্রের নামটা উচ্চারণ করে অর্ক। নামটা ও শুনেছে আনিশার মুখ থেকেই। তারপর অবাক চোখে তাকায় আয়াশের দিকে। আয়াশ বিষন্ন মুখে বলে,
–“হ্যাঁ ওই ননসেন্স ছেলেটাই। ও-ই আমাকে মেরেছে অ্যান্ড আই এম ড্যাম সিউর আনিশাকে ওই ব্লাডি টাই কিছু করেছে। আই ওয়ান্ট হার! আনিশাকে চাই আমার। ওর সঙ্গে কিছু খারাপ ঘটলে ওই ছেলেটা খুব পস্তাবে। বেঁচে থাকা মুশকিল করে দেব আই প্রমিস!”

–“কিন্তু তোমাকে এখন শান্ত থাকতে হবে। তোমার শরীরের কন্ডিশন ভালো নয়। ডক্টর বলেছে নাহলেও এক মাস তোমায় বেড রেস্টে থাকতে হবে। আমরা আনিশাকে ঠিক পেয়ে যাব। একটু ধৈর্য রাখতে হবে আমাদের।”

–“সেটাই তো রাখতে পারব না। যাকে পাওয়ার জন্য নিজের প্রাণ দিতেও রাজি ছিলাম তাকে এখন না পেয়ে ধৈর্য রাখব এটা ভাবলে কি করে? আমি এখনি বের হবো।”

বলেই বেড থেকে নামতে নেয় আয়াশ। পায়ে ভীষণভাবে যন্ত্রণা করে ওঠে। বসে পড়ে সে। ডান পায়েই তার গুলি লেগেছে। সেখান থেকে গুলি বের করেছে ২৪ ঘন্টাও হয়নি। আর এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাহাঁটি করা অসম্ভব। তার ওপর ডান হাতেও টান পড়ে। এসবে আরো রাগ বাড়ে আয়াশের। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বাম হাত দিয়ে ডান হাতের সিরিজ জোরে টান দিয়ে খুলে ফেলে। মূহুর্তেই সেখান থেকে রক্তের ফিনকি বের হতে থাকে। অর্ক ঘাবড়ে গিয়ে জোরে বলে ওঠে,

–“আর ইউ ম্যাড? কি করছো তুমি? এভাবে এই অবস্থায় যেতে পারবে না তুমি। আমার কথা শোনো তুমি। আমরা…”

–“নো মোর ওয়ার্ড প্লিজ! একজনের রাগ অন্যজনের ওপর ঝেড়ে ফেলার অভ্যাস আছে আমার। কিন্তু এই মূহুর্তে তোমার সঙ্গে আমি কোনোরকম রুড বিহেব করতে চাই না। লেট মি গো!”

আয়াশ উঠতে গিয়েও উঠতে পারে না। পায়ে অসহ্যকর যন্ত্রণা! পেটেও চাপ পড়ছে। অনেক কষ্টে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দুই পা এগোতেই পায়ে তীব্র ব্যাথায় পড়ে যেতে নেয় সে। অর্ক তৎক্ষনাৎ আয়াশের কাঁধ ধরে তাকে বেডে বসিয়ে দেয়। ডক্টর আর নার্সকে ডাকে। আয়াশ এমনভাবে হাত থেকে স্যালাইনের সিরিজের সুই টান মেরে ছিঁড়েছে যে খুব খারাপ ভাবে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। অর্কের জানা নেই এমন ছেলেকে কি করে সামলায় আনিশা!

ডক্টর আর নার্স এসেও আয়াশকে শান্ত করার চেষ্টা করেও পারে না। আয়াশ উম্মাদ হয়ে গেছে। তার মনে যে প্রিয় মানুষটাকে হারাবার ভয় তড়তড় করে বাড়ছে। যাকে সে নিজের #মনের_অন্দরমহলে যত্ন করে রেখেছে তাকে এতো সহজে তার অগোচরে পালিয়ে যেতে দেবে না। অর্ক আয়াশকে শান্ত করতে করতে কল আসায় সরে আসে। হয়ত তার বাবা কল করেছে। এই ভেবে পকেট থেকে ফোনটা বের করে অর্ক।

ফোনের স্ক্রিনে অচেনা নম্বর দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে তার। কিছু একটা মনে করে ফোনটা ধরে সে। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,
–“হ্যালো? কে বলছেন?”

–“আমি রুদ্র। ডক্টর রুদ্র বলছি। আসলে আমি গতকাল রাতে একটা মেয়েকে পেয়েছি আহত অবস্থায়। সে আমার হসপিটালেই আছে। বর্তমানে ওর জ্ঞান আছে। সে-ই আমাকে আপনার নম্বরটা আমাকে দিয়েছে।”

অর্ক আচমকা এমন কথা শুনে তার শিরদাঁড়া সোজা হয়ে গেল। এটা কি আনিশা? প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে বলল,
–“নাম কি মেয়েটার? ওকে ফোনটা দিতে পারবেন?”

আয়াশও শান্ত হয় এবার। ভ্রু উঁচিয়ে তাকায় অর্কের দিকে। ওপাশ থেকে রুদ্র বলে,
–“আই এম সরি বাট আকস্মিক ঘটনায় কিছুক্ষণের জন্য নিজের ফোবিয়ার কারণে সে কথা বলার শক্ত হারিয়েছে। তাই ওকে ফোন দিলেও কথা বলতে পারবেন না। তাই ওর নামটাও এখনো জানতে পারিনি।”

–“আসলে আমার বোনটাও কাল থেকে নিখোঁজ। তাই কোথাও মনে হচ্ছে ও আমার বোন। আপনি যদি কাইন্ডলি আমায় হেল্প করতেন ওই মেয়েটার ছবি পাঠিয়ে?”

রুদ্র খানিকটা ইতস্তত বোধ করে। ও কি মেয়েটার ছবি তুলবে? এটা কি ঠিক হবে? বেশ কিছুক্ষণ সে ভেবে বলে,
–“আপনার নাম কি যদি বলতেন?”

–“অর্ক!”

আমি রুদ্র নামক ব্যক্তিটির দিকে চেয়ে আছি উত্তরের আশায়। কখন একটা উত্তর পাব? রুদ্র ফোন কান থেকে একটু সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি অপলক দৃষ্টি উনার দিকে শুধু উত্তর পাওয়ায় আশায়। রুদ্র যেন আমার চাহনিতে ভড়কে যান। আমিও অস্বস্তিতে পড়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিই। উনি হালকা কেশে বলেন,
–“তুমি কি অর্ক কে চেনো?”

আমি কথাটা কানে আসামাত্র মাথা নাড়ালাম। বলার চেষ্টা করলাম উনি আমার ভাইয়া। কিন্তু বলতে পারলাম না। রুদ্র ইশারায় আমায় শান্ত হতে বলেন। পুনরায় ফোন কানে ধরে বলেন,
–“হ্যাঁ ও আপনাকে চেনে বলেছে।”

ওপাশ থেকে কি জবাব এলো সেটা বুঝতে পারলাম না। রুদ্র আবারও আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–“তোমার নাম কি আনিশা?”

এবারও উৎফুল্ল হয়ে মাথা নাড়ালাম আমি। রুদ্র কিছু একটা ভাবলেন। তারপর ফোনে বললেন,
–“হ্যাঁ ওর নাম আনিশাই।”

একটু পর আবারও ওপাশের জবাবে বলেন,
–“কিন্তু ওর যা অবস্থা ওকে হসপিটালে কয়েকদিন থাকতে হতে পারে। এখনো ওর রক্ত দেওয়া শেষ হয়নি। ওর শরীর থেকে এতো পরিমাণ রক্ত বেরিয়ে গেছিল যে ওর চোখমুখের রঙ প্রায় সাদা হয়ে এসেছিল। এভাবে কিভাবে?”

এরপর কি বলল ওপাশ থেকে জানি না কিন্তু বেশ বিস্ময়ে ভরে উঠল উনার চোখজোড়া। হতভম্ব হয়ে পড়ায় আমার মনে প্রশ্ন জাগল ওপাশ থেকে কি এমন বলল? আচমকা রুদ্র থেমে থেমে বললেন,
–“আ…আয়াশ?”

এবার আমিও চমক খেলাম। আয়াশ কি ওপাশে রয়েছেন? আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। মানুষটাই এমন যে যার কথা শুনলে আমার হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে যায়। যেন হৃৎস্পন্দনটাও উনাকেই চায়। চোখে পরিপূর্ণ হলো পানি। অশ্রুসিক্ত নয়নে ছটফট করতে লাগলাম আয়াশের সঙ্গে কথা বলার জন্য। ওপরদিকে রুদ্র এখনো বিস্ময়ের ঘোরে রয়েছেন যেন। উনি আবারও বলেন,
–“তু…তুই? মানে আমি কিছু বুঝতে পারছি না। তুই এই নম্বরে! আমার মাথায় কিছুই আস…”

বলেই কোনো কারণে থেমে গেলেন উনি। আমিও হতবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছি উনার দিকে। রুদ্র আয়াশকে চেনেন? হ্যাঁ। হয়ত চেনেন! আমিই ভুলে গিয়েছিলাম রুদ্রের নাম। একবার আয়াশ বলেছিলেন রুদ্রের সম্মন্ধে! রুদ্র আয়াশের বেস্টফ্রেন্ড এটাও বলেছিলাম। অনেক বছরের বন্ধুত্ব তাদের। কিন্তু রুদ্রের ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে থাকায় আয়াশ এক প্রকার জোর করেই রুদ্রকে বিদেশ পাঠিয়ে দেন। রুদ্র কখনো চায়নি আয়াশকে ডিপ্রেসড দেখেও তাকে একা ফেলে যেতে। কিন্তু আয়াশের জেদে উনিও হার মেনে অবশেষে পড়াশোনার জন্যই বিদেশে চলে যান। এ কি তবে সেই রুদ্র?

কথা বলার জন্য অজস্র বার চেষ্টা করে অবশেষে গলা দিয়ে সুর বেরিয়ে এলো। অস্ফুটস্বরে বললাম,
–“আয়াশ? আয়াশ ফোন ধরেছেন? আমাকে দিন না! আমি কথা বলব।”

বলেই রুদ্রের জবাবের অপেক্ষা করলাম না। ছো মেরে ফোনটা নিয়ে নিজের কানের কাছে ধরলাম। আয়াশ এখনো রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলে যাচ্ছেন।
–“রুদ্র তুই? তুই দেশে আছিস? আর আনিশা! আমার আনিশা কি তোর কাছে? ওকে নিয়ে আয় না ভাই! আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি।”

আমি ঢক গিলে বললাম,
–“আয়াশ!”

ওপাশটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। শুনতে পাচ্ছি শুধু উনার বড় বড় নিশ্বাসের শব্দ। আমি অস্থির হয়ে প্রশ্ন করলাম,
–“আপনি ঠিক আছেন তো? জানেন, আপনার অপারেশনের টাকা জমা দেওয়া হয়নি বলে আপনার অপারেশন আঁটকে গেছিল। এখন কেমন আছেন আপনি? ভালো আছেন না?”

–“কতক্ষণ পর তোমার কন্ঠ শুনলাম নিশাপাখি! আমার মন আর প্রাণ দুটোতেই সুখের ঢেউ খেলে গেল। এতোক্ষণ প্রাণ ছিল ঠিকই। কিন্তু তোমাকে ছাড়া নিজেকে অস্তিত্বহীন লাগে আমার। কোথায় আছো তুমি? তুমি ঠিক আছো?”

নিজের হাতের দিকে তাকালাম আমি। আমতা আমতা করে বললাম,
–“ওই একটু আঘাত লেগেছে। আমার দোষেই।”

–“কার দোষে লেগেছে সেটা না হয় পড়ে জানা যাবে। আমি আসছি।”

–“আপনি না। আমি যাব। আপনি এতদূর আসতে পারবেন না। আপনি তো হাঁটতেই পারবেন না। আমি আসব।”

তবুও আয়াশ আমায় বারণ করলেন। আমি হার মানলাম না। অবশেষে জেদাজেদির যুদ্ধে জয়টা আমারই হলো। আমি যাব উনার কাছে। এই এক বছরে এটা প্রথম যেখানে আমি উনার জেদ নয় উনি আমার জেদ মানছেন। অবশেষে হার মেনে উনি বলেন,
–“আমি হার স্বীকার করছি আমার মহারানী! তুমি রুদ্রকে ফোনটা দাও।”

আমি মুচকি হাসলাম। অনেকক্ষণ পর হাসছি আমি। এখন আমি উপলব্ধি করতে পারছি ‘আয়াশ’ নামটা আমার মুখে হাসি ফোঁটার কারণ। ফোনটা রুদ্রের দিকে এগিয়ে দিলাম। উনি ফ্যাকাশে মুখে ফোনটা নিয়ে ধরলেন। কেমন জানি জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললেন,
–“হ্যাঁ বল।”

ওপাশ থেকে কিছু বলতেই রুদ্র বলেন,
–“টেনশন নিচ্ছিস কেন? আমি আসছি আনিশাকে নিয়ে। ওকে সাবধানেই নিয়ে আসব। আফটার অল তোর বউ বলে কথা! ওর কিছু হলে তো আমাকে খুন করে ফেলবি নিশ্চিত।”

বলেই হেসে ফোন কেটে দিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন উনি। আমার দিকে একনজর তাকিয়ে বললেন,
–“আমি জানতাম না তুমি আমার বেস্টফ্রেন্ডের ওয়াইফ। জানা উচিত ছিল। যদিও তোমার নাম আমি আয়াশের মুখে শুনেছি। কিন্তু তোমার ছবি দেখা হয়নি কখনো। সামনা-সামনি দেখার সৌভাগ্য হয়ে গেল। যাওয়া যাক?”
আমি মাথা দুলিয়ে মৃদু হাসলাম। অবশেষে আয়াশের কাছে যেতে পারব আমি। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হয় না।

গাড়ি থেকে নামতে গিয়েও ধরে ফেলেন রুদ্র। আমার দুটো হাতের বাহু ধরে আমার দিকে তাকান উনি। আচমকা আমাকে এভাবে স্পর্শ করায় দূরে সরতে চাই কিন্তু উনি মৃদু সুরে বলেন,
–“সরি বাট তুমি হাঁটতে পারবে না। আসার সময় নার্সের মাধ্যমে গাড়িতে উঠেছো। এখানে ভেতরে যেতে হবে। বাইরে তো কোনো নার্স পাবে না। তাই আমি তোমায় নিয়ে যাচ্ছি।”

আমার অস্বস্তি লাগলেও উপায় ছিল না। আমার শরীর প্রচন্ড দুর্বল। তাই একা হাঁটার শক্তিও নেই আমার। আস্তে আস্তে হসপিটালের ভেতর ঢুকে আসি আমরা। দ্বিতীয় ফ্লোরে উঠে শেষ প্রান্তে আয়াশের রুমে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ি। সেই পরিচিত মুখ! খানিকটা পাল্টেছে চেহারার ধরণ কয়েকটা ঘন্টায়। ফ্যাকাশে প্রলেপ ছড়ানো মুখে। সেই সঙ্গে হাজারো ক্লান্তির ছাপ। কপালে ব্যান্ডেজ করা। পরনে আকাশি শার্ট! এটা হয়ত হসপিটালের পেশেন্টদের ড্রেস। অনুভূতির জোয়ার বইছে মনে। আমার সঙ্গে খেলে চলেছে সেই ভয়ঙ্কর অনুভূতি। হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তা যেন থেমে গেল।

হয়ত দরজা খোলার শব্দেই পিটপিট করে চোখ মেলেন আয়াশ। সেই তৃষ্ণার্ত চাহনি! যেটা আমাকে প্রতি মূহুর্তে গ্রাস করছে।

চলবে…

[বি.দ্র. গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এর বাস্তবতা খুঁজবেন না। অনেকে অপেক্ষা করছিলেন আয়াশ ও আনিশার দেখা কখন হবে সেটা নিয়ে। অবশেষে দেখা হলো তাদের রুদ্রের হাত ধরেই। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here